রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬

শারীয়াহর মাপকাঠি, দালিল-আদিল্লাকে পাশ কাটিয়ে অন্ধভাবে ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের অনুসরন (আলেম, দা'ঈ ও তলিবুল 'ইলম) জিহাদি মানহাজের অনুসারী বলে আওয়ামের কাছে পরিচিত অনেক ভাইকেই নিস্ক্রিয়তার মানহাজে নিয়ে গেছে। আবার তাদের পরিচিতির কারণে অনেকের কাছে তাদের বিভ্রান্তিকর অবস্থান মানহাজের অবস্থান বলে প্রচার পাচ্ছে। মানহাজের বিশুদ্ধতার জন্য নিস্ক্রিয়তার মানহাজের অনুসারীদের চিন্তাগত ত্রুটিগুলো তুলে ধরা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি একটি উদাহরণ দিচ্ছি:  নিমোক্ত লেখাটি শায়খ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর ফেইসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়: 

কোন মন্তব্য নেই:

শারীয়াহর মাপকাঠি, দালিল-আদিল্লাকে পাশ কাটিয়ে অন্ধভাবে ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের অনুসরন (আলেম, দা'ঈ ও তলিবুল 'ইলম) জিহাদি মানহাজের অনুসারী বলে আওয়ামের কাছে পরিচিত অনেক ভাইকেই নিস্ক্রিয়তার মানহাজে নিয়ে গেছে। আবার তাদের পরিচিতির কারণে অনেকের কাছে তাদের বিভ্রান্তিকর অবস্থান মানহাজের অবস্থান বলে প্রচার পাচ্ছে। মানহাজের বিশুদ্ধতার জন্য নিস্ক্রিয়তার মানহাজের অনুসারীদের চিন্তাগত ত্রুটিগুলো তুলে ধরা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি একটি উদাহরণ দিচ্ছি:  নিমোক্ত লেখাটি শায়খ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর ফেইসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়: 
.
"১৯৯১ সালে মদীনায় যাচ্ছি কিং সাঊদ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে। তিনি খুশি হয়েছিলেন। কিং সাঊদের ইসলামিক স্টাডিজ তাঁর পছন্দ ছিলো না। তিনি তখন পিএইচডি থিসিস শুরু করেছেন। বিদেশীদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত ছড়াতেন। ইংরেজিতে খুব ভালো ছিলেন বলে আমেরিকান সেনা ছাউনিতে তিনি ইসলাম পৌঁছানোর কাজ করতেন। জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই! কয়জন ইসলাম কবুল করেছেন? তিনি বললেন, "বলা নিষেধ, তবে আপনাকে একটা কথা বলি, ওদের মাঝে ইসলাম পৌঁছাতে পারলে তারা উন্মুখ হয়ে আছে।" ঐ বছরেই শুনেছিলাম ড. জগলুল নাজ্জার ও জাহাঙ্গীর ভাইদের দাওয়াতে তিন শতাধিক সৈন্য মুসলিম হয়ে যায়। সরকারি হস্তক্ষেপে এই দাওয়াতি কাজ বন্ধ রাখা হয়।
.
ঈমানের সাথে ইলম, ইলমের সাথে আমল এবং আমলের সাথে এত হিলম আমি আর কারো মাঝে পাই নি। তিনি সবার সাথে মিশতে পারার এক দুর্লভ গুণ অর্জন করেছিলেন। তবে সহীহ হাদীসের এক চুল দূরে যেতে ছিলো তাঁর প্রচন্ড আপত্তি।
.
"ভাই, জামাআতে ইসলামির সাথে বা তাবলীগের সাথে, বা কোন অর্গানাইজেশনের সাথে থেকে কাজ করলে কী বেশি ভালো হত না?"- আমার এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, "সালাম ভাই, বাংলাদেশে ৯০% মুসলিম, এদের মাঝে দল করা মানে এদেরকে বিভক্ত করে ফেলা। বাংলাদেশের সব মুসলমানের সাথেই আমি থাকি, সে ভালো।" আমি বললাম, "কিন্তু কেও তো আপনাকে মেনে নেবে না, তাছাড়া, কারো না কারো সাথে থাকলে একটু সাহায্য পাবেন"। তিনি বললেন, "সবাই মেনে নেবে সালাম ভাই। কারণ কালেমার দাওয়াত এমন যে, ঐটা ব্যবহার করে দেখেন না একজন ভিক্ষুকও সব মুসলমানদের দয়া আর সাহায্য পায়। আমি না হয় ঐক্যের ভিক্ষুক হই। কালেমা নিয়ে সবার কাছে যাই, তাড়ায়ে দিলেও মারতে পারবেনা কেও।" চোখ খুলে দিলেন আমাকে।"
.
[শায়খ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের স্মৃতিচারণে শায়খ আব্দুস সালাম আজাদীর বক্তব্যের একাংশ]

