রবিবার, ২০ মার্চ, ২০১৬

শাইখ আলবানীর সংশয়ের জবাব জিহাদের বিরুদ্ধে

কোন মন্তব্য নেই:

"শায়খ আলবানি রহ: এর একটি মারাত্মক সংশয়ের জবাব" -
শায়খ আব্দুল কাদির বিন আব্দুল আজিজ
(ফা আ)
.
আলোচ্য অংশটূকু শায়খুল মুজাহিদ
আব্দুল কাদির বিন আব্দুল আজিজ
(ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) লিখিত একটি
কিতাবের অংশবিশেষ। এই বইটি
অনুবাদ করেছেন মাওলানা ইবনে
মাহবুব (দা বা)।
.
শায়খ আলবানি (রহ)’র  বলেছিলেন,
“এই আলোচনায় শাসকের জুলুম
থেকে নিস্কৃতি লাভের পথ বাতলে
দেয়া হয়েছে, যারা মূলত: আমাদের
কর্মেরই প্রতিবিম্ব ও আমাদের
কর্মের ভাষায়ই কথা বলে।সেই
মুক্তির পথ হচ্ছে, মুসলমানরা তাদের
রবের নিকট তাওবা করবে,
নিজেদের আকীদা সংশোধন করবে,
নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবার-
পরিজনকে বিশুদ্ধ ইসলামের পথে
পরিচালিত করবে। ”
.
সম্মানিত শায়খের এই বাক্যের উপর
ভিত্তি করেই  ঘরে বসে থাকা
লোকেরা নিজেদের মানহাজের
শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে থাকে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ আহলে
হাদিস, বিল্লাল ফিলিপস-ইসমাইল
কামদার-ইয়াসির কাজি সহ
পশ্চিমের বিভিন্ন নামধারী
সালাফি সংগঠন ও ‘দা’ঈ’,
জাজিরাতুল আরবের সৌদি
তাগুতের পদলেহী আলিম,
গণতন্ত্রমনা ইখওয়ানি-জামাতি সহ
অনেকেই  বিচ্ছিন্ন এই বক্তব্যকে
ওহির ন্যায় আকড়ে ধরে আছে এবং
একমাত্র একেই সঠিক মানহাজ বলে
দাবী করছে (লা হাওলা ওয়ালা
কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) । শায়খ
আলবানি (রহ)’র এই ইজতিহাদ
কুর’আন-সুন্নাহ ও সালাফদের
ইজমাবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও অন্ধ
মুকাল্লিদগণ একে আকড়ে আছে
শুধুমাত্র নিজেদের মাসলাহার
প্রতি লক্ষ্য রেখে। ইনশা’আল্লাহ
শায়খ আব্দুল কাদির (ফাক্কাল্লাহু
আসরাহ)’র এই সংশয় নিরসন  ও সঠিক
মানহাজের ব্যপারে সালাফদের
ব্যখ্যাকৃত মতের বিশ্লেষণ তাদের
জন্য যথেষ্ট হবে।
.
হে আমার ভাইয়েরা ! নোটটির
বক্তব্য সম্ভাব্য সকল উপায়ে ছড়িয়ে
দিয়ে উম্মাহ’র মাঝে সঠিক
মানহাজের দাওয়াহ ছড়িয়ে দিন।
সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার আগে
সংক্ষেপে এই লেখাটির পরিশিষ্টটি
আগে পড়ে নিন (এটি শায়খ আলবানি
(রহ)'র জীবদ্দশাতেই শায়খ আব্দুল
কাদির (ফা আ) লিখেছিলেন)
-----------------------
যে বিষয়টি শায়খের এ সংশয়টির
ভয়াবহতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করে
দেয়, তা হচ্ছে, বর্তমানে এ
সংশয়টিই সত্ত্বাগত ভাবে একটি
দ্বীন কায়েমের মাজহাব হয়ে
গেছে। বহু মুসলিম দেশে যার
অনুসারীও রয়েছে। এখন তো এ
সংশয়টিই যে কোন জিহাদ
বিরাগী ও দুনিয়ামুখী লোকের
দলীল হয়ে গেছে। আবার এর কোন
কোন অনুসারীরা তাগুতদের সাথে
সমঝোতা করে শিরকী
পার্লামেন্টেও অংশগ্রহণ করছে।
তাহলে এটা কোন তারবিয়াহ, যা
প্রথমেই তাগুতকে অস্বীকার
করার কথা বলে না?
অথচ আল্লাহ তায়ালা
বলেছেন,-
ﻓَﻤَﻦْ ﻳَﻜْﻔُﺮْ ﺑِﺎﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕِ ﻭَﻳُﺆْﻣِﻦْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪِ
ﺍﺳْﺘَﻤْﺴَﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌُﺮْﻭَﺓِ
ﺍﻟْﻮُﺛْﻘَﻰ
“এরপর যে ব্যক্তি তাগুতকে
অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি
ঈমান আনবে সে এক মজবুত হাতল
আকড়ে ধরল”। (বাকারা:২৫৬)
আয়াতে ইতিবাচকের পূর্বে
নেতিবাচক বিষয় আনা হয়েছে,
যেমন কালিমায়ে শাহাদতে
রয়েছে।
.
এটা কোন্ তারবিয়াহ,
কাফেরদের থেকে সম্পর্ক
ছিন্নের মাধ্যমে যার সূচনা হয়
না? অথচ এটাই ইবরাহীম আ: এর
আদর্শ।
এটা কোন তারবিয়াহ, যার ফলে
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের
নিষেধ বাস্তবায়িত হয় না? যা এই
উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি।
এই সমস্ত সংশয়ের ক্ষেত্রে
শায়েখের অনেক অনুসারীও জুটে
গেছে, যারা সালাফী বলে
পরিচিত। (যদিও এ নামের উপর
আমাদের আপত্তি রয়েছে।)
সালাফীয়া হতে হবে দলীল
অনুসন্ধান ও অনুসরণের উপর
ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত একটি
ধারা। সুতরাং সালাফীয়া একটি
ধারা, এটা কোন মাযহাব নয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﺃَﺗَﺄْﻣُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﺎﻟْﺒِﺮِّ ﻭَﺗَﻨْﺴَﻮْﻥَ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ
ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﺗَﺘْﻠُﻮﻥَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺗَﻌْﻘِﻠُﻮﻥ
“তোমরা কি অন্য লোকদেরকে পুণ্যের
আদেশ কর আর নিজেদেরকে ভুলে
যাও, অথচ তোমরা কিতাব
তিলাওয়াতও কর। তোমরা কি এতটুকুও
বুঝ না”। (বাকারা:৪৪)
আমি পূর্বেও বলেছি, এখানে
আবার বলছি, এই ফিতনাটি তথা
মুরতাদ শাসকদের ফেতনা উম্মতের
জন্য খল্কে কুরআনের ফেতনার
চেয়েও ভয়াবহ।
.
শায়খ আলবানীর মত ব্যক্তিত্ব
থেকে এই মাসআলায় এই ধরনের
বিচ্যুতিগুলো হওয়া শোভনীয় ছিল
না। আশা করি শায়খ নিজেই
নিজের
‘’দায়িত্বমুক্তি ও অনুসারীদের
রক্ষার জন্য এই মারাত্মক
সংশয়ের ব্যাপারে কোন কথা
বলে দিবেন। সুন্নাতে নববীয়ার
ক্ষেত্রে আমরা শায়খের অবদান
ও পরিশ্রমকে অস্বীকার করি না।
আর এই সংশয়টিও তার মর্যাদায়
কোনরুপ ঘাটতি করবে না। কেননা
যে কোন দক্ষ সওয়ারীরও পদস্খলন
হয়ে যায়।"
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ
ﻋِﻨْﺪِ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮَﺟَﺪُﻭﺍ ﻓِﻴﻪِ ﺍﺧْﺘِﻠَﺎﻓًﺎ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ
“এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য
কারও পক্ষ হতে হত, তবে এর মধ্যে
বহু অসঙ্গতি পেত”। (নিসা:৮২)
আমরা মহান আল্লাহর দরবারে
প্রার্থনা করি, তিনি
আমাদেরকে ও তাকে নেক
আমলের দ্বারা পরিসমাপ্তি দান
করুন! আমীন!
==================
শায়খ আলবানি (রহ)'র মারাত্মক
সংশয় ও তার জবাব শুরু হচ্ছে এখান
থেকে -
১৩৯৮ হিজরীতে মাকতাবাতুল
ইসলামী কর্তৃক প্রকাশিত শায়খ
আলবানীর তাহকীক ও শরাহকৃত
‘আল আকীদাতুত ত্বহাবী’ এর
৪৭নং পৃষ্ঠায় রয়েছে- মূল
কিতাবের বিবরণ এমন- ‘আমরা
আমাদের শাসকরা যদি জুলুমও
করে তথাপি তাদের বিরুদ্ধে বের
হওয়া বৈধ মনে করি না, তাদের
উপর বদ দোয়া করি না, তাদের
আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেই
না’.....।
.
