রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬

কেন ‘জিহাদী’গন জিহাদে আসছেন না?

কোন মন্তব্য নেই:

কেন ‘জিহাদী’গন জিহাদে আসছেন না?

.

বাংলাদেশের যুবসমাজের মাঝে ইসলামী চেতনা ও জিহাদী জযবার যে ঢেউ সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় এক হিদায়াত, বিশ্বব্যাপী আলেমদের দাওয়াতী কর্মকান্ডের সুফল এবং মুসলিম উম্মাহর সার্বিক প্রচেষ্টার সামগ্রিক পরিনতি। আমরা দেখতে পাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুনসমাজের এক বিশাল অংশ স্বেচ্ছায় ইলমী, তারবিয়তি, আমলী বিভিন্ন কার্যক্রমে দিনকে দিন অগ্রসরই হচ্ছে। আবার মাদ্রাসার প্রচলিত গন্ডিতে আবদ্ধে থেকেও একদল উজ্জীবিত ছাত্র ও শিক্ষক এই ধারায় যুক্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর অবস্থা, আমীর-উমারার মতাদর্শ, উম্মাহর বিভিন্ন সমস্যা বা ফেতনা সর্বোপরি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমদের জয় পরাজয়ের খবরাখবর সম্পর্কে ওয়াকেফ হতে পারছে। আলহামদুলিল্লাহ, সংখ্যায় কম হলেও এদেশের মুসলিমগন ধীর ধীরে মুসলিম উম্মাহ ও দ্বীনের বিশ্বজনীনতা অনুধাবন করতে পারছেন।

.

কোন বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখার দাবি হল সেই জ্ঞানকে কাজে পরিনত করা। ইলমকে আমলে পরিনত করা এরই নাম। তবে আমরা এদেশের যে ভাইদের নিয়ে কথা বলছি তাদের বিশাল অংশের মাঝে এই গুনটি অনুপস্থিত দেখা যায়। হ্যা, তারা অন্তরে জিহাদের জযবা ধারন করছে বা মুসলিম উম্মাহর জন্যে কুরবানি করার মানসিকতাও প্রস্তত করছে এমনকি কেউ হয়ত নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও রাজি হচ্ছে কিন্ত সঠিক পথনির্দেশনা, মানহাজের সঠিক বুঝ বা অপরাপর বিভিন্ন উপাদানের অভাবের কারনে দ্বীনের জন্যে ফুলটাইম এফোর্ট দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। উল্লেখ্য এখানে আলোচনা হচ্ছে শুধু সেসব ভাইদের নিয়ে যারা জিহাদপন্থী বা জিহাদী, যাদের মাঝে জিহাদের অর্থ তাহরীফ করার মানসিকতা নেই, যারা মাদখালিজম-ইরজা বা সৌদি সালাফিজম এর বিষবাষ্প থেকে মুক্ত, যারা অন্ধ তাকলীদ ও পীরপূজা থেকে বিশুদ্ধ, যারা হিযবিইয়্যাহ তথা দলের উপাসনার ধারনা থেকে পরিশুদ্ধ।

.

আমরা যদি এই কারন গুলোকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট দেখতে চাই তবে মূলত নিচের কয়েকটি কমন বিষয়কে চিহ্নিত করতে পারব। এখানে সমস্যাগুলোই মূলত চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এগুলোর মাঝেই সমাধানও নিহিত আছে, এর জন্যে জটিল ও বিশ্লেষনধর্মী কোন সমাধান নিষ্প্রয়োজন।

.

১। জিহাদের প্রকৃত দাবি অনুধাবন করতে না পারা: ভাইদের অনেকেই জিহাদের ফিকহ অধ্যয়ন করেছেন, জেনেছেন যে কখন জিহাদ ফারদুল আইন হয়ে যায়। কিন্ত নিজের জীবনে তা প্রয়োগ করার সুযোগ তার হয়ে উঠে নি। তিনি হয়ত বুঝতে পারছেন যে অমুকের উপর এই হুকুম বা ঐ দেশের জন্যে জিহাদ ফারদুল আইন কিন্ত নিজের ব্যাপারে হুকুম বের করেননি। এই ভাইরা তালিবান বা আল ক্বায়িদা এসব হক্ব দলের প্রতি ভালবাসা তো রাখছেন কিন্ত নিজের উপর শারঈ হুকুম প্রয়োগ করে এদের সাথে জুড়ে যাওয়ার মত ক্ষেত্র প্রস্তত করে উঠতে পারে্ন নি। অবচেতন মনেই শয়তান তাদেরকে ধোকা দিয়ে রেখেছে, কোন এক অজানা বিষয়ে সন্তষ্ট থেকে তারা সব বুঝেও জিহাদ থেকে বিরত থাকার উপর স্থির হয়ে আছেন। 

