শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬

#প্রশ্ন:মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েমের জন্য কিতাল করা যাবে কি?

কোন মন্তব্য নেই:

#প্রশ্ন:মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েমের জন্য কিতাল করা যাবে কি?
.
শাইখ আব্দুল হালিম
.
ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মুসলিম প্রধান দেশে কিতাল বা সশস্ত্র জিহাদ করার দলীল হিসাবে ডঃ মুহাম্মদ খায়ের হাইকাল তার ‘শরীয়তের রাজনীতিতে জিহাদ ও কিতাল’ নামক গ্রন্থের ২৯৮ পৃষ্ঠায় চারটি বিষয় উল্লেখ করেছেন যা নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ
.
১। শাসক যদি মুরতাদে পরিণত হয়ঃ উসমানী শাসনামলের সর্বশেষ খিলাফত পদ্ধতি বিলুপ্তহওয়ার পর ইসলামী বিচার ব্যাবস্থা উচ্ছেদ করতঃ তদস্থলে কাফেরদের রচিত সংবিধানের বিচার ব্যাবস্থা প্রবর্তন করার কারণে রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় দ্বীন বিমুখতা আসে ও শাসকগণ মুরতাদ হয়ে যায়। কেননা রাষ্ট্র পরিচালনায় যখন শরীয়তী বিচার ব্যাবস্থা পরিবর্তন করে পাশ্চাত্যের কুফ্রী বিচার ব্যাবস্থার প্রবর্তন করা হয়, তখন মুসলমান শাসকগণ মুরতাদে পরিণত হয়। অতঃপর তারা সাম্রাজ্যবাদীদের পদাংক অনুসরণ করে থাকতে চাই তা ধনতন্ত্রী হোক বা সমাজতন্ত্রী। এমতাবস্থায় ঐ সমস্ত শাসদের কাছে ইসলামের নাম ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না যদিও তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করে। আর এভাবেই রাষ্ট্রে কুফ্রী শাসন ব্যাবস্থা বিজয় লাভ করে, যদিও সেই রাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিক মুসলমান। কোন মুসলিম রাষ্ট্রে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে কুফরী শাসন ব্যাবস্থা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে সে দেশের প্রত্যেক মুসলমান নাগরিকের সশস্ত্র জিহাদের জন্য ঘড় ছেড়ে বেড়িয়ে পড়া উচিত।
.
২। শরীয়তের উসূলী কায়দাঃ যে কাজ সম্পাদন ব্যাতিরেকে কোন ফরজ কাজ সম্পাদন করা যায় না তখন ঐ কাজ করাও ফরজ হয়ে যায়। যেহেতু বর্তমানে আমাদের মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা নেই আর আল্লাহ্তাআলা আমদের উপর ইসলামী শাসন ফরজ করেছেন। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা সম্ভবর নয়, সেহেতু ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা ফরজ। এরপর কিতাল ছাড়া অন্য কোন উপায়ে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার বিধান নেই, কেননা আল্লাহ্ কিতালের মাধ্যমে দ্বীন কায়েম করতে বলেছেন। অতএব উসূলী নতির আলোকে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য কিতাল করা ফরজ।
.
৩। শত্রু “ কর্তৃক আক্রান্ত হলেঃ মুসলমানগণ ইসলামের শত্রু “ কর্তৃক আক্রান্ত হলে সে দেশের প্রত্যেক মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়। ইসলামী দেশগুলোতে হানাদার শত্রু “ এখন মুসলমানদের ভিতর থেকেই তৈরী হচ্ছে। সকল ক্ষমতার চাবি-কাঠি এখন তাদেরই এবং তারাই দেশের শাসক। তারা ঈমানদারদের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে মানব রচিত বিধান জারী করেছে। সুতুরাং বহিঃশত্রু“র স্থলাভিষিক্ত হিসাবে এদের বিরুদ্ধেও সশস্ত্র জিহাদ করা ফরজে আইন। অর্থাৎ নামাজ-রোজা যেমন ফরজ এদের বিরুদ্ধে কিতাল করাও তদ্রুপ ফরজ। সুতুরাং উক্ত নির্দেশ অনুযায়ী আভ্যন্তরীন দুশমনদের হাত থেকে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে ইসলামী হুকুমত কায়েম করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।
.
