শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১৬

খিলাফাতের অন্তরালে-আবু কাতাদাহ আল ফিলিস্থিনী

কোন মন্তব্য নেই:

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’আলার
যিনি গোটা বিশ্বজগতের প্রতিপালক।
দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মদ
(সাঃ), তাঁর পরিবার ও সাহাবিগণের
(রাঃ)উপর।
//
অতঃপরঃ“ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এন্ড শাম”
নামের গ্রুপটি যা দাবি করছে তা এখন
সবার নিকট প্রকাশ হয়ে গেছে এবং
সবখানেই তাদের ঘোষণা ছড়িয়ে
পড়েছে। তাদের ভাষ্যমতে,তারা এবং
তাদের নেতৃবর্গরাই হচ্ছে “জামাআতুল
মুসলিমীন” (মুসলিম সম্প্রদায়)। আরও
ভালোভাবে বলতে গেলে বলতে হয়
তাঁরা নাকি বৃহত্তর “ইসলামিক খিলাফাহ ”।
//
এই ধরণের আকিদা পোষণ
করেই তারা সারা বিশ্বের মুসলিমদেরকে তাদের নেতাদের হাতে বাইয়াত দেয়ার আহবান জানিয়েছে।তারা যে এমনটি করতে যাচ্ছে শামের
ভাইদের কল্যাণে আমি তা আগেই
জানতে পেরেছিলাম। এই ধরণের
পদক্ষেপ ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিকোণ
থেকে ব্যাখ্যা করার জন্য তারা
আমাকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ
করেছিল। ইতিপূর্বে ধৈর্যের অনন্য
দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী আমাদের
সম্মানিত শায়খ আবু মুহাম্মদ আল
মাকদিসি আমাকে এই বিষয়ে কিছু
লিখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, যখন
আমার কাছে নিশ্চিত খবর পৌঁছল যে,
এই গ্রুপটি তাদের এবং জাবহাত-আন-
নুসরাহ এর মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিটিয়ে
ফেলার আহবান প্রত্যাখ্যান করেছে
এই কথা বলে যে, “তারা হচ্ছে স্টেট বা
রাষ্ট্র। শরিয়তে কিংবা ইতিহাস
থেকে একথা কখনও প্রমানিত নয় যে,
কোন ‘রাষ্ট্র’ মীমাংসার জন্য অন্য
কারও সাথে বসেছে (মুলত এটা তাদের
মিথ্যা দাবি এবং স্পষ্ট গোমরাহী)
//
তাই যে সকল ভাইয়েরা আমার কাছে
এসেছে আমি তাদের বলেছি,এই
তথাকথিত রাষ্ট্রের (দাউলাহ) মাঝে
মুলত ২টি দিক দিয়ে গোমরাহি প্রবেশ
করেছেঃ-
.
প্রথমতঃ গোমরাহি প্রবেশ করেছে
জামাতুল খিলাফাহ/জামাতুল
মুসলিমিন এর উত্থানের ফলে। এবং
এটা এমন এক জামাত যাদের মাঝে ‌শুরু
থেকেই অজ্ঞতা স্পষ্ট। আর এরা যখন
নিজেদের খলিফা দাবি করে বসে
তখন এর পরিণতি হয় খুব খারাপ।
মুসলিমদের কেউ নবিজী (সাঃ) এর
বংশধর কাউকে এই মহান দায়িত্বের
বাইয়াত দিলে এই দাবির কোন শারঈ
ভিত্তি থাকত। এবং তাদের
(জামাআতুল মুসলিমীন) সাথে আমার
লম্বা আলোচনা হয়েছে, যেখানে
তাদের অজ্ঞতা যেকোন শিক্ষানবিশের নিকট স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। আর কোন অভিজ্ঞ
তলিবুল ইলমের কথা বলতে গেলে তো
বলতেই হয়, দাবির মাঝেই তাদের
মূর্খতা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা।
.
এই তথাকথিত খলিফাকে আমি সবশেষ
যে কথাটি বলেছিলাম তা হল,
আপনাদের কর্মপদ্ধতি হল রাফেজি ও
খারেজিদের পথভ্রষ্টতার সমন্বয়।
রাফেজিদের সাথে তাদের মিল হল
তারা এমন একটি পদবি একজনকে
দিচ্ছে যার কোন অস্তিত্বই নেই।
রাফেজিরা তাদের ১২তম ইমাম
মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আল আসকারির
ব্যাপারে যেমন বিশ্বাস পোষণ করে
থাকে। আর আহলুল ইলমরা রাফেজিদের
এই আকিদার অসাড়তা প্রমাণ করে
গেছেন।
.
শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া
“মিনহাজ সুন্নাহ আল নববিয়াহ ” তে
“ইমামত ” সম্পর্কে আহলে সুন্নাহর মত ও
বিবেক- বুদ্ধির আলোকে যে আলোচনা
করেছেন তার শুরুর দিকের বক্তব্য
নিয়ে কেউ যদি একটু চিন্তা-গবেষণা
করে তাহলেই সে এই জামাত তাদের
দাবির ব্যাপারে যে প্রতারণার আশ্রয়
নিয়েছে তা তাঁর নিকট স্পষ্ট হয়ে
যাবে। আমি তাদের বলেছি তাদের
দাবির বাস্তবতা থাকতে হবে। এমনকি
এই দাবির বৈধতাও এটার উপর নির্ভর
করে। তাই খলিফা একটি বাস্তবতার
নাম এবং কোন অযৌক্তিক দাবির
প্রতিচ্ছবি নয়। আপনারা এমন এক দাবি
করছেন যার অস্তিত্বের কোন শারঈ
ভিত্তি নেই। এবং তাদের জবাব ছিল
ইমামতের এই শর্তগুলো শারিয়াহর
আলোকে প্রমাণিত নয়। এ ব্যাপারে
তারা তাৎক্ষনিকভাবে রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) এই হাদিসটি দলিল হিসেবে
পেশ করেঃ
( ﻛﻞُّ ﺷﺮﻁٍ ﻟﻴﺲ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻬﻮ
ﺑﺎﻃﻞ )যেকোন শর্ত যা আল্লাহর
কিতাবে নেই তা বাতিল” (সহিহ
বুখারি)
.
“খলিফা”, “ইমামত”, “ইমারত ” এই
শব্দগুলোর সঠিক অর্থ তাদেরকে
বুঝানোর জন্য আমি চেষ্টা চালিয়ে
যেতে লাগলাম। এই পদগুলো দাবি
করার জন্য যে শর্তগুলো পূরণ করা
লাগে, তা বুঝাতে চেষ্টা করলাম। আর
তারা যদি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে
গাফেল থাকে তারা শারিয়াহর
পরিভাষা থেকে বিচ্যুত হবে। এটা এমন
এক বিষয়, যা কোন ছোট বাচ্চারাও
বুঝবে। কিন্তু তারা সবসময় একই উত্তর
দেয়ঃ “ এই সব তত্ত্ব কথা আমাদের
বুঝে আসে না”।
আমি তাদের সাথে অনেকবার বসেছি
এবং অধিকাংশ সময় তাদের উদ্দেশ্য
থাকে তাদের দাবির ব্যাপারে
আমাকে রাজি করানো। এবং আমি
তাদের জোর দিয়ে বুঝাতে থাকলাম,
আমরা আপনাদের মুসলিম উম্মাহর
একটা অংশ মনে করি, ‘ একমাত্র
আপনারা নিজেরাই ‘মুসলিম উম্মাহ’
নন। আপনাদের কল্পিত দাবিকে
শারিয়াহ এই মহান দায়িত্বের
(খিলাফাহ) সাথে ‌গুলিয়ে ফেলার
কারণে আপনাদের চিন্তাধারা
রাফেজিদের সাথে মিলে যায়।
এবং তারাই হচ্ছে সবচেয়ে মোহগ্রস্থ।
কেননা তারা এমন একজনকে ইমাম বরং
তার চেয়েও বেশি কিছু মনে করে,
যিনি কিনা অনুপস্থিত এবং তার কোন
অস্তিত্বই নেই।
.
আর খারেজিদের সাথে মিলের কথা
বলতে গেলে তাদের সবচেয়ে খারাপ
দিকটির কথাই বলতে হয়। আর তা হল,
যার সাথেই তাদের ভ্রান্ত মতের
অমিল হয়, তাকেই তারা ‘তাকফীর’
বা কাফির সাব্যস্ত করে। এবং
তাদের কথিত ‘খলিফা’ এবং ‘প্রধান
বিচারক’ আমাকে জানিয়েছে যে,
তারা এই আকিদা পোষণ করে-
“কোন ব্যক্তি যদি তাদের
খলিফাকে বায়াত না দেয় তাহলে
সে কাফির” । কিন্তু তারা পরে
জানাল “আমাদের বিশ্বাসের
পরিবর্তন হয়েছে”। “যদিও আমাদের
কেউ কেউ এই আকিদা পোষণ করে
কিন্তু আমরা এখন আর এটা মেনে চলি
না”। তাই তাদের জন্য এটা এমন একটি
বিষয়, যে ক্ষেত্রে মতভেদ ঐক্যের
জন্য কোন সমস্যা নয়। আর এই ধরণের
বিশ্বাসের জন্যই ‌শুরুর দিকে তারা
মানুষের জান-মাল হালাল করার
ক্ষেত্রে যথেষ্ট অজ্ঞতার পরিচয়
দিয়েছে।
.
অবশ্য এখানে আমি তাদের
স্বীকারোক্তির ইতিহাস নিয়ে লিখতে বসিনি। তাদের খলিফা এবং প্রধান বিচারকের সাথে আমার ফয়সালা ভালোভাবেই শেষ হয়েছে
এবং তাদের ব্যাপারেও আমার বক্তব্য
আগের মতই থাকবে। আমি যতটুকু জানি
তাদের কিছু অনুসারী আমার উপর
কুফরের ফতোয়া আরোপ করেছে !
এবং তাদের একজন এই ফতোয়া
প্রকাশ্যে প্রচার করা ‌শুরু করে। এমনকি
সে মসজিদে জনসমাবেশ করে এই
ফতোয়া প্রচার করতে থাকে যতক্ষণ
না আমাদের একজন শায়েখ যার নাম
আবু ইয়াদ, আমাকে না জানিয়ে আমার
এবং তার মাঝে একটি মিটিং এর
ব্যবস্থা করলেন। যেহেতু সে আমার
সাথে কোন রকম আলোচনা বা সাক্ষাৎ
করার ক্ষেত্রে কোনভাবেই রাজি
ছিল না। শায়খ ছিলেন আমাদের মাঝে
বয়োঃজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই আমি যখন
শায়েখ আবু ইয়াদের বাসায় গেলাম
তখন ওই ব্যক্তি আমাকে চিনতে পারল
না যতক্ষণ না আমি তাকে নিজের
পরিচয় দিলাম।
.
তাই সে চলে যেতে চাইল কিন্তু ঘরের
মালিকের উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে
সে বসতে বাধ্য হল। যখন আলোচনা শুরু
হল এবং শায়েখ আবু ইয়াদ তা
প্রত্যক্ষ করেছেন, “জামাতুল
খলিফা” এর এই শীর্ষ পর্যায়ের
ব্যক্তি ঘুরে ফিরে এই কথাই বলতে
লাগল যে, “আমি কাফির” । আমি
তাকে তাকফিরের মূলনীতি সম্পর্কে
জিজ্ঞাস করে তাঁর মধ্যে অজ্ঞতা
ছাড়া আর অন্য কিছু খুঁজে পাই নি।
এবং যখন সে ঘামতে শুরু করল, তখন তার
জন্যই আমার কষ্ট হল। তাই আমি ঘরের
মালিকের কাছে অনুমতি চাইলাম
যাতে তাকে চলে যেতে দেয়া হয় আর
শেষ পর্যন্ত তাই হল।
.
আমাকে তাকফির করার যে কারণ সে
উল্লেখ করেছিল তা হল, আমি নাকি
শারিয়াহর বাইরে গিয়ে বিচার
ফয়সালা করার অনুমতি দিয়েছি
(নাউজুবিল্লাহ)।একদিন এক প্রশ্নের
উত্তরে আমি এই বিষয়ে বলেছিলাম
যে, এটা হচ্ছে ‘ ইস্তিনহার’ (জুলুম হতে
মুক্ত হওয়া), ‘তাহাকুম’ (বিচার-
ফয়সালা চাওয়া) নয়। সে আমাকে বলল
সে আমার এসব কথা বুঝে না। শায়েখ
আবু মুহাম্মদ আল মাকদিসি থেকে
আমি জানতে পারলাম এই ব্যক্তি এখন
কথিত “ইসলামিক স্টেট” এর সাথে
আছে এবং বর্তমানে সে যে কোন
মুসলিমের সাথে তার মতের অমিল
হলেই তাকে তাকফির করার ধৃষ্টতা
প্রদর্শনের অপরাধে কারাবন্দী।
পূর্বের “জামাআতুল খিলাফাহ”(জামাআতুল মুসলিমীন)যারা বর্তমানে“ইসলামিক স্টেট ইন
ইরাক এন্ড শাম” এ যোগ দিয়েছে আর
তাদের প্রভাবিত করছে-এই ঘটনাটি
ছিল আমার জন্য একটি
প্রমাণপস্বরূপ । আর আমি যতটুকু জানি
এই “জামাআতুল
.
