শনিবার, ৫ মার্চ, ২০১৬

তাবলীগের গোঁমর ফাস

কোন মন্তব্য নেই:

যারা প্রচলিত তাবলীগ করেছে,
পরবর্তীতে তারা তা পরিত্যাগ করেছে।
কারণ তাদের নিকট তাবলীগের গোঁমর
ধরা পড়েছে। এরকম কিছু প্রমান
আপনাদের নিকট পেশ করছি।
.
১. মৌলভী ইলিয়াছ মেওয়াতীর
আবিষ্কার করা তাবলীগ জামাত ব্রিটিশ
সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য
পেত। যেমন জমিয়তে ওলামায়ে দেওবন্দ
এর মহাসচিব মৌঃ হেফজুর রহমান সাহেব
নিজেই স্বীকার করেছেন যে, “মৌলভী
ইলিয়াসের তাবলীগী আন্দোলন
প্রথমদিকে হুকুমতের (ব্রিটিশ সরকারের)
পক্ষ থেকে হাজী রশীদ আহমদের মাধ্যমে
কিছু টাকা পেত। পরে বন্ধ হয়ে গেছে।
(মোকালামাতুস সাদারাইন, পৃষ্ঠা নং-৮
দেওবন্দ হতে প্রকাশিত, সূত্রঃ তাবলীগী
জামাত, পৃষ্ঠা নং ৯৯)। আর এজন্যই
ইলিয়াছ মেওয়াতী তার মালফুজাত ১৫৯ এ
উল্লেখ করেন, “আমি রাজনৈতিক
কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা সরকারকে
তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে রেখেছে।
সেজন্য আমি নিশ্চিন্তে নিজের কাজ
(তাবলীগ) করতে পেরেছি।”
.
২. ভারতে যখন হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হল,
তখন হাজার হাজার মুসলমানদের হিন্দুরা
হত্যা করেছিল। এর প্রতিবাদ সব ইসলামী
দলই করেছিল। একমাত্র তাবলীগী দল চুপ
ছিল। এর পুরস্কারস্বরূপ তারা ইন্দ্রিরা
গান্ধীর সময়েও তাদের তাবলীগী
দাওয়াত চালানোর অনুমতি পায়, যখন
রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অন্য সকল
ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ ও বাঁধা দেওয়া
হয়।
.
৩. ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “ইলিয়াছি
তাবলীগ দুশমনকে খুশি করে এবং দোস্ত
কে নাখোশ করে।” (দেখুন মালফুজাত নং
১৭৯)। পাঠকগণ! গভীরভাবে খেয়াল করুন!
ইলিয়াছ মেওয়াতীর কথায় স্পষ্ট বোঝা
যায় যে, তারা ইসলমী আকিদার বিরোধী।
তা নাহলে দুশমনগণ কেন তাদের কাজে
খুশি হবে? দোস্ত বা বন্ধু কেন নাখোশ বা
বেজার হবে? যারা ইসলামের বন্ধু তারা
কোনদিন ইসলামের কাজে নাখোশ হয় না।
যারা ইসলামের শত্র“ কেবল তারাই
অনৈসলামিক কাজে খুশি হয়। অতএব
তাবলীগ জামাত যে ইসলামী আকিদার
পরিপন্থী তা ইলিয়াছ মেওয়াতীর কথায়
স্পষ্ট বোঝা যায়।
.
৪. মৌলবী ইলিয়াছ মেওয়াতীর শ্যালক
এবং প্রচলিত তাবলীগ জামাতের প্রধান
কর্মকর্তা মাওলানা এহতেশামুল হাসান
দেওবন্দী যিনি যৌবন কাল হতে
বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত প্রচলিত তাবলীগ
জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌলবী ইলিয়াছ
মেওয়াতীর সাথে কাটিয়েছেন এবং তাঁর
প্রধান খলিফা। তিনি (এহতেশামুল
হাসান) তার লিখিত উর্দু কিতাব
‘যিন্দেগী কি সিরাতুল মুস্তাকিম’ এ
বলেন- “বস্তি নিজাম উদ্দীনের বর্তমান
তাবলীগ আমার জ্ঞান, বিবেক, কুরআন,
হাদিস অনুযায়ী সঠিক নহে বরং মুজাদ্দিদ
আলফেসানী (রহ.), হযরত শাহ ওয়ালী
উল্লাহ (রহ.), মুহাদ্দিস দেহলবী (রহ.) ও
হক্কানী আলেমগণের মত ও পথের খেলাফ।
যে সমস্ত আলেমগণ এই তাবলীগে শরীক
আছেন, তাদের দায়িত্ব এই যে, সর্ব প্রথম
এই কার্যকে কুরআন হাদিস এবং
অতীতকালের ইমাম ও হক্কানী
আলেমগণের মত ও পথের সাথে সামঞ্জস্য
করা। কেননা, ইহা দ্বীন ও তাবলীগের
নামে একটি বিভ্রান্তিকর বিষয় প্রচার
করছে। এই বিভ্রান্তিকর বিষয় প্রচারের
কারণে সকল প্রকার বালা মুসিবত নাজিল
হবার হেতু বলেও আমি মনে করি। তাই
জনসাধারণকে সাবধান করতে এই বিষয়
লিখতে বাধ্য হচ্ছি। তাবলীগ জামাতের ৬
উসুল ও তাদের আকিদা তথা কর্মকান্ড
দেখে আমার কাছে দিনের আলোর মতই
পরিস্কার যে, তারা বিদআতে সাইয়্যাহ
(মন্দ বিদআত) এর মধ্যে ডুবে গেছে।
কেননা এই তাবলীগের আন্দোলন কুরআন,
হাদিস ও পূর্ববর্তী উলমাগণের মতামত ও
দলিলের উপর ভিত্তি করে করা হয়নি।
(সূত্রঃ যিন্দেগী কি সিরাতুল মুস্তাকিম)
.