শায়খ আলবানী তার পার্শ্ব
টিকায় বলেন, ব্যাখ্যাকার
এখানে অনেকগুলো হাদীস
উল্লেখ করেছেন, যেগুলো তার
কিতাবে উৎসসহ দেয়া আছে।
অতপর তিনি বলেন (অর্থাৎ
ব্যাখ্যাকার), “শাসকরা জুলুম করা
সত্বেও তাদের আনুগত্য আব্যশ্যক
হওয়ার কারণ হচ্ছে, তাদের আনুগত্য
থেকে বের হয়ে গেলে এমন বিশৃংখলা
সৃষ্টি হয়, যা তাদের জুলুম থেকে বহুগুণ
বেশী। বরং তাদের জুলুম সহ্য করে
থাকলে নিজেদের গুনাহ মার্জনা হয়।
কেননা আল্লাহ তায়ালা আমাদের বদ
আমলের কারণেই আমাদের উপর
তাদেরকে চাপিয়ে দিয়েছেন। কর্ম
যেমন, বদলা তো তেমনই হয়। সুতরাং
আমাদেরকে আত্মসংশোধন,
তারবিয়াত ও ইস্তিগফারে অধিক
আত্মনিয়োগ করতে হবে। আল্লাহ
তায়ালা বলেন, ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻧُﻮَﻟِّﻲ ﺑَﻌْﺾَ
ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻜْﺴِﺒُﻮﻥَ “এভাবেই
আমি জালেমদের কতককে কতকের
উপর তাদের কৃতকর্মের কারণে
আধিপত্য দান করে থাকি।(আনআম:১২৯)
.
সুতরাং প্রজারা শাসকের জুলুম থেকে মুক্তি পেতে
চাইলে তারা যেন জুলুম ছেড়ে দেয়”।
পূর্বোক্ত আলোচনায় ব্যাখ্যাকার
বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে, ইবনে
আবিল ইজ্জ আলহানাফী রা: প্রতি,
যিনি ‘শরহে আকীদাতুত ত্বহাবী’
কিতাবের রচয়িতা। তার পূর্বোক্ত
কথা তার শরাহের মধ্যে বিদ্যমান
রয়েছে। (প্রকাশনায় আল-
মাকতাবাতুল ইসলামী-১৪০৩ হিজরী,পৃ.৪৩১)
.
শায়খ আলবানী তার কথা
সংক্ষিপ্ত করেছেন। ব্যাখ্যকার
তারবিয়াত শব্দটি উল্লেখ করেননি,
তার স্থানে তওবাহ শব্দটি
উল্লেখিত হয়েছে।
এরপর শায়খ আলবানী
ব্যাখ্যাকারের কথার সাথে
সংযোজন করে বলেন- “এই
আলোচনায় শাসকের জুলুম থেকে
নিস্কৃতি লাভের পথ বাতলে দেয়া
হয়েছে, যারা মূলত: আমাদের কর্মেরই
প্রতিবিম্ব ও আমাদের কর্মের
ভাষায়ই কথা বলে।
.
সেই মুক্তির পথ হচ্ছে, মুসলমানরা
তাদের রবের নিকট তাওবা করবে,
নিজেদের আকীদা সংশোধন করবে,
নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবার-
পরিজনকে বিশুদ্ধ ইসলামের পথে
পরিচালিত করবে। তথা আল্লাহ
তায়ালার এই বাণীর উপর আমল করবে-
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﻐَﻴِّﺮُ ﻣَﺎ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻐَﻴِّﺮُﻭﺍ ﻣَﺎ
ﺑِﺄَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ “নিশ্চিত জেন, আল্লাহ কোনও
জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত
পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা
নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন
করে”। (রা’দ:১১)
.
সাম্প্রতিক কালের জনৈক দায়ী
এর দিকে ইঙ্গত করেই বলেছেন,
“তোমরা তোমাদের অন্তরে ইসলামী
সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা কর, তাহলে
পৃথিবীতেও তোমাদের সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠত হবে”। কতিপয় লোক
যেটাকে মুক্তির পথ মনে করে
সেটা মুক্তির পথ নয়, অথার্ৎ
সামরিক বিপ্লবের মাধ্যমে
স্বসস্ত্র বিদ্রোহ করা। এটা নব্য
যোগের একটি আবিস্কার এবং
শরয়ী বর্ণনা সমূহেরও বিরোধী।
কেননা শরীয়ত আত্মসংশোধনের
নির্দেশ দেয়।
.
সুতরাং কোন মূলনীতির উপর
ভিত্তি করতে হলে প্রথমে উক্ত
মূলনীতিটির সংশোধন প্রয়োজন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ﻭَﻟَﻴَﻨْﺼُﺮَﻥَّ
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻳَﻨْﺼُﺮُﻩُ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻘَﻮِﻱٌّ ﻋَﺰِﻳﺰ
“আল্লাহ অবশ্যই তাদের সাহায্য
করবেন, যারা তার (দ্বীনের)
সাহায্য করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ
সর্বশক্তিমান, পরক্রমশালী”।(হজ্ব:৪০)
.
আসলে শায়খের এই
সংযোজনটিতে মারাত্মক
বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তি রয়েছে।
শায়খ ও শায়খের চেয়ে অনেক
নিম্ন ইল্মের লোকের পক্ষেও
এটা শোভনীয় ছিল না। কথাটি
একটু বিস্তারিত আলোচনা
করছি:-
.
.
১। (মূল কিতাবের) তৃতীয় অধ্যায়ে
তায়েফায়ে মানসুরার (সাহায্য
প্রাপ্ত দলের) আবশ্যকীয় বৈশিষ্ঠ
সমূহের মধ্য ঐসমস্ত মুরতাদ
শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদের
কথাও উল্লেখ করেছি, যারা
মুসলিম দেশগুলোতে শরীয়ত
বিরোধী শাসন পরিচালনা করে।
সেখানে এই সমস্ত শাসকদের
কাফের হওয়ার ব্যাপারে শায়খ
আহমদ শাকের, মুহা. হামেদ আল
ফেকহী ও মুহা. ইবনে ইবরাহীম
আলে শায়খের ফাতওয়া উল্লেখ
করেছি।
শায়খ আহমাদ শাকেরের
ফাতওয়ার অংশবিশেষ ছিল-
“তাহলে এতদ্বসত্বেও আল্লাহর
দ্বীনে এটা কিভাবে বৈধ হয় যে,
মুসলমানরা তাদের দেশে
ইউরোপীয়ান, পৌত্তলিক ও
নাস্তিকদের আইন কানুন থেকে
প্রণীত বিধান দ্বারা শাসন
পরিচালনা করবে। (একটু পর তিনি
বলেন) নি:সন্দেহে এই সমস্ত মানব
রচিত আইনের দ্বারা শাসন
পরিচালনার হুকুম সূর্য্যের মত স্পষ্ট।
তা হচ্ছে তা স্পষ্ট কুফর, যার মাঝে
কোন অস্পষ্টতা নেই”। (উমদাতুত্
তাফসীর- আহমদ শাকের ৪/১৭৩-১৭৪)
.
শায়খ মুহ. হামেদ আল ফেকহী এর
উদ্ধৃতাংশ ছিল- “ এর মত বা এর
চেয়ে নিকৃষ্ট হল ঐ ব্যক্তি, যে
ইংরেজদের কথাগুলোকে আইন
বানিয়ে নেয়। মানুষের রক্ত, ইজ্জত ও
সম্পদের ব্যাপারে এইগুলোর শাসন
মেনে নেয়। আল্লাহর কিতাব ও রাসূল
সা. এর সুন্নত জানা ও স্পষ্ট থাকা
সত্ত্বেও এগুলোকে তার উপর প্রাধান্য
দেয়। নি:সন্দেহে এমন ব্যক্তি যদি
তাতে অনড় থাকে ও আল্লাহর হুকুমের
দিকে ফিরে না আসে তাহলে সে
কাফের ও মুরতাদ, তার নাম যাই হোক
না কেন। নামায, রোজা , হজ্জ,
প্রভৃতি বাহ্যিক আমল কোনই কাজে
আসবে না”। (কিতাবু ফতহিল মাজিদ
শরহু কিতাবিত্ তাওহীদ-প্রকাশনায়
আনসারুস্ সুন্নাহ-পার্শ¦ টিকা, পৃষ্ঠা৩৯৬)
.
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম
আলে শায়খের উদ্ধৃতাংশ ছিল-
“কুরআন বিরোধী শাসন কয়েকটি
অবস্থায় বড় কুফরী হয়: তার পঞ্চম
অবস্থা: বর্তমান অনেক মুসলিম
দেশের অবস্থা এর সূক্ষè বর্ণনা দেয়।
(তিনি বলেন,) বর্তমানে অনেক
মুসলিম দেশের এই সমস্ত আদালত,
যেগুলোকে সকলের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও
কার্যকরী হিসাবে প্রস্তুত করা
হয়েছে, আর দলে দলে মানুষ এগুলোতে
আসছে-যার বিচারকরা মানুষের
মাঝে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী ঐ সমস্ত
আইন কানুন দ্বারা শাসন পরিচালনা
করে, সেগুলোকে মানুষের জন্য আইন
হিসাবে স্বীকৃতি দেয় ও মানুষকে তা
মানতে বাধ্য করে- এর চেয়ে বড়
কুফরী আর কি হতে পারে? মুহাম্মদ
সা. কে আল্লাহর রাসূল হিসাবে
স্বাক্ষ দেয়ার সাথে এর চেয়ে
বৈপরীত্য আর কি হতে পারে?