.

এই লাইনটির দিকে লক্ষ্য করুন: “ঐ বছরেই শুনেছিলাম ড. জগলুল নাজ্জার ও জাহাঙ্গীর ভাইদের দাওয়াতে তিন শতাধিক সৈন্য মুসলিম হয়ে যায়। সরকারি হস্তক্ষেপে এই দাওয়াতি কাজ বন্ধ রাখা হয়।” !!!

.

অর্থাৎ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব জাযিরাতুল আরবে, বিলাদুল হারামাইনে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস উপেক্ষে করে যেসব মুশরিক-কাফির আমেরিকান সেনা আনা হয়েছিল তাদের কে গিয়ে ইসলামের দাওয়াহ দিচ্ছিলেন। যদিও একজন আলেম হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল ক্বুর'আন সুন্নাহ পরিপন্থী এই সিদ্ধান্তের (জাযিরাতে কাফির সেনার প্রবেশ) প্রতিবাদ করা। যদি আসলেই "তবে সহীহ হাদীসের এক চুল দূরে যেতে ছিলো তাঁর প্রচন্ড আপত্তি" - এই কথা সত্য হয়ে থাকে তবে নাবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুশয্যায় যে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই নির্দেশের এরকম নির্লজ্জ উপেক্ষা ও স্পষ্ট অবাধ্যতা মেনে নিতে তার "প্রচন্ড আপত্তি" থাকার কথা ছিল। তবে তার এতে প্রচন্ড কেন, কোন রকমের আপত্তি ছিল বলে জানা যায় না। যাই হোক, আমরাও আপাতত নাহয় এ বিষয়টুকু বাদ দিলাম। কিন্তু তবুও এর চাইতেও গুরুতর একটি বিষয় থেকে যায়। আব্দুস সালাম আজাদী বক্তব্য অনুযায়ী কাফিরদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ চলছিল পরে, সরকারের অর্থাৎ আল সাউদের নির্দেশে দাওয়াতী কাজ বন্ধ করা হয়।
.
আমাদের সহাল মিডিয়ার ভাইরা এ লেখাটি পড়ে, উম্মাহর ঐক্য নিয়ে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সবাই আবেগে গদগদ হয়ে পরেন। অথচ এই আপাত নির্দোষ লেখার মধ্যে কতো গুরুতর বিষয় লুকিয়ে আছে তা আমাদের বুঝদার বলে পরিচিত ভাইদের চোখে ধরা পড়ে নি, কিংবা ধরা পড়লেও তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন নি।

.