৪। শাসক ﻛُﻔْﺮًﺍ ﺑَﻮَﺍﺣًﺎ প্রকাশ্যে কুফরী কাজ করলেঃ যখন কোন মুসলিম শাসক প্রকাশ্যে কুফরী কাজ করে তখন মুসলমান নাগরিকদের নিকট থেকে আনুগত্য পাওয়ার অধিকার হারায় এবং ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার উপযুক্ত হয়, সে অবস্থাতে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইসলামী শাসন ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হয়। -
অতএব এ কথা স্পষ্ট যে, কোন শাসকের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করতে হলে ঐ শাসক কাফের হওয়া শর্ত নয়; বরং ঐ শাসক মুসলমান হলে তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করতে হবে যদি সে তার রাষ্ট্রে শরীয়ত বিরোধী কাজের অনুমতি দেয় বা রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক নিজেরাই শরীয়ত বিরোধী কাজ করে।
.
সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ী (বিযওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাইন)-গণের যুগেও এরুপ অনেক মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ
হয়েছে, ইসলামের ইতিহাস তার সাক্ষী। ঐ যুগের পর থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামদ্রোহী কত নামধারী মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে দ্বীন কায়েমের জন্য সশস্ত্র জিহাদ হয়েছে আমরা তার সবগুলোর খবর রাখি না। আর এ ভাবেই কিয়ামত পর্যন্ত সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ চালতে থাকবে।
.
##মানব রচিত বিধানে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের সম্পর্কে ধারণাঃ
ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ
‘‘আর যে সব লোক আল্লাহ্ আ অবতীর্ণ করেছেন তদানুযায়ী হুকুমত পরিচালনা করে না, তারাই কাফের।’’ –
(সূরা মায়েদাহঃ ৪৪)
.
কেই উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত কাফের হওয়ার হুকুমকে শুধু ইহুদী, নাসারা ও মুশরিক শাসকদের জন্য খাস করে থাকেন। মুসলমান শাসকদের জন্য হুকুমকে প্রয়োজন মনে করেন না। এটা একটা ভুল ধারণা;
.
এ প্রসঙ্গে শায়িখ ইব্রাহিম (রহঃ) বলেন- ‘‘আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান পরিত্যাগ করে মানব রচিত বিধানে ফয়সালা করা এক মহাকুফর, সবচেয়ে ক্ষতিকর কুফর ও সবচেয়ে জঘন্যতমকুফ॥ আল্লাহ্ ও তার রাসূল (সঃ)-এর সাথে বিরোধিতাকারী, শরীয়তের বিধানের সাথে ধৃষ্টতা পোষণকারী এবং শারঈ কোর্টের সাথে সাংঘর্ষিক ও তার মূল শাখা, আকৃতি-প্রকৃতি, বিধান-দলীল, প্রমাণ পঞ্জীর সাথে সকল দিক দিয়ে বিরোধী। ইসলামী কোর্টের জন্য যেমন একটি সংবিধান রয়েছে, যার সম্পূর্ণ ভিত্তি হলো কুরআন ও সুন্নাহ।
অনুরূপভাবে বর্তমান কোর্টের জন্য এমন বিধান রয়েছে যা ফরাসী, আমেরিকান, বৃটিশ ও নব-আবিস্কৃত মতবাদ হতে সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ধরনের কোর্ট-কাছারী বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম দেশে বিদ্যমান। যার পথ সবার জন্য উন্মুক্ত। আর সেখানে বিচারের আশায় মানুষ যাচ্ছেও দলে দলে। বিচারকগণ কুরআন ও সুন্নাহ্ বিরোধী ফয়সালা জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে এবং এই বিধান স্বীকার করতে বাধ্য করেছে। রিসালাতের স্বীকৃতি ভঙ্গ করার জন্য এই কুফরীর চেয়ে বড়ো কুফরী আর কি হতে পারে ?’’ –
(আল ইমামাতুল উয্মা ইনদা আহলুস ওয়াল জামাআ গ্রন্থের ১০৪ পৃঃ দ্রষ্টব্য)
.
