রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬

ওহে মুসলিম জাতি! আমি সবসময় বলি ইসলামের মূল বেনা বা ভিত্তি পাচটা

কোন মন্তব্য নেই:

ওহে মুসলিম জাতি!
আমি সবসময় বলি ইসলামের মূল বেনা বা ভিত্তি পাচটা।এই পাচটির মুল হচ্ছে বেনা হচ্ছে ঈমান।আর ঈমানের মুল ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ।
.
যতক্ষন পর্যন্ত একজন মানুষ তাওহীদ ক্লিয়ার না করে সে ইসলামেই প্রবেশ করেনা।
.
তাওহীদ মানে হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদকে বজায় রাখা।
এটা হচ্ছে ঈমানের মুল ভিত্তি।
এই তাওহীদের দুইটা রোকন রইয়েছে।
একটা  হচ্ছে সমস্ত গাইরুল্লাকে বর্জন করা এরপরে শুধুমাত্র আল্লাহকে গ্রহন করা।
.
বর্জন এবং গ্রহন এই দুটি মিলে তাওহীদ পুরন হই।
শুধুমাত্র আল্লাহকে গ্রহন করল,
গাইরুল্লাহকে বর্জন করল না সে মুসলমান না।
.
.
আল্লাহ আছেন এই কথা ইহুদি-খ্রিষ্টানরাও বিশ্বাস করে,হিন্দুরাও বিশ্বাস করে, দুনিয়ার সমস্ত ধর্মের লোকেরাই বিশ্বাস করে আল্লাহ আছেন।
.
" যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা
করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন,
তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ,
অতঃপর তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে ?
(সুরা যুখরুফঃ ৮৭)
.
"যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন,
কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে,
চন্দ্র ও সূর্যকে কর্মে নিয়োজিত
করেছে?
তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ।
(সুরা আনকাবুতঃ ৬১)
.
"যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন,
কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে,
অতঃপর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে উহার মৃত
হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা
অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।
বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই।
কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না।
(সুরা আনকাবুতঃ ৬৩)
.
"বলুন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে,
তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল।
এখন তারা বলবেঃ সবই আল্লাহর। বলুন,
তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? বলুনঃ
সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?
এখন তারা বলবেঃ আল্লাহ। বলুন, তবুও কি
তোমরা ভয় করবে না? বলুনঃ তোমাদের
জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর
কর্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল
থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না ?
এখন তারা বলবেঃ আল্লাহর।
(সুরা মু'মিনুনঃ৮৪-৮৯)
.
" তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুযী দান করে
তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন
থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও
চোখের মালিক? তাছাড়া কে
জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন
এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে
বের করেন? কে করেন কর্ম সম্পাদনের
ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে,
আল্লাহ! তখন তুমি বলো তারপরেও ভয়
করছ না? (সুরা ইউনুসঃ ৩১)
.
"আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর,
কে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন?
তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।
(সূরা লোকমান, আয়াত: ২৫)
.
সুতরাং সৃষ্টিকরতা যেমন আপনি আমি বিশ্বাস করি আল্লাহকে তেমনিভাবে মক্কার কুফফাররাও বিশ্বাস করত আল্লাহকে।
এখানে কোন পার্থক্য নেই।বরতমান যুগের ইহুদি খ্রিস্টানরাও আল্লাহ বিশ্বাস করে।
কুরান সুন্দর করে তাদের কথা উপস্থাপন করেছে।
.
আল্লাহতায়ালা বলছেন,
ইয়াহুদী এবং নাসারা বলে আমরা আল্লাহর সন্তান এবং আল্লাহর নাতি-পতি,আল্লাহর প্রিয় লোক।
সুরা মায়েদার ১৮নং আয়াতে বলা আছে এটা।
.
এমনিভাবে শয়তানও বিশ্বাস করে আল্লাহ আছেন এবং সে আল্লাহকে ভয়ও করে।সুরা আনফালের ৪৮ নং আয়াতের একাংশে শয়তান বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, আল্লাহতায়ালা বড় কঠিন শাস্তিদাতা।তাহলে শয়তানও বিশ্বাস করে আল্লাহ আছেন।
.
এইরকমভাবে সুরা হাশরের ১৬ নং আয়াতে বলা আছে ইন্না আখফুল্লাহি রব্বিল আলামীন। শয়তান বলছে আমি সেই আল্লাহকে ভয় করি যিনি গোটা জগত সমুহের রব।
.
বুঝা গেল,
দুনিয়ার বরতমান কুফফাররা এমনকি শয়তান পরয্যন্ত সকলে বিশ্বাস করে আল্লাহ আছেন।
.
