বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

উটের মূত্রপান কার জন্য বৈধ?

কোন মন্তব্য নেই:

উটের মূত্রপান কার জন্য বৈধ?

(অনেক আগের একটি লেখা। প্রথম প্রকাশ ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০২ | সামুতেও এখনও আছে লেখাটি। সাম্প্রতিক সময়ে নাস্তিক নামক কতিপয় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর আস্ফালন ও সাধারণ মুসলিদের কেউ কেউ তা দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা দেখে লেখাটি আবারও রিপোষ্ট করলাম। ইসলাম ও নাস্তিকতা বিষয়ক আমার এমন আরো লেখা পর্যায়ক্রমে পোষ্ট করা হবে ইনশাআল্লাহ।)

আজকের মূল আলোচনায় যাবার আগে খাদ্য এবং পানীয়ের ব্যাপারে মুসলিমদের জন্য ইসলামের বিধান সম্পর্কে কয়েকটি উদ্ধৃত দেয়া আবশ্য মনে করছি। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ أُحِلَّتْ لَكُمْ بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ إِلا مَا يُتْلَى عَلَيْكُمْ غَيْرَ مُحِلِّي الصَّيْدِ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيدُ (1)
অর্থ: “হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর। তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে -সেগুলো ব্যতীত যা হারাম বলে তোমাদের নিকট বর্ণনা করা হচ্ছে তা ছাড়া। তবে ইহরাম অবস্থায় শিকারকে হালাল করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ বিধান দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন।" (সূরা মায়েদা, আয়াত ১) আরো ইরশাদ হয়েছে,
كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلا تَطْغَوْا فِيهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِي وَمَنْ يَحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِي فَقَدْ هَوَى (৮১)
অর্থ: ‍"আমি তোমাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি তা থেকে ভালগুলো খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না। করলে তোমাদের উপর আমার গযব পতিত হবে। আর যার উপর আমার গযব পতিত হয় সে অবশ্যই ধ্বংস হয়।" (সূরা ত্বহা, আয়াত ৮১)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হচ্ছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ (172) إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلا عَادٍ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ (173)
অর্থ: "হে মুমিনগণ, আহার কর আমি তোমাদেরকে যে হালাল পবিত্র রিযক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত কর। নিশ্চয় তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশ্ত এবং যা গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা হয়েছে। সুতরাং যে বাধ্য হবে, অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, তাহলে তার কোন পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা বাকারা, আয়াত ১৭২-১৭৩)
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلامِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ دِينِكُمْ فَلا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلامَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِإِثْمٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ (3)
অর্থ: "তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত এবং যা আল্লাহ ভিন্ন কারো নামে যবেহ করা হয়েছে; গলা চিপে মারা জন্তু, প্রহারে মরা জন্তু, উঁচু থেকে পড়ে মরা জন্তু অন্য প্রাণীর শিঙের আঘাতে মরা জন্তু এবং যে জন্তু, হিংস্র প্রাণী খেয়েছে- তবে যা তোমরা যবেহ করে নিয়েছ তা ছাড়া, আর যা মূর্তি পূঁজার বেদিতে বলি দেয়া হয়েছে এবং জুয়ার তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়, এগুলো গুনাহ। যারা কুফরী করেছে, আজ তারা তোমাদের দীনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। তবে যে তীব্র ক্ষুধায় বাধ্য হবে, কোন পাপের প্রতি ঝুঁকে নয় (তাকে ক্ষমা করা হবে), নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ وَمَا عَلَّمْتُمْ مِنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِينَ تُعَلِّمُونَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللَّهُ فَكُلُوا مِمَّا أَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ (4)
অর্থ: "তারা তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী বৈধ করা হয়েছে? বল, ‘তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সব ভাল বস্তু এবং শিকারী পশু-পাখী, যাদেরকে তোমরা শিকার প্রশিক্ষণ দিয়েছ; সেগুলোকে তোমরা শেখাও, যা আল্লাহ তোমাদেরকে শিখিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তা থেকে খাও, যা তোমাদের জন্য ধরে এনেছে এবং তাতে তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ কর আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।” (সূরা মায়েদা ৩-৪)