(‘তাহকীমুল কাওয়ানীন’ পুস্তিকা থেকে সংগৃহিত)
.
প্রিয় মুসলিম ভাই! একথাগুলো
বুঝার জন্য এ সমস্ত মুসলিম
দেশগুলোর অবস্থার দিকে লক্ষ্য
করাই যথেষ্ট। যেখানে আল্লাহর
হুকুমকে রহিত করে দিয়ে এর
বিকল্প বিধান আবিস্কার করা
হয়েছে। আল্লাহর নিম্নোক্ত
আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার
পেক্ষাপট তো অবিকল এটাই
ছিল- ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥ “ যারা আল্লাহর
নাযিলকৃত বিধান অনুসারে
ফায়সালা করে না তারা, কাফির”।
আর বিধান অবতীর্ণ হওয়ার
সময়ের  রুপটি বিধানের মাঝে
অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত হয়।
যেমনটি সূয়ুতী রহ.‘আল
ইতকানে’(১/২৮-৩০পৃষ্ঠায়) উল্লেখ করেছেন।
.
কুরআন বিরোধী শাসন ব্যাবস্থা
কুফরী হওয়ার বিষয়টি শায়খ
আলবানীর নিকটও অস্পষ্ট নয়।
সামনেই এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এ
ব্যাপারে তার উদ্ধৃতি উল্লিখিত
হবে।
.
.
২। কতিপয় লোকের একটি মারত্মক
বিভ্রান্তি হল মুসলিম শাসকদের
ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলোকে
এই সমস্ত মুরতাদ শাসকদের
ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। যেমন
মারফু সূত্রে ইবনে আব্বাস রা. এর
হদীসটি-
ﻣَﻦْ ﻛَﺮِﻩَ ﻣِﻦْ ﺃَﻣِﻴﺮِﻩِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓﻠْﻴَﺼْﺒِﺮْ؛ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ
ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴُّﻠْﻄَﺎﻥِ ﺷِﺒْﺮًﺍ ﻣَﺎﺕَ ﻣِﻴﺘَﺔً ﺟَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔً
“কেউ আমীরের কোন কাজ অপছন্দ
করলে ধৈর্য্য ধারণ করবে। কেননা যে
শাসকের আনুগত্য থেকে সামান্য বের
হয়ে পড়ে সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু
বরণ করে। (বুখারী, মুসলিম)
আউফ বিন মালেক আল-আশযায়ী
র. এর হাদীস, রাসূল সা. বলেন,
“তোমাদের শ্রেষ্ঠ শাসক হল, যাকে
তোমরা ভালবাস এবং সেও
তোমাদেরকে ভালবাসে, তোমরা তার
জন্য দোয়া কর, সেও তোমাদের জন্য
দোয়া করে। আর তোমাদের নিকৃষ্ট
শাসক হল যাকে তোমরা ঘৃণা কর, সেও
তোমাদেরকে ঘৃণা করে, তোমরাও
তাকে অভিশাপ দাও, সেও
তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়”। বর্ণনা
কারী সাহাবী বলেন, আমরা বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি
তাদেরকে ছুড়ে মরবো না? রাসূল সা.
বললেন, ﻻ، ﻣﺎ ﺃﻗﺎﻣﻮﺍ ﻓﻴﻜﻢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ‘না,
যতক্ষণ তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে’।
(মুসলিম) অন্য বর্ণনায় এসেছে- ﻻ،
ﻣﺎ ﺻﻠﻮﺍ ‘না, যতক্ষণ তারা নামায
আদায় করে’।
.
এই সংশয়ের নিরসন দুই ভাবে:
প্রথমত: এই হাদীসগুলো মুসলিম
শাসকদের ব্যাপারে; কাফের
শাসকদের ব্যাপারে নয়। এগুলো
দিয়ে এই সমস্ত মুসতাদ শাসকদের
পক্ষে দলীল দেয়া যাবে না।
কেননা:
.
ক. এদের মাঝে ইমামতের শর্ত
পাওয়া যায় না। যেমন, শরয়ী ইলম,
ন্যায়পারাণতা ইত্যাদি। (দেখুন,
আহকামুস্ সুলতানিয়া-মাওয়ারদী পৃ. ৬)
.
খ. এদের জন্য বিশুদ্ধ শরয়ী
বাই’আত সংগঠিত হয়নি। কেননা
কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী শাসন
পরিচালনার শর্তেই বিশুদ্ধ শরয়ী
বাইআত সংগঠিত হত পারে। যেমন-
বুখারী রহ. বর্ণনা করেন, ইবনে
ওমর রা. আব্দুল মালেক ইবনে
মারওয়ানের হাতে বাই’আতকালে
লিখেন, “আমি আমার সামর্থ
অনুযায়ী আল্লাহ ও আল্লাহর
রাসূলের নীতির উপরে তোমার
কথা শোনা ও মানার স্বীকৃতি
দিচ্ছি”। ইবনে হাজার রহ. বলেন,
ইমামের বাই’আয়তের ব্যাপারে
মূলনীতি হল, হক্বের উপর
প্রতিষ্ঠিত থাকা, আল্লাহর
নির্ধারিত শাস্তি বাস্তবায়ন
করা, সৎকাজের আদেশ করা, অসৎ
কাজের নিষেধ করার উপর
বায়’আত করা হবে। (ফাতহুল বারী
১৩/২০৩) অথচ এ সমস্ত মুরতাদরা
তো শাসনক্ষমতা গ্রহণের সময়
সংবিধান, মানব রচিত আইন,
গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র প্রভৃতি কুফর
বাস্তবায়রেন শপথ করে থাকে।
.
গ. এরা ইমামের দায়িত্ব পালন
করে না, যার প্রথমটিই হচ্ছে,
দ্বীনকে তার মূলনীতি উপর
সংরক্ষিত রাখা। যেমন, ইমাম
মাওয়ারদী ইমামের আবশ্যকীয়
দায়িত্ব সমূহের মধ্যে উল্লেখ
করেছেন। (আল আহকামুস্
সুলতানিয়া ১৫,১৬) সেখানে
দায়িত্বসমূহের মধ্যে আল্লাহর
নির্ধারিত শাস্তি বাস্তবায়ন
করা, আল্লাহর পথে জিহাদ করাও
রয়েছে। অথচ এ সমস্ত শাসকরা কি
দ্বীন হেফাজত করে? না ধ্বংস
করে?
.
হে মুসলিম ভাই! পূর্বোক্ত
আলাচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন
যে, এ সমস্ত শাসকরা
“মুসলমানদের শাসক” অভিধাটির
অন্তর্ভূক্তই নয়। শর্তের উপস্থিতি,
বিশুদ্ধ বায়’আত হওয়া ও দায়িত্ব
পালন করা- কোন দিক থেকেই নয়।
এবং এও বুঝতে পেরেছেন যে,
শাসকদের হাদীসগুলো এদের
ব্যাপারে প্রয়োগ করা মারাত্মক
বিভ্রান্তি ও সংশয়।
.
দ্বিতীয় জবাব: আমরা যদি তর্কের
খাতিরে মেনেও নেই যে,
শাসকদের হাদীসগুলো এদের উপর
প্রয়োগ করা যাবে, তথাপি
উবাদা ইবনে সামিত রা: এর
নিম্নোক্ত হাদীসটির কারণে
এসমস্ত হাদীসগুলো শর্তযুক্ত হয়ে
যাবে-
ﻭَﺃَﻥْ ﻻَ ﻧُﻨَﺎﺯِﻉَ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺃَﻫْﻠَﻪُ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﺮَﻭْﺍ ﻛُﻔْﺮًﺍ
ﺑَﻮَﺍﺣًﺎ ﻋِﻨْﺪَﻛُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻓِﻴﻪِ ﺑُﺮْﻫَﺎﻥٌ
“এবং ক্ষমতা নিয়ে উপযুক্ত ব্যক্তির
সাথে দ্বন্ধ করব না”। (এর পর বলেন,)
“তবে স্পষ্ট কুফর দেখতে পেলে, যার
ব্যাপারে তোমাদের নিকট কুরআন
সুন্নাহর দলীল থাকে, বিদ্রোহ করতে
পারবে”। (বুখারী, মুসলিম)
.
সুতরাং যখন শাসক স্পষ্ট কুফরীতে
লিপ্ত হয়, যেমন কুরআন বিরোধী
শাসন পরিচালনা করল- তখন তার
আনুগত্য রহিত হয়ে যায়, সে
দায়িত্ব থেকে অপসারিত হয়ে
যায়। এবং তার বিরুদ্ধে বের হওয়া
ওয়াজিব হয়ে যায়।
যেমন, কাযী ইয়ায রহ: উবাদা র:
এর হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
“সমস্ত উলামায়ে  কিরাম এ
ব্যাপারে একমত যে, কাফেরের
জন্য ইমামত সংঘটিত হয় না। আর
যদি তার মাঝে পরে কুফরী এসে
পড়ে তাহলে সে পদচ্যুত হয়ে যাবে।
(এর কিছু সামনে গিয়ে তিনি বলেন)
যদি পরবর্তীতে কুফর, শরীয়ত
পরিবর্তন বা বিদ’আত পাওয়া যায়
তাহলে সে দায়িত্ব থেকে
অপসারিত হয়ে যাবে এবং
মুসলমানদের উপর ওয়াজিব হবে, যদি
তাদের ক্ষমতা থাকে তার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করে তাকে অপসারণ করা ও
একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক নিযুক্ত
করা”। (সহীহ মুসলিম বিশরহিন্ নববী ১২/২২৯)
.
