শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

ইসলামি বসন্ত-আইমান জাওয়াহিরি-part-5

কোন মন্তব্য নেই:

পূর্বের আলোচনা ছিল, ইরাক ও শামে
ক্রুসেড আক্রমণে করণীয় এবং
খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহর
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন নিয়ে। আর
আজকের মজলিসে দুটি প্রশ্ন ও তার
উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে।
.
প্রথম প্রশ্নঃ বর্তমান পরিস্থিতি কি
খিলাফাহ ঘোষণার উপযুক্ত?
.
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ যদি বর্তমান
পরিস্থিতি খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার জন্য
উপযুক্ত না হয় তাহলে খিলাফাহ
প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের করণীয় কি?
.
১। প্রথম প্রশ্নের জবাবে যাওয়ার
পূর্বে আমি কিছু বিষয়ের অবতারণা
করতে চাই। আসলে খিলাফাহ ধবংসের
পর থেকে নিয়ে আজও পর্যন্ত উম্মাহর
একটি দল অব্যাহতভাবে খিলাফাহ
প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
এই যে আজ পৃথিবীর দেশে দেশে আল
কায়েদা, তালেবান আর ইরাকের আই
এস এই অব্যাহত প্রচেষ্টারই কিছু ফল
মাত্র। আর প্রকৃত কথা হচ্ছে আই এসতো
আল কায়েদারই একটি শাখা ছিল।
কিছু দিন পূর্বেও তারা ইরাকে আল-
কায়েদার শাখা হয়ে কাজ করেছে।
এ ব্যাপারে আমি শায়েখ উসামা বিন
লাদেন রহ. এর খিলাফাহ আ’লা
মিনহাজুন নুবুয়্যাহ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও
তার চেষ্টা সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে
কিছু বলার প্রয়াস পাবো।
.
* এ ক্ষেত্রে তাঁর অন্যতম প্রচেষ্টা
ছিল, আফগান জিহাদকে সমর্থন করা।
তিনি আফগানকে ইসলামের এক মজবুত
দুর্গ বানাতে চেয়েছেন। আর এ
উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন দেশে জিহাদী
আন্দোলনকে সহযোগিতা করেছেন।
বিভিন্ন স্থানে দাওলায়ে ইসলামিয়া
প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সহযোগিতা
করেছেন। উদ্দেশ্য ছিল চুড়ান্তভাবে
খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার পথ সংহত করা।
.
* তার প্রচেষ্টার আরেকটি ক্ষেত্র
ছিল, সুদান সরকারকে সমর্থন করা।
যাতে সুদানে একটি শক্তিশালী
অর্থনৈতিক ভিত গড়ে উঠে এবং
ইসলামী আন্দোলনগুলো সেখানে
সাহায্য পায়।
.
শায়েখ উসামা রহ. তাঁর দূরদর্শী
দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বুঝতে
পেরেছিলেন যে, যে রাষ্ট্রই ইসলামী
হুকুমত কায়েম করতে সক্ষম হবে তার
উপরই পশ্চিমা ক্রুসেডাররা
অর্থনৈতিক আক্রমণ চালাবে। আর
সুদান তার বিস্তৃত কৃষিজ সম্পদের
মাধ্যমে যে কোন ইসলামী রাষ্ট্রকে
প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরহ. করতে
পারবে। অর্থনীতির গুরুত্ব বুঝাতে
গিয়ে শায়েখ বলেন- আসলে ইসরাইল
রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে ইহুদীদের
আর্থিক সাপোর্টের উপর ভিত্তি
করেই।
.
* শায়েখের আরেকটি পরিকল্পনা
ছিল, নাইজেরিয়া থেকে সুদান পর্যন্ত
হজ্বের জন্য দীর্ঘ একটি স্থল পথ
নির্মাণ করা যাতে করে আফ্রিকান
মুসলিম দেশগুলোর একটি আরেকটির
সাথে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও
জাতিগত একটা বন্ধন তৈরী হয়।
.