শায়িখ আব্দুল আজীজ মোস্তফা কামেল তাঁর লিখিত `আল হুকমু ওয়াত তাহাকুম’ গ্রন্থের ২৫৮ পৃষ্ঠায় বলেন ‘‘যারা বলেন যে, ইসলামী সংবিধান পরিত্যাগ করে মানব রচিত সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা মুসলমান না কাফের, সালফে সালেহীনগণ এ নিয়ে মতানৈক করেছেন, তাদের একথা মোটেও ঠিক নয়; বরং এটা অবান্তর এবং সালফে সালেহীনদের উপর মিথ্যা তোহমত, বিজ্ঞ আলেম তো দূরের কথা একজন সাধারণ মুসলমানও একথা বলতে পারে না যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ প্রদত্ত সংবিধানকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তারপরেও সে মুসলমান হিসাবে বহাল থাকবে।
.
এ প্রসঙ্গে শায়িখ আব্দুল কাদির বিন আব্দুল আজীজ-এর ফাতোয়া আল জামেয়া ফি তালাবিল ইলম–ই-শরিফ প্রথম খন্ড ১৪৬ পৃষ্ঠায় বলেন- গণতান্ত্রিক একজন সংসদ সদস্য (এমপি, মন্ত্রী) জনগণেরই ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণকে শাসন করার জন্য এই আইন প্রণয়নের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জন করে।
.
এটা মানুষের নিজের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করা কারণ, কোন আইন দ্বারা তাঁর বান্দাকে শাসন করতে হবে তা প্রণয়নের ক্ষমতা আল্লাহতাআলা কাহকেও দেন নাই, কেননা এটা একমাত্র তাঁরই জন্য খাস।
সৃষ্টি যাঁর আইন তাঁর। ﺃَﻟَﺎ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖُ ﻭَﺍﻟْﺄَﻣْﺮُ ‘‘শুনে রাখো, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা ।’’–
(সূরা আরাফঃ ৫৪) ﺇِﻥِ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢُ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻠَّﻪِ ‘‘আল্লাহ্ ছাড়া কারও বিধান দেওয়ার অধিকার নাই।’’ –(সূরা ইউসুফঃ ৪০)
.
অতএব কুরআন-সুন্নাহ্ পরিপন্থী আইন প্রণয়নের কাজ যে ব্যক্তি করল, সে আল্লাহ্ ব্যাতীত ইলাহ বানাল এবং সৃষ্টির জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার বিষয়ে আল্লাহর সাথে শরীক করল। নিঃসন্দেহে এ হচ্ছেঃ কুফরে আকবার যা কোন ব্যক্তিকে ইসলামের সীমা রেখার বাইরে নিয়ে যায়। সে মুসলিম জাতি হতে খারিজ, মুরতাদ।
.
বর্তমানে এ দেশে কোন কোন দল ইসলামের নামে গনতন্ত্রের রাজনীতি করছেন এবং তাগুতের সাথে ঐক্য করে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সংবিধানের অধীনে এম,পি/মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন এবং মানব রচিত সংবিধানে রাষ্ট্র চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা এভাবেই ইকামতে দ্বীনের দাবী করছেন।
.
মক্কার কাফেররা তাদরে সাথে ঐক্যের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে নেতৃত্বের আসন গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যদি তাগুতের সাথে ঐক্য করে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা যেত তাহলে ইসলামের সেই দূর্দিনে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এ প্রস্তাবকে হিকমত আখ্যা দিয়ে সাদরে গ্রহণ করতেন।
.
