শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬

তাগুত”কে অস্বীকার করা ওয়াজিব

কোন মন্তব্য নেই:

তাগুত”কে অস্বীকার করা ওয়াজিব
-শায়খ ওমর বিন আব্দুল্লাহ
.
##ত্বাগুত- এর আভিধানিক অর্থঃ
.
#ওয়াহিদী বলেন, সকল অভিধান বিশারদ বলেছেনঃ طاغوت ‘ত্বাগুত’ প্রত্যেক ঐ জিনিসকে বলে যাকে আল্লাহর পরিবর্তে ইবাদত করা হয়। এই শব্দটি এক বচন, বহু বচন, পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গে একইরূপ থাকে।
.
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ
অর্থঃ “তারা ‘ত্বাগুত’ কে বিধান দানকারী বানাতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, তারা যেন তাকে অমান্য করে।”
(সূরা নিসা, ৬০)
.
অত্র আয়াতে ‘ত্বাগুত’ শব্দটি একবচন রূপে ব্যবহত হয়েছে।
.
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ
অর্থঃ আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে ত্বাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়।
(সূরা বাকারাহ, ২৫৭)
.
অত্র আয়াতে “ত্বগুত” শব্দটি বহুবচন রূপে ব্যবহত হয়েছে।
.
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا
অর্থঃ যারা ‘ত্বাগুত’ কে বর্জন করে তার (ত্বাগুতের) ইবাদত থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে। (সূরা যুমারঃ ১৭)
.
অত্র আয়াতে ‘ত্বগুত’ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ হিসাবে ব্যবহত হয়েছে।
(মাজমুআহ আত-তাওহীদ, ১৭১পৃঃ)
.
##শারীয়াত- এর পরিভাষায় ত্বগুতঃ
.
#ইবনে জারীর (রঃ) ত্বগুত এর সংজ্ঞা সংক্রান্ত সালাফদের মতভেদ উল্লেখের মন্তব্য করেন, আমার নিকট ‘ত্বগুত’ বিষয়ে সঠিক মত হচ্ছে- এটা আল্লাহর প্রত্যেক অবাধ্য ব্যক্তি বা বস্তু, যাকে তাঁর (তায়ালা) পরিবর্তে ইবাদত করা হয়। এটা তার পূজা বল প্রয়োগের মাধ্যমে হতে পারে কিংবা তার গোলামের তার প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে হতে পারে। আর উক্ত পূজনীয় ব্যক্তি বা বস্তু মানুষ হোক বা শয়তান হোক কিংবা মূর্তি হোক অথবা যে কোন ব্যক্তি বা বস্তু হোক না কেন।
(তাফসীর ইবনে জারীর, ৩য় খ-, ২১পৃঃ)
.
#ইবনে কাইয়িম (রঃ) ত্বগুত- এর সংজ্ঞায় বলেনঃ প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি, যে তার সীমা অতিক্রম করে, ইবাদত, অনুসরণ অথবা আনুগত্যের মাধ্যমে তাকে ‘ত্বগুত’ বলে। অতএব, “প্রত্যেক জাতির ত্বাগুত হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যার নিকট লোকেরা আল্লাহ ও তাঁর রসূল ব্যতীত বিচার প্রার্থণা করে।” বা “তারা আল্লাহ ছাড়া তার ইবাদত করে” কিংবা “তারা আল্লাহর পক্ষ্য হতে পর্যবেক্ষণ ব্যতীত তার অনুসরণ করে।” অথবা “তারা তার এমন বিষয়ে আনুগত্য করে যে বিষয়ে আল্লাহর আনুগত্য করতে হয় অথচ এটা তারা জানে না।”
.
