মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৬

সূর্যগ্রহন

কোন মন্তব্য নেই:

সূর্যগ্রহন
.মনে করুন আজ সূর্য গ্রহণ

আপনার নিশ্চয়ই অমাবশ্য, পূর্নিমা,
সূর্যগ্রহন, চন্দ্রগ্রহন নিয়ে প্যাচ লাগে?
সবই রিলেটেড আসলে।
.
একেবারে সহজে বলার চেষ্টা করি।
চাঁদ হলো সূর্য আর পৃথিবীর মাঝে
অবস্থিত। পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে,
আর চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে। সূর্যকে
ঘিরে পৃথিবী ঘুরে আসে ৩৬৫ দিকে
একবার। আর চাঁদ পৃথিবীকে ঘুরে আসে
মাত্র ২৯দিনে একবার। তাহলে দ্রুত ঘুরছে
চাঁদ। এই চাদের অবস্থানের উপরই হয় সূর্য
আর চন্দ্রগ্রহন।
.
প্রতি ১৪ দিনে একবার চাঁদ পৃথিবী আর
সূর্যের মাঝে আসে। অর্থাৎ পৃথিবী , চাঁদ
এবং সূর্য একই লাইনে থাকে এবং চাঁদ
মাঝে থাকে। তখন দেখা যায় নিউ মুন বা
নতুন চাঁদ (অর্ধ বাকা চাঁদ যেটা, ঈদের
চাদের মত) । এর ১৪ দিন পর পৃথিবী চলে
আসে চাঁদ আর সূর্যের মাঝে। অর্থাৎ আরো
১৪ দিনে চাঁদ পুরো ৯০ ডিগ্রী ঘুরে
পৃথিবীর অপর পাশে চলে আসে। তখন চাঁদ,
পৃথিবী আর সূর্য এক লাইনে থাকে এবং
পৃথিবী মাঝে। তখন পৃথিবী থেকে চাদকে
পুরাপুরি দেখা যায়। এটাকে বলে ফুল মুন।
বুঝতেই পারছেন যে নিউ মুনে চাঁদ সূর্যকে
ঢেকে দিচ্ছে। এই নিউ মুনের কাছাকাছি
সময়ে হয় অমাবশ্যা (১/২ দিন আগে পরে)।
আর ফুল মুনে পৃথিবী মাঝে অর্থাৎ
পৃথিবীর ছায়ায় চাঁদ চলে আসছে। সুতরাং
ফুল মুনই হলো পূর্নিমা।
যে নিউ মুনে সূর্য পুরোপুরি ঢেকে যাবে।
সেটাই সূর্যগ্রহন।
.
আর যে ফুল মুনে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর
ছায়ায় আসবে, সেটাই চন্দ্রগ্রহন।
এখন আসি চন্দ্রগ্রহনে। একমাত্র ফুল মুন
কিংবা পূর্ন চাদেই চন্দ্রগ্রহন হয়। সে
হিসেবে প্রতি মাসেই একটা করে
চন্দ্রগ্রহন পাওয়ার কথা, তাই না? আসলে
তা হয় না। চন্দ্রগ্রহন একমাত্র সেই পূর্ন
চাদেই হবে যখন চাদের কক্ষপথ পৃথিবীর
ছায়ায় পুরা ঢাকা পড়বে। এটা সবস্ময়ে হয়
না। এটা মোটামুটি ৬ মাসে হয় কিংবা
সূর্যগ্রহনের ২ সপ্তাহ পরে হয় বলে জানি।
বাকি টাইমগুলা হলো পূর্নিমার রাত।
আর সূর্যগ্রহন কবে হয়? হিসাব বলে
সূর্যগ্রহনও হওয়া উচিত প্রতি মাসে একটা
তাই না? আসলে এখানেও সেটা হয় না। এর
কারণ চাদের অরবিট পৃথিবীর অরবিটের
চেয়ে ৫ ডিগ্রী বেশি সরানো (সূর্যের
সাপেক্ষে)। এই কারনে অরবিটগুলা বছরে
মাত্র দুই থেকে পাচবার ক্রশ করে। ফলে
মাত্র দুই থেকে পাচবারই সূর্যগ্রহন দেখি
আমরা।
.
গর্ভবতী মহিলাদের উপর চন্দ্র/সূর্য
গ্রহণের প্রভাব
.
কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সূর্য গ্রহন ও চন্দ্র
গ্রহনের কোন প্রভাব গর্ভবতী মা, বা তার
গর্ভস্থ ভ্রুনের উপর পড়ে না।
গর্ভবতী মা কোন কিছু কাটলে, ছিঁড়লে
বাচ্চা ঠোঁট কাটা জন্মাবে, কোন কিছু
ভাঙলে, বাঁকা করলে সন্তান বিকলাঙ্গ
হয়ে জন্ম নেবে – এধরনের যত কথা
প্রচলিত আছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও
মিথ্যা, যার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর কোন
সম্পর্ক নেই। চন্দ্র, সূর্য বা অন্য কোন সৃষ্ট
বস্তু অদৃশ্য ভাবে কারও উপকার বা ক্ষতি
করার ক্ষমতা রাখে এধরনের বিশ্বাস
রাখা তাওহীদের পরিপন্থী।
.
যে আল্লাহ তা’য়ালা ও শেষ দিবসে
বিশ্বাস রাখে তার মনে রাখা উচিত যে,
আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে চন্দ্র,
সূর্যের গ্রহণও একেকটি নিদর্শন। কেউ
যদি চন্দ্র বা সূর্য গ্রহন দেখে, তার উচিত
হবে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী
কাজ করা ও বেশী বেশী করে সে সময়
আল্লাহকে স্মরণ করা।
.
রাসুল (সাঃ) বলেছেন
•► “চন্দ্র এবং সূর্য এ দুটি আল্লাহর
নিদর্শনের অন্যতম। কারও জন্ম বা মৃত্যুর
কারণে এদের গ্রহন হয় না। তাই তোমরা
যখন প্রথম গ্রহণ দেখতে পাও, তখন
আল্লাহকে স্মরণ কর।” [বুখারী ৪৮১৮; ইফা]
অন্য বর্ণনায় রাসুল (সাঃ) বলেছেন
.
•► “চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ কারও জন্ম বা মৃত্যুর
কারণে লাগেনা বরং এদুটো আল্লাহর
নিদর্শন, যা দ্বারা আল্লাহ তাঁর
বান্দাকে সতর্ক করেন। অতএব তোমরা
যখন গ্রহণ লাগতে দেখ, আল্লাহর
জিকিরে মশগুল হও যতক্ষণ তা আলোকিত
না হয়ে যায়।” [সহীহ মুসলিম ১৯৭২; ইফা]
.
আমাদের উচিত যা কিছু কুরআন ও রাসুল
(সাঃ) এর সহীহ হাদিসে রয়েছে সে
সম্পর্কে জানা ও সে অনুযায়ী আমল করা।
আল্লাহ যেন আমাদেরকে সঠিক পথ
প্রদর্শন করেন এবং আমাদেরকে রাসুল
(সাঃ) এর দেওয়া শিক্ষাকে দৃঢ় ভাবে
আঁকড়ে থাকতে সাহায্য করেন। আমীন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top