বস্ততঃ যখন কোন ঈমানদার সম্প্রদায় ত্বাগুতের সাথে একীভূত হয় প্রকৃতপক্ষে তখন তারা দ্বীন থেকে ফিরে যায় এবং আস্তে আস্তে তাদের অন্তর হতে ঈমানের দীপশিখা নিভে যায়, ফলে ভ্রান্ত পথে চলতে থাকে। এমতাবস্থায় আল্লাহতাআলা এমন সম্প্রদায়ের হাতে ইকামতে দ্বীনের দ্বায়িত্ব দেবেন যারা নবী-রাসূলগণের মত সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করবেন।
.
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻣَﻦْ ﻳَﺮْﺗَﺪَّ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻋَﻦْ ﺩِﻳﻨِﻪِ ﻓَﺴَﻮْﻑَ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﺤِﺒُّﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺤِﺒُّﻮﻧَﻪُ ﺃَﺫِﻟَّﺔٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻋِﺰَّﺓٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻳُﺠَﺎﻫِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﻟَﻮْﻣَﺔَ ﻟَﺎﺋِﻢٍ
‘‘হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যাবে অচিরেই আল্লাহ্ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাকে ভালোবাসবে। তারা মুসলিমদের প্রতি বিনয়ী হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারীর তিরস্কারে ভীত হবে না।’’ -(সূরা মায়েদাহঃ ৫৪)
.
এ আয়াতের তাফসীরে আবু বকর সিদ্দকী (রাঃ)-এর উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে; তিনি বলেন যে- ‘‘যারা মুসলমান হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিদের্শ ও ইসলামী আইনকে অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা আমার কর্তব্য। যদি আমার বিপক্ষে সকল জিন, মানব ও বিশ্বের যাবতীয় বৃক্ষ-প্রস্তর একত্রিত করে আনা হয় এবং আমার সাথে কেই না থাকে তবুও আমি একা এ জিহাদ চলিয়ে যাব।’’
(তাফসীরে মাআরেফুল কুরআনঃ ৩৩৮ পৃষ্ঠা)
.
আজ গণতন্ত্রকামী নামধারী ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দের মাঝে আবু বকর (রাঃ)-এর সেই জিহাদী চেতনা হারিয়ে গেছে। তাই তারা তাগুতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদে অবতীর্ণ না হয়ে তাদের সাথে ঐক্য করছেন এবং সাধারণ মুমিনদেরকে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার প্রলোভন দেখিয়ে নিজেরা ক্ষমতার স্বাদ চেখে বেড়াচ্ছেন। আর হিকমতের দোহাই দিয়ে শরীয়ত বিরোধী কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছেন। এভাবেই তারা একটা যোদ্ধা জাতির অতীত ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে দিয়ে নৈতিক অবক্ষয় ঘটিয়ে তাদেরকে অধঃপতনের অতল তলে নিয়ে যাচ্চেন।
.
আর একশ্রেণীর লোকেরা ভাবছে, ঈমানদাররা দুনিয়াতে খুব সহজ-সরল জীবন যাপন করবে। সকালে উঠে নামাজ পড়বে তারপর যার যার শিক্ষা, চাকুরী, ব্যাবসা,কৃষি ইত্যাদি নির্ধারিত কাজে-কর্মে ছড়িয়ে পড়বে এবং রাত হলে ঘুমিয়ে পড়বে এই তাদের রুটিন।
.
অতএব কে আল্লাহর আইন মানল আর কে মানল না তা দেখার প্রয়োজন নেই। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ-জিহাদ, মারামারি-কাটাকাটি এসব দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়ানোর কি দরকার ?
.
বাস্তবে ঈমানদারগণ কোন সাধারণ মানুষ নয়। এরা আল্লাহর প্রতিনিধি, আল্লাহর আইন বাস্তবায়নকারী আল্লাহর সৈনিক। সৈনিকদেরকে যেমন দেশ প্রতিরক্ষা ও আইন-কানুন বাস্তবায়ন করার জন্য তৈরী করা হয় তদ্রুপ আল্লাহ তাআলা দ্বীনের প্রতিরক্ষা ও তাঁর আইন বাস্তবায়ন করারজন্য মুমিন নামে কিছু সৈনিক তৈরী করেছেন।
আর এদের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাদের কাজ ছিল সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র জিহাদ করা।
.