সুতরাং এগুলো হচ্ছে বিশ্বের “ত্বয়াগীত” (ত্বাগুত এর বহুবচন)। যখন তুমি এটা পর্যবেক্ষণ করলে এবং সাথে সাথে লোকদের অবস্থা সম্পর্কে গবেষণা করলে, তখন তুমি তাদের অধিকাংশকে দেখতে পাবে যে, আল্লাহর ইবাদত পরিত্যাগ করে ত্বাগুত এর গোলামী করছে। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নিকট বিচার চাওয়া ছেড়ে দিয়ে ত্বাগুত- এর নিকট বিচার প্রার্থনা করছে। এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর রসূল (সাঃ)- এর অনুসরণ পরিহার করে ত্বাগুত- এর আনুগত্য ও পশ্চাদ্ধাবন করছে।
(ই‘লামুল মুওয়াক্বিয়ীন, ১ম খ-, ৫০পৃঃ)
.
#মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাব (রঃ) বলেনঃ ‘ত্বগুত’ অনেক প্রকারের রয়েছে তন্মধ্যে শীর্ষে আছে পাঁচ প্রকার।
.
প্রথমঃ শয়তান…।
.
দ্বিতীয়ঃ আল্লাহর বিধান পরিহারকারী অত্যাচারী শাসক….।
.
তৃতীয়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে ফয়সালা করে না…।
.
চতুর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত ইলমে গায়েব- এর দাবী করে…।
.
পঞ্চমঃ আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয় এবং সে উক্ত ইবাদতে সন্তুষ্ট থাকে…। (মাজমূআহ আত-তাওহীদ, ১৪, ১৫পৃঃ)
.
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ
অর্থঃ যে ব্যক্তি ‘ত্বাগুত’ কে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে সুদৃঢ় হাতল ধারণ করে নিয়েছে। (সূরা বাকারাহ, ২৫৬, ২৫৭)
.
.
#হাফিজ ইবনে কাসীর বলেনঃ যে ব্যক্তি বাতিল উপাস্য, প্রতিমা ও শয়তানের ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত করা হয় এমন সকল বাতিল মা‘বূদদের পরিত্যাগ করতঃ আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী হলো এবং সাক্ষ্য দিলো যে তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই فَقَدِ اسْتَمْسَكَ “সে সুদৃঢ় হাতল ধারণ করে নিয়েছে।”
.
অর্থাৎ সে তার উক্ত বিষয়ে অটল থাকল এবং সে শ্রেষ্ঠ পন্থা ও সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকল…। এবং আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির অনুসরণ করে চলবে, তাকে তিনি শান্তি পথ দেখাবেন এবং তিনি তার মু‘মিন বান্দাদেরকে কুফুর, সন্দেহ ও সংশয়ের অন্ধকার থেকে বের করে, সুস্পষ্ট, প্রকাশ্য, সহজ, সরল, উজ্জল সত্যেল আলোর দিকে নিয়ে যাবেন।
.
পক্ষান্তরে কাফিরদের অভিভাবক হচ্ছে শয়তান। সে তাদের অজ্ঞতা ও পথ ভ্রষ্ট্রতাকে তাদের নিকট সুন্দর করে দেখায়। সে তাদেরকে আলো থেকে বের করে দেয় এবং সত্য পথ বিচ্যুত করে কুফর ও মিথ্যার দিকে নিয়ে যায়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা النُّورِ ‘নূর’ শব্দকে একবচন নিয়ে এসেছেন এবং الظُّلُمَاتِ ‘যুল্মাত’ শব্দকে বহুবচন এনেছেন। কেননা, সত্য একটিই হয়ে থাকে এবং কুফর- এর অনেক শ্রেণী রয়েছে, যার প্রত্যেকটি বাতিল বা মিথ্যা।
(তাফসীর আল কুরআনুল আযীম, ১ম খ-, ৩১৯, ৩২০পৃঃ)
.
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا هَٰؤُلَاءِ أَهْدَىٰ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا سَبِيلًا
অর্থঃ তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যাদেরকে গ্রন্থের একাংশ প্রদত্ত হয়েছে? তারা প্রবৃত্তি ও ত্বাগুতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং কাফিরদেরকে বলে যে, এরা মু‘মিনদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে।(সূরা নিসা, ৫১)
.