হে মুসলিম ভাই! পূর্বোক্ত
আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন
যে, মুসলিম শাসকদের ব্যাপারে
বর্ণিত হাদীসগুলোর মাধ্যমে এ
সমস্ত মুরতাদ শাসকদের পক্ষে
দলীল দেয়ার কোন অবকাশ নেই।
আর এ সমস্ত ভুল দলীল দেয়ার
কারণে সৃষ্টি হওয়া ভয়ংকর
সংশয়গুলো সম্পর্কেও সচেতন
হয়েছেন, যে এগুলো কিভাবে
মুসলমানদেরকে তাগুতের বিরুদ্ধে
জিহাদ করা থেকে দূরে সরিয়ে
রাখে।
.
.
৩। শায়খ আলবানী ‘আল
আকীদাতুত ত্বহাবীর’ উপর
সংযোজন করতে গিয়ে এই
বিচ্যুতিতে পড়েছেন, অন্যথায়
ইমাম ত্বহাবী রহ: ও ব্যাখ্যাকার
ইবনে আবিল ইজ্জ আল হানাফী
রহ: এর কথা ছিল মুসলিম শাসক
ফাসেক বা জালেম হয়ে গেলে
তার ব্যাপারে; কাফেরের
ব্যাপারে নয়। এটা ইমাম ত্বহাবী
রহ: ’র এই কথার মাঝে স্পষ্ট-
“আমরা আমাদের শাসকদের (অর্থাৎ
মুসলমানদের শাসকদের) বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করা বৈধ মনে  করি না’’।
আর শায়খ  আলবানী তাদের
কথাগুলো নিয়ে আমাদের
যামানার মুসলমানদের শাসকদের
ব্যাপারে প্রয়োগ করেন। যাদের
অধিকাংশের কাফের ও মুরতাদ
হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ
নেই। ফলে ইহা মারাত্মক সংশয়
সৃষ্টির কারণ হয়েছে।
অথচ শায়খ আলবানী নিজেও ঐ
সমস্ত শাসন ব্যাবস্থা কুফর হওয়া
স্বীকার করেন, যা মুসলমানদের
মাঝে শরীয়ত বিরোধী শাসন
পরিচালনা করে। তার এরুপ একটি
উদ্ধৃতি হল, তিনি (তার সময়ের
কোন একটি দল সম্পর্কে
আলোচনা করতে গিয়ে) বলেন-
“আমি তাদের অনেককে প্রশংসনীয়
ইসলামী চেতনা ও আত্মমর্যাদাবোধ
নিয়ে এরুপ ভাষণ দিতে দেখেছি যে,
‘শাসনক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর চলবে
এবং এর মাধ্যমে কুফরী শাসন
ব্যবস্থার ভীত উপড়ে ফেলা হবে’।
এগুলো ভাল কথা, যদিও এখন আমরা
তা করতে পারব না”। (তার স্বরচিত
কিতাব “আলহাদীস হুজ্জাতুন
বিনাফসিহি ফিল আকায়িদি ওয়াল
আহকাম” ৯৬,৯৭) এ হল আলবানীর
উদ্ধৃতি।
.
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল, তিনি
শরহুল আকীদাতুত ত্বহাবীতে
ব্যাখ্যাকারের নিম্নোক্ত
কথাটির উপর আল্লামা আহমদ
শাকের যে সংযোজন করেছেন
তার ব্যাপারে নিরব থাকেন।
ব্যাখ্যাকারের কথাটি
ছিল-“ শাসক যদি এই বোধ লালন করে
যে, সে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী
শাসন পনিচালনা করতে বাধ্য নয়,
বরং সে এ ব্যাপারে স্বাধীন অথবা
আল্লাহর বিধানকে আল্লাহর বিধান
জেনেও তুচ্ছ জ্ঞান করে, তাহলে এটা
বড় কুফর”।
.
আল্লামা আহমদ শাকের তার উপর
সংযোজন করেন- “এটা বর্তমান ঐ
সমস্ত মুসলিম নারী-পুরুষদের অবস্থা,
যারা ইউরোপীয়ান আইন কানুন নিয়ে
পড়া শোনা করছে। এগুলোর ভালবাসা
ও প্রীতি তাদের অন্তরে গভীরভাবে
ঢুকে পড়েছে। তারা এগুলোর সংরক্ষণ
করে এবং এগুলোর শাসন প্রতিষ্ঠা
করে ও প্রসার ঘটায়। (শরহুল
আকীদাতুত ত্বাহাবিয়াহ- প্রকাশকাল ১৪০৪,পৃ.৩২৩,৩২৪)
.
তাহলে শায়খ কিভাবে বলেন, ‘এ
সমস্ত শাসকদের থেকে মুক্তির পথ হল
শুধু ধৈর্য্য ধারণ ও তারবিয়াত?’ যা
সমস্ত পূর্বসূরীদের কথার বিপরীত,
যাদের সিদ্ধান্ত হল, “মুসলিম শাসক
ফাসেক বা জালেম হয়ে গেলে তার
ব্যাপারে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
পক্ষান্তরে কাফের হয়ে গেলে,
সামর্থ থাকলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করা আবশ্যক”। আমি এই পর্বেই এ
ব্যাপারে কাযী ইয়ায ও ইবনে
হাজার র: এর উদ্ধৃতি পেশ করেছি।
তারা কাফের শাসকের বিরুদ্ধে
যুদ্ধে বের হওয়া আবশ্যক হওয়ার
ব্যাপারে ইজমা বর্ণনা করেছেন।
(সহীহুল মুসলিম বিশরহিন্ নববী
১২/২২৯,ফাতহুল বারী ১৩/৭,১১৬, ১২৩)
.
ইবনে হাজার র: এর উদ্ধৃতাংশ
ছিল- “সারকথা হলো শাসক কুফরীর
কারণে অপসারিত হয়ে যায়। তখন
প্রত্যেক মুসলিমের উপর তার বিরুদ্ধে
যুদ্ধে বের হওয়া ওয়াজিব হয়ে যাবে।
(ফাতহুল বারী ১৩/১২৩)
.
এর চেয়ে স্পষ্ট কথা আর কি হতে
পারে?
শাসকদের আনুগত্যের ব্যাপারে
বর্ণিত হাদীসগুলোর সমষ্টি থেকে
উল্লিখিত হুকুমটি- তথা ‘মুসলমান
জালেম শাসকের ব্যাপারে
ধৈর্য্য ধারণ করা আর কাফের
শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বের
হওয়া’র হুকুমটি জানা যায়।
শাসকদের ব্যাপারে ধৈর্য্য
ধারণের আদেশ সংবলিত
হাদীসগুলোর মধ্যে রয়েছে:-
.
১। ইবনে আব্বাস থেকে মারফু সনদে
বর্ণিত হাদীস-
ﻣَﻦْ ﻛَﺮِﻩَ ﻣِﻦْ ﺃَﻣِﻴﺮِﻩِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓﻠْﻴَﺼْﺒِﺮْ؛ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ
ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴُّﻠْﻄَﺎﻥِ ﺷِﺒْﺮًﺍ ﻣَﺎﺕَ ﻣِﻴﺘَﺔً ﺟَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔً
কেউ আমীরের কোন কাজ অপছন্দ
করলে ধৈর্য্য ধারণ করবে। কেননা যে
শাসকের আনুগত্য থেকে সামান্য বের
হয়ে পড়ে সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু
বরণ করে।
.