-

২। ফিকহের বুঝে ঘাটতি: অনেকে জিহাদের স্বরূপ বুঝতে পেরেছেন যে এটি জান্নাতে গমনের শ্রেষ্ঠতম এক উপায়, তারা মনেপ্রানে জিহাদের অংশগ্রহনের ইচ্ছা রাখেন। কিন্ত তারা এর ব্যাপারে ফিকহী বুঝ নিয়েছেন এমন কোন আলেমের থেকে যারা জিহাদের সাথে সংশ্লিষ্ট নন। এর ফলশ্রুতিতে দেখা যায় যে তারা অনেক ক্ষেত্রে জিহাদের ফারদুল আইন হওয়ার ব্যাপারটি সম্পর্কে ধারনা রাখেন না, রাখলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার যথাযথ প্রয়োগ করে দেখাতে পারেন না। অনেকে আবার হারবী কাফের বা ওয়াজিবুল ক্বতল ইত্যাদি ফিকহে অজ্ঞ থেকে যান। এছাড়াও এমন কিছু ফিকহী বিষয় রয়েছে যার ব্যাখ্যা কস্মিনকালেও মুজাহিদ ভিন্ন কোন আলেম করতে পারবেন না, এসমস্ত বিষয়ে যদি মুজাহিদ উলামা ছাড়া অন্য কারো থেকে ইলম নেয়া হয় তবে তা নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তির কারন হয়ে দাঁড়াবে এমনকি বহু যত্নে লালিত জিহাদী জযবাও আস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হবে। এজন্যে জিহাদের জন্যে সেসব আলেমদের থেকে ইলম তালাশ করা অপরিহার্য যারা কিতাব শুধু কালি দিয়ে লিখেই ক্ষান্ত হননি বরং তা রক্ত দিয়ে বাধিয়ে পোক্ত করেছেন।

-

৩। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে ধারনার ঘাটতি: আমাদের দেশের অনেক হক্বপন্থী আলেমগন এই ক্যাটাগরিতে পড়ে যান। তাদের কাছে নানা কারনে উম্মাহর বিভিন্ন অংশের সংবাদ পৌছে না- হোক তা প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকা বা ইংরেজি না জানা অথবা নিতান্তই সদিচ্ছার অভাব। ফলে তারা একরকম অন্ধকারেই থেকে যান এসব ব্যাপারে। পাশাপাশি মুজাহিদিনদের বিজয়ের সংবাদ তাদের কাছে না পৌছার কারনে স্বভাবতই নিজেদের মাঝে এক হীনমন্যতা কাজ করে, উম্মাহকে তারা দূর্বল ও কাফেরের মোকাবেলায় অযোগ্য মনে করেন। ফলে তারা নিজেদের অনুসারীদেরকে ঐভাবে অনুপ্রানিত করতে পারেন না জিহাদের জন্যে যদিও তারা কোনভাবেই জিহাদে অবিশ্বাসী বা জিহাদ প্রত্যাখ্যানকারী নন। দিনশেষে তারা ক্বিতাল, হিজরাত, ক্বাযা-হুদুদ, দারুল ইসলাম-দারুল হারব ইত্যাদি বিভিন্ন মাসয়ালার ব্যাপারে হয় চেপে যান অথবা এমন ব্যাখ্যা পেশ করেন যা বাস্তবতা থেকে বহু দূরে।

