রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬

স্থানীয় আলিমদের সাথে অবশ্যই সম্পর্ক রাখা জরুরী কিন্তু এটা সমগ্র উম্মাহকে নিয়ে চিন্তা করার ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

স্থানীয় আলিমদের সাথে অবশ্যই সম্পর্ক রাখা জরুরী কিন্তু এটা সমগ্র উম্মাহকে নিয়ে চিন্তা করার ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নয়। বরং আধুনিক গ্লোবাল ভিলেজে আমরা চাইলেই সারা বিশ্বের উম্মাহ এবং ইসলামকে এড়িয়ে যেতে পারব না, আর এড়িয়ে গেলে যে বহুত ফায়দা হাসিল হয় এমনটাও না। সাথে সাথে শরীয়াহ তো আমাদের সমগ্র উম্মাহ সম্পর্কেই চিন্তিত হওয়ার শিক্ষা দেয়, তাই না?? উম্মাহ কী একটি দেহের মত নয়, যার এক অংশে আঘাত পেলে আরেক অংশ কষ্ট পায় আর এক অংশের আনন্দ আর আরেক অংশে বয়ে যায়? এসবকে আপনি আবেগী কথা বলেও এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তা আপনাকে দায়বদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ দিবে না।
.
জিহাদ হচ্ছে ফারদুল আইন বর্তমান সময়ের জন্য, যা প্রত্যেকটা ফিক্বহের অনুসিদ্ধান্ত থেকে পাওয়া যায়। ঠিক আছে আপনি না মানেন, জিহাদ তো ফারদুল কিফায়া অন্তত এটা মানবেন? এখন স্থানীয় আলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে যারা জিহাদ করতে চায়, তারা যেন ভুল না করে, জিহাদের নাম করে বিপথে না চলে যায় সেটার দায়িত্ব নেয়া। এই দায়িত্বের প্রথমেই যদি তারা বলেন যে, "জিহাদকে কেন্দ্র করে অনকে মিলিট্যান্সীর প্রতি উদ্ভুদ্ধ হয়েছে" তাহলে কেমন হয়? জিহাদে গিয়ে কী আমরা কাফিরদের সাথে ফুলের তোড়া বিনিময় করবো? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "কিয়ামাতের পূর্বে আমাকে তরবারী সমেত পাঠানো হয়েছে, যেন মানুষ বলে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই" -এর মাধ্যমে কী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিলিট্যান্সীর প্রতি উদ্ভুদ্ধ করছেন না? তারপর মসজিদে মিহরাব তৈরী করা হত সাহাবাদের অস্ত্রশস্ত্র রাখার জন্য!! এখন যদি বলেন এগুলো মিলিট্যান্সী না, তাহলে মিলিট্যান্সী মানে কী?
.
কাফিররা আমাদের সাথে গোলা-বারুদ দিয়ে যুদ্ধ করে, আমরা তাদের সাথে সাধ্যমত অস্ত্র-শস্ত্র দিয়েই যুদ্ধ করব, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিব। জিহাদ শুধু সমাজ সংস্কারের জন্য নয়, বরং আগ্রাসী শত্রুর মুকাবিলা এবং নিজেদের প্রতিরক্ষাীর জন্যও বটে। আমরা শুধু জিহাদকেই ইবাদাত হিসেবে নেই নি, আমরা দাওয়াহকেও নিয়েছি। আমরা বলি না যে শুধু জিহাদ করলেই হবে, শুধু আগ্রাসী কাফির মারতে পারলেই হবে... বরং আমারা বলি সাধ্যমত দ্বীনের প্রত্যেকটি ইবাদাত করতে হবে এবং ইবাদাত করার ক্ষেত্র আরো তৈরী করতে হবে। ক্ষেত্র তৈরী না হলে যতই আক্বীদা সহীহ হোক না কেন, মানুষ ইবাদাত করবে না... আর ক্ষেত্র তৈরী হলে মুনাফিকরাও প্রথম কাতারে ইবাদাত করতে বাধ্য। তাই সমাজ সংস্কারের জন্য শুধু দাওয়াহ... অথবা শুধু জিহাদের কথা আমরা বলি না।
.