২। ইবনে মাসুদ র: থেকে বর্ণিত
মারফু হাদীস- “ আমার পরে স্বজন
প্রীতি ও অনেক এমন অন্যায়
কর্মকান্ড প্রকাশিত হবে যেগুলো
তোমাদের খারাপ লাগবে।
সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আমাদের কেউ সেই যামানা পেলে
তার ব্যাপারে আপনি কি নির্দেশ
দেন? তিনি বললেন, তোমরা
তোমাদের কর্তব্য পালন করবে, আর
তোমাদের অধিকার আল্লাহর নিকট
চাইবে”। এমনিভাবে ওয়েল ইবনে
হাজার ও উম্মে সালমা রা. এর
হাদীস।
আর এ সমস্ত হাদীসগুলোকে
উবাদা রা. এর এই হাদীসটি শর্ত
যুক্ত করে ফেলেছে-
ﻭَﺃَﻥْ ﻻَ ﻧُﻨَﺎﺯِﻉَ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺃَﻫْﻠَﻪُ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﺮَﻭْﺍ ﻛُﻔْﺮًﺍ
ﺑَﻮَﺍﺣًﺎ ﻋِﻨْﺪَﻛُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻓِﻴﻪِ ﺑُﺮْﻫَﺎﻥٌ
“এবং ক্ষমতা নিয়ে উপযুক্ত ব্যাক্তির
সাথে দ্বন্ধ করব না”। (এর পর বলেন,)
“তবে স্পষ্ট কুফর দেখতে পেলে, যার
ব্যাপারে তোমাদের নিকট কুরআন
সুন্নাহর দলীল থাকে, বিদ্রোহ করতে
পারবে”।
এই হাদীসটি ধৈর্য্য ধারণ
সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে
শর্তযুক্ত করে দেয়। সুতরাং যখন
শাসক কাফের হয়ে যায়, তার
বিরুদ্ধে বের হওয়া ও যুদ্ধ করা
ওয়াজিব হয়ে যায়। এই শর্তটির
প্রতি ঈঙ্গিত করেই ইমাম বুখারী
রহ. এই হাদীসটিকে ধৈর্য্য ধারণ
সংক্রান্ত হাদীসগুলোর পরে
এনেছেন।
অর্থাৎ প্রথমে ইবনে আব্বাস ও
ইবনে মাসউদ রা, এর হাদীসগুলো
এনেছেন। এরপর একই অধ্যায়ে
উবাদা রা. এর হাদীসটি
এনেছেন। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল
ফিতান, ২য় অধ্যায়) সুতরাং
শাসকের কুফরী থেকে মুক্তি
লাভের পথ হল, স্বসস্ত্র বিদ্রোহ করা ।
.
সামর্থ থাকলে সর্বসম্মতিক্রমে
এটা ওয়াজিব। শুধু তারবিয়াত
মুক্তির পথ নয়। শায়খের বক্তব্য
কাযী ইয়াজ ও ইবনে হাজার রাহ.
এর বর্ণনাকৃত ইজমারও বিরোধী।
সুতরাং যখন শাসক কুফরীতে
লিপ্ত হয় তখন তার বিরুদ্ধে বের
হলে কি গোলযোগ সৃষ্টি হবে তার
প্রতি লক্ষা করা হবে না। কেননা
কুফরীর ফেতনার চেয়ে বড়
গোলযোগ আর কিছু নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ﻭَﺍﻟْﻔِﺘْﻨَﺔُ
ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﺘْﻞ “আর ফিতনা তো
হত্যার চেয়েও গুরুতর”।
(বাকারা:২১৭)
.
এছাড়া সমস্ত উলামায়ে কেরামও
এ ব্যাপারে একমত যে, জীবন সহ
পঞ্চ জরুরিয়্যাতের অন্যান্যগুলো
হেফাজতের চেয়ে দ্বীনের
হেফাজত অগ্রগণ্য।
একটু পূর্বে শাইখুল ইসলাম ইবনে
তাইমিয়া র. এই উদ্ধৃতিটি পেশ
করা হয়েছিল- “সৃষ্টিজীবের সংহতি
রক্ষার জন্য যে পরিমাণ প্রাণ হত্যা
করা প্রয়োজন হয় আল্লাহ তায়ালা
তা বৈধ করেছেন।
যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
ﻭَﺍﻟْﻔِﺘْﻨَﺔُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﺘْﻞ “ফিতনা হত্যার
চেয়েও গুরুতর”। অর্থাৎ হত্যার মাঝে
যদিও অনিষ্ট ও ক্ষতি রয়েছে, তথাপি
কুফরের অনিষ্ট ও ক্ষতি তার চেয়ে
জঘন্য। (মাজমূউল ফাতাওয়া ২৮/৩৫৫)
.
.
৪। শায়খ তার কিতাবে যা
বলেছেন-“এখন আমাদের কুফরী
শাসন ব্যাবস্থা গুড়িয়ে দেয়ার
ক্ষমতা নেই” তার ব্যাপারে কথা
হল, জিহাদে অক্ষম হলে তো তার
প্রস্তুতি গ্রহণ করা ওয়াজিব।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻭَﺃَﻋِﺪُّﻭﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺘُﻢْ ﻣِﻦْ ﻗُﻮَّﺓ “(হে
মুসলিমগণ!) তোমরা তাদের
মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি
প্রস্তুত কর”। (আনফাল:৬০)
.
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.
এরও এই সিদ্ধান্ত যে, অক্ষমতার
দরুন জিহাদ রহিত হয়ে গেলে তখন
শক্তি অর্জন করতে থাকা ওয়াজিব।
(মাজমূউল ফাতাওয়া ২৭/২৫৯)
.
আর শক্তি হচ্ছে অস্ত্র;
তারবিয়াত নয়।
কেননা উকবা ইবনে আমের রা.
থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে,
রাসূল সা: বলেন, “জেনে রেখ!
শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা’।(মুসলিম)
.
শায়খ আলবানী নিজেও এটা
স্বীকার করেছেন। তিনি “ভবিষ্যত
ইসলামের” শিরোনামে আলোচনা
প্রসঙ্গে এটা উল্লেখ করেছেন (যা
আমি পূর্বে শাসক নিয়োগ দানের
মাসআলায় এই কিতাবে (মূল কিতাবে)
১৪২ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছি)-
“রাত্র দিন যে পর্যন্ত পৌছেছে এই
বিষয়টি সেই পর্যন্ত পৌছবে....... এই
হাদীস প্রসঙ্গে আলোচনার এক
পর্যায়ে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এই
ব্যাপক প্রসার দাবী করে যে,
মুসলমানরা পুনরায় তাদের মানসিক,
বৈষয়িক ও অস্ত্র বলে বলীয়ন হবে।
যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাপর কুফরী
শক্তিরগুলোর উপর  ইসলামের পরিপূর্ণ
বিজয় অর্জন না হয়”। (আলহিকামুল
জাদীরা গ্রন্থের ভূমিকা থেকে
সংগৃহীত, প্রকাশনায়: দারুল মারজান)
.
সুতরাং শায়খের কথার দ্বারাও
প্রমাণিত হয়, অক্ষমতার সময় শক্তি
প্রস্তুত করতে থাকা ওয়াজিব; শুধু
তারবিয়াতই যথেষ্ট নয়।
.
.
৫। শায়খের ‘শাসকদের বিরুদ্ধে
স্বসস্ত্র বিদ্রোহ করা কতিপয়
লোকের কল্পনা’ বলা সঠিক নয়।
বরং এটাই নবী সা: এর সুন্নতের
অনুসরণ। যেমন, উবাদা রা: এর
হাদীসে এসেছে- “এবং ক্ষমতা নিয়ে
উপযুক্ত ব্যাক্তির সাথে দ্বন্ধ করব
না”। (এর পর বলেন,) “তবে স্পষ্ট কুফর
দেখতে পেলে, যার ব্যাপারে
তোমাদের নিকট কুরআন-সুন্নাহর দলীল
থাকে, বিদ্রোহ করতে পারবে”।
(বুখারী, মুসলিম)
.
ইবনে কাসীর রহ: ﺃَﻓَﺤُﻜْﻢَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ
ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ( ‘ তবে কি তারা জাহেলি
যুগের ফায়সালা লাভ করতে চায়?’-
মায়িদা:৫০ ) এর তাফসীরে বলেন,
“এখানে আল্লাহ তায়ালা যারা সকল
কল্যাণের আধার ও অকল্যাণের
প্রতিরোধকারী বিধান- তথা
আল্লাহর বিধান থেকে বের হয়ে
আল্লাহর শরীয়তের সাথে সম্পর্কহীন
মানুষের গড়া পরিভাষা, মতামত ও
প্রবৃত্তির শাসনের দিকে যায়,
তাদের  নিন্দা করেছেন। (এই
আলোচনার ধারাহিকতায় একটু সামনে
গিয়ে তিনি বলেন,) তাদের মধ্যে যে
এমন করবে সে কাফের, তার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করা ওয়াজিব, যতক্ষণ পর্যন্ত
আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে না
আসবে এবং কম বেশি সামান্য
ব্যাপারেও অন্য যে কোন বিধান
প্রত্যাখ্যান না করবে”।
তাহলে শায়খ কিভাবে বলেন,
আমাদের যামানার মুরতাদ
শাসকদের বিরুদ্ধে স্বসস্ত্র যুদ্ধে
বের হওয়া একটি কল্পনাপ্রসূত
কাজ। অথচ কাযী ইয়ায ও ইবনে
হাজার রহ: এধরণের শাসকের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে বের হওয়া ওয়াজিব
হওয়র ব্যাপারে ইজমা বর্ণনা
করেছেন।
.
.
৬। সেনা বিপ্লব তো তাগুতের
বিরুদ্ধে স্বসস্ত্র বিদ্রোহের
একটি প্রকার। পূর্বে উল্লেখিত
হয়েছে যে, এটা ওয়াজিব। তাহলে
শায়খ কিভাবে শরয়ী ওয়াজিবকে
বিদ’আত বলে আখ্যা দিলেন?
