শনিবার, ৫ মার্চ, ২০১৬

ফাযায়েলে আমলে কি শিরক আছে

কোন মন্তব্য নেই:

ফাযায়েলে আমলে কি
আসলেই #শিরিক আছে?
(পর্বঃ- ১)
.
অনেকে এমন ভাব ধরে যেনো
– ফাযায়েলে আমল মহপবিত্র
একটা বই! এই বইয়ে শিরিক
বেদাত দূরের কথা, এতোবড়
শায়খুল হাদীস সাহেব
লিখেছেন, এই কিতাবে
কোনো ভুল হইতেই পারেনা!!
.
আসলে ইনাদের সমস্যা হচ্ছে,
কুরআন ও সহীহ হাদীস বাদ
দিয়ে, সত্যিকারের
আলেমদের কিতাব বাদ দিয়ে
ভেজাল আর জাল-জয়ীফের
কিতাব পড়তে পড়তে তিনারা
শিরক-বেদাত কি বুঝতে
পারেন না। কোনটা শিরিক,
কেনো শিরিক এইগুলোর সূক্ষ্ম
তাতপর্য তারা জানেন না।
এইজন্য ফাযায়েলে আমল,
নিয়ামুল কুরআন, বেহেশতি
যেওর, মকসুদুল মুমিনিনি
ইত্যাদি বেদাতী কিতাবে
বিভিন্ন কিচ্চা-কাহিনীর
আড়ালে কৌশলে
সূফীবাদীদের শিরকি
বেদাতী কথাবার্তা ঢুকিয়ে
দেওয়া আছে, সেইগুলো তারা
ধরতে পারেন না।
বরং আলিদের কারামত,
আওলিয়াদের কাহিনী,
কাশফ, শিক্ষণীয় কিচ্ছা, বহুত
ফায়দা, মিথ্যা ফযীলত,
উপদেশ ইত্যাদি নামে
এইসমস্ত শিরক বেদাতকেই
তারা ইসলাম মনে করে
থাকেন। আর এইগুলোর
ব্যপারে কেউ যখন তাদেরকে
সতর্ক করে, তারা আকাশ
থেকে পড়ে আর গালি দেওয়া
শুরু করে।
.
ফাযায়েলে আমলকে যারা
মহাপবিত্র কিতাব মনে করে
তাদের জন্য বলছি, এইটা
দেওবন্দী সূফীদের লেখা
একটা কিতাব - যার মাঝে
অনেকে শিরকি, কুফুরী কথা
বার্তা, জাল জফীয় হাদীস
দিয়ে মিথ্যা ফযীলতের
ধোঁকা, ভুয়া ও সম্পূর্ণ
বানোয়াট কিচ্চা ঢুকিয়ে
দেওয়া আছে। এছাড়া এমন
অনেকে কাহিনী আছে
আসলে যা একজন মানুষের
ঈমানে মারাত্মক বিষ ঢুকিয়ে
দেয়।
.
এর প্রায় পাতায় পাতায়
আজগুবী কথাতো আছে,
এমনকি এই ভেজাল কিতাবের
৩ নাম্বার পৃষ্ঠাতেই শিরক
ঢুকিয়ে দেওয়া আছে – আর
অজ্ঞ লোকেরা বছরের পর
বছর এই শিরকি কথাটাই পড়ে
যাচ্ছে-ফাযায়েলে আমলের
ভূমিকাতেই শিরকঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
“পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্ট।”তিরমিযী খন্ড ১, পৃঃ ৩৪৬,ইবনে হিব্বানঃ ২০২৬।
.
এই হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে
যে, পিতাকে সন্তুষ্ট করলে
আল্লাহ সন্তুষ্ট হন।
কিন্তু পিতাকে সন্তুষ্ট
কিভাবে করতে হবে?
কেউ যদি বলে, আমি নামায
পড়ি পিতাকে খুশি করার
জন্য।
.
কেউ যদি বলে, আমি রোজা
রাখি পিতাকে খুশি করার
জন্য।
.
কেউ যদি বলে, হজ্জ করি
পিতাকে খুশি করার জন্য।
এতে কি আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন,
নাকি আল্লাহ অত্যন্ত রাগ
করবেন???
.
মহান আল্লাহ তাআ’লা
বলেনঃ
“(হে নবী আপনি) বলুন! আমিও
তোমাদের মতই একজন মানুষ,
আর আমার প্রতি ওয়াহী করা
হয়যে, তোমাদের ইলাহই
একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে
ব্যক্তি তার পালনকর্তার
সাক্ষাত কামনা করে, সে
যেন নেক আমল করে এবং তার
পালনকর্তার #ইবাদতে
কাউকে শরীক না করে।” (সুরা
কাহফঃ ১১০)।
.