* এরপর শায়েখ দ্বিতীয়বার আফগানে
ফিরে এলেন এবং পুরা উম্মাহকে
একটি টার্গেটকে- তথা আমেরিকা
আমাদের শত্রু- সামনে রেখে জিহাদী
আন্দোলনের প্লাটফর্মে একত্র করার
চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করলেন। পূর্বের
সকল অভিজ্ঞতাকে পর্যালোচনা করে
উম্মাহকে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের
জন্য উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করলেন। যাতে
করে পুরো উম্মাহকে নিয়ে ধীরে
ধীরে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার দিকে
এগুনো যায়।
.
অতঃপর শায়েখ ইমারতে ইসলামির
শত্রু, মুজাহিদদের ঐক্যের শত্রু,
খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার শত্রু-আমেরিকা
ও তার এজেন্টদের বিরুদ্ধে আমীরুল
মুমিনিন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর রহ.
এর ঝান্ডাতলে জিহাদে শরীক হন
এবং বিভিন্ন স্থানে আমেরিকার
বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করতে
থাকেন। ৯/১১ এর ঘটনাও এর মধ্যে
অন্যতম। আস-সাহাব ফাউন্ডেশন
বিভিন্ন সময় বিষয়গুলো প্রকাশ
করেছে। কংগ্রেস সরকারও বিষয়টি
স্বীকার করেছে।
.
এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক
ঘটনাটি হল, শায়েখ ওসামা বিন
লাদেন রহ. আমীরুল মুমিনিন মোল্লা
মোহাম্মাদ ওমর রহ. এর কাছে বাইয়াত
দেওয়া। আসলে বিষয়টি শায়েখের
দূরদর্শিতারই প্রমাণ। শায়েখ মুসলিম
উম্মাহকে আমীরুল মুমিনীনের হাতে
বাইয়াত হতে আহ্বান করেন। কারণ,
তাঁর মধ্যে ইমামতের সকল গুনাবলী
বিদ্যমান ছিল।অতঃপর আফগানের
মুজাহিদ এবং আল-কায়েদার সকল
শাখাই আমীরুল মুমিনীনের হাতে
বাইয়াত দেন। তাদের মাঝে ইরাকের
দাওলাতে ইসলামিয়াও একটি।
আল-কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ বীর
সেনানীদের মধ্যে দুইজন বীর ছিলেন,
শহীদ শায়েখ আবু মুসাব আয-যারকাবী
এবং শহীদ শায়েখ আবু হামজা আল
মুহাজির রহ। আপনারা কি জানেন এই
দুই বীরসেনানি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রাজুয়েট?
.
শায়েখ আবু মুসাব যারকাবি রহ.
শায়েখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. এর
জিহাদি মাদরাসার ছাত্র। অতঃপর
তিনি শায়েখ আবু মোহাম্মাদ আল
মাকদিসি রহ. এর হাতে দীক্ষা নিয়ে
আল-কায়েদার এক সাহসী সেনায়
পরিণত হন।
.
আমি এখানে শায়েখ ওসামা রহ. এর
প্রতি তাঁর বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের
দুটি উপমা পেশ করছি। যাতে করে এটা
সকলের জন্য বিশেষ করে মুজাহিদদের
জন্য উত্তম চরিত্র এবং পথের পাথেয়
হয়।
.
১। শায়েখ আবু মুসাব রহ. এক অডিও
বার্তায় শায়েখ ওসামা রহ. এর প্রতি
আনুগত্য প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি
আপনার একজন সৈনিক মাত্র’। আপনি
চাইলেই আমাকে অপসারণ করতে
পারেন। বিষয়টি পরীক্ষা করার সুযোগ
আছে। শায়েখ জাওয়াহিরী আমাকে
বিভিন্ন বিষয়ে শুধুমাত্র পরামর্শ দেন;
যদি তা চূড়ান্ত নির্দেশ হত তাহলে
আমি নিশ্চিতভাবে পালন করতাম।
.