খিলাফাহ” (জামাআতুল মুসলিমীন)
গ্রুপটি মানুষকে বাইয়াতের দিকে
আহবান করে, যারা প্রথমে খিলাফতের
দাবি করেছে তার উপর ভিত্তি করে।
তাদের এই বিদআতি আহবান বাতিল
মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তা এখন
“দাওলার” (“ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক
এন্ড শাম”) এর মাঝেও প্রবেশ করেছে।
কিন্তু তারা খলিফাকে গ্রহণ করে নি,
বরং তারা তাদের মতবাদ ও বিশ্বাস
হারা তাদের নেতা আবু বকর আল
বাগদাদিকে প্রভাবিত করেছে।
এটা হচ্ছে “ ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক
এন্ড শাম” এর পথভ্রষ্টতার প্রথম উৎস।
এবং কিছু লোক যারা এই সংগঠনের
এবং “ স্টেটের ” দখলকৃত এলাকার
বাইরের, তারা মানুষকে আহবান
করছে বাগদাদি সাহেবের হাতে
খিলাফতের বাইয়াত দেয়ার জন্য ।
যারা এ বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ
করেছে তাদের কাছে এই ধরণের
কর্মকাণ্ড অজ্ঞতা,অদূরদর্শীতা এবং
অরাজকতা সৃষ্টির প্রয়াস বলেই গণ্য
হবে। কিন্তু বিষয়টা এই ‘খিলাফাহ’
গ্রুপ- “স্টেট”এর নিকট স্পষ্ট না।
এটা ‌শুধু তাদের নিকটই স্পষ্ট যারা
তাদের এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর
মাঝে মীমাংসা হওয়ার আহবান
প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি বিশদভাবে
বিশ্লেষণ করেছেন।
আমাদের শায়েখ আবু মুহাম্মদ এমন
একজন যিনি তাদের এই রোগ ধরতে
পেরেছিলেন। যেহেতু তাদের মাঝে
চিঠির আদান-প্রদান হয়েছে এবং
অনেক আলোচনাও হয়েছে।
যেমন,তাদের একজন শারঈ
(অফিসিয়াল বিচারক) তাঁর নিকট
নিজের মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়
এভাবেঃ “ইমামত দ্বীনের একটি
মৌলিক বিষয় এবং এটি তাকফির ও
ঈমানের মানদণ্ড স্বরূপ”।(নাউজুবিল্লাহ)
.
দ্বিতীয়ত এই গ্রুপ- ‘স্টেট এর যে দিক
থেকে গোমরাহি প্রবেশ করেছে তা
হল এই যে, এ ধরণের উগ্রপন্থী,
তাকফিরি জামাতলোর সমস্যা হল
তারা বার বার হোঁচট খায়, আর
নিজেদের জাহির করে। এদের মধ্যে
কিছু মানুষ ‌শুরুর দিকে জিহাদে যোগ
দিয়েছে এবং আমি এমন কয়েকজনের
নাম জানি। আর এই লোকলোই অন্যদের
কুমন্ত্রণা দিয়েছে এবং তাদের
বক্তৃতা এরুপ অর্বাচীন যুবকদের উপর খুব
প্রভাব ফেলেছে যারা কিনা এমন
জায়গা থেকে এসেছে যেখানে তারা
হঠাৎ করে জাহেলিয়াত থেকে এই
মহান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। ইসলাম
গ্রহণের সময় তারা ছিল বিদেশীদের
মত। তাই তাদের কেউ একজন যদি
সুন্নাহর অনুসারী হয় তবে সে
হেদায়াতপ্রাপ্ত, না হলে তার
সীমালঙ্ঘন হবে ভয়াবহ যেমনটি পূর্বের
উলামায়ে-কেরামগন বলেছেন।
আর এই কারণেই আপনি দেখতে পাবেন
তাদের অধিকাংশ অনুসারী হল মূর্খ
যারা মাত্র কিছু দিন আগে দ্বীন
পালন করা ‌শুরু করেছে, এই অজ্ঞতার
কারণেই তারা দ্বীনের জটিল
বিষয়লো বুঝতে অক্ষম। আর এটা তলিবুল
ইলমদের জানা কথা যে শারিয়াহ আইন
প্রয়োগের বিষয়টি একটি জটিল
ফিকহি বিষয়। আসলে একজন ফকিহ
(বিচারক) এর জন্য এটা সবচেয়ে কঠিন
বিষয়। তাই কোন একটি নিদির্ষ্ট
জামাতের জন্য কুফর ও ঈমানের
ফতোয়া কিভাবে একজন অজ্ঞ লোক
দিতে পারে যে কি না পানি, অজু ও
সালাতের হুকুম (বিধান) জানে না?
আমি এই ব্যাপারে অবগত হয়েছি যে,
এই লোকগুলো কোন ব্যক্তি এবং
জামাতের উপর কুফরের ফতোয়া
আরোপ করার জন্য আমার বক্তব্যকে
দলিল হিসেবে ব্যাবহার করছে।এমনকি
তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার
বক্তব্যকে তাদের সীমালঙ্ঘনের কারণ
হিসেবে পেশ করছে যেন বিষয়টা এমন
যে, আমিই তাদের পথভ্রষ্টতার কারণ।
এবং এই লোকলো ভুলে গিয়েছে যে
শারিয়াহর মূলনীতিলো দলিল হিসেবে
প্রত্যেক জামাত ব্যাবহার করতে
পারে যেমন খারেজিরা আল্লাহর
কালামকে দলিল হিসেবে ব্যাবহার
করেছিল। কিন্তু হক এবং বাতিলের
মাঝে পার্থক্য হল এই মূলনীতিলো
প্রয়োগের শর্ত এবং তার
প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জানা। আর এই
পর্যায়ে এসে মানুষের মাঝে পার্থক্য
রচিত হয়ে যায়; তাকওয়া ও জ্ঞানের
উপর ভিত্তি করে তাদের মর্যাদার
তারতম্য হয়।
.
হিংসুক ও বিদ্বেষভাবাসম্পন্ন কারও
সাথে বোঝাপড়া করার সময় এটা নয়,
না হলে এই অধম আরও অনেক কথাই
বলত। কিন্তু যারা আমাকে
ভালোভাবে চিনে এবং আমার বক্তব্য
গভীর বিশ্লেষণ সহকারে পড়ে তারা
এই লোকগুলোর মিথ্যাচার ও আমার
প্রকৃত বিশ্বাসের মাঝে পার্থক্য
করতে পারবে। আর যারা আমাকে
জানে তারা এ বিষয়েও অবগত যে,
কোন ব্যক্তি এবং জামাতকে কাফির
সাব্যস্ত করার বিষয়ে ঢিলেমি দেয়ার
ব্যাপারেও আমি কতটা কঠোর।
সৌভাগ্যবশত এটা আমার জন্য যথেষ্ট
যে, আমি সবসময় এই ধরণের অজ্ঞতা
প্রতিরোধ ও প্রকাশ করে দেয়ার
ব্যাপারে এবং জিহাদি আন্দোলনে
যেন এসব প্রবেশ করতে না পারে সে
জন্য অনেকবারই এগুলোর বিরুদ্ধে
সংগ্রাম করেছি। আর আমি আজ প্রায়
১৩ বছর ধরে কারাবন্দী। জিহাদের এই
কণ্ঠাকাকীর্ণ পথ সামনের সারির
সৈনিকদের সবকিছুই নিয়ে গেছে,
যারা এই পথের হেফাজত করেছে এবং
জিহাদের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। কেউ
কেউ তাদের রবের নিকট শহীদ
হিসেবে চলে গিয়েছে। আর খুব অল্পই
বাকি রয়েছে যারা এই পথের প্রকৃতি
ও মূলনীতি সম্পর্কে জানে। এরা
বেশীরভাগই কারাবন্দী অথবা
পলাতক।
.
চলার পথে যা বাড়ার তা ঠিকই
বেড়েছে এবং বিদ’আত ও ভুল-ভ্রান্তির
পরিমাণ অনেক হয়ে গেছে। বিদ’আতি,
উগ্রপন্থী এবং নতুন বাতিল ফেরকা
যেমন জামাতুল খলিফা (জামাআতুল
মুসলিমীন) সাধারণ মানুষ এবং
বিদেশী তরুণ যারা কিছুদিন আগে
জাহেলিয়াত থেকে উঠে এসেছে,
তাদের মনযোগ আকর্ষণ করতে
পেরেছে। এরা সাধারণত বিদেশী হয়ে
থাকে যারা উগ্রপন্থা ও পথভ্রষ্টতার
মূল উপাদান। ঠিক যেমন তারা
অদূরদর্শীতা ও প্রজ্ঞাহীনতার
প্রতিচ্ছবি। আর এই কারণেই প্রতিদিন
নতুন কিছু শুনাটা অবাক হওয়ার মত
কোন বিষয় নয়।
.
যদি এই অধম মুক্ত থাকত তাহলে লড়াই
সমানে-সমান হত, কিন্তু কোন নাসিহাহ
পাঠাতে চাইলে অনেক কাঠ-খড়
পুড়িয়ে পাঠাতে হয়। যদিও আপনি চুপ
থাকার অনেক চেষ্টা করেছেন। আর
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে যা হয়, অন্য কেউ
যেখানে সেখানে তার অজ্ঞতা
জাহির করে বেড়ায় এবং তাদের
সাথে মতানৈক্য দূরত্ব সৃষ্টি করে
যেহেতু সে আপনার উপর এমন অপবাদ
আরোপ করবে যার দোষে সে নিজেই
দুষ্ট। অথচ সে তার অবস্থান থেকে
জানে যে, ইসলামের দুশমনদের জন্য সে
এমন এক ‘ভাঁড়’ যার কর্মকাণ্ড তারা
আনন্দের সাথে দেখে এবং মানুষকে
জিহাদের কাফেলা থেকে দূরে
রাখার জন্য তার এই উগ্রপন্থা
আল্লাহর দুশমনদের জন্য ‘তুরুপের তাস’।
কেননা সফলতা ইনসাফ এবং সৎকর্ম
ছাড়া অর্জন করা যায় না যেমনটি
আল্লাহু সুবহানু ওয়া তা’আলার আদেশ।
আমি যা বলতে চাচ্ছি হল, ভাইয়েরা
আমাকে প্রচুর অনুরোধ পাঠায় আর
এগুলো একই সাথে ব্যথা ও ভালবাসা
বহন করে। এবং চোখের পানি ফেলা
আর ‘যদি আমি পারতাম’বলা ছাড়া
আমার অন্য কোন উত্তর থাকে না।
আমার অবস্থা বর্ণনা করতে গেলে
বলতে হয়,
আমার ইচ্ছা হয়,আমি যদি কোন
উপকারে লাগতাম,
আমার ইথা হয় যুবকরা নিজেদের
বিলিয়ে দিক,
তাহলে আমি তাদের কিনতাম।
আর যদি সে কিছু লিখেও তাহলেও
প্রশ্ন থেকে যায় যে, কিভাবে সে এটা
পাঠাবে? আর যদি সে পাঠায়,
তাহলেও বা কিভাবে সে মানুষের
প্রশ্নের ও যারা মতভেদ করবে তাদের
উত্তর দিবে? এবং কিভাবেই বা সে
তার ভাইদের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে
যারা তাকে উপদেশ দেয়, “লিখা
বেশি বড় করবেন না, যতক্ষণ আমরা তা
পাঠাতে সক্ষম না হই”। সকল প্রশংসা
মহান আল্লাহর যিনি এই বিশ্বজগতের
প্রতিপালক।
.
খিলাফাত প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে
হয়, প্রত্যেকের এটা জানা থাকা
উচিত যে এটা আহলে সুন্নাহর জন্য নতুন
কোন বিষয় নয়। সালাফগণ এই বিষয়ে
উপসংহার তেনে গিয়েছেন এবং এর
সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি জিনিসের শর্ত
ও মৌলিক বিষয় উল্লেখ করে গেছেন।
বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ইসলামের
ইতিহাসে অনেক বিপর্যয় এসেছে। তাই
এই বিষয়ে উলামায়ে-কেরামগণ অনেক
কিছু লিখে গেছেন।
.
খিলাফত প্রসঙ্গে বিদ’আতি,
পথভ্রষ্টদের সাথে আহলুস সুন্নাতের
ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই
খিলাফত বিষয়ক আলোচনা অনেক
পুরনো ও প্রসিদ্ধ। আর এ জন্যই এই লোক
আজকে যা বলছে তা পুরনো মতের
সামনে এক নতুন মতবাদ। অথবা সে নতুন
পরিস্থিতিতে এমন নিয়মের প্রয়োগ
করছে যা পূর্বে হয়ে গেছে।এই
গবেষণাপত্র আজকে যে লিখতে
বসেছে সে মনে প্রাণে এমনটাই
কামনা করে। আমি এই কথা এ জন্যই
বলছি কেননা আমি এই নতুন ফেরকার
গোমর ফাঁস করে দিয়েছি যে
ব্যাপারে আমি আগেই বলেছি যে,
তারা এখন “ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক
এন্ড শাম” এর সাথে মিশে গিয়েছে।
তারা দাবি করে থাকে যে তারা
সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং অন্যান্য
ইসলামিক দল বিশেষ করে জিহাদী
জামাতগুলোর মাঝে যা অনুপস্থিত তা
তাদের মধ্যে আছে। এর কারণ হচ্ছে
খিলাফার ধারণা সম্পর্কে এই
জামাতগুলোর নীতি নির্ধারকদের
অজ্ঞতা।
.
‘খলিফা’ এই ধরণের আকিদাই পোষণ
করত যখন তার সাথে আমার কথা
হয়েছিল আর “ইসলামিক স্টেট” এর
তথাকথিত অফিসিয়াল মুখপাত্র সেই
মূর্খ আদনানিও বিজ্ঞ ডাঃ আইমান
আল জাওয়াহিরিকে একই রকম উত্তর
দিয়েছিল। যে বলেছিল তাদের মাঝে
সকল বিবাদ মীমাংসা হওয়ার উপায়
হচ্ছে খিলাফতের ঘোষণা দেয়া।
খিলাফত সম্পর্কে তাদের প্রথম
ঘোষণা থেকেও এই বিষয়ে নিশ্চিত
হওয়া যায় যেখানে সে বলেছিল
মুসলিমদের সকল আশা পরিপূর্ণ হবে
খিলাফত ঘোষণার মাধ্যমে। বিষয়টা
যেন এমন যে, তাদের এই মনগড়া
ইজতিহাদ ছাড়া মুসলিমদের সকল
চাহিদা পূরণ হয়ে গেছে।
.