এই রকম আল্লাহ ছাড়া অন্য
কাউকে খুশি করার জন্য যে
ইবাদত করা হয় তাকে
আরবীতে #রিয়া বা লোক
দেখানো ইবাদত বলা হয়।
জানা থাকা প্রয়োজন, রিয়া
বা আল্লাহ ছাড়া অন্য
কাউকে খুশি করার জন্য যে
ইবাদত করা হয় ইসলাম
সেটাকে #শিরক হিসেবে
সাব্যস্ত করেছে, এবং এইরকম
রিয়া বা শিরক মিশ্রিত
ইবাদত আল্লাহ কস্মিনকালেও
কবুল করেন না।
.
হাদীসে যেই সন্তুষ্টির কথা
বলা হয়েছে সেটা এমন না যে,
আল্লাহর জন্য কোন ইবাদত
আমি এক আল্লাহ তাআ’লাকে
খুশি করার জন্য না করে,
পিতাকে খুশি করার জন্য
করলাম। কেউ যদি এটা করে,
তাহলে সে ইবাদতে আল্লাহর
সাথে শরীক করে ফেললো –
এটাই হচ্ছে #শিরক।
.
ইবাদতের মালিক বা হক্ক হচ্ছেন
শুধুমাত্র আল্লাহ পাক, তাঁর
সাথে কাউকে শরীক করা
হচ্ছে “শিরক”।এখানে পিতার সন্তুষ্ট করার
পদ্ধতি হবে, পিতার কথা
মান্য করা, তাঁর সেবা-যত্ন
করা, তাঁর সাথে সুসম্পর্ক
রাখা ইত্যাদি। তবে এই
কাজগুলো কেউ যদি আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য করে সেটার
জন্য সে আল্লাহর কাছে
প্রতিদান পাবে।
.
দ্বীনের জন্য বই লেখা একটা
ইবাদত, কারণ এটা দাওয়াত ও
তাবলীগের অংশ। আর
দাওয়াত ও তাবলিগ হচ্ছে
আল্লাহর হুকুম মানা, সুতরাং
এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
আর বই লেখা বা দাওয়াত ও
তাবলীগ করা যদি “ইবাদত”
হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই
সেটা শুধুমাত্র আল্লাহ
তাআ’লাকেই খুশি করার
জন্যই করতে হবে।
অন্য কাউকে খুশি বা সন্তুষ্ট করার
জন্য হলে, আল্লাহ সেই
দাওয়াতকে, সেই লেখা
#বইকে কবুল করবেন না।
.
বিষয়টা অতি সহজ ও
পরিষ্কার, তারপরেও দেখুন
তাবলিগ জামাতের লেখক
মাওলানা জাকারিয়া
সাহেব তার লেখা বইয়ের
ভূমিকাতে বলছেনঃ
“মাওলানা ইলিয়াস সাহেব
আমাকে আদেশ করেন,
তাবলীগে দ্বীনের
প্রয়োজনে কুরআন হাদীস
অনুসারে একটা সংক্ষিপ্ত বই
লিখি।
এতোবড় #বুজুর্গের_সন্তুষ্টি_অর্জন
আমার পরকালের নাজাতের
উসীলা হবে মনে করিয়া আমি
উক্ত কাজে সচেষ্ট হই।”
ফাজায়েলে আমল, পৃষ্ঠা – ৩,
মূল বইয়ের স্ক্যান করা অংশ
ছবিতে দেখুন।
.
এতোবড় শায়খুল হাদীস,
দ্বীনের দাওয়াতের জন্য বই
লিখছেন আল্লাহকে সন্তুষ্ট
করার জন্য না, তার নেতা
মাওলানা ইলিয়াস সাহেবকে
সন্তুষ্ট করার জন্য!!
নাউযুবিল্লাহ, শিরক, ডাহা শিরক।
.
অনেক কট্টর তাবলিগী সমর্থক
দাবী করে, এইখানে সে তার
পীরকে খুশি করতে চাইছে
কিন্তু তার উদ্দেশ্যতো
ভালো, সে তার পীরকে খুশী
করে পরকালে নাজাত পাইতে
চায়!
.
তাদেরকে বলবো, আপনি
আগে ভালো করে কুরআন
অর্থসহ বুঝে পড়েন, পরে
শিরকি ভেজাল কিতাবের
জন্য সাফাই গাইয়েন।
মহান আল্লাহ তাআ’লা
বলেনঃ
“জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ
ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহরই
জন্য। যারা আল্লাহ ব্যতীত
অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ
করে রেখেছে এবং বলে যে,
আমরা তাদের ইবাদত এ
জন্যেই করি, যেন তারা
আমাদেরকে আল্লাহর
নিকটবর্তী করে দেয়।”
সুরা যুমারঃ ৩।
.
