শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬

দ্বীন কায়েমের ব্যাপারে কী আকীদা রাখা উচিত ?

কোন মন্তব্য নেই:

দ্বীন কায়েমের ব্যাপারে কী আকীদা রাখা উচিত ?
.
শাইখ আব্দুল হালিম
.
মানুষ জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে স্থির করে
তার আকীদা ও বিশ্বাসের উপর। বাস্তব
সত্য বলে সে মনের গভীরে যে আকীদা
পোষণ করে, তার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সব
কিছু উজার করে দেয়,এমন কী জীবন দিতেও
প্রস্তুত হয়। যুগে যুগে নবী-রসুল ও তাঁদের
অনুসারীগণ সঠিক আকীদাকে প্রতিষ্ঠা
করার জন্য জানের নজরানা পেশ করেছেন।
তদ্রুপ কাফের-মুশরিকরাও তাদের বাতিল আকীদা ও বিশ্বাসের জন্য জীবন
দিয়েছে।আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম
করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ ব্যাপারে
অন্তরের অন্তস্থলে যদি কোন বিশ্বাস না থাকে,
তাহলে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কখনই নিবেদিত
হওয়া সম্ভব নয়। যদি কখন দেখা যায় এতদিন যে আকীদা ও বিশ্বাস পোষন করে আসছে, তা
ভুলে ভরা বাতিল ও ভ্রান্ত তখনই নেমে আসে
চরম হতাশা। তাই দ্বীন প্রতিষ্ঠাকে যাঁরা জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন,হাজারো ভিড়ের মাঝে তাঁদেরকে এর সঠিক আকীদা খুঁজে বের করতে হবে।দ্বীন কায়েমের প্রশ্নে সমাজে বিভিন্ন
আকীদার লোক দেখা যায়। কুরআন ও সহীহ
হাদীসের আলোকে কোন আকীদাটিকে নির্ভুল ও
সত্য এ সর্ম্পকে সন্তোষজনক জবাব পেতে
হলে আগে জানা দরকার,বর্তমান সমাজে কী কী
আকীদা প্রচলিত রয়েছে।
.
আমাদের জানা মতে বর্তমান সমাজে দ্বীন কায়েমের ব্যপারে প্রধানতঃ চার ধরণের আকীদা প্রচলিত রয়েছে।
.
১.সমাজ সংস্কার।
২.সমাজ বিপ্লব।
৩.গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ।
৪.গণ-অভ্যুত্থান।
.
.
১.সমাজ সংস্কারঃ এ আকীদার ধারক ও বাহকগণ বিশ্বাস করেন যে, দাওয়াত ও
তাবলীগের মাধ্যমে আজ থেকে কতিপয় শিরক ও বিদআ‘ত উৎখাত করে ব্যক্তি সংশোধনের মাধ্যমে কলুষমুক্ত ইসলামী সমাজ গড়ে
তোলা সম্ভব। বিধায় তারা রাষ্ট্র ব্যবস্থায়
ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার কোন
পদক্ষেপ নেন না, এজন্য কিতাল বা সশস্ত্র
জিহাদ করার প্রয়োজন ও মনে করেন না এবং
গণতন্ত্র,রাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ,
জাতীয়তাবাদ ইত্যাদিইসলামদ্রোহী শক্তি
নির্মূল করার কথাও বলেন না; বরং এ ধরনের
ভ্রান্ত মতাদর্শের লোকদের সমন্বয়ে পরিচালিত জামআ‘তকেই র্নিভেজাল তাওহীদি জামাআত’ দাবী করে জিহাদ বিমুখ কর্মকান্ডের মাধ্যমে তারা তথাকথিত সমাজ সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
.
.
২. সমাজ বিপ্লবঃ এ আকীদায় বিশ্বাসীগণ
দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে সমাজের
পরিবর্তন ঘটাতে চান,কিন্তু তারা সশস্ত্র জিহাদকারীদের সাহায্য করেন না।
তাদের মতে ‘‘জিহাদের পদ্ধতি পরিবর্তনশীল
এবং অসি যুদ্ধের চেয়ে মসি যুদ্ধ অধিকতর
শক্তিশালী।’’
.
*** তারা আরও বলেন –‘‘এ যুগে জিহাদের সর্বাপেক্ষা বড়ো হাতিয়ার হলো
তিনটি – যথা কথা, কলম ও সংগঠন।’’
.
*** তাই তারা সশস্ত্র জিহাদকে এ যুগের জন্য উপযোগী মনে করেননা।কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা সকল যুগের জন্যই সশস্ত্র জিহাদকে
ফরজ করেছেনঃ
ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻘِﺘَﺎﻝُ ﻭَﻫُﻮَ ﻛُﺮْﻩٌ
ﻟَﻜُﻢْ ﻭَﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥْ ﺗَﻜْﺮَﻫُﻮﺍ ﺷَﻴْﺌًﺎ
ﻭَﻫُﻮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻜُﻢْ ﻭَﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥْ
ﺗُﺤِﺒُّﻮﺍ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻫُﻮَ ﺷَﺮٌّ ﻟَﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
‘‘তোমাদের উপর কিতাল
(সশস্ত্র জিহাদকে) ফরজ করে দেয়া হয়েছে, তা
তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়, কিন্তু
তোমরা যা পছন্দ কর না,সম্ভবতঃ তা তোমাদের
জন্য কল্যাণকর, এবং তোমরা যা পছন্দ কর
সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর
আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। ’’ –
(বাকারাহঃ ২১৬)
.
কারো পছন্দ হোক বা না হোক সকল যুগের জন্য
সশস্ত্র জিহাদের এ আদেশ জারী থাকবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন ঃ
‘‘আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের জন্য
তলোয়ার দিয়ে পাঠানো হয়েছে। আর আমার
রিজিক (গণিমতের পন্থায়) বল্লমের ছায়ার
নিচে রেখে দেওয়া দেওয়া হয়েছে।’’ –
(সহীহ বুখারী কিতাবুল জিহাদ)
.
‘‘আল্লাহর আইনকে বাস্তবায়ন করার জন্য
আমার উম্মতের মধ্যে একটি ঈসাবা (দল) সব
সময় কিতাল করে যাবে,তারা তাদের শত্রুদের
প্রতি কঠোর হবে,যারা তাদের বিরোধিতা
করবে তারা তাদের ক্ষতি করতে পারবে না।তারা কিয়ামত পর্যন্ত এ কাজ চালিয়ে যাবে।’’।
(সহীহ মুসলিম)
.