#হাফিজ ইবনে কাসীর বলেনঃ মুজাহিদ (রঃ) বলেছেন, ত্বগুত হচ্ছে মানবরূপী শয়তান। তার নিকট মানুষ তাদের বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হয় এবং তাকে বিচারক মেনে নেয়।
.
#ইমাম মালিক (রঃ) বলেন যে, তা (ত্বাগুত) হচ্ছে প্রত্যেক ঐ জিনিস আল্লাহ তায়ালা ছাড়া যার ইবাদত করা হয়….। অর্থাৎ তাদের মূর্খতা ধর্মহীনতা এবং স্বীয় গ্রন্থের সাথে কুফরী এত চরমে পৌঁছে গেছে যে, তারা কাফিরদের মুসলমানদের উপর প্রাধান্য ও মর্যাদা দিয়ে থাকে।
(তাফসীর আল কুরআনুল আযীম, ১ম খ-, ৫২৫পৃঃ)
.
#ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেনঃ তারা (জিব্ত ও ত্বগুত) হচ্ছে, আল্লাহর পরিবর্তে প্রত্যেক বাতিল মা‘বূত। অথবা আল্লাহর অবধ্যতায় প্রত্যেক অনুসরণীয় ব্যক্তি বা বস্তু।
(ফতহুল কাদীর, ১ম খ-, ৪৭৭পৃঃ)
.
উল্লেখ্য যে, ঐ সকল লোক যারা মানব রচিত আইনের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে, সহায়তা করে, এবং আল্লাহ তায়ালা, তার রসূল (সাঃ) ও মু‘মিনদের সাথে এজন্য যুদ্ধ করে, উক্ত আয়াতে কারীমাহ তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা তারা আল্লাহ তায়ালা পরিবর্তে কিংবা আল্লাহর সাথে তাদের শাসকদের ইবাদত করে এবং তারা আল্লাহ তায়ালা ও তার রসূল (সাঃ)- এর অবাধ্য হয়ে তার (শাসক) আনুগত্য করে। অতএব তাদের ও তাদের শাসকদের কাফির হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত এই দ্বীন হতে জানা যাচ্ছে। কেননা, শাসকবর্গ আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে বা আল্লাহ তায়ালার সাথে তাদের ইবাদত করতে লোকদের বাধ্য করে। এবং এই অনুসারীগণ এই সকল শাসকদের আনুগত্য করে। এবং তারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূল (সাঃ)- এর নির্দেশের অবাধ্য হয়।
.
অবশ্যই কোন মন্তব্যকারী এমন কথা বলতে পারেনা যে, আমরা ছোট কুফরীর অপরাধে তাদেরকে কাফির বলছি। না, এখানে অপরাধ থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ও তার রসূল (সাঃ) এর নির্দেশকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা এই সকল শাসকের আনুগত্য করেছে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তাদের দাসত্ব করেছে। এই সব শাসকের ইবাদত (দাসত্ব) করা কুফরী। তা (ইবাদত করা) “শব্দগত হউক”। অর্থাৎ, মানুষ মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দিবে যে, সে এই শাসকদের ইবাদত বা দাসত্ব করে। এমনটি অর্জিত হয় না। অথবা “আনুগত্যে হউক”- এটাই এখানে ইবাদত থেকে উদ্দেশ্য।
.
কেননা এই লোকেরা শাসকদের আনুগত্য করে, তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে, পৃষ্টপোষকতা করে এবং তারা জান ও মান দিয়ে তাদের রক্ষা করে। তারা দ্বীনে ইসলামের বিরুদ্ধে এই সকল শাসকের দ্বীনের সহযোগিতার জন্যে আল্লাহ তায়ালা তার রসূল (সাঃ) ও মুওয়াহহিদ (একত্ববাদী) মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করে।
.
সুতরাং তাদের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সে শাসককে বলবেঃ আমি আল্লাহর পরিবর্তে আপনার ইবাদত করি!
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ
অর্থঃ “তারা ‘ত্বাগুত’ কে বিধান দানকারী বানাতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, তারা যেন তাকে অমান্য করে।” (সূরা নিসা, ৬০)
.
