বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬

বরতমান মুসলিম শাসকদেরকে মুরতাদ ফতোয়া দেয়ার ব্যাপারে সংশয়ের জবাব-২

কোন মন্তব্য নেই:

Part:3
.
##তৃতীয় সংশয়ঃ
তারা তো সালাত কায়েম করে সিয়াম পালন করে।
তারা বলেঃ এসব সৈন্য এবং সরকারী
কর্মচারীদেরকে তোমরা কিভাবে
কাফির বল? অথচ তাদের কেউ কেউ
সালাত কায়েম করে, সিয়াম পালন
করে এবং হজ্জ আদায় করে। আর তারা
প্রমাণ সরূপ সাহিহ মুসলিমে বর্ণিত
হাদিস পেশ করে। যাতে জালিম
শাসকের আলোচনা করা হয়েছে।
কেননা সাহাবায়ে কিরাম
বলেছিলেনঃ
‘আমরা কি তাদের সাথে যুদ্ধ করবনা?’
রাসুল সাঃ বললেন, ‘না! যতক্ষণ সালাত
আদায় করে।’[সাহিহ মুসলিমঃ কিতাবুল
ইমারাহ- ৬২(১৮৫৪)]
.
.
আমাদের জবাবঃ পাঠক পূর্বে
জেনেছেন আল্লাহ সুবঃ যে দ্বীন
দিয়ে সমস্ত নাবী রাসুলকে প্রেরণ
করেছেন তা হল তাওহীদ, আর এ
তাওহীদ সকল আমল এবং ইবাদাত কবুল
হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত। সুতরাং এই
শর্ত ব্যতীত আমল কিছুতেই গ্রহণযোগ্য
হবে না ।সাথে সাথে আর একটি শর্ত
আবশ্যক তা হল রাসুল সাঃ এর অনুসরণ।
সুতরাং উভয় শর্ত পাওয়া না গেলে
কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না।
তাই আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন
কাফিরদের অনেক আমলের কথা
উল্লেখ করে বলেছেন, এগুলো তিনি
কবুল করবেন না। বরং সেগুলোকে
বিক্ষিপ্ত ধুলিকনায় পরিণত করবেন।
কেননা এসব আমলে তাওহীদ ও রাসুল
সাঃ অনুসরণ বিদ্যমান ছিল না।
আল্লাহ সুবঃ বলেনঃ ‘যারা কাফির
তাদের আমল মরুভূমির মরীচিকা
সদৃশ।’[সুরা নুর- ৩৯]
.
এমনিভাবে হাদিসে কুদসিতে আছে,
মুহাম্মাদ সাঃ বলেনঃ আল্লাহ সুবঃ
বলেছেনঃ ‘আমি সকল শরীকদের
থেকে এবং তাদের শিরক থেকে
অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি কোন আমলে
আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে,
আমি তাকে ও তার শিরককে পরিত্যাগ
করি।’ [সাহিহ মুসলিমঃ কিতাবুল যুহুদ
ওয়ার রাকায়েক- ৪৬(২৯৮৫)]
.
আর উলামায়ে কিরাম এই হাদিসটিকে
ছোট শিরকের ব্যাপারে প্রমাণ
হিসেবে পেশ করে। সুতরাং যদি ছোট
শিরকের ব্যাপারে এত বড় ধমকি আসে
তাহলে বড় শিরকের পরিনাম কত
ভয়াবহ হবে।
.
আর নিঃসন্দেহে সালাত, সিয়াম ও
হজ্জ সাহিহ হওয়া এবং আল্লাহর নিকট
কবুল হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম শর্ত
তাওহীদ। ইসলামে প্রবেশের একমাত্র
মাধ্যম হল তাওহীদের কালিমা ‘লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তাওহীদের
স্বীকারোক্তি ব্যতীত অন্য কোন
ইবাদাত যথাঃ সালাত, সিয়াম
ইত্যাদি দ্বারা ইসলামে প্রবেশ সম্ভব
না। কিন্তু আলিমগণ সালাত
আদায়কারীকে মুসলমান হিসেবে গণ্য
করে থাকেন এই জন্য যে, সালাত
তাওহীদেরই অন্তর্ভুক্ত একটি ইবাদাত।
স্বাভাবিকভাবে তাওহিদে
বিশ্বাসীরাই সালাত আদায় করে
থাকেন। কেননা তাওহীদই সালাত
সাহিহ ও কবুল হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত।
যে ব্যক্তি তাওহীদের মৌলিক দুটি
বিষয়ঃ ১। ত্বাগুতকে অস্বীকার, ২।
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে বাস্তবায়ন
করা ব্যতীত তার কোন আমল ও ইবাদাত
গ্রহণযোগ্য হবে না।
যে ব্যক্তি ত্বাগুতের আনুগত্য পরিত্যাগ
করবে না এবং ত্বাগুতকে সাহায্য করা
থেকে বিরত থাকবে না, বরং প্রকাশ্য
শিরকে লিপ্ত থাকবে আবার সালাতও
আদায় করবে, তাহলে তার সালাত
গ্রহণযোগ্য হবে না এবং তাকে
মুসলমান বলা যাবে না। আর এ বিষয়ে
সুস্পষ্ট প্রমাণ হল মহান আল্লাহর
বানীঃ তুমি যদি শিরক করো, তবে
তোমার সমস্ত কর্ম নিষ্ফল হবে এবং
তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
[সুরা যুমার- ৬৫]’
.
এমনিভাবে আল্লাহ সুবঃ অপর আয়াতে বলেনঃ তারা যদি শিরক করত তাহলে তাদের সমস্ত কর্ম
নিষ্ফল হয়ে যেত।[সুরা আন’আম- ৮৮]’
.
তাই আল্লাহ সুবঃ এর সাথে শিরক
পরিত্যাগ করা অর্থাৎ ত্বাগুতের
আনুগত্য করা থেকে বিরত থাকা এবং
আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে
তাদেরকে সহযোগিতা না করা, আমল
কবুল হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম শর্ত। আর
এটাই আল্লাহ সুবঃ সর্বপ্রথম তাঁর
বান্দাদের প্রতি ফরজ করেছেন। ইহা
ব্যতীত সকল আমল অনর্থক।
অথচ এসব সৈন্যরা ত্বাগুতকে
অস্বীকার করার পরিবর্তে তাদেরকে
সাহায্য করে এবং তাদের প্রতি
আনুগত্য প্রকাশ করে। তাদের কুফরি
আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের
পৃষ্ঠপোষকতা করে। সুতরাং তাদের
সালাত, সিয়াম ও অন্য সকল নেক আমল
গ্রহণযোগ্য হবে না। যতক্ষণ তারা
এগুলো কবুল হওয়ার যেসব শর্ত আছে তা
পূর্ণ না করবে। আপনি যদি দেখেন যে,
কেউ অজু ছাড়া সালাত আদায় করছে
তাহলে তার সালাত আপনার দৃষ্টিতে
কি গ্রহণীয় হবে? না তার মুখে ছুড়ে
মারা হবে? এব্যাপারে হয়ত কোন
ব্যক্তিই দ্বিমত পোষণ করবে না যে,
তার সালাত কবুল হবে না।
.