-

৬। গ্লোবাল জিহাদের আমীরদের আমীর হিসেবে মান্য না করা: এটা মূলত দেখা যায় মাদ্রাসার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে, তারা হয়ত ছাত্রদের জিহাদের কথা বলেন বা কখনো প্রকাশ্যেও এ নিয়ে আলোচনা করেন কিন্ত বর্তমান যামানার যারা জিহাদের পথিকৃত এদের ব্যাপারে অজ্ঞতা বা মাসলাকের ভিন্নতার কারনে তাদেরকে আমীর হিসেবে মানেন না এবং তাই অনুসরনও করা হয়ে উঠে না। অথচ ইতিহাসে বারবার এমনটিই দেখা গেছে যে হাজার মতভিন্নতা সত্ত্বেও জিহাদের ময়দানে উম্মাহ ঐক্যের আবরনে আচ্ছাদিত হয়েছে এবং মাসলাকের পার্থক্য থাকা সত্তেও জিহাদে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতম আমীরকে মান্য করা হয়েছে। আবার অনেক জিহাদী ভাইদের মাঝে এমনও দেখা গেছে যারা জিহাদের ময়দানে থাকা অভিজ্ঞ ও যোগ্যতর আমীর আলেমদেরকে ছেড়ে সম্পূর্ন নতুন ও বিভ্রান্ত কোন এক মাসলাকের অনুসরন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আইএস সংক্রান্ত ফেতনার পেছনে এই কারনটি এক নম্বরে দায়ী।

-

৫। বিশ্বজনীন আমীরদের আদেশ ও মতাদর্শের ব্যাপারে অজ্ঞতা: অনেক ভাইরা জিহাদের ফাযায়েল, আম্বিয়া কেরাম, সাহাবা, সালাফগনের জিহাদী জীবন বা আক্বাবেরের সংগ্রামের ইতিহাস অধ্যয়ন এসব বিষয়কেই বেশি প্রাধান্য দেন। নিঃসন্দেহে এগুলোর প্রয়োজনীয়তা অসীম, কিন্ত তাই বলে সমসাময়িক আমীরদের নির্দেশনা ও কিতাবাদি, তাদের মানহাজকে সঠিকভাবে বুঝা এবং তদানুযায়ী কর্মপন্থা তৈরি করা কোনভাবেই কম গুরুত্বের দাবিদার না। ইতিহাসও এমনটি বলে, কোন যামানায় আগত ফেতনাকে দমন বা ইলহাদকে বিনষ্টকরনের জন্যে ঐ যামানারই উলামায়ে হক্ব দাঁড়িয়ে গেছেন এবং আমজনতা তাদের অনুসরন করেছেন। তাহলে যদি যামানার এসব মুজাদ্দিদদের নির্দেশনা সম্পর্কে জানাই না হয় তবে কিভাবে তা মান্য করা হবে? দিনশেষে এই ভাইদেরকে জিহাদের বিশাল কাফেলা থেকে পিছনে পড়ে থাকতে হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্যে নিয়মিত খোজখবর রাখা দরকার যে কখন কোন আমীর কি নির্দেশনা দিচ্ছেন, কেন্দ্রীয় ভাবে কোন কাজের প্রতি সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, পূর্বের কোনো নির্দেশে সংশোধনী বা পরিবর্তন এলো কি না ইত্যাদি।

-

৫। আমীরের এতাআত থেকে মুখ ফিরানো: অনেকেই আছেন গ্লোবাল জিহাদের আমীরদের ভালবাসেন এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখেন। কিন্ত তারা নানা ক্ষেত্রে এই আমীরদেরকে মান্য করেন না বা মান্য করলেও তাদের সেসব কথাকেই মান্য করেন যা নিজের পছন্দমত হয়। আবার এমনও দেখা যায় যে তারা আমীরদের কাউকে মান্য করেন আর কাউকে ছেড়ে দেন। অনেকক্ষেত্রে আমীরদের বুঝের উপর নিজের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া, আলেমদের রায়কে নিজের রায়ের মুখালেফ করার প্রবনতাও লক্ষ্যনীয়। অথচ কর্তব্য ছিল, যদি কাউকে আসলেই অন্তর থেকে আমীর হিসেবে মান্য করা হয় তবে তার প্রতিটি নেক ও হালাল আদেশ ঠিক সেভাবেই মান্য করে চলা যেভাবে কুরআন ও সুন্নাহয় বর্নিত হয়েছে। এমনকি ফিকহী দিক থেকেও এই বিষয়টির গুরুত্ব প্রমান করা যায়।