আরো ইরশাদ হয়েছে,
) قُلْ لا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ (১৪৫)
অর্থ: "হে নবী আপনি বলে দিন, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর আহার্যের মধ্যে মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশ্ত ছাড়া আর কোনো বস্তু হারাম পাইনি। এগুলো অপবিত্র ও হারাম। আর যেই প্রাণী আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করা হয়েছে তাও হারাম। তবে অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে একান্ত নিরুপায় হিসেবে কিছু গ্রহণ করে, তাহলে নিশ্চয় তোমার রব (তার ব্যাপারে) ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আনআম, আয়াত ১৪৫) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: "হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" (সূরা মায়েদা, আয়াত ৯০)

উপরোক্ত আয়াত এবং আরো কিছু আয়াত ও হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, মুসলিমদের জন্য খাদ্য এবং পানীয়ের মধ্যে হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তু সমূহ হচ্ছে, নাপাক ও অপবিত্র বস্তু, যা আল্লাহ ভিন্ন কারো নামে যবেহ করা হয়েছে; গলা চিপে মারা জন্তু, প্রহারে মরা জন্তু, উঁচু থেকে পড়ে মরা জন্তু, অন্য প্রাণীর শিঙের আঘাতে মরা জন্তু এবং যে জন্তু, হিংস্র প্রাণী খেয়েছে এমন জন্তু, যা মূর্তি পূঁজার বেদিতে বলি দেয়া হয়েছে, যা জুয়ার তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়, মদ, শূকর, প্রবাহিত রক্ত, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বস্তু ইত্যাদি। এছাড়া হালাল যে কোনো বস্তু, খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে মুসলিমদের জন্য কোনো বাধা নেই। তবে বিপদে পরলে এবং একেবারেই নিরুপায় হয়ে গেলে উপরোক্ত হারাম বস্তুসমূও আংশিক কেবলমাত্র আপরিহার্য্য ক্ষেত্রে ব্যবহারে অনুমতি দেয়া হয়েছে। 'নির্দেশ' নয়।

এবার আশা যাক বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বিষয়ের অবতারণা প্রসঙ্গে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইসলাম, অন্যান্য মতবাদ এবং নাস্তিকতার উপর
দুই কেজি মুরগীর কতটুকু খাবেন? (ইসলাম, অন্যান্য ধর্ম ও নাস্তিকতার একটি সরল অংক)
শীর্ষক একটি লেখা দিয়েছিলাম। লেখাটিতে এ পর্যন্ত অনেক কমেন্ট এসেছে। আমার এই লেখায় যে অনেকে ক্ষুব্ধ হবে এটি আমার ধারণাতেও ছিলো। এটাই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু সেই পোষ্টে কয়েকজন সম্মানিত ব্লগার যে এমন অজ্ঞতা প্রসূত মন্তব্যের আশ্রয় নেবে, তা আমার ধারণাতেও ছিলো না। আমার সেই পোষ্টে বলা হয়েছিল যে, ইসলাম ছাড়া অন্যান্য মতবাদ মানুষকে অনেক অন্যায় স্বাধীনতা ও বল্গাহীন স্বেচ্ছাচারের সুযোগ দিয়েছে। ইসলাম যা দেয় নি। একইভাবে ইসলাম তার অনুসারীদের জন্য জীবনের প্রতিটি প্রান্তে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছে। একজন প্রকৃত মুসলিমের জন্য এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
কিন্তু অন্যান্য মতবাদ বিশেষত: নাস্তিকদের যেহেতু কোনো বন্ধন নেই, কোনো জবাব দিহিতা নেই, কোনো বিশ্বাস নেই তাই তাদের জন্য এগুলো উন্মুক্ত। কেউ চাইলে মদও খেতে পারে, শূকরের মাংসও ভক্ষণ করতে পারে, গো-মূত্র, গোবর এমনকি ইদুরের বর্জ্যও খেতেও তাদের জন্য নিষেধ নেই।