যারা জিহাদের নাম করে নিরীহ লোকদের হত্যা করছে, তাদের এই কাজের জন্য কারা দায়ি? আমি বলব প্রথম সেইসব আলিমেরা দায়ি... যারা কিনা শরীয়াহ থেকে কারা নিরীহ এবং কারা অপরাধী তা স্পষ্ট করে দেয় না। কি কাজ করলে একজন নিরীহও অপরাধী হয়ে যায়, এবং কি কাজ করলে হয় না, এগুলো স্পষ্ট করে শরীয়াহর দলীল দিয়ে কখনোই দাওয়াহ তো দূরের কথা, নিজেদের মধ্যো আলোচনা হয় না। কাদের হত্যা করা কাদের উপর ফরজ, অথবা ওয়াজিব, কেন ফরজ বা ওয়াজিব এবং কাদের হত্যা করা হারাম, কেন হারাম সে ব্যাপারেও কখনো শরীয়াহ থেকে দলীল সহকারে আলোচনা করা হয় না... মানুষজনের মাঝে এইসব ব্যাপারে দাওয়াহর কথা তো বাদই দিলাম। এরমানে হচ্ছে, যারাই জিহাদের নামে কারো হারাম রক্ত ঝরিয়েছে, তাদের দায়ভারের একটা অংশ তাদের উপর যারা কিনা এ ব্যাপারে শরীয়াহ থেকে বাস্তব সম্মত কোন নির্দেশনা দেয় না।
.
এখন এর উপর যারা কিনা মুসলিমদের বিরুদ্ধে (হোক সেটা মুসলিমদের ক্ষুদ্র একটি অংশ) আগ্রাসী শত্রুদের বিরুদ্ধে উদার অথবা এইসব উদারপন্থী এবং তাদের অপরাধগুলো লুকিয়ে রেখে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করাকে সমালোচনা করে অথবা নির্বুদ্ধিত বলে, তবে এক্ষেত্রে এই ব্যাপারে কথা বলার কোন নৈতিক অধিকারই তার নেই।
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যে কখনো জিহাদ করে নি, অথবা জিহাদের যাওয়ার ইচ্ছাএ পোষণ করে নি, সে যেন মুনাফিকের একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।" এখন মানুষের কাছে যদি এই আক্বীদাই পৌছানো না হয়, তাহলে কিসের সহীহ আক্বীদা পৌছানো হল? মানুষের কাছে স্পষ্ট করে যদি তাগুত কারা কারা, তাদের বিরুদ্ধে কেন চিরকাল যুদ্ধ করতে হবে, তাদের মারতে হবে অথবা মরতে হবে, এই আক্বীদাই যদি পৌছানে না হয়, তবে কিসের সহীহ আক্বীদা পৌছানোর কথা বলা হয়েছে? যে আক্বীদা আল্লাহর পরিবর্তে তাগুতের পূজার বিরুদ্ধে কিছুই বলতে পারে না, তাকে সহীহ আক্বীদা বলে না। আর আপনি যখনই কুফর বিত তাগুতের দাওয়াত দিবেন, তখন আপনার জন্য, জিহাদ করেন আর না করেন, এর প্রস্তুতি কিন্তু ওয়াজিব হয়ে যাচ্ছে, কারণ তাগুত আপনাকে আর আরামে থাকতে দিবেন না। আর সেই জিহাদের জন্যেই চাই ঈমান বিল্লাহ... সহীহ আক্বীদা শব্দটা দিয়ে কি হবে যদি এখন মানুষ বিশ্বাস করে যে যুগের তালে তালে ইসলামকে মানবো?
.