#ইমাম শাওকানী বলেনঃ بِمَا قَدَّمَتْ اَيْدِيْهِمَ ‘তাদের কৃতকর্মের দরুন’…. থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে-“ত্বাগুত’কে বিধান দানকারী বানানোর অপরাধ সমূহ।”
(ফতহুল কাদীর, ১ম খ-, ৪৮৩পৃঃ)
.
#ইবনে কাসীর (রঃ) বলেনঃ অত্র আয়াতে আল্লা আয্যা ও জাল্লা ঐ লোকদের দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন করেন- যারা মুখে স্বীকার করে যে, আল্লাহ তায়ালা তার রসূলের উপর এবং পূর্ববর্তী নবীদের উপর যা অবতীর্ণ করেছেন তাতে ঈমান এনেছে কিন্তু যখন কোন বিবাদের মীমাংসা করার প্রয়োজনীয় দেখা দেয়, তখন তারা আল্লাহর কিতাব ও তার রসূলের সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করে না, বরং অন্য দিকে যায়। অতঃপর তিনি এই আয়াতের শানে নুযুল উল্লেখের পর বলেন, এ আয়াত প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির দুর্ননাম ও নিন্দে করছে, যে কিতাব ও সুন্নাহকে ছেড়ে অন্য কোন বাতিলের দিকে স্বীয় ফয়সালা নিয়ে যায়। এখানে এটাই হচ্ছে ‘ত্বগুত’- এর ভাবার্থ।
(তাফসীর আল কুরআনুল আযীম, ১ম খ-, ৫৩১পৃঃ)
.
#সাইয়িদ কুতুব (রহঃ) বলেনঃ আপনি এই ভীষণ আশ্চর্যের বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করেছেন কি? লোকজন ঈমানের দাবী করছে….. অথচ আপনার প্রতি ও আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল তার কাছে তারা বিচার নিয়ে যায় না? তারা তো অন্য জিনিস, অন্য মতাদর্শ ও অন্য বিধানের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায়। তারা ঐ ত্বাগুত- এর ফয়সালা নিয়ে যেতে চায়, যে আপনার প্রতি ও আপনার পূর্ববর্তীদের উপরে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তা গ্রহণ করতে রাজী নয়।
.
‘ত্বগুত’- এর দ্বারা প্রভূত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহের একটি বৈশিষ্ট্যর দাবী করছে। ….তারা এই কর্ম অজ্ঞতার জন্য করছে না এবং ধারণা বশতও করছে না। তারা তো এটা নিশ্চিত বিশ্বাস রেখেই করছে এবং তারা এটা ভাল করেই জানে যে, ত্বগুত এর নিকটে বিচার ফয়সালা নিয়ে যাওয়া হারাম { وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, তারা যেন তাকে অমনি করে} অতএব উক্ত বিষয়ে কোন অজ্ঞতা ও কোন ধারণার অবকাশ নেই। বরং এই বিষয় স্বেচ্ছায় ও ইচ্ছাকৃতভাবে হচ্ছে। এক্ষেত্রে মানুষের নিকট থেকে অজ্ঞতার কৈফিয়ত গ্রহণ করা হবে না। কেননা ত্বাগুতকে অস্বীকার করা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়ের একটি বড় বিষয়।
(তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন,
২য় খ-, ৬৯৪পৃঃ)
.
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ
অর্থঃ যারা কাফির তারা ত্বগুত এর পথে যুদ্ধ করে। (সূরা নিসা, ৭৬)
.