২। শায়েখ আবু মুসাব আয-যারকাবী রহ.
এর পক্ষ থেকে একবার খোরাসানে
তার এক দূত আসলো এবং সে বিভিন্ন
কমান্ডারদের সাথে সাক্ষাৎ করে।
যাদের মধ্যে একজন হলেন শায়েখ
মুস্তফা আবু ইয়াজিদ রহ.। তিনি তাঁকে
শায়েখ আবু মুসআব রহ. সম্পর্কে বলেন,
শায়েখ যখন বিভিন্ন মুজাহিদ গ্রুপের
সামনে মজলিসে শুরা গঠনের বিষয়টি
পেশ করলেন। তখন একটি গ্রুপ বিলাদে
রাফেদাইনের আল-কায়েদার শাখা মূল
আল-কায়েদা থেকে পৃথক হওয়ার শর্ত
করলে তখন শায়েখ আবু মুসাব রহ. বলেন,
“শায়েখ উসামা রহ. এর সাথে আমার
বাইয়াত ভঙ্গের ব্যাপারে আমি
আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি”।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে
শায়খ যারকাবী রহ. থেকে শায়েখ
উসামা রহ. এর প্রতি প্রেরিত দুই
রিসালাহ দেখতে পারেন।
.
১। শায়েখ উসামার আল কায়েদার প্রতি
আনুগত্যের ঘোষণা
.
২। সৈনিকের পক্ষ থেকে আমীরের প্রতি চিঠি। আর শায়েখ আবু হামজা আল মুহাজির রহ.
এর ব্যাপারে কথা হল, তিনি তো
জিহাদী জামাতের মধ্যেই বেড়ে
উঠেছেন এবং তার একজন নিষ্ঠাবান
সৈন্য ছিলেন। আমি তাঁকে ছোট
ভাইয়ের মত দেখতাম। তিনি অনেকবার
বিভিন্ন অভিযানে আমার সঙ্গী
হয়েছেন এবং আমার পাহারাদারী
করেছেন। তিনি এবং শায়েখ আবু
ইসলাম আল মিসরী রহ. এক সাথে
আফগানিস্তানে শায়েখ ওসামা রহ.
এর হাতে বাইয়াত দিয়েছেন। তিনি
অনেক বার আমার সাথে, শায়েখ
ওসামা ও শায়েখ মুস্তফার সাথে
পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন।
তাতে যথাক্রমে চাচা, পিতা, মামা
সম্বোধন করেছেন। সে শায়েখ আবু ওমর
আল-বাগদাদী রহ. কে বাইয়াত
দেওয়ার সময় এই শর্ত দিয়েছেন যে
তাঁকে শায়েখ ওসামার হাতে বাইয়াত
দেওয়ার মাধ্যমে আমীরুল মুমিনীন
মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের
কাছে বাইয়াত দিতে হবে।
.
শায়েখ আবু মুসাব যারকাবী রহ. এর
শাহাদাতের পর শায়েখ আবু হামজা
যে খুতবা দেন তাতে তিনি বলেন
“আমাদের শায়েখ ও আমাদের আমীর
হলেন ওসামা বিন লাদেন”
শায়েখের বক্তব্যের কিছু অংশ এখানে
তুলে দেওয়া হল, “আল্লাহ তাআ’লা
আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং
এমন কিছু দুঃসাহসী ভাদের মাধ্যমে
আমাদের সম্মানিত করেছেন যারা
আমাদের সাথে মুজাহিদদের মজলিসে
শূরার প্ল্যাটফর্মে একত্রিত করেছেন।
তারা ছিলেন সর্বোত্তম সহযোগী।
আমরা একে অপরকে সাহায্যের
ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলাম এবং
আমরা সকলেই আমাদের সালাফদের
মানহাজ আঁকড়ে ধরার ব্যাপারে
অবিচল ছিলাম। হে আল্লাহ আপনি
আমাদের পক্ষ থেকে ও সকল
মুসলমানদের পক্ষ থেকে তাদের উত্তম
বিনিময় দান করুন।
.