তথাকথিত সমাজ বিপ্লবীগণের আকীদা
মতে যদি কেহ প্রচলিত গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র,
জাতীয়তাবাদ,ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইত্যাদি ভ্রান্ত মতাদর্শ গ্রহণ করে এবং ঐসব আদর্শের ভিত্তিতে দেশ শাসন করে, তবুও তাদেরকে রাষ্ট্রিয়
ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যাবে না। এই
ভ্রান্ত আকীদা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে তারা নাবী-
রাসূল (আঃ) গণের উপর মিথ্যা তোহমত দিয়ে
বলেন ‘‘নাবী-রাসূল (সাঃ) গণ তাদের আমলের প্রতিষ্ঠিত শাসন ক্ষমতাকে উতখাতের
চেষ্টা করেননি।’’
.
***কিন্তু বাস্তব সত্য এই যে,নাবী-রাসূল (আঃ) গণ তাদের যুগের প্রতিষ্ঠিত তাগুতি শাসন ক্ষমতাকে উৎখাতের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কোন কোন নাবী-রাসূল (সাঃ) তাগুত শাসকদেরকে উৎখাত করে নিজে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে আল্লাহর বিধান জারী করেছিলেন।কেহ উৎখাত করতে না পারলেও সঙ্গি-সাথীদের নিয়ে
আজীাবন সশস্ত্র জিহাদ চালিয়ে গেছেন।
ﻭَﻛَﺄَﻳِّﻦْ ﻣِﻦْ ﻧَﺒِﻲٍّ ﻗَﺎﺗَﻞَ ﻣَﻌَﻪُ
ﺭِﺑِّﻴُّﻮﻥَ ﻛَﺜِﻴﺮٌ ﻓَﻤَﺎ ﻭَﻫَﻨُﻮﺍ ﻟِﻤَﺎ
ﺃَﺻَﺎﺑَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﺎ
ﺿَﻌُﻔُﻮﺍ ﻭَﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻜَﺎﻧُﻮﺍ
‘‘আর বহু নাবী (আঃ)
ছিলেন যারা সঙ্গি-সাথীদের নিয়ে সশস্ত্র
জিহাদ করেছেন।আল্লাহর পথে তাদের যত
বিপদই এসেছিল সেজন্য তারা হতাশ হননি, দুর্বল
ও হননি এবং দমেও যাননি।’’- (ইমরানঃ ১৪৬)
.
অতএব উপরোক্ত আয়াত থেকে ইহা ও প্রমাণিত
হয় যে, নাবী-রাসূল (আঃ)গণ সশস্ত্র জিহাদ
করেছেন। কিন্তু কিছু কিছু আলেম ইসলামের
শত্রুদের চক্রান্তে বিভ্রান্ত হয়ে নবী-রাসূল
(আঃ) গণের আদর্শ ভুলে গেছেন। তাই তারা
জিহাদের জন্য অস্ত্র ব্যবহার বাদ দিয়ে শুধু
কাগজ-কলম ব্যাবহার করার কথা বলেছেন এবং
মানব রচিত বিধানে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদেরকে
ক্ষমতা হতে উৎখাত করার চিন্তা করছেন না।
তাই মনের অজান্তেই দুটি কাজকে তারা বেছে
নিয়েছেনঃ
.
*** টিকাঃ সমাজ বিপ্লবের ধারা
(আন্দোলন সিরিজ-৩)
১৯৯৪ ইং মার্চে প্রকাশিত বই-এর ১৪ ও ১৬ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য।
.
১. জিহাদকে অস্ত্র মুক্ত করে কাগজ কলমে
রুপান্তরিত করা ।
.
২. তাগুতদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করার পক্ষপাতিত্ব করা।
প্রকৃতপক্ষে এগুলো কাদিয়ানীদের আকীদা
এবং ইসলাম বিদ্ধংসী ষড়যন্ত্র। বর্তমানে তাওহীদপন্থি কিছু আলেমও তাদের এই
ভ্রান্ত আকীদার অনুসারী হয়েছে।কাদিয়ানীরা যেমন ইংরেজ ও তার দোসরদের সশস্ত্র জিহাদ না করার ফতোয়া দিয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে এই যুগের আলেমদের মধ্যেও কেউ কেউ মুসলমান নামধারী তাগুত শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ না করার ফতোয়া দিচ্ছে।
.
উপরে বর্ণিত সমাজ সংস্কার ও সমাজ বিপ্লব
উভয় পদ্ধতির মাঝে দ্বীন ইসলামকে রাষ্ট্রভাবে কায়েম করার কোন পকিল্পনা বা কর্মসূচী
মোটেও দেখা যায় না।অথচ আল্লাহ্ তা’আলা নূহ (আঃ) থেকে মুহাম্মদ(সাঃ) পর্যন্ত সকল নবী
রাসূল (আঃ) গণের প্রতি দ্বীন ইসলামকে কায়েম
করার নির্দেশ দিয়েছেনঃ
ﺷَﺮَﻉَ ﻟَﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣَﺎ ﻭَﺻَّﻰ
ﺑِﻪِ ﻧُﻮﺣًﺎ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﻭْﺣَﻴْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
ﻭَﻣَﺎ ﻭَﺻَّﻴْﻨَﺎ ﺑِﻪِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻭَﻣُﻮﺳَﻰ
ﻭَﻋِﻴﺴَﻰ ﺃَﻥْ ﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺪِّﻳﻦَ ﻭَﻟَﺎ
ﺗَﺘَﻔَﺮَّﻗُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ
‘‘তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সেই
পথই নির্ধারণ করেছেন,যার আদেশ দিয়েছিলেন
নূহকে, যা আমি প্রতাদেশ করেছি
আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম,
ইবরাহিম, মুসা ও ঈসা (আঃ) কে এই মর্মে যে,
তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবংতাতে অনৈক্য সৃষ্টি কর না।’’ (শূরাঃ ১৩)
ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺭْﺳَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﺑِﺎﻟْﻬُﺪَﻯ
ﻭَﺩِﻳﻦِ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﻴُﻈْﻬِﺮَﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ
ﻛُﻠِّﻪِ ﻭَﻛَﻔَﻰ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ
‘‘তিনিই প্রেরণ করেছেন তাঁর রাসূল (সাঃ) কে
হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে যাতে একে অন্য
সমস্ত দ্বীনের (মতবাদের) উপর জয়যুক্ত
করেন। সত্য প্রতিষ্ঠারুপে আল্লাহই
যথেষ্ঠ।’’- (ফাতাহঃ ২৮)
.