তাহলে মুমিনদের সাথে,মুসলিমদের সাথে এদের পার্থক্যটা কোথাই?
.
এটা যদি একজন মানুষ ক্লিয়ার হতে না পারে, বুঝে শুনে সাক্ষ্য না দেয় আশহাদুআল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
তাহলে সে ইসলামে প্রবেশ করেনা।
তারমধ্যে ওই ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকেনা।
.
আল্লাহর রাসুল (সা:) বিষয়গুলোকে সুন্দরভাবে ক্লিয়ার করে দিয়েছেন।
যারা এই ত্বাগুতকে বর্জন করতে পারেনি অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হই, যাদের আনুগত্য করা হই, এদেরকে যদি কোন ব্যক্তি ত্যাগ না করে শুধু আল্লাহকে মানে তাহলে সে ব্যক্তি যদিও নামাজ পড়ে,যদিও রোজা রাখে,যদিও হ্বাজ্জ করে,যাকাত দেই সব কিছু করে এরপরেও সে জাহান্নামি হবে।ফাহুওয়া ফি জাহান্নাম... অসল্লা...আন্নাহুম মুসলিম।
যদিও সে নামাজ পরে রোজা রাখে এবং সে দাবি করে সে মুসলিম তারপরেও সে জাহান্নামী।
.
এইজন্যই কুরানুল কারীমে সুরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে পরিস্কার বলা হয়েছে, ফামাই ইয়াগফুর বিত ত্বাগুত,অইউমিন বিল্লাহি ফাকাদইস্তামসাকা বিল উরওয়াতিল উসকা লান ফি সোয়া মা লাহা।
যারা কুফুর বিত ত্বাগুত করল তাগুতকে কুফুর করল,বর্জন করল, প্রত্যাখ্যান করল।
অইউমিন বিল্লাহি অতপর আল্লাহর উপর ঈমান আনল।ত্বাগুতকে বর্জন করল, এরপরে আল্লাহর উপর ঈমান আনল।বর্জন না করে ঈমান গ্রহনযোগ্য নই।আল্লাহকেও মানলেন,অন্যদেরকেও মানলেন।ও শব্দটা গ্রহনযোগ্য নই।এজন্য কুরানুল কারীমে, এই বিষয়টা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,ফামাই ইয়াগফুর বিত ত্বাগুত, যে ব্যক্তি ত্বাগুতকে প্রত্যাখ্যান করল, বর্জন করল।অইউমিন বিল্লাহি অতপর আল্লাহর উপর ঈমান আনল ফাকাদইস্তামসাকা বিল উরওয়াতিল উসকা, সে মজবুত হাতল ধারন করল আন ফিসোয়া মা লাহা।যা কখনো ছিড়ে যাবার নহে।
দুইহাত দিয়ে ধরল।
একটা বর্জন আরেকটা গ্রহন।
কোন জিনিস শক্তভাবে ধরতে হলে কইহাত লাগে?দুইহাত লাগে।
সেই দুই হাতের নাম হচ্ছে কুফুর বিত তাগুত,ঈমান বিল্লাহ।
.
এমনিভাবে কুরানুল কারিমের অন্য আরেকটা আয়াত সুরা নাহলের ৩৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ওয়ালাকাদ বায়াছনা ফি কুল্লি উম্মাতির রসুলা,আনি ইবাদুল্লাহা ওয়াজতানিবুত তাগুত।
আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসুল পাঠিয়েছি এই মর্মে আদেশ দিয়ে,আনি ইবাদুল্লাহা ওয়াজতানিবুত তাগুত।তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগুতকে বরজন করবে,ইজতেনাফ করবে,ত্বাগুত থেকে নিরাপদ দুরে থাকবে।
.
ট্রাকের পিছনে যেমন লেখা থাকে ১০০ হাত দুরে থাকুন,ইজতেনাফ মানে হচ্ছে আরবিতে সেটা।তার মানে হচ্ছে আনি এবাদুল্লাহা, এক আল্লাহর ইবাদত করবে ওয়াজতানিবুত ত্বাগুত এবং তাগুত থেকে নিরাপদ দুরে থাকবে।
.
এই ত্বাগুত কারা?
এটা চিনা দরকার। নতুবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর স্বাক্ষী দিয়েছি ত্বাগুতকে বর্জন করার জন্য স্বাক্ষী পূরন হবেনা।
.