আমাদের শায়েখ ও আমীর হলেন আবু
আব্দুল্লাহ ওসামা বিন লাদেন। হে
শায়খ! আমরা আপনার নির্দেশের
গোলাম। এবং আপনার নির্দেশ
মান্যকারী। আপনার সৈন্যরা দৃঢ়
আত্মবিশ্বাস, উঁচু মনোবল আর কোমল
হৃদয় নিয়ে আপনার ঝান্ডাতলে সমবেত
হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয়
সমাগত।”
সুতরাং এ কথা কিভাবে
বিশ্বাসযোগ্য হবে যে, আমীরের প্রতি
অনুগত এই দুই বীর শহীদ তাদের আমীর
শায়েখ ওসামা বিন লাদেনের সাথে
তাদের অঙ্গীকার বা তাঁকে দেওয়া
বাইয়াত ভঙ্গ করেছেন? আসলে এ
ধরনের কথা সত্যের অপালাপ বৈ কিছুই
নয়।
.
এরপর কথা হল, কি কারণে শায়েখ আবু
হামজা আল মুহাজির এ ধরণের কাজ
করবেন? এ ধরণের কাজ কি মুজাহিদের
ঐক্যের জন্য উপকার না অপকার?
কেনইবা শায়েখ আবু হামজা আল
মুহাজির আমীরুল মুমিনীন মোল্লা
মোহাম্মাদ ওমর রহ. এর আনুগত্য ত্যাগ
করবেন?
.
ফলাফল কি হতো যদি আল-কায়েদার
সকল শাখা-প্রশাখা অথবা আমীরুল
মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের
হাতে বাইয়াতকৃত সকল জামাত এরকম
করতো। যেমনটি অপবাদকারীরা
শায়েখ আবু হামজা আল মুহাজির রহ.
এর নামে প্রচার করে থাকে? এর
মাধ্যমে মুজাহিদদের ঐক্য নষ্ট ছাড়া
আর কোন লাভ নেই। অর্থাৎ এর
মাধ্যমে শুধু মুজাহিদদের ঐক্যই নষ্ট
হবে। যারা এরকমটি করছে তারা
আসলে কী চায়? তারা কি
মুজাহিদদের ঐক্য চায়?
এমন মিথ্যা অপবাদ কেনো প্রচার করা
হচ্ছে এবং কারা এই মিথ্যা প্রচার
করছে। এবং কারা এর মাধ্যমে
লাভবান হচ্ছে যে আবু হামজা আল
মুহাজির রহ. একচেটিয়া ভাবে শায়েখ
ওসামা রহ. ও আমীরুল মুমিনীন মোল্লা
মোহাম্মাদ ওমর রহ. কে দেওয়া
বাইয়াত ভঙ্গ করেছেন?
এর উত্তর হল বাগদাদী ও তার জামাত।
বাগদাদী ও তার জামাতই এই মিথ্যা
প্রচার করছে। এরা শরীয়তের বিচার
থেকে পালানোর অজুহাত দাঁড়
করানোর জন্য এসব খোঁড়া ও মিথ্যা
যুক্তি প্রকাশ করছে। তারা মাশওয়ারা
বিহীন খিলাফতের ঘোষণার মাধ্যমে
উম্মাহর সম্মিলিত হক ছিনতাই করেছে,
সুতরাং তারা ছিনতাইকারী। তারা
তাদের আমীরের আনুগত্য ত্যাগ
করেছে, সুতরাং তারা বাগী। আর
যারা তাদের এই অপরাধমূলক কাজের
বিরোধিতা করে তাদেরকে তারা
নানা রকমের মিথ্যা অপবাদে
জর্জরিত করেছে। যেমন দল ত্যাগী,
ধর্ম নিরপেক্ষবাদী, গনতন্ত্রপন্থী,
ইখওয়ানপন্থি ইত্যাদি। সুতরাং তারা
মিথ্যাবাদী।
.
