মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

ধুমপান কি হারাম নাকি মাকরুহ?

৩টি মন্তব্য:

ধুমপান কি হারাম নাকি মাকরুহ?
.
আমরা সকলে জানি ধুমপান স্বাস্হের জন্য
ক্ষতিকর।কথাটা অনেকে সেচ্ছায় বলেন
অনেকে বলেন বাধ্য হয়ে।যাই হোক
ধুমপানের ক্ষতির তোলনাই শ্লোগানতা
খুবই হালকা। কারন ধুমপান শুধু স্বাস্হের
জন্য ক্ষতিকর নয়, মস্তিস্কের জন্য
ক্ষতিকর, আত্মার জন্য ক্ষতিকর, স্বভাব
চরিত্তের জন্য ক্ষতিকর, পরিবার-পরিজন,
প্রতিবেশি সমাজ ও পরিবেশের জন্য
ক্ষতিকর। আমার কাছে এর চাইতে বড়
ক্ষতির দিক হল ধুমপানের মাধ্যমে
ইসলামের নীতি ও আদর্শ লংঘন।
আমাদের দেশের অনেক ধর্মপ্রান
মুসলমানদেরকে দেখা যায় ধুমপান করতে।
মাথায় টুপি ও গালে দাড়ি আছে, পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কিন্তু নামাজ শেষে
আবার ধুমপান ও করে। তাদেরি যদি এ
অবস্হা হয় তাহলে বেনামাজি ও যুবকদের
কি অবস্হা চিন্তা করে বলা মুসকিল। এ
সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ধর্মীয়
নেতাদের এবং যুবকদের যখন আপনি
বলবেন যে ধুমপান জায়েয নয় তখন তারা
তা মানতে চাননা।তারা তখন অনেক
যুক্তি দেখায়। তারা বলেন:আল-কুরআনে
তো বলা হয়নি ‘তোমরা ধুমপান করোনা।’
হাদীসেও কোথাও নেই যে ‘ধুমপান করা
যাবেনা’, তাহলে ধুমপান ইসলামী শরিয়তে
নিষিদ্ধ হল কিভাবে?
এ প্রশ্নটির উওর দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ
পাক নিজেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
ইরশাদ করেন-
“তিনি তোমাদের জন্য আলাল করে দেন
ভাল ও উওম বস্তু আর হারাম করে দেন
খারাপ ও ক্ষতিকর বস্তু।”
(আল-আরাফ: ১৫৭)
.
এ আয়াতের ভিত্তিতে এমন অনেক জিনিস
আছে যা হারাম হয়েছে অথচ তা কুরআনে
ও হাদীসে নাম ধরে বলা হয়নি। যেমন-
আমরা সাপ খাইনা।কেন খাইনা?কুরআনে
ও হাদীসে কি কোথাও আছে যে তোমরা
সাপ খেওনা?নেই ঠিকই, কিন্তু উপরের
আয়াতের ভিত্তিতে তা আরাম হয়ে
গেছে।কেননা তা ক্ষতিকর ও খারাপ।
ধুমপান ক্ষতিকর ও খারাপ।এ বেপারে
দুনিয়ার সুস্হ বিবেক সম্পন্ন সকল মানুষ
একমত।কোন স্বাস্হ্য বিজ্ঞানী দ্বি-মত
পোষন করেননি। তারপরেও যদি কেহ
বলেন, ধুমপান শরীয়তের নিষিদ্ধ বস্তুর
মধ্যে পরেনা তাহলে তাকে ঔ
ডায়াবেটিস রোগির সংগে তুলনা করা
যায় যিনি ডাক্তারের নির্দেষে চিনি
ত্যাগ করলেও ঠিকই কিন্তু রসগোল্লা,
চমচম, সন্দেশ সবই খেলেন আর বললেন কই
ডাক্তার তো এগুলো নিষেধ করেননি!
আল-কুরআনের আলোকে ধুমপান:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
“তিনি তোমাদের জন্য হালাল করে দেন
ভাল ও উওম বস্তু আর হারাম করে দেন
খারাপ ও ক্ষতিকর নোংরা (খাবাইস)
বস্তু।”(আল-আরাফ: ১৫৭)
.
আর ধুমপান নিশ্চই খাবাইস এর অন্তর্ভূক্ত,
তাই তা পান করা বৈধ (হালাল) নয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
“তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংসের
সম্মূখীন করোনা।”
(আল-বাকারা: ১৯৫)
.
এ আয়াতের দাবিতেও ধুমপান নিষেধ।
কেননা ধুমপানের কারনে অনেক জীবন
বিধংসী রোগ ব্যাধী হয়ে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মদ ও জুয়া
হারাম করতে গিয়ে ইরশাদ করেন-
“তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, উভয়ের মধ্যে
রয়েছে মহাপাপ।আর তার মধ্যে মানুষের
উপকারিতাও আছে। তবে এগুলোর পাপ
উপকারের চেয়ে বড়।”
(আল-বাকারা: ২১৯)
.
আল্লাহ তআলার এ বানী দ্বারা বুঝে
আসে মদ জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা
সত্তেও তা হারাম করেছেন। তাহলে
ধুমপান তো মদ জুয়ার চেয়েও জঘন্য।কারন
তাতে কোন ধবনের উপকার নেই।বরং ১০০
ভাগই ক্ষতি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামিদের
খাবারের বর্ননা করতে গিয়ে ইরশাদ
করেন-
“এতা তাদের পুষ্টিও যোগাবেনা ও ক্ষুধা
নিবারণ করবেনা।”
(আল-গাশিয়াহ: ০৭)
.
ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্টই রয়েছে যে
তা পান কারির পুষ্টিও যোগায়না,ক্ষুধাও
নিবারণ করেনা। ধুমপানের তুলনা
জাহান্নামের খাবারের সাথই তুলনা করা
যায়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
“তোমরা অপচয় কর না।অপচয়কারিরা
শয়তানের ভাই।”
(আল-ইসরা: ২৭)
.
ধুমপান একটি অপচয়। অনেক এমন অপচয়
আছে যাতে মানুষের লাভ-ক্ষতি কিছুই
নেই।এণ্ডলো সকলের কাছে অন্যায় ও
সর্বসম্মতভাবে তা অপচয় বলে গণ্য। কিন্তু
ধুমপান এমন একটি অপচয় যাতে মানুষের
কোন লাভ নেই বরং ক্ষতিই বেশি।
হাদীসের আলোকে ধুমপান:
রাসূলে করীম (সা:) বলেন:-
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদের
তিনটা বিযয় ঘৃণা করেন।
১)ভিত্তিহীন ও
সনদ-সূত্রবিহীন কথা-বার্তা।
২)অধিকহারে প্রশ্ন করা।
৩)সম্পদ নষ্ট
করা।”(বুখারী ও মুসলিম)
.
ধুমপানকারী ধুমপান করে সম্পদ নষ্ট করে
তাতে কারো কোন দ্বি-মত নেই।
রাসূলে করীম (সা:) বলেন:-
“যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে
বিশ্বাস রাখে সে যেন তার
প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।”(বুখারী)
.