তাহলে হে আল্লাহর বান্দা! আপনি
একটু চিন্তা করুন! সালাত সাহিহ
হওয়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত। তাই
পবিত্রতা ছেড়ে দেয়ার কারণে তার
সালাত বাতিল হচ্ছে। তাহলে আমল
কবুলের প্রধান শর্ত তাওহীদ ও
ত্বাগুতের অস্বীকার ছেড়ে দেয়ার
দ্বারা তার সালাত কিভাবে কবুল হতে
পারে? আর তাই আল্লাহ সুবঃ আদম
সন্তানদের উপর সালাত ও তার শর্ত
সমূহ শিক্ষা করার পূর্বে তাওহীদ
শিক্ষা করা এবং তদানুযায়ি আমল
করা ফরজ করেছেন। সাহাবায়ে
কিরামের উপর মক্কায় সর্বপ্রথম
তাওহীদ ফরজ হয়েছিলো। সবার জানা
আছে সাহাবায়ে কিরাম মক্কায়
নির্যাতিত হয়েছেন, বিপদগ্রস্ত
হয়েছেন, কষ্ট সহ্য করেছেন, বাধ্য হয়ে
শেষে হিজরত করেছেন, শুধুমাত্র
তাওহীদের জন্য। সালাত, যাকাত বা
অন্য কোন ফরজ ইবাদাতের জন্য তাদের
সম্প্রদায় তাদেরকে নির্যাতন করেনি।
বরং সেগুলো তখন ফরজই হয়নি।
তাদেরকে সর্বপ্রথম তাওহীদের দাবী
পূর্ণ করতে বলা হয়েছে। কেননা
অন্যান্য ইবাদাত তাওহীদ ছাড়া
গ্রহণযোগ্যই হবে না।
.
তাই রাসুল সাঃ ও সাহাবায়ে কিরাম
সর্বপ্রথম মানুষদেরকে তাওহীদকে
গ্রহণ ও ত্বাগুতকে বর্জনের দিকেই
আহ্বান করেছেন। আল্লাহর শপথ! তারা
তাওহীদের দিকে আহবানের পূর্বে
মানুষদেরকে সালাত, সিয়াম বা
অন্যান্য বিধানের দিকে আহ্বান
করেননি।
আপনি মু’য়াজ বিন জাবাল রাঃ
সম্পর্কে সাহিহ বুখারি ও মুসলিমের
বর্ণিত হাদিসটি পাঠ করুন। যে
হাদিসে রাসুল সাঃ তাঁকে ইয়ামানে
পাঠানোর সময় দাওয়াতের নিয়ম ও
পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন।
“তুমি আহলে কিতাবের একটি
সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ।সর্বপ্রথম তুমি
তাদেরকে আল্লাহর এককত্বের দিকে
আহবান করবে। যদি তারা আল্লাহর
এককত্বকে মেনে নেয় তাহলে তুমি
তাদেরকে জানাবে যে, আল্লাহ (সুবঃ)
তাদের উপর দৈনিক পাচবার সালাত
ফরয করেছেন। তারা যদি সালাত
আদায় করে তখন তুমি তাদেরকে
জানাবে আল্লাহ (সুবঃ) তাদের
মালের উপর যাকাত ফরয করেছেন যা
তাদের ধনীদের থেকে নিয়ে
গরীবদেরকে দেয়া হবে”। (সহীহ বুখারীঃ৭৩৭২)
.
সুতরাং আবশ্যক হল মানুষদেরকে
সর্বপ্রথম তাওহীদের মাধ্যমে
ইসলামের দিকে আহবান করা।
সালাতের মাধ্যমে নয়।তারা যদি
তাওহীদকে স্বীকার করে তাহলে
সালাত, যাকাত ও অন্যান্য বিধানের
দিকে আহবান করা হবে। যে
তাওহীদকে গ্রহণ করল তার থেকে
সালাত ও অন্যান্য ইবাদত গ্রহণ করা
হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাওহীদ
ব্যতিরেকে ইসলামের অন্যান্য বিধান
আকড়ে ধরল তার কোন আমল গ্রহণ করা
হবে না।
কেননা আল্লাহ (সুবঃ) শুধুমাত্র
তাওহীদের এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে,
তা এমন হাতল যা ছিন্ন হবার নয়।
আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ ‘দ্বীন গ্রহণের
ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয়
হিদায়েত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা
থেকে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতকে
অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি
ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত হাতল
আকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়।
[সূরা বাকারাঃ ২৫৬]
.
আর এ কারণেই অনেককে
বাহ্যিকভাবে অনেক ইবাদাত করতে
দেখা যায়,কিন্তু কিয়ামতের দ্বীন
তার ইবাদত তার মুখে ছুড়ে মারা হবে
আর তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
‘সেদিন অনেক চেহারা হবে অবনত।
কর্মক্লান্ত, পরিশ্রান্ত’। [সূরা
গাশিয়াঃ ২, ৩]
.
অতঃপর তার ঠিকানা হবে
জাহান্নামঃ ‘তারা প্রবেশ করবে
জ্বলন্ত আগুনে’।[সূরা গাশিয়াঃ ৪]
.
সকল ইবাদাত ও সৎ কাজ সব বিক্ষিপ্ত
ধুলিকণায় পরিনত হবে। কেননা সে
একনিষ্ট মুসলিম ছিল না।
জালিম শাসক সম্পর্কে হাদীসটির
ব্যাখ্যাঃ রাসূল (সাঃ) জালিম
শাসকদের সাথে যুদ্ধ করতে নিষেধ
করেছেন যতক্ষণ তারা আমাদের মাঝে
সালাত প্রতিষ্টা করে। উক্ত হাদীসে
তাওহীদ ব্যাতিরেকে শুধু সালাত
উদ্দেশ্য নয়। বরং এখানে ইঙ্গিত হল
এখানে ইঙ্গিত হল সালাতের সাথে
সাথে তাওহীদকেও প্রতিষ্টা করতে
হবে। এর দলিল হল অন্যান্য হাদীস। যা
এই হাদীসের ব্যাখ্যাকারী যেগুলোতে
সালাত ও যাকাতের পূর্বে তাওহীদ
প্রতিষ্টা করার কথা বলা হয়েছে।
যেমন বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে
উল্লেখিত, একটি হাদীসে এসেছেঃ
‘আমাকে কিতালের(যুদ্ধের) আদেশ
দেওয়া হয়েছে যতক্ষণ না মানুষ
সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন
ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ)
আল্লাহর রাসূল। অতঃপর সালাত
কায়েম করে ও যাকাত দেয়। তারা
যখন এগুলো করবে তখন আমার থেকে
তাদের জ্ঞান ও মাল নিরাপদ থাকবে।
কিন্তু অন্য কোন হকের (কাউকে হত্যা
করলে তাকেও হত্যা করা হবে,
বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও জিনা করলে
রযম করা হবে) কারণে। এবং তাদের
(অন্তরের) হিসাব হবে আল্লাহর নিকট।
[সহীহুল বুখারীঃ২৫;সহীহ মুসলিমঃ
কিতাবুল ঈমানঃ ৩৬-(২২)]
.
লক্ষ্য করুন! উক্ত হাদীসে কিতালের
সর্বপ্রথম মাপকাঠি বানানো হয়েছে
তাওহীদকে।আর অন্য হাদীসে যে
সালাতের কথা বলা হয়েছে তার
উদ্দেশ্য হল সালাত হতে হবে
তাওহীদের সাথে।কেননা তাওহীদ
ব্যতীত সালাতের কোন মূল্য নেই।
যেমন অপর আয়াতে আল্লাহ (সুবঃ)
বলেনঃ অবশ্য যদি তারা তাওবা করে
ও সালাত কায়েম করে এবং যাকাত
আদায় করে তাহলে তোমরা তাদের পথ
ছেড়ে দেবে।[সূরা তওবাঃ ৫]।
.