শুরুতেই আমি আমার ভাই-যারা উপদেশ
গ্রহণ করে এবং সত্যকে খুঁজে থাকে
তাদের জানিয়ে দিয়েছি, এই ঘোষণা
মূর্খদের সাথে সংঘাতের মাঝে কোন
পরিবর্তন আনবে না। তাই এটা কখনই
বাগদাদি ও আদনানি সাহেবের গ্রুপ
কিংবা যারা তাদের সাথে আছে
তাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে না।ঠিক
তেমনি এটা অজ্ঞদের আস্ফালনও বড়
করবে না। জিহাদি জামাতগুলো সব
একই পথে ছিল, বরং তাদের অনেকেই
এক জামাতের অধীনে কাজ করত। আর
তা হচ্ছে বিজ্ঞ ডাক্তার সাহেবের
হাতে তাদের বাইয়াত। তাই ‘খিলাফত’
আমদানি করে বসলেই দ্বীনের
দুশমনদের সাথে যুদ্ধের অবস্থার কোন
পরিবর্তন হবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে
এই ঘোষণা মুজাহিদদের পরস্পরের
মাঝে লড়াইয়ের দিকে ঠেলে দিবে।
এই ঘোষণার পরিণতি ইয়েমেন,
সোমালিয়া, আলজেরিয়, কাভকাজ,
আফগানিস্তান, মিশর এবং শামের
দেশগুলোতে লড়াইরত জিহাদি
জামাতগুলোর সাথেই সম্পৃক্ত, সাধারণ
মুসলিমদের সাথে নয়। তাই এই ঘোষণা
তাদের জন্য দৈনন্দিন জীবনের
অন্যান্য ঘটনাগুলোর মতই একটি ঘটনা।
এ কারণেই এর ফলাফল খারাপ হবে আর
এর মাঝে ভাল কিছু নেই কেননা এটি
এমন এক লড়াই যা দল ও নেতার জন্য
হয়ে থাকবে। আর ইসলামের ইতিহাসে
এটি সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে
আনে। আসলে একজন মুসলিম চাইলে
ইসলামিক ইতিহাসের যেকোন কিছু
নিয়ে গর্ব করতে পারে।কিন্তু যখন
নেতৃত্বের বিষয় আসে তখন সে এক
অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাস। সে দেখতে
পাবে পারস্পরিক বিদ্বেষ এবং
সীমাহীন রক্তপাত। এ সবই হয়ত দুনিয়ার
জন্য কিন্তু আখিরাতে তাদের জন্য
সামান্যই বরাদ্দ থাকবে।
.
এই ফেরকা-স্টেট যা করেছে তা হল, এই
দলটি তাদের ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর
মাঝে চলমান বিরোধকে জিহাদী
জামাতলোর কর্তৃত্ব দখলের লড়াইয়ে
পরিণত করেছে যেমন তারা আল
কায়েদার অঙ্গসংগঠনের রক্ত
প্রবাহিত করছে এবং তারা তাদের এই
হারাম রক্তপাতকে বৈধতা দিয়েছে
যেমনটা আমরা বিদ্রোহীদের সাথে
সম্পৃক্ত মাস’আলায় পাব। চরম মূর্খ
আদনানি তার বক্তব্যে এমন ইঙ্গিতই
প্রদান করেছে। যারা তাদের আনুগত্য
ভঙ্গ করবে তাদের হুমকি দিয়েছে এই
বলে যে, এর শাস্তি হচ্ছে হত্যা এবং
পরিণতি হল রক্তপাত। ‌শুধু তাই নয় এই
জাহান্নামের কুকুরগুলো এমন যে,
তাদের ইমাম ও নেতাদের সাথে
মতভেদ করলেই তাদেরকে কাফির
সাব্যস্ত করে ঠিক যেমনটা আমরা
আগে ‘আল-খালিফার’ (জামাআতুল
মুসলিমীনের) বেলায় দেখেছি।
তাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটতে
যাচ্ছে। যদিও এধরনের বিষয়গুলো
তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি দ্বারা
প্রকাশ পায় নি বরং এটা জঘন্য
প্রকৃতির লোকদের ক্রমাগত প্রচেষ্টার
ফসল যেমনটা আমরা দেখেছি।
.
খিলাফত ঘোষণার আগে জাবহাত আল
নুসরার সাথে তাদের বিরোধ ছিল
সাংগঠনিক বিষয় ও নেতৃত্ব নিয়ে।
অথচ খিলাফতের ঘোষণা আসার পর
তাদের কাফির সাব্যস্ত করা হল এবং
তাদের রক্তকে হালাল ঘোষণা করা
হল। যে কেউ এধরণের বাতিল
ফেরকাগুলোর ইতিহাস বিশ্লেষণ
করলে অবশ্য শারিয়াহর দলিলের এমন
মনগড়া ব্যাখ্যায় অবাক হবে না
যেহেতু এই কাজটা করা এ ধরণের
লোকদের পক্ষে খুব সহজ।
আসলে বাগদাদি সাহেব যা চায় যদি
সে সত্যিই এই সংঘটনের প্রধান হয়ে
থাকে-যদিও এই বিষয়ে আমার সন্দেহ
আছে কিন্তু এমন অনেক ঘটনা দেখে
আমার মনে হয় এই লোকের অবস্থা
মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ আল কাহতানির
থেকে ভিন্ন কিছু নয় যার সাথে ছিল
জুহায়মান। নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে এমন
কিছু মানসিক দুর্বলতা লক্ষ্য করা
যাচ্ছে যা আদনানি এবং অন্যদের
আনুগত্য করতে বাধ্য করছে। এই ধরণের
চাক্কল্যকর তথ্য আমার কাছে এসেছে
এবং এর তাৎপর্য তাদের মাঝে দেখা
যাচ্ছে। আমি বলব, আসলে বাগদাদি
সাহেব খিলাফত ঘোষণার মাধ্যমে
তাদের এবং জাবহাত আল নুসরা এর
মাঝে শামে জিহাদের নেতৃত্ব নিয়ে
সকল বিরোধের মীমাংসা করতে চায়
বিশেষ করে তার মুখোশ উন্মোচন হয়ে
গেছে যখন সে দাবি করল ডাঃ আইমান
এর হাতে তার কোন বাইয়াত নেই।
বাগদাদি সাহেব শীতনিদ্রায় আছে
তাই কোন জবাব দিতে সক্ষম নন।তাই
গালিগালাজে ও কাঁদা ছুড়াছুড়িতে
ওস্তাদ এমন কেউ তার জায়গা দখল
করে নিয়েছে। আসলে এই জামাত
আলেম-উলামা ‌শুন্য হওয়ার কারণে এই
বিষয়ে শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে কথা
বলবে এমন কেউ নেই। তাই যখন তাদের
কেউ কথা বলতে আসে তখন সে ধংস ও
বিপর্যয় ডেকে আনে। ফলস্বরূপ
চিৎকার-চেঁচামেচি আর হত্যার হুমকি
ধামকি দেয়া ছাড়া তারা আর অন্য
কিছু দেখাতে পারে না।
.
আর এরাই মুসলিম উম্মাহর সমস্যা
সমাধান এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য
লাফ ঝাঁপ দেয়, যেমনটা তারা দাবি
করে। তাদের এই আস্ফালনে অজ্ঞরা
খুশি হতে পারে কিন্তু এটা সমস্যাকে
আরও প্রকট করে তুলবে এবং কোন
সন্দেহ ছাড়াই রক্তপাত বৃদ্ধি করবে।
আর এর মাধ্যমে আপনি শুরু থেকেই
জানবেন, আল্লাহু সুবহানুওয়া
তা’আলার মনোনীত জীবনবিধানে এর
ফয়সালা কি।
.
তাই আপনি যদি কোন বিষয়ের হুকুম
জানতে অক্ষম হন তাহলে এর
ফলাফলের দিকে দেখুন।ভেবে দেখুন
যাদের রক্ত প্রবাহিত হবে তারা
মুজাহিদ, এটা মুরতাদ বা জিন্দিকের
রক্ত নয়। তাই বুদ্ধি-বিবেক সম্পন্ন,
ধার্মিক এবং প্রজ্ঞাবান লোকেরা
এসব ক্ষেত্রে বিকল্প রাস্তা খুঁজে
নেয় যা হচ্ছে কোন সন্ধিতে পৌঁছান।
তারা এমন কোন রাস্তা বেছে নেয় না
যা সাহাবায়ে-কেরাম (রাঃ) এর
নীতিবিরোধী, যা আমি শীঘ্রই ব্যাখ্যা করব।
.
আপোষে পৌঁছা যেত যদি এদের মাঝে
ধার্মিকতা, সহানুভূতি, জ্ঞান ও উত্তম
আদব-আখলাক থাকত। এমনকি
শারিয়াহর আলোকে বিবাদ মীমাংসা
করার জন্য তাদেরকে অনেকবার ডাকা
হয়েছে। কিন্তু তারা অহংকারের
বশবর্তী হয়ে এই আহবান প্রত্যাখ্যান
করেছে কেননা তারা তাদের
জামাতকে‘স্টেট’ ঘোষণা করেছে আর
তাদের জন্য এটা সমাচীন নয় যে তারা
কোন ছোট গ্রুপের সাথে বিচার-
ফয়সালা করার জন্য বসবে! তাদের
মধ্যকার জ্ঞানের মিথ্যা দাবিদার
এক ছদ্মবেশী মিথ্যুক তখন অজুহাত
দেখালো যে, ইসলামের ইতিহাসে
কোন স্টেট বিচার-ফয়সালার জন্য
কোন সংঘটনের সাথে বসে নি। যদি এই
লোকেরা আল্লাহু সুবহানা
ওয়াতা’আলার এই আয়াতটি পড়ে
দেখতঃ
# যদি মুমিনদের দুটি দল………সুরা
হুজুরাত(৪৯:৯)
.
এবং এর সাথে যদি এই আয়াত প্রসঙ্গে
মা আয়িশা (রাঃ) এর ব্যাখ্যাও দেখে
নিত তাহলে তারা কখনও কুরআন
সুন্নাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলত না।
যদি তারা নবীজি (সাঃ) এর
জীবনীটা পড়ে দেখত তবে দেখতে
পেত কিভাবে বনি কুরাইজার ইহুদীদের
ব্যাপারে নবীজি (সাঃ) সা’দ ইবন
মুয়াজ (রাঃ) এর ফয়সালা মেনে
নিয়েছিলেন। যদি তারা ইতিহাস পড়ে
দেখত তবে দেখতে পেত কিভাবে
সঠিক পথ প্রাপ্ত খলিফা আলি ইবন আবু
তালিব (রাঃ) তাঁর এবং মুয়াবিয়া
(রাঃ) এর মাঝে মীমাংসার ফয়সালা
মেনেই নিয়েছিলেন। কিন্তু তারা
হচ্ছে এই গ্রুপের এমন ‘শারঈ (বিচারক)’
যাদের অজ্ঞতা বিপর্যয় ছাড়া আর
অন্য কিছু ডেকে আনবে না।
কোন মুসলিম যে কিনা সারা জীবন
শরীয়তকে বিজয়ী ও আল্লাহর দ্বীনকে
কায়েম করার জন্য কাজ করে গেছে,
তাঁর জন্য এটা জরুরি নয় যে মুসলিম
ভুমিতে খিলাফত ফিরিয়ে আনার সে
তাঁর কাঙ্খিত ঘোষণা দিয়ে দিবে
কেননা মুসলিমরা এর সুফল থেকে
বঞ্চিত এবং অজ্ঞরা এখানে ক্ষমতায়
অধিষ্ঠিত। বিপথগামী অথবা আল্লাহর
দ্বীনের বিরোধিতাকারী ছাড়া আর
কেউ এর গুরুত্ব অস্বীকার করবে না।
তাই বিরোধটা ইমামত ও খিলাফতের
শারঈ ভিত্তি নিয়ে নয় যেহেতু এই
বিষয়ে সবাই একমত যেমনটা ফিকহের
কিতাব ও ইসলামী রাজনীতির
কিতাবগুলোতে উল্লেখ আছে।
.