ধুমপানকারী তার ধুমপানের দ্বারা
পরিবার-পরিজন, সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও
আশে পাশের লোকজনকে কষ্ট দিয়ে
থাকে। অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে
মনে ধুমপানকারীকে অভিশাপ দেয়।
আবার দু একজন প্রতিবাদ করে বিব্রতকর
অবস্হায় পরে যান।চিকিৎসা বিজ্ঞানের
গবেষণায় এ কথা প্রমানিত যে
ধুমপানকারীর প্রতিবেশি শারিরিকভাবে
সমান ক্ষতিগ্রস্হ হন যতটা ধুমপানকারির
নিজের হয়ে থাকে।
রাসূলে করীম (সা:) বলেন:-
“হালাল স্পষ্ট ও হারাম স্পষ্ট। এ দুইয়ের
মাঝে আছে সন্দেহজনক বিষয়াবলী।
(তা হালাল না হারাম) অনেক মানুষই
জানেনা। যে ব্যক্তি এ সন্দেহজনক
বিষয়াবলী পরিহার করল, সে তার উর্ম ও
স্বাস্হ রক্ষা করল। আর যে ব্যক্তি এ
সন্দেহজনক বিষয়াবলীতে লিপ্ত হল সে
প্রকারান্তরে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে
গেল।(বুখারী ও মুসলিম)
.
তাই যারা ইসলামের দৃষ্টিতে ধুমপান
নিষিদ্ধ হওয়ার কোন প্রমান পাচ্ছেন না
তাদের কমপক্ষে এ হাদীসটির দিকে দৃষ্টি
দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
নবী করীম (সা:) এরশাদ করেন:-
“যে সকল কথা ও কাজ মানুষের কোন
উপকারে আসেনা, তা পরিহার করা তার
ইসলামের সৌন্দর্য।”(মুসলিম)
.
আমরা সকলেই স্বীকার করি যে ধুমপান
কোন উপকারে আসেনা বরং ক্ষতিই করে।
.
বাস্তবতার আলোকে ধুমপান:
কোন পাক ঘরে যদি জানালার কাচ থাকে
অথবা বাল্ব থাকে তা্লে দেখা যায়
ধোয়ার কারনে তাতে ধীরে ধীরে কালো
আবরন পরে। এমনই ভাবে ধুমপানকারীর
দাতে, মুখে ও ফুসফুসে কালো আবরন তৈরি
হয়। কাচের আবরণ পরিষ্কার করা গেলেও
ফুসফুসের কালিমা পরিষ্কার করা যায়না।
ফলে তাকে অনেক রোগ-ব্যধীর স্বীকার
হতে হ্য়। একজন অধুমপায়ী ব্যক্তির চেয়ে
একজন ধুমপয়ী বেশি উগ্র মেজাজের হয়ে
থাকেন। সমাজে যারা বিভিন্ন অপরাধ
করে বেরায় তাদের ৯৮% ধুমপান করে
থাকে। যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে
তাদের ৯৫% প্রথমে ধুমপানে অভ্যস্ত
হয়েছে তারপর মাদক সেবন আরম্ভ
করেছে। এমনকি ধুমপায়ী মায়ের সন্তান
উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকে। (সূত্র: দৈনিক
ইনকিলাব ১৫-১২-২০০০ ইং)
.
সম্প্রতি উইনকনসিন বিশ্ব বিদ্যালয়ে
৩৭৫০ জন লোকের উপর এক সমীক্ষায়
দেখা যায় যে আধুমপায়ীএর চেয়ে
দধুমপায়ীদের শপবনশক্তি কমার সম্ভাবনা
শতকরা ৭০ ভাগ বেশি থাকে। গবেষণা
করে আরো দেখেছেন যে একজন ধুমপায়ীর
ধুমপান করার সময়েকোন অধুমপায়ী পাশে
থাকলে তারো একই সমস্যা হতে পারে।
(সূত্র: সাপ্তাহিক আরাফাত বর্ষ ৪৫
সংখ্যা ১, ১৮ই আগষ্ট ২০০৩)
.
তাই আসুন সকলে মিলে আমরা আমাদের
সমাজকে ধুমপান মুক্ত করার চেষ্টা করি।

+++++++++++++
সিগারেট কি হারাম??
.
উত্তর :ধূমপান বর্তমানে প্রচুর সমস্যা ও ক্ষতির
কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই সাথে
ধূমপানের সমস্যাগুলো অনেক দ্রুত ছড়িয়ে
পড়ছে। ধূমপান হারাম না হালাল সেটা
ব্যাখ্যা করার আগে একটা ব্যাপার বলে
নেয়া জরুরি, আল্লাহ পৃথিবীর সকল
কিছুকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। ভালো
বা হালাল এবং খারাপ বা হারাম।
এখানে তৃতীয় কোন প্রকার নেই। আল্লাহ
বলেনঃ
• তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল
ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম
বস্তুসমূহ (সূরা আরাফ :১৫৭)
.
সুতরাং ধূমপান হয় হালাল হবে নতুবা
হারাম হবে। অন্য আর যে যা বলে তা
গ্রহনযোগ্য হবে না।
.
এবার আসুন ধূমপান এর ব্যাপারে বর্তমানে
বিজ্ঞানী এবং ডাক্তাররা একমত যে
স্বাস্থ্যের জন্য ধুপমান মারাত্মক
ক্ষতিকর। ফুসফুসের ক্যান্সারসহ আরো
মারাত্মক রোগের মূল কারন ধূমপান।
ধূমপায়ী মায়েদের সন্তান বিকলাঙ্গ হবার
সম্ভাবনা অনেক বেশি। স্কুল কলেজে
ধূমপান এর অপকারিতা নিয়ে অনেক রচনা
অনেকেই লিখেছেন। আর এটা তো জানাই
যে ধূমপান মৃত্যুর একটা বড় কারন। CDC
(Center for Disease Control) এর হিসাবে
প্রতি বছর বার্ধক্যজনিত কারন, দূর্ঘটনা,
HIV তে যত মানুষ মারা যায় তার মোট
সংখ্যার চেয়ে শুধুমাত্র ধূমপানে বেশি
মানুষ মারা যায়। লেখার শেষে লিঙ্ক
দেয়া আছে, আরো বিস্তারিত আছে সেই
ব্যাপারে। American Cancer Society এর
হিসাবে ২০১৩ সালেই ২২৮১৯০ জন
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে
তামাকের কারনে। আর ১৫৯৪৮০ জন মারা
গেছেন একই কারনে। সুতরাং ধূমপান যে
কতটা ভয়াবহ তা বুঝতে পারার কথা। খুব
স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় ধূমপান হচ্ছে
বিষপান, আত্মহত্যার একটা দীর্ঘ উপায়।
আর আল্লাহ বলেছেন,
• তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো
না। (কোরান নিসা :২৯)।
.
এছাড়াও নবী মুহাম্মদ(সা) বলেছেন,
# এখানে (ইসলামে ) এমন কিছুই নেই যা
খারাপ বা খারাপ করতে পারে । (Arabic
"laa darar wa laa diraar")
তিনি আরো বলেন, “তোমার শরীরের
তোমার উপর অধিকার আছে।” একটু আগেই
দেখিয়েছি কিভাবে ধূমপান মানুষকে
শেষ করে দেয়। ধূমপান করা মানে হচ্ছে
শরীরের উপর অত্যাচার করা। সুতরাং
ধূমপানের মধ্য দিয়ে আমরা শরীরের
অধিকার নষ্ট করছি, বিচারের দিনে এর
হিসাব আমাদের দিতে হবে।
আর যেখানে সেখানে ধূমপান যে
অধূমপায়ীদের অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে
তা না বললেই চলে। সিগারেটের বাজে
গন্ধ অনেকের সহ্য হয় না আবার অনেকের
অ্যাজমা থাকলে তাদেরও সমস্যা হয়। আর
সিগারেটের বাজে গন্ধ ফেরেশতাদেরও
সমস্যা করে। আর এই ব্যাপারে আল্লাহ
বলেছেন,
• যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন
নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা
অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন
করে। (সূরা আহযাব :৫৮)।
.