যারা জিহাদের কথা বলে, এর মানে এই নয় যে তারা মানুষদের আর অন্য কিছু সম্পর্কে দাওয়াহ দেয় না। বরং বাস্তবতা হচ্ছে যখনই কেউ জিহাদের সম্পর্কে দাওয়াহ দেয়, তাকে দ্বীনের অন্যান্য বিষয়গুলোও বাধ্য হয়ে আনতে হয়। হতে পারে প্রথম দাওয়াহই জিহাদ হওয়া উচিত নয়, তবে বর্তমান আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদই ইসলামের পথে আসার একটা কারণ হবে না, সেটাকেও বাতিল বলে দেয়া যায় না। উম্মাহর সকলেই একই কাজ করবে এটা হচ্ছে অবাস্তব কথা। আবার উম্মাহর সকলেই জিহাদ করবে, এটাও আমরা বলি না। যারা মানুষকে তাওহিদ আর-রুবুবিয়াহ, তাওহীদ আল-উলুহিয়াহর দাওয়াহ দেয়, আমরা তাদের কাজের বাধা হয়ে দাড়াতে চাই না। সাথে সাথে আমরা এও আশা করি যে, যারা আমাদের সাহায্য করে না, অথবা সাহায্য করতে পারছে না, তারা আমাদের জন্য বাঁধা হয়ে দাড়াক, এভাবে যে তাদের এমন কথা অথবা কাজ, যেটার দ্বারা আগ্রাসী কাফির এবং তাগুতদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ বাধাগ্রস্থ হয়, এবং সাধারণ জনগণ কে তাগুতের জাতাকলের নীচে থাকতেই উদ্ভুদ্ধ করে।
.
বরং এইসব কথা যেগুলো থেকে জিহাদ এবং মুসলিমদের উপকারের চাইতে তাগুতের উপকার বেশি হয়, তাগুত যে কথাকে কাজে লাগিয়ে তার যুলুমকে চালিয়ে নিতে পারে, হ্যাঁ এইসব কথাই সেইসব জাহিল শ্রেণীর লোকদের যারা জিহাদে আগ্রহী তাদের আরো হিংস্র বানিয়ে তোলে। যখন তারা দেখে মুসলিমদের শত্রুদের পক্ষে আলিমদের মত যাচ্ছে, আর মুসলিমদের সম্মান এবং মর্যাদাকে উপহাসের বস্তু বানানো হচ্ছে, তখন তারা আর হিতাহিত জ্ঞান ধরে রাখতে পারে না। তারা নিরপরাধ আর অপরাধীর পার্থক্য করে উঠতে পারে না, এবং সুযোগ সন্ধানীরা তখন তাদের সাহজেই কাজে লাগাতে পারে। তাহলে এই জিহাদের নামে নিরীহ মানুষ হত্যার মূলটা আমাদের বুঝতে হবে।
.
আমরা জানি সকল মানুষ জিহাদ করবে না, অন্তত উম্মাহর বেশির ভাগ যেন জিহাদ সমর্থন করে এবং মুজাহিদদের সাহায্য করে এর জন্যেই জিহাদের দাওয়াহ। এবং এই দাওয়াহ ইসলামের অন্যান্য আহকামের দাওয়াহর বিপরীত কিছু বরং একটি অংশ এবং সমসাময়িক সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তাছাড়া শরীয়াহতে জিহাদের যে ফাযিলাত বর্ণিত রয়েছে, এর দাওয়াহ সঠিকভাবে পৌছনো গেলে যেসব মানুষের অন্তর চরম কলুষিত হয়ে যায় নি, তারাও দ্বীনদার হতে বাধ্য। কারণ জিহাদ মুসলিমদের একটি আশা দেখায়... উম্মাহ চরম নিরাশার মধ্যে রয়েছে, কাফির-মুনাফিদের বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র এই জিহাদ সম্পর্কেই শয়তানের মুসলিমদের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে, এর জন্য হলেও তো জিহাদের দাওয়াহ বেশি বেশি দেয়া উচিত, তাই না?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top