হে আবু মুসাব আয-যারকাবী ও আবু
হামজা! আল্লাহ তাআ’লা আপনাদের
উপর রহম করুন। আপনাদের মৃত্যুর পর
আমাদের মসিবত অনেক বেড়ে গেছে।
(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
.
ফিরে আসি মূল কথায়। শায়েখ ওসামা
ইহুদী-খৃষ্টানদের মকাবেলার জন্য
একটি আন্তর্জাতিক জিহাদী সংগঠন
গঠন করার মাধ্যমে ইসলামী
আন্দোলনের সকল দলকে একত্রকরণের
চেষ্টা চালিয়েছেন। অতঃপর শায়েখ
এই সংগঠন তথা আল-কায়েদাকে
ইমারতে ইসলামিয়ার পতাকা তলে
একত্র করেছেন। শুধু তাই নয়, শায়েখ
আল কায়েদাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে
দেওয়ার লক্ষে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন
নামে আল-কায়েদার শাখা খুলেছেন
এবং সকল শাখা এবং সকল দলকে
একজন আমীর তথা আমীরুল মুমিনীন
মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের
ঝান্ডাতলে একত্র করেছেন।
এই হল শায়েখ ওসামা রহ. এর
খিলাফাহ প্রতিষ্টার ভিত্তি তৈরীর
দীর্ঘমেয়াদী স্কিম। এই কঠিন ও
মুবারক পরিকল্পনার পরও শায়েখ এবং
তার সহযোগী ভাইয়েরা বর্তমান
সময়কে খিলাফাহ তো দূরের কথা
একটি ইমারতে ইসলাম ঘোষণার জন্যো
উপযুক্ত মনে করতেন না। আমেরিকা
শায়েখ ওসামা রহ. এর যেসব চিঠি-পত্র
ও দস্তাবেজ প্রকাশ করেছে; তাতেও
এসব পরিকল্পনার কথা রয়েছে। তবে
আমি আমেরিকা কি প্রকাশ করেছে
তা দেখতে বলছিনা। আমার উদ্দেশ্য
হল জিহাদ ও মুজাহিদীনকে সমর্থন
করেন কিংবা সক্রিয় ভুমিকা পালন
করেন-এমন সবার উচিৎ হল এসব
দস্তাবেজ ভালো করে অধ্যয়ন করা।
এক মুজাহিদ ভাই আমাকে বলেছেন,
তিনি তাঁর সাথিদেরকে এ সকল দলীল
দস্তাবেজ পড়ে শুনান, যাতে করে এতে
যে শিক্ষা ও উদ্দেশ্য আছে তা থেকে
পরিপূর্ণ ফায়দা হাসিল করা যায়।
শায়েখ ওসামা ও তাঁর সঙ্গীরা যে ঐ
সময় ইমারত ঘোষণার অনুমতি দেননি তা
এ কারণে নয় যে, তাঁর সাথীরা এ
ব্যাপারে অবহেলা বা ত্রুটি করেছেন
বরং এটা ছিল বাস্তবসম্মত ইজতেহাদ
ও সঠিক পরিকল্পনারই দাবি। এর মধ্যে
তারা জিহাদ ও মুসলিম উম্মাহর
কল্যাণ দেখতে পেয়েছেন। কারণ, “সময়
আসার পূর্বে তাড়াহুড়ো করে কোন
কাজ করাই তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার
জন্য যথেষ্ট।”
.
শুধুমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত ভুখন্ডের কিছু
অঞ্চল দখল করাই যদি খিলাফাহ
ঘোষণার জন্য যথেষ্ট হত তাহলে তো
আল-কায়েদা কত আগেই খিলাফাহ
ঘোষণা করতে পারত। কারণ, বিভিন্ন
স্থানে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল-
কায়েদার বিভিন্ন শাখা বিশাল-
বিশা; অঞ্চল দখল করে সেখানে তারা
শরীয়ত প্রতিষ্ঠার কাজে রত আছে;
বরং আমীরুল মুমিনীন মোল্লা
মোহাম্মাদ ওমর রহ. এই ঘোষণার বেশি
হকদার। কারণ, তিনি তো বহু আগে
থেকেই বিশাল অঞ্চল দখল করে
সেখানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করেছেন।
হে আল্লাহ আপনি সকল মুসলমান ও
মুজাহিদদের রক্ষা করুন এবং তাদের
বিজয় দান করুন! আমীন!
এখানে কয়েকটি সংশয় সৃষ্টি হয়ঃ
.
১। পরিস্থিতি অনুকূলে আসার আগ
পর্যন্ত বাইয়াত থেকে বিরত থাকা কি
গুনাহ?
.
উত্তরঃ- না। অনেক সাহাবী রা.
পরিস্থিতি অনুকূলে আসার আগ পর্যন্ত
হুসাইন রা. কে বিদ্রোহ করা এবং
নিজের জন্য বাইয়াত চাওয়া থেকে
বিরত রাখতে চেয়েছেন। পরবর্তীতে
এটাই প্রমাণ হয়েছে যে, তাদের
সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। অথচ বিদ্রোহ
করার পূর্বেই অনেকে তাঁকে বাইয়াত
দিয়ে ছিল এবং তিনি নিজেকে
খলীফা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর
বাইয়াত তলব করেননি।
তাঁকে যারা বাঁধা দিয়েছেন তাদের
মধ্য থেকে একজন হলেন-আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রা., যিনি আলী রা. এর
একজন বড় সমর্থক ছিলেন ও তাঁর
ঝান্ডাতলে যুদ্ধ করেছেন।
.
২। আপনারা মনে করেন যে, খিলাফা
ঘোষণার জন্য পরিস্থিতি অনুকূল নয়।
অথচ আমরা তো দেখছি যে, খিলাফাহ
ঘোষণার জন্য পরিস্থিতি পুরোপুরিই
অনুকূল। এটা আপনাদের ইজতেহাদ। আর
আমরা যেটা করছি সেটা আমাদের
ইজতেহাদ।
.
এর উত্তরঃ- যদি জমহুর মুসলমানগণ
আপনাদের সাথে একমত হয়ে থাকে
তাহলে তো ঠিক আছে্ কোন সমস্যা
নেই; কিন্তু তারা তো আপনাদের
সাথে একমত হতে পারছেনা। সুতরাং
মাশওয়ারা ব্যাতীত মুসলমানদের বিষয়
নিয়ে একক সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার
আপনাদের নেই।
.
৩। বর্তমান পরিস্থিতি যদি খিলাফাহ
প্রতিষ্ঠা ঘোষণার জন্য অনুকূল না হয়ে
থাকে তাহলে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার
জন্য আমাদের করণীয় কি?
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে
কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করে নেওয়া
সঙ্গত মনে হচ্ছে।
.
১। আমাদের উপর ইমারতে ইসলামিয়ার
বায়াত আছে। আমরা তো আর তা নিয়ে
তামাশা করতে পারি না।
.