সেনা বিপ্লব তো নব্য যোগের
কোন আবিস্কার নয়, যেমনটি
তিনি বললেন।
স্বয়ং রাসূল সা: এর যামানায়
এমনটি ঘটেছে।
সাহাবী ফিরোজ আদ্দায়লামী র:
নবুওয়্যাতের দাবিদার মিথ্যুক
আসওয়াদ আনাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বের
হয়েছেন। এমনকি আসওয়াদকে হত্যা
করেছেন। আমি পূর্বেও এই ঘটনাটি
উল্লেখ করেছি। (আলবিদায়া ওয়ান্
নিহায়া থেকে, পৃ: ৬/৩০৭-৩১৭)
.
এছাড়াও বায়আত ও
নিয়োগদানের মাসআলায়
শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের
অনেকগুলো দৃষ্টান্ত উল্লেখ
করেছি, যেগুলো সেনা বিপ্লবের
সাথে সামনজস্য রাখে এবং
সেগুলো সংঘটিতও হয়েছিল
শ্রেষ্ঠ তিন যোগে । সুতরাং
বিপ্লব নব্য যোগের কোন
আবিস্কার নয়, যেমনটি শায়খ
বললেন।
.
.
৭। শায়খ স্বশস্ত্র বিদ্রোহকে শুধু
বিদ’আতই বলেননি, বরং তিনি এও
বললেন যে, স¦সস্ত্র বিদ্রোহ
কুরআন সুন্নাহর বিবরণ সমূহের
বিরোধী, কুরআন আত্মসংশোধনের
আদেশ করে,
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ
ﻳُﻐَﻴِّﺮُ ﻣَﺎ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻐَﻴِّﺮُﻭﺍ ﻣَﺎ ﺑِﺄَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ
“নিশ্চিত জেন, আল্লাহ কোনও
জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত
পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা
নিজেরা নিজেদের অবস্থা
পরিবর্তন করে”। (রা’দ:১১)
.
অথচ বিষয়টি এমন নয়। কেননা
স্বশস্ত্র বিদ্রোহ তথা আল্লাহ
তায়ালার রাস্তায় জিহাদ করাও
আত্মসংশোধনেরই অন্তর্ভুক্ত।
কেননা মুরতাদ শাসকদের চেপে
বসার দরুন মুসলমানরা যে
লাঞ্ছনার শিকার হয়, তা তো
জিহাদ থেকে বসে থাকা,
দুনিয়ার প্রতি ঝুকে যাওয়া ও
মৃত্যুকে অপছন্দ করার করণেই
হয়েছে। আর এর সংশোধন ছাড়া
মুসলমানদের এই লাঞ্ছনা থেকে
মুক্তির কোন পথও নেই। অর্থাৎ
জিহাদ করা ও প্রতারণাময়
দুনিয়া থেকে পৃথক হওয়া।
এটা শরয়ী বর্ণনাগুলো দ্বারাই
প্রমাণিত। যেমন সাওবান ও ইবনে
ওমর রা: এর হাদীস দুটি রয়েছে।
সাওবান রা: থেকে বর্ণিত রাসূল
সা:  বলেন,
ﻳﻮﺷﻚ ﺍﻥ ﺗﺪﺍﻋﻰ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻷﻣﻢ ﻣﻦ ﻛﻞ
ﺃﻓﻖ ﻛﻤﺎ ﺗﺪﺍﻋﻰ ﺍﻵﻛﻠﺔ ﻋﻠﻰ ﻗﺼﻌﺘﻬﺎ ﻗﺎﻝ
ﻗﻠﻨﺎ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻣﻦ ﻗﻠﺔ ﺑﻨﺎ ﻳﻮﻣﺌﺬ ﻗﺎﻝ
ﺃﻧﺘﻢ ﻳﻮﻣﺌﺬ ﻛﺜﻴﺮ ﻭﻟﻜﻦ ﺗﻜﻮﻧﻮﻥ ﻏﺜﺎﺀ
ﻛﻐﺜﺎﺀ ﺍﻟﺴﻴﻞ ﻳﻨﺘﺰﻉ ﺍﻟﻤﻬﺎﺑﺔ ﻣﻦ ﻗﻠﻮﺏ
ﻋﺪﻭﻛﻢ ﻭﻳﺠﻌﻞ ﻓﻲ ﻗﻠﻮﺑﻜﻢ ﺍﻟﻮﻫﻦ ﻗﺎﻝ
ﻗﻠﻨﺎ ﻭﻣﺎ ﺍﻟﻮﻫﻦ ﻗﺎﻝ ﺣﺐ ﺍﻟﺤﻴﺎﺓ ﻭﻛﺮﺍﻫﻴﺔ
ﺍﻟﻤﻮﺕ
“অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের সকল জাতি
একে অপরকে তোমাদের বিরুদ্ধে
আহ্বান করবে, যেমন আহারকারীরা
পরস্পরকে খাবার প্লেটে আহ্বান
করে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর
রাসূল! এমনটি কি সে সময় আমাদের
সংখ্যা-সল্পতার দরুন হবে? তিনি
বললেন, বরং তোমরা সে সময় অনেক
থাকবে, কিন্তু স্রোতের মাঝে
ভাসমান লতাগুলোর মত। তোমাদের
শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর
করে দেয়া হবে। তোমাদের অন্তরে
“ওয়াহন” ঢেলে দেয়া হবে। সাহাবাগণ
জিজ্ঞাস করলেন, ‘ওয়াহন’ কি?
তিনি বললেন, দুনিয়ার ভালবাসা ও
মৃত্যুকে অপছন্দ করা। (আহমদ,আবু
দাউদ)
.
ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত আছে,
রাসূল সা. বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺗﺒﺎﻳﻌﺘﻢ ﺑﺎﻟﻌﻴﻨﺔ ﻭﺃﺧﺬﺗﻢ ﺃﺫﻧﺎﺑﺎﻟﺒﻘﺮ
ﻭﺭﺿﻴﺘﻢ ﺑﺎﻟﺰﺭﻉ ﻭﺗﺮﻛﺘﻢ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﺳﻠﻂ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺫﻻ ﻻ ﻳﻨﺰﻋﻪ ﺣﺘﻰ ﺗﺮﺟﻌﻮﺍ ﺇﻟﻰ
ﺩﻳﻨﻜﻢ
“যখন তোমরা সুদি ক্রয় বিক্রয়ে
লিপ্ত হবে, গরুর লেজ ধরে থাকবে,
কৃষি নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে পড়বে ও
জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ
তায়ালা তোমাদের উপর লাঞ্ছনা
চাপিয়ে দিবেন। তা ততক্ষণ উঠিয়ে
নিবেন না, যতক্ষণ তোমরা তোমাদের
দ্বীনের দিকে ফিরে না আস”। (আবু
দাউদ)
.
অতএব হে মুসলিম ভাই! আপনি
বুঝতে পারলেন যে, জিহাদ বর্জনই
মুসলমানদের লাঞ্ছনার কারণ, আর
এর প্রতিকারও হবে পুনরায়
জিহাদের দিকে ফিরে আসার
দ্বারাই। বিশেষত: ঐ জিহাদ, যে
জিহাদ ফরজে আইন, যেমন
তাগুতের বিরুদ্ধে জিহাদ।
অতএব, জিহাদও
আত্মসংশোধনেরই অন্তর্ভূক্ত; এর
বিরোধী নয়, যেমনটি শায়খ
আলাবানী বললেন।
আত্মসংশোধন শুধু ইলম এবং
তারবিয়াতের দ্বারাই হয় না,
যেটাকে শায়খ মুক্তির পথ আখ্যা
দিলেন। বরং জিহাদও মুক্তির পথ,
যেটাকে তিনি অস্বীকার করলেন।
.
.
৮। আমরা আত্মসংশোধন আবশ্যক
হওয়ার ব্যাপারে শায়খের কথার
সাথে একমত; যেন এর মাধ্যমে
আল্লাহ তায়ালা আমাদের
লাঞ্ছনা ও অপমান দূরীভুত করেন।
(আমি পূর্বে জিহাদের জন্য
ঈমানী প্রস্তুতির মাসআলার শুরুর
দিকে আল্লাহর সাহায্য লাভ
করা-না করার ‘পঞ্চ মূলনীতির’
পঞ্চম মূলনীতিতে এই বিষয়টি
উল্লেখ করেছি।) তবে আমরা
কয়েকটি বিষয়ে শায়খের সাথে
দ্বিমত করি:
.
১। সশস্ত্র বিদ্রোহ তথা
জিহাদকে আত্মসংশোধনের
বিপরীত মনে করা।
.