ব্যাস, আর যায় কোথায়। এবার শুরু হলো ইসলামের উপর রাগান্বিত ভাইদের আক্রমণ। এটা যদি বাস্তবিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে হতো তাহলে না হয় মানা যেতো, কিন্তু না। একবারে জালিয়াতির মাধ্যমে তারা এবার ইসলামের উপর নিজেদের ঝাল মেটাবার ফন্দি চূড়ান্ত করলো। এই ব্লগে কয়েকজন একটি পয়েন্টে নিন্মের হাদীসটির আংশিক উদ্ধৃত করে বললো, 'ইসলাম এবং মুহাম্মাদ সা. তার অনুসারীদেরকে উটের মূত্র খেতে বলেছেন, এটি সুখাদ্য!' উদ্ধৃতি হিসেবে বোখারী শরীফের হাদীসটির কথা বললো।

তারা যে কিভাবে হাদীস বিকৃত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তার সামান্য একটি নমুনা এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আপনারা দেখতে পাবেন হাদীসে কাদের জন্য, কি কারণে, কি বলা হয়েছে, আর তারা এর মাধ্যমে কাকে কি বুঝিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কি ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে!

এজন্য প্রথমেই মূল হাদীস এবং তার অনুবাদ উল্লেখ করলাম। উরাইনা নামক মুনাফিক সম্প্রদায় সম্পর্কি মূল হাদীস

উরাইনা নামক মুনাফিক সম্প্রদায় সম্পর্কি মূল হাদীস এর বাংলা অনুবাদের স্ক্রিণ শট

উপরোক্ত হাদীসের সরল বাংলা অর্থ:
"হযরত কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, আনাস রা. তাদেরকে বলেছেন উকল এবং উরাইনা নামক গোত্রের কতিপয় লোক মদীনাতে এসে রাসূলের কাছে কালিমা পড়ে মুসলিম হবার ভাব ধরলো। এরপর তার প্রিয়নবী সা. কে বললো, আমরা কৃষক নই, আমরা দুগ্ধপান করে বেঁচে থাকি। তারা মদীনার আবহওয়া নিজেদের অনুকূল মনে করলো না। তাই রাসূলুল্লাহ সা. একজন রাখালসহ বাইতুল মালের কতগুলো উট নিয়ে মদীনার বাইরে যেতে এবং সেগুলোর দুধ ও মুত্র পান নির্দেশ দিলেন। তারা যাত্রা করে হাররা নামক স্থানে গিয়ে ইসলাম ত্যাগ করার ঘোষণা দিলো এবং মুরতাদ হয়ে গেলো। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ সা. এর দেয়া রাখালকে হত্যা করে উট গুলো ছিনতাই করে নিয়ে পলায়ন করলো।

মহানবী সা. এর কাছে এই খবর পৌঁছলে তিনি সাথে সাথে তাদের পিছু ধাওয়া করার জন্য সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিলেন। এরপর তাদেরকে ধরে আনা হলে তিনি তাদের ব্যাপারে কঠিন শাস্তির নির্দেশ দিলেন। লোহার শলাকা দিয়ে তাদের চোখ তুলে ফেলা হলো। তাদের হাত-পা কেটে মরুভূমিতে ফেলে দেয়া হলো। সেখানে তারা মারা গেলো। হযরত কাতাদা রা. বলেন যে, আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে এই ঘটনার পর মহানবী সা. প্রায়ই লোকজনকে সাদাকা দেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ কর্তন করা (মুসলা) হতে বিরত রাখতেন।" (সহীহ বুখারী, যুদ্ধ-বিগ্রহ অধ্যায়, হাদীস নং ৪১৯২)

বুখারী শরীফে বর্ণিত এই 'উকল' বা 'উরাইনা' নামক গোত্রটি আসলে ছিলো একটি মুনাফিক, শয়তান ও ফিৎনাবাজ সম্প্রদায়। যারা প্রিয়নবী সা. এর কাছে এসে মুখে ঈমানের কথা বলে রাসূল সা. কে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলো। তাদের পরিকল্পনা ছিলো ফিৎনা ছড়ানো। কিন্তু আল্লাহ তার প্রিয় হাবীবকে এটি জানিয়ে দেন। উপরন্তু মদীনা থেকে তাদেরকে বের করার জন্য তাদের মাঝে 'পেট ফুলে যাওয়া' ও আনুসাঙ্গিক কিছু রোগের সঞ্চার করেন। ফলে তারা অল্পদিনের মধ্যেই মদীনা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য রাসূলের কাছে অনুমতি চায়। রাসূল সা. ও তাদেরকে অনুমতি দেন এবং মদীনার বাইরে তাদেরকে চলে যেতে বলেন। তারা নিজেদের অসুস্থ্যতার কথা বললে তিনি বাইতুল মালের কিছু উট দিয়ে তার দুধ ও মুত্র পান করতে বলেন।