তেমনিভাবে তার জন্য এটাও জরুরি নয়
যখন সে ঘোষণা দিচ্ছে যে, যা হচ্ছে
তা তার ইচ্ছানুযায়ী হচ্ছে না, না তার
বক্তব্যের সাথে শারঈ ও আলেমদের
বক্তব্যের কোন মিল আছে, না বিষয়টা
সাহাবী (রাঃ) এর বুঝ অনুযায়ী
হয়েছে,দলে দলে বিভক্ত হওয়া
নিন্দনীয় এবং একই সাথে দুই জন
খলিফা থাকার অনুমতি নেই, যদিও
কোন কোন আলেম পূর্বে এর অনুমতি
দিয়েছিলেন আর বর্তমানে এসে তারা
এই ভুলটাই করেছেন। কিন্তু শিক্ষণীয়
বিষয় হচ্ছে, এই জামাত ঐক্যে ফাটল
ধরিয়েছে এবং বিভক্তি সৃষ্টি
করেছে। কিন্তু যিনি এখন এসব
লিখছেন তিনি এদের উত্থানের মাঝে
অনেক কল্যাণ এবং জিহাদি
জামাতগুলোর উপর আল্লাহর ঐশ্বরিক
রহমত দেখতে পাচ্ছেন।
এর ব্যাখ্যায় আমি বলবঃ আসলে
জিহাদি আন্দোলনের জন্ম এক বিশেষ
পরিস্থিতিতে হয়েছে এবং এই পথ
অনেক নেতার জন্ম দিয়েছেন। তারা
হয় তাদের রবের নিকট চলে গিয়েছে
নয়ত কারাবন্দী এবং যে সকল আলেম
তাদের বিরোধীতা করে তারা
মুজাহিদদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয়
করে না এবং তাদের প্রতি তারা
সামান্য সহানুভূতি, ভদ্রতা ও
ভালবাসাও দেখায় না। বরং তাদের
বিরুদ্ধে তারা ইসলামের শত্রুদের
সাথে থাকে এবং সত্য-মিথ্যা বলে ও
সংশয় তৈরি করে তাদের উপর আক্রমণ
করতে থাকে। তাই পরস্পরের প্রতি
তাদের অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং
সমাধানের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
মুজাহিদগণ এই সব আলেম-উলামা যারা
তাদের বিরোধীতা করে তাদের
মুনাফিক মনে করে যারা তাদের
দ্বীনকে জালিম শাসকের নিকট
বিক্রি করে দিয়েছে। আর এসব আলেম-
উলামারাও মুজাহিদরা হকের উপর
আছে বলে মনে করে না। তাদের
আলাপ-আলোচনা চিৎকার-
চেঁচামেচিতে পরিণত হয় যেখানে
প্রত্যেক মানুষই তার নিজের কথা
ছাড়া অন্য কারও কথা ‌শুনতে পায় না।
এ ধরণের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে
বাড়াবাড়ি বৃদ্ধি পায় এবং সঠিক পথ
হতে বিচ্যুতি তীব্রতর হতে থাকে অথচ
সাধারণ মানুষ ‌শুধু সহজ বিষয়গুলোই বুঝে
আর তাদের দৌড় এতটুকু পর্যন্তই। আর এই
পথটা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন পথ যেহেতু
এই পথে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে
হয় এবং ভালো-মন্দ মিশে থাকে যা
আলাদা করা কঠিন হয়। আসলে
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে মানুষের
কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশী বৈচিত্র
দেখা যায়। যদি কেউ রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) এর জীবনী পড়ে তাহলে সে
দেখতে পাবে যে, যুদ্ধ ও জিহাদের
ময়দানে সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি
সৃষ্টি হয়।
এবং আজকে ইসলাম পন্থীদের মাঝে
অনেকে বিশ্বাস করে যে ইসলামের
এমন অনেক দিক আছে যে বিষয়ে
আমরা ইজতিহাদ করতে পারি যে
বিষয়ে আগে আগে ইজতিহাদ হয় নি।
আর এই প্রবণতা আধুনিক সালাফি
আন্দোলনের মাঝে দেখা যাচ্ছে যা
ইলম থেকে মানুষকে দুইভাবে বিচ্ছিন্ন
করে দিচ্ছেঃ তা হল ‌শুনা এবং মানা।
পাঠ করা হল পুরাতন, আর শোনা হল
নতুন। আর এজন্য জিহাদি আন্দোলন এখন
ধোঁয়াটে হয়ে গেছে। আর যেহেতু
জিহাদের পরিবেশ হল ব্যাপক হত্যা
আর লড়াইয়ের পরিবেশ সেহেতু কর্তৃত্ব
দানকারী পদগুলো যদি আলেমশুন্য হয়,
তবে তা চরম্পন্থি হবে। আর যে কেউই
আলজেরিয়ার পরিস্থিতি অবলোকন
করেছে এ বিষয়টা সে বুঝতে পারবে।
বর্তমানে আমরা আদনানী আর তার
সমগোত্রীয় লোকজনকে দেখতে
পাচ্ছি।
.
আর যেমনটা আমরা জানি, এই পথের
দৈর্ঘ্য আর সময়ের সাথে সাথে
অবস্থার পরিবর্তন এদের মধ্যে ব্যাধি
সৃষ্টি করবে। আর এভাবেই আল্লাহ্
বিভিন্ন দল ও জাতিকে ফিতনায়
ফেলেন। আর এই পথে যখন ফিতনা
এসেছে তখন তারা চরমপন্থা অবলম্বন
করেছে। তারা ঠিক এই বিষয়টিকেই
না বুঝে সাধারণ অর্থে ধরে নিয়েছে।
নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এই
ফিতনা মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য
আসে। আর এই পরীক্ষার ফলে
মর্যাদার ভিত্তিতে মানুষকে পৃথক
করা হয়। এর জন্য চরম মূল্য দিতে হয়
কিন্তু এমনটা প্রয়োজন। আর মহান
আল্লাহ তা’আলার রহমতে আমি
মোটেও দুঃখিত নয় বরং আমি এতে
আল্লাহর হিকমাহ দেখতে পাচ্ছি
যে, এর মাধ্যমে এই পথ থেকে
চরমপন্থা, বিপথগামীতা ও
পথভ্রষ্টতা দূর হচ্ছে। নিশ্চয়ই
সাধারণ মানুষ মুজাহিদ আর
চরমপন্থিদের পার্থক্যটা বুঝত না
কারণ সাধারণ মানুষজন জিহাদের এ
ব্যাপারেপ তেমন গুরুত্ব বহন করত না।
কিন্তু বর্তমানে এই পার্থক্য জনপ্রিয়
এবং সুপরিচিত। আর এই ব্যক্তি
আল্লাহর প্রশংসা করে বলে যে কোন
মন্দ, বিদআত বা পথভ্রষ্টতা তার মাঝে
নেই, যদিও তাদের লোকসংখ্যা বেশি
হয় এবং তারা লোকদের উপর প্রাধান্য
বিস্তার করে। কুরআন আমাদের
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আর
অনুসরণের নিয়ম শিখিয়েছে।
অস্তিত্বের জন্য, আল্লাহ বলেন, “যা
কিছু চলে যায় তা সমুদ্রের ফেনার মত
আর যা কিছু মানুষের জন্য কল্যাণকর
তা জমিনে থেকে যায়।”
.
সত্য ছাড়া অস্তিত্ব পূর্বের অবস্থায়
ফিরে আসবে না। আর লোকজনের
কাছে এটি যদি পরিষ্কার হয় যে এই
মিথ্যার ঢেউ আর ফেনা একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাহলে এই ব্যক্তি
(শাইখ নিজে) তার জীবনে এমন অনেক
কিছুই প্রত্যক্ষ করেছে, এইসব ফেনা
আর ক্ষোভের বিস্ফোরণ তাকে আর
প্রভাবিত করবে না কারণ তারা কিছু
শিশুসুলভ জনগণকেই প্রতারিত করছে
যারা বিশাল জনসংখ্যা দেখে
ধোঁকায় পরে গেছে। আর অনুসরণের
ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“মন্দ আর ভাল কখনও সমান নয়, যদিও
মন্দের প্রাচুর্য তোমাদের আনন্দিত
করে।”
আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার,
জ্ঞানার্জনের শুরুতে আমাকে তিনি
তাদের পথে পরিচালিত করেছেন
যারা আমায় দলের লোকসংখ্যা দেখে
প্রতারিত না হওয়ার শিক্ষা
দিয়েছেন, তা যত বেশিই হোক না
কেন।
আর এখন সময় এসেছে পরিশুদ্ধি আর
ফিতনার, আর এতে সৃষ্টি হবে বিভাজন
ও দুর্বলতা। কিন্তু ধৈর্য, স্থিরচিত্ত
হৃদয় আর সঠিক বুঝ থাকলে ইনশাআল্লাহ্
এর ফলাফল হবে নিঃসন্দেহে
প্রশংসনীয়। এখানে ত্রুটিপূর্ণ দলগুলো
একত্রিত হচ্ছে আর তাদের দিকে
আকৃষ্ট হবে তারা যারা নিজেদের
নফসকে অনুসরণ করে, যারা নিজেদের
এবং তাদের ভাইদের মাঝে এই পথে
অনেক কিছু হারিয়েছে, সুতরাং এখন
তারা সুযোগ পাবে প্রতিশোধ নেবার
আর এতদিন লুকিয়ে রাখা নিজের
আসল রূপটি প্রকাশ করার। এমন এক
ব্যক্তি যে নেতৃত্ব ভালোবাসে কিন্তু
এর সুযোগ হাতছাড়া করেছে, এই
লোকদের মাঝে তা সে খুঁজে পাবে।
আর বিদআতি ব্যক্তি যে জ্ঞান থেকে
বঞ্চিত সে এই লোকদের মাঝে থেকে
সেই পথ খুঁজে পাবে যা তাকে নেতৃত্ব
দেবে আর শক্তিশালী করবে। আর এই
লোকেরা, যদিও তাদের প্রথম ঘোষণা
(যে জাবহাত আন নুসরাহ হল তাদের বাহু
আর সিরিয়া শামে তাদের শাখা) ছিল
কামনারই অনুসরণ, পরবর্তীতে তারা কি
করবে। আর যে কেউই চিন্তাভাবনা
করতে আর উপলব্ধি করতে সক্ষম সে
বুঝতে পারবে যে শুরু থেকে আজ
পর্যন্ত তাদের কাজকর্মে কামনার
অনুসরণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে,
কিভাবে তারা দ্রুতবেগে এগিয়ে
বর্তমানে একটি বিদআতি খিলাফাহ
দাঁড় করিয়েছে, আমরা তা দেখব।
সত্যিকার অর্থে কিছু পরীক্ষা
আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ। আর
সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের মালিক
আল্লাহ তা’আলার জন্য। ইসলামী
আইনে ‘ইমামতে উজমা’ (খিলাফত)
সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা না করে,
আমি এমনভাবে কিছু বিষয় তুলে ধরতে
চাই যা অনেকের প্রশ্নের উত্তর দেবে
এবং ঐসব জ্ঞাননহীন অজ্ঞ ব্যক্তি
যারা আগপিছ না ভেবেই এই দলে যোগ
দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়
তাদের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টিও
পরিষ্কার করে দেবেঃ
.
১) ক) নামের অর্থ আর এ অর্থ হারা
ব্যক্ত অঙ্গীকার-এ দুটোই সে নামের
যথার্থ পরিচায়ক। আর বাস্তবে তারা
এই অর্থ বা অঙ্গীকার কোনটারই
যোগ্য নয়। আর এই খিলাফাহ শব্দটি
একটি কৌশলগত অর্থ বহন করে। এর
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দ্বারা এর বাস্তবতা
উপলব্ধি করা যায়। আর যখনই উদ্দেশ্য
অপূর্ণ থাকে তখন তা এতে বাস্তবতার
অনুপস্থিতিই নির্দেশ করে। আর এই
স্বাভাবিক বিষয়টিকে কোন সুস্থ
বিবেকসম্পন্ন মানুষের পক্ষে
অস্বীকার করা সম্ভব নয়। আর এ
বিষয়টি পাশকাটিয়ে কেউ যদি এই
খিলাফাহকে মেনে নেয় তাহলে সে
সুস্থ বিবেকসম্পন্ন নয়।
সুতরাং এই ‘ইমামতে উজমা’ (প্রধান
নেতৃত্ব) আর ‘খিলাফাহ’ একটি বাস্তব
অস্তিত্ব, যা একটি ‌গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন
করে। এটি সালাত, যিকর, হজ্জ ও সাওম
এর মত কোন ইবাদাত নয় যা কেবল
করার উদ্দেশ্যেই করা হয়। বরং যে
অর্থ এটি প্রকাশ করে তা হল,
বেশিরভাগ আলেমদের মতে ‘ইমামের
কর্মকাণ্ড তার আয়ত্তাধীন লোকজনের
কল্যাণের উপর নির্ভরশীল’। সুতরাং
ইমামের কর্মকাণ্ডের পেছনে অবশ্যই
কোন উদ্দেশ্য থাকবে আর যখন তা
উদ্দেশ্য বিবর্জিত হবে সে তখন আর
ইমাম বা খলিফা নামেরও হকদার
থাকবে না। আর আলেমদের মত
অনুযায়ী, ‘দ্বীন ইসলাম যেটাকে
সার্বিকভাবে নিষিদ্ধ করেছে, সেটার
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশও কখনো বৈধ হবে
না।’
অর্থাৎঃ কোন কিছুর অংশবিশেষ যদি
দ্বীনের অস্তিত্ব বিবর্জিত হয় তা
গ্রহণযোগ্য নয়।
এ বিষয়টা যে বুঝতে সক্ষম সে জানতে
পারবে যে, (বাইয়াতকৃত ইমামের)
ইমামতের প্রকৃত উদ্দেশ্যের
অনুপস্থিতি মূলত শরয়ী ইমামতের
অর্থের অনুপস্থিতি বুঝায়।
আর এটা তাদের বিভ্রান্তিকর
সংক্ষিপ্ত জবাব, যারা অজ্ঞতাবশত
খিলাফতের অস্তিত্বের জন্যে
তামকীনের শর্তকে বাতিল বলে মনে
করে ।
আর এই আলোচনা তার সাথেই, যে
ব্যক্তি ফিকহ এবং ফিকহের মূলনীতি
সম্বন্ধে জ্ঞান রাখে, তার সঙ্গে নয়
যে এগুলোর কোনটারই জ্ঞান রাখে
না।
.
খ) রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর নিচের বক্তব্যটি এ
জিনিসেরই সাক্ষ্য দেয়,
( ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺟﻨﺔ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻣﻦ ﻭﺭ ﺍﻧﻪ ﻭﻳﻘﺘﻰ ﺑﻪ )
‘নিশ্চয়ই ইমাম ঢালস্বরূপ। তার অধীনেই
লড়াই হবে আর তার কাছেই সুরক্ষা
চাওয়া হবে।’ (সহীহুল বুখারী)
আর এই ঢাল; অর্থাৎ প্রতিরক্ষা ও
শক্তি, এর উপকরণ ছাড়া আসবে না, আর
এর উপকরণলো ‘শাওকাহ’ (শক্তি) আর
‘তামকীন’(প্রতিষ্ঠা) নামে পরিচিত।
এই হাদিস নির্দেশ করে ইমাম বা
খলিফা হতে হলে দুটো জিনিস থাকা
আবশ্যকঃ-
.
প্রথমতঃ ‘তার অধীনেই লড়াই হবে’ আর
দ্বিতীয়ত ‘তার কাছেই সুরক্ষা বা
নিরাপত্তা চাওয়া হবে’। অস্তিত্ব
টিকিয়ে রাখার নিয়ম এটাই। আর
ফিকহের মূলনীতি বলে, ﺍﻟﻐﺮﻡ ﺑﻠﻐﻨﻢ ‘লাভ
ও ক্ষতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত’। সুতরাং
তাকে মান্য করা হবে কারণ ‘তার
অধীনেই লড়াই হবে’। সুতরাং তাকে
অসাধুভাবে মেনে নেওয়া হবে না। আর
যেহেতু ‘তার কাছেই সুরক্ষা চাওয়া
হবে’ এজন্য তার উপর জনগণের অধিকার
আছে। আর নিরাপত্তা তার কাছেই
চাওয়া হয় যার আসলেই সুরক্ষা
দেওয়ার সামর্থ্য আছে।
.