২। এরপর শুধু ইলম ও তারবিয়াতের
মাঝেই আত্মসংশোধনকে
সীমাবদ্ধ করা।
আমি (মূল কিতাবের) এই
পরিচ্ছেদের শেষ দিকে তৃতীয় ও
চতুর্থ পরিশিষ্ট হিসাবে ইলম ও
তারবিয়াত-এ দু’টি বিষয় নিয়ে
পৃথক আলোচনা করেছি। সেই
পরিশিষ্টের মাঝে দেখতে
পাবেন- জিহাদ ওয়াজিব হওয়ার
জন্য শরয়ী ইলম বা ন্যায়পরায়ণতা
কোনটিই শর্ত নয়। বরং আলেম ও
নেককারের মত অজ্ঞ ও
পাপীরাও জিহাদের ব্যাপারে
পূর্ণ আদিষ্ট।
এবং সামর্থ থাকা অবস্থায় যে
সমস্ত বিষয় জিহাদ ওয়াজিব
হওয়ার জন্য শর্ত নয়, এমন বিষয়
অর্জনে লিপ্ত থেকে জিহাদকে
বিলম্বিত করা জায়েয নেই।
আর যখন গুনাহগার আমীর বা
গুনাহগার সেনাবাহিনী ব্যাতীত
জিহাদ করা সম্ভব হয় না, তখন
কুফরীর মহা ফ্যাসাদ দূর করার
জন্য তাদের সাথে মিলেই জিহাদ
করা ওয়াজিব।
এটাই আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল
জামাআর মাযহাব।
যেমন ইবনে তাইমিয়া রহ:
বলেন- “এজন্যই আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল
জামাতের মূলনীতি হল, যে কোন
নেককার বা বদকার আমীরের সাথে
জিহাদ করতে হবে। কেননা আল্লাহ
তায়ালা এই দ্বীনকে গুনাহগার
ব্যক্তির দ্বারা ও এমন সম্প্রদায়ের
দ্বারা সাহায্য করেন, যাদের
পরকালে কোন পুরস্কার নেই, যেমনটি
রাসূল সা. ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।
কেননা যখন গুনাহগার আমীর বা
গুনাহগার সেনাবাহিনী ব্যাতীত
জিহাদ করা সম্ভব না হয়, তখন দু’টি
বিষয়ের যে কোন একটি হবে; হয়তো
তাদের সাথে জিহাদ বর্জন করবে-
এতে অন্যরা চড়ে বসবে, যারা
দ্বীনের জন্য আরো অধিক ক্ষতিকর।
অথবা গুনাহগার আমীরের সাথে
জিহাদ করবে- এতে বড় পাপিষ্ঠরা
প্রতিহত হবে এবং শরীয়তের সমস্ত
বিধানগুলো প্রতিষ্ঠিত না হলেও
অধিকাংশগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে।
অতএব এ অবস্থায় এটাই ওয়াজিব।
খোলাফায়ে রাশেদাহর পরে
সংঘটিত অধিকাংশ জিহাদগুলোতো
এ ভাবেই হয়েছে। (বিস্তারিত
দেখুন,মাজমূউল ফাতাওয়া২৮/৫০৬-৫০৮)
.
অতএব যখন কোন বিদ’আতি
সম্প্রদায়ের সাথে মিলা ব্যতীত
কাফেরদের সাথে জিহাদ করা
সম্ভব নয়, তখন তাদের সাথে
মিলেই জিহাদ করা ওয়াজিব।
এটা বলা যাবে না যে, যতক্ষণ
তারা বিদ’আত বর্জন না করে
ততক্ষণ আমরা জিহাদ করবো না।
বরং বিদ’আতীদের সাথে জিহাদ
করতে হবে এবং সাথে সাথে
তাদেরকে সুন্নাতের দিকেও
আহবান করতে হবে।
.
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যখন ইলম
ও জিহাদ ইত্যাদির মত আবশ্যকীয়
বিষয়গুলো এমন ব্যক্তির সাথে মিলা
ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব হয় না, যার
মাঝে বিদ’আত রয়েছে, তবে তার
ক্ষতিটা উক্ত ওয়াজিব বর্জনের চেয়ে
লঘু, এমতাবস্থায় ছোট ফ্যাসাদটি
মেনে নিয়ে উক্ত ওয়াজিবটি পালন
করাই শ্রেয়। একারণেই এই মাসআলায়
বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। (মাজমূউল
ফাতাওয়া ২৮/২১২)
.
যারা গুনাহগার আমীরের সাথে
মিলে কাফেরদের বিরুদ্ধে
জিহাদ করতে নিষেধ করেন,
তাদের প্রতিবাদে ইবনে হাযম রহ.
এর কঠিন উক্তি রয়েছে, তিনি
বলেন , “যারা কোন লোকের
পাপাচারের কারণে (যার পাপের
ব্যাপারে অন্যরা জিজ্ঞাসিত হবে
না।) কাফেরদের সাথে জিহাদ করতে
নিষেধ করেন এবং মুসলমানদের
সীমান্ত কাফেরদের হাতে সপে
দিতে বলেন, কুফরীর পরে এর চেয়ে
মারাত্মক গুনাহ আর কিছু নেই”।
(আলমুহাল্লাহ ৭/৩০০)
.
অতএব আমরা এ ব্যাপারে
শায়খের সাথে একমত যে,
আমাদের গুনাহের ফলে আমাদের
উপর কাফের এবং জালেমরা
চেপে বসে, যেমন আল্লাহ
তায়ালা বলেন, ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻚَ ﻣِﻦْ ﺳَﻴِّﺌَﺔٍ
ﻓَﻤِﻦْ ﻧَﻔْﺴِﻚَ “ আর তোমার যা-কিছু
অকল্যাণ ঘটে, তা তোমার নিজরই
কারণে”। (নিসা:৭৯)
.
এটা আমাদের উপর ঐশী শাস্তি।
কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে
শায়খের সাথে দ্বিমত করি যে,
তিনি তাদেরকে প্রতিহত করার
উপায়ও ঐশীভাবেই সীমাবদ্ধ
করেন, তথা গুনাহ থেকে তাওবা ও
আল্লাহর দিকে মনোযোগী হওয়া।
আর তিনি কাফেরদেরকে (যেমন
মুরতাদ শাসকদেরকে) প্রতিহত
করার ব্যাপারে শরীয়তসিদ্ধ
উপায় অবলম্বনকে অস্বীকার
করেন, যা হল জিহাদ। যেটাকে
শায়খ স্বসস্ত্র বিদ্রোহ বলে
উল্লেখ করেছেন।
.
.
৯। শায়খের কথার মাঝে একটি
বৈপরীত্য হল, তিনি
মুসলমানদেরকে তাদের শাসকদের
ব্যাপারে ধৈর্য্য ধারণ করতে
আহবান করেন, অথচ একই সময়ে
সাম্রাজ্যবাদী কাফেরদের
ব্যাপারে জিহাদ করতে বলেন।
তিনি এক স্থানে বলেছেন,
“কিছুতেই সাম্রাজ্যবাদী
কাফেরদের আনুগত্য করা যাবে না।
বরং তাদেরকে সরানোর জন্য ও
তাদের নাপাক পদচারণা থেকে
মুসলিম ভূমিকে পবিত্র করার জন্য
তাদের বিরুদ্ধে বৈষয়িক ও
মানষিকভাবে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা
ওয়াজিব”। (কিতাবু আকীদাতিত
ত্বহাবীয়া, শায়খ আলবানীর শরাহ ও
তা’লীক কৃত,পৃষ্ঠা৪৮)
.
সাম্রাজ্যবাদী কাফের হল,বিদেশী কাফের।
আমি পূর্বে বর্ণনা করেছি যে,
মুসলমানদের উপর চেপে বসা
কাফের স্বদেশী হোক, বিদেশী
হোক, তাদের মাঝে কোনই
তারতম্য নেই। কেননা উভয়
অবস্থায়ই তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ
ওয়াজিব হওয়ার কারণ বিদ্যমান।
তা হচ্ছে কুফরের বৈশিস্ট্য।
এছাড়া স্বদেশী কাফের তার
কুফরীর কারণে মুসলামনদের
থেকে পরদেশী হয়ে যায়।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎﻧُﻮﺡُ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻚَ ﺇِﻧَّﻪُ ﻋَﻤَﻞٌ
ﻏَﻴْﺮُ ﺻَﺎﻟِﺢٍ “আল্লাহ বললেন, হে নুহ!
তুমি নিশ্চিত জেনে রেখ, সে
তোমার পরিবারবর্গের অন্তর্ভূক্ত
নয়। সে তো অপবিত্র কর্মে
কলুষিত”। (হুদ:৪৬)
পূর্বে এ ব্যাপারে বিস্তারিত
আলোচনা করে এসেছি।
.
.
১০। একই কিতাবে শায়খের কথার
মধ্যে আরেকটি বৈপরীত্য হল,
তিনি বলেন- “জানা আবশ্যক যে,
জিহাদ দুই প্রকার। প্রথম হল, ফরজে
আইন, তা হচ্ছে মুসলমানদের দেশে
জমায়েত হওয়া শত্রুকে প্রতিহত করা।
যেমন, বর্তমানে ইহুদীরা
ফিলিস্তীনকে অন্যায়ভাবে দখল
করে নিয়েছে। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত
তারা সেখান থেকে বের না হয়ে
যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত মুসলিমরা
গুনাহগার হবে”।
অথচ আমি এই পর্বেই পূর্বে
উল্লেখ করেছি যে মুরতাদ
শাসকরাও কাফের শত্রু, যারা
মুসলমানদের দেশে চেপে বসেছে
এবং একারণে তাদের বিরুদ্ধেও
জিহাদ করা ফরজে আইন, বরং
ইহুদীদের সাথে জিহাদ করার
চেয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ
করা দুুই কারণে অগ্রগণ্য: ১.
নিকটবর্তীতা ২. ধর্মান্তরিত
হওয়া। বস্তুত: এই সমস্ত মুরতাদ
শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা ব্যাতীত
ইহুদীরা ফিলিস্তীনের এক ইঞ্চি
জায়গায়ও স্থির থাকতে পারবে
না।
.