এটি আসলে ছিলো তাদের প্রতি অবমাননা। কারণ সম্ভবত: রাসূল সা. এই মুনাফিকদের অন্তরের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ থেকে আগেই ইশারা পেয়ে ছিলেন। রাসূলের কাছে মদীনার সকল মুনাফিকের নামও জানা ছিলো। কিন্তু তিনি হিকমত হিসেবে তা জীবদ্দশাতেই প্রকাশ করেন নি। তো যাই হোক এই সম্প্রদায়ের স্বরূপ একটু পরেই প্রকাশিত হয়। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, মুরতাদ হয়ে যায়, রাসূলের দেয়া রাখালকে হত্যা করে এবং বাইতুল মালের সম্পদ উট গুলোকে ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাই রাসূল তাদেরকে ধরে এনে কঠিন শাস্তি দেন। হত্যা, ডাকাতি, বিদ্রোহ ও মুরতাদ হওয়ার শাস্তি সবার কাছেই এমন কঠোর।

এখন এই বিস্তৃত ঘটনার মাঝখান থেকে নাস্তিকরা মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য শুধু বলে যে 'মুহাম্মাদ সা. তার অনুসারীদেরকে উটের মুত্র খেতে নির্দেশ দিয়েছেন' অথচ উরাইনার লোক গুলো আসলে মুসলিমই ছিলো না। তারা ছিলো বাহ্যিকভাবে মুনাফিক আসলে কাফির। তাই তাদেরকে তুচ্ছতার সাথে উটের মূত্র খাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।
কিন্তু নাস্তিকদের ভাবখানা এমন যে সব মুসলমানকে রাসূল সা. এটি খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন! সত্যের কত বড় অপলাপ! এবার আপনারাই চিন্তা করুন। দেখুন কিভাবে তারা মিথ্যা ও বিকৃতির আশ্রয় নেয়। তারা হাদীসের মূল অংশও গোপন করেছে। চেপে গেছে। কারণ তাহলে তাদের গোমর ফাঁস হয়ে যেতো।

শেষ কথা হলো, 'মেডিসিন হিসেবে' উটের মুত্র ব্যবহার ও 'থেরাপি' নেয়ার জন্য যদি কেউ উটের মূত্রে আরোগ্য পান এবং বিজ্ঞান তাকে সার্টিফাইড করে তাহলে তা অপারগতা হিসেবে ক্ষমাযোগ্য হতে পারে, যা উপরে প্রথমেই বলা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এটিকে খুবই সুখকর ও স্বাভাবিক বৈধ কিংবা এটা খেতে হবে এমন কথা যদি কেউ হাদীস দ্বারা সার্টিফাইড করতে চায় তাহলে বুঝতে হবে সে নি:সন্দেহে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

আমার হিসেবে আসলে নেটে ও ব্লগে কোনো নাস্তিক নেই। কিভাবে? তা নিয়ে পরে একটি পোষ্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে। তারপরও যদি কেউ নিজেকে স্বার্থের কারণে বা সাময়িক সুবিধা পাওয়ার জন্য নাস্তিক হিসেবে প্রচার করতে চান তবে তাদরে প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, অহেতুক যে ইসলামের উপর আক্রমণের মানসিকতা পরিহার করুন। আর আপনারা যদি উটের মূত্র, গাভীর চনা, গোবর কিংবা ইদূরের বিষ্ঠা খেতে চান, খেতে পারেন। আমরা নিজেদের জন্য এগুলো হারাম মনে করলেও, যারা আল্লাহকেই বিশ্বাস করেন না কিংবা ভিন্নমতাবলম্বী তারা এগুলোকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

আল্লাহ সকলকে হেদায়াত দিন, আমীন।

- See more at: http://lighthouse24.org/blog/post/viewPost/?postid=671#sthash.LgLewvVr.dpuf

মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক খান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top