#সাইয়িদ কুতুব (রহঃ) বলেনঃ এরূপভাবে মুসলমানগণ একটি কঠিন ভূখ-ে অবস্থান করছে। তারা তাদের পৃষ্ঠদেশকে দৃঢ় ভিত্তির দিকে ঠেক দিয়ে রেখেছে। আবেগকে পরিবৃপ্ত করছে। কেননা তারা আল্লাহর জন্যে যুদ্ধে নিমগ্ন রয়েছে। এতে তাদের নিজেদের জন্য কোন অংশ নেই। তাদের ব্যক্তিত্বের জন্য ও কোন ভাগ নেই। তাদের জাতি, গোত্র, আত্মীয়স্বজন ও আপনজনের জন্যেও তাতে কিছুই নেই। এটাতো শুধু এক আল্লাহর জন্যে এবং তার পন্থা ও শরীয়তের জন্যই সীমাবদ্ধ। তারা এমন এক বাতিল সম্প্রদায়ের মুখোমুখি অবস্থান করছে, যারা সত্যের উপর মিথ্যাকে বিজয়ী করার জন্যে যুদ্ধে লিপ্ত।
.
কেননা তারা মানব রচিত জাহেলিয়াত পন্থাকে জয়যুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করে। আল্লাহর নির্দেশিত পন্থা ও শরীয়াতের বিপরীতে মানব রচিত সকল পন্থা ও পদ্ধতি জাহেলিয়াত। মানব রচিত সকল আইন জাহেলিয়াত হওয়া সত্ত্বেও তারা আল্লাহর উপরে মানব রচিত জাহেলী আইনকে বিজয়ী করার জন্যে লড়ে যাচ্ছে। আল্লাহর বিপরীতে মানূষের প্রত্যেকটি বিধান যুল্ম হওয়া সত্ত্বেও তারা আল্লাহর ন্যায় বিচার ও ইনসাফের উপরে মানুষের যুল্মকে জয়যুক্ত করার জন্যে সংগ্রাম করছে। অথচ লোকদের মাঝে আল্লাহর ইনসাফ অনুযায়ী বিচার করার জন্যে তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন, ২য় খ-, ৭০৯পৃঃ)
.
.
##ত্বাগুতকে অস্বীকার করার অর্থঃ
আমাদের নিকট ‘ত্বগুত’- এর অর্থ প্রকাশ হওয়ার পর যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অস্বীকার করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার বিভিন্ন অবস্থা স্পষ্ট হওয়ার পর, আপনি যখন উক্ত বিষয়ে অবগত হলেন, তখন আপনি (আপনাকে আল্লাহ তায়ালা রহম করুন!)এই মজবুত স্তম্ভ সম্পর্কে সাধারণভাবে এই জাতি অবস্থা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন! যা ব্যতীত কোন বান্দারই ঈমান সঠিক বলে প্রমাণিত হবে না। এবং এটা (ত্বগুত) ঐ বিষয় হতে কোথায় অবস্থান করছে? অনেক ‘ত্বগুত’ যাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে বিশ্বে শোরগোল হচ্ছে এবং তাদের আনুগত্য ও অনুসরণের নামে আল্লাহর বিধানকে হত্যা করে প্রত্যেক প্রকার ইবাদত তাদের দিকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এবং বিশেষ করে ঐ সকল লোকদের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করুণ, যারা “ইসলামী জাগরণ”- এর দিকে নিজেদের সম্পৃক্ততার দাবি করে এবং উক্ত বিষয়ের (ত্বগুত) গুরুত্ব হ্রাস করে মনে করে তারা খুব ভাল কাজ করছে।
.
গণতন্ত্র কি ‘ত্বগুত’ নয়, আল্লাহর পরিবর্তে যার পূজা করা হয়? একে অস্বীকার করে না কেন, যা তার (ত্বগুত) সাথে শক্রতা ও সম্পর্কহীনতার মাধ্যমে এবং মৌখিকভাবে, বক্তৃতা ও অন্তর দ্বারা তার সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে? অতঃপর এই সকল বিচারক যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারা কি ‘ত্বাগুত’ নয়? বরং তারা নিকৃষ্ট ত্বগুত। এরা তো ঐ সকল ব্যক্তি যাদেরকে প্রত্যেকটি ত্বাগুত- এর জন্যে প্রস্তুত করা হয়। এ যুগে ধরাপৃষ্ঠে যা পূজা করা হয়। আর ঐ ত্বগুত মৃত্যু বা জীবিত ব্যক্তি হতে পারে অথবা নিঃপ্রাণ হতে পারে, এতে কোন পার্থক্য নেই। তাদের অস্বীকার করার অর্থ কি এই যে, তাদের সাথে সংসদে অংশগ্রহণ করব, তাদের আসনে বসব, আইন রচনায় তাদের সাথে শরীক হব, এবং তাদের পরিত্যাজ্য ত্বগুত- এর সাথে মিশে যাব, তারা যার নাম দিয়েছে গণতন্ত্র?