২। বর্তমানে ইমারতে ইসলামিয়া
আফগানিস্তানের পরামর্শ ব্যাতীত
কোন খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা হতে পারে
না। কারণ, এটা হল বর্তমান
মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় এবং
সবচেয়ে পুরাতন ইমারতে ইসলাম।
অনুরূপভাবে ককেশাশের ইমারারও
পরামর্শ আবশ্যক এবং বিশ্বের নানা
প্রান্তে অবিচলভাবে জিহাদরত
দলগুলোর পরামর্শ ব্যাতীত খিলাফাহ
প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। কেননা
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ও
ইমারতে ককেশাস ও অন্যান্য দেশের
মুজাহিদ সংগঠনগুলো যেহেতু
শরয়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত তাই এদেরকে
ছুড়ে ফেলার কোন সুযোগই নেই এবং
এদের পরামর্শের তোয়াক্কা না করে
স্বৈরতন্ত্রের গোড়াপত্তন শরীয়ত
বিরোধী কাজ। শরীয়ত এটাকে কখনোই
বৈধতা দেয় না। যারা নিজে নিজে
খিলাফাহ গঠন করেছে তাদের ইচ্ছা
যদি খিলাফাহ প্রতিষ্ঠাই হয়ে থাকে
তাহলে তারা আবার ইমারতে
ইসলামিয়া আফগানিস্তানের কাছে
ফিরে আসুক যার বাইয়াত তারা ভঙ্গ
করেছে। তারা যেন আর অপরিচিত
কিছু লোকের বাইয়াতের মাধ্যমে
খিলাফাহ দাবি না করে এবং
অন্যদেরও নিজেদের বাইয়াতের দিকে
আহ্বান না করে।
.
এবার আসছি প্রশ্নোত্তরে। তাহলে
খিলাফা প্রতিষ্ঠায় আমরা কোন
পন্থা অবলম্বন করবো? এর জন্য পন্থা
হলোঃ-
.
প্রথমতঃ- ইমারতে ইসলাম
আফগানিস্তানকে এবং ককেশাসের
ইমারেকে আরো শক্তিশালী করতে
হবে।
.
দ্বিতীয়তঃ পৃথিবীর সকল স্থানে
জিহাদরত মুজাহিদদের সমর্থন ও
সাহায্য করা। বড় শত্রু এবং তাদের
সমর্থনপুষ্ট আঞ্চলিক হোতাদের
বিরুদ্ধে মুজাহিদদের পক্ষে পুরো
উম্মাহকে এক করার চেষ্টা করা।
তৃতীয়তঃ যখনই পরিস্থিতি অনুকূলে
আসবে তখন মুজাহিদীনদের সাথে
পরামর্শ করে বিভিন্ন স্থানে ইসলামী
ইমারা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া।
.
এরপর খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় নিয়ে
ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনার
মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবেঃ-
.
১। এখন কি খিলাফাহ প্রতষ্ঠার
ঘোষনার সময় হয়েছে এবং তাঁর সকল
উপাদান কি প্রস্তুত রয়েছে?
.
২। এরপর যখন অধিকাংশ মুজাহিদ,
ন্যায়-নিষ্ঠ দায়ী এবং সম্ভ্রান্ত
মুসলিমরা একমত হবেন যে, এখন
খিলাফাহ ঘোষণার সময় হয়েছে। এর
পর একটি প্রশ্নের সমাধানের মাধ্যমে
পরামর্শ চূড়ান্ত হবে। আর তাহলে কে
খলীফা হবেন?
উম্মাহর সর্বজনশ্রদ্ধেয় ইমাম, আলেম ও
চিন্তানায়কগন যার ব্যাপারে একমত
হবেন যে, ইনিই খলীফা হওয়ার উপযুক্ত-
তাকে খিলাফতের বাইয়াত দেয়া হবে।
দুটি বিষয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি
আজকের বক্তব্য শেষ করবোঃ-
.
১। মুজাহিদ, আলেম ও দায়ীদের প্রতি
আমার আবেদন, আ যে ব্যাক্তি
স্বেচ্ছায় মুসলমানকে হত্যা করে, তার
শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে
চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি
ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত
করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি
প্রস্তুত রেখেছেন” আপনারা এমন কিছু
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি জোর দিন
হয়তো অনেক সময় শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের
ব্যাস্ততার কারণে তা থেকে গাফেল
থাকা হয়। যেমন তাজকিয়ায়ে নফস
(আত্ম-পরিশুদ্ধি) ও উত্তম চরিত্র গঠন।
.