অর্থাৎ যদি তারা শিরক ও কুফর থেকে
তওবা করে।এবং গাইরুল্লাহর ইবাদত
ছেড়ে দেয় ও তাওহীদ গ্রহণ করে।
অতঃপর সালাত আদায় করে এবং
যাকাত দেয় তাহলে তাদের জান ও
মাল রক্ষা পাবে। কিন্তু কুফর ও শিরক
থেকে তওবা না করে বা তাওহীদে
বিশ্বাসী না হয়ে সালাত কায়েম
করলে তা মুসল্লির কোন কাজেই
আসবে না। রাসূল (সাঃ) এর জামানায়
অনেক ঈমানদার শুধু একটি কথার
কারণে কাফের ও মুরতাদ হয়ে গেছে।
তার একটি দৃষ্টান্ত পূর্বে উল্লেখ করা
হয়েছে। যেসব ব্যাক্তি রাসূল (সাঃ)
সাথে ‘গাযওয়ায়ে তাবুক’ এর মধ্যে
অংশগ্রহণ করেছিল। তারা সালাত
আদায় করত তথাপি তাওহীদ
বিনষ্টকারী বিষয় সমূহ হতে একটি
বিষয় পাওয়া যাওয়ার কারণে তারা
কাফের হয়ে গিয়েছে। আর তা হলো
কুরআন পাঠকারীদের ব্যাপারে
ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। আল্লাহ (সুবঃ)
তাদের সম্পর্কে বলেনঃ ‘অজুহাত
দেখাবে না তোমরা ঈমান আনার পর
কুফরী করেছ’।[সূরা তওবাঃ৬৬]
.
এজন্যই ফিকহের কিতাবে(মুরতাদের
বিধান)সম্পৃক্ত একটি অধ্যায় থাকে।
ফিকহের কিতাবে মুরতাদের সংজ্ঞা
বলা হয়েছেঃ ‘মুরতাদ হলো ঐ ব্যক্তি
যে ইসলাম গ্রহণের পর কোন কথা, কাজ
বা বিশ্বাসের কারণে কাফের হয়ে
যায়। এ কারণেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া
(রহঃ) ইয়াসিক (তাতারী কর্তৃক প্রণিত
একটি সংবিধান) এর অনুসারীদের
কাফের বলে ফতওয়া দিয়েছেন। [আল মুজাল্লাদ]
.
এসব বিধানদাতাদের সহযোগীরা
প্রকাশ্যে শিরকের প্রতি আনুগত্য
প্রকাশ করে। তাগুত ও বিধানদাতাদেরকে মুওয়াহিহদদের বিরুদ্ধে সাহায্য করে। আর এটা ইসলাম থেকে খারিজ হওয়ার অন্যতম কারণ।
সুতরাং প্রকাশ্যে সালাত আদায় কোন
কাজেই আসবে না এবং কোন উপকার
করবে না যতক্ষণ তাদের মাঝে এই
কারণ বিদ্যমান থাকে।
.
##চতুর্থ সংশয়ঃ
যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে তাকফীর করে সে কুফরী করে।
তারা বলেঃ ‘তাকফীর’ একটি
স্পর্শকাতর বিষয়, কেননা রাসূল(সাঃ)
বলেছেনঃ “যে কোন মুসলিমকে
“তাকফীর” করল সে কুফরী করল” বরং
তাদের মধ্যকার কিছু মুর্খ লোক বলে,
যে ব্যক্তি কাফের পিতা-মাতার
গর্ভে জন্ম নিয়েছে, তাকে ছাড়া অন্য
কাউকে তাকফীর করা বৈধ নয়।
আমাদের জবাবঃ সব ধরণের “তাকফীর”
ভয়ানক ও দোষনীয় নয়।তবে শরীয়
প্রমাণ ব্যতীত, শুধু মাত্র গোড়ামি ও কু-
প্রবৃত্তির অনুসরণ করে কোন মুসলিমকে
‘তাকফীর’ করা ভয়ানক বিষয়।
যেমনিভাবে সকল বিশ্বাস প্রশংসনীয়
নয়, তেমনি ভাবে সকল অবিশ্বাসও
দোষনীয় নয়।
যে বিষয়ে বিশ্বাস রাখা আবশ্যক তা
হলো “আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস” আর যে
বিষয়ে বিশ্বাস রাখা নিষিদ্ধ ও
শিরক তা হলো তাগুতের প্রতি
বিশ্বাস। তেমন ভাবে যে বিষয়ে
অবিশ্বাস রাখা আবশ্যক ও প্রশংসনীয়
তা হলো তাগুতের প্রতি অবিশ্বাস।আর
যে বিষয় অবিশ্বাস করা নিকৃষ্ট ও
নিন্দনীয় তা হল আল্লাহ তা’আলা ও
তার দ্বীন ও তার আয়াতসমূহের প্রতি
অবিশ্বাস।
.
সুতরাং যেমনি ভাবে কোন মুসলিমকে
শরীয় দলীল ব্যতীত ‘তাকফীর’ করা
ভয়ানক বিষয়, তেমনি ভাবে কোন
মুশরিক বা কাফেরকে মুসলিম বলে
ঘোষণা করা এবং তার সাথে
ভালোবাসা ও বন্ধুত্ত রাখাও ভয়ানক
বিষয় ও ফিতনার কারণ। যেমন আল্লাহ
(সুবঃ) বলেছেনঃ
“আর যারা কুফরী করে, তারা একে
অপরের বন্ধু। যদি তোমরা তা না কর,
(মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব ও কাফেরদের
সাথে শত্রুতা) তাহলে জমিনে ফিতনা
ও বড় ফ্যাসাদ হবে”।[সূরা আনফালঃ৭৩]
.
আর উপরোক্ত হাদীসটি যে শব্দে
উল্লেখ করা হয়েছে সে শব্দে রাসূল
(সাঃ) থেকে কোন হাদীস বর্ণিত নেই।
কেননা প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে কোন
মুসলিমকে কাফের বলবে সে কাফের
হয়ে যাবে,এমনটি নয়। বিশেষভাবে
যাকে তাকফীর করা হয়েছে সে যদি
এমন কাজ করে, যাকে আল্লাহ
তা’আলা ও তার রাসূল (সাঃ) কুফর বলে
সাব্যস্ত করছেন। আর যে বলে মুসলিম
কখনো কাফের হয় না তার একথা
কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
কেননা লোক দেখানো মুসলিমদের
সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
১। অর্থঃ“তোমরা ওযর পেশ করো না।
তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই
কুফরী করেছ”।[সূরা তওবাঃ৬৬]
.
২। অর্থঃ “নিশ্চয় যারা হিদায়াতের
পথ সুষ্পষ্ট হওয়ার পর তাদের
পৃষ্টপ্রদর্শনপূর্বক মুখ ফিরিয়ে নেয়
(মুরতাদ হয়ে যায়), শয়তান তাদের
কাজকে চমতকৃত করে দেখায় এবং
তাদেরকে মিথ্যা আশা দিয়ে থাকে”।
[সূরা মুহাম্মদঃ ২৫]

৩। অর্থঃ “হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে
যে ব্যক্তি তার দ্বীন থেকে ফিরে
যায় তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন
কওমকে আনবেন,যাদেরকে তিনি
ভালবাসবেন এবং তারা তাকে
ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের উপর
বিনম্র এবং কাফিরদের উপর কঠোর
হবে। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে
এবং কোন কটাক্ষকারীর কটাক্ষকে
ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ,
যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান
করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়,
সর্বজ্ঞ”।[সূরা মায়েদাঃ ৫৪]
.
এধরণের আরো অনেক আয়াত আছে।
যদি কোন মুসলমান কুফরীর কারণে
মুরতাদ না হয়, তাহলে ইসলামী
ফিকহের কিতাব সমূহে মুরতাদের
বিধান কেন বর্ণণা করা হয়েছে?