আর CDC এর হিসেবে প্রতি বছর গড়ে
৪৯৪০০ অধূমপায়ী মারা যায় ধুমপায়ীদের
ধোঁয়ার কারনে আক্রান্ত হয়ে। এই
মানুষগুলোকে আসলে হত্যা করে
ধুমপায়ীরা বিনা কারনে। আর বিনা
কারনে কাউকে হত্যার ব্যাপারে আল্লাহ
বলেছেন-
• যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ
অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া
কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই
হত্যা করে। (সূরা মায়িদা :৩২)
.
যে জিনিস এতো সমস্যার সৃষ্টি করে তা
না বললেও চলে। সুতরাং এই পথে অর্থ
ব্যায় অপব্যায় হিসেবেই গন্য হবে। আর
এটা তো জানাই যে
• নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।
শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয়
অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনী ইসরাইল:২৭)
.
# আর মুহাম্মদ(সা) বলছেন, “শেষ বিচারের
দিন একজন মানুষকেও অগ্রসর হতে দেয়া
হবে না যতক্ষন না সে হিসাব দেবে সে
তার অর্জিত অর্থ কিভাবে খরচ করেছে”।
.
# হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রা) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
(সা) বলেছেন: হালাল বা বৈধ সুস্পষ্ট
এবং হারাম বা অবৈধও স্পষ্ট, আর এ দু’এর
মধ্যবর্তী বিষয়গুলো হলো সন্দেহজনক। আর
বেশীরভাগ লোকই সেগুলো (সম্পর্কে
সঠিক পরিচয়) জানে না। অতএব যে ব্যক্তি
ঐ সন্দেহজনক জিনিসিগুলোকে পরিহার
করলো সে তার দ্বীন ও মান-সম্মানকে
পবিত্র রাখলো। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক জিনিসে জড়িয়ে পড়লো সে হারামের মধ্যে পড়ে গেল। (মুত্তাফিক আলাইহি)
.
উপরের আলোচনা থেকে আশা করি বুঝে
যাবার কথা সিগারেট হারাম নাকি
হালাল।
.
অনেকেই আছে নিজেদের সুবিধায় বলে
যে সিগারেট মাকরুহ কিন্তু আগেই বলে
দিয়েছি হয় হালাল না হয় হারাম।
মাঝামাঝি কিছু নাই। হালালের বিভিন্ন
শ্রেণীই হচ্ছে মুস্তাহাব, মুবাহ , মাকরূহ ।
তাই যারা ধূমপান করে তাদের উচিৎ যত
দ্রুত সম্ভব ধূমপান ছেড়ে দেয়া। কাজটা
অনেক কঠিন কিন্তু একেবারেই অসম্ভব
না। । আল্লাহ আমাদের সকল হারাম
থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুক ।
সূত্র :
1. http://www.cancer.org/cancer/
cancercauses/tobaccocancer/tobacco-
related-cancer-fact-sheet
2. http://www.cdc.gov/tobacco/
data_statistics/fact_sheets/health_effects/
tobacco_related_mortality/
3. http://islamqa.info/en/ref/110
++++++++++++++++++
(মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-
উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)
.
প্রশ্নঃ সম্মানিত শায়খের কাছে আমার
জিজ্ঞাসা যে- ধূমপান ও হুক্কা টানা
সম্পর্কে ইসলামী বিধান কী? এ ব্যাপারে
কুরআন ও হাদীস থেকে কোন দলীল-প্রমাণ
আছে কি?
.
উত্তরঃ ধূমপান করা হারাম। অনুরূপভাবে
হুক্কা টানাও হারাম। ধূমপান হারাম
হওয়ার দলীল সমূহ নিম্নে বর্ণনা করা
হলোঃ- ১. মহান আল্লাহ্ বলেন,
ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴْﻤًﺎ ‏( ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :
২৯)অর্থাঃ “তোমরা তোমাদের নাফসকে
হত্যা করোনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্
তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু” (সূরা
নিসাঃ ২৯)।
.
২. আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন,
ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮْﺍ ﺑِِﺄَﻳْﺪِﻳْﻜُﻢْ ﺇِِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ‏(ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ১৯৫)
অর্থাৎ “তোমরা নিজ হাতে নিজেকে
ধ্বংসে পতিত করোনা”(সূরা বাক্বারাহ,
১৯৫)।
.
চিকিৎসাশাস্ত্র প্রমাণ করেছে যে,
ধূমপান একটি ক্ষতিকর বস্তু। আর যে সকল
বস্তু স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর, ইসলামী
বিধান তাকে হারাম করেছে। যেমন
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
{ ﻭَﻻَ ﺗُﺆْﺗُﻮْﺍ ﺍﻟﺴُّﻔَﻬَﺎﺀَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻜُﻢْ
ﻗِِﻴَﺎﻣًﺎ { ‏( ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :৫)
অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের সম্পদ
নির্বোধদেরকে প্রদান করোনা। যে
সম্পদকে আল্লাহ্ পাক তোমাদের জীবন-
যাত্রার অবলম্বন করেছেন”(সূরা নিসাঃ৫)।
.
উপরোক্ত আয়াতে ধূমপায়ী
নির্বোধদেরকে আমাদের সম্পদ থেকে
প্রদান করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা
তারা সম্পদের অপচয় করবে, আর বিপর্যয়
সৃষ্টি করবে। তাহলে নিঃসন্দেহে বলা
যেতে পারে যে, হুক্কা টানায় ও ধূমপানে
সম্পদের অপচয় হয়। আর অত্র আয়াত অপচয়,
অপব্যয় ও বিপর্যয় সৃষ্টি না করার প্রমাণ
বহন করে। এছাড়াও রাসূলুল্লা-হ
(ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) সম্পদ
বিনষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। ধূমপানে
সম্পদের অপচয় ও অপব্যয় হয়। আর এ
অপব্যয়ই হচ্ছে সম্পদ বিনষ্ট করা।
রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-
সাল্লাম) বলেছেন, “ ﻻَﺿَﺮَﺭَ ﻭَﻻَﺿِِﺮَﺍﺭَ ”
অর্থা “তোমরা নিজেদের ক্ষতিসাধন
করোনা এবং অপরের ক্ষতি সাধনও
করোনা”। ধূমপান এমনই এক বিষয় যা
গ্রহণের কারণে নিজের ক্ষতির সাথে
সাথেই পার্শ্ববর্তী মানুষের কষ্টের কারণ
হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া ধূমপায়ী ধূমপানের
মাধ্যমে সম্পদ হারিয়ে নিজেকে
ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় এবং নিঃস্ব
অবস্থায় দুনিয়াতে বসবাস করে। অতএব যে
নিজেকে ধূমপানে অভ্যস্ত করলো, সে
ধনবান থেকে নিঃস্বে পরিণত হলো।
.
(মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-
উসাইমীন রাহিঃ)
.