এখানে শায়খকে আমাদের একটি
প্রশ্ন করার আছে- তিনি এক
দিকে বললেন, শাসকদের জুলুম
থেকে পরিত্রাণের উপায় হল, ইলম ও
তারবিয়াতের মাধ্যমে আত্মসংশোধন
করা। অন্য দিকে বললেন, ইহুদীদের
থেকে পরিত্রাণের উপায় হল, জিহাদ।
অথচ মুরতাদ শাসক ও ইহুদী উভয় শ্রেণী
কাফের, যারা মুসলামনদের উপর
তাদের গুনাহের প্রতিফল হিসাবে
চেপে বসেছে। তাহলে শায়খ কেন
উভয় শ্রেণীর মোকাবিলার মাঝে
পার্থক্য করেন?
.
ওমর ইবনুল খত্তাব রা. পারস্য
অভিযানে বের হওয়ার সময় সা’দ
ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা: কে
বলেন, “এমনটি বলো না যে, আমাদের
শত্রুরা আমাদের চেয়ে নিকৃষ্ট,
একারণে আমাদের উপর তাদেরকে
চাপিয়ে দেয়া হবে না। কেননা
অনেক সম্প্রদায়ের  উপর তাদের
চেয়ে নিকৃষ্ট লোকদেরকে চাপিয়ে
দেয়া হয়েছে। যেমন, বনী ঈসরাইলরা
আল্লাহর অসন্তুষ্টির কাজে লিপ্ত
হওয়ার কারণে তাদের উপর অগ্নি
পূজক কাফেরদেরকে চাপিয়ে দেয়া
হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻓَﺠَﺎﺳُﻮﺍ ﺧِﻠَﺎﻝَ ﺍﻟﺪِّﻳَﺎﺭِ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻭَﻋْﺪًﺍ ﻣَﻔْﻌُﻮﻝً
“তারা তোমাদের নগরে প্রবেশ
করে ছড়িয়ে পড়ল। এটা ছিল এমন এক
প্রতিশ্রুতি, যা কার্যকর হওয়ারই
ছিল”। (ইসরা:৫)
.
এই উপদেশটি পূর্বে অতিবাহিত
হয়েছে। মারফু সূত্রে বর্ণিত
সাওবান রা.এর হাদীসে রয়েছে-
ﻭ ﺃﻥ ﻻ ﺃﺳﻠﻂ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻋﺪﻭﺍ ﻣﻦ ﺳﻮﻯ
ﺃﻧﻔﺴﻬﻢ ﻓﻴﺴﺘﺒﻴﺢ ﺑﻴﻀﺘﻬﻢ ﻭ ﻟﻮ ﺍﺟﺘﻤﻊ
ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﺃﻗﻄﺎﺭﻫﺎ ﺣﺘﻰ ﻳﻜﻮﻥ
ﺑﻌﻀﻬﻢ ﻳﻔﻨﻲ ﺑﻌﻀﺎ
“আর আমি তাদের উপর এমন কোন
বহি:শত্রু চাপিয়ে দিব না, যে
তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে
পারবে, যদিও পৃথীবির সকল মানুষ
তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়, যতক্ষণ
পর্যন্ত তারা নিজেরাই একে অপরকে
ধ্বংস না করে ও বন্দী না করে”।
(মুসলিম)
.
এটা এ ব্যাপারে স্পষ্ট বিবরণ যে
যখন মুসলমানরা চুড়ান্ত বিকৃতির
মধ্যে পৌঁছে যায়, তখনই
কাফেররা তাদের উপর চেপে
বসে। এটা হল তাকদীরী ব্যাপার।
তাহলে কি যখন কাফের শত্রু
মুসলমানদের উপর চড়াও হয়ে যায়
তখন শুধু তাকদীরী উপায়ে তথা
আত্মসংশোধনের মধ্যমে এই
সীমালংঘন প্রতিহত করাই যথেষ্ট?
.
নাকি আল্লাহ তায়ালার
বিধিবদ্ধ জিহাদের মাধ্যমে এই
সীমালংঘন প্রতিহত করা
ওয়াজিব। এই ক্ষেত্রে কোন
বিষয়ে পূর্বসূরী উলামাদের ইজমা
সংঘটিত হয়েছে?
.
তারবিয়াতের উপর, নাকি জিহাদ
ফরজে আইন হওয়ার উপর?
কোনটি বড় ওয়াজিব?
.
মুরতাদ তথা এ সমস্ত শাসকদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, নাকি আদি
কাফের তথা ইহুদীদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করা?
.
মুসলমানদের নিকটবর্তী শত্রু তথা
এ সমস্ত শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করা বড় ওয়াজিব, নাকি দূরবর্তী
শত্রু তথা ইহুদীদের যুদ্ধ করা বড়
ওয়াজিব?
.
শায়খ বলেছেন, “কোন মূলনীতির
উপর ভিত্তি করার জন্য প্রথমে উক্ত
মূলনীতিটির সংশোধন প্রয়োজন”-
আমরা এ ব্যাপারে তার সাথে
একমত যে, কাফেরদের ফিতনা
নির্মূলের জন্য যেন একটি
জিহাদী দল প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়,
এর জন্য দাওয়াত ও তারবিয়াতের
আবশ্যকীয়তা রয়েছে, তবে আমরা
জিহাদকে মূল উদ্দেশ্য করা
ব্যতীত সাধারণভাবে দাওয়াত ও
তারবিয়াহ ফলদায়ক হবে বলে
মনে করি না, কেননা ধ্বংস ও
বিপর্যয়ের উপাদানগুলোও তো
অপর দিক থেকে কাজ করছে
(অর্থৎ ফেতনার দাওয়াত দিচ্ছে)।
আর তাদেরকে সহযোগীতা করছে
সরকারী শিক্ষা, তথ্য ও ওয়াক্ফ
মন্ত্রণালয়গুলো, তাদেরকে
সংরক্ষণ করছে পুলিশী ফোর্স।
অতএব পুনরায় স্মরণ করাতে চাচ্ছি
যে, সংস্কারের মাধ্যম হিসাবে
তারবিয়ার উপর ক্ষ্যান্ত থাকা
আসলে শরয়ী ওয়াজিব তথা জিহাদ
থেকে গাঁ বাচানোর একটি মাধ্যম,
এটা রাসূল সা: এর আদর্শ বিরোধী।
তিনি শুধু তারবিয়ার পথেই
চলেননি। বরং তিনি এমন দাওয়াত
দিয়েছেন, যার মাধমে এমন একটি
প্রভাবশালী দল প্রতিষ্ঠিত হয়,
যাদেরকে নিয়ে তিনি
কাফেরদের সাথে যুদ্ধ ও জিহাদ
করতে পারেন, যা আল্লাহ
তায়ালার এই আদেশের
বাস্তবায়ন- ﻭﻗﺎﺗﻞ ﺑﻤﻦ ﺃﻃﺎﻋﻚ ﻣﻦ
ﻋﺼﺎﻙ “যারা তোমার আনুগত্য কওে
তাদেরকে নিয়ে যারা তোমার
অবাধ্যতা করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
কর”। (মুসলিম)
.
এবং  এই আয়াতের বাস্তবায়ন-
ﻓَﻘَﺎﺗِﻞْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺎ ﺗُﻜَﻠَّﻒُ ﺇِﻟَّﺎ ﻧَﻔْﺴَﻚَ
ﻭَﺣَﺮِّﺽِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻋَﺴَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻒَّ
ﺑَﺄْﺱَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ
“সুতরাং (হে নবী!) তুমি আল্লাহর
পথে যুদ্ধ কর। তোমার উপর তোমার
নিজের ছাড়া অন্য কারও দায়ভার
নেই। অবশ্যই মুমিনদেরকে উৎসাহ
দিতে থাক। অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ
কাফেরদের যুদ্ধ ক্ষমতা চূর্ণ করে
দিবেন”। (নিসা:৮৪)
.
আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের
আগ্রাসন প্রতিহত করা ও তাদের
ফেতনা নির্মূল করার পন্থা
হিসাবে মুমিনদেরকে যুদ্ধের
প্রতি উৎসাহিত দিতে বলেছেন।
এই আয়াত ও হাদীসটির পূর্বেও
দু’টি বিবরণ রয়েছে, যা আয়াত ও
হাদীসটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে
দেয়।
.
আমরা স্বীকার করি, ইলম ও
তারবিয়াতও যথার্থ, এগুলোও
জিহাদের প্রস্তুতির অংশ। যেন
এমন একটি প্রভাবশালী দল
প্রতিষ্ঠিত  হতে পারে, যারা
পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন
প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
এতদ্বসত্ত্বেও আমরা বলি যখন
কোন মুজাহিদ দলে আক্ষরিক
শক্তি পূর্ণ হয়ে যায়, অথচ তার
সমপরিমাণ সন্তুষজনক তারবিয়াহ
হয়নি, তখন এ অবস্থায়ও
শরয়ীভাবে জিহাদ ফরজ।
কেননা আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল
জামাতের স্থির মূলনীতি হল- “যে
কোন- নেককার বা বদকার আমীরের
সাথে জিহাদ করতে হবে”।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top