আল্লাহর প্রতেক নবী-রাসূল (আঃ) গণ
রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীন কায়েমের জন্য তাঁদের
সময়ের প্রতিষ্ঠিত বাতিল শাসকদের
বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ চালিয়ে গেছেন। নবী-
রাসূল (আঃ) গণ তাগুতী বিধানে রাষ্ট্র
পরিচালনাকারীদেরকে ক্ষমতায় রেখে দেওয়া বা তাদেরকে উৎখাতের চেষ্টা না করে অন্য
কোন সংস্কারের দায়িত্ব পালন করেননি।
কাজেই নবী-রাসূল (আঃ) গণের পদ্ধতিকে বাদ
দিয়ে অন্য কোন পদ্ধতিতে সমাজ সংস্কার বা সমাজ বিপ্লব হতে পারে না।অতএব সংস্কার করার যদি ইচ্ছাই থাকে তবে প্রথমে রাষ্ট্র হতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ,জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র,
রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মতবাদকে
উৎখাত করে তদস্থলে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার করা উচিত।সুতরাং যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায়
ইসলামকে নতুন রাহবানিয়াত পদ্ধতি
গ্রহণ করেছেন।ঈসা (আঃ)-এর
অন্তর্ধানের পর তাঁর উম্মতের শাসকরা
ইঞ্জিলের বিধানবলী পরিবর্তন করে নিজেদের মনগড়া বিধান চালু করে।এই অবস্থা দেখে কিছু
সংখ্যক খাঁটি আলেম ও ন্যায়পরায়ন ব্যাক্তি
ধর্মবিমূখ শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁরান
এবং এই আয়াত পড়ে পড়ে জনগণকে তাগুত
শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেন।
ﻭَﻟْﻴَﺤْﻜُﻢْ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺈِﻧْﺠِﻴﻞِ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ
ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ
‘‘ইঞ্জিলের অনুসারীদের
প্রতি নিদের্শ ছিল যে,আল্লাহ্ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন তদানুযায়ী হুকমত পরিচালনা করা। আর যে সব লোক আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তদানুযায়ী হুকমত পরিচালনা করে না,তারাই ফাসেক’’। –
(মায়েদাহঃ ৪৭)
.
খাঁটি আলেমগণ আল্লাহর এই আয়াতের সঠিক
ব্যাখ্যা তুলে ধরার ফলে শাসকরা তাদেরকে হত্যা
করে। আর কিছু সংখ্যক আলেম ভয়ে ভীত হয়ে
তাগুতের বিরুদ্ধাচারণ না করে রাহবানিয়াত(বৈরাগ্যতাবাদ) পদ্ধতি
অবলম্বন করেন।এদের একদল শাসকদের
উদ্দেশ্যে বলে, ‘‘আমরা আপনাদের কোন বিরোধিতা করবনা।আমাদের জন্য সু-উচ্চ
মিনার বানিয়ে দিন।সেখানে বসে আল্লাহর
ইবাদত করব। খাদ্যের প্রয়োজন হলে নিচে রশি নামিয়ে দেব।আপনারা তাতে খাদ্য
বেঁধে দেবেন। আমরা কখন নিচে এসে
আপনাদের শাসন ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করব
না’’। আর একদল বলে,‘‘আমরা বনে-জঙ্গলে গিয়ে আল্লাহর ইবাদত করব। আপনাদের শাসন ক্ষমতার ধারে কাছেও আসবনা’’। অন্য আর একদল বলে, আমরা এদেশেই থাকব,আপনাদের আশেপাশেই চলাফেরা করব এবং শুধু খাদ্যের অনুসন্ধান করব।যেমন- পশুরা করে থাকে। আমরা আপনাদের শাসন ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে তদস্থলে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের জন্য
জনগণকে উদবুদ্ধ করবনা; বরং আমরা গৃহপালিত পশুর মত আপনাদের
অনুগত হয়ে থাকব’’।একথা শুনে শাসকরা তাদেরকে ছেরে দেয়।
(সূরা আল হাদিদঃ২৭ তাফসীর ইবনে কাসীর
দেখুন)অতএব এই ঘটনার
পরিপেক্ষিতে আল্লাহ্তাআলা বলেনঃ
ﻭَﺭَﻫْﺒَﺎﻧِﻴَّﺔً ﺍﺑْﺘَﺪَﻋُﻮﻫَﺎ ﻣَﺎ ﻛَﺘَﺒْﻨَﺎﻫَﺎ
ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ
‘‘আর রাহবানিয়াত’’ (বৈরাগ্যতাবাদ) সেতোতারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে, আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি।’’- (সূরা হাদিদঃ২৭)ঐ সমস্ত রাহেবরা লোকেদেরকে শরীয়তের
কিছু কিছু বিধান পালনে উদ্বুদ্ধ করত। কিন্তু দ্বীন
শাসন ব্যাবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করার আয়াত
গুলোকে আড়াল করে রাখত। রাহেবদের মত আজকের আলেমরাও দ্বীনকে শাসন ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার আয়াত গুলোকে আড়াল করে রাখছেন অর্থাৎ সেগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য কাউকে উৎসাহ দিচ্ছে না; বরং দ্বীনের শুধু ঐ কাজ গুলোই করার জন্য জনগণকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন, যে গুলো করলে তাগুত সরকারের
পক্ষ থেকে কোন বাঁধার সম্ভানা নেই।
.
কেউ কেউ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ,জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মতবাদকে পৃথক কোন ধর্ম
বলতে চান না। তারা বলেন ‘‘ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এগুলো দলীয় ব্যাপার মাত্র’’। প্রকৃত
এসব মতবাদ যদি ইসলাম ধর্মের বিপরীতে কোন আলাদা ধর্মই না হত, তাহলে তাদের রচিত সংবিধান ইসলাম ধর্মের সংবিধান হতে আলাদা এবং মুসলিম নামধারী ঐ সমস্ত পার্টির নেতারা ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর আইন চালু করেনা কেন?আসলে এখানে বিষয়টি
স্পষ্ট যে, মতবাদগুলো ইসলাম ধর্মের বিপরীতে আলাদা ধর্ম এবং এর সংবিধান হচ্ছে তাগুতী সংবিধান। যেমন আল্লাহর নিকট মনোনীত ধর্ম ইসলাম ও তার সংবিধান হচ্ছে আল-কুরআন। ঐ সমস্ত পার্টির নেতারা আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে মানুষের তৈরী করা আইন বাস্তবায়নকারী তাগুত।অতএব শাসন ক্ষমতা হতে তাগুতদেরকে উৎখাত করে তদস্থলে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা প্রত্যেক নবী-রাসূল (আঃ) গণ ও
ঈমানদারগণের প্রধান দায়িত্ব ।
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻌَﺜْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ
ﺃَﻥِ ﺍُﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ
ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ
‘‘প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই আমি রাসূল পাঠিয়েছি
যে দায়িত্ব দিয়ে যে,তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং সকল প্রকার তাগুতকে
বর্জন কর।’’ – (সূরা নাহলঃ ৩৬)
ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﺤَﺎﻛَﻤُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ
ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕِ ﻭَﻗَﺪْ ﺃُﻣِﺮُﻭﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﻜْﻔُﺮُﻭﺍ
ﺑِﻪِ
‘‘তারা তাগুতকে বিধানদানকারী
বানাতে চায়। অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন তাগুতকে অমান্য করে।’’
– (সূরা নিসাঃ ৬০)
.