ধূমপানের অপকারিতা সম্পর্কে
আমরা যা জানি
১- ধূমপান একটি অপবিত্র, দুর্গন্ধময় ও
ক্ষতিকারক বস্তু।
২- ধূমপান ক্যান্সার, যক্ষ্মা প্রভৃতির মত
ধ্বংসাÍক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৩- ধূমপায়ী স্বয়ং নিজের নাফসকে ধ্বংস
করে দেয়।
৪- ধূমপান নিজের ক্ষতির সাথে-সাথে
পার্শ্ববর্তী লোকেরও কষ্টের কারণ হয়ে
দাঁড়ায়।
৫- ধূমপান করার অর্থই হচ্ছে নেশাদার বা
হারাম জিনিষ খেয়ে মহান আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের নাফরমানী করা,
ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের নাফসকে বিভিন্ন
রোগে আক্রান্ত হতে সহযোগিতা করা আর
অর্থের অপচয় করা। এ সমস্ত কাজের
প্রত্যেকটাই শয়তানী কাজের অন্তর্ভুক্ত।
৬- ধূমপানকারী নিজে প্রকাশ্যভাবে
গোনাহ করে থাকে আর সে এ গুনাহের
কাজের বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। সেহেতু
ধূমপানের গোনাহ বড় ধরনের গোনাহ।
অতএব ধূমপানকারীকে অতিশীঘ্রই
তাওবা করা উচিত।
৭- ধূমপানকারী সম্পদ ধ্বংসকারী , যাকে
আল্লাহ্ মোটেই পছন্দ করেন না।
৮- ধূমপান মানুষের হৃদযন্ত্রকে অকেজো
করে ফেলে। আর শরীরের শক্তিকে দুর্বল
করে দেয়।
৯- এর দ্বারা দাঁতগুলো হলুদ হয়ে যায়,
ঠোঁট দুটি কালো হয়ে যায়, চেহারার
লাবন্য নষ্ট হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়
আর স্নায়ু দুর্বলতা দেখা দেয় ইত্যাদি।
১০-এর দ্বারা কফ, কাশি এবং বক্ষব্যাধির
সৃষ্টি হয়।
১১-এর কারণে যক্ষ্মা ও হৃদ রোগ হয়।
হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুও ঘটে।
১২-খাবারে রুচি নষ্ট করে ফেলে আর
হজমে ব্যাঘাত ঘটায়।
১৩-এর দ্বারা রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়
আর হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যাবলীতে
গোলযোগ দেখা দেয়।
১৪-সুরুচিশীল লোকদের নিকট ধূমপান
একটি অপবিত্র ও ঘৃণিত বস্তু বলে গণ্য।
১৫-ধূমপান একটি নেশাদার বস্তু যা
পরিষ্কার হারাম।
১৬-ধূমপান একটা দুর্গন্ধময় বস্তু। যারা
সিগারেট খায়না তারা এর দ্বারা খুবই
কষ্ট পায়,
অপরদিকে সম্মানিত ফেরেশতাকুলও খুবই
কষ্ট পান।
১৭- এটা দ্বীন-দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য
বড় ক্ষতিকর।
১৮- বর্তমান বড় বড় দেশগুলি কঠোরভাবে
ধূমপান বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে।
সিগারেটের মোড়কে লেখা হচ্ছেঃ
‘ধূমপানে বিষপান’, ‘ধূমপান স্বাস্থের জন্য
ক্ষতিকর’ ইত্যাদি।
২০- এর ফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা
দেয়।
২১-ধূমপানের বিজ্ঞাপন যেন বলে,‘আপনার
ফুলদানী হোক ছাইদানী’।
২২-ধূমপানের বিজ্ঞাপন স্বাস্থ্য ও সম্পদ
নষ্টের বিজ্ঞাপন।
২৩-ধূমপান ইসলামী শরী‘য়াত ও সুস্থ
বিবেকের দৃষ্টিতে হারাম। অতএব
ধূমপানকারীর সংগ বর্জন করুন আর মহান
আল্লাহর নিকট তাওবা করুন।
২৪-ধূমপান করার আগে ভেবে দেখুন- এটা
হারাম না হালাল? উপকারী না
ধ্বংসকারী? পবিত্র না অপবিত্র? চিন্তা
করলে অবশ্যই জানতে পারবেন যে, এটা
হারাম, ক্ষতিকর এবং অপবিত্র ।
২৫-বাহ্যিকভাবে ধূমপানের মাধ্যমে
সমাজের লোকদেরকে ক্ষতিগ্র¯ত হওয়ার
দিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়।
২৬-মোট কথা ‘একজন ধূমপায়ী’ তার ছেলে-
মেয়ে, স্ত্রী, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন
এবং
সুশীল সমাজের নিকট-সর্বোপরি মহান
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট অর্থ
অপচয়কারী,
বদ অভ্যাসের দাস ও হারাম খোর হিসাবে
পরিচিত।
২৭-বাস্তবতার আলোকে আমরা যেটা
দেখতে পাই সেটা হলোঃ ক্ষেতে
খামারে, মাঠে-ময়দানে বিভিন্ন স্থানে
রক্ষিত বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও
ফসলাদি যা গরু-ছাগল, ভেড়া-মহিষ, হাস-
মুর্গী নষ্ট করে, বা খেয়ে ফেলে- যার
ফলে চাষী ভাইয়েরা ঐ সমস্ত
জানোয়ারের ক্ষয় ক্ষতির হাত থেকে
তাদের ফসলাদিকে রক্ষা করার জন্য
মাঠের ক্ষেত এবং বাড়িতে খামারে
রাখা ফসলাদি ঘিরে রাখার ব্যবস্থা
করে থাকে। এখানে লক্ষণীয় যে, পান ও
বিড়ি-সিগারেটের তামাক এমনই অপবিত্র
ও ক্ষতিকারক বস্তু- যার ফলে কোন জীব
জানোয়ার ও পশু-পাখী পর্যন্ত তা খায়
না। ফলে বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুরে
মাঠের হাজার হাজার বিঘা তামাকের
ক্ষেত ও বাড়ির খামারে রক্ষিত তামাক
ঘিরে রাখার কোন প্রয়োজন হয়না।
অপরদিকে সৃষ্টির সেরা মানুষ ঐ হারাম ও
অপবিত্র জিনিস খেয়ে নিজে অর্থনৈতিক
ও, শারীরিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
আর সর্বোপরি ধর্মীয় অনুভূতিকে ধংস
করছে। এর পরেও ওহে ধূমপায়ী ভাই!
আপনি কি বিষয়টা একটু ভেবে দেখবেন
না?