হাদীসে আছেঃ “যে ধর্ম (ইসলাম)
পরিত্যাগ করে তাকে তোমরা হত্যা
কর”।[সহীহ বুখারীঃ ৩০১৭, ৬৯২২, ৭৩৬৮,
সুনানে আবু দাউদঃ ৪৩৫৩]
.
আর পূর্বের হাদীসের মূল শব্দ হলঃ “যে
ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইকে বলল হে
কাফের! তাহলে এটা দুইজনের
একজনের উপর বর্তাবে।যাকে বলা
হয়েছে সে যদি এমনটাই হয় তাহলে তো
হল, অন্যথায় এটা যে বলেছে তার
দিকেই ফিরে আসবে”।[সহীহ মুসলিম,
কিতাবুল ঈমানঃ ১১১-(৬০)]
.
সুতরাং রাসূল (সাঃ) এর বাণী অর্থাৎ
‘সে যদি তার কথা অনুযায়ী হয়’ প্রমাণ
বহন করে, যে মুসলিমের মাঝে কুফরী
প্রকাশ পায়, আর তার মধ্যে
তাকফীরকে নিষেধকারী অন্য কোন
জিনিস পাওয়া না যায়,তাহলে তাকে
“তাকফীর” করা বৈধ।
কোন ব্যক্তি বড় কুফর করলেই কাফের
হয়ে যায় না। বরং তার সাথে
শর্তযুক্তহলো তার মাঝে কুফর
প্রতিরোধকারী অন্য কোন কারণ
বিধ্যমান না থাকা। কিন্তু কোন
ব্যক্তি যদি কুফরী কাজ়ে লিপ্ত
থাকার কারণে তাকে তাকফীর করা
হয়। অতঃপর প্রকাশ পায় তার মাঝে
তাকফীর প্রতিহতকারী অপর কোন
কারণ বিদ্যমান ছিল। তাহলে এই কুফর
তাকফীরকারী ব্যক্তির দিকে ফিরে
আসবে না। কেননা এব্যাপারে সে
অজ্ঞ ছিল।
যেমনটি ঘটেছিল উমর (রাঃ) এর
ব্যাপারে কেননা তিনি হতেব
(রাযিঃ) এর ব্যাপারে রাসূল(সাঃ)কে
বলেছিলঃ
“হে রাসূল্লাহ আমাকে অনুমতি দিন
আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে
দেই।[সহীহ বুখারীঃ৪২৭৪]
.
রাসূল (সাঃ) বললেনঃ হাতেব আবু
বালতা (রাঃ) কাফের হয়নি। তিনি
উমর (রাঃ) কে একথা বলেননি যে তুমি
কাফের হয়ে গেছ, কেননা তুমি একজন
মুসলমানকে মুনাফিক বলেছ এবং
তাকে হত্যা করা বৈধ ভেবেছ। আর যে
মুসলিমকে তাকফীর করে তাহলে সেও
কাফের হয়ে যায়। যেমন তারা ধারণা
করে।
ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) তার কিতাব
যাদুল মা’আদ এর মধ্যে এই অর্থের
দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
.
সুতরাং বুঝা গেলো কোন মুসলিমকে
কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় বা গোড়ামি করে
তাকফীর করা নিন্দনীয়। আর
উলামায়ে কেরাম উল্লেখিত হাদীসে
বিভিন্ন ব্যাখ্যা করছেনঃ
১। কেউ যদি ইসলাম ধর্ম ও
তাওহীদেকে কুফর বলে, তাহলে সে
কাফের হয়ে যাবে।
.
২। কেউ যদি মুসলিমদের তাকফীর
করাকে সহজ, ও স্বাভাবিক ভাবে,
তাহলে সে এই হাদীসের উদ্দেশ্য হবে।
এ ধরণের আর অন্যান্য ব্যাখ্যা রয়েছে।
ইমাম নববী (রহঃ) “শরহে সহীহ মুসলিমে
এ ধরণের আরো কয়েকটি দিক উল্লেখ
করেছেন, উলামায়ে কেরাম এই
হাদীসের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করেননি।
বরং অন্য অর্থ গ্রহণ করেছেন।কেননা
এর বাহ্যিক অর্থ “ঈমান ও কুফর” এর
অধ্যায়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল
জামাআহের মূলনীতির বিপরীত।
কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না
তার সাথে শরীক করাকে এবং এ
ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন।আর যে
আল্লাহর সাথে শরীক করে সে তো
ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল”।[সূরা
নিসাঃ১১৬]
.
আর এটা স্পষ্ট যে কোন মুসলিমকে
কোন পার্থিব স্বার্থের কারণে অথবা
কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় গালি দেয়া এবং
কাফের বলা এমন শিরক নয় যা
মুসলিমকে ইসলাম থেকে খারেজ করে
দেয়। এ কারণেই উক্ত হাদীসকে অন্য
“নসের” সাথে মিলানো হয়েছে এবং
তার আলোকে এর ব্যাখ্যা করা
হয়েছে।
আর যদি বলা হয় এই হাদীস দ্বারা
উদ্দেশ্য হল ঐ ব্যক্তি যে মুসলিমদের
তাকফীর করে;তাদের সাথে ও তাদের
তাওহীদের সাথে শত্রুতাবশতঃ এবং
তারা তাগুতকে বর্জন করার কারণে।
আর এ কারণে তাদেরকে খাওয়ারেজ
বলে এবং তাদের শত্রুদেরকে সাহায্য
করে।
তাহলে এই হাদীসের অন্য অর্থ
নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।কেননা এটা
নিঃসন্দেহ কুফরী।
আর ঐ মূর্খ লোকের কথা ,যে বলেছিল
শুধুমাত্র কাফের পিতা-মাতার গর্ভে
জন্ম নিলেই তাকে কাফের বলা যাবে।
তার এই মত একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
আর তার কথা এটা প্রমাণ করে যে, সে
দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে একেবারেই
অজ্ঞ।কেননা এর অর্থ হয় মুসলিম
কখনো কাফের হয় না। আর এ ব্যাপারে
মুতাকাদ্দিমীনদের মধ্য থেকে কোন
আলেম তো দূরের কথা কোন জাহেলও
বলেনি।
.
##পঞ্চম সংশয়ঃ
তারা তো দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ।
তারা বলেঃ এসব সৈন্যরা অজ্ঞ।
তাদের প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের যারা
তাদেরকে শিক্ষা দিবে, সৎ পথে
আহবান করবে এবং সকল বিষয় তাদের
কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে।তারাতো
জানে না তাদের প্রধানরা তাগুত।আর
আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের
সহযোগিতা করা কুফরী।তাই তারা
কাফের হবে না।
.
.
আমাদের জবাবঃ
হ্যা! এই সমস্ত সৈন্য ও অন্যান্যদের দাওয়াত দেয়া অবশ্যই প্রয়োজন।যেমন আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ
‘তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে
পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকে, সৎ
কর্ম করে এবং বলে আমি একজন
মুসলমান’।[সূরা হা’মীম সাজদাঃ৩৩]
.
কিন্তু আল্লাহর ইবাদতের সাথে সাথে
এ ব্যক্তিকে অবশ্যই শিরক ত্যাগ করতে
হবে। অন্যথায় সে মুশরিক বলেই
বিবেচিত হবে।তাই তার কাছে
দাওয়াত পৌছানো হোক বা না হোক।
দাওয়াত না পৌছার কারণে তাকে
মুসলিম বলা যাবে না। যেমন আল্লাহ
(সুবঃ) বলেনঃ ‘আর মুশরিকদের মধ্য
হতে কেউ যদি তোমার নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা করে তাহলে তুমি তাকে
আশ্রয় দাও।যাতে করে সে আল্লাহর
বাণী শুনতে পারে। অতঃপর তাকে
নিরাপদ স্থানে পৌছে দাও। কারণ
তারা অজ্ঞ।[সূরা তাওবাঃ৬]
.