যারা তাগুতী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদেরক
তাগুতী রাজনীতি বর্জন করার নির্দেশ দেয়না;
বরং গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ,
জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি ভ্রান্ত মতবাদে বহাল
রেখেই নিজ নিজ জামাআ’তে অর্ন্তভূক্ত করে তাদের সাথে সমাজ সংস্কার ও সমাজ বিপ্লব
করে বেরাচ্ছেন,জানিনা তাদের
বিপ্লবোত্তর সমাজ কেমন হবে?
রাষ্ট্রীয়ভাবে কি তাদের ইসলামী আইনের
প্রয়োজন হবে না?
অথচ রাসুল (সাঃ)-এর নিজ হাতে গড়া সমাজের লোকেদেরও চুরির দায়ে হাত কাটার জন্য এবং ব্যভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রয়োজন হয়েছিল। অতএব রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে না নিয়ে তারা কিভাবে আল্লাহর এ বিধান গুলো পালন করবেন?
.
.
৩।গণতান্ত্রিক পদ্ধতিঃ
এ আকীদা গ্রহণকারীগণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে
ক্ষমতায় গিয়ে দ্বীন কায়েম করতে চান। সে মতে তারা দেখতে পাচ্ছেন যে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মেজোরিটি পার্সেন্ট ভোটের প্রয়োজন হয়।কাজেই ইসলামকে বাস্তবায়ন করত হলে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে হিন্দু, মুসলিম, নাস্তিক,মুরতাদ সকলেরই সমর্থন নিতে হবে অতএব আল-কুরআনে বর্ণিত সশস্ত্র
জিহাদের পদ্ধতি গ্রহণ করে বাতিল সরকার উৎখাতের প্রচেষ্টা চালানো যাবে না।তাদের নিকট বর্তমান যুগে ভোট যুদ্ধই প্রকৃত
ইসলামী যুদ্ধ এবং এ যুদ্ধ জয়লাভের মাধ্যমেই
ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম করা সম্ভব। এসব মতবাদে যারা বিশ্বাসী তাদের জানা দরকার যে,
এ পদ্ধতিটি আদৌ কোন সুন্নতি পদ্ধতি নয়; বরং
নিঃসন্দেহে এটি একটি কুফরী পদ্ধতি। শিক্ষিত সমাজ অবগত আছেন যে,এ পদ্ধতিটি আল্লাহর
নির্দেশিত বা রাসূল(সাঃ) এর অনুমোদিত নয়;বরং এটা কাফের-মুশরিকদের তৈরী।
.
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম
লিংকনকে এপদ্ধতিটির জনক বলা হয়। তাদের
একটু চিন্তা করা দরকার,কুরআনে বর্ণিত পদ্ধতি
পরিত্যাগ করে কাফের-মুশরিকদের তৈরী পদ্ধতি কিভাবে ইসলাম কায়েমের জন্য সহায়ক
হবে?
অথচ কাফেররা এপদ্ধতিটি এজন্যই তৈরী
করেছে যাতে করে মুসমানদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা চিরতরে বন্ধ করা যায়। কাফেররা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করে কোন দিনই বিজয়ী হতে পারেনি। কারণ মুসলমানগণ যুদ্ধ করে এই
বিশ্বাস নিয়ে যে, এ পথে শহীদ হলে জান্নাত পাওয়া যাবে। আর কাফেররা যুদ্ধ করে এই মন মানসিকতা নিয়ে যে,মরে,গেলে দুনিয়ার ভোগ বিলাস সব কিছুই হারাবে। তাই গবেষণা করে উদ্ভাবন করেছে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার রক্তপাতহীন এক নতুন কৌশল। কাফেররা বুঝতে পারে যে,গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটি মুসলমানদের মাঝে সংক্রামিত করতে পারলে ঈমানদার মুসলমানরা কখন শাসন ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এর ফলে পৃথিবী হতে ইসলামী শাসন বিলীন হয়ে যাবে, আর এটাই শয়তানের কামনা। এজন্য জিন শয়তান এবং মানুষ শয়তান তাদের দেখানো
ভ্রান্তপথগুলো মুমিনদের মানস পটে সুন্দর রুপ দিয়ে স্থাপন করে এবং
সেই পথে কাজ করার প্ররোচনা দেয়। এ
ব্যাপারে আল্লাহ্তাআলা ঘোষণা
করেনঃ
ﻭَﺯَﻳَّﻦَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻬُﻢْ
ﻓَﺼَﺪَّﻫُﻢْ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻓَﻬُﻢْ ﻟَﺎ
ﻳَﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ
‘‘শয়তান তাদের
দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত
করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত করে রেখেছে।অতএব তরা সৎপথ পায়না’’। – (সূরা নামালঃ ২৪)
.
অনুরুপভাবে, কাফের শয়তানরা ভোটের পদ্ধতি উদ্ভাবন করে দ্বীন কায়েমে আগ্রহী
লোকেদেরকে এভাবে বুঝাচ্ছে যে, এই পদ্ধতিতে ধৈর্যের সাথে মেহনত করতে থাক, তবে বিনা রক্তপাতে তোমরাও একদিন ইসলামী শাসন কায়েম করতে পারবে। যেমন নাকি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে জাতীয়তাবাদ,ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইত্যদি মতবাদ কায়েম হয়েছে। কাফেররা তাদের ভোটের পদ্ধতিটি এত সুন্দর করে তুলে ধরার এর একটি কারণ এই যে,তারা এটা ভালো করেই জানে, শয়তান দল সব সময়ই ভারী হবে।
.