২৮-ধূমপায়ী ভাইদের মধ্য হতে অনেকেরই
ধারণা যে, টয়লেটে বসে সিগারেট
টানলে তাতে পায়খানা ভাল ক্লিয়ার হয়।
এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা তথা বদ অভ্যাস
মাত্র। আর এটা নিঃসন্দেহে শয়তানী
কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। বাস্তবতার
আলোকে দেখা যায় যে, একজন ধূমপায়ী
সিগারেট জ্বালিয়ে টয়লেটে ঢুকার পর
কমপক্ষে ১০মিনিট যাবৎ টয়লেটের কাজ ও
সিগারেট টানার কাজ শেষ করে যখন বের
হয়ে আসল- তখন ঘটনা ক্রমে অন্য একজন
অধূমপায়ী ব্যক্তি প্রয়োজন মিটাতে ঐ
টয়লেটে ঢুকেই বিকট দুর্গন্ধের
মোকাবিলা করে টয়লেটের কাজ সমাধা
করতে হিমসিম খেয়ে যায়। কেননা চার
দেয়াল বেষ্টিত ছোট্ট টয়লেটে তখন
একদিকে সিগারেটের বিষাক্ত ধুয়া
অপরদিকে টয়লেটের দুর্গন্ধ একত্রিত হয়ে
বিকট দুর্গন্ধময় গ্যাসে ভরে রয়েছে। ফলে
টয়লেটের দুর্গন্ধ চাপা পড়ে গিয়ে এখন শুধু
সিগারেটের বিষাক্ত গ্যাসই ঐ অধূমপায়ী
ব্যক্তির কাছে অনুভূত হচ্ছে। যার ফলে
টয়লেটের কাজ সমাধা করতে সে এখন বড়
বিপদে পড়েছে। এক্ষণে বিশেষ করে
ধূমপায়ী সূধী মহলের নিকট প্রশ্ন যে, ঐ
টয়লেটে আপনার ধূমপান করার কারণে ঐ
দূর্গন্ধময় বিষাক্ত গ্যাসের ভিতর কমপক্ষে
১০মিনিট সময় আপনি কেমন করে বসে
থাকেন? শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ঐ
বিষাক্ত গ্যাস অবশ্যই আপনার শরীরের
ভিতর প্রবেশ করে- যা আপনার শরীরের
জন্য কতটুকু কল্যাণকর একটু ভেবে দেখবেন
কি?
২৯-ক্ষেতে-খামারে, মাঠে-ময়দানে,
অফিসে-আদালতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে,
মিল-কল কারখানায় – তথা সকল প্রকার
কর্মস্থলে কর্মরত ভাইদের মধ্যহতে
অনেকেই ধারণা করেন যে, ক্লান্তি -
শ্রান্তি ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার জন্য
ধূমপান বড় উপকারী। মাঝে মাঝে একটু
ধূমপান করে নিলে ক্লান্তি-শ্রান্তি ও
দুঃশ্চিন্তা দূর হয়, ফলে কর্মের তৎপরতা
বা গতি বৃদ্ধি পায়। ধূমপায়ীদের এই যুক্তি
অগ্রহণযোগ্য। কেননা বাস্তবতার
আলোকে ধূমপানের মাধ্যমে যদিও
সাময়িক কিছুটা উপকার অনুভূত হয় ধরে
নেওয়া যায়- তবে বিচক্ষণতার দ্বারা
যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে যে, এই
ধূমপানের দ্বারা উপকার বা লাভের
পরিমাণ কতটুকু আর ক্ষতির পরিমাণ বা
কতটুকু? বলা যেতে পারে যে, ধূমপানের
দ্বারা যদি ১ আনা পরিমাণ উপকার বা
লাভ হয়- তাহলে বাকী ১৫ আনাই ক্ষতি
সাধিত হয়। তাহলে এখন আপনি আপনার
সুস্থ বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন যে,
আপনি কি ১ আনা লাভ করতে যেয়ে ১৫
আনাই ক্ষতি স্বীকার করবেন। আর
এজন্যেই মদের ব্যাপারে আল্লাহ
তা‘আলা বলেছেন যে, ‘‘মদের ভিতর
মানুষের জন্য সামান্য পরিমাণ উপকার
আছে- তবে ক্ষতির পরিমাণ অনেকগুণ
বেশী’’। আর এজন্যেই আল্লাহ তা‘আলা মদ
পান করা মানুষের জন্য হারাম করে
দিয়েছেন।
.
এখন কথা হলো- কর্মের মাঝে ক্লান্তি-
শ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য
ইসলামী বিধান মুতাবিক ‘মিসওয়াক’ করা,
‘উয’ করা বা ‘উযূ করে দু‘রাক‘আত নামায
পড়া’, গরম দুধ ও চা পান করা বা কিছু
নাশতা করা- ইত্যাদি মাধ্যমগুলি গ্রহণ
করা যেতে পারে। তাই বলে তো ক্লান্তি-
শ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা দুর করার অজুহাতে
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল প্রদর্শিত হালাল
পদ্ধতিগুলি বাদ দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের নিষেধকৃত হারাম বস্তুগুলি
খাওয়া, এটা কেমন ধরণের ঘৃণিত ও পাপের
কাজ? একবার ভেবে দেখুনতো। প্রকাশ
থাকে যে, পানের সাথে যে সম¯ত জর্দা,
বা কাঁচা তামাক খাওয়া হয়, এমনিভাবে
যে সমস্ত গুল ব্যবহার করা হয় মোটকথা
যার দ্বারা নেশা হয় এ ধরণের সমস্ত
জিনিস খাওয়া বা ব্যবহার করা হারাম।
কেননা বাস্তবে দেখা গেছে যে, একজন
পানে তামাক খাওয়ায় অভ্যস্ত- কিন্তু
ঘটনা ক্রমে যদি সে তামাকের পরিমাণ
একটু বেশী মুখে দিয়ে ফেলে তাহলে
অবশ্যই সে মাথাঘুরে পড়ে যাবে।
অপরদিকে একজন অনভ্যস্ত ব্যক্তি সে তো
পানের তামাক কিছুটা মুখে দিয়ে
চিবাতেই সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে পড়ে
যেয়ে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে। অতএব
এগুলির সবই খাওয়া ও ব্যবহার করা হারাম।
এখন বলা যেতে পারে যে, বিড়ি
সিগারেটের তামাক যেটা বিশেষ
প্রক্রিয়ায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে তার
বিষাক্ত ধূয়া টানা হয়, আর পানের
তামাক যা শুকনা তামাক, যাকে কাঁচা
পানের সাথে চিবিয়ে তার বিষাক্ত
স্বাদ গ্রহণ করা হয়, এদু‘টি পদ্ধতির মাঝে
কোনই পার্থক্য নেই, এ যেন একই টাকার
এপিঠ ওপিঠ। অতএব সিগারেট ও হুক্কা
টানা এবং পানের তামাক, জর্দা ও গুল
খাওয়া ও ব্যবহার করা ইসলামী শরী‘য়াতে
সবই হারাম। কেননা জনাব রাসূলুল্লা-হ
(ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম)
বলেছেন” ﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِﺮٍٍ ﺧَﻤْﺮٌ ﻭَ ﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِِﺮٍ ﺣَﺮَﺍﻡٌ
” ‏( ﻣﺴﻠﻢ )
অর্থঃ‘‘প্রত্যেক নিশাদার বস্তুই হলো মদ,
আর প্রত্যেক নিশাদার বস্তুই হলো
হারাম”(মুসলিম)।
“ ﻣَﺎ ﺃَﺳْﻜَﺮَ ﻛَﺜِﻴْﺮُﻩُ ﻓَﻘَﻠِﻴْﻠُﻪُ
ﺣَﺮﺍﻡٌ ” ‏( ﺃﺣْﻤَﺪُ )তিনি আরো বলেছেন, ‘‘যে
বস্তুর বেশী পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে
তার কম পরিমাণও হারাম” (আহমাদ)।
.
৩০-প্রকাশ থাকে যে, বেশ কয়েকটি
হাদীছের আলোকে এটাই প্রমাণিত যে,
ইসলামী শরীয়াত যে সমস্ত বস্তু খেতে,
পান করতে এবং ব্যবহার করতে নিষেধ
করেছে- সেই সমস্ত বস্তুর মূল্য গ্রহণ করা
এবং সেই সমস্ত বস্তু দিয়ে ব্যবসা করাও
হারাম। এ হিসাবে বিড়ি, সিগারেট এবং
পানের তামাক ও জর্দা এ জাতীয় বস্তু
বিক্রয় করাও হারামের ভিতর গণ্য। অতএব
সাবধান!