.
তারা কি এ যুগের ত্বগুত জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের কাছে মাথা নত করেনি? ঐ সকল ব্যক্তিদের ত্বগুতকে অস্বীকার করার বিষয়টি কোথায় যারা মনে করেন, শাসকদের সমালোচনা করা, তাদের বাতিলকে নগ্ন করেদেয় তাদেরকে অস্বীকার করা ও তাদের সাথে বিরোধ জড়িয়ে পড়লে অন্তর শক্ত হয়ে যাবে, বিভিন্ন দলের উৎপত্তি হবে এবং ব্যাপক রক্তপাত ঘটবে, অতএব আমাদের তাদের থেকে দূরে থাকা উচিত এবং তাওহীদ- এর প্রতি মনোযোগ দেয়া আবশ্যক অথচ উক্ত মিসকীন জানেন না যে, তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করে, তাদের কাফির না বলে এবং তাদের নিন্দা জ্ঞাপন না করে তিনি প্রকৃত তাওহীদ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন।
নিশ্চয় ‘এই দ্বীন’ তার সর্বদিক গ্রহণ না করা পর্যন্ত কায়েম হবে না।
.
সুতরাং রসূলগণ সর্বপ্রথম দাওয়াত- এর বিষয় অর্থাৎ ‘ত্বগুত’কে অস্বীকার করা পরিত্যাগ করে কিভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবেন? এ জাতির কি হল যে, তারা ত্বগুত- এর অর্থ মাজার, পাথর ও বৃক্ষ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করছেন? এ জাতির কি হল যে, তারা জীবিত ত্বগুত থেকে? কাদেরকে এই প্রমাণ দ্বারা দুরে সরে রাখছে যে, রাজনীতি বিষয়ে কথা বলা যায়। এ জাতির কি হল যে, তারা প্রকৃত মুয়াহ্হিদের (একত্ববাদি) দোষারোপ করছে, যারা জীবিত, মৃত্যু, পাথর ও বৃক্ষ সকল ত্বাগুতকে অস্বীকার করছেন।
.
আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যার অবস্থা এই, তবে কিরূপে দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে? বরং আল্লাহর দ্বীন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, তার ইমারত কেমনে নির্মিত হবে, কেমন করে এর খুঁটি মজবূত হবে, আর সে ত্বাগুত এর সাথে মিশে গেছে, এর সহায়তা করছে এবং তাদের সাথে একত্রে অবস্থান হচ্ছে? অথচ সে ভীতি প্রদর্শন করার মাধ্যম ‘জিহাদ’ প্রত্যাখ্যান করেছে। এবং জিহাদই হচ্ছে ত্বগুতকে অস্বীকার করার একটি অংশ। সে এটা কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবে, যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের কর্মপদ্ধতিকে বৈধ সম্পদ বলে। অথবা বৈধ পথ বলে। যেন সে ঐ রাস্তা থেকে ছিটকে ত্বাগুত- এর উপর পড়ে যায়। এটি ভিন্ন কথা যে, কেউ কেউ একাজকে অন্যায় মনে করবে। অথবা কেউ এটা অপছন্দ করবে।
.
.
হে আমার জাতি!
নিশ্চয় আপনারা- একটি ভয়ানক বিষয়ের দিকে গড়িয়ে পড়ছেন এবং একটি গভীর উপত্যকার দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।এটি শুধুমাত্র পথ পরিবর্তন করার বিষয় নয়। এটি হচ্ছে আল্লাহর উপর ঈমান ও সকল ত্বাগুতকে অস্বীকার ও অমান্