বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬

গুপ্ত হত্যা কি জায়েজ?

কোন মন্তব্য নেই:

আল ইগতিয়াল : গুপ্তহত্যার বিষয়ে
ইসলামী বিধান – আসওয়াদ আল
আনসীর হত্যাকাণ্ড
.
আলহামদু লিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস
সালামু আলা রসুলিল্লাহ।গুপ্ত হত্যাকে
আরবী ভাষায় বলা হয়‘আল ইগতিয়াল’ যার
বহু বচন হল‘আল ইগতিয়ালাত’ আর ইংরেজী
ভাষায় একই অর্থ বুঝাতে ব্যবহার
হয়‘Assassination’শব্দ।বাংলা ভাষায় এর
শাব্দিক অর্থ হলো অপ্রস্তুত অবস্থায়
অতর্কিত আক্রমন করে কিংবা গোপন কোন
কৌশলে কাউকে হত্যা করা।ইসলামী
পরিভাষায়‘ইগতিয়াল’ বলা হয় ইসলাম ও
মুসলমানদেরকে কারো চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ও
দুষ্কৃতি থেকে রক্ষা এবং অন্য কেউ
যেনইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে
চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করার দুঃসাহস না পায়
তার জন্য দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিস্বরূপ
অতর্কিতে আক্রমন করেকিংবা গুপ্তভাবে কাউকে হত্যা করা।গুপ্ত হত্যা শুধুই কোন সামরিক কর্মকাণ্ড নয়; বরং গুপ্ত হত্যা হলযুগপৎ খুবইকার্যকরী একটি সামরিক কৌশলও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
.
.
গুপ্তহত্যার শর্তঃ
১) যেব্যক্তি এ কাজ করবে তাকে অবশ্যই
সঠিক ইসলামী আকীদার ধারক হতে হবে।
.
২) যাকে হত্যা করা হবে তাকে অবশ্যই
ইসলামী শরিয়া মোতাবেক এই শাস্তির
উপযুক্ত হতে হবে অর্থাৎ শুধু হত্যাযোগ্য
অপরাধ হলেই চলবে না যেমন ব্যভিচার বা
হত্যা; বরং নিশ্চিতভাবে এমন প্রকৃতির
অপরাধী হতে হবে যার উপর এই শাস্তি
প্রয়োগের বৈধতা রয়েছে।
.
ইসলামী শরিয়াতে গুপ্তহত্যার বৈধতা
মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম এবং তাঁর
সাহাবীদের জীবনী অধ্যয়ন করলে একথা
দিনের আলোর মতোস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে
তাদের জিহাদ তথা সামরিক কৌশল ও
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুপ্ত হত্যা ছিলো
একটি শিল্পহিসেবে বিবেচ্য বিষয় এবং
তাদের সামরিক কর্মকাণ্ডেরএকটি
অন্যতম অংশ। আল্লাহ্র পথে জিহাদ ও
জিহাদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য হুকুম আহকাম
ইসলামে যেমন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
একটিবিষয় তেমনি একই হুকুমের
আওতাভুক্ত হবে গুপ্তহত্যার এই শিল্প কলা।
.
আমরা এই আলোচনায় কাফেরদের নেতৃস্থানীয় যে সব লোকেরা ইসলামও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলো,
যেসব লোকেরা আল্লাহ্তায়ালা এবং
তাঁর রসুলকে কষ্ট দিয়েছিল তাদেরকে
হত্যার কিছু ঘটনা তুলে ধরবো, এবিষয়ের
সাথে সংশ্লিষ্টকুরআন ও হাদিসের
ভাষ্যসমুহ উপস্থাপন করব, সালাফ আস
সালেহীনওলামায়ে কেরামগন তাদের
গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কিতাব সমুহে এসব ভাষ্য
ও ঘটনা থেকে যেসব ফিকহী মাসআলা
মাসায়েল বের করেছেন তা পেশ করবো।
আমাদের পাঠকদের সদয় অবগতির জন্য মুল
আলোচনা আরম্ভ করার আগেই স্বরণ
করিয়ে দিতে চাই যে, ‘আইম্মাতুল কুফুর’
বা কুফুরের নেতাদের গুপ্তহত্যার বৈধতা
এমনই একটি স্বতঃসিদ্ধ মাসআলা যে
সালাফ আস সালেহীনদের কেউই এর
বৈধতার ব্যপারে দ্বিমত পোষণ করেননি।
.
কুরআন ও সুন্নাহ থেকেগুপ্ত হত্যার দলীল
.
.
১ম দলীলঃ কাফির মুশরিকদের হত্যার
সাধারণ বিধান
.
আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন ঈমানদারদেরকে
নির্দেশদিয়ে বলেছেন-
ﻓَﺎﻗْﺘُﻠُﻮﺍﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَﺣَﻴْﺚُﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻫُﻢْﻭَﺧُﺬُﻭﻫُﻢْﻭَﺍﺣْﺼُﺮُﻭﻫُﻢْ
ﻭَﺍﻗْﻌُﺪُﻭﺍﻟَﻬُﻢْﻛُﻞَّﻣَﺮْﺻَﺪٍ
তোমরা মুশরিকদেরকে হত্যা করো
যেখানেই তাদেরকে পাও, তাদেরকে
ধরো, তাদেরকে বেঁধে ফেলো,
তাদেরকে হত্যার জন্য ঘাটিতে ওঁত
পেতে অপেক্ষা করতে থাকো।
(সূরা আত তাওবা, আয়াত ৫)
.
এ আয়াতে গুপ্ত হত্যার বৈধতার
দিকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
.
ইমাম কুরতুবী রহঃ এ আয়াতের ‘উকু‘দু লাহুম কুল্লা মারসদ‘ এর ব্যখ্যায় বলেন, এর অর্থ হলো
ﺍﻗﻌﺪﻭﺍﻟﻬﻤﻔﻴﻤﻮﺿﻌﺎﻟﻐﺮﺓﺣﻴﺜﻲُ ﺭﺻﺪﻭﻥ
অর্থাৎ তাদের উপর আক্রমন করার জন্য,
তাদেরকে হত্যাকরার জন্য, অতর্কিতে
তাদের উপর আক্রমনের জন্য গোপন ঘাটিতে
ওঁত পেতে থাকো।
.
এরপর ইমাম কুরতুবী রহঃবলেন
ﻭﻫﺬﺍﺩﻟﻴﻠﻌﻠﻯﺠﻮﺍﺯﺍﻏﺘﻴﺎﻟﻬﻤﻘﺐ ﻻﻟﺪﻋﻮﺓ
অর্থাৎ এ আয়াতের মধ্যে একথার
স্বপক্ষে দলীল রয়েছে যে মুশরিদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পূর্বেও হত্যা করা বৈধ।
(তবে মনে রাখা দরকার যে এ হুকুম কেবল
রক্ষণাত্নক জিহাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য;
কেননা আক্রমনাত্নক যুদ্ধের ক্ষেত্রে
অবশ্যই আক্রমন শুরু করার পূর্বে তাদেরকে
ইসলাম গ্রহণের প্রতি আহ্বান জানাতে
হবে।)
এই আয়াত কুফফারদের ধরার জন্য গোপন
ঘাটি তৈরী, তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা ও
তাদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করার বৈধতা
দেয়।এ কারণে মালেকী মাযহাবের
প্রখ্যাত আলেম ও ফকীহ ইমাম ইবনুল
আরাবী রহঃ তার তাফসীরগ্রন্থ আহকামুল
কুরআনে বলেন ‘আমাদের ফকীহগন
তাদেরকে হত্যার জন্য ওঁত পেতে থাকা
এবং তাদেরকেব্যক্তিগতভাবেদাওয়াত
দেয়ার পূর্বে গুপ্তভাবে হত্যা করা
প্রসঙ্গে বলেন যে এহত্যার ব্যপারে
যথেষ্ট মজবুত দলীল প্রমাণ রয়েছে’।
.
ইমাম ইবনে কাসীর রহঃ তার তাফসীর
গ্রন্থেএর ব্যখ্যা প্রসঙ্গে বলেন –
ﻭَﺍﺣْﺼُﺮُﻭﻫُﻤْﻮَﺍﻗْﻌُﺪُﻭﺍ ﻟَﻬُﻤْﻜُﻠَّﻤَﺮْﺻَﺪ
ﻻﺗﻜﺘﻔﻮﺍﺑﻤﺠﺮﺩﻭﺟﺪﺍﻧﻜﻤﻠﻬﻤﺒﻞ
ﺍﻗﺼﺪﻭﻫﻤﺒﺎﻟﺤﺼﺎﺭﻓﻴﻤﻌﺎﻗﻠﻬﻤﻮﺡ
ﺻﻮﻧﻬﻤﻮﺍﻟﺮﺻﺪﻓﻴﻄﺮﻗﻬﻤﻮﻣﺴﺎﻟﻜﻪ
ﻣﺤﺘﻯﺘﻀﻴﻘﻮﺍﻋﻠﻴﻬﻤﺎﻟﻮﺍﺳﻌﻮﺗﻀﻂ
ﺭﻭﻫﻤﺈﻟﻯﺎﻟﻘﺘﻸﻭﺍﻹﺳﻼﻡ
অর্থাৎ ‘তাদেরকে তোমাদের হাতের
নাগালে পেয়ে তারপর হত্যা করবে শুধু এমন
চিন্তা করে বসে থাকা যথেষ্ট নয়; বরং এ
আয়াত বলছে যে তোমরা তাদের বাড়ি
ঘরে, তাদেরশহর নগরে গিয়ে
তাদেরকে আক্রমন করো, ঘাটিস্থাপন
করো, ওঁত পেতে থাকো, তাদেরকে ঘিরে
ফেলে অবরোধ করে রাখো যাতে
করে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়াসত্ত্বেও তাদের
জন্য সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং তারা এমন
এক অবস্থার মধ্যে পড়ে যায় যে হয়
যুদ্ধ করতে হবে অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে
হবে’।
.