৩১-কিছুদিন আগে বাংলাদেশের
স্বাস্ত ’মন্ত্রী ডঃ মুশাররাফ হুসাইন
বাংলাদেশের সংসদ অধিবেশনে
ধূমপানের অপকারিতা ও তার ক্ষতিকর
বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা
করেন। পরিশেষে সর্বসম্মতিক্রমে
সরকারীভাবে রাস্তা-ঘাটে হাটে-
বাজারে, বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে
এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানে তথা বিভিন্ন সমাবেশে ও
লোকালয়ে ধূমপান করা এবং ধূমপানের
সামগ্রী অর্থাৎ বিড়ি সিগারেট ইত্যাদি
বিক্রয় করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ
হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে
ধূমপায়ীদের এবং বিড়ি সিগারেট
বিক্রেতাদের শাস্তির জন্য জেল ও
জরিমানার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পরিশেষে ধূমপানকারী ভাইদের নিকট
আকুল আবেদন এই যে, আপনি একজন
মুসলমান, যে কোন মুহূর্তে আপনার
মৃত্যুঘন্টা বেজে উঠতে পারে, আর মৃত্যুর
পরে আপনার সারাটি জীবনের সকল
প্রকার কর্মকাণ্ডের হিসাব মহান
আল্লাহর দরবারে দিতে হবে। আর আপনি
যেহেতু পরিষ্কারভাবে জানতে পারলেন
যে, ধূমপান ক্ষতিকর এবং হারাম,
.
তাই আপনার কর্তব্য হলোঃ
১. আল্লাহর উদ্দেশ্যে ধূমপানকে ঘৃণা
করা।
২.এটি বর্জনের দৃঢ় সংকল্প করা।
৩. সিগারেটের পরিবর্তে দাঁতন-মিসওয়াক
অথবা অন্য কোন হালাল ও পবিত্র দ্রব্য
ব্যবহার করা।
৪. ধূমপায়ীদের সমাবেশে না যাওয়া।
অতএব আপনি চিরতরে ধূমপান বর্জন করার
জন্যে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ্র নিকট
সাহায্য চান, আর প্রার্থনা করুন- হে
আল্লাহ্! ধূমপানের প্রতি আমাদের অন্তরে
ঘৃণা সৃষ্টি করে দিন এবং এ থেকে বাঁচার
তাওফিক দিন- আমীন।
++++++++++++++
আমরা সকলে জানি ধূমপান
স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
কথাটা অনেকে সেচ্ছায়
বলেন অনেকে বলেন বাধ্য হয়ে। যাই হোক ধুমপানের ক্ষতির তুলনায় শ্লোগানটা
খুবই হাল্কা। কারণ ধূমপান
শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। মস্তিষ্কের জন্য
ক্ষতিকর, আত্নার জন্য ক্ষতিকর, স্বভাব-চরিত্রের
জন্য ক্ষতিকর, পরিবার-
পরিজন প্রতিবেশী সমাজ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।আমার কাছে এর চেয়ে বড়
ক্ষতির দিক হলো ধুমপানের মাধ্যমে ইসলামের নীতি
আদর্শ লংঘন। আমি অনেক
ধর্মপ্রান লোকজনকে
দেখেছি তারা ধূমপান করেন। এ সকল ধর্মপ্রান
মানুষ ও ধর্মীয় নেতাদের
যখন আপনি বলবেন ধূমপান জায়েজ নয় তখন তারা তা মানতে চান না। অনেক
যুক্তির সাথে তারা এ টাও বলেন মক্কা শরীফের মত পবিত্র স্থানেও ধূমপান করতে দেখেছি, যদি জায়েযই না হতো তা হলে কি অনেকেই বলেন, আল-কোরানে তো বলা হয়নি
'তোমরা ধূমপান করো না।'হাদিসে রাসূলে কোথাও নেই যে, 'ধূমপান করা যাবে না', তা হলে ধূমপান ইসলামি শরীয়তে নিষিদ্ধ হলো
কিভাবে?এ প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তরই রয়েছে
এ প্রবেন্ধ।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
ইরশাদ করেন, "তিনি তোমাদের জন্য হালাল করে
দেন ভাল ও উত্তম বস্তু আর হারাম করে দেন খারাপ ও ক্ষতিকর বস্তু।"
(সুরা আল-আরাফ : ১৫৭)
.
এ আয়াতের ভিত্তিতে এমন বহু জিনিস
আছে যা হারাম হয়েছে অথচ তা কোরান- হাদিসে
নাম ধরে বলা হয়নি। আমরা সাপ খাই না। কেন খাই না?কোরান- হাদিসে কোথাও
কি আছে তোমরা সাপ খেয়ো না ? নেই ঠিকই,
কিন্তু উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে তা হারাম হয়ে
গেছে। কেননা তা ক্ষতিকর ও খারাপ। ধূমপান ক্ষতিকর ও খারাপ। এ ব্যাপারে দুনিয়ার সুস্থ বিবেক সম্পন্ন সকল মানুষ একমত। কোন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী দ্বি-মত পোষণ করেননি। তারপরও যদি কেউ বলেন, ধূমপান শরিয়তের নিষিদ্ধ বস্তুর
মধ্যে পড়ে না, তা হলে তাকে ঐ ডায়াবেটিস
রোগীর সাথে তুলনা করা যায় যিনি ডাক্তারের
নির্দেশ মত চিনি ত্যাগ করলেন ঠিকই কিন্তু
রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ সবই খেলেন আর বললেন কই ডাক্তার তো এ গুলো নিষেধ
করেননি!
.
আল-কোরানের আলোকে ধুমপান অপরাধ :
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ
করেন, "তিনি তোমাদের.জন্য পবিত্র ও ভাল
(তাইয়েবাত) বস্তু হালাল করেন আর ক্ষতিকর-
নোংড়া (খাবায়িস)জিনিষ হারাম করেন। (সূরাআল-আরাফ :১৫৭)
.
আর ধূমপান নিশ্চয়ই খাবায়িস
(ক্ষতিকর- নোংড়া)-এর অন্তর্ভুক্ত, তাই তা পান করা বৈধ (হালাল) নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, "তোমরা নিজেদের জীবন ধংসের সম্মুখীন করো না।" (সূরা আল-বাকারা :১৯৫)
.
এ আয়াতের দাবীতেও
ধূমপান নিষেধ।কেননা
ধুমপানের কারনে অনেক
জীবন বিধংসী রোগ ব্যধি
হয়ে থাকে।আল্লাহ তাআলা মদ ও জুয়া
হারাম করতে গিয়ে পবিত্র
কোরানে ইরশাদ করেছেন,
"তারা আপনাকে মদ ও জুয়া
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে।বলে দিন, উভয়ের মধ্যে
রয়েছে মহাপাপ। আর তার
মধ্যে মানুষের জন্য উপকারিতাও আছে। তবে
এগুলোর পাপ উপকারের
চেয়ে বড়।" (সূরা আল-বাকারা:২১৯)
.