সুতুরাং তাদের মত বৃহৎ শয়তানদের ক্ষমতায় আসার জন্য এ পদ্ধটি অত্যন্ত ফলদায়ক। যারা
পরিপূর্ণভাবে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে
চাইবে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে তারা কখন ক্ষমতায় আসতে পারবেনা।
কেননা অধিকাংশ মানুষের কাছে ইসলামী
অনুশাসন পছন্দ হয় না।
তবে হ্যাঁ ইসলামের নামে ও ক্ষমতায় আসা যাবে।
যদি হিকমতের দোহাই দিয়ে ইসলামী
মূল্যবোধকে ছাড় দেওয়া আর দেশীয় তাগুতদের সাথে সামিল হওয়া যায়,তাহলে তাগুতী সংসদে এমপি/মন্ত্রিত্ব ও পাওয়া যাবে। কিন্তু শর্ত এই যে ইংরেজ তাগুতদের বিধানে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে এবং দেশী – বিদেশী কাফির – মুশরিকদেরকে বুঝাতে হবে আমরা মৌলবাদী কট্টরপন্থি নই;
বরং আমরা বিশ্ব গণতন্ত্রায়নের পক্ষে,
তাহলে এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা বৈচিত্র কিছু নয়।কেননা এদেশে ইসলামের নাম নিয়ে
মুসলিম লীগও একদিন ক্ষমতায় এসেছিলো।তারা মুসলমানদেরকে
আলাদা আবাস ভূমির লোভ দেখিয়ে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকারও করেছিলো। কিন্তু তাদের দ্বারা ইসলামী হুকমত প্রতিষ্ঠা হয় নাই।কারণ তারা ইংরেজদের মনঃপুত গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ক্ষমতায় এসেছিল।আজও সেই একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি
হচ্ছে। তাই ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক পন্থায় কোন দল যদি পূর্ণ গরিষ্ঠতাও পায়,তবুও তারা আল্লাহর বিধান কায়েম করতে পারবেনা। কারণ চোরের হাত কাটা গেলে, এগুলো মানবতা বিরোধী আইন। স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রবর্তন করতে চাইলে চলবে, ওটা অ্যাডভোকেটেড শিক্ষা ব্যাবস্থা যা বর্তমান বিশ্বে অচল।সুদভিত্তিক অর্থব্যাবস্থা গ্রহণ না করলে বলবে বিশ্বে তোমরা এক ঘরে হয়ে যাবে, তোমাদের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হবে।রেডিও, টিভি,সিনেমা, পার্লার,
বিপণী বিতান ও রাস্তা-ঘাটে অশ্লীলতা প্রতিরোধে
ইসলামী আইন প্রয়োগ করতে চাইলে বলবে এরা ইসলামের নামে মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। এদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত কর। এরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র বিরোধী কাজ করতে চায়। তখন কি আপনাদের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং,আন্দোলন, হরতাল,অবরোধ হবে না ?
কারণ এসব হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের গণতান্ত্রিক অধিকার। আপনারা কি তখন বলতে পারবেন আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকারের আন্দোলন চলবে না ?
এমতাবস্থায় বিশ্বগণতন্ত্রের মোড়লরা কি ইসলামী হুকমত প্রতষ্ঠা করার জন্য আপনাদের সাহায্য করবে ?
আপনারা কি জানেন না !গণতন্ত্রের
মাধ্যমে তারা এ ষড়যন্ত্র বা বিশ্বায়নের নামে পৃথিবী হতে ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলতে চায় এবং আমাদেরকে তাদের গণতন্ত্রের জালে
আবদ্ধ করে তারা বিশ্বের সুপার পাওয়ার
হতে চায়। আমরা কি আল্লাহর নির্দেশিত জিহাদ-কিতালের রাজনীতি ছেড়ে ইসলামের নামে
গণতন্ত্রের বুর্যূয়াদেরকে সুপার পাওয়ার হওয়ার সুযোগ করে দেব ?
মুসলমানগণ ভারতবর্ষ থেকে
ইংরেজ শাসন অবসান ঘটিয়ে তদস্থলে
ইকামতে দ্বীনের জন্য জিহাদ অবতারণা করে।
বিভিন্ন সময়ে যার নেতৃত্ব দেন শাহ
ওয়ালিউল্লাহ, সাইয়েদ
আহমেদ ব্রেলেভী, শাহ ইসমাইল, এনায়েত আলি,
হাফেজ তিতুমির (রহঃ) আরও অনেকে। অবশেষে ইংরেজরা যখন বুঝতে পারে যে, তাদের আর এদেশে শাসন করা সম্ভব হবে না, তখন মুসলমানদের মাঝে গণতন্ত্রের বীজ বপন করতে লাগল, যেন তারা চলে গেলেও তাদের রচিত সংবিধান এদেশে প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ উদ্দেশ্যে কিছু সুবিধাবদী মুসলমানকে তাদের অনুসারী বানায়। যারা জিহাদ কিতাল ধারা বন্ধ রেখে এদেশে গণতন্ত্রের ধারা চালু করে। একথা
ভাবতেও অবাক লাগে তারা মুসলমান হয়ে কিভাবে কাফেরদের রচিত চক্রান্তের জালে পা দিল।অথচ আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে অধিকাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করা থেকে বিশেষ ভাবে সর্তক করেছেনঃ
ﻭَﺇِﻥْ ﺗُﻄِﻊْ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ
ﻳُﻀِﻠُّﻮﻙَ ﻋَﻦْ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
‘‘যদি তুমি পৃথিবীর
অধিকাংশের মত অনুসরন কর, তবে তারা তোমাদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিপথগামী করে
দেবে।’’- (সূরা আনআমঃ১১৬)
.
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যারা ইসলাম কায়েম
করতে চান, তারা যদি গভির দৃষ্টি দিয়ে কুরআন অধ্যায়ন করে তবে দেখতে পাবেন,অধিকাংশ লোকই সত্যকে গ্রহণ করতে চাই
না। ﻟَﻘَﺪْ ﺟِﺌْﻨَﺎﻛُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ
ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﺃَﻛْﺜَﺮَﻛُﻢْ ﻟِﻠْﺤَﻖِّ ﻛَﺎﺭِﻫُﻮﻥَ
‘‘আমি তোমাদের কাছে
সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছি কিন্তু তোমাদের অধিকাংশ লোকই সত্যকে অপছন্দ করে।’’ –
(সূরা যুখরুফঃ ৭৮)
.