গ) ফিকাহশাস্ত্রে এটি একটি পরিচিত
বিষয় এবং শায়খুল ইসলাম ইবন
তাইমিয়া(রঃ) “মিনহাজ আস সুন্নাহ”
এর সূচনাতে এই বিষয়ে বিস্তারিত
লিখেছেন যে, নেতৃত্ব হচ্ছে মুসলিম
উম্মাহ এবং তাঁর নেতার মাঝে এক
সেতু বন্ধন বা চুক্তি। এবং শরিয়তে ও
বাস্তবে চুক্তির মানে হচ্ছে, চুক্তির
উদ্দেশ্যে দুটি দল একত্রিত হবে, চুক্তি
কোন নির্ধারিত বিষয় থাকতে হবে
এবং দলিল-পত্র থাকতে হবে। আর
এগুলোই হচ্ছে চুক্তির মুল স্তম্ভ যা
আমাদের উলামাদের কিতাবে উল্লেখ
আছে যে বিষয়ে তলিবুল ইলমরা অবগত
রয়েছেন। তাই কোন চুক্তি যদি এই
শর্তগুলো বা এর উদ্দেশ্য থেকে
বঞ্চিত হয় তাহলে এটা চুক্তি বলেই
গণ্য হবে না।
.
ঘ) ইবন তাইমিয়া (রঃ) নেতৃত্বকে
এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, এটা
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কোন বিষয়
নয়, বরং এটি মানুষ দ্বারা নির্বাচিত।
তিনি আরো বিস্তারিতভাবে বলেছেন
যে, এমনকি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যদি
কাউকে নেতা নির্বাচন করেন এবং
পরবর্তীতে জনসাধারণ তার বিরুদ্ধে
চলে যায় এবং অন্য কাউকে বাইয়াত
দেয় তখন নেতা সেই থাকবে যাকে
বাইয়াত দেয়া হয়েছে, সে নয় যাকে
নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল
কেননা নেতৃত্বের উদ্দেশ্য ‌শুধুমাত্র
জনতা কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তি
দ্বারাই হাসিল হতে পারে, অন্য
কাউকে দিয়ে নয়।
.
ইমাম জনতা কর্তৃক নির্বাচিত-
উলামাদের এই বক্তব্য থেকে বিষয়টি
একেবারেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, এটা
অন্যান্য সকল চুক্তির মতই যা সম্মতির
ভিত্তিতে সম্পাদিত হয় এবং এর
অবশ্যই শর্ত ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে
নতুবা এটি হবে নিরর্থক। কেউ যদি
কোন মহিলাকে মিলিত না হওয়ার
শর্তে বিয়ে করে তাহলে এখানে
বিয়ের কোন মানেই থাকে না। শর্তের
বিষয়ে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ( ﻣﺎ ﻛﻦ
ﺧﺎﺭﺟًﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺎﻫﻴﺔ ﻭﻻ ﺗﺼﺢ ﺇﻻﺑﻪ ) “এটি
হচ্ছে আলোচ্য বিষয়ের বাইরের এমন
কিছু জিনিষ যা ছাড়া বিষয়টি ‌শুদ্ধ হয়
না”।এবং তাদের বক্তব্য থেকে আরও
বুঝা যায়, ﺍﻟﻤﻨﻬﻲ ﻋﻨﻪ ﺷﺮﻋًﺎ ﻛﻠﻤﻌﺪﻭﻡ ﺣﺴًﺎ )
“এমন কোন বিষয় যার অস্তিত্ব অনুভূত
হয় না তা নিষিদ্ধ”।
.
ঙ) আর এখানে চুক্তির বিষয় হচ্ছে
আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা,উম্মাহকে
নিরাপত্তা প্রদান এবং জিহাদের
মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দিকে
ডাকা।এটাই হচ্ছে চুক্তির উদ্দেশ্য।
শর্তসমূহ পূরণ করা ছাড়া এ
উদ্দেশ্যগুলো অর্জন করা সম্ভব নয়, যা
এ মূর্খ লোকেরা প্রত্যাখ্যান করেছে।
.
৫) ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺟﻨﺔ অর্থঃ “নিশ্চয়ই যা
কিছুই হোক না কেন, ইমাম হল
ঢালস্বরূপ”
এই হাদিসটি নবীজি (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই বাণীর
সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ,
( ﺍﻟﺤﺞ ﻋﺮﻓﺔ ) “হজ্জ হল আরাফাহ”
আর ‘ইন্নামা’ শব্দটি সীমাবদ্ধতা
বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং যাকে
আনুগত্যের বাইয়্যাত দেওয়া হয়েছে
সে যখন নিজের ভুলত্রুটির কারণে ঢাল
অর্থাৎ প্রতিরক্ষা হওয়ার উপযুক্ত
থাকে না, তখন সে ইমাম হওয়ার
মর্যাদা হারায়। আর ইমাম শব্দটির
দ্বারা এখানে বুঝানো হচ্ছে সেই
ব্যক্তি, যে সমসাময়িক পরিস্থিতির
জ্ঞানের আলোকে নেতৃত্ব দান ও
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
পরিচালনারযোগ্য।
.
৬) যেহেতু নেতৃত্বের বাইয়্যাত
ঐক্যমতের ভিধত্তিতে হওয়া উচিৎ,
সেহেতু আল ফারুক উমার ইবনুল খাত্তাব
(রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এর নিচের
উক্তিটি একটি প্রমাণস্বরূপ,
( ﻣﻦ ﺑﺎﻳﻊ ﺭﺟﻼً ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﻣﺸﻮﺭﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻼ
ﻳﺒﺎﻳﻊ ﻫﻮ ﻭﻻ ﺍﻟﺬﻱ ﺑﺎﻳﻊ ﺗﻐﺮﺓ ﺃﻥ ﻳﻘﺘﻼ ‏) ﻭﻓﻲ
ﻟﻔﻆ : ‏( ﻓﻼ ﻳﺘﺎﺑﻊ )
“কোন ব্যক্তি যদি মুসলিমদের সঙ্গে
শলা-পরামর্শ করা ছাড়াই কাউকে
আনুগত্যের বাইয়্যাত প্রদান করে,
তাহলে যাকে বাইয়্যাত দেওয়া
হয়েছে বা যে বাইয়্যাত দিয়েছে
তাদের কাউকেই মুসলিমরা বাইয়্যাত
দেবে না, বরং তাদের উভয়কেই হত্যা
করতে হবে।” (ইমাম বুখারী কর্তৃক সহীহ
তে বর্ণিত) অন্য জায়গায় ‘তাকে
অনুসরণ করা যাবে না’ বলে উল্লেখ
আছে।
.
সুতরাং ইমামতে উজমার (প্রধান
নেতৃত্বের) জন্য ঐক্যমত একটি শর্ত।
উপরের উক্তিতে এই কথাটাই বলা
আছে, ‘মুসলিমদের সঙ্গে শলা পরামর্শ
করা ছাড়াই’। আর যে ব্যক্তি যুন- নুরাইন
উসমান ইবন আফফান রদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু কে বাইয়্যাত দেওয়ার
ক্ষেত্রে আবদুর রহমান ইবন আউফ এর
সিরাত বা কার্যক্রম বুঝতে সক্ষম, সে
এই বিষয়টিও জানবে যে, সাহাবায়ে
কেরামগণ ইমাম (খলিফা) নির্বাচনের
ক্ষেত্রে উম্মাহর ঐক্যমতকে শর্ত
হিসেবে বিবেচনা করতেন। আর
উল্লেখ আছে, “যখন তারা একত্রিত
হলেন, আবদুর রহমান ইবন আউফ
শাহাদাহ উচ্চারন করলেন এবং বলা শুরু
করলেন, ‘হে আলী, আমি সাধারণ
মানুষদের বিষয়টা প্রত্যক্ষ করেছি
এবং দেখেছি যে তারা উসমানের
সমমর্যাদার কাউকেই মনে করছে না।
সুতরাং আপনি নিজের বিরুদ্ধে যাবেন
না।’”
.
সুতরাং তিনি লোকজনের মতামতকে
নেতা নিয়োগের মাপকাঠি হিসেবে
নির্বাচন করলেন। এই হাদিসটি সহীহ।
বস্তুত আল ফারুক (উমার) (রদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু) বুঝতে পেরেছিলেন যে
সিদ্দিকি (আবু বকর) (রদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু) কে বাইয়্যাত দেবার
ব্যাপারে তিনি যা বলবেন তাতে কিছু
লোক তার বিরোধিতা করতে পারে।
এবং মানুষ তাঁর কথা ভুল বুঝেছিল,
সুতরাং তিনি উত্তরে বললেন, “এটি
একটি অপ্রত্যাশিত ভুল ছিল যার মন্দ
প্রভাব আল্লাহ নিবারণ করে
দিয়েছেন।” এবং সাহাবীদের (তাদের
উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন) জীবনে আবু
বকর সিদ্দিক (রদিয়াল্লাহু তা’আলা
আনহু) এর মর্যাদার কারণেই আল্লাহ
সেই মন্দ নিবারণ করে দিয়েছেন। আর
এটা তাঁর সেই বক্তব্যকে পূর্ণ করে,
‘আল্লাহ, তাঁর রাসুল, এবং মুমিন
বান্দারা (আবু বকর ছাড়া অন্য কারও
নেতৃত্ব) মেনে নেবে না’। সুতরাং মহা
পবিত্র আল্লাহ তা’আলার সম্মতিও
ভাগ্যক্রমে চলে এসেছিল।
.
৭) আর এই চুক্তি হল প্রতিনিধিত্বের
চুক্তি। সুতরাং উম্মাহ তাদের
প্রতিনিধি হিসেবে এমন কাউকে
নিয়োগ দেবে যে নেতৃত্ব ও পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালনের জন্য
ইমাম হবেন। কারণ কুরআন তাদের উপর
আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব
ফরয করেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“ইঞ্জিল কিতাবধারী লোকেরা
যেনো আল্লাহর দেওয়া আইন অনুযায়ী
বিচার করুক” (সুরাহ মায়িদাহ,৫:৪৭)
.
কিন্তু যেহেতু সবার পক্ষে এই কাজটি
করা সম্ভব নয়, সেহেতু তারা তাদের
মধ্য থেকে এমন কাউকে নির্বাচন
করবে যিনি তাদের এই প্রয়োজন পূরণ
করবেন। আর এর মাধ্যমে ইমাম তাঁর
উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সহায়ক
প্রয়োজনীয় শক্তি পাবেন। সুতরাং
মুসলিম উম্মাহ হল তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা।
.
৮) আর যেহেতু অভিজ্ঞ লোকের হাতে
শাসনভার ন্যাস্ত করা অস্তিত্বের
রীতি। কারণ সকল বিষয়ে তারা
উম্মাহর প্রতিনিধি, সুতরাং মানুষের
মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী, বিজ্ঞ ও
ক্ষমতাবান ব্যক্তিদেরই এ সকল আসনে
বসা উচিৎ। তারা হবে মজলিসে শূরার
সদস্য এবং আহলুল হাল ওয়াল আকদ,
অর্থাৎ উম্মাহর সমস্ত সিদ্ধান্ত ও
উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাদের
উপর ন্যাস্ত। আর সেই সাথে এই
বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যায় যে,
উম্মাহর সকল সিদ্ধান্তের ভার উম্মাহর
হাতেই আছে, অন্য কারও নয়।
আর যদি উম্মাহর কোন শ্রেনী এই
প্রতিনিধিত্বকে ছিনিয়ে নেয়, হোক
তা ইমামের কাছ থেকে অথবা আহলুল
হাল ওয়াল আকদ এর কাছ থেকে,
তাদের জন্য এই পদবীগুলো (খেলাফত)
আর কোন অর্থ বহন করবে না, না
ইমামের না আহলুল হাল ওয়াল আকদ
এর। আর মহা পবিত্র আল্লাহর দ্বীনে
নেতৃত্বের বিষয়টা ঠিক এমনই।
.
৯) আর দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা সম্বন্ধে
ফকীহদের কিতাবে যেমনটা উল্লেখ
আছে, উদাহরণস্বরূপঃ অন্য কোন শক্তি
কর্তৃক ক্ষমতা দখল করে নেওয়া; এগুলো
মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। সুতরাং
বাস্তবে তাদের নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্য নয়।
কিন্তু যেখানে জোরপূর্বক ক্ষমতা
দখলের মাধ্যমে উদ্দেশ্যসমুহ পূরণ হয়
সেক্ষেত্রে দুর্দশা এড়ানোর জন্য এতে
সম্মতি জানানো জায়েজ। আর এগুলো
হল অস্তিত্বের কঠিনতম পরীক্ষা
যেখানে প্রতিটি রাষ্ট্র, সম্প্রদায়
এবং দলে প্রচুর রক্তপাত হয়।
.
১০) আর যদি এমনটাই হয়, তাহলে আপনি
যাচাই করে দেখতে পারবেন যে, যা
কিছু বলা হচ্ছে তা সত্যি না মিথ্যা।
তাছাড়া এই দলের নামগুলোর অর্থ,
বাস্তবতা এবং মানুষের অজ্ঞতা ও
বিভ্রান্তি সম্বন্ধেও জানতে পারবেন।
খ)
.
১) মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
( ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﻫَﺎﺟَﺮُﻭﺍ ﻭَﺟَﺎﻫَﺪُﻭﺍ ﺑِﺄَﻣْﻮَﺍﻟِﻬِﻢْ
ﻭَﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻭَﻭﺍ ﻭَّﻧَﺼَﺮُﻭﺍ
ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀُ ﺑَﻌْﺾٍۚ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﻟَﻢْ
ﻳُﻬَﺎﺟِﺮُﻭﺍ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﻭَﻟَﺎﻳَﺘِﻬِﻢ ﻣِّﻦ ﺷَﻲْﺀٍ ﺣَﺘَّﻰٰ
ﻳُﻬَﺎﺟِﺮُﻭﺍۚ ﻭَﺇِﻥِ ﺍﺳْﺘَﻨﺼَﺮُﻭﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻜُﻢُ
ﺍﻟﻨَّﺼْﺮُ ﺇِﻟَّﺎ ﻋَﻠَﻰٰ ﻗَﻮْﻡٍ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻬُﻢ ﻣِّﻴﺜَﺎﻕٌۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ
ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﺑَﺼِﻴﺮٌ )
“এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারা ঈমান
এনেছে, হিজরত করেছে, স্বীয় জান ও
মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ
করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও
সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তারা একে
অপরের সহায়ক। আর যারা ঈমান
এনেছে কিন্তু হিজরত করেনি তাদের
বন্ধুত্ব তোমাদের প্রয়োজন নেই যতক্ষণ
না তারা হিজরত করে। অবশ্য যদি
তারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের
সহায়তা কামনা করে, তবে তাদের
সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। কিন্তু
তোমাদের সাথে যাদের সহযোগী
চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে, তাদের
মোকাবেলায় নয়। বস্তুতঃ তোমরা যা
কিছু কর, আল্লাহ সেসবই
দেখেন।” [সুরাহ আল আনফাল, ৮:৭২]
.
ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀُ ﺑَﻌْﺾٍ
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে
অপরের বন্ধু ” [সূরাহ আত তাওবাহ, ৯:৭১]
.
২) যেমনটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন,
কুরআন দুই ধরণের মিত্রতা নিশ্চিত
করেছে। প্রথমটা হল বিশ্বাসের
মিত্রতা আর তা হল আল্লাহর এই
বাণীঃ
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে
অপরের বন্ধু ” (সূরাহ আত তাওবাহ, ৯:৭১)
.
দ্বিতীয়টা হল রাজনৈতিক মিত্রতা।
আর বর্তমানে তা জাতীয়তা হিসেবে
পরিচিত। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্রে
জাতীয়তাবোধের শর্ত দুইটি। একঃ
ইসলাম, দুইঃ হিজরত। আর এক্ষেত্রে
রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আনুগত্য থাকা
প্রয়োজন। প্রথম আয়াতে এই মিত্রতার
নিয়ম কানুন বলা হয়েছে। আর এতে
নিচের বিষয়লো নিশ্চিত করা
হয়েছেঃ
“যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরত
করে নি তাদের বিরুদ্ধে এটি একটি
প্রমাণস্বরূপ। আল্লাহ তা’আলা
বলেছেন, “আর যারা ঈমান এনেছে
কিন্তু হিজরত করেনি” (সূরাহ আল
আনফাল, ৮:৭২)
.
এই আয়াত এটাই প্রমাণ করে যে শত্রুর
বিরুদ্ধে জিহাদে তাদের সাহায্য করা
আবশ্যক, যদিও তাদের সাথে কোন
রাজনৈতিক মিত্রতা নেই। শর্ত
একটাইঃ এই আয়াতে ইমামের সাথে
মুশরিকদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে, এই
জিহাদ সেই চুক্তির কোন ক্ষতি করবে
না।
এই আয়াত আরও প্রমাণ করে যে
ফিকহের শর্ত মেনে মুশরিকদের সাথে
শান্তিচুক্তি করা বৈধ। মহান আল্লাহ
বলেছেন, “কিন্তু তোমাদের সাথে
যাদের সহযোগী চুক্তি বিদ্যমান
রয়েছে” (সূরাহ আল আনফাল, ৮:৭২)
.
ঈমানদারদের মধ্যেও যে রাজনৈতিক
বিভাজন হতে পারে এই আয়াত তারই
প্রমাণ। এই আয়াত আরও প্রমাণ করে
যে ইসলামে মুহাজির (যারা হিজরত
করেছে) দের যুদ্ধে অংশগ্রহণের
অনুমতি দেওয়া আছে যদি তাদের
আমন্ত্রণ জানানো হয়।
“অবশ্য দ্বীনের ব্যাপারে যদি তারা
তোমাদের সহায়তা কামনা
করে,” [সূরাহ আল আনফাল, ৮:৭২]
.
আর এই কাজ হবে ইমামের যদি
মজলিসে শূরার সদস্যরা তাকে এমন
দলকে সাহায্য করার অনুমতি দেবেন
যে দল তার আয়ত্তাধীন নয়। সহিহ
হাদিসে এর প্রমাণ বিদ্যমান।
হুদাইবিয়া সন্ধির পর আবু বাসির
(রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এর
ঘটনাটি, বর্ণিত আছে, “তখন রাসুলুল্লাহ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
মদীনায় ফিরে গেলেন আর আবু বাসির,
কুরাইশদের একজন, সে মুসলিম হিসেবে
তার কাছে চলে এল। তখন কুরাইশরা
দুজন ব্যক্তিকে পাঠিয়ে তাকে
ফিরিয়ে দেবার দাবি জানিয়ে বলল,
‘আপনি আমাদের সাথে যে চুক্তি
করেছেন, সে অনুযায়ী তাকে এই
দুজনের সাথে পাঠিয়ে দিন’ তো তারা তাকে নিয়ে
গেল আর যুল হালিফায় গিয়ে থামল।
তখন তারা মাটিতে বসে নিজেদের
সঙ্গে থাকা খেজুর খেতে লাগল। তখন
আবু বাসির তাদের দুজনের একজনকে
বলল, ‘ওয়াল্লাহি, তোমার তলোয়ার টা
তো দেখি খুব সুন্দর, একদম নিখুঁত।’ তখন
ঐ ব্যক্তি তলোয়ারটা বের করে বলল,
‘হ্যাঁ, ওয়াল্লাহি এটা আসলেই নিখুঁত,।
আমি এটা বারবার ব্যবহার করেছি।’
আবু বাসির বলল, ‘দেখি একটু তোমার
তলোয়ারটা’। তলোয়ারটা হাতে
পাওয়া মাত্র সে ঐ ব্যক্তিকে আঘাত
করল আর সে মরে গেল। অন্যজন
মদীনায় পালিয়ে গেল। তখন
রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) তাকে দেখে বললেন,
‘নিশ্চয়ই সে ভয়ঙ্কর কিছু দেখে
এসেছে।’ সে রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে
গিয়ে বলল, ‘আমার সাথীকে মেরে
ফেলা হয়েছে, ওয়াল্লাহি আমাকেও
হয়ত মেরে ফেলা হবে।’ তখন আবু
বাসির এসে বলল, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ,
ওয়াল্লাহি আপনি আপনার ওয়াদা পূরণ
করেছেন। আমাকে তাদের হাতে তুলে
দিয়েছেন আর আল্লাহ আমাকে তাদের
হাত থেকে রক্ষা করেছেন।’
রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বললেন, ‘তার মা
ধ্বংসপ্রাপ্ত হোক, সে তো যুদ্ধের আগু
বাঁধিয়ে দিল। যদি তার সাথে আর
কেউ থাকত।’ একথা ‌শুনে সে বুঝতে
পারল যে রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আবার
তাদের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেবেন।
এজন্য সে পালিয়ে সমুদ্র উপকূলে চলে
গেল। আরও বলা আছে, ‘আবু জান্দাল
বিন সুহাইল পালিয়ে এসে তার সাথে
যোগ দিল আর তারা একটি দল গঠন
করল। ওয়াল্লাহি, কুরাইশদের এমন
কোন বাণিজ্যিক কাফেলার কথা
শোনা যায়নি যেটা শামের উদ্দেশ্যে
রওয়ানা হয়েছে কিন্তু পথিমধ্যে তারা
কাফেলাটিকে আক্রমণ করে সবাইকে
হত্যা করে সম্পদগুলো ছিনিয়ে নেয়
নি।[সহীহ আল বুখারী ও সহীহ আল
মুসলিম]।
.
সুতরাং এই হাদিস নিন্মোক্ত
বিষয়গুলো ব্যক্ত করেঃ
.
* প্রথম আয়াতে মুসলমানদের মধ্যে
রাজনৈতিক বিভাজনের যেসব সম্ভাব্য
কারণের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো
ছাড়াও আরও কিছু কারণ থাকতে
পারে। আর এখানে, কারণটা হল-
মুসলিমদের একটি নির্দিষ্ট দলভুক্ত
লোকজনের একটি চুক্তির প্রতি
আনুগত্য যা অন্যান্য মুসলিমদের জন্য
প্রযোজ্য নয়। আর মদীনার দলটি ছাড়া
অন্য দলটি হল আবু বাসিরের দল, যারা
মূলত ইমামের কার্যক্রম ও জিহাদ
পরিচালনা করছে।
.
* ইবন তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ তাকে রহম
করুন) এই হাদিসটিকে দলীল হিসেবে
পেশ করে এই মতামত দিয়েছেন যে
মুসলিমদের কোন এক শাসক কাফিরদের
সাথে যেসব চুক্তি করেছেন অন্যান্য
শাসকগণ সেসব চুক্তি মেনে চলতে
বাধ্য নন। সুতরাং এই মতামতের
ভিত্তিতে সমসাময়িক সেসব মতামত
বাতিল হয়ে যায় যেখানে আবু
বাসিরের ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা
হিসেবে ধরা হয়েছে।
.
* যেহেতু দ্বীনের ব্যাপারে অন্যদের
সাথে যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত
চুক্তিটি প্রথম দলের জন্য অনুসরণ করা
বৈধ, এই চুক্তি নিসন্দেহে দ্বিতীয়
দলটির উপরও বর্তাবে।
যদিও এসব দলাদলি ইসলামের
মূলনীতির বিরুদ্ধে, কিন্তু অস্তিত্বের
প্রয়োজনেই এসব পরিস্থিতির সৃষ্টি
হয়েছিল, যেমনটা আমরা দেখেছি।
অন্যথায় এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ
দেওয়া মূলনীতি হল,
“তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর
রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ কর আর
পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”
(সূরাহ আল ইমরান, ৩:১০৩)
.
আর এসবই প্রমাণ করে যে মুসলিমদের
জন্য সর্বদা একজনের কাছেই
আনুগত্যের বাইয়্যাত বাধ্যতামূলক করে
দেওয়া কখনই ঠিক নয়। আর বাইয়্যাত
ভঙ্গকারীদের হত্যার অনুমতি দেওয়ার
কথা যে বলে সে নিঃসন্দেহেই
পথভ্রষ্ট। আর সত্যিকার অর্থেই সে
জাহান্নামের কুকুর হিসেবে বিবেচিত
হবে যদি সে বাইয়্যাত ভঙ্গকারীদের
কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করে বা
তার নেতার আনুগত্য করাকে দ্বীনের
একটি মূলনীতি বানিয়ে নেয়। আর
হিজরত ও বাইয়্যাত ভঙ্গকারীদের
ঈমানের বিষয়টি প্রথম আয়াতটি
দ্বারা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।
আবদুল ক্বায়েস এর ব্যাপারে নিচের
হাদিসটি বলে,
“আবদুল ক্বায়েস এর প্রতিনিধি দল যখন
রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর কাছে পৌঁছল, তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরা কারা?’ বা
‘এরা কার প্রতিনিধি?’ তারা উত্তর
দিল, ‘রাবিয়াহ এর লোকজন’। তিনি
বললেন, ‘এদের’ বা ‘এই প্রতিনিধিদের’
‘স্বাগতম, কোন অপমান বা অনুতাপ
ছাড়াই’। তারা বলল, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ,
হারাম মাসগুলো ছাড়া অন্যান্য সময়ে
আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না।
আপনার ও আমাদের মাঝে এই মুযার
কাফিরদের বসতি রয়েছে। সুতরাং
আমাদের একটি চূড়ান্ত হুকুম দিন যা
আমরা আমাদের পেছনের লোকজনদের
জানাব আর যা আমাদের জান্নাতে
নিয়ে যাবে।’ আর তিনি আদেশ করলেন,
‘তোমরা গণিমতের এক পঞ্চমাংশ দান
কর” (ইমাম বুখারী কর্তৃক বর্ণিত, সহীহ)
আর এখানে
.
* রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) তাদের হিজরত করতে
বলেননি। বরং তিনি তাদের নিজ নিজ
এলাকায় অবস্থান করাকে অনুমোদন
দিয়েছিলেন। আর এ থে কে প্রমাণিত
হয় যে, বাধ্যতামূলক হিজরত তাদের
জন্য নয় যাদের ব্যাপারে আল্লাহ
বলেছেন, ‘আমরা এই জমিনে দুর্বল
ছিলাম’। আর যদি তারা তাদের দ্বীন
প্রকাশ করতে সক্ষম হয় তখন এই
বাধ্যবাধকতা তাদের উপর আরোপিত
হবে। আর এই বিষয়টি ইমাম ও তার
দলের লোকজনের বিবেচনার উপর
নির্ভরশীল।
.
* ‘তোমরা গণিমতের এক পঞ্চমাংশ
দান কর’ এই কথার দ্বারা বোঝা যায়
যে, তিনি তার নিজের অধীনে থেকে
তাদের নিজ নিজ বিচার বিবেচনার
আলোকে জিহাদ করার অনুমতি
দিয়েছিলেন, যদিও তাদের অঞ্চল
বিচ্ছিন্ন ছিল।
.
* আবদুল ক্বায়েস এর প্রতিনিধি দল
আর আবু বাসিরের ঘটনা- এ দুটো বিষয়
পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে
যতক্ষণ নেতৃত্বপূর্ণ জিহাদ চলবে ততক্ষণ
তা বৈধ; তা ইমামের অনুমতিক্রমে
এবং তার অধীনেই পরিচালিত হোক,
অথবা ইমামের অনুমতি ছাড়া কোন
পৃথক ব্যক্তি বা দল করুক।
.