এই আয়াতের তাফসীর পড়ে
দেখুন – মক্কার কাফের
মুশরেকরা আল্লাহকে
বিশ্বাস করতো, তারা দেব
দেবীকে আল্লাহ মনে
করতোনা। কিন্তু তারা দেব
দেবীকে খুশি করার জন্য
বিভিন্ন কাজ (ইবাদত) করতো
আর মনে করতো, এইভাবে
তারা আল্লাহর নৈকট্য পাবে,
পরকালে মুক্তি পাবে,
জান্নাতে যাবে। কিন্তু
এইরকম চিন্তাভাবনা ডাহা
শিরক ও কুফর এইজন্য ঐ কথা
বলার সাথে সাথেই যারা
এইরকম কথা বলে তাদেরকে
আল্লাহ “মিথ্যাবাদী ও
কাফের” বলেছেন। আয়াতের
বাকি অংশটুকু হচ্ছেঃ
“নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে
তাদের পারস্পরিক
বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা
করে দেবেন। আল্লাহ
মিথ্যাবাদী কাফেরকে
সৎপথে পরিচালিত করেন না।”
সুরা যুমারঃ ৩।
.
কোনো ইবাদত (নামায পড়া,
রোজা রাখা, দাওয়াত
দেওয়া, বই লেখা) কেউ যদি
কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য
কারো উদ্দেশ্যে বা অন্য
কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য
করে আর এর এইভাবে
জান্নাতে যেতে চায়, তাহলে
সে আসলে মক্কার ঐ মূর্তি
পূজারীদের মতোই #শিরকী
চিন্তা করলো। কারণ মূর্তি
পূজারীরাও মনে করতো দেব
দেবীদেরকে খুশী করে
পরকালে ওসীলা ধরে
জান্নাতে যাবে।
.
তবে একটা ব্যপার খেয়াল
রাখতে হবে কোনটা শিরক
হবে, আর কোনটা শিরক
হবেনা। যেইটা দুনিয়াবী
বিষয় কিন্তু ইবাদত না, যেমন
পিতা-মাতার সেবা করা,
কাউকে সাহায্য করা,
মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার
করা – এইগুলো যদি কেউ
কোনো মানুষকে সন্তুষ্ট করার
জন্য করে সেটা শিরক
হবেনা। তবে সে যেহেতু অন্য
কারো জন্য করছে, সেইজন্য
সে সওয়াব থেকে বঞ্চিত
হবে। কিন্তু এইগুলো যদি কেউ
“শুধুমাত্র আল্লাহকে” সন্তুষ্ট
করার জন্য করে, অন্য কোনো
কিছুর জন্য না, ভালো কাজ
হিসেবে এটা গণ্য হবে এবং
সে এর বিনিময়ে সওয়াব
পাবে।
আর যেইটা আল্লাহর বেঁধে
দেওয়া ইবাদত, যেমন নামায,
রোজা, হজ্জ, দাওয়াত,
দ্বীনের কাজ করা, বই লেখা এইগুলো যদি কেউ দুনিয়া অর্জন যেমন টাকা পয়সার
জন্য করে, সুনাম কুড়ানোর
জন্য, কাউকে খুশি করার জন্য করে  তাহলে এটা রিয়ার শিরকের গুনাহ হবে যা মারাত্মক কবীরাহ গুনাহর মাঝে পড়বে। আর এইভাবে সে
যতবড়ই আমল করে থাকুক না
কেনো – আল্লাহ সেই আমল
কস্মিনকালেও কবুল করবেন
না বরং ইখলাস নষ্ট করার
কারণে সে এরজন্য কঠিন
শাস্তি পাবে। সর্বশেষ এই
বিষয়ে একটা হাদীস পড়ুন ও
একটু চিন্তা করে দেখুন
আসলেই কি আমরা আল্লাহর
সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কারো
সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
দ্বীনের খেদমত করা – বই
লিখতে পারবো কিনা?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ
“আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
“শরীকদের মাঝে
অংশীদারির অংশ (শির্ক)
থেকে আমিই সবচেয়ে বেশি
অমুখাপেক্ষী। সুতরাং, যে
কেউ এমন আমল করল যাতে
আমার সাথে অপরকে শরিক
করেছে, আমি #তাকে ও
#তার_শির্ককে প্রত্যাখ্যান
করি।”সহীহ মুসলিম, হাদিসটি
হাসান সহীহ।
.
***নিঃসন্দেহে এ থেকে
প্রমাণ হয় যে, লোক দেখানো
ব্যক্তির আমল বা অন্যকে
খুশি করার জন্য যে আমল
সেটা আল্লাহ#কবুল_করেন_না, তার
বিনিময়ে কোন সওয়াব নেই

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top