উপোরক্ত আয়াতে আল্লাহ তাদেরকে
তার কালাম শুনার পূর্বেই মুশরিক বলে
ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ তারা অজ্ঞ
ছিল। আল্লাহ তার রাসূল (সাঃ) কে
তাদের দাওয়াত প্রদানের এবং ভালো
কথা শুনানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু এ আদেশ সত্ত্বেও আল্লাহ
তাদেরকে মুশরিক বলেছেন। যতক্ষণ
তারা শিরককে আকড়ে ধরেছিল।
কেননা শিরকে আকবার এমন যে, এই
শিরককারীর অজ্ঞতার অজুহাত
কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা
মহান রাব্বুল আলামীন তার একত্বতার
নিদর্শন সমগ্র সৃষ্টিতে রেখেছেন।
তাদের মধ্য হতে উলামায়ে কিরাম
কয়েকটির কথা উল্লেখ করেন।
.
১। আল্লাহর এককত্বের উপর প্রকাশ্য
জাগতিক প্রমাণ সমূহ।
আল্লাহ এর রুবুবিয়্যাত তার
ওয়াহদানিয়্যাতের উপর প্রমাণ বহন
করে।কেননা যিনি সৃষ্টি করেছেন,
রিযিক দিচ্ছেন, আকৃতি দিয়েছেন
এবং সবকিছু পরিচালনা করছেন। তিনি
এমন এক সত্তা যিনি একমাত্র ইবাদাত
ও বিধান দানের যোগ্য। আর এ
ব্যাপারে কাউকে তার অংশীদার ও
সমকক্ষ ভাবা শরীয়াত ও বিবেক
উভয়েরই বিরুদ্ধ।
.
২। আল্লাহ (সুবঃ) যখন মানুষকে তাদের
আদি পিতা আদম (আঃ) এর পিঠ থেকে
বের করেছেন তখন তিনি তাদের থেকে
প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন।
আল্লাহ(সুবঃ) বলেনঃ ‘আর স্মরণ কর,
যখন তোমার রব বনী-আদমের পৃষ্টদেশ
হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন
এবং তাদেরকে তাদের নিজদের উপর
সাক্ষী করলেন যে, ‘আমি কী
তোমাদের রব নই’? তারা বলল, ‘হ্যা,
আমরা সাক্ষ্য দিলাম’।যাতে
কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার
যে, নিশ্চয় আমরা এ বিষয়ে অনবহিত
ছিলাম।[সূরা আ’রাফঃ ১৭২]
.
তাই স্পষ্ট শিরকের ক্ষেত্রে তাদের
অসতর্কতা, অজ্ঞতা ও তাকলিদ
(পূর্বসূরীদের অন্ধ অনুসরণ) অজুহাত
হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।কেননা
আল্লাহ(সুবঃ) পূর্বেই তাদের থেকে
প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, ‘তারা আল্লাহ্
ছাড়া অন্য কাউকে রব হিসাবে গ্রহণ
করবে না’।
.
৩। আল্লাহ (সুবঃ) মানুষকে
জন্মগতভাবে যে স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি
করেছেন তার দাবি হল, সৃষ্টিকর্তা
একজন এবং তিনিই ইবাদতের উপযুক্ত ও
বিধানদাতা।
যেমন হাদীসে এসেছেঃ ‘আবু হুরায়রা
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)
বলেছেন, প্রত্যেক সন্তানই স্বভাবজাত
(ইসলাম)ধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে।
অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে
ইয়াহুদী বানায় অথবা খৃষ্টান বানায়
অথবা মূর্তিপূজক বানায়’।[সহীহুল
বুখারীঃ১৩৮৫] অপর এক বর্ণনায়
এসেছে “মুশরিক”বানায়।[সুনানে
তিরমিযীঃ২১৩৮;সনদ সহীহ]
.
এমনিভাবে মুসলিমে হাদীসে কুদসীতে
এসেছে।
‘আমি আমার সকল বান্দাদেরকে
একনিষ্ট অবস্থায় সৃষ্টি করেছি।
অতঃপর তাদের নিকট শয়তান আসে
এবং তাদেরকে দ্বীন থেকে সরিয়ে
দেয় ও আমি তাদের জন্য যা হালাল
করেছি তা সে হারাম করে।আর
তাদেরকে আদেশ দেয়,যাতে তারা
আমার সাথে এমন জিনিসের শিরক
করে যার কোন প্রমাণ আমি অবতীর্ণ
করিনি।[সহীহ মুসলিমঃকিতাবুল
জান্নাতি ওয়া নায়ীমিহা ওয়া
আহলিয়াঃ৬৩-(২৮৬৫)]
.
৪। আল্লাহ (সুবঃ) সকল নবী রাসূলকে
এই মহান উদ্দেশ্য দিয়ে প্রেরণ
করেছেন।
‘নিশ্চয় আমি সকল জাতির কাছে রাসূল
পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দিয়ে, তোমরা
আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে
পরিহার কর’।[সূরা নাহালঃ৩৬]
.
‘এসকল রাসূল এমন যাদেরকে
সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরুপে
পাঠানো হয়েছিল।যাতে রাসূলগণের
আগমনের পর আল্লাহর সামনে মানুষের
কোন অজুহাত বাকি না থাকে’।[সূরা নিসাঃ১৬৫]
.
আর যদি কোন ব্যক্তি পর্যন্ত রাসূল
নাও পৌছে তথাপি সে অন্য কারো
কাছ থেকে শুনে থাকবে।কেননা যদিও
রাসূলদের শরীয়তের ভিন্নতা রয়েছে।
কিন্তু তাওহীদ ও শিরকের ব্যাপারে
তাদের আহবান এক ও অভিন্ন।আর
আল্লাহ (সুবঃ)বলেছেনঃ ‘আমি রাসূল
পাঠানোর পূর্বে কাউকে শাস্তি দেই
না’।[সূরা বনী ইসরাঈলঃ১৫]
.
সুতরাং আল্লাহ (সুবঃ) সকল মানুষের
নিকট তার রাসূলদের প্রেরণ করেছেন।
এবং মুহাম্মদ(সাঃ) এর মাধ্যমে সে
ধারাটি পূর্ণতা লাভ করেছে। তাই
তারপর আর কোন রাসূল নেই।
.
৫। আল্লাহ ধারাবাহিকভাবে অনেক
কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যা এই
তাওহীদের দিকেই আহবান করে।
আর এই ধারাবাহিকতার সমাপ্তি
ঘটিয়েছেন এমন এক কিতাব দিয়ে যা
কখনো বিকৃত হবে না। আল্লাহ (সুবঃ)
নিজেই কিয়ামত পর্যন্ত এর
সংরক্ষণের জিম্মাদার হয়েছেন এবং
এতে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে
মানুষদেরকে সতর্ক করেছেন।এসব
বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হল তাওহীদ।
আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ ‘আমার প্রতি
ওহীরুপে এই কুরআন নাযিল করা
হয়েছে, যাতে এর মাধ্যমে আমি
তোমাদেরকে সতর্ক করি এবং যাদের
নিকট এ কুরআন পৌছবে তাদেরকে’।
[সূরা আনআমঃ১৯]।
.
তিনি আর বলেনঃ ‘মুশরিকরা ও
কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফের
ছিল,তারা ততক্ষণ পর্যন্ত নিবৃত হওয়ার
ছিলনা, যতক্ষণ না তাদের কাছে
সুষ্পষ্ট প্রমাণ আসে’।[সূরা বায়্যিনাহঃ১]
.