গ) ইমামের কার্যক্রম মূলত তার
সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল, আর এই
সামর্থ্য কমবেশি হতে পারে।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো এর নির্দায়কঃ
.
০ আল উক্ববাহ তে যে বাইয়্যাত
নেওয়া হয়েছিল তার মূলনীতি। এর
বিষয়বস্তু ছিল রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
প্রতিরক্ষা। অর্থাৎ, তাকে প্রতিরক্ষা
দেওয়া উচিৎ যদি মদীনায় তার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়। আর মুসনাদে আছে,
উবাদা ইবন সামিত বলেছেন,
“নিশ্চয়ই আমরা রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এর কাছে
বাইয়্যাত দিয়েছি, অলস থাকি বা
কর্মক্ষম থাকি, তার কথা ‌শুনব আর
মানব, সচ্ছলতা ও অচ্ছলতা উভয়
অবস্থায় দান করব, আর সৎকাজের
আদেশ করব আর অসৎ কাজে নিষেধ
করব, আল্লাহর কথা বলব ও নিন্দুকের
নিন্দার পরওয়া করব না, আর রসুলুল্লাহ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কে সাহায্য করব যখন তিনি ইয়াছরিবে
আমাদের নিকট আসবেন, যেভাবে
আমরা আমাদের নিজেদের ও স্ত্রী
সন্তানদের সুরক্ষা দিই এবং আমাদের
জন্য থাকবে জান্নাত। আর এই ছিল
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর কাছে বাইয়্যাত যা
আমরা দিয়েছিলাম।” (ইবন কাছির এই
হাদিস এর ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন,
এর সূত্র অনেক ভাল।)
.
০ বদরের সময় মদীনার লোকদের
নেতৃত্বের বিষয়ে রসুলুল্লাহ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এর, আনসারদের মতামত প্রয়োজন ছিল
যখন তিনি কাফেলা আক্রমণের
উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন আর স্পষ্ট
বুঝতে পেরেছিলেন যে কুরাইশদের
সাথে যুদ্ধ হতে যাচ্ছে। এই হাদিসটি
বুখারি ও মুসলিমে আছে আর
বিস্তারিত আছে আহমাদে,
“রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বদরে যাওয়া নিয়ে তাদের
সাথে পরামর্শ করলেন, আবু বকর বদরের
দিকে ইঙ্গিত করলেন, তিনি আবার
পরামর্শ করলেন এবং এবার উমার
ইঙ্গিত করলেন, তিনি আবার পরামর্শ
করলেন, আর তখন আনসারদের কয়েকজন
বলল, ‘রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) যা চান। সেই সত্ত্বার
কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আপনি
যদি আমাদের মহাসমুদ্রে ডুব দিতে
বলেন আমরা ডুব দেব।
(ইমাম বুখারী,থেকে বর্ণিত, সহীহ)
.
০ যুন-নুরাইন (রদিয়াল্লাহু তা’আলা
আনহু) এর হত্যাকান্ডের পর আলী
(রদিয়য়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এর
সাথে যা হল। ফিতনা ও অক্ষমতার
কারণে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করা
থেকে বিরত থাকলেন। বিষয়টা
ত্বলিবুল ইলমদের জানা আছে, তাদের
উপর বাকিটা ন্যাস্ত থাকুক।
.
ঘ) আল ফারুক, উমার (রদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু) এই নিয়মটি চালু
করেছিলেন, উপরে ক) এ উল্লেখ
আছে এই বিষয়ে, তা হলঃ
“কোন ব্যক্তি যদি মুসলিমদের সঙ্গে
শলা পরামর্শ করা ছাড়াই কাউকে
আনুগত্যের বাইয়্যাত প্রদান করে,
তাহলে যাকে বাইয়্যাত দেওয়া
হয়েছে বা যে বাইয়্যাত দিয়েছে
তাদের কাউকেই মুসলিমরা বাইয়্যাত
দেবে না, বরং তাদের উভয়কেই হত্যা
করতে হবে।” (ইমাম বুখারী, থেকে
বর্ণিত, সহীহ)
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমামের কাছে বাইয়্যাত দেবার দায়িত্ব শুধু এক, দুই বা তিনজনের হাতে
ন্যাস্ত নয়। বরং এও প্রমাণিত হয় যে
কাউকে এক দলের লোকজন কাউকে
বাইয়্যাত দেবার পরপরই অন্যদের উপর
তা জোরপূর্বক আরোপিত করতে পারবে
না। আর তাদের অনেকেই এই বিষয়টা
সম্বন্ধে অজ্ঞ কারণ তারা মনে
করেছে যে যখনই কিছুসংখ্যক লোক
বাইয়্যাত দিয়ে দিয়েছে, এটি একটি
অর্থবহ খিলাফাহ হয়ে গিয়েছে এবং
এটা মেনে নেওয়া মুসলিমদের কর্তব্য।
আর আল ফারুক মুসলিমদের সঙ্গে শলা
পরামর্শ বিহীন কোন বাইয়্যাতের
সাথে একমত হতে নিষেধ করেছেন। আর
এই বিষয়টাও স্পষ্ট যে এখানে ‘মুসলিম’
বলতে কেবল জ্ঞানী ও অন্তরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই বোঝান হয়েছে যাদের শূরার সদস্য বা আহলুল হাল ওয়াল আকদ হিসেবে অভিহিত
করা হয়। আর এই হুকুম অনুযায়ী,
বাইয়্যাত দেওয়া লোকজন যদি
বিরোধী লোকজনদের সাথে যুদ্ধ করে
তাহলে তা আরও বড় পথভ্রষ্টতা; কারণ
এই বাইয়্যাতের সাথে একমত না হয়ে
যে আল ফারুকের হুকুম মেনেছে সে
বিরোধিতার নয় বরং প্রশংসার
যোগ্য।
.
সুতরাং এমন ব্যক্তির সাথে যে লড়াই
করবে সে আল ফারুকের ফিকহের
বিরোধিতাই করবে। আর বলা বাহুল্য
যে উপরোক্ত কথাটি আল ফারুক প্রবীণ
সাহাবীদের উপস্থিতিতেই
বলেছিলেন আর কেউ তার বিরোধিতা
করেনি নিজ নিজ জ্ঞানের আলোকে
তারা বুঝেছিলেন যে এটা হল আল্লাহর
দ্বীন আর অন্য সব কিছুই হল অজ্ঞতা ও
পথভ্রষ্টতার দ্বীন।
.
আর যখন মানুষজন এমন একটা পর্যায়ে
থাকে যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার
জন্য তাদের শক্তি প্রয়োগ করা
কয়োজন যেমনটা আমাদের বর্তমান
পরিস্থিতি, এমতাবস্থায় যদি কিছু
সংখ্যক মানুষের একটি দল একটি
নির্দিষ্ট অঞ্চলের লোকজনের উপর
স্থিতিশীল ক্ষমতা অর্জন করতে পারে
এবং অন্যান্য দলগুলোও প্রায় একই
ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তাহলে এই সমস্যার
সমাধান হবে যেকোনো একজনের
অগ্রবর্তী হয়ে নেতৃত্ব দখলের এবং
নিজেকে খলীফা ঘোষণার মাধ্যমে
যেন অন্যদের সরিয়ে সে এই পদে
অধিষ্ঠিত হতে পারে। অবশ্য তার এই
বক্তব্যের বাস্তবায়ন অনেকটা
শিশুসুলভ আচরণ কারণ তা জ্ঞানের
বহিঃপ্রকাশ নয়। আর এমন বক্তব্য
দানকারী বিষয়টিকে ক্ষমতা দখল আর
অন্যদের পূর্বে নিজেকে খলীফা বলে
দাবি করার সাথে সম্পৃক্ত বলে মনে
করে। তাদের জন্য রসুলুল্লাহ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এর এই বক্তব্যটি,
“বনী ইসরায়েলকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব
দিত নবীগণ। যখনই কোন নবী মারা
যেতেন, অন্য একজন নবী তার জায়গায়
বসতেন। আর আমার পর আর কোন নবী
আসবে না, খুলাফা চলবে আর তারা
সংখ্যায় অনেক হবে। তারা জিজ্ঞেস
করল, ‘তো আপনি আমাদের কি করতে
আদেশ করেন?’ তিনি বললেন,
‘প্রথমজনদের বাইয়্যাতের অঙ্গীকার
পূর্ণ কর আর আল্লাহ তাদের যে হক
দিয়েছেন তা আদায় কর। কারণ নিশ্চয়ই
যে দায়িত্ব তারা নিয়েছে আল্লাহর
কাছে তাদেরকে সেজন্য জবাবদিহি
করতে হবে।’” (ইমাম মুসলিম, থেকে
বর্ণিত, সহীহ)
আর এই হাদিসটি তাদের কর্মকাণ্ড
কোন প্রমাণস্বরূপ নয়, কারণ-
.
০ এই হাদিস খুলাফাদের বিষয়ে বলছে
যারা শাসনকার্য পরিচালনা করছেন।
অর্থাৎ সাধারণ মানুষের উপর তাদের
কর্তৃত্ব আছে; এদের মত কর্তৃত্ববিহীন
লোকজনের চাপিয়ে দেওয়া কর্তৃত্ব নয়
যারা কিনা নিজেদেরই সুরক্ষা দিতে
পারে না, কারণ রাসুলুল্লাহ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এর বাণী ‘নিশ্চয়ই, যা কিছুই হোক,
ইমাম ঢালস্বরূপ।’
.
০ এই বাইয়্যাতের অঙ্গীকার রক্ষা
করা ‌শুধু তাদের জন্য বাধ্যতামূলক
যারা বাইয়্যাত দিয়েছে, বাকিদের
জন্য নয়। আর বলাই আছে, ‘প্রথমজনদের
বাইয়্যাতের অঙ্গীকার পূর্ণ কর।’
তাহলে কিভাবে এটা বাকিদের জন্য
বাধ্যতামূলক হয়?
.
০ এই হাদিসটি যেকোনো কর্তৃত্বের
যেকোনো দাবিদার সকলের জন্যই
সঠিক। সুতরাং কেউ যদি এর অর্থ
খলীফার কাছে বাইয়্যাত হিসেবে
বুঝে তাহলে নিশ্চিতই সে অজ্ঞ। এর
সাধারণ অর্থটাই সঠিক, অর্থাৎ
কর্তৃত্বের প্রথম অঙ্গীকারই বাকিদের
উপর বহাল থাকবে। আর যদি তারা
চিন্তা ভাবনা করত তাহলে বুঝে যেত
যে তাদের অঙ্গীকারই বাতিল কারণ
এটা পরবর্তীতে এসেছে। সে সময়
বিভিন্ন মানুষের কাছে আনুগত্যের
অঙ্গীকার দেওয়া হয়েছিল, যার কিছু
কিছু অস্তিত্ববিহীন আর কিছু কিছু
এখনও রয়ে গেছে।
আর তারা সবাই দ্বীনের যতটুকু তাদের
সামর্থ্যের মধ্যে ছিল তা ‌শুনছিল আর
মানছিল। আর যে আনুগত্যের অঙ্গীকার
কারও সামর্থ্যের বাইরে তা অবশ্যই
বাতিল, অর্থাৎ মানুষের কাছে ঐ
খিলাফতের প্রতি আনুগত্যের
অঙ্গীকার দাবি করা নিষিদ্ধ। এদের
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে একটি
শক্তিশালী দল যারা নিজেদের
সামর্থ্যের ভেতর শরীয়াহ ভিত্তিক
কর্মকাণ্ড পরিচালনার দাবিতে
অঙ্গীকার নিয়েছে; আর এই সময় এক
দুর্বল ও নিস্তেজ ব্যক্তি যে কিনা
নেতৃত্ব দেওয়া তো দূরের কথা ইমাম
হতেও অক্ষম, সে কুরাইশি বলে কেউ
এসে তাকে আনুগত্যের বাইয়্যাত দেয়
যে কিনা নিজেও আবার নেতৃত্বের
কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আংশিক বা
পুরোপুরিই অক্ষম, আবার যেহেতু
তাদের মতানুসারে সেই প্রথম এজন্য
বাকিদের জন্য তার কাছে এবং
শক্তিসম্পন্ন অন্যান্য দললোর কাছে
বাইয়্যাত দেওয়া বাধ্যতামূলক। এমন
কর্মকাণ্ড হাদিসটির ব্যাপারে
অজ্ঞতাই নির্দেশ করে কারণ
এক্ষেত্রে ‘খলীফা’ শব্দটি তার
মর্যাদা হারিয়ে ফেলবে। আর ইসলামী
আইন এটাই বলে যে চুক্তির মুল
বিষয়বস্তু হল তার অর্থ আর উদ্দেশ্য,
শব্দ বা বাক্য নয়। সুতরাং এখানে
খিলাফা শব্দটি ‘উপহার’ শব্দের
সমার্থক যা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া
হয় আর নিঃসন্দেহে এতি একটি
বিক্রয়ের লেনদেন।
.
পরিশেষে, ‘ইরাকের ইসলামী রাষ্ট্র’
যে নিজেদের ‘খিলাফতের ইসলামী
রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ছলনা
করেছে তা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে
দেখলে বোঝা যায় আর যারা মূলনীতি
ঠিক রেখে শাখা বিস্তার করতেও
অক্ষম এটা তাদের অজ্ঞতাই নির্দেশ
করে। সুতরাং ব্যাখ্যায় আমি বলি-
.
১) এটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে,
মুসলমানদের সম্মতি আর শূরা বোর্ডের
লোকজনের ঐক্যমত ছাড়া কোন নেতা
নিযুক্ত হতে পারে না।আর এটাও জানা
আছে যে উম্মাহর শক্তি হল আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদরত মুজাহিদরা, যারা
শাম ও ইয়েমেন, আফগানিস্তান,
চেচনিয়া, সোমালিয়া, আলজেরিয়া,
লিবিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলে
আল্লাহর শত্রুদের সাথে লড়াই করছে।
খিলাফতের বিষয়টি তাদের ঐক্যমত
ছাড়াই করা হয়েছে। তাদের
মুখপাত্রের দেওয়া বক্তব্য অনুসারে,
কেবলমাত্র একটি গ্রুপ ছাড়া কেউই
তাদের বাইয়্যাত দেয় নি। আর আল
ফারুকের আদেশ আর উপরোক্ত ফিকহ
থেকে এটাও জানা যায় যে শূরা
বিহীন বাইয়্যাত যে দিয়েছে আর
যাকে দিয়েছে তাদের কারও সাথেই
একমত হওয়া যাবে না, বরং তাদের
উভয়ের ক্ষেত্রে ফিকহ হল ‘তাদের
উভয়কেই হত্যা করতে হবে’।
.
আর ‘ইরাকের রাষ্ট্র’ নামে এই গ্রুপের
কোন কর্তৃত্ব নেই সাধারণ মুসলিমদের
উপর যে তারা তাদের ব্যাপারে
সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের ব্যাপারে
যদি ভাল ধারণা রাখতে হত তাহলে
তারা এসবে আওতায় পড়ত না, কিন্তু
তাদের মধ্যে সেসব দোষ বিদ্যমান
যেসবের ব্যাপারে আগেই বলা হয়েছে,
চরমপন্থা, পথভ্রষ্টতা, নৈতিক অধঃপতন
আর রক্তপিপাসা। আমি বলি- এই
বিষয়ের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা ‌শুধুমাত্র মুসলিমদের একটি সম্প্রদায় হিসেবে, সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায় অর্থাৎ খিলাফত এবং প্রধান
নেতৃত্ব হিসেবে নয়। সুতরাং আনুগত্যের
এই অঙ্গীকার ‌শুধুমাত্র এর অধীনস্ত
লোকদের জন্যই বাধ্যতামূলক।
.
২) তাদেরকের হত্যার হুমকি দেওয়া
যারা মুসলিমদের মধ্যে পদবিভক্তি
করে। এই হুকুম ততদিন জারি ছিল না
যতদিন রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর পক্ষে সমর্থন দেন
নি। তিনি বলেন,“যদি তোমরা এক নেতার অধীনে
ঐক্যবদ্ধ থাক আর এমতাবস্থায় কেউ
যদি তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করার আর
তোমাদের বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে
তোমাদের নিকট আগমন করে তবে
তাকে হত্যা কর।”
(ইমাম মুসলিম, থেকে বর্ণিত, সহীহ)
.
তাঁর এই বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার
হয় যে, ‘যদি তোমরা এক নেতার অধীনে
ঐক্যবদ্ধ থাক’। এসব লোকজন এই
হাদিসটিকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার
করেছে, যেহেতু বর্তমানে লোকজন
বিভিন্ন দলে বিভক্ত আর একমত হওয়া
বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ
কর্তৃত্ব অর্জন করা ছাড়াই তাদের
একত্রিত করার চেষ্টা করা মোটেই
ঠিক নয়। আর ‘সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব’ বলতে এটা
বঝায় না যে, যারা বিরোধিতা করে
তাদের উপর জোরপূর্বক প্রাধান্য
বিস্তার বা তাদের সাথে লড়াই করে
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া
হচ্ছে; এই অনুমতি ‌শুধুমাত্র ফকীহগন
বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যেই দিয়ে
থাকেন। সুতরাং, কোন কিছু ঘটে
যাওয়ার পর সেটিকে অনুমোদন
দেওয়ার অর্থ এই নয় যে ঘটার আগে
সেটিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। আর
শরীয়াহর মূলনীতি অনুযায়ী, ‘শুরুতে
যেটিকে বৈধতা দেওয়া হয়নি
পরবর্তীতে সংঘটিত হওয়ার সময় হয়ত
সেটিকে বৈধতা দেওয়া হতে পারে।’
.
৩) একমাত্র নিজেদের দল ছাড়া অন্য
সকল মুসলিম দলসমূহকে বাতিল হিসেবে
সাব্যস্ত করা। খিলাফাহ ঘোষণা করা
ছাড়া এই জালিয়াতির পিছনে আর
কোন কারণ নেই। আর তাদের বিকৃত
কামনাগুলো আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
সুতরাং ঘোষণা বা নাম কোন কিছুরই
দ্বারা এদের প্রতি আনুগত্যের
বাধ্যবাধকতা প্রমাণিত হয় না।
.
৪) তাদের পরিস্থিতিই দেখিয়ে দেয়
যে বিরোধী দলগুলোর সাথে লড়াইয়ের
জন্য তারা কতটা উন্মাদ। আর এই লড়াই
নিশ্চয়ই এক মহা পাপ, উদ্দেশ্য যাই
হোক না কেন, হোক তা কর্তৃত্ব
প্রতিষ্ঠা বা অন্য কিছু। আর যদি তারা
তাদের বিরোধীদের কাফির হিসেবে
সাব্যস্ত করে নিঃসন্দেহেই তাদের
দ্বীন হল খারেজীদের দ্বীন।
.
৫) তাদের অবস্থান দেখে এটা সুস্পষ্ট
বোঝা যায় যে তাদের নেতৃত্বস্থানীয়
লোকজন হল চরমপন্থি আর বিদআতি। এ
বিষয়ে আলোচনা ইতোমধ্যে হয়ে
গেছে আর এখন এটা পানির মত
পরিষ্কার। তাদের মধ্যে ব্যাপক
অজ্ঞতা বিদ্যমান কারণ তারা
যেটিকে প্রধান খিলাফত হিসেবে
দাবি করছে তার হাল ধরার জন্য
তাদের মাঝে কোন আলেম-ওলামা
নেই।
.
৬) আর যদিও তারা পরবর্তীতে ইরাকে
কিছু কর্তৃত্ব অর্জন করতে পেরেছে,
আল্লাহ বলেন,
‘আমার (নেতৃত্ব দানের) প্রতিশ্রুতি
সীমা অতিক্রমকারীদের জন্য
নয়।’ (সূরাহ আল বাকারাহ, ২:১২৪)
.
আর এই আয়াতের ভিত্তিতে এই
উম্মাহর আলেম-ওলামারা প্রমাণ
করেছেন যে অত্যাচারী শাসককে
কর্তৃত্ব দেওয়া অবৈধ। যদিও সে শাসক
নাপাক জিন্দিকদের দমন করেছে, এটা
এক বিষয় আর ইসলামের রাজনীতি ও
নেতৃত্ব অন্য এক বিষয়।
তাদের অন্তরে তাদের মুজাহিদ
ভাইদের প্রতিই কোন দয়া-মায়া নেই,
তাহলে কিভাবে তারা দরিদ্র-
অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রতি, তাদের
মধ্যকার দুর্বল ব্যক্তি ও তাদের
জনসাধারণের প্রতি সহানুভূতিশীল
হবে? আমাদের আলেম-ওলামাগণ
খারেজী সেনাপতির অধীনে
জিহাদের অনুমতি দিয়েছেন, যেমনটা
ইসলামিক মাগরিবে মালিকী
ওলামাগণ দিয়েছেন। কিন্তু কোন
খারেজী শাসক, যে কেবল মানুষ হত্যা
করতেই বেশি আগ্রহী, তাদের
রাজনীতির বিষয়ে বা তাদের
দেখাশোনা করার ব্যাপারে মোটেই
আগ্রহী নয়, এমন কাউকে তারা
অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা
যায়নি।
.
৭) জিন্দিকদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই
করাটাকে মোটেই ছোট করে দেখা
হচ্ছে না, যেহেতু এটি একটি
প্রশংসনীয় বিষয়। জিন্দিকদের
বিরুদ্ধে যদি তারা একাই জিহাদ করত,
এই অধম অবশ্যই তাদের অধীনে থেকে
লড়ত। কিন্তু যখন পূর্ব-পশ্চিমের সকল
মুসলিমদের উপর তাদের নেতৃত্বের
বিষয়টি বিবেচনায় আসবে, তখন বলতে
হয় ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এই
নেতৃত্ব অবৈধ হওয়ার আবার
নিঃসন্দেহে এর একটা খারাপ ফলাফল
ও আছে।
.
৮) ইরাকে কিছুটা কর্তৃত্ব অর্জন করার
অর্থ এই নয় যে তাদের অগ্রাধিকার
দেওয়া হবে। নিশ্চয়ই মোল্লা মুহাজাদ
উমার, সোমালিয়া, ইয়েমেন ও মালীর
মুজাহিদরা সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব অর্জন করতে
পেরেছেন।
তাদের মত উন্নত চিন্তা ভাবনা ও
জ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা এমন
অজ্ঞতাপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর কাজকর্ম
করবে না, না তারা নিজেদের প্রধান
খিলাফত হিসেবে দাবি করবে যার
প্রতি আনুগত্য পৃথিবীর সমস্ত
মুসলিমদের জন্য বাধ্যতামূলক; কারণ
দ্বীনের এই পরিভাষা কেউ হয়তবা
পার্থিব স্বার্থে ব্যবহার করবে বা
দ্বীনের স্বার্থে। আর যাদের জন্য এই
পরিভাষা অর্থহীন হয়, তাদের দ্বীন হল
রাফেজী ও খারেজীদের দ্বীন।
.
৯) আর তাদের অফিশিয়াল মুখপাত্র
ইরাকে বিজয় লাভের পূর্বেই আল
জাওয়াহিরির কাছে খিলাফত
ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল আর
নিজেরাই এই পবিত্র দায়িত্বভার
পেতে চেয়েছিল। সুতরাং স্পষ্ট বোঝা
যায় যে খিলাফার বিষয়ে তাদের
অজ্ঞতা আগে থেকে ছিল। অতএব,
স্থিতিশীল ক্ষমতা বা অন্য কোন
কিছুই তাদের পক্ষে যুক্তি হিসেবে
পেশ করার মত নয়।
.
১০) পরিশেষে মুসলিমদের বিশেষ করে
তাদের বিরুদ্ধে অবস্থানরত
মুজাহিদদের হত্যা করতে তারা যে
উন্মাদনা প্রদর্শন করছে এবং এখনও
তারা এমনটাই রয়েছে, এটা দেখে
স্পষ্ট বোঝা যায় তারা যে খিলাফত
নয় বরং একটি বিদআতি দল। আর এই
উন্মাদনা ইরাকে কিছু কর্তৃত্ব
অর্জনের পর বেড়েছে, যদিও এই কর্তৃত্ব
আল্লাহর পক্ষ থেকে এক উপহার, আর
এত বড় উপহার যে অনেকে স্বীকার
করেছে যে কোন রকম লড়াই ছাড়াই
অনেক অঞ্চল তাদের হস্তগত হয়েছে।
আর এই অনুগ্রহ পাওয়ার পর তাদের
উচিৎ কৃতজ্ঞতা, নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ
করা, অজ্ঞতা এবং প্রতিপক্ষকে
হত্যার উন্মাদনা নয়।
এই অংশটা সহানুভূতি পাওয়ার জন্য
বলা হচ্ছে না; এই ব্যক্তি তার জীবনে
অনেক বড় বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে
গেছে আর সে তার চেয়েও মহান
ব্যক্তিদের চোখের পলকে পতন ঘটতে
দেখেছে। অবশ্য এমনটা তাদের জন্য
আমরা আশা করি না, কারণ তারা
ধ্বংস হলে ইরাকে তাদের জায়গা দখল
করে নেবে জিন্দিকরা। আর বিজয়
মুমিন বান্দাদের অন্তরে ভয় আর নম্রতা
সৃষ্টি করে যেমন আমাদের নেতা
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর সময় যখন তিনি বিজয়ীর
বেশে মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন, আর
আল ফারুক(রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)
যখন তার পায়ে কসরোর ধন-সম্পদ এনে
রাখা হয়েছিল।
আর আমরা এমন সময়ে বাস করছি যে
সময়ের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছিলেন অনেক কিছুই
ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাবে, অর্থাৎ
অল্প সময়ে অনেক কিছু সংঘটিত হবে।
আর আল্লাহ ভাল জানেন।
.
* যেহেতু এটি একটি বিদআতি দল,
এদের অধীনে প্রয়োজন ছাড়া লড়াই
করা বৈধ নয়। আর তাদের বিদআতের
মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে যখন তারা
নিজেদেরই মুসলিম সম্প্রদায় হিসেবে
আর তাদের নেতাকে মুসলিম উম্মাহর
একমাত্র নেতা দাবি করেছে আর
অন্যান্য নেতাদের বাতিল হিসেবে
সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং আল্লাহর
দ্বীন সম্বন্ধে জানে এমন কারও উচিৎ
নয় এই বিষয়ে তাদের সাথে একমত
হওয়া। আর এই দলে বিদ্যমান জ্ঞানী
ব্যক্তিদের উচিৎ এসব চরমপন্থা
প্রতিরোধ করা যদি তারা নিজেদের ও
তাদের ভাইদের কল্যাণ কামনা করে।
যেহেতু জয়ের মূল্য, বেদনা আর বোঝাও
আছে।
অতএব তাদের সঠিক পথে থাকা উচিৎ
অন্যথায় তাদের এবং অন্যদের উপর
আল্লাহর কঠিন আজাব আপতিত হতে
পারে। নিশ্চয়ই কর্তৃত্বের দিক দিয়ে
তাদের চেয়েও অনেক শক্তিশালী দল
এই পৃথিবীতে এসেছিল আর তারা
ধ্বংস হয়েছে,
“আর আল্লাহর সবকিছুর উপর পূর্ণ
ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, কিন্তু
অধিকাংশই জানে না।” (সূরাহ ইউসুফ,১২:২১)
.
এত অল্প সময়ে আমি এতটুকুই লিখতে
পেরেছি, আর ইনশাআল্লাহ ইলম
অণ্বেষনকারীদের জন্য এটুকু যথেষ্ট
হবে। আর যে কেউ এই বিষয় নিয়ে
চিন্তা ভাবনা করবে সে সত্য জানতে
পারবে, আর আল্লাহ ভাল জানেন।
সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের
প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার জন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top