প্রশ্ন হল আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীররা কাফিরদের কিসের দাওয়াত দিচ্ছিলেন? দ্বীন ইসলামের। আজাদী সাহেবের ভাষ্য মতে ৩০০ সেনা এতে ইসলাম গ্রহনও করেছিল। পরে এই দাওয়াত কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কার নির্দেশে? আল সাউদ সরকারের নির্দেশে। প্রশ্ন হল এর আগে ঐ পবিত্র ভূমিতে শেষবার কখন দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল?
.
সকল মুসলিম এটা জানে, আলেমরা তো অবশ্যই জানে এর আগে এই পবিত্র ভূমিতে দ্বীন ইসলামের দাওয়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, মক্কার ক্বুরাইশরা। আবু জাহল, আবু সুফিয়ান, ওয়ায়লিদ বিন মুগীরা, উমাইয়্যা বিন খালাফরা। এবং মক্কা বিজয়ের পর থেকে আর কেউ বিলাদুল হারামাইনে দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নি। আল সাউদ ছাড়া।
.
নিশ্চিত ভাবেই এ হল আল সাউদের কুফর বাওয়াহ বা সুস্পষ্ট কুফর। শুধুমাত্র মক্কার ক্বূরাইশ না, যুগে যুগে কাফিরদের সবার মধ্যে যে একটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল তা হলে তারা আল্লাহর দ্বীনের প্রতি মানুষকে আহবান করাকে বেআইনী ঘোষনা করতো। নূহ আলাইহিস সালামের ক্বওম থেকে শুরু করে নমরুদ, ফিরআউন, 'আদ, সামুদ, ক্বওমে লূত, প্রতিটি কাফির ক্বওম এবং তাদের নেতৃবৃন্দের অবস্থান ছিল এটাই - আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আহবান করাকে বেআইনি ঘোষণা করা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
.
এবং আল্লাহ শত্রু ও উম্মাহর শত্রু মুরতাদ আল-সাউদ ঠিক এই একই কাজ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে হাদীসের বিরোঢিতার ব্যাপারে "প্রচন্ড আপত্ত্তি" থাকা, "সাহীহ" বুঝ সম্পন্ন, উম্মাহর ঐক্যের ব্যাপারে এতো চিন্তিত আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবরা যখন এই সুস্পষ্ট কুফর দেখলেন তখন তারা কি করলেন?
.
আমরা যা প্রকাশ্যে তার ভিত্তিতে বলতে পারি তিনি সহ অন্যান্য এ ঘরানার শায়খরা তা উপেক্ষা করলেন, এবং আল সাউদের এই কুফরের আনুগত্য করলেন এবং তাদের সাসঙ্কে বৈধতা দিয়ে যেতে লাগলেন তাদের বক্তব্য, কলম এবং ফাতাওয়ার মাধ্যমে এবং যারা এধরনের কুফরকে কুফর বলে প্রকাশ করলো, সেসব মুওয়াহিদীনকে তারা খাওয়ারিজ, অবিবেচক, মূর্খ, হঠকারী আখ্যা দিলেন। তাহলে কিভাবে আপনি এরকম একটি অবস্থানের পক্ষে অজুহাত খুজে বের করবেন? এবং কিভাবে আপনি এর পক্ষে যুক্তি দেবেন? এবং এই পর্যায়ের বিচ্যুতি উপেক্ষা করবেন? যে খিয়ানত আপনার সাথে হয়েছে আপনি সেটা মাফ করতে পারেন, কিন্তু আল্লাহ-র দ্বীনের সাথে, কিতাব ও সুন্নাহর সাথে এই খিয়ানত মাফ করার আমি বা আপনি কে? আর তা উপেক্ষা করার আমার বা আপনার এখতিয়ার কি? কিভাবে এই সুস্পষ্ট বিচ্যুতি উপেক্ষা করে আমি দাবী করতে পারি যে ব্যক্তি এরকম করেছে সে আল্লাহ-র দ্বীনের দা'ঈ হিসেবে দায়িত্ব পূর্ণ করেছে? দ্বীনের হক্ক আদায় করেছে? 'ইলমের সংরক্ষন করেছে এবং উম্মাহকে পথ দেখিয়েছে? অথচ আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনুগত্য করার শপথ নিয়েছি!

.

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন, “যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফির তারা ক্বিতাল করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা ক্বিতাল করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।” [সূরা নিসা: ৭৬]