আল্লাহ তাআলার এ বানী দ্বারা
বুঝে আসে মদ জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্বেও তা হারাম করেছেন। তাহলে ধূমপান তো মদ জুয়ার চেয়েও জঘন্য। কারন তাতে কোন ধরনের উপকার নেই। বরং একশ ভাগই ক্ষতি। তো ধুমপান নিষিদ্ধ হবেনা কেন? আবার অনেকে বলেন মদ-জুয়া হারাম করা হয়েছে নেশার কারণে কিন্তু ধুমপান করলে তো কোনো নেশা হয়না। আমার ঐ ভাইদেরকে বলছি, এই ধুমপানকে ছাড়তে পারছেন না আপনি এটাই বড় নেশা।কারণ নেশা মানেই আসক্তি।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জাহান্নামিদের খাদ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
"এটা তাদের পুষ্টি ও যোগাবে না ক্ষুধা ও নিবারণ করবে না।" (সূরা আল-গাশিয়াহ : ৭)
.
ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে যে তা পানকারীর পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও
নেভায় না। ধুমপানের তুলনা জাহান্নামি খাবারের
সাথেই করা যায়। এখন আমি
প্রশ্ন করতে চাই আমার কোন ভাই রাজি আছেন
জাহান্নামি কোনো খাবার জেনে বুঝে গ্রহণ করার জন্য?আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, "তোমরা অপচয় করো না। অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।" (সুরা আল-ইসরা :২৭)
.
ধূমপান একটি অপচয়। অনেক এমন অপচয়
আছে যাতে মানুষের লাভ-ক্ষতি কিছু নেই। এগুলো সকলের কাছে অন্যায় ও সর্বসম্মতভাবে তা অপচয় বলে গণ্য। কিন্তু ধূমপান এমন একটি অপচয় যাতে শুধুই মানুষের ক্ষতি। কোন লাভই নেই।
.
হাদিসের আলোকে ধুমপান অপরাধ:
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, "আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদের তিনটি বিষয় ঘৃণা করেন।
১-ভিত্তিহীন ও সনদ-সুত্র
বিহীন কথা-বার্তা।
২-অধিকহারে প্রশ্ন করা।
৩-সম্পদ নষ্ট করা।" (বুখারি ও মুসলিম)
.
ধূমপানকারী ধূমপান করে সম্পদ নষ্ট করে এ
ব্যাপারে কারো দ্বি-মত নেই। সুতরাং ধুমপান
নিষিদ্ধই নিষিদ্ধ।রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস
রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না
দেয়।" (বুখারি)
.
ধূমপানকারী তার ধুমপানের দ্বারা স্ত্রী-পরিজন,সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও আশে-পার্শের লোকজনকে কষ্ট দিয়ে থাকে। অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে ধূমপান কারীকে
অভিশাপ দেন। আবার দু একজন প্রতিবাদ করলে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। আমি বাসে ও ট্রেনে বসে অনেক ধূমপানকারীকে আদবের সাথে বলেছি ভাই
সিগারেটটা শেষ করুন।আমাদের কষ্ট হচ্ছে। এতে
তিনি আমার উপর প্রচন্ডক্ষেপে গিয়ে বকাবকি করেছেন, আমাকে একটা গাড়ী বা ট্রেন কিনে তাতে আলাদা ভাবে চলাফেরা করার হুকুম দিয়েছেন।
.
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় ও প্রমানিত ধূমপানকারীর প্রতিবেশী শারিরিকভাবে অনুরূপ ক্ষতিগ্রস্থ হন যে রূপ ধূমপানকারী হয়ে থাকেন।রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,"হালাল স্পষ্ট, এবং হারাম
স্পষ্ট। এ দুয়ের মাঝে আছে সন্দেহ জনক বিষয়াবলী।(তা হালাল না হারাম )অনেক মানুষই জানে না। যে ব্যক্তি এ সন্দেহ জনক বিষয়গুলো পরিহার করল, সে তার ধর্ম ও স্বাস্থ্য রক্ষা করল। আর যে এ সন্দেহ জনক বিষয়গুলোতে লিপ্ত হল সে প্রকারান্তরে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ল(বুখারি ও মুসলিম)
.
তাই যারা ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান নিষিদ্ধ
হওয়ার কোন প্রমাণাদি পাচ্ছেন না তাদের
কমপক্ষে এ হাদিসটির প্রতি দৃষ্টি দেয়ার আহবান
জানাচ্ছি। কারণ ধুমপান হালাল না হারাম এই
বিষয়টি স্পষ্ট নয়। সুতরাং এই হাদিসের আলোকেও ধুমপান পরিত্যাক্ত।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, "যে সকল কথা ও কাজ মানূষের কোন উপকারে আসে না, তা পরিহার করা তার ইসলামের সৌন্দর্য।" (মুসলিম)
আমরা সকলেই স্বীকার করি যে ধূমপান কোন উপকারে আসে না। বরং ক্ষতিই করে।
.
বাস্তবতার আলোকে ধুমপান অপরাধ :
কোন পাক ঘরে যদি জানালায় কাচ থাকে অথবা বাল্ব থাকে তাহলে দেখা যায় ধোঁয়ার কারনে
তাতে ধীরে ধীরে কালো আবরন পড়ে। এমনি ভাবে ধূমপানকারীর দাতে, মুখে ও ফুসফুসে কালো আবরন তৈরী হয়। কাচের আবরন পরিস্কার করা গেলেও ফুসফুসের কালিমা পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। ফলে তাকে অনেক রোগ ব্যধির শিকার হতে হয়। একজন অধুমপায়ী ব্যক্তির চেয়ে একজন ধুমপায়ী অধিকতর উগ্র মেজাজের হয়ে থাকেন।সমাজে যারা বিভিন্ন
অপরাধ করে বেড়ায় তাদের ৯৮% ভাগ ধূমপান করে থাকে। যারা মাদক দ্রব্য
সেবন করে তাদের ৯৫% ভাগ
প্রথমে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়েছে তারপর মাদক সেবন শুরু করেছে। এমনকি ধুমপায়ী
মায়ের সন্তান উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকে
(সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব তারিখ ১৫-১২-২০০০ ইং)সম্প্রতি উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭৫০ জন লোকের উপর এক সমীক্ষায়
দেখা যায় যে অধুমপায়ীদের চেয়ে ধুমপায়ীদের শ্রবন শক্তি কমার সম্ভাবনা শতকরা ৭০
ভাগ বেশী থাকে।গবেষকরা আরো দেখেছেন
যে, একজন ধুমপায়ীর ধূমপানকালীন সময়ে কোন অধুমপায়ী উপস্থিত থাকলে
তারও একই সমস্যা দেখা দেবে।(সুত্র : সাপ্তাহিক আরাফাত বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ১,১৮ই আগস্ট ২০০৩)
গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ রহমান
+++++++++++++++++++++
ধুমপান হারাম যে সব কারণে
১) এটি বিভিন্ন রোগের কারণ ও
স্বাস্থের জন্য ক্ষতি কারক। নিজেকে
ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হারাম।
(বাকারা: ১৯৫)
.
২) এটি মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ। আর
আত্মহত্যা করা হারাম। (নিসা: ২৯)
.
৩) এর মাধ্যমে ধুমপায়ী নিজের যেমন
ক্ষতি করে অন্যের ক্ষতি করে। ইসলামে
নিজের বা অন্যের ক্ষতি করা হারাম।
(মুয়াত্তা মালিক)
.
৪) দূর্গন্ধময়। যা অন্যের কষ্টের কারণ।
কোন মুসলমানকে কষ্ট দেয়া হারাম। (সূরা
আহযাব: ৯৮)
.