আমরা বলেছি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এখানেও দুইটা জিনিস রয়েছে।না বুঝার কারনে মুসলিমরা ক্লিয়ার হচ্ছেনা।
লা ইলাহা মানে কোন ইলাহা নেই।ইলাহা মানে কি?যার আনুগত্য করা হই,যার পুজা করা হই, যার কথা মেনে চলা হই তার নাম কি?ইলাহ।
লা ইলাহা বলে আমরা প্রথমে বর্জন করছি আমি কারও বিধান মানবনা,কারও আনুগত্য করবনা,কারও এবাদত করবনা।এরপরে বলছি ইল্লাল্লাহ। মানে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া।এই জিনিসটা যখন ক্লিয়ার হই, প্রথমে লা ইলাহা পরে ইল্লাল্লাহ।এতে করে একজন লোক ইসলামে প্রবেশ করে। আর এই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-ই হচ্ছে জান্নাতের চাবি।হাদিসে বলা হয়েছে, মান ক্বলা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দাখালাল জান্নাহ।যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
.
এখন হরিচরন যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে জান্নাতে যাবে?হরিচরন যেভাবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করল সে বুঝল না।ঠিক তেমনিভাবে কোন একজন দাড়ি-টুপিওয়ালাও যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে না বুঝে তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তির মধ্যে আর হরিচরনের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।হরিচরন যেরকম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে এরপরে মুরতির সামনে সেজদায় পরে ঠিক সেইরকমভাবে একজন লোক মুসলিম দাবি করে আব্দুর রহমান নাম নিয়ে,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে কবরে গিয়ে সেজদা করে, একজন লোক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে এরপরে মুরতির নামে জবাই করে তাহলে সে যদি কাফের হই, অন্যদিকে আরেকজন লোক মুরতির নামে জবাই নাকরে গাইরুল্লাহর নামে, মাঝারের নামে জবাই করে তার মধ্যে কোন পার্থক্য আছে??
.
একজন লোক তার দেব-দেবীর নামে মানত করল আরেকজন লোক মাঝারের নামে মানত করল কোন পার্থক্য আছে??
.
কারন হচ্ছে এই। মানত করা একটা ইবাদত।দোয়া করা একটা ইবাদত।আদ দোয়াউ মকখুল ইবাদাহ।দোয়া হচ্ছে ইবাদতের মঘজ।
.
এখন সেই দোয়া করব কার কাছে?
দোয়া মানে ডাকা,প্রার্থনা করা।
.
এখন যদি কোন ব্যক্তি এই ইবাদত আল্লাহর জন্য না করে কোন ব্যক্তির কাছে প্রার্থনা করে, মাঝারে গিয়ে মরা ব্যক্তির কাছে প্রার্থনা করল,আমাকে সন্তান দান কর,আমাকে তুমি ভাগ্য পরিবরতন করে দাও,সেই ব্যক্তি দোয়া করল কার কাছে?গাইরুল্লাহর কাছে।আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে।এই গাইরুল্লাহর কাছে দোয়া করা,প্রার্থনা করা,চাওয়া এটা একটা শিরকে আকবার।এই ব্যক্তি যদিও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে তারপরেও তার মধ্যে আর হরে কিশ্ন হরে রামের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।
.
কারন সে ত্বাগুতকে বরজন করে নাই।এজন্য পরিস্কার করা হয়েছে,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।লা ইলাহা মানে মানে কোন ইলাহা নেই, কোন মাবুদ নেই।কুরানুল কারীমে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেন,

....আমি বলে থাকি স্বাক্ষীতো দেই (আশহাদুল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) কিন্তু বুঝলাম না কিছুই।না বুঝে স্বাক্ষী দেয়া  দুনিয়ার আদালতেও গ্রহনযোগ্য নয়।একজন লোক আদালতে গিয়ে হাজির হল। আদালত জিজ্ঞাস করল তুমি কে?লোকটা বলল আমি একজন খুনের মামলার স্বাক্ষী।বল কে খুন করেছে?লোকটা বলল:তা জানিনা।বল কাকে খুন করেছে।লোকটা বলল:তাও জানিনা।আদালত বলবে বেটা ফাইযলামি করতে এসেছ?পুলিশ ডেকে ওকে জেলে ভরে দিবে। দুনিয়ার আদালতেও না বুঝে,না জেনে স্বাক্ষ্য দেয়া নিষিদ্ধ।আল্লাহ তায়ালার আদালতে যদি কোন ব্যক্তি না বুঝে স্বাক্ষী দেয়,না জেনে স্বাক্ষীদাতা গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা।সে ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করতে পারেনা।সেজন্য এটাকে স্বাক্ষী বলা হয়েছে।আশহাদুল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সকল নবীদের দাওয়াত ছিল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।.........
.
.
.
#আমার প্রান-প্রিয় শাইখ শাইখুল হাদিস মুফতি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন রহমানি (হাফিযাহুল্লাহ)র অতি গুরুত্বপূরন জ্বালাময়ী ভাষনের সামান্য কিছু অংশ তুলে ধরলাম মাত্র।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top