এরুপ কথা শুধু দু’ এক জায়গায় নয় বরং কুরআন মাজীদে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষের পথ ভ্রষ্টতার
দলীল পাওয়া যায়।
ﻭَﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﻓَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ ‘‘তারা অধিকাংশই ফাসেক(সূরা তাওবাঃ ৮) ﻭَﻣَﺎ
ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻫُﻢْ
ﻣُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ ‘‘অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর উপর ঈমান আনে, অথচ সাথে
সাথে শিরক্ ও করে।’’ –(সূরা ইউসুফঃ ১০৬) ﺑَﻞْ
ﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ﺍﻟْﺤَﻖَّ ﻓَﻬُﻢْ
ﻣُﻌْﺮِﺿُﻮﻥَ ‘‘বরং তাদের
অধিকাংশই সত্য জানে না ; অতএব তারা
টালবাহানা করে।’’- (সূরা আম্বিয়াঃ ২৪)
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺫَﺭَﺃْﻧَﺎ ﻟِﺠَﻬَﻨَّﻢَ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﺠِﻦِّ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧْﺲِ ﻟَﻬُﻢْ ﻗُﻠُﻮﺏٌ ﻟَﺎ
ﻳَﻔْﻘَﻬُﻮﻥَ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﺃَﻋْﻴُﻦٌ ﻟَﺎ
ﻳُﺒْﺼِﺮُﻭﻥَ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﺁَﺫَﺍﻥٌ ﻟَﺎ
ﻳَﺴْﻤَﻌُﻮﻥَ ﺑِﻬَﺎ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻛَﺎﻟْﺄَﻧْﻌَﺎﻡِ ﺑَﻞْ
ﻫُﻢْ ﺃَﺿَﻞُّ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻐَﺎﻓِﻠُﻮﻥَ
‘‘অধিকাংশ জিন ও
ইনসানকে আমি জাহান্নামের জন্য তৈরী করেছি। তাদের অন্তর রয়েছে তার দ্বারা বিবেচনা করেনা, তাদের চোখ রয়েছে তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো, বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হলো গাফেল।’’
– (সূরা আরাফঃ ১৭৯)
.
তাহলে যদি অধিকাংশ লোকই নির্বোধ হওয়ার
কারণে ইসলামী শাসনকে পছন্দ না করে,
তবে গণতান্ত্রিক পন্থায় কি ভাবে দ্বীন কায়েম হবে?
তর্কের খাতিরে যদি স্বীকার করাও যায় যে, অধিকাংশের সমর্থন লাভ করে ক্ষমতায় গিয়ে
দ্বীন কায়েম করা সম্ভব হবে, তারপরও গণতান্ত্রিক পন্থায় দ্বীন কায়েম করার অপরাধে আল্লাহর নিকট অবশ্যই জবাবদিহি করতে
হবে। কারণ আল্লাহ্ তো দ্বীন কায়েমের জন্য
একটি পদ্ধতি দিয়েছেন,তা পরিত্যাগ করে মানব রচিত কোন পদ্ধতিতে দ্বীন কায়েম করার অনুমতি তিনি কাওকে দেননি। অথএব কাফেরের তৈরী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়।ভোটের মাধ্যমে দ্বীন কায়েমে আগ্রহী লোকেরা কাফের-মুশরিকদের চক্রান্ত বুঝতে পারেনি, আসলে কাফেররা মুমিনদেরকে নিরস্ত্র করে তারা অস্ত্রে সমৃদ্ধ হতে চায়,যাতে একযোগে আক্রমন চালিয়ে দুনিয়া হতে মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে
মহান আল্লাহ্ আমাদের সর্তক করে দিয়ে বলেনঃ
ﻭَﺩَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻟَﻮْ ﺗَﻐْﻔُﻠُﻮﻥَ ﻋَﻦْ
ﺃَﺳْﻠِﺤَﺘِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﺘِﻌَﺘِﻜُﻢْ ﻓَﻴَﻤِﻴﻠُﻮﻥَ
ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻣَﻴْﻠَﺔً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً
‘‘কাফেররা চায় তোমরা
তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র মালসামান হতে গাফেল
থাক, যাতে (অসর্তক মুর্হুতে) তারা একযোগে তোমাদের উপর আক্রমন করতে পারে।’’
– (সূরা নিসাঃ ১০২)
.
দ্বীন কায়েমের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রশিক্ষন নিলেই মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থি,মৌলবাদী অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সশস্ত্র জিহাদ করেছেন এজন্য কাফেররা তাঁকেও সন্ত্রসী বলেছে। একবার
বিশেষ ভাবে ভেবে দেখুন! মুমিনদের অস্ত্র ও
প্রশিক্ষন না থাকলে রাষ্ট্র ক্ষমতা পেলেও তারা কি সে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে ?
দেশী-বিদেশী ইসলামী বিরোধী শক্তি আক্রমন করে মুহূর্তের মধ্যেই সেই ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবে।কিন্তু মুমিনরা প্রশিক্ষন নিয়ে অস্ত্রে সজ্জিত থাকলে তারা ঈমান ও রাষ্ট্র হেফাজতে সশস্ত্র ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে।
তাতে হয় শহীদ হবে নয়ত বিজয়ীর বেশে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন
কায়েম অক্ষুন্ন রাখতে পারবে। আর এই দ্বীন কায়েমের বিষয়টি জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা,
চাওয়া-না চাওয়ার উপর নির্ভর করে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্তাআলা বলেনঃ
ﺃَﻓَﻐَﻲْﺭَ ﺩِﻳﻦِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻪُ
ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ
ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﻭَﻛَﺮْﻫًﺎ
‘‘তারা কি আল্লাহর
দেওয়া জীবন ব্যাবস্থার পরিবর্তে অন্য জীবন
ব্যবস্থা তালাশ করছে ? অথচ আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক সব তাঁরই অনুগত’’। – (সূরা ইমরানঃ৮৩)
.
আসমান ও জমিনে সবই আল্লাহ্তাআলার অনুগত হলেও গণতন্ত্রের
মাধ্যমে দ্বীন কায়েমে আগ্রহী লোকেরা তাঁর অনুগত হতে পারছেনা।
কারণ তারা আল্লাহর দেওয়া পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।যার কারনে তারা কাফেরদের তৈরীকৃত
সংবিধান অক্ষুন্ন রাখার জন্য কুফরী বাক্য উচ্চারণ করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। এ প্রসঙ্গে
আল্লাহ্তাআলা বলেনঃ
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻛَﻠِﻤَﺔَ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ ﻭَﻛَﻔَﺮُﻭﺍ
ﺑَﻌْﺪَ ﺇِﺳْﻠَﺎﻣِﻬِﻢْ
‘‘অথচ নিঃসন্দেহে তারা
কুফরী বাক্য বলেছে
এবং মুসলমান হবার পর
কুফরী করেছে।’’ – (সূরা তাওবাঃ ৭৪)
.
তাই দেখা যাচ্ছে বর্তমানে এমপি ও মন্ত্রীবৃন্দ সংসদে গিয়ে মানব রচিত সংবিধান বাস্তবায়নের শপথ বাক্য উচ্চারণ করে কাফেরে পরিণত হচ্ছে।
.
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি কুফরী বাক্য উচ্চারণ করল অথবা কুফরী কাজ করল তজ্জন্য যে কাফের পরিণত হলো,যদিও একথা বা কাজের দ্বারা তার কাফের
হওয়ার উদ্দেশ্য না থাকে। কেননা কেহই কাফের হওয়ার ইচ্ছা পোষন করে না, তবে আল্লাহ্ যাকে চান।’’-
(‘শরীয়তের দৃষ্টিতে অজ্ঞতার দরুন ওজর’
নামক গ্রন্থের ১৫৬ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য প্রকাশনায়ঃ দারুল হামাযী রিয়াদ, সৌদি আরব।)
.