৩) অর্থ অপচয়। “অর্থ অপচয়কারী
শয়তানের ভাই।” (সূরা ইসরা: ২৭)
.
৫) এটি একটি নাপাক বস্তু। আল্লাহ
তায়ালা নাপাক জিনিস ভক্ষণ করতে
নিষেধ করেছেন। (আরাফ: ১৫৭)
.
৬) এটি একটি প্রকাশ্য পাপ। আর
প্রকাশ্যে পাপাচার করার শাস্তি আরও
বেশী।
.
৭) আল্লাহ নির্দেশের বিরোধিতা।
কেননা, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ও
হালাল জিনিস ভক্ষণ করতে আদেশ
করেছেন। (সূরা বাকারা: ১৭২)
.
৮) তামাক নেশা দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। কম
হোক বা বেশী হোক সকল প্রকার নেশা
দ্রব্য ইসলামে হারাম। (তিরমিযী,
আবুদাউদ, ইবনে মাজাহ)
++++++++++++++++++
ধূমপান কেন হারাম?
১. মুসলমানদের জন্য খাদ্যদ্রব্য দুই
প্রকার। হালাল আর হারাম। এর বাহিরে
কিছু নেই। আল্লাহ বলেন, “তিনি
(আল্লাহ) তাদের জন্য পবিত্র ও ভাল
বস্তুকে হালাল করে দেন, আর খারাপ
বস্তুকে করেন হারাম”।(সূরা আরাফঃ ১৫৭) সিগারেট কি পবিত্র ও ভাল বস্তু? অবশ্যই এটা খারাপ বস্তু, আর উপরক্ত আয়াত দিয়ে আল্লাহ
খারাপ বস্তুকে হারাম করেছেন।
.
২. আল্লাহ বলেন, “এবং খাও ও পান কর,
কিন্তু অপব্যয় ও অমিতাচার করোনা।
কেননা, আল্লাহ অপব্যয়কারীদের
ভালবাসেন না?” (সূরা আরাফঃ ৩১) এই
পৃথিবীর সবাই জানে, ধূমপান করা মানে
টাকার অপচয় করা। এমন সুস্থ স্বাভাবিক
মানুষ আছে কি যে সিগারেটকে অপচয়
বলবে না? আর সকল অপচয় হারাম।
ধূমপানের জন্য যে পরিমান অর্থ সারা
পৃথিবীতে ব্যয় হয়,তা দিয়ে কোটি
কোটি ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মানুষদের জন্য
খাবারের ব্যবস্থা করা যেত।
.
৩. সিগারেটের গন্ধ আশপাশের মানুষকে
কষ্ট দেয়। এই গন্ধ যে কতটা অসহ্য তা শুধু
অধূমপায়ীরাই বুঝে। ঘুম থেকে উঠার
পরে একজন ধূমপায়ীর মুখে যে দুর্গন্ধ
হয়,তা দুনিয়ার কোন বাজে গন্ধের
সাথেও তুলনা করা যাবেনা। রাসুল (সঃ)
বলেছেন,“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও
আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার
প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়৷” (বুখারী)
ধূমপানকারী তার ধুমপানের দ্বারা
স্ত্রী-পরিজন, বন্ধু বান্ধব ও আশে-
পার্শের লোকজনকে কষ্ট
দিয়ে থাকে৷ অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য
করে মনে মনে ধূমপান কারীকে
অভিশাপ দেন ৷ তাছাড়া বিভিন্ন
গবেষনায় দেখা গেছে, চেইন স্মোকারদের
স্ত্রীদের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার
সম্ভবনা বেশি।
.
৪. মহানবী (সঃ) রসুন বা পেয়াজের গন্ধ
নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ
করেছেন কেননা এই গন্ধ অন্য
মুসল্লিদের কষ্ট দেয়। আর সিগারেটের
গন্ধ তো সেগুলো হতে কয়েক হাজারগুন
বেশি কষ্টদায়ক।
.
৫. আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা নিজেদের
হত্যা করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্
তোমাদের প্রতি অতি দয়ালু।
” (সূরা নিসাঃ ২৯) রাসুল (সঃ) বলেছেন,
“তোমার প্রতি তোমার শরীরের
অধিকার আছে।”বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার
মতে, প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষ
মারা যায় ধূমপানের কারণে। যারা
ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায়, তাদের
মধ্যে ৯০% হল ধুমপানের কারণে। এছাড়া
হৃদ রোগ, গ্যাস্ট্রিক আলসারসহ অনেক
জীবননাশকারি রোগ
সৃষ্টি করে ধূমপান।এমনকি গর্ভবতী
মায়েরা ধূমপান করলে তাদের
বাচ্চাদের বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মানোর
সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। ইসলামে
কখনো এভাবে নিজের বা মানুষের
ক্ষতি করা সম্পূর্ণ হারাম।
.
৬. আল্লাহ বলেছেন,“এবং তোমরা নিজ
হাতে নিজেকে ধ্বংসে পতিত করো
না।”(সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৯৫) ধূমপান
ক্যান্সার, যক্ষা প্রভৃতির মত
ধ্বংসাত্মক রোগের কারণ। ধূমপান
নিজে নিজেকে ধ্বংস করে দেয়।
.
৭. ধূমপান যে বিষপান এটা সবাই
একবাক্যে স্বীকার করে। এমনকি
ইউরোপে একসময় এটাকে নিষিদ্ধ করা
হয়েছিল এবং ধূমপানকারীকে শাস্তি
প্রদানও করা হত। ইসলামে সকল বিষাক্ত
জিনিস ভক্ষন করা নিষিদ্ধ। রাসুল (সঃ)
বলেন,“যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা
করবে,সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে
অনন্তকাল তাই চাটতে থাকবে।
সেখানে সে চিরকাল অবস্থান
করবে।” (সহিহ মুসলিম)
.
৮. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
জাহান্নামীদের খাদ্যের বর্ণনা দিতে
গিয়ে বলেন,“এটা তাদের পুষ্টিও
যোগাবেনা ক্ষুধাও নিবারণ করবে
না৷” (সূরা আল-গাশিয়াহ : ৭) ধুমপানের
মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে যে তা
পানকারীর পুষ্টির যোগান দেয় না,
ক্ষুধাও নেভায় না৷ ধুমপানের তুলনা
জাহান্নামী খাবারের সাথেই করা
যায়৷
.
৯. বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় এটা
সমাজের ভাল মানুষের কাজ না।
সমাজে যারা বিভিন্ন অপরাধ করে
বেড়ায় তাদের ৯৮% ভাগ ধূমপান করে
থাকে৷ যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে
তাদের ৯৫% ভাগ প্রথমে ধুমপানে
অভ্যস্ত হয়েছে তারপর মাদক সেবন শুরু
করেছে৷ ধূমপান করা, বিক্রি করা ও
তাকে উৎসাহ দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম

৩টি মন্তব্য:

  1. তামাক থেকে বিড়ি সিগারেট তৈরি হয়। তাহলে তামাকজাতদ্রব্য সবই হারাম? অনেকে জর্দা দিয়ে আরামসে পান খায় আর সিগারেট খাওয়াকে হারাম কয়- এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. কে বলেছে যে জর্দা হালাল???
      জর্দা অবশ্যই ধুমপানের মতো হারাম।

      মুছুন
  2. এত সুন্দর করে গুছিয়ে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ ভাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন!

    উত্তরমুছুন

 
back to top