অতঃপর তিনি আয়াতে বর্ণিত
প্রমাণের পরিচয় দিয়ে বলেনঃ
‘আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রাসূল যে
পবিত্র গ্রন্থ পাঠ করে শোনাবে’।[সূরা বায়্যিনাহঃ২]
.
সুতরাং যার নিকট এই কুরআন পৌছবে
তার অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না।
বিশেষ করে দ্বীনের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাওহীদের ব্যাপারে,
যার জন্য তিনি সকল নবী রাসূলদের
পাঠিয়েছেন। কেননা আল্লাহ
(সুবঃ)মুশরিকদের সম্পর্কে বলেছেন-
‘তাদের কী হল যে তারা উপদেশ বাণী
থেকে বিমুখ’।[সূরা মুদ্দাছছিরঃ৪৯]
.
রাসূল (সাঃ) এর জীবন থেকে জানা
যায়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ে তার
দাওয়াতের নিয়ম ছিল, তিনি গোত্র
প্রধানদের নিকট চিঠি পাঠাতেন।
সাধারণ লোকদের নিকট কোন পয়গাম
পাঠাতেন না এবং দূতদের এই আদেশ ও
দিতেন না যে,তারা যেন সকল জনগণের
নিকট এই দাওয়াত পৌছায়। অতঃপর
গোত্র প্রধান যদি এই দাওয়াত গ্রহণ না
করত তাহলে তিনি তাদের সকলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেন।
সাহাবায়ে কিরামের দাওয়াতের
পদ্ধতিও এই ছিল। তাহলে সেখানে তো
সাধারণ লোকদের অজ্ঞতার অজুহাত
গ্রহণযোগ্য হয়নি।
.
আর বর্তমান তাগুতরা এবং তাদের
সাহায্যকারী সৈন্যরা মুশরিকদের
দিকনির্দেশনা গ্রহণ করে, তাওহীদ
সম্বলিত কোরআনের আয়াতের
বিরুদ্ধাচারণ করে। আর তারা সত্য
শ্রবণ করা থেকে পলায়ন করে। যেমন
জংলী গাধা সিংহ দেখলে দৌড়ে
পালায়।আর কিতাবুল্লাহকে
প্রত্যাখ্যানের মাধ্যেমে এই অজ্ঞতা
নিজেরাই গ্রহণ করেছে। অথচ স্পষ্ট
প্রমাণ তাদের সামনে ছিল। তাদের এই
অজ্ঞতা তাদের নিকট রিসালাত না
পৌছার কারণে অথবা নির্বুদ্ধিতা,
পাগলামি ইত্যাদির কারণে নয়। উপরন্তু
তারা শরীয়াত কায়েমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করে ও বাধা প্রদান করে। আর এটা
নিশ্চিত বিষয়, যে ইসলামের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করে তার অজ্ঞতার অজুহাত
কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।কিন্তু এই
সমস্ত তর্ককারীরা দ্বীনের
বিরুদ্ধাচারীদের পক্ষাবলম্বন করে
বলে থাকে-তারা(শাসকেরা) যেহেতু
অজ্ঞ তাই তারা কাফের হবে না। অথচ
আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ “(হে নবী!
তাদেরকে)বল, এমন প্রমাণ তো
আল্লাহরই আছে, যা(অন্তরে)পৌছে
যায়”।[সূরা আনআমঃ১৪৯]
.
আর এ কারণেই নবী করিম(সাঃ)কে এক
ব্যক্তি নিজ পিতা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
“নিশ্চয় আমার ও তোমার পিতা
জাহান্নামী”। [সহীহ মুসলিমঃকিতাবুল
ঈমানঃ২০৩-(৩৪৭)]
.
অথচ তারা ছিল এমন সম্প্রদায় যাদের
সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন,
‘যাতে তুমি এমন এক কওমকে সতর্ক
কর,যাদের পিতৃপুরুষদেরকে সতর্ক করা
হয়নি, কাজেই তারা উদাসীন’।[সূরা ইয়াসীনঃ৬]
.
এটা এ কারণে যে, মৌলিক তাওহীদ
এবং শিরকে আকবার ও গাইরুল্লাহর
ইবাদত যে যুক্তিযুক্ত না আল্লাহ(সুবঃ)
তার দলিল ও নিদর্শন বিভিন্নভাবে
প্রদান করেছেন। (যেমনটি পূর্বে
উল্লেখ হয়েছে)এতদাসত্ত্বেও এমন কিছু লোক আছে যারা নাম মাত্র মুসলমান এবং
ইসলামকে প্রথা হিসেবে পালন করে।
তারা স্পষ্ট শিরক ও তাওহীদের
ব্যাপারে প্রমাণ তালাশ করে!
অথচ এই তাওহীদই হল বান্দার কাছে
আল্লাহর প্রথম চাওয়া।যে কারণে
তিনি সমস্ত রাসূলকে প্রেরণ করেছেন,
আসমানী কিতাব সমূহ অবতীর্ণ
করেছেন, আরো অনেক প্রমাণ পেশ
করেছেন।
তারা অধিকাংশ সময় একটি আয়াতের
ভিত্তিতে শাসক ও সৈন্যদের
পক্ষাবলম্বন করে থাকে যদিও
আয়াতটি ভিন্ন বিষয়ে অবতীর্ণ।
‘আমি রাসূল পাঠানোর পূর্বে কাউকে
শাস্তি দেই না’।[সূরা বনী ইসরাঈলঃ১৫]
.
এর প্রেক্ষিতে তারা বলে, অজ্ঞতা
দূর হওয়ার পূর্বে তাকফীর করা যাবে
না।অথচ এই আয়াতের উদ্দেশ্য এটা নয়।
আল্লাহ (সুবঃ) এখানে বলেননি, ‘আমি
তোমাদেরকে কাফের সাব্যস্ত করবো
না যতক্ষণ রাসূল প্রেরণ না করি’। বরং
তিনি বলেছেন, “শাস্তি দিব না”। আর
শাস্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হল হয়তো
পার্থিব শাস্তি। যেমন আল্লাহ (সুবঃ)
বলেছেনঃ
অর্থঃ ‘তোমার প্রতিপালক এমন নন যে,
তিনি জনপদ সমূহকে ধ্বংস করে দিবেন
যতক্ষণ না তিনি তার মূল ভূখন্ডে রাসূল
প্রেরণ করেন, যে তাদের কাছে আমার
আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে’। [সূরা
কাসাসঃ৫৯]
.
অথবা উদ্দেশ্য হবে আখেরাতের
শাস্তি যেমন আল্লাহ (সুবঃ)
বলেছেনঃ ‘যখনই তাতে(জাহান্নামে)
কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন
তার প্রহরীরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা
করবে, ‘তোমাদের নিকট কী কোন
সতর্ককারী আসেনি’? তারা বলবে,
‘হ্যা, আমাদের নিকট সতর্ককারী
এসেছিল’।[সূরা মূলকঃ ৮,৯]
.
সুতরাং উক্ত আয়াত দ্বারা তাদেরকে
শিরকে আকবার ও গাইরুল্লাহর
ইবাদতের ক্ষেত্রে তাকফীর না করা
উদ্দেশ্য না।
.