৫. মাওলানা আব্দুর রহিম যিনি ১৩/১৪
বছর তাবলীগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
ছিলেন, তিনি ১৯৬৮ সালের ২৬
ফেব্র“য়ারী মাদরাসা দারুল উলুম
নোমানিয়া তাওয়ালী, জেলাঃ
মোজাফফরনগরে দেওবন্দ ও
সাহারানপুরের খ্যাতনামা মুহাদ্দিস,
মুফতি মুবাল্লেগ উলামায়ে কেরামগণের
উপস্থিতিতে বলেছিলেন, “আশ্চর্য্যের
বিষয় এই যে, যে কাজ উলামায়ে
কেরামের তা এমন এক শ্রেণীর লোক
আঞ্জাম দিচ্ছে যারা দ্বীন সম্পর্কে
কেবলমাত্র অজ্ঞই নয়, অধিকন্তু নিজেদের
হীনতা, মূর্খতা ও অপকর্মের দরুণ সমাজের
চোখে সমাদৃত নয়। কবির ভাষায়ঃ ‘যদি
কোন জাতির পথ প্রদর্শক হয় কাক (মূর্খ
লোক), তবে উহা তাদেরকে ধ্বংসের পথ
প্রদর্শন করে।’’
তিনি বক্তৃতায় আরও বলেন, আমি খোদার
শপথ করে বলছি যে, অনিচ্ছা সত্বেও
ধর্মীয় প্রয়োজনে আমি তাবলীগ
জামাতের সমালোচনা করছি। কেননা এ
জামাতের নাবালেগ মুবাল্লোগগণ যখন
জনসাধারণের মধ্যে ওয়াজ করতে আরম্ভ
করে অথচ মূর্খদের জন্য ওয়াজ করার
অনুমতি শরিয়তে নেই। তারা তাবলীগ
জামাতের ফজিলত বয়ান করতে করতে
সীমা অতিক্রম করে চলছে। চিন্তার বিষয়,
সনদ ব্যতিত কোন ব্যক্তি কম্পাউন্ডার
পর্যন্ত হতে পারে না। কিন্তু লোকেরা
দ্বীনকে এত সহজ মনে করে নিয়েছে যে,
যার ইচ্ছা হয় ওয়াজ করতে দাঁড়িয়ে যায়।
তাই বলা যায় অনভিজ্ঞ ডাক্তার
জীবনের জন্য বিপদ এবং নিম-মোল্লা
(তাবলীগ জামাতের সদস্য) ঈমানের জন্য
বিপদ। যে কাজ আলেমের, সে কাজের
দায়িত্ব যদি অজ্ঞ লোকেরা গ্রহণ করে
উহার গুরুতর পরিনাম সম্পর্কে নবী করিম
(সা.) এরশাদ করেন ‘যখন কাজের দায়িত্ব
অপাত্রে ন্যস্ত হবে-তখন তোমরা
কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করতে থাক।’
আপনারা অবগত আছেন যে, কৃষি কাজের
অনভিজ্ঞ লোকের হাতে লাঙ্গল দিলে
সে হালের বলদকে ক্ষত-বিক্ষত করে
ছাড়বে। কামারকে ঘড়ি তৈরি করতে
দিলে, উহার পরিণাম মারাত্মক হবে।
তিনি বক্তৃতায় আরও বলেন, তাবলীগ
আন্দোলন কোন দলিল ভিত্তিক নহে।
হইাকে লইয়া কেউ যদি দলিল প্রমানের
লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়, তাকে অবশ্যই
পরাজয় বরণ করতে হবে এবং তাবলীগ
আন্দোলন বিফল সাব্যস্ত হবে। (‘উসুলে
দাওয়াত ও তাবলীগ’ নামক উর্দু কিতাবের
৫০-৬০ পৃষ্ঠা দেখুন, তাবলীগ
জামাত-১৫৬-১৬৯ পৃষ্ঠা দেখুন)
তাদের কথা দ্বারাই তাদের গোঁমর ফাঁস
হয়ে গেছে। তাদের কথা দ্বারাই প্রমান
হয় যে, তারা ভন্ড। ইসলামের কোন দল নয়,