বিংশ শতাব্দিতে বিশ্বব্যপি জিহাদকে
পুনরুজ্জীবনের প্রান পুরুষ মুজাহিদ শায়খ
শহীদ ডঃ আব্দুল্লাহ আযযাম রহঃ তারসুরা
আত তাওবার তাফসীরে এ আয়াতের
ব্যখ্যায় বলেন, এ আয়াত প্রমাণ করে
যে কুফফারদেরকে সতর্ক করার
পূর্বেইতাদেরকে গুপ্তভাবে হত্যা করা
জায়েয; আর এখানে যেহেতু আল্লাহ্
তায়ালা একাজের হুকুম দিয়েছেন অতএব
গুপ্ত হত্যার আমল একটি সুস্পষ্ট বোধগম্য
ফরয হুকুম।
.
.
২য় দলীলঃ কিসাস বা সমান শাস্তির বিধান প্রয়োগ
.
আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন এ প্রসঙ্গে
কুরআনুল কারীমে বলেন-
ﻓﻤﻦﺍﻋﺘﺪﻯﻋﻠﻴﻜﻢﻓﺎﻋﺘﺪﻭﺍﻋﻠﻴﻪﺑﻤﺜﻞﻣﺎﺍﻋﺘﺪﻯﻋﻠﻴﻜﻢ
যে তোমাদের উপর বাড়াবাড়ি
করেছে তোমরাও তার উপর ঠিক
ততোখানি বাড়াবাড়ি করবে যতোখানি
তারা তোমাদের উপর করেছে।
(সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৯৪)
ﻭﺍﻟﺬﻳﻦﺇﺫﺍﺃﺻﺎﺑﻬﻢﺍﻟﺒﻐﻲﻫﻢﻳﻨﺘﺼﺮﻭﻥﻭﺟﺰﺍﺀﺳﻴﺌﺔﺳﻴﺌﺔ
ﻡﺛﻠﻬﺎﻓﻤﻦﻋﻔﺎﻭﺃﺻﻠﺢﻓﺄﺟﺮﻩﻋﻠﻰﺍﻟﻠﻪﺇﻧﻪﻻﻳﺤﺐﺍﻟﻈﺎﻟﻤﻴﻦ
ﻭﻟﻤﻦﺍﻧﺘﺼﺮﺑﻌﺪﻇﻠﻤﻪﻓﺄﻭﻟﺌﻚﻣﺎﻋﻠﻴﻬﻢﻣﻦﺳﺒﻴﻞﺇﻧﻤﺎ
ﺍﻟﺴﺒﻲﻝﻋﻠﻰﺍﻟﺬﻳﻦﻳﻈﻠﻤﻮﻥﺍﻟﻨﺎﺱﻭﻳﺒﻐﻮﻥﻓﻲﺍﻷﺭﺽﺑﻐﻴﺮ
ﺍﻟﺤﻖﺃﻭﻟﺌﻚﻟﻬﻢﻋﺬﺍﺏﺃﻟﻴﻢ
(ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল) তারা যখন
অন্যায় বাড়াবাড়ির শিকার হয় তখন
তারা প্রতিশোধগ্রহণ করে; আর দুষ্কৃতির
বদলা হল তার সমপরিমাণ দুষ্কৃতি; তবে
(কল্যাণকর মনেকরে) যে মাফ করে দেবে
এবং সংশোধন করে দেবে তার বিনিময়
আল্লাহ্র কাছে রক্ষিত; নিশ্চয়ই
তিনি যালিমদেরকে মোটেই ভালোবাসেন না। আর যুলমের শিকার হয়ে যদি কেউ প্রতিশোধগ্রহণ করে তবে তাদের উপর কোন অভিযোগ দায়ের করা চলবে না; অভিযোগ তো
কেবল তাদের উপর যারা মানুষের উপর
যুলুম করবে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে
বাড়াবাড়ি করে বেড়াবে; তাদের জন্য
রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
(সূরা আশ শূরা, আয়াত ৩৯-৪২)
.
ﻭﺇﻥﻋﺎﻗﺒﺘﻢﻓﻌﺎﻗﺒﻮﺍﺑﻤﺜﻞﻣﺎﻋﻮﻗﺒﺘﻢﺑﻪ
আর তোমরা যদি তোমাদের শত্রুদেরকে
শাস্তি দাও তাহলে ঠিক সেইভাবে
তাদেরকে শাস্তি দিবে যেভাবে তারা
তোমাদের উপর আক্রমন করেছে।
(সূরা আন নাহল, আয়াত ১২৬)
.
এ সকল আয়াতসমুহ বিভিন্ন ঘটনার
প্রেক্ষাপটে নাযিল হলেও এর সামগ্রিক
হুকুম সাধারণ ভাবে প্রযোজ্য।কেননা আল
কুরআনের কোন আয়াত বিশেষ কোন
ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবতীর্ণ হলেও
সে আয়াতের হুকুম কেবল সেই ঘটনার
সাথেই খাস নয় বরং একই রকম সকল ঘটনার
ক্ষেত্রেই সে আয়াতের হুকুম সমানভাবে
জারী থাকবে। এ ব্যপারে ইসলামের
মূলনীতি হলﺍﻟﻌﺒﺮﺓﺑﻌﻤﻮﻡﺍﻟﻠﻔﻆﻻﺑﺨﺼﻮﺹﺍﻟﺴﺒﺐ অর্থাৎ
শিক্ষা গ্রহণ করাহবে
শব্দের সাধারণ অর্থের উপর ভিত্তি করে;
শুধু আয়াত নাযিলের ঘটনার সাথে হুকুমকে
খাস করা হবে না।
.
অতএব আজ কুফফাররাযদি মুসলমানদের
বিরুদ্ধে গোপন অভিযান পরিচালনা করে,
গুপ্তচর বৃত্তি করে, ড্রোন আক্রমন করে
মুসলিম জাতির বীর সন্তান মুজাহিদদেরকে হত্যা করে, নারী শিশু সাধারণ মানুষনির্বিশেষে নির্বিচার হত্যা করে তাহলে আমাদের পক্ষেও
যেভাবে সম্ভব আমরা তাদেরকে আমাদের
গুপ্ত হত্যার শিকারে পরিণত করবো,
আমরাও তাদের নেতাদেরকে হত্যা করবো,
তাদের বেসামরিক সাধারণ মানুষ ও নারী
শিশুদেরকে হত্যা করবো। তারা যদি
আমাদের শহর নগর বন্দরে বোমা বর্ষণ করে
আমরাও তাদের শহর নগর বন্দরে বোমা
বর্ষণ করবো। তারা যদি আমাদের
কাউকে অপহরণ করে আমরাও তাদের
লোকদেরকে অপহরণ করবো, তারা
আমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুট করে
নিলে আমরাও তাদের সম্পদ বৈধ কারণে
যেভাবে সম্ভব ছিনিয়ে নেব।
.
ইমাম ইবনুল কাইয়েম রহঃ এ আয়াতসমূহের
ব্যখ্যায় বলেন, এ সব আয়াতসমূহ প্রমাণ
করেযে জান মাল, সহায় সম্পদ, ঘর বাড়ি
নারী শিশু যাবতীয় ক্ষেত্রে সমান
প্রতিশোধ গ্রহণ বৈধ।
.
সমান প্রতিশোধ গ্রহণের বৈধতা ইসলামী
শরিয়তে এমনই স্বীকৃত একটি বিধান যে
স্বয়ং মুসলমানদের নিজেদের মধ্যেও এ
কিসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা বা সমান
প্রতিশোধগ্রহণ বৈধ; অতএব যে অপরাধের
কারণে যে শাস্তি মুসলমানদের উপর
প্রয়োগ বৈধ সে বিধান কুফফারদের
ক্ষেত্রে তো সন্দেহাতীতভাবে কার্যকর।
.
অতএব আমেরিকা ও তার দোসররা যেহেতু
গোটা পৃথিবী জুড়ে মুসলমানদের উপর
হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, অবরোধ আরোপ করে
ইরাকে নারী শিশু সহ দশ লক্ষাধিক মানুষ
হত্যাকরেছে এবং এখনো করছে,
আফগানিস্তানে আবাল বৃদ্ধ বণিতা
নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা
করেছে এবং এখনো করে চলছে; ইয়েমেন,
সোমালিয়া ও পাকিস্তানে চলছে তাদের
গোপন ড্রোন আক্রমন সেহেতু তাদের যে
কোন নাগরিককে একইভাবে পৃথিবীর যে
কোন স্থানে যে কোন উপায়ে হত্যা করা,
তাদের দেশে বোমা হামলা চালানো,
তাদের নারী শিশুদেরকে হত্যা করা,
তাদেরকে অপহরণ করা, তাদের টাকা পয়সা
ধন সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া ও তাদেরকে ভীত
সন্ত্রস্ত করা সম্পূর্ণ বৈধ।
.
.
৩য় দলীলঃকা’ব বিন আশরাফের হত্যাকাণ্ড
.
এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিলো ৩য় হিজরী
সনের রবিউল আউয়াল মাসের ১৪ তারিখ
রাতে।রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটি দলকে প্রেরণ করেন,তিনি তাদেরকে বিদায় জানানোর সময় বলেন, ‘আল্লাহ্র নামে তোমরা বেরিয়ে পড়ো, হে আল্লাহ্!তুমি তাদেরকে
সাহায্য করো’ এর পর তিনি ঘরে
এসে সালাত আদায় করতে থাকেন এবং
তাদের সফলতার জন্য আল্লাহ্র দরবারে
কান্নাকাটি করে মোনাজাত করতে থাকেন।
.