কেননা কাফের দুই ধরণের। (১) সে
কুফরী করে একগুয়েমী ও
অবাধ্যতাবশতঃযেমন অভিশপ্ত
ইয়াহুদীরা সত্যকে বুঝতে পারা সত্তেও
অস্বীকার করেছে। (২) যে কুফরী করে
অজ্ঞতাবশতঃ অন্যের দ্বারা পথভ্রষ্ট
হয়ে। যেমন খৃষ্টানরা পথভ্রষ্ট হয়েছে
তাদের আলেমদের ধর্ম বিকৃতির
কারণে।
এমনটা নয় যে, প্রত্যেক কাফের
সত্যকে পরিপূর্ণ জেনে অস্বীকার
করে।বরং তাদের অধিকাংশ এমন
যারা অজ্ঞতা ও ভ্রান্তির শিকার।
তথাপি কুফরের দরুন তারা
জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। কেননা
তারা তাদের নেতা, শাসক ও
পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ করেছে। অথচ
তাদের ধারণা ছিল তারা সৎ পথে
আছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শিরকে
আকবার থেকে বেঁচে থাকার জন্য
বাহ্যিক ভাবে অনেক প্রমাণ পেশ
করেন।তাই এ ব্যাপারে অজ্ঞতার
অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।কেননা তার এই
অজ্ঞতা দ্বীন ও ইলম থেকে বিমুখ
থাকার কারণে। একারণে নয় যে ,তার
সামনে কোন প্রমাণ নেই।
উদাহরণ স্বরূপঃ যায়েদ বিন আমর বিন
নুফাইল এর ঘটনা উল্লেখ করা যেতে
পারে,তিনি ছিলেন ইসলামের পূর্বের
যামানার লোক যাদের ব্যাপারে
আল্লাহ(সুবঃ) বলেছেনঃ ‘যাতে তুমি
এমন সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার
যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন ওহী
আসেনি’।[সূরা কাসাসঃ৪৬]
.
বর্ণিত আছে নবী প্রেরিত না হওয়া
সত্ত্বেও তিনি মুওয়াহহিদ ছিলেন।
তিনি একনিষ্টভাবে ইব্রাহিম(আঃ)এর
মিল্লাতের উপর ছিলেন।
স্বভাবগতভাবে তিনি তাওহীদে
বিশ্বাসী ছিলেন। স্বীয় গোত্রের
তাগুতদেরকে বর্জন করেছিলেন ও
তাদের সাহায্য এবং উপাসনা থেকে
নিজেকে পবিত্র রেখেছিলেন।আর
এটা তার নাজাতের জন্য যথেষ্ট ছিল।
রাসূল(সাঃ)বলেনঃ তাকে একাই এক
উম্মত হিসাবে কিয়ামতের দিন
উঠানো হবে। রাসূল(সাঃ) নবূওয়্যাতের
পূর্বে যখন তার সাথে সাক্ষাত করেন
তখন তার সামনে দস্তরখানে গোস্ত
পেশ করা হল। তিনি তা খেতে
অস্বীকৃত জানালেন।তখন যায়েদ বিন
আমর বিন নুফাইল বললেন, তোমরা
প্রতিমার নামে যে প্রাণী যবেহ কর
তা আমি খাই না। আর তিনি
কুরাইশদের প্রতিমার নামে যবেহ কে
নিন্দা করতেন। বলতেন, “আল্লাহ (সুবঃ)
ছাগল সৃষ্টি করেছেন অতঃপর আসমান
থেকে তার জন্য পানি বর্ষণ করেছেন
এবং জমিন থেকে উদ্ভিদ উৎপন্ন
করেছেন।আর তোমরা এই বিষয় গুলো
অস্বীকার করে গাইরুল্লাহর
সম্মানার্থে এই প্রাণী যবেহ করছ?
[সহীহ বুখারীঃ ৩৮২৬,৫৪৯৯, কানযুল
উম্মালঃ ৩৭৮৬৩, জামেউল আহাদীসঃ
৩৫১৪৩]
.
ভেবে দেখুন! তাওহীদ কিভাবে
স্বভাবের মধ্যেই নিহিত থাকে।আর
শিরক হল একটি আকস্মিক বিষয়,যা
মানুষই উদ্ভাবন করে এবং তার দিকে
ধাবিত হয়।উল্লেখিত ব্যক্তির নিকট
কোন রাসূলের আগমন ঘটেনি,তা
সত্ত্বেও তিনি তাওহীদ বুঝেছেন ও
তার দাবি পূর্ণ করেছেন। তাই তিনি
নাযাত পেয়েছেন।কিন্তু শরীয়তের
অন্যান্য বিষয় ও ইবাদত যা রাসূলের
মাধ্যম ছাড়া বুঝা সম্ভব না সে বিষয়ে
অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে।
যেমন ইবনে ইসহাকের রেওয়ায়েতে
বর্ণিত আছে। তিনি বলতেনঃ ‘হে
আল্লাহ আমি যদি তোমার ইবাদতের
অন্য কোন উত্তম নিয়ম জানতাম তাহলে
আমি সেভাবেই তোমার ইবাদত করতাম,
কিন্তু আমি তা জানি না’।অতঃপর
ইতমিনানের সাথে জমিনে সিজদাহ
করতেন।
[ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজারঃ ২১/২১৮]
.
সুতরাং তিনি সালাত সিয়াম এধরণের
শরীয় বিষয় যেগুলোকে রাসূলের
মাধ্যম ছাড়া বুঝা সম্ভব নয় সেগুলোর
ব্যাপারে অক্ষম বলে গণ্য হবেন।কিন্তু
সেসময়কার অন্যান্য লোকেরা অক্ষম
বলে সাব্যস্ত হবে না।(এক সহীহ হাদীস
অনুযায়ী নবীজ়ীর পিতাও)। কেননা
তারা তাওহীদের মৌলিক দাবি পূরণ
করেন নি।শিরক কুফর থেকে বেচে
থাকেন নি।(তাদের নিকট কোন ভীতি
প্রদর্শনকারী না আসা সত্ত্বেও) যেমন
আলাহ (সুবঃ)বলেনঃ ‘যাতে তুমি এমন
সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার যাদের
কাছে তোমার পূর্বে কোন ভীতি
প্রদর্শনকারী আসেনি’।[সূরা কাসাসঃ৪৬]
.
বিষয়টি ভালোভাবে চিন্তা করা
প্রয়োজনঃ কেননা এই বিষয়ে কেউ
যদি কিছু নস(আয়াত ও হাদীস)গ্রহণ
করে অপর কিছু নস ছেড়ে দেয় তাহলে
সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে পারবে না
এবং বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে
না।
আর এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন, এই
সমস্ত শাসক ও তাদের সাহায্যকারীদের কুফরী এ কারণে নয় যে, তারা রিসালাতের প্রমাণ
সম্পর্কে অজ্ঞ।বরং তাদের নিকট
পাঠানো হয়েছে সর্বশেষ রাসূল যার
পর আর কোন রাসূল আসবেন না।আর
তাদের কাছে আছে কিতাবুল্লাহ যার
মধ্যে তাওহীদের বিষয়গুলো বিদ্যমান।
যাতে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন করা
কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু
অধিকাংশ মানুষই দুনিয়াকে
আখেরাতের উপর প্রাধান্য দেয়। তারা
সত্যের অনুসন্ধান ও অনুসরণে বিমুখ।
তাদের কুফরীও বিমুখতার কারণে।
রিসালাতের প্রমাণ না পৌছার
কারণে নয়।
.
খৃষ্টানরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে
তাদের পাদ্রী ও সন্যাসীদেরকে রব
হিসাবে গ্রহণ করেছে।তাদের জানা
ছিলনা বিধান প্রদানের ক্ষেত্রে
গাইরুল্লাহর অনুসরণ তাদের ইবাদত ও
শিরক।যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আদি
বিন হাতিমের হাদীসে।তিনি
বলেছিলেনঃ
“তারাতো (খৃষ্টানরা) তাদের
(পাদ্রীদের) ইবাদত করত না”।
তার এ উক্তি দ্বারা বুঝা যায় তাদের
জানা ছিল না হালাল হারাম ও
বিধানের ক্ষেত্রে আল্লাহকে বাদ
দিয়ে অন্যর কথা গ্রহণ করা ইবাদতেরই
অন্তর্ভূক্ত। তথাপি তারা এই ক্ষমতা
গাইরুল্লাহকে প্রদানের কারণে
কাফের হয়ে গিয়েছে এবং আল্লাহ
(সুবঃ) এই সমস্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে
বলেছেনঃ
‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের
পন্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীদের রব
হিসাবে গ্রহণ করেছে’।[সূরা
তাওবাঃ৩১]
.