অতএব যে ব্যক্তি দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মানব রচিত সংবিধান বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ
করল, সে ব্যক্তি সুস্পষ্ট কুফরী করল। এরপর ঐ
বক্তি যদি তার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর নিকট তওবা করে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় এবং সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহর আইনের বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়, তবে অল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করতে পারেন।কিন্তু তা না করে সংসদ হিসেবে সে দায়িত্ব গ্রহণ করল এবং হিকমতের দোহাই দিয়ে মানব রচিত সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করল, এর ফলে র্শিক করল অর্থাৎ আল্লাহর শাসন কর্তৃত্বে মানুষের শাসন শরীক কর। অথচ আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻙُ ﻓِﻲ ﺣُﻜْﻤِﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ
‘‘আল্লাহ্ তার শাসন
কর্তৃত্বে কাউকে শরীক করে না।’’ – (সূরা
কাহাফঃ ২৬)
.
গণতন্ত্রের পক্ষে দলীল দিতে গিয়ে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ওমর, ওসমান ও আলী (রাঃ) – এর আমিরুল মু’মিনিন নির্বাচন পদ্ধতির প্রসঙ্গ টানেন। অথচ তাঁরা আমির নির্বচিত হয়েছিলেন কয়েকজন তাকওয়া সম্পন্ন ঈমানদারের পরামর্শের (শূরার) ভিত্তিতে।গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে
শুধু কয়েকজন ঈমানদারের ভোটে নেতা নির্বাচন হয় না;
বরং এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে জাতি,ধর্ম নির্বিশেষে সকলের নিকট ভোট চাইতে হবে কিন্তু মুসলমানদের নেতা নির্বচনে কোন অমুসলিম
রায় দিতে পারে না।অথচ গণতান্ত্রিক নিয়মে
মুসলিম-অমুসলিম, ভলো-মন্দ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত,ঈমানদার-বেঈমান,বিবেকবান-বোকাসহ দেশের সকল নাগরিকেই
ভোটাধিকার রয়েছে এবং এদের সবার ভোটের
মান সমান। তাহলে গণতন্ত্রের সাথে ওমর,ওসমান ও আলী (রাঃ) –এর আমির নির্বাচিত হওয়ার সামঞ্জস্য কিভাবে হল। তাছাড়া আমাদের এখন আমির নির্বাচনের প্রেক্ষাপট নয়; বরং এদেশে এখন দ্বীন কায়েমের প্রেক্ষাপট। দ্বীন
কায়েমের পদ্ধতি ও আমির নির্বাচনের
পদ্ধতি কখনও এক নয়।দ্বীন কায়েমের পদ্ধতি
হচ্ছে কিতাল (সশস্ত্র জিহাদ) এবং আমির
নির্বাচনের পদ্ধতি হচ্ছে মুত্তাকীদের দ্বারা
গঠিত সূরায়ী পদ্ধতি।
.
সুতুরাং এখন দেখতে হবে আমাদের দেশে দ্বীন
কায়েম আছে কি না,যদি তা না থাকে
তাহলে আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূল (সাঃ) এর তারীকা অনুযায়ী কিতালী পদ্ধতিতে এ দেশে দ্বীন কায়েম করতে হবে। অতএব আমরা একথা বলছিনা যে,ইসলামী দলের আমির নির্বাচন করার জন্য কিতাল শুরু করুন; বরং একথা বলছি যে, শুরায়ী পদ্ধতিতে আমীর নির্বাচন করে তারই নেতৃত্বে দ্বীন কায়েমের জন্য কিতাল করুন এবং এ কিতাল হচ্ছে দ্বীন কায়েমের একমাত্র পদ্ধতি। কোন আমল কবুল হওয়র শর্ত হলো তা আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূল (সাঃ)-এর তারীকা অনুযায়ী হতে হবে, তা না হলে তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হবে।কাজেই দ্বীন কায়েম করতে হলে তা আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূল (সাঃ)-এর তারীকা অনুযায়ী করতে হবে। তা না করে দ্বীন কায়েমের জন্য অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে আল্লাহর নিকট এ প্রচেষ্টার এক কানাকড়ি মূল্য ও পাওয়া যাবে না; বরং তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ
ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺒْﻄِﻠُﻮﺍ
ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻜُﻢْ
‘‘হে মুমিনগণ আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ)-এর অনুসরন কর এর (এরুপ না করে)তোমাদের আমল গুলোকে বিনষ্ট কর না।’’
– (সূরা মুহাম্মদঃ ৩৩)
.
আল্লাহর রাসূল (সাঃ)বলেনঃ ‘‘যে কর্মের ব্যাপারে আমাদের(কুরআন-হাদীসে)নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।’’
–(সহীহ বুখারী ২য় খন্ড ১৯২ পৃঃ)
.
কোন কোন দলের নেতাগণ বলেন-গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে কুফরী পদ্ধতি হিসাবেই জানি কিন্তু আমরা তো এ পদ্ধতি কিছু দিনের জন্য গ্রহণ করছি। এখন বিবেকবান ঈমানদারদের নিকট প্রশ্ন, স্বেচ্ছায় জেনে বুঝে কিছু সময়ের জন্য কুফরী করা কি জায়েয আছে?
আবার কেহ এ কুফরী পদ্ধতিকে
হিকমত হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। তাই তারা কিতালকে ফরয জেনেও তা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় দ্বীন কায়েম করতে চাচ্ছেন এবং হিকমতের নাম করে কিতালের প্রশিক্ষণ নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। তাই সশস্ত্র জিহাদের প্রশিক্ষণ পরিত্যাগ করা কি হিকমত ?
নাকি প্রকাশ্যে সম্ভাব না হলে গোপনে প্রশিক্ষণ
নেওয়া হিকমত ?
কোন বির্ধমী এলাকায় বসবাসকরী মুসলমানের
জন্য নামাজ পড়া যদি বিপজ্জনক হয় তাহলে তা
পরিত্যাগ করা হিকমত ?
নাকি প্রকাশ্যে পড়তে না পারলে গোপনে পড়া
হিকমত ?
যারা এধরণের হিকমতের কথা বলছেন
তাদের নেতা কর্মীগণ কি সশস্ত্র জিহাদের
প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ?
বিগত কয়েক যুগ তাদের কতজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত
মুজাহিদ তৈরী হয়েছে ?
তারা কি রাসূল (সাঃ)-এর মতো দ্বীন কায়েমের
জন্য সশস্ত্র জিহাদ করে শহীদ হতে চান ?