.
একজন মুসলিমের, একজন মুওয়াহিদের আনুগত্য সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সল্লালল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি - আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সল্লালল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহর প্রতি। আর মানুষের মধ্যে মু'মিন মূওয়াহিদ তাদেরকেই অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহন করবে যারা এই দুটি বিষয় - ক্বুর'আন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরে, এবং এগুলোর উপর আমল করে - যারা কুফর বিত ত্বগুত ও ইমান বিল্লাহর হক্ক আদায় করে - যারা আল-ওয়ালা আল-বারার হাক্ক আদায় করে। একই সাথে তারা শত্রু হিসেবে গ্রহন করবে শয়তানকে, সকল তাওয়াগীতকে এবং ত্বগুতের সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সৈন্যদের। তারা শত্রু হিসেবে গ্রহন করবে ওই সকল লোককে যারা ত্বগুতের আনুগত্য করে, ত্বগুতের আনুগত্যের দিকে আহবান করে, ত্বগুতকে বৈধতা দেয়, ত্বগুতের জন্য অজুহাত তৈরি করে, ত্বগুতের জন্য আল্লাহর দ্বীনের অপব্যাখ্যা করে, এবং ত্বগুত বর্জন করা থেকে ত্বগুতকে প্রত্যাখ্যান করা থেকে মুসলিমদের দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।
.
এমন সকল লোকের প্রতি সম্পর্ক ছিন্ন করা মু'মিন-মুওয়াহিদের দায়িত্ব। হোক সে আআদের কারো বাবা, মা, সন্তান, সহোদর, স্ত্রী, স্বামী, বন্ধু, উস্তাদ, প্রতিবেশী কিংবা শায়খ। আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর অবশ্যই আল্লাহর দ্বীনের দাবি প্রাধান্য পাবে। পরম উপকারী অন্তরং সুহৃদ যদি ত্বগুতের প্রতি আহবানকারী হয়, যদি আল্লাহর দ্বীনের সাথে খিয়ানতকারী হয়, আল্লাহর শত্রুদের বন্ধু হিসেবে গ্রহনকারী হয় - তবে আমাদের তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহন করতে হবে। কারন ব্যক্তির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, আমার রবের প্রতি আমার দাসত্বের চেয়ে অধিক প্রাধান্য পেতে পারে না। ব্যক্তির প্রতি আমার সহমর্মিতা আমাকে কখনো আমার দায়িত্ব ভুলিয়ে দিতে পারে না। হোক সে আওয়ামের কোন একজন কিংবা একজন বিন বায, একজন ইবন উসাইমীন, কিংবা ফজলুল হক আমিনি কিংবা আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কিংবা অন্য কেউ। ব্যক্তির প্রতি সম্মান কখনও হাক্বের উপর প্রাধ্যন পাবে না। হাক্ব হাক্বের জায়গায়, সম্মান সম্মানের জায়গায়। আর এটাই মিল্লাতু ইব্রাহীম, এটাই সরল ও সুস্পষ্ট পথ।

.

“তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।” [সূরা মুমতাহিনা: ৪]

.