আর তাদেরকে এই অজ্ঞতার কারণে
ক্ষমা করা হয়নি। কেননা বিষয়টি
আল্লাহ প্রদত্ত স্বভাবের বিপরীত।
যিনি সব কিছু সৃষ্টি করছেন, রিযিক
প্রদান করছেন, আকৃতি দিয়েছেন,সুস্থ
রেখেছেন। সুতরাং কোন ভাবেই সম্ভব
না তিনি ব্যতীত অন্য কেউ বিধান
দিবে, আইণ প্রণয়ন করবে তার
হালালকৃত জিনিসকে হারাম,আর
হারামকৃত জিনিসকে হালাল সাব্যস্ত
করবে।
.
সুতরাং এ অজুহাত কি কোন ভাবে
গ্রহণযোগ্য হতে পারে কেননা এই
শাসক,সামরিক কর্মকর্তা,পুলিশ,সাংবাদিক,
নিরাপত্তা বাহিনীর সদ্যসদেরকে
এবং অন্যান্যদেরকে যদি জিজ্ঞাসা
করা হয়, তোমাদের ধর্ম কী?তারা
বলবে, ইসলাম, এবং আসমানি কিতাব
হল আল-কুরআন। তাদের অনেকেতো
কুরাআনও তিলাওয়াত করে।তাহলে কি
একথা বলা যাবে যে, তারা অজ্ঞ,
তাদের নিকট এখনো প্রমাণ পৌছেনি?
অধিকিন্তু তারা ইসলাম ও কুরাআনকে
অবমাননা করে।যে ব্যক্তি কুরাআনের
বিধান প্রতিষ্টার চেষ্টা করে তার
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।মামলা দায়ের
করে এবং তাকে কারাগারে বন্দি
করে।
.
আর যে ব্যক্তি তাওহীদের দিকে
আহবান করে, শিরক কুফর পরিত্যাগের
দিকে আহবান করে;এসকল তাগুতের
সমর্থকেরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
অন্যদিকে তারা তাগুতের বিধান এবং
স্বরচিত আইন ও শিরকী প্রথাকে
সাহায্য করে। তারা শরী’য় বিধানকে
অনুপযুক্ত মনে করে এবং একনিষ্ট
মুসলমিদের শত্রুদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ
করে। তাদেরকে সহযোগিতা করে।আর
এটা আল্লাহর দ্বীনের সম্পূর্ণ বিপরীত
তা কোন মুসলমানের বুঝতে কষ্ট হওয়ার
কথা নয়।
.
এটা কি এমন কোন সূক্ষ বা জটিল বিষয়
যে,বলতে হবে তাদের নিকট এখনো তো
প্রমাণ পৌছেনি?না! কোন ভাবেই না।
আল্লাহর শপথ! বিষয়টি দ্বী-প্রহরের
সূর্যের চেয়েও স্পষ্ট।
দুটি দলের মাঝে দ্বন্দ। একটি হল
শিরকের অপরটি হল তাওহীদের ।
একটি পবিত্র শরীয়ার অপরটি মানব
রচিত অপবিত্র বিধানের।আর এই
লোকেরা হয়তো ভালোবাসার টানে
অথবা আখেরাতের উপর দুনিয়াকে
প্রাধান্য দিয়ে স্ব-ইচ্ছায়,স্ব-জ্ঞানে
তাগুতদের কাতারে শামিল হয়েছে।
তাই সে পথেই যুদ্ধ করে ও তাদেরকেই
সাহায্য করে।আর মুওয়াহিদদের কেউ
যদি তাদের এই পথ ও মতকে অস্বীকার
করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি
ব্যয় করে।
‘যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর
পথে যুদ্ধ করে,আর যারা কুফর অবলম্বন
করেছে তারা যুদ্ধ করে তাগুতের পথে’।
[সূরা নিসাঃ৭৬]
.
অচিরেই কিয়ামতের দিন যখন এরা
মুসলমানদের সফলতা ও তাগুতপন্থীদের
ধ্বংস দেখতে পাবে তখন বলতে
থাকবেঃ ‘হে আমাদের রব, আমরা
আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের
আনুগত্য করেছিলাম তখন তারা
আমাদেরকে পথ ভ্রষ্ট করেছিল।হে
আমাদের রব,আপনি তাদেরকে দিগুণ
আযাব দিন এবং তাদেরকে অভিশপ্ত
বানান ঘোর অভিশপ্ত’।[সূরা আহযাবঃ৬৭,৬৮]
.
তাদের এ উক্তিটি ভেবে দেখুনঃ
‘তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে’
কিন্তু নেতারা তাদের পথভ্রষ্ট করা
সত্ত্বেও তাদের অজুহাত গ্রহণযোগ্য
হবে না।
আল্লাহ(সুবঃ) কাফেরদের ব্যাপারে
অনেক আয়াতে বলেছেনঃ
১। অর্থঃ ‘অথচ তারা মনে করে,তারা
খুবই ভাল কাজ করছে’।[সূরা
কাহাফঃ১০৪]
.
২। অর্থঃ ‘তারা মনে করে, তারা সঠিক
পথেই আছে’।[সূরা যুখরুফঃ৩৭]
.
৩। অর্থঃ ‘তারা মনে করে যে, তারা
কোন কিছুর উপর আছে’।[সূরা আল-
মুজাদালাঃ১৮]
কিন্তু তাদের শিরক ও কুফর সম্পর্কে সু-
ধারণা এবং তাওহীদ সম্পর্কে
অজ্ঞতার অজুহাত কোন কাজে
আসবেনা।কেননা তারা ইসলামের
একটি মৌলিক বিষয়কে আদায়
করেনি।যার জন্য আল্লাহ অনেক
প্রমাণ পেশ করেছেন,সকল রাসূলকে
প্রেরণ করেছেন।
তবে যদি তাদের ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা
কোন সংশয়পূর্ণ জটিল বিষয়ে হত আর
তাদের নিকট ইসলামের প্রধান
উৎসগুলো(কুরাআন,হাদীস ইত্যাদি)
বিদ্যমান না থাকতো তাহলে তাদের
অজুহাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভবনা
ছিল।
.
৭। সূরা তাওবার ৩১নং আয়াতের
ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাছীর
উল্লেখ করেনঃ
ইমাম আহমদ, তিরমিযী, ইবনে জারীর
বিভিন্ন সূত্রে আদি ইবনে হাতেম
থেকে বর্ণণা করেন,যখন তার নিকট
রাসূল (সাঃ) এর দাওয়াত পৌছল।
অতঃপর তিনি রাসূল (সাঃ) এর সাথে
সাক্ষাত করেন আর তার গলায় রুপার
ক্রুশ ঝুলানো ছিল। রাসূল (সাঃ)এই
আয়াত তেলাওয়াত করলেনঃ ‘তারা
আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিতগণ ও
সংসার-বিরাগীদের রব হিসাবে গ্রহণ
করেছে’ তখন তিনি বললেনঃ তারাতো
তাদের ইবাদত করত না। রাসূল
(সাঃ)বললেনঃ
‘তারা হালালকে হারাম আর হারামকে
হালাল করত আর এরা তাদের অনুসরণ
করত।এটাই হল তাদের ইবাদত’।[সুনান
আত তিরমীযিঃ৩০৯৫;সনদ সহীহ]

 
back to top