বরং ইসলাম বহির্ভূত দল। ৩৬ হিজরীতে
খারিজীরা হযরত আলী (রা.) এর দল ত্যাগ
করে নিজস্ব দল গঠনের জন্য ইরাকে
আবদুল্লাহ বিন ওহাব রাসেবীর গৃহে
সমবেত হয়। এটাই ছিল খারেজীদের প্রথম
ইজতিমা। ইলিয়াছি তাবলীগীরাও ঐ
দলেরই একটি শাখা। তারা আউলিয়ায়ে
কেরামগণের দল ত্যাগ করে নতুন দল গঠন
করেছে। তাবলীগ জামাতের এ সমস্ত
গোঁমর মানুষকে জানানো সকল
মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।
তাবলীগ জামাতীরা বলে থাকেন,
তাবলীগ হলো নবীওয়ালা কাজ। এটা
তাদের বিভিন্ন কিতাবেও লিখিত আছে।
যেমন তাবলীগী নেতা মুহাম্মদ মুযাম্মিল
হক লিখিত ‘তাবলীগ জামাত প্রসঙ্গে ১৩
দফা’ কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
করেছেন যে, “প্রচলিত তাবলীগ হলো
নবীওয়ালা কাজ।” নবীজি ওফাতের পর
এই কাজ পরিচালনা করা আমাদের
সকলের দায়িত্ব (নাউযুবিল্লাহ)। একটু
গভীরভাবে চিন্তা করুন নবীওয়ালা কাজ,
এটা কি সাধারণ কাজ? এলেম নাই, আমল
নাই এমন মানুষ কি নবীওয়ালা কাজ করার
যোগ্যতা রাখে? সাহাবায়ে কেরামগণ
ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য মসজিদে
মসজিদে গাট্টি নিয়ে ছুটাছুটি করেছেন
কি? সব প্রশ্নের উত্তর: না। তাহলে
অশিক্ষিত মূর্খ ব্যক্তিগণ তাবলীগের
নামে দাওয়াত দিয়ে নবীওয়ালা কাজ
করছেন তা সঠিক নয়, বরং নবীজির শানে
চরম বেয়াদবী। নবীওয়ালা কাজ সকল
উম্মত করতে পারে না। একমাত্র যারা
নবীজির গুণে গুণান্বিত হতে পেরেছে,
তারাই নবীওয়ালা কাজ করতে পারে।
যেমন নবীজি (সা.) এরশাদ করেন,
ﺍﻦ ﺍﻠﻌﻠﻤﺎﺀ ﻮﺮﺜﺔ ﺍﻻﻨۢﺒﻳﺎﺀ
(ইন্নাল উলামউ ওয়া রাসাতুল আম্বিয়া-
আল হাদিস)
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আলেমগণ হলো নবীর
ওয়ারিশ।” এই হাদিস শরীফ হতে বোঝা
যায় যে, নবীজির ওয়ারিশ সকলে নয়,
একমাত্র আলেমগণ। হাদিস শরীফে
আল্লাহর নবী আরও বলেন,
ﺨﻳﺭﺍﻠﺧﻳﺎﺮ ﺨﻴﺎﺮﺍﻠﻌﻟﻤﺎﺀ ﻮﺸﺮ ﺍﻠﺸﺮﺍﺮ ﺷﺮﺍﺭ ﺍﻠﻌﻟﻤﺎﺀ
(খায়রুল খেয়ারি খেয়ারুল উলামা
ওয়াশাররুশ শেরারি শেরারুল উলামা-আল
হাদিস)
অর্থাৎ “ভালোর চেয়ে ভাল হলো আলেম
এবং খারাপের চেয়ে খারাপ হলো
আলেম।” এ হাদিস শরীফ হতে বোঝা যায়
যে, আলেম দুই প্রকার। যথা উলামায়ে
হক্কানী বা প্রকৃত আলেম এবং উলামায়ে
ছু অর্থাৎ অসৎ আলেম। আর উলামায়ে
হক্কানীগণ হলেন নবীজির ওয়ারিশ বা
নায়েবে নবী। এই নায়েবে নবীগণই
তাবলীগ বা নবীওয়ালা কাজ করার
যোগ্যত রাখে, সাধারণ লোক নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top