‘‘রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন- ঐ শত্তার শপথ যার হাতে আমার জীবন।আমি কামনা করি আল্লাহর রাস্তায় সশস্ত্র জিহাদ করতে করতে যেন শহীদ হয়ে যাই। অতঃপর আমাকে জীবিত করা হয়,পুনরায় যেন শহীদ হয়ে যাই। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ হয়ে যাই।
(সহীহ বুখারী,কিতাবুল জিহাদ)
.
রাসূল(সাঃ) বলেন যে ভাবে দ্বীন কায়েমের জন্য সশস্ত্র জিহাদ করেছেন এবং এ পথেই বার বার শহীদ হতে চেয়েছেন।সেই পথ পরিত্যাগ করে
যারা গণতন্ত্রের পথ গহণ করেছেন এবং এ পথেই যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা নিজেরাও সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও গোমরাহীতে ঠেলে দিচ্ছেন।
.
.
.
৪।গণ-অভ্যুত্থানঃ
অনেকে মনে করেন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য গণ-অভ্যুত্থান শরীয়ত সম্মত। মিছিল-মিটিং করে, আইন অমান্য করে,গুলির মুখে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে যে অভ্যুত্থান ঘটবে ইসলাম কায়েমের জন্য হবে
পুরোপুরি উপযুক্ত।জানিনা যারা খাঁটি ইসলামের পক্ষে এরুপ গণ-অভ্যুত্থানের আকাশ কুসুম কল্পনা করেন,মস্তিস্কের দিক থেকে তারা কতটা সুস্থ রয়েছেন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই যদি ইসলাম
কায়েম সম্ভব না হয়, তবে গণ-অভ্যুত্থান পদ্ধতিতে
কি ভাবে ইসলাম কায়েম হবে ?
.
স্বপ্ন দেখতে কেউ নিষেধ করতে পারে না,
তবে জেগে উঠলে স্বপ্নের কোন দৃশ্যপটই আর বাস্তব থাকে না।গণ-অভুত্থান ঘটানোর স্বপ্নের ঘোর কেটে গেলে দেখতে পাবেন বাস্তবতা কত কঠিন কারণ প্রকৃত দ্বীন কায়েম করার জন্য ফাসেক-বিদা’তি ও মুনাফিক-মুরতাদরা কখন গণ-অভ্যুত্থান করতে পারে না। যে দ্বীন কায়েম হলে শিরক-বিদ্আ’ত , গান-বজনা, মদ-জুয়া, সুদ-ঘুষ,বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনা,অশ্লীলতা-নগ্নতা,বিজ্ঞাপনের নামে নারীভোগের নানা কৌশল ইত্যাদি সব বানচাল হয়ে যাবে। সেই দ্বীন কায়েমের জন্য তারা কখনো গণ-অভুত্থান করতে পারে না । তবে জাতীয় চেতনায় বা সাম্প্রদায়িক কর্তৃত্বের জন্য অথবা নিয়ম-শৃঙ্খলা ভাঙ্গার জন্য গণ-অভ্যুত্থান ঘটতে পারে।
.
যেমন নাকি ইরানে শীয়ারা সুন্নীদের
বিরুদ্ধে ঘটিয়েছিল। যার ফলে সেখানে সহীহ আমল আক্বীদা ধ্বংস হয়ে শীয়াঈ বাতিল আক্বীদার ভিত্তি মজবুত হয়েছে। তারা সকল উম্মাহাতুল মু’মিনিন ও তিন খলিফাসহ অধিকাংশ সাহাবীদের কাফের অ্যাখ্যা দিয়েছে এবং কুরআনের পরিবর্তন সাধন, মুতা
বিবাহ বৈধকরণ ইত্যদি ইসলাম ধ্বংসকারী মতবাদ চালু করেছে।
.
তাছাড়া এরুপ কোন নিরস্ত্র গণ-অভ্যুত্থানের
দ্বারা দ্বীন কায়েমের পক্ষে ইসলামে কোন দলীল নেই। শরীয়ত সম্মত ভাবে প্রশিক্ষণ না নিয়ে, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত না হয়ে বিনা অস্ত্রে হৈ-হুল্লোড় করে গণ-অভ্যুত্থানের নির্দেশ আল্লাহ্ দেন নাই।অভ্যুত্থান যদি করতেই হয়, তাহলে একদল যুবকের আমল আকীদা পরিশুদ্ধ করে তাদের দ্বারা সশস্ত্র অভ্যুত্থান করতে হবে।যে ভাবে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) একদল সাহাবী তৈরী করে তাদের দ্বারা সশস্ত্র পন্থায় দ্বীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর এ পদ্ধতিকে কুরআনের ভাষায় ‘কিতাল’ বলা হয়।
দেশের প্রতিটি শহর-বন্দর, অলিতে-গলিতে ও
গ্রামে-গঞ্জে র্নিভীক মুজাহিদীন গ্রুপ তৈরী করতে হবে। যাদের কাছে থাকবে উপযোগী অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। তারা নিজেরা ইসলামের পূর্ণ অনুসারী হবে এবং সমাজ হতে ইসলাম ধ্বংসকারী মুরতাদকে খতম করে সমাজের দায়িত্বভার হাতে তুলে নেবে।এভাবে অসি ও পেশী
শক্তির বলে বলিয়ান হয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা হাতে নিয়ে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করবে। এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে হয়তো অধিক সংখ্যক ব্যক্তিদের
পাওয়া যাবে না। কারণ
ইসলামের চিরদিন অল্প সংখ্যক লোকই নিবেদিত
থাকে। ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে যেমন
অল্প সংখ্যকের কুরবানীর দ্বারা দ্বীন
কায়েম হয়েছিল, শেষ যুগেও অল্প সংখ্যক
ঈমানদারের আত্মত্যাগের দ্বারাই
দ্বীন কায়েম হবে,ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেনঃ
‘‘অল্প সংখ্যকের দ্বারাই ইসলামের সূচনা হয়েছিল।অল্প সংখ্যকের দ্বারাই আবার ইসলাম প্রতিষ্টিত হবে। তাই সৌভাগ্য অল্প সংখ্যকদের জন্যই।’’ –
(সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড ৮৪ পৃঃ)
.
অতএব আমাদের মনে রাখতে হবে সশস্ত্র ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে জিহাদী কাফেলা তৈরী করা বাদ দিয়ে গণতন্ত্র,গণ-অভ্যুত্থানের মতো
এসব পদ্ধতি দ্বারা ইসলাম কায়েমের জন্য
আমরা যেন ব্যাস্ত হয়ে না যাই এবং কুরআনের দেখানো রাস্তা ছাড়া অন্য কোন চাকচিক্যময় পথের উজ্জলতায় যেন মোহগ্রস্থ হয়ে না পড়ি।
(আমিন)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top