-

৬। গ্লোবাল আমীরদের মতামতের ব্যাখ্যায় নিজের বুঝকে চূড়ান্ত মনে করা: আন্তর্জাতিক ভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফ্রন্টের আমীর বা আলেমরা বার্তা ও বয়ান প্রকাশ করে থাকেন, গ্লোবাল জিহাদের মুখপাত্র বিভিন্ন পত্র পত্রিকা বা সংবাদ ও প্রকাশনা মাধ্যমে তাদের ঘটনাপ্রবাহ থেকে শুরু করে শারঈ আলোচনা সবই স্থান পায়। এজন্যে সাধারন মুসলিমদের কর্তব্য হলো এসবের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন নিজ নিজ অঞ্চলের ঐসব আলেম ও আমীরদের থেকে নেয়া যারা গ্লোবাল জিহাদের সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত। এসব ক্ষেত্রে নিজের মতামতকে সম্পূর্ন ভাবে অগ্রাহ্য করাটা খুবই জরুরী। কারন এভাবে একেকজন একেক বুঝ নিতে থাকলে বয়ান বা নির্দেশনা প্রকাশ করার মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হবে এবং উম্মাহর মাঝে এই মতপার্থক্যের দরুন বিভক্তি সৃষ্টি হবে। ভাইদের কাজকর্ম যখন কোন একটা গন্ডির মাঝে আবদ্ধ হয়ে পরে এবং চিন্তাধারা নিরপেক্ষতা হারায় তখন নিজ নিজ বুঝ ও সক্ষমতা অনুযায়ী সবাই কোন একটা কাজ বেছে নেন এবং এটাকেই দ্বীনের কাজ এমনকি জিহাদ মনে করতে থাকেন। কেউ বা কিতাব প্রকাশনা, কেউ ইন্টারনেট জগতে দাওয়াতী কাজ, কেউ বয়ান মাহফিল লেকচার; এসমস্ত কাজে একপেশে অবস্থানে চলে যান অথচ গ্লোবাল জিহাদের মানহাজের সাথে এগুলোর কোনটাই অবিমিশ্র ভাবে সংগতিপূর্ন না। এর ফলে দেখা যায় যে সবাই ই নিজ চিন্তা বা দলের সমর্থনে কোন না কোন দলিল খুজে নেয় এবং প্রকৃত সত্যের মোকাবেলায় একে নিজের পক্ষে ঢাল হিসেবে দাড় করিয়ে দেয়।

-

৭। দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা: সবশেষে আমরা ভাইদের এমন একটা দলকে দেখতে পাই যারা সবকিছু জানা বুঝার পরও অজানা কোন কারনে জিহাদের কাফেলায় যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকে। অনেকের মাঝে এমন মানসিকতা দেখা যায় যে অমুক কাজটা শেষ করে নেই বা অর্থনৈতিক পর্যায়ে একটা নিশ্চয়তা অর্জন করে নেই ইত্যাদি। এগুলো আসলে শয়তানের ধোকা ছাড়া আর কিছুই না। এর কারনে আসলে জিহাদের কাফেলায় যোগদান বিলম্বিত হবার চেয়ে বেশি সম্ভাবনা থাকে জীবনে কখনো জিহাদে শরিক না হতে পারার দুর্ভাগ্য নিজের ঘাড়ে চাপানো। কারন শয়তান মানুষকে এমন ভাবে প্রলুব্ধ করতেই থাকে যে তার চাহিদা কখনো আর শেষ হবার নয়, একটা পেয়ে গেলে সে আরেকটা চাইতে থাকে এবং এই চক্র চলতেই থাকে। এক্ষেত্রে করনীয় হলো আল্লাহর কাছে প্রচন্ড ভাবে হিদায়াত চাওয়া এবং বিন্দুমাত্র কালক্ষেপন না করে এই মূহুর্ত থেকেই নিজ সক্ষমতা অনুযায়ী কাজে লেগে যাওয়া।

.

আল্লাহ তাআলা এই উম্মাহকে দলে দলে মুজাহিদদের কাফেলায় শরীক হওয়ার তাউফিক দিন। আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতে হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব এর সাথে একত্রিত করুন। ওয়া আখির দাওয়ানা আনিল হামদালিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top