কোথাও কেউ আইন অমান্য করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে সেখানে শান্তি-শৃঙ্ঘলা ফিরিয়ে আনার জন্য যেমন সশস্ত্র দল পাঠাতে হয়, তেমনি সমগ্র বিশ্বে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আল্লাহতাআলা আখেরী নবী মুহাম্মদ (সঃ) ও তাঁর উম্মতদেরকে সশস্ত্র সৈনিক রূপে প্রেরণ করেছেন। যারা কিয়ামত পর্যন্ত সশস্ত্র জিহাদের এই ধারাকে অব্যাহত রাখবে।
.
রাসুল (সঃ) বলেনঃ
‘‘আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের জন্য তলোয়ার দিয়ে পাঠানো হয়েছে। আর আমর রিজিক (গণিমতের পন্থায়) বল্লমের ছায়ার নিচে রেখে দেয়া হয়েছে। অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের ভাগ্যেই অর্পণ করা হয়েছে যারা আমার আদেশের বিরোধীতা করবে এবং যে ব্যক্তি অন্য কোন সম্প্রদায়ের আদর্শ গ্রহণ করবে সেও তাদের মধ্যেই গণ্য হবে।’’ – (সহীহ বুখারী, আহমদ)
.
অতএব যে সকল মুমিন রাসূল (সঃ)-এর আদর্শ গ্রহণ করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জান ও মাল উৎসর্গ করে, আল্লাহতাআলা তাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেনঃ
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﺷْﺘَﺮَﻯ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻬُﻢْ ﺑِﺄَﻥَّ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻴَﻘْﺘُﻠُﻮﻥَ ﻭَﻳُﻘْﺘَﻠُﻮﻥَ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের নিকট হতে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতে বিনেময়ে। তারা আল্লাহর পথে সশস্ত্র জিহাদ করে অতঃপর তারা মারে ও মরে।’’ – (সূরা তওবাঃ ১১১)
.
একজন মুমিনকে জানতে হবে, আমি কে ?
.
আমার দায়িত্ব কি ?
.
আমার রাসূল (সঃ) কেন রক্ত ঝড়িয়েছেন ?
.
কেন আমরা ইসলামী হুকুমত হারালাম ?
.
কেন আর নতুন করে ইসলামী হুকুমত কায়েম করা সম্ভব হচ্ছে না ?
.
কাফর-মুশরেকদের চক্রান্তে পড়ে কেন বার বার পথ হারাচ্ছি ?
.
কেন ইসলামের আকাশে সোনালী সুর্যের উদয় হচ্ছে না ?
.
আমার পূর্ববর্তী মুমিন ভাইগণ কীভাবে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে জান্নাতে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন ?
.
আমাকেও জান্নাত পেতে হবে।
তাই কারো প্রতি হিংসা নয়,কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়, কাউকে কটাক্ষ করা নয়, কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়; আসুন আমরা বাস্তবতায় ফিরে আসি।
.
আজ আর আমাদের বসে থাকার সময় নেই। কাফের-মুশরেকরা গোটা বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো হতে ইসলামী তাহজীব-তামাদ্দুন ধ্বংস করে দিয়ে পূর্ণ কুফরী রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। একদিকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী এন,জি,ও প্রতিষ্ঠা এবং সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া আগ্রাসনের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের ঈমান কেড়ে নিচ্ছে; অন্য দিকে কুফর রাষ্ট্রগুলো গণতন্ত্রের মাধ্যমে তাদের সাম্রজ্য বিস্তার করে মুসলমানদের ঈমানী শক্তি ও জিহাদী প্রেরণা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সুচতুর পরিকল্পনা একেরপর এক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top