* আপনারা মুসলমানদেরকে এ বিষয়ে
সতর্ক করবেন যে, সাধারণ সকল
মানুষদের প্রতি বিশেষ করে
মুসলমানদের প্রতি আরো বিশেষ করে
মুজাহিদদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ
দেয়া অনেক বড় অপরাধ এবং এর শাস্ত
অনেক কঠিন।যা ব্যাক্তি কোন দলীল
ছাড়া অন্যায়ভাবে কোন মুসলমানের
প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয় সে
মিথ্যাবাদী। মহান আল্লাহ তাআ’লা
তার ব্যাপারে বলেন, “অতঃপর যখন
তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, তখন
তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী”
.
* আপনার হুরমাতে মুসলিম তথা
মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত-আবরু
সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করবেন এবং
তাদেরকে এ ব্যাপারে আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তাআ’লার বাণী স্মরণ
করিয়ে দিবেন। আল্লাহ তাআ’লা
বলেন,
“যে ব্যাক্তি স্বেচ্ছায় মুসলমানকে
হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম,
তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ
তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে
অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য
ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।”(সূরা
নিসা- ৯৩)
.
* আপনারা মুসলমানকে অন্যায়ভাবে
তাকফীর করা ভয়াবহ পরিণতি
সম্পর্কে সতর্ক করবেন এবং তাদেরকে
আল্লাহর রাসুল সা. এর এই বাণী স্মরণ
করিয়ে দিবেন,
“যদি কেউ তার মুসলমান ভাইকে
কাফের বলে, তাহলে এটা দুজনের
একজনের দিকেই ফিরবে।”(মুসনাদে
আহমদ)
.
* আপনার উম্মাহর সামনে স্পষ্ট করুন,
আমরা আপনাদের জন্য শান্তি
প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা চাই মানুষ
ইসলামের ন্যায়বিচারের মাধ্যমে
সুখে-শান্তিতে থাকবে। আমরা ইনসাফ,
ন্যায়বিচার ও মাশওয়ারার দিকে
আহ্বানকারী। আমরা ইসলামের নামে
ক্ষমতা দখলকারী নই এবং আমরা
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীও নই।
.
* আপনারা তাদেরকে বুঝাবেন আমরা
উম্মাহকে তাকফীর করি না। আমরা
তাদের বন্ধু। আমরা তদের সৎপথ
দেখাতে চাই। আমরা তাদের জান,
মাল ও ইজ্জতের হেফাজতকারী। তার
নিলামকারী নই।
.
২। মুজাহিদ ভাইদের আমি বলবো,
আসলে এটা নতুন কোন বিষয় না; বরং
পূর্বের কথাকেই নতুন করে বলা।
মুজাহিদ ভাইয়েরা! আপনারা সব
জায়গায় স্বতন্ত্রভাবে শরয়ী
বিচারবিভাগ কায়েম করুন। বিচ্ছিন্ন
মুজাহিদদের একত্র হওয়ার আহবান
করছি। শাম ও ইরাকের সকল
মুজাহিদদের এক হওয়ার আহ্বান করছি।
আপনারা ক্রুসেড শত্রু, নুসাইরী,
রাফেজী ও ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিকদের
বিরুদ্ধে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
যুদ্ধ করুন এবং একে অপরকে সাহায্য
সহযোগিতা করুন। জ্ঞানী ও
খোদাভীরুদের জন্য দরজা খোলা।
তারা চাইলেই প্রবেশ করতে পারে।
এরপর আমি আবারও বলছি এবং
বারংবার বলছি, আপনারা ‘খিলাফাহ
আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ’ প্রতিষ্ঠার
জন্য জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতে
থাকুন এবং সামনে অগ্রসর হতে থাকুন ।
জেনে রাখুন! এই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত
হবে মজলিসে শুরা ও সন্তুষ্টির
মাধ্যমে। জোর জবরদস্তি কিংবা
অরাজকতার মাধ্যমে নয় ।
এই জীবন কতইনা সুখের হবে যখন আমার
সম্প্রদায় এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে যে,
কোন ব্যাক্তিস্বার্থ তাকে আর
বিচ্ছিন্ন করবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top