রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬

শায়খুল ইসলাম কাকে বলে?

1 টি মন্তব্য:

শায়খুল ইসলাম কাকে বলে?

.

দ্বীন ইসলামের সকল শাখায় যে আলিমের গভীর বিচক্ষনতা ও প্রায়োগিক দক্ষতা থাকে এমন ব্যক্তিই প্রকৃত অর্থে একজন শায়খুল ইসলাম। যিনি হাদিসের শুদ্ধাশুদ্ধি ও জারহ-তাদীলে অভিজ্ঞ, উলুমুত তাফসির সম্পর্কে সম্যক অবগত, ফিকহী ক্ষেত্রে সকল মত ও পথ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ, ব্যাকরনে যার জ্ঞান আলিমদেরও পাথেয়, সীরাহ বা তারীখে যার ইলম মানদন্ড স্বরূপ, ফাতাওয়া ও মাসাইলের ক্ষেত্রে নিজ মাযহাব তো বটেই অপরাপর মাযহাবের আলিমদের নিকটও যিনি ব্যাপকভাবে গ্রহনযোগ্য; সর্বোপরি যার ইলম থেকে উলামা-ত্বলাবা, আওয়াম-আওসাত সকলেই উপকৃত হন এমন লোককেই শায়খুল ইসলাম বলা হয়ে থাকে।

.

ইসলামের ইতিহাসে অনেক বড় বড় উলামা এসেছেন তাদের সকলকেই শায়খুল ইসলাম নামে ডাকা হয়নি। এর অন্যতম কারন যে তাদের অনেকেই নিজের জন্যে একটা কর্মক্ষেত্র তৈরী করে নিয়েছিলেন এবং সেটাকেই অত্যধিক প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে ঐ ময়দানে সবার চেয়ে উপরে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। যেমন হাদিসের ময়দানে ইমাম বুখারি বা মুসলিম, ফিকহের জগতে ইবনুল কুদামা আল মাকদিসী বা ইমাম ইবনুল আবেদীন, ব্যাকরনের ক্ষেত্রে ইমাম সিবাওয়াইহ, তাফসীরের ক্ষেত্রে ইমাম ত্বাবারী প্রমুখ। আবার ইমাম ইযযিদ্দিন ইবনু আব্দিস সালাম, ইমাম ইবনুল জাওযী, ইমাম ইবনু তাইমিয়া, ইমাম ইবনু আব্দুল অহহাব প্রমুখ মহামনীষীর নামের সাথে ইতিহাস যোগ করে দিয়েছে শায়খুল ইসলাম উপাধি। রাহিমাহুমুল্লাহ।

.

ইসলামী আক্বীদার সাথে এই বিষয়টার কিছু পর্যালোচনা হয়ে যাক। নাবীগন ছাড়া কেউই মাসুম নন, সর্বস্মতিক্রমে এটিই আহলুস সুন্নাহর আক্বীদা। সেই হিসাবে কোন শায়খুল ইসলামকে পাপ বা ভূল ত্রূটির উর্ধ্বে জ্ঞান করা যাবে না। তার মাঝে যতই ভাল ও বড়ত্বের সমাবেশ ঘটুক না কেন, তার থেকে প্রাপ্ত মন্দকে মন্দ বলেই গণ্য করতে হবে। যদিও এর দ্বারা তার বিন্দুমাত্র অসম্মান বা মর্যাদায় কমতি ঘটানো যাবে না।

.

বর্তমান সময়ের দুইজন শায়খুল ইসলাম হলেন হানবালিদের মধ্যে ইমাম ইবনুল বায এবং হানাফিদের মধ্যে ইমাম তাকী সাহেব। এতে কোন সন্দেহ নেই যে এই দুইজনের ইলম থেকে মুসলিম উম্মাহ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। দ্বীনের সকল ক্ষেত্রেই তারা উম্মাহকে খায়র ঢেলে দিয়ে গেছেন। কিন্ত আগের প্যারার কথা অনুযায়ী; তাদের দুইজনের মাঝ থেকেই এমন কিছু মারাত্মক ভুল প্রকাশিত হয়েছে যা কোন ভাবেই অনুসরনযোগ্য তো নয়ই বরং প্রকাশ্যে বর্জনের ঘোষনা দেয়ার যোগ্য। ইমাম ইবনুল বায বিলাদুল হারামাইনে আম্রিকি কুফফারদের নাপাক সেনাদের জায়গা দেয়ার ব্যাপারে মস্ত ভুল ফতোয়া দিয়েছেন যা উম্মাহকে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, তার কিছু বক্তব্য ইসরাইলের সমর্থনে গিয়েছে এবং এর মাধ্যমে মুসলিমগন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আবার তাকী উসমানী সাহেব পাকিস্তানের মত সেকুলার দেশের নামেমাত্র শরীয়াহ কোর্টের চিফ জাস্টিস হয়ে অনেকটাই তাতারীদের ইয়াসিকের আদলে শাসনব্যবস্থা সমর্থন করেছেন, পাকিস্তান সীমান্তে চলমান জিহাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ততা ও নিষ্ক্রিয়তা এমনকি কালে ভদ্রে বিরোধিতাও করে দেখিয়েছেন।

.

শেষ কথা এই যে, ইমাম ইবনুল বায বা তাকী সাহেবের ঐ ভুল গুলোর জন্যে তাদের বাকি কাজ অবশ্যই নষ্ট হয়ে যায় না বা তাদের শায়খুল ইসলাম উপাধিতে কোন আপত্তির প্রশ্ন তুলে না। কিন্ত তাদেরকে মাসুম মনে না করে তাদের ভুল গুলোকে অবশ্যই ভুল হিসেবেই দেখতে হবে এবং বর্জন করে চলতে হবে।

1 টি মন্তব্য:

 
back to top