আমাদের বন্ধুত্ব ও শত্রুত্ব, আনুগত্য ও বিদ্রোহের ভিত্তি হবে শারীয়াহ এবং একমাত্র শারীয়াহ। কোন জাতি-বর্ণ, ভাষা, মাযহাব, মাসলাক এখানে বিবেচ্য হবে না। ব্যক্তিগত অনুরাগ বিরাগ, ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য কিংবা সংকট, ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা, অন্তরঙ্গতা, সখ্য, দুর্বলতা, ঋণগ্রস্থতা কিংবা আত্মীয়তা এখানে শারীয়াহর মাপকাঠির উপর প্রাধান্য পাবে না। শারীয়াহই আমাদের জন্য নির্ধারন করে দেবে, কাদেরকে আমরা বন্ধু হিসেবে গ্রহন করবো আর কাদেরকে আমরা শতুর হিসেবে গ্রহন করবো। আর আমাদের কাছে এটা পরিশকার এবং যেমনটা আল্লাহ যার কাছ থেকে দৃষ্টি শক্তি ছিনিয়ে নেন নি এমন সবার কাছে পরিষ্কার - বর্তমান দুনিয়াতে হাক্কের সর্বাধিক নিকটবর্তী, ক্বুর'আন ও সুন্নাহর সর্বাধিক পাবন্দি করছেন মুজাহিদিন ফি সাবিলিল্লাহ।
.
দুঃখজনক বিষয় হল বর্তমানে নিজেদের "জিহাদি মানহাজের" বলে দাবি করা এবং যারা আওয়ামের চোখে "জিহাদী মানহাজের" ভাই বলে পরিচিত এমন অনেকই এই মূলনীতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর সব কিছুর আগে শারীয়াহর ভিত্তিতে আল ওয়ালা ওয়াল বারা, তাওহীদের দাবি, মিল্লাতু ইব্রাহীমের দাবি বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই এই অসুখ বিদ্যমান কিন্তু সম্প্রতি আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইদের প্রতিক্রিয়া থেকে তা পুর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে অধিক স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আমাদের "জিহাদী মানহাজের" ভাইরা শায়খ আব্দুর রাহমান, আতাউর রাহমান সানি, সিদ্দিকুল ইসলাম সহ এই ভুমীর মুওয়াহিদিনের কথা ভুলে গেছেন - যারা এই ভূমিতে "আল্লাহর ইবাদাত ও ত্বগুতকে বর্জন"-এর দাওয়াহ দিয়েছিলেন তাদের রক্তের দাবি ভুলে গেছেন। ত্ত্বগুতের কারাগারে বন্দী বিভিন্ন তানযীমের শত শত ভাইদের কথা ভুলে গিয়েছেন। তাদের নির্যাতিত মা বোন স্ত্রীদের কথা ভুলে গেছেন। আল্লাহর রাস্তায় সস্তায় জীবন বিলিয়ে দেওয়া মিশর, লিবিয়া, আলজেরিয়া, আফগানিস্তান, শিশান, বসনিয়া, ইরাক, শাম, ইয়েমেনের মুজাহিদিনের কতাহ তারা ভুলে গেছেন, ত্বগুতের কারাগারে বন্দী শায়খুল মাশায়েখ উমর আব্দুর রাহমান, শায়খ আবু হামযা, শায়খ নাসির আল-ফাহাদ, শায়খ সুলাইমান আল-'উলওয়ান, শায়খ ওয়ালিদ সিনানি, শায়খ খালিদ শেইখ মুহাম্মাদ, শায়খ আবু যুবাইদা, শায়খ হারুন ইজহার, শায়খ জসীমুদ্দীন রহমানীদের কথা তাদের কাছে হালকা হয়ে গেছে। শায়খ ফারিস আয-যাহরানি, শায়খ ইউসুফ আল-উয়ায়রি, শায়খ হামুদ বিন উক্বলা আশ-শু'আইবি, শায়খ আব্দুর রশীদ গাজীদের রক্তের কথা তারা ভুলে গেছেন। আর তাই তাদের কাছে এই সব কিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে একজন আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। এই একজনের মৃত্যুতে তারা শোকে মুহ্যমান হয়ে তাকে দ্বীনের হক্ক পূরনকারী আখ্যায়িত করছে অথচ এই মযলুমদের উপর যে যুলুম করা হয় তা যে করা হয় আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরদের মতো ব্যক্তিদের ব্যাখ্যা ও ফাতাওয়ার ভিত্তিতে তা তারা ভুলে যাচ্ছেন। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বু'আতা ইল্লাহ বিল্লাহ।
.
অথচ আমরা মুজাহিদিনকে আমাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি। যে যুলুম শায়খ আব্দুর রহমান রাহিমাহুল্লাহর সাথে হয়েছে তা কি আমি বা আপনি ক্ষমা করতে পারি? যে খিয়ানত আল্লাহর দ্বীনের সাথে করা হয়েছে তা কি আমি বা আপনি ক্ষমা করতে পারি? বিশ্বব্যাপী যে মুজাহিদিনকে খাওয়ারিজ বলে চিত্রায়ীত করা হয়েছে - তাদের উপর করা যুলুম কি আমি বা আপনি আমাদের ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতির হিসেবে মিলিয়ে মিটিয়ে দিতে পারি? অথচ আমরা মুজাহিদিনকে আমাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি। আমরা কি পারি তাকে অনুসরনীয় হিসবে গ্রহন করতে যে ত্বগুতের আনুগত্যের দিকে আহবান করে? যে ত্বগুতের আনুগত্যকে ওয়াজিব বলে, যে ত্বগতের শাসন আর খিলাফাতের মধ্যে পার্থক্য দেখে না? যে এই কুফরী সংবিধানকে ইসলামসম্মত বলে? যে বলে এসব শাসক বৈধ শাসক, এসব রাস্ট্র দারুল ইসলাম আর মুজাহিদিনরা হল বিভ্রান্ত, গোমরাহ, অবিবেচক, হঠকারী ও যুল খুওয়াইসারা উত্তরসূরি, অথচ আমরা মুজাহিদিনকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি। হক্ব হক্বের জায়গায়, সম্মান সম্মানের জায়গায়।
.
“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top