জাবির(রাঃ) থেকে বর্ণীত তিনি বলেন,
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এক দিন বলেন,
ﻣﻨﻠﻜﻌﺒﺒﻨﺎﻷﺷﺮﻓﻔﺈﻧﻬﺂﺫﻯﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ
‘কা’ব বিন আশরাফকে হত্যার জন্য কে
আছো? সে আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর
রসুলকে কষ্ট দিয়েছে’।
.
আল্লাহ্র রসূলের একথা শুনে মুহাম্মাদ
বিন মাসলামাহ (রাঃ)বলেন, ইয়া
রসুলাল্লাহ আপনি কি সত্যিই চান আমি
তাকে হত্যা করে ফেলি? তিনি বলেন, হ্যা
আমি তাই চাই।
.
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(রাঃ) বলেন, তাহলে
আমাকে কিছু (মিথ্যা কথা)বলার অনুমতি
দিন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমার যা প্রয়োজন
বলো। অতঃপর মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ
রাঃ কা’ব বিন আশরাফের কাছে এসে
আল্লাহ্র রসূলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন
এ ব্যক্তি আমাদের কাছে শুধু সাদাকা
চায়, সে তো আমাদেরকে মহাকষ্টে
ফেলে দিয়েছে! তখন সে বলে যে, এখন
পর্যন্ত আর কিইবা দেখেছো, সে তো
তোমাদেরকে শেষকরে ছাড়বে।মুহাম্মাদ
বিন মাসলামাহ(রাঃ) তখন বলেন, একবার
যেহেতু তাঁর অনুসারীর খাতায় নাম
লিখিয়েছি এখন আর তাঁর শেষ না দেখে
ছাড়ছি না। যাইহোক শোনো, আমরা
তোমার কাছে এসেছিলাম (এই বিপদের
সময়) তুমি আমাদেরকে এক দুইসা’ ধার
দেবে এই জন্য। সে বললো, আচ্ছা তা
দেয়া যাবে তবে তার বিনিময়ে আমার
কাছে কিছু বন্ধক রাখতে হবে।মুহাম্মাদ
বিন মাসলামাহ(রাঃ) বললেন আচ্ছা তুমিই
বলো তুমি কী বন্ধক চাও; সে (নরপিচাশ)
বললো, তোমাদের নারীদেরকে আমার
কাছে বন্ধক রাখো। (রাগ ক্ষোভ সব চেপে
রেখে স্বাভাবিক থাকার ভান করেতার
কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে) তিনি বললেন,
আমরা কিভাবে আমাদের
নারীদেরকে তোমার কাছে বন্ধক
রাখি অথচ তুমি হচ্ছো আরবের সবচেয়ে
হ্যান্ডসাম সুপুরুষ! তারপর সে বললো,
তাহলে তোমাদের সন্তানদেরকে বন্ধক
রাখো; তিনি বললেন, কিভাবে
আমরা আমাদের সন্তারদেরকে বন্ধক রাখি
বলো, তাহলে তো লোকেরা গালাগালি
দিয়ে তাদেরকে বলবে যে, এই
তোদেরকেই তো মাত্র এক দু’ সা’ এর
বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছিলো! তার
চেয়ে বরং আমরা আমাদের অস্ত্রশস্ত্র
তোমার কাছে বন্ধক রাখি। অবশেষে সে
সম্মত হয়।তারা রাতে গোপনে তার সাথে
দেখা করার কথা বলে চলে যান।
রাতেরবেলা মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ
রাঃ কা’ব বিন আশরাফের দুধ ভাইআবু
নায়লাকে সাথে নিয়ে আসলেন। তারা দু’জন
তাকে ডাক দিলে সে যখন নেমে
আসতে যাচ্ছিলো তখন তার স্ত্রীতাকে
বললো, ‘এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো?
আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন তার কথা
থেকেরক্তের ফোঁটা ঝড়ে পড়ছে’।কোন
কোন বর্ণনায় রয়েছে যে সে বলেছে,
‘আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন তার মুখের
আওয়াজের সাথে রক্ত বেরিয়ে আসছে’।
সে বললো, আরে! এতো আমার বন্ধু
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ ও আমার দুধভাই
আবু নায়লা এসেছে, ওদের সাথে একটু
কথা বলতেযাচ্ছি।
.
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাঃ আবু নায়লা
ছাড়াও আরও দু’জনকে সাথে
নিয়ে এসেছিলেন, তারা হলেন আবু আবস
বিন হাবর ও উব্বাদ বিন বিশাররাঃ।
তিনি তাদেরকে আগে থেকেই বলে
রেখেছিলেন যে, তিনি তার ঘাড় ধরে যখন
তার মাথা নুইয়ে দেবেন তখন যেন তারা
তাদের কাজ সেরে ফেলে।
অতঃপর সে যখন নেমে এলো তারা
বললো বাহ! তোমার শরীর থেকে তো
চমৎকার সুঘ্রান আসছে! সে বললো, হ্যা তা
তো হতেই পারে কারণ আমার কাছে রয়েছে
আরবের সবচেয়ে সুগন্ধিনি নারী।
.
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাঃ বললেন
আমি কি একটু তোমার চুল থেকে ঘ্রান
শুঁকে দেখতে পারি? সে বললো, অবশ্যই, এই
নাও শুঁকে দেখো; সে একবার শুঁকেছেড়ে
দিয়ে কিছুক্ষন পর আবার বললো, (ওহ যা
ঘ্রান!) আমাকে তোমার মাথাটা
আরেকবার শুঁকতে অনুমতি দেবে? এবার সে
তার মাথার চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে মাথাটা নিচু করে ধরে অন্যদের বললো, এবার তোমাদের কাজ সেরে ফেলো, আর তারা সাথে সাথে
তাকে হত্যা করে ফেলে।
(সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
.
কা’ব বিন আশরাফ নিহত হওয়ার পর তার
জাতির ইহুদীরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে
বললো, আমাদের একজন অন্যতম
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে
আপনার অনুসারীদের দ্বারা গুপ্ত হত্যার
শিকার হয়েছেন।রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বলেন,
তার মতো একই রকম চিন্তার যেসব
লোকেরা পালিয়ে গেছে তাদের মতো
সেও যদি পালিয়ে যেত তাহলে তার এই
দশা হতো না, কিন্তু সে আমাদেরকে
বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে,
আমাদেরকে অপমান করেছে; আর
ভবিষ্যতেও কেউ যদি এমন দুঃসাহস
দেখায় তাহলে সেও তার ঘাড়ের উপর
তলোয়ার ছাড়া কিছু দেখতে পাবে না।
(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও সীরাতে ইবনে হিশাম)
.
ফতহুল বারী গ্রন্থে ইবনেহাজার(রহঃ)ইকরামা রাঃ এর সুত্রেবর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, এ
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর গোটা
ইহুদীসম্প্রদায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সালামের কাছে এসে তাদের নেতার
গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার ঘটনা তাকে
জানায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামতার রক্ত পনের ব্যপারে কোন
কথা না বলে বরং তাদেরকে তিনি
মনে করিয়ে দিতে লাগলেন যে সে
আল্লাহ্ তায়ালা, তাঁর রসুল ও
ঈমানদারদের সম্পর্কে কি সব আপত্তিকর
কথাবার্তা বলে বেড়াতো।
.
এতটুকুতেই তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং
তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে
ভবিষ্যতেও যদি কেউ তার মতো আচরণকরে
তাহলে তার পরিণতিও একই রকম হবে।
হাফেজ ইবনে হাজার রহঃ বলেন কাউকে
দাওয়াহনা দিয়ে হত্যার বৈধতার ব্যপারে
এ ঘটনা একটি মজবুত দলীল।
.
কা’ব বিন আশরাফের কু কীর্তির মধ্যে
অন্যতম ছিল সে মুশরিকদেরকে
মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্ররোচনা
দিতো, আল্লাহ্র রসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সম্পর্কে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতো
এবং মুসলিম নারীদের সম্পর্কে অশ্লীল
কবিতা রচনা করতো ইত্যাদি।
.
হাফেজ ইবনে হাজার রহঃ এ প্রসঙ্গে আরও
বলেন
ﻭﻓﻴﻬﺠﻮﺍﺯﻗﺘﻼﻟﻤﺸﺮﻛﺒﻐﻴﺮﺩﻋﻮﺓ
ﺇﺫﺍﻛﺎﻧﺘﺎﻟﺪﻋﻮﺓﺍﻟﻌﺎﻣﺔﻗﺪﺑﻠﻐﺖ ﻩ
এ ঘটনার মধ্যে সাধারনভাবে ইসলামের
দাওয়াত সবার কাছে পৌঁছে গেলে যে
কোন মুশরিককে ব্যক্তিগতভাবে ইসলামের
দাওয়াত না দিয়ে হত্যা করার বৈধতা
রয়েছে।
.
ইমাম বুখারী রহঃ এ হাদিসটিকে জিহাদ
অধ্যায়ে ‘ যুদ্ধে মিথ্যা বলা ’ অনুচ্ছেদে
সংকলণ করেছেন।
.
ইমাম নববী রহঃ এ হাদিসের ব্যখ্যা
প্রসঙ্গে বলেন, “কা’ব বিন আশরাফই প্রথম
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্তে
লিপ্ত হয়ে নিরাপত্তা চুক্তি লংঘন
করেছে, আর মুহাম্মাদ বিন মাসলামা রাঃ
ও তাকে প্রথমে নিরাপত্তার আশ্বাস
দিয়ে তারপর তাকে হত্যা করেছেন
বিষয়টি এমন নয়।
.
কাযী আইয়ায রহঃ সহীহ মুসলিমের শরাহ গ্রন্থ আল মিনহাজের মধ্যে বলেন, ‘কারো জন্য একথা বলা বৈধ নয় যে কা’ব বিন আশরাফের হত্যাকাণ্ড কোন বিশ্বাসঘাতকতা ছিল’; আলী ইবনে আবী
ত্বালিব রাঃ এর মজলিসে কোন এক ব্যক্তি এমন মন্তব্য করলে তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ দেন”।
.
অতএব আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর রসূলের
সাথে যুদ্ধে লিপ্ত কোন কাফিরকে গুপ্তহত্যা করাকে যদি কোন ব্যাক্তি গাদ্দারি বা বিশ্বাসঘাতকতা বলে আখ্যায়িত করে কিংবা বলে যে এভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা ইসলামে
হারাম তাহলে সে ব্যক্তি নির্ঘাত
আল্লাহ্র কিতাব ও রসূলের সুন্নাহকে
মিথ্যা সাব্যস্তকারী পথভ্রষ্ট।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ
‘আস স-রিমুল মাসলুল’ গ্রন্থে এ হাদিসের
উপর আলোচনা পেশ করে বলেন ‘আল আযা’
শব্দটি প্রয়োগ হয় এমনলঘু শ্রেনীর দুষ্কৃতি
বুঝানোর জন্য যার দ্বারা মানুষের অন্তরে
কষ্ট দেয়া হয়পক্ষান্তরে ‘যারার’ শব্দটি
ব্যবহার হয়সক্রিয়ভাবে চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কাউকে (মানসিক শারীরিক, সামাজিক
অর্থনৈতিকভাবে) প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে। তাই নিছক ‘আযা’ এর কারণেই যেখানে নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধব্যক্তিকে হত্যা করা আবশ্যক হয়ে যায় সেখানে কেউ যদি আল্লাহ্তায়ালা কিংবা তাঁর রসুলকে গালি গালাজ করে, দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে তার হুকুম কী হতে পারে তা সকলেরই জানা। আর একটি বিষয় হলো এ ঘটনা প্রমাণ করে যে আল্লাহ্তায়ালা এবং তাঁর রসুলকে যে কষ্ট দিবে তাকে হত্যা করা যে কোন মুসলমানের জন্য হালাল। এ ঘটনা আরও প্রমাণ করে যে আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর রসুলকে যদি কেউ কষ্ট দেয়, তাদেরপ্রতি অপমানজনক বা অশোভনীয় কোন কাজ যদি কেউ করে তাহলে তার সাথেমুসলমানদের সম্পাদিত সকল শান্তি চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়।
.
.
৪র্থ দলীলঃইবনে আবুল হুকায়েক
আবুরাফে’র হত্যাকাণ্ড
.
আবুরাফে’ ছিলো খায়বার অঞ্চলে বসবাসকারী একজন ইহুদী নেতা,হিজাযের বিখ্যাত ব্যবসায়ী।এই ব্যক্তি ছিলো সেসব লোকদের অন্যতম যারা মক্কার মুশরিদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উস্কানি দিতো। সে খন্দক যুদ্ধে
মক্কার মুশরিকদেরকে উস্কানি দাতাদের
অন্যতম হোতা। ৫ম হিজরী সনের যুলকা’দাহ
কিংবা যুলহজ্জ মাসেতাকে হত্যা করা
হয়।
এ ঘটনার সুত্রপাত হিসেবে ঐতিহাসিক
ইবনে ইসহাক ইমাম যুহরী, আব্দুল্লাহ ও
কা’ব বিন মালেক রাঃ এর সুত্রে বর্ণনা
করেন যে, আওস এবং খাযরাজ গোত্রের
লোকেরা একে অপরের সাথে ইসলামের
জন্য যুদ্ধে কোন গোত্র কেমন
ভুমিকা পালন করেছে তা নিয়ে
প্রতিযোগিতা করতো। অন্যান্য দিক
থেকে উভয় গোত্র প্রায় সমান
সমানথাকলেও আওস গোত্র দ্বারা
সংগঠিত কা’ব বিন আশরাফের হত্যাকাণ্ডের মতো কোন উদাহরণ খাযরাজ গোত্রের লোকেরা
উপস্থাপন করতে পারলো না। তখন তারা
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের কাছে গিয়েবললো, ইয়া
রসুলাল্লাহ, আপনি আমাদেরকে এমন এক
ব্যক্তির নাম বলে দিন যাকে হত্যা করে
আমরা আওস কর্তৃক কা’ব বিন আশরাফকে
হত্যার কৃতিত্বের সমতা রক্ষা করতে
পারি।রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তখন তাদেরকে আবু
রাফে’কে হত্যার নির্দেশ দেন।
.
এই অভিযানে পাঁচজন সাহাবীর একটি টিম
অংশ নেয়। তারা হলেন (১) আব্দুল্লাহ
ইবনে আতীক (২)মাসউদ বিন সিনান
(৩)আব্দুল্লাহ বিন উনায়স (৪) আবু কাতাদা
বিন হারিস (৫) খুযা’য়ী বিন আল আসওয়াদ
রাঃ।
.
সহীহ আল বুখারিতে বারা বিন আযিব রাঃ
এর সুত্রে বর্ণীত রয়েছে যে তিনি বলেন,
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আনসারদের একটি দলকে ইহুদী
আবু রাফে’কে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রেরণ
করেন। তাদের মধ্য থেকে একজন
(আবুআতীক রাঃ) এগিয়ে গিয়ে ইহুদীদের
দুর্গে প্রবেশ করেন। তিনি বলেন, অতঃপর
আমি গিয়ে তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ
করলাম আর তারা দুর্গের প্রধান ফটক
বন্ধ করে দিল। এদিকে তাদেরএকজনের
একটি গাধা হারিয়ে গিয়েছিলো; তারা
গাধাটি খুঁজতে বেরিয়ে পড়লে আমিও
গাধা খোঁজার ভানধরে তাদের সাথে
বেরিয়ে পড়লাম। আমি তাদেরকে বুঝাতে
চাচ্ছিলাম যে আমিও তাদেরসাথে গাধা
খোঁজ করছি। অবশেষে গাধাটি পেয়ে
গেলে তারা যখন দুর্গে প্রবেশ করেতখন
আমিও তাদের সাথে আবার দুর্গে প্রবেশ
করি। তারপর আমি লক্ষ করলাম যে তারা
দুর্গের ফটকবন্ধ করে চাবিটি একটি
কুলুঙ্গির মধ্যে রেখে দিলো।অতঃপর
তারা ঘুমিয়ে পড়লে আমি চাবি নিয়ে
ফটকখুলে রেখে (অন্ধকারের মধ্যে
হাতড়ে) আবু রাফে’র ঘরে গিয়েপৌঁছলাম।
আমি ‘ও আবু রাফে’ বলে ডাক দিলে সে
আমার ডাকে সাড়া দিলো। আমি তার
আওয়াজ দ্বারা তার অবস্থান অনুমান করে
তরবারির আঘাত হানলাম, আর অমনি সে
চিৎকার করে উঠলো; আর আমি ঘর থেকে
বেরিয়ে এলাম। যেন তার সাহায্যের জন্য
কেউ এগিয়ে এসেছে এমন ভান করে
আমি আবার ঘরে প্রবেশ করে গলার স্বর
পরিবর্তন করে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ও আবু
রাফে’ (চিৎকার করলে কেন) তোমার কী
হয়েছে? সে বলল তোমার ধ্বংস হোক
(তাড়াতাড়ি আসছো না কেন) কি হল
তোমার, কে যেন আমার ঘরে ঢুকে আমাকে
আঘাত করেছে। তিনি (আবু আতীক) বলেন,
অতঃপর আমি আমার তরবারি তার
পেটের উপর রেখে শরীরের সকল শক্তি
দিয়ে এমন জোরে চেপে ধরলাম যে তার
(মেরুদণ্ডের) হাড্ডি পর্যন্ত গিয়ে ঠেকার
শব্দ হল। (এরপর তার চিৎকারে ও
বাচ্চাদের কান্নাকাটির শব্দে অন্যরাও
জেগে উঠে দরজা খুলতে লাগলো) অতঃপর
আমি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে
নেমে আসতে গিয়ে পড়ে গেলাম এবং
এতে আমার পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পেলাম।
যাই হোক কোন মতে আমি বেরিয়ে এসে
আমার সঙ্গীদের সাথে মিলিত হলাম।
আমি তাদেরকে বললাম, যতক্ষণ পর্যন্ত
আমি (আবু রাফে’র) মৃত্যু সংবাদ
প্রচারকারিণীর ঘোষণা শুনতে না পাই
ততক্ষনপর্যন্ত আমি এ স্থান ত্যাগ করবো
না। সত্যিই হিজাযের বিখ্যাত ব্যবসায়ী
আবুরাফে’র মৃত্যু সংবাদ না শুনে আমি সে
স্থান ত্যাগ করলাম না। মৃত্যু সংবাদ যখন
আমি শুনলাম তখন আমি দাড়িয়ে গেলাম
এবং আমার যেন কোন ব্যথাই ছিলো না।
অবশেষে আমিআল্লাহ্র রসূলের কাছে
গিয়ে আবু রাফে’কে হত্যার খবর দিলাম।
(বুখারী হাদিস নং ৩০২২, ৩০২৩, ৪০৩৮-৪০৪০;
আধুনিক প্রকাশনীর ছাপায় হাদিস
নং২৮০০ এবং ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ছাপায় হাদিস নং ২৮১০)
.
(বিভিন্নহাদিস ও ইতিহাস গ্রন্থে এ
ঘটনার আরও খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয়ের
বিস্তারিতবর্ণনা এসেছে। আগ্রহী
পাঠকগণ চাইলে তা পড়ে আরও বেশী
উপকৃত হতে পারেন।)
.
এক বর্ণনায় রয়েছে যে রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
কাছে আসারপর তিনি তার পায়ের ব্যথার
স্থানে তাঁর মুবারক মুখের থুথু লাগিয়ে
দেনএবং আবুল আতিক রাঃ বলতেন এরপর
তিনি কখনো সেখানে কোন ব্যথা অনুভব
করেননি।
.
ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় অবশ্য রয়েছে যে
তারা পাঁচজনই দুর্গে প্রবেশ করেছিলেন
এবংআব্দুল্লাহ ইবনে উনায়স রাঃ তার
উপর তরবারির আঘাত হানেন; আব্দুল্লাহ
বিন আতিক রাঃএর পা ভেঙ্গে যায়
এবং তারা তাকে ধরাধরি করে বের করে
নিয়ে আসেন ইত্যাদি।
.
হাফেজ ইবনে হাজার রহঃ এই হাদিসের
ব্যখ্যায় ফতহুল বারী গ্রন্থে বলেন,
ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গিয়েছে এমন
মুশরিকদেরকে হত্যার বৈধতা সহ
আল্লাহ্র রসূলের (আনীতদ্বীনের)বিরুদ্ধেযারাযুদ্ধ করে শক্তি সম্পদ কিংবা জবান দ্বারা কেউ
যদি তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতাকরে
তাহলে তাদেরকে যে কোন উপায়ে হত্যা
করা এবং যুদ্ধরত কাফিরদের
বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির ব্যপারে এ ঘটনা থেকে বৈধতা পাওয়া যায়।
.
.
৫ম দলীলঃখালিদ বিন সুফিয়ান আল হুযায়লীর হত্যাকাণ্ড
.
খালিদ বিন সুফিয়ান ছিল বনু হুযায়ল
গোত্রের লোক। সে আল্লাহ্*র রসূলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য মদীনা আক্রমনের
উদ্দেশ্যে বিশাল এক সেনাবাহিনী
প্রস্তুত করেছিল। ইমাম আহমাদ রহঃ তার
মুসনাদে এবং অন্যন্য অনেক হাদিস
সংকলকগন আব্দুল্লাহ বিন উনায়স রাঃ
থেকে এ ঘটনার বর্ণনা সংকলন করেছেন।
তিনি বলেন,
ﺩﻋﺎﻧﻴﺮﺳﻮﻻﻟﻠﻬﺼﻠﻯﺎﻟﻠﻬﻌﻠﻴﻬﻮ ﺳﻠﻤﻔﻘﺎﻝ :
ﺇﻧﻬﻘﺪﺑﻠﻐﻨﻴﺄﻧﺨﺎﻟﺪﺑﻨﺴﻔﻴﺎﻧﺎﻝ
ﻫﺬﻟﻴﻴﺠﻤﻌﻠﻴﺎﻟﻨﺎﺳﻠﻴﻐﺰﻭﻧﻴﻔﺎﺉ ﺗﻬﻔﺎﻗﺘﻠﻪ
একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আমাকে ডেকে বলেন
‘আমার কাছে এই সংবাদ এসেছে যে
খালিদ বিন সুফিয়ান আল হুযায়লী
আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য লোকজন
জড় করছে, অতএব তুমি গিয়ে তাকে হত্যা
করে ফেলো’।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন,
ﻣَﻨﻠﺴﻔﻴﺎﻧﺎﻟﻬﺬﻟﻴﻴﻬﺠﻮﻧﻴﻮﻳﺸﺖ ﻣﻨﻴﻮﻳﺆﺫﻳﻨﻲ
‘সুফিয়ান আল হুযায়লীকে শায়েস্তা
করার মতো কে আছো? সে
আমাকে অপমান করছে, কষ্ট দিচ্ছে!’
আব্দুল্লাহ বিন উনায়স রাঃ বলেন, আমি
আল্লাহ্র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বললাম, আপনি আমার
কাছে তার এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা
করেন যাতে আমি তাকে চিনতে পারি।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, তার চেহারার
দিকে তাকালেই তোমার মধ্যে একটা ঘৃণা
ও বিরক্তির উদ্রেক হবে। এরপর আমি
প্রস্তুতি নিয়ে রওয়ানা হয়ে পড়লাম, আমি
যখন তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম তখন ঠিক
তেমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম
যেমনটি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছিলেন। তাকে
দেখলাম সে অস্থিরতার সাথে কাঁপছে
আর পায়চারী করছে। সেখানে দেখলাম
কিছু পতিতাদের আনাগোনা রয়েছে যারা
তার কাছে আসা যাওয়া করতো।আমাকে
দেখে সে জিজ্ঞাসা করলো তুমি কে?
আমি বললাম, আমি আপনার কথা শুনে এবং
আপনার বাহিনী প্রস্তুত করার খবর শুনে
যোগ দিতে এসেছি।আমি তার সাথে কিছু
সময় হাঁটাহাঁটি করলাম, এরপর (এক নির্জন
গলি পথে এসে) সে যেই আমাকে সুযোগ
করে দিলো আমি অমনি তার উপর
তলোয়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম
এবংহত্যার পর রাস্তার ইটা বালু পাথর
ইত্যাদি দিয়ে তাকে ঢেকে ফেললাম।

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে
তিনিবলেন ‘ অতঃপর রাত গভীর হয়ে
পড়লে লোকেরা যখন ঘুমিয়ে পড়লো তখন
আমি চুপচাপ তাকে হত্যা করে তার মাথা
কেটে নিয়ে এলাম। তারপর যখনতার কাটা
মাথা নিয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলাম
তখন তিনি আমাকে দেখেই বললেন, –
ﺃﻓﻠﺤﺎﻟﻮﺟﻪঅর্থাৎ তোমার চেহারা সফলতায়
উদ্ভাসিত হয়েছে; আমি বললাম ইয়া
রসুলাল্লাহ আমি আল্লাহ্র ইচ্ছায় তাকে
হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বললেন,
তুমি সত্য বলেছো। তারপর তিনি আমাকে
নিয়ে তাঁর ঘরে প্রবেশ করে আমাকে
একটি লাঠি উপহার দিয়ে বললেন, হে
আব্দুল্লাহ ইবনে উনায়স, এই লাঠিটি
কেয়ামতের দিন আমার ও তোমার মাঝে
(সম্পর্কের) নিদর্শন স্বরূপ তোমার কাছে
রেখে দাও।
– ﺇﻧﺄﻗﻼﻟﻨﺎﺳﺎﻟﻤﺘﺨﺼﺮﻭﻧﻴﻮﻣﺌﺬٍ
খুব কম মানুষই সেদিন এমন লাঠির
অধিকারী হবে।
বর্ণনাকারী বলেন, আব্দুল্লাহ রাঃ সেই
লাঠিটিকে তার তলোয়ারের সাথে
লাগিয়ে রেখেছিলেন, তিনি সেটিকে সব
সময় সাথে সাথে রাখতেন এমনকি মৃত্যুর
সময় তিনি এটি তার সাথে দিয়ে
দিতে নির্দেশ দেন; আর এভাবে সে
লাঠিটি তার কাফনের মধ্যে দিয়ে তাকে
দাফন করা হয়।
.
.
ষষ্ট দলীলঃ ইহুদী নারীর হত্যাকাণ্ড
.
ইমামশা ’ বী রহঃ হযরত আলি রাঃ এরসুত্রে
বর্ণনা করেন, এক ইহুদী মহিলা ছিল যে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি গালাজ করতো এবং তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন রকম
আপত্তিকর মন্তব্য করতো। অতঃপর এক
ব্যক্তি তার শ্বাসনালী চেপে ধরে তার
নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকে মেরে ফেলে। এ
ঘটনা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের কাছে আসলে তিনি সে
মহিলার কোন ব্লাডমানি বা রক্তমুল্য
পরিশোধের নির্দেশ দেননি।
.
ইমাম আবু দাউদ রহঃ ও অন্যান্য সংকলকগণ এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
.
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন এ হাদিসটি উত্তম, কারণ ইমাম শা’ বী রহঃ
আলী রাঃ কেদেখেছেন এবং তার থেকে
তিনি নিজে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া এ
বর্ণনা যদি মুরসালশ্রেণীরও হয়ে থাকে
তবে ইমাম শা ’ বী রহঃ জ্ঞানীদের
কাছে সহীহ মুরসাল বর্ণনাকারী হিসেবেই
পরিচিত। তার থেকে যতো মুরসাল বর্ণনা
রয়েছেতা সবই সহীহ, আর তিনি আলী রাঃ
বর্ণীত হাদিসের ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞানী হিসেবেপরিচিত ছিলেন।তাছাড়া এই হাদিসের অন্যান্য বর্ণনাকারীগণও নির্ভরযোগ্য এবংএর
সমর্থনে ইবনে আব্বাসরাঃ এর বর্ণনাও
রয়েছে। অতএব এ হাদিসটি হয় খবরে
ওয়াহেদ অথবা এর অর্থের দিকথেকে
অন্তত ওয়াহেদ শ্রেণীর; আহলে ইলমগন এ
হাদিস এবং এমন অন্যান্য যেসব ঘটনা
সাহাবীদের থেকে বর্ণীত রয়েছে তা
থেকে দলীল গ্রহণে মোটেই ইতস্ততঃ
করেননি।
.
এ ঘটনা দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, নারী
হোক কিংবা পুরুষ, যিম্মী হোক বা
চুক্তিবদ্ধ, এমনকি যদি মুসলিম নামধারীও
হয় তবুও আল্লাহ্র রসূলের শানে অসম্মান
জনক কথা বললে তাকে হত্যা করা সম্পূর্ণ
বৈধ।কারণ এ ঘটনায় অপরাধী হল একজন
মহিলা এবং সে মদীনার চুক্তিবদ্ধ
ইহুদী সম্প্রদায়ের লোক ছিল।
.
.
সপ্তম দলীলঃ মুশরিকদের গুপ্তচরকে হত্যার ঘটনা
.
সালামা ইবনু আকওয়া রাঃ বর্ণনা করেন
একবার রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের কোন এক সফরের সময় তাঁর
কাছে মুশরিকদের পাঠানো একজন গুপ্তচর
আসলো।সে এসে তাঁর সাহাবীদের সাথে
বসে বেশ কিছুক্ষন কথাবার্তা বলে চলে
গেলো।এরপর (যখনতিনি জানতে পারলেন
যে সেগুপ্তচর ছিলো তখন) তিনি
বললেন ﺍﻃﻠﺒﻮﻫﻮﺍﻗﺘﻠﻮﻩতাকে খুঁজে বের করে
এনে হত্যা করে ফেলো।তারপর (কোন এক
সাহাবী) তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করে
ফেলে; রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম নিহতের কাছে থাকা
মালামাল হত্যাকারীকে প্রদান করেন।
(সহীহআল বুখারী হাদিস নং ৩০৫১, সহীহ
মুসলিম হাদিস নং ১৭৫৩, আধুনিক
প্রকাশনীর ছাপায় বুখারির হাদিস নং
২৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ছাপায়
বুখারির হাদিস নং ২৮৩৩; মুসনাদে
আহমাদ হাদিস নং ১৬৫২৩)
.
.
অষ্টম দলীলঃ আসমা বিনতেমারওয়ানের হত্যাকাণ্ড
.
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ
তার ‘ আস স-রিমুল মাসলুল আ ’ লা শাতিমির
রসুল ’ নামক গ্রন্থে এবং ইমাম মাকরিযী
রহঃ‘ ইমতাউল ইসমা ’ নামক গ্রন্থে এ
ঘটনাটি সংকলন করেছেন।
.
ইবনেআব্বাস রাঃ বলেন, খুতামা গোত্রের
এক মহিলা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লামের শানে অপমান
জনক কথাবার্তা বলতো; রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক
দিন বলেন, আমার পক্ষ থেকে তাকে
শায়েস্তা করার কে আছো? সেই
মহিলারগোত্রের এক ব্যক্তি দাড়িয়ে
বলল, আমি আছি ইয়া রসুলাল্লাহ। অতঃপর
সে তাকেহত্যা করে এসে রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
খবর দেয়। তিনি খবর শুনে (তার রক্তপন
প্রসঙ্গে) তিনি বলেন দু ’ টো রাম ছাগলও
তার (রক্তপণের) ব্যপারে বাদানুবাদ
করতে পারে না। (অর্থাৎ তার রক্তপন
পরিশোধের কোন প্রশ্নই ওঠে না)
আসহাবুলমাগাযী বা যুদ্ধের ঘটনা
সংকলকগনের অনেকেই আরও
বিস্তারিতভাবে এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
.
ইমাম ওয়াকেদী রহঃ বলেন, আব্দুল্লাহ
বিন হারিস ফুযায়ল থেকে তিনিতার
পিতা থেকে বর্ণনা করে যে আসমা
বিনতে মারওয়ান ছিল ইয়াযিদ বিন
হিসান আলখত্তামির অধিনস্ত। সে
আল্লাহ্র রসুলকে কষ্ট দিতো এবং
ইসলামের সমালোচনা করতএবং এ
উদ্দেশ্যে সে কবিতা রচনা করতো।
.
উমায়র বিন আদি আল খত্তামী রাঃ এই
দুষ্ট মহিলারকথাবার্তা শুনে বলেন, হে
আল্লাহ্ আমি তোমার নামে একটি মান্নত
করছি, আমি যদি মদিনায় ফিরতে পারি
তাহলে আল্লাহ্র রসূলের তরফ থেকে আমি
তাকে হত্যা করবো। রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বদর থেকে ফিরে আসার পর এক রাতে
উমায়র বেরিয়ে পড়েন তার মিশন সফল
করতে। তিনি গভীর রাতে এসে তার ঘরে
প্রবেশ করেন। তিনি অন্ধকারে হাতড়ে
তাকে বের করে বুঝতে পারেন পান যে সে
তার এক বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। তিনি
বাচ্চটিকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়ে
তার পেটের মধ্যে তলোয়ার ঢুকিয়ে এফোঁড়
ওফোঁড় করে দেন। মিশন শেষ করে এসে
তিনি আল্লাহ্র রসূলের সাথে ফজর সালাত
আদায় করেন।অতঃপর রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উমায়রের দিকে তাকিয়ে তাকে
জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি আসমা বিনতে
মারওয়ানকে হত্যা করে ফেলেছ?
তিনি বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য
করবান হোক ইয়া রসুলাল্লাহ, হ্যা আমি
তাকে হত্যা করেছি।
.
উমায়র রাঃ ভয় পাচ্ছিলেন যেসে
মহিলাকে হত্যার কারণে আল্লাহ্র রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
উপর আবার কোন ঝামেলা এসে পড়ে কি
না; তাই সংশয়ে তিনি জজ্ঞাসা করলেন
ইয়া রসুলাল্লাহ এ কারণে কি আমার উপর
(রক্তমুল্য পরিশোধের) কোন দায়ভার
বর্তাবে? তিনি বলেন তার (রক্তমুল্যের)ব্যপারে দুটো রাম ছাগলওবাদানুবাদ করতে পারে না।
.
অতঃপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর আশপাশে যারা ছিল
তাদেরকে লক্ষ করে বললেন, তোমাদের
যখন মনচাইবে এমন কোন ব্যক্তির দিকে
তাকাতে যে আল্লাহ্তায়ালা এবং তাঁর
রসুলকে সাহায্য করেছে তখন তোমরা
উমায়র বিন আদি এর দিকে তাকাবে। ওমর
ইবনুল খাত্তাব রাঃ তখন বলেন, তোমরা এই
অন্ধ ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে দেখ যে
আল্লাহ্র আনুগত্যে ঝাপিয়ে পড়েছে।
.
রসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তার কথা শুনে বলেন-
ﻻﺗﻘﻼﻷﻋﻤﻯﻮﻟﻜﻨﻬﺎﻟﺒﺼﻴﺮ
তাকে অন্ধ বল না সে তো চক্ষুষ্মান
উমায়ের রাঃ যখন আল্লাহ্র রসূলের কাছ
থেকে বেরিয়ে এসে তার নিজ গোত্রের
এলাকায় আসলেন তখন লোকেরা সেই
মহিলার দাফন কাফনে ব্যস্ত ছিলো।
তারা তাকে মদিনার দিকথেকে আসতে
দেখে সন্দেহ করলো; তাকে জজ্ঞাসা
করলো, উমায়র! তুমিই কি এই মহিলাকে
হত্যা করেছ? তিনি বললেন, হ্যা আমিই
হত্যা করেছি
ﻓﻜﻴﺪﻭﻧﻴﺠﻤﻴﻌﺎﺛﻤﻼﺗﻨﻈﺮﻭﻥ
অতএব তোমরা সবাই মিলে আমাকে
শায়েস্তা করার যে কোন ফন্দি আঁটতে
পারো, আর আমাকে ( তা প্রতিরোধের)
কোন অবকাশই দিও না। যার হাতে আমার
প্রান আমি সেই সত্ত্বার কসম করে বলছি,
তোমরা সকলেও যদি তার মতো একই কথা
বলতা তাহলে আমি একা তোমাদের সবার
উপর তলোয়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তাম; হয়
আমি নিহত হতাম অথবা তোমাদেরকে
হত্যা করে ফেলতাম।
.
তার এইসাহসী পদক্ষেপের ফলে
আল্লাহ্র ইচ্ছায় সেই দিনই বনী খুতামার
উপর ইসলাম বিজয় লাভ করে। এই গোত্রের
মধ্যে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করা সত্ত্বেও
এতো দিনগোত্রের লোকদের ভয়েতা
গোপন করে রাখতেন; এইঘটনার পর তারাও
প্রকাশ্যে তাদের ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা
দেন। কবি হাসসান বিনসাবিত উমায়র বিন
আদির প্রশংসা করে কবিতাও রচনা
করেছেন।

এঘটনাটি মুহাম্মাদ বিন সা ’ দ তার
তাবাকাতের মধ্যেওসংক্ষিপ্ত আকারে
বর্ণনা করেছেন।
.
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন,
সাহাবায়ে কেরাম রাঃ দের মাঝে এটা
একটা সাধারণ প্রচলন ছিল যে, আল্লাহ্র
রসুলকে কেউকষ্ট দিয়েছে একথা তারা
জানতে পারলে তারা তাকে নির্দ্বিধায়
হত্যা করে ফেলতেন, কেননা তার এ
অপরাধের শাস্তি হিসেবে এটাই তার
প্রাপ্য। কেবল আল্লাহ্র রসূলের কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা সাপেক্ষে তিনি যদি
কাউকে ক্ষমা করে দিতেন তবেই
কেউ হত্যার হাত থেকে বাচতে পারতো।
তবে এ ধরণের অপরাধী কোন ব্যক্তিকে
ক্ষমা প্রার্থনার আগেই যদি কেউ হত্যা
করে ফেলত তাহলে রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হত্যাকারীকে কোন দোষারোপ করতে না,
বরং তাকে বাহবা দিতেন এবং তার
প্রশংসাকরতেন; কেননা সে তো আল্লাহ্
তায়ালা এবং তাঁর রসুলকে সাহায্য
করেছে। যেমন ওমর রাঃ এক ব্যক্তিকে
হত্যা করে ফেলেছিলেন একারণে যে, সে
আল্লাহ্র রসূলের বিচারে সন্তুষ্ট
হয়েছিলো না। আসমা বিনতে মারওয়ান ও
অন্য এক ইহুদী নারীকে হত্যার দৃষ্টান্তও
একই রকম।
.
আল্লাহ্র রসূলের ইন্তেকালের সাথে
সাথে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ চিরতরে
বন্ধ হয়ে গেছে আর বাকি রয়ে গেছে
কেবল শাস্তি প্রয়োগের বিধান।
.
.
নবম দলীলঃ ইহুদী আবু আফাকের হত্যাকাণ্ড
.
সীরাত ও যুদ্ধের ঘটনা সংলকদের অনেকেই
এ ঘটনা সংকলণ করেছেন। ইমাম ওয়াকেদী
রহঃ বর্ণনা করেন যে বনু আমর গোত্রের
এক অতিশয় বয়স্ক বৃদ্ধ ছিল যাকে আবু
আফাক বলে ডাকা হতো; তার বয়স হয়ে
গিয়েছিলো একশত বিশ বছর। রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহুউ আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মদিনায় আগমন করলে সে ইসলামে তো
প্রবেশ করেইনি বরং আদা জল খেয়ে তাঁর
বিরোধিতায় অবতীর্ণহয়। রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন
বদর যুদ্ধের জন্য মদিনা থেকে বের হন তখন
তাঁর হিংসার আগুন আরও জ্বলে ওঠে, সে
যা খুশি তাই বলা আরম্ভ করে, সে
আল্লাহ্র রসূলের শানেঅপমানজনক
কবিতা লিখে প্রচার করতে লাগে এবং
তাঁর সাহাবীদের নামেও বিভিন্নরকম
কুৎসা রটনা আরম্ভ করে।
.
সালিম বিন উমায়র রাঃ তার এসব শুনে
বলেন, আমি মানত করলাম যে হয় আমি
তাকে হত্যা করবো অথবা আমি নিহত হব;
মদিনায় ফিরে তিনি অপেক্ষায় থাকেন
কখন সুযোগ পাওয়া যায়। অতঃপর এক দিন
তিনি সেই মোক্ষম সুযোগটি পেয়ে
গেলেন। এক গরমের রাতে আবু আফাক
বাইরে শুয়ে ছিল। সালিম বিন
উমায়র আস্তে করে তার কাছে গিয়ে
শরীরের মাঝখান থেকে এমনভাবে
তলোয়ার চালিয়ে দেনযে সে প্রায়
দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। আল্লাহ্র শক্র
তারস্বরে চিৎকার আরম্ভ করে দেয়;
সালিম বিন উমায়র চুপিসারে সরে পড়েন।
তারপর তার আস পাশের লোকেরাএসে
জড় হয়ে বলতে থাকে, আল্লাহ্র কসম
আমরা যদি তার হত্যা কারীকে শনাক্ত
করতে পারি তাহলে অবশ্যই তাকে হত্যা
করবো।
.
ইমাম ওয়াকেদী রহঃ বলেন আবু আফাকের
হত্যাকাণ্ড হিজরতের বিশ মাসের মাথায়
শাওয়াল মাসে সংগঠিত হয়েছিলো। ইমাম
ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, ঘটনাটি
সংগঠিত হয়েছিলোকা ’ ব বিন আশরাফের
ঘটনারপূর্বে; আর এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত
হয় যে চুক্তিবদ্ধ কোন জাতি গোষ্ঠীর
লোকেরাও যদি আল্লাহ্তায়ালা
কিংবা তাঁর রসূলের শানে অপমানজনক
কিছু বলে তাহলে সে ব্যক্তির নিরাপত্তা
রহিত হয়ে যায়।
.
.
দশম দলীলঃ আসওয়াদ আল আনসীর হত্যাকাণ্ড
.
আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, তাবাকাতে
ইবনে সা ’ দ, সীরাতে ইবনে হিশাম,
তারিখে তাবারী সহ ইসলামের ইতিহাসও
আল্লাহ্র রসূলের যতো সীরাত গ্রন্থ
রয়েছে তার প্রায় সকল গ্রন্থেই এ ঘটনা
বিশুদ্ধ সনদে সংকলিত হয়েছে। বিভিন্ন
সংকলকের বর্ণনার মধ্যে খুঁটিনাটি
বিভিন্ন বিষয়ে সামান্য তারতম্য থাকলেও
সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যপক কোন
মতপার্থক্য নেই। আমরা এখানে
সেসববর্ণনাসমূহের সমন্বিত একটি ধারা
বর্ণনা তুলে ধরবো।
.
বিদায়হজ্জের পর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন
ক্রমান্বয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন তখন
বিভিন্ন দিকে ভণ্ডদের মিথ্যা নবুওত
দাবীর ফেতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এসব মিথ্যা নবুওত দাবীদারদের মধ্যে
অন্যতম একজন ছিল ইয়েমেনের আসওয়াদ
আলআনসী। সে আগে থেকেই গণক শ্রেণীর
লোক ছিল, সে যাদু বিদ্যায়ও পারদর্শী
ছিল।সে বেশ প্রভাবশালীও ছিল;
মানুষকে বিমোহিত ও মন্ত্রমুগ্ধ করার এক
বিশেষ দক্ষতা ছিল তার।এসব কারণে সে
শুধু সমাজের সাধারণ মানুষের উপরই নয়
বরং সমাজের উচুস্তর ও বিত্তশালী
লোকদেরউপরও সে বেশ প্রভাব বিস্তার
করতে সক্ষম হয়। সে নিজেকে এক রহস্যময়
মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য
জনসমক্ষে বের হওয়ার সময় বিশেষ এক
ধরণের মুখোশপড়ে বের হতো।
আসওয়াদআল আনসীর হত্যাকাণ্ডে যিনি
সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন
তিনি হলেন ফিরোজ আদ দায়লামী।
ইয়েমেনে সে সময় যারা প্রভাবশালী ও
সম্মানের অধিকারী ছিলেন তাদের মধ্যে
অন্যতম ছিল আবনা সম্প্রদায়ের লোকজন।
এই সম্প্রদায়ের লোকেরা ছিল পারস্যের
সাসানী শাসক শ্রেণীর উত্তর পুরুষ যারা
দীর্ঘ দিন ইয়েমেনকে শাসন করেছে এবং
এদের মায়েরা ছিল স্থানীয় আরব।
ফিরোজ আদ দায়লামি ছিলেন ইয়েমেনের
এই আবনাসম্প্রদায়ের লোক।
ইসলামেরআবির্ভাবের সময় আবনাদের
মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিল
বাধান এবংসে–ই পারস্য সাম্রাজ্যেরপক্ষ থেকে এ অঞ্চলে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতো। যখন সে ইসলামের সত্যতাতথা মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
আসমানী দাওয়াতের বাস্তবতা উপলব্ধি
করতে সক্ষম হল তখন পারস্য সাম্রাজ্য
থেকে আনুগত্য প্রত্যাহার করে ইসলাম
গ্রহণ করে এবং তার অধিনস্ত লোকেরাও
তাকে অনুসরণ করে ইসলাম গ্রহণ করে।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া
সাল্লামও তাকে শাসক হিসেবে বহাল
রাখেন। কিন্তু আসওয়াদ আল
আনসীরআবির্ভাবের কিছু দিন পূর্বে
তিনি ইন্তেকাল করেন।

আসওয়াদআল আনসীর গোত্র বনু মুদহিজ
সর্বপ্রথম তার মিথ্যা নবুওতের দাবীর
প্রতি সমর্থন জানায়। সে তার গোত্রীয়
বাহিনী নিয়ে সান ’ য়া আক্রমন চালিয়ে
এখানকার গভর্নর বাধানেরপুত্র শাহারকে
হত্যা করেএবং তার স্ত্রী দাদওয়াহকে
সে জোরপূর্বক নিজে গ্রহণ করে। সান ’ য়া
থেকে সে আস পাশের অঞ্চলে একের পর
এক অভিযানচালাতে থাকে। তার এই
অতর্কিতে আক্রমনের ফলে খুবই অল্প
সময়ের মধ্যে হাদরা মাওত থেকে তায়েফ
ওআল আহসা থেকে এডেনপর্যন্ত বিস্তৃত
অঞ্চল তার দখলে চলে আসে।
.
আসওয়াদআল আনসীর ফিতনা যখন প্রায়
ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তার
কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হন তখনএকটি
চিঠি দিয়েমু ’ য়ায বিন জাবাল রাঃ এর
নেতৃত্বে দশ জন সাহাবীকেইয়েমেনের
বিশস্ত অনুসারীদের নিকট প্রেরণ করেন।
তিনি যে কোন মুল্যে আসওয়াদআল
আনসীর ফিতনা নির্মূল করার নির্দেশ
দেন।
.
আল্লাহ্র রসূলের চিঠি পাওয়ার পর
ফিরোজ আদ দায়লামী তার অন্যান্য
সাথী সঙ্গীদেরকে নিয়ে কর্মপন্থা
নির্ধারণের জন্যবৈঠকে বসেন। এ ব্যপারে
ফিরোজ আদ দায়লামী বলেন-
‘ আমরা আগে থেকেই সুযোগের অপেক্ষায়
ছিলাম আসওয়াদ আল আনসীকে শায়েস্তা
করার জন্য, কিন্তু বিষয়টি নিয়েউঠে পড়ে
লেগেছিলাম না। এরপর আল্লাহ্র রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
চিঠি পাওয়ারপর আমাদের নৈতিকশক্তি
বহু গুনে বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের
প্রত্যেকে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে
এদায়িত্ত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্য।এদিকে
আসওয়াদ আল আনসী তার একের পর এক
সফলতার কারণে বেশ অহংকারী হয়ে
পড়ে; ফলে সে তার সেনাপতিদের সাথে
এমন খারাপ ব্যবহারকরা আরম্ভ করে যে
স্বয়ংতাদেরও মনে হচ্ছিলো যে, পান
থেকে চুন খসলে তারাও যে কেউ যে কোন
সময় তার আক্রোশের শিকারহয়ে যেতে
পারে। তার একজন সেনাপতি ছিল কায়েস
বিন ইয়াগুস; আমি আমার চাচাত
বোনদাদাহকে নিয়ে একদিন কায়েসের
সাথে সাক্ষাত করে রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
চিঠি সম্পর্কে তাকে অবহিত করলাম
এবংতাকে বললাম যে, তার হাতে তুমি
শায়েস্তা হওয়ার আগে বরং তুমি তাকে
শায়েস্তা করে ফেলো। সে আমাদের
প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেয়এবং
আমাদেরকে সে আসওয়াদ আল আনসীর
বেশ কিছু গোপন তথ্য সরবরাহ করে। এরপর
আমরা তিনজন পরিকল্পনা করলাম যে
আমরা তাকে দুর্গের ভেতর থেকে আক্রমন
করবো এবং আমাদের অন্য ভাইয়েরা
বাহির থেকে থেকে আক্রমন করবে।
আমরা আরও সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা
আমাদের কাজিন দাদওয়ায়হকেও
আমাদের দলে ভেড়াবো, যার স্বামীকে
হত্যা করে আসওয়াদ আল আনসীতাকে
জোর পূর্বক নিজের স্ত্রীবানিয়ে
নিয়েছিলো। আমরা আসওয়াদ আল আনসীর
দুর্গে গিয়ে দাদওয়ায়হ এর সাথে সাক্ষাত
করে তাকে বললাম, তুমি ভালো করে ইটের
পাচ্ছো যে এই ব্যক্তি তোমার জীবনকে
কিভাবে দুর্বিষহ করে তুলেছে, সেতোমার
স্বামীকে হত্যা করেছে, তোমার
সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ সবাইকে
লাঞ্ছিত করেছে, তাদেরকে হত্যা করে
ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ্র রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাদের কাছে এই ফিতনাকে চিরতরে
মিটিয়ে দেয়ার জন্য এই চিঠি
পাঠিয়েছেন। তুমি কি এব্যপারে
আমাদেরকে সহযোগিতা করবে?
সেবললো, আমি কিভাবে তোমাদেরকে
সহযোগিতা করতে পারি? আমি তার
ইতিবাচক মনোভাব বুঝতে পেরে
সরাসরি বলে ফেললাম যে আমরা তাকে
হত্যা করতে চাই। আমার কথা শুনে সে
বললো, ‘ আল্লাহ্র কসম আমিও মনে মনে
একই কথা ভাবছিলাম, সেই সত্ত্বার কসম
যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে সুসংবাদদাতা ও
সাবধানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন,
আমি তার অধীনে থাকলেও
আমার মনে আমার ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে
কখনো বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক হয়নি,
আল্লাহ্ তায়ালা আমার জন্য তার চেয়ে
নিকৃষ্ট কোন ব্যক্তিকে সৃষ্টি করেননি;
আল্লাহ্র কসম! আমি যখন থেকে
তাকেদেখে আসছি তাকে কেবল
মিথ্যাচারী, ভণ্ড, প্রতারক ও শয়তান
রূপেই দেখে আসছি; তার থেকে আমি
আজ পর্যন্ত ভালো কিছু দেখিনি ’ ।
.
আমি তাকে বললাম, এখন বলো কিভাবে
আমরা তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে
দিতে পারি। সেতো সব সময় নিরাপত্তা
রক্ষীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।
সে আমাদেরকে দুর্গের একটি পরিত্যক্ত
রুমের কথা বলে বললো, তোমরা রাতের
প্রথম প্রহরে ওখান থেকে প্রবেশ করবে,
ওখানে তোমাদের জন্য অস্ত্র ও আলোর
ব্যবস্থা করা থাকবে, আর স্বয়ং
আমিও সেখানে থাকবো।
.
আমি বললাম, তুমি যা বলেছো মন্দ নয় তবে
এভাবে প্রবেশ করতে গেলে আমরা
নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে
যেতে পারি, তুমি তার চেয়ে আমার
কাছে তোমার একজন বিশ্বস্ত একজন
কাজের লোককে পাঠাও, আমি তাকে
বুঝিয়ে দেবো, দুর্গের কোন স্থানে ভেতর
থেকেএকটি প্রবেশপথ তৈরি করে রাখলে
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ
করা যাবে।
.
এরপর সবপ্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আমরা
একদিন রাতে আমদের তৈরি করা
নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রবেশ করলাম,
পরিকল্পনা মাফিক সেখানে অস্ত্র ও
আলো আগে থেকেই রাখা ছিল; আমরা
আস্তে করে আল্লাহ্র শত্রুর রুমের দিকে
অগ্রসর হলাম, আমার কাজিনকে তার
দরজায় দাঁড়ানো পেলাম, সে আমাদেরকে
তার অবস্থান স্থল দেখিয়ে দিলো। আমরা
তার ঘরে প্রবেশ করে দেখলাম সে গভীর
ঘুমে নাক ডাকছে। আমি তার গলায়
তলোয়ার চালাতেই সে ষাঁড় জবাই করার
সময় যেভাবে শব্দ করে সেভাবে গোঙ্গানি দিয়ে উঠলো। শব্দ শুনে রুমের অদুরে দাড়িয়ে থাকা
নিরাপত্তা রক্ষীরা ছুটে এসে জিজ্ঞাসা
করলো, কী হয়েছে? কিসের শব্দ হল এটা?
দাদওয়ায়হ তাদেরকে বলল, তোমরা
তোমাদের কাজে যাও, আল্লাহ্র নবীর
উপর ওয়াহী অবতীর্ণহচ্ছে!
একথা শুনে তারা চলে গেলো।
আমরা সকাল অব্দি দুর্গের মধ্যেই অবস্থান
করলাম। ফজরের সময় ঘনিয়ে এলে আমি
একটিওয়ালের উপর উঠে তিন বার
তাকবীর দিলাম; তারপর আযান দেয়া
আরম্ভ করলাম, ‘ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর
রসুলুল্লাহ’ (আমি স্বাক্ষ দিচ্ছি যে
মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রসুল)বলে তার সাথে
আমিযোগ করলাম ‘ওয়া আশহাদু আন্না
আসওয়াদআল আনসী আল কাযযাব ’ (এবং
আমি আরও স্বাক্ষদিচ্ছি যে আসওয়াদ
আল আনসী হল মহা মিথ্যাবাদী)।
এটাই ছিল আমাদের পূর্ব নির্ধারিত
সংকেত যার দ্বারা আমাদের অন্য
সাথীরা মিশন সফল হওয়ার সুসংবাদ
পাবে।
.
আমি এই ঘোষণা দেয়ার পর চারিদিক
থেকে মুসলমানরা আল্লাহু আকবার
তাকবীর ধ্বনি দিয়ে একযোগে আক্রমন
করে। সকালের আলো ফুটে ওঠার আগেই
তার দুর্গের পতন ঘটলো এবং আমাদের
মিশন সফল হল এবং সাথে সাথে আমরা
বিশেষ দুত মারফত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে
আল্লাহ্র শত্রুর সদল বলে নিহত
হওয়ার সংবাদ প্রেরণ করি।
কিন্তু বার্তাবাহক মদিনায় পৌঁছে দেখতে
পায় যে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সেই রাতেই ইন্তেকাল
করেছেন। তবে অন্যান্য সাহাবীদের
থেকে তারা জানতে পারেন যে যখন
আমাদের অপারেশন সফল হয় তখনই তিনি এ
সংবাদ ওয়াহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন’ ।
.
ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণীত আছে যে, যে
রাতে আসওয়াদ আল আনসী নিহত হয় সে
রাতেই আসমান থেকে ওয়াহির মাধ্যমে
আল্লাহ্র রসূলের কাছে তার নিহত
সংবাদ আসে। তিনি আমাদেরকে সুসংবাদ
দিয়ে বলেন, আসওয়াদ আল আনসী নিহত
হয়েছে। এক মুবারক পরিবারের এক মুবারক
ব্যক্তি তাকে হত্যা করেছে। জিজ্ঞাসা
করা হল সে ব্যক্তি কে? তিনি বললেন,
ফিরোজ ফিরোজ।
.
হেআল্লাহ্!তুমি আমাদের সত্যকে সত্য
হিসেবে দেখিয়ে দাও এবং তা
অনুসরণের তাওফিক দাও; আর মিথ্যাকে
আমাদের মিথ্যা হিসেবে দেখিয়ে দাও
এবং আমাদেরকে তা পরিহার করে চলার
তাওফিক দাও।
.
আমাদেরকে তোমার সেই সব বান্দাদের
কাতারে শামিল করো যারা তোমার
সন্তুষ্টির বিনিময়ে নিজেদের
জীবনকে বিক্রি করে দিয়েছে।
আমাদেরকে  তুমি তোমার সেই সব
বান্দাদের দলে শামিল করো যাদের জান
মাল তুমি কবুল করে নিয়েছো।
.
হেআল্লাহ্! তুমি আমাদের অন্তর থেকে
দুনিয়ার মুহাব্বাতকে দূর করে দাও, তুমি
আমাদের অন্তরেজিহাদের
এমন অনন্ত তামান্না তৈরি করে দাও যাতে
আমরা আমাদের জান মাল তোমার
রাস্তায় কোরবানী করার আগে কিছুতেই
ক্ষান্ত না হই।
.
হেআল্লাহ্!তুমি মুসলিম উম্মাহকে
তোমার দ্বীনের দিকে উত্তমভাবে ফিরিয়ে আনো।
আমীন!!!
…………………………….
…………………………….
মুলঃশায়েখ আবু জান্দাল আল আযদী
ডানপিটে মিডিয়ার সৌজন্যে বাংলা
অনুবাদ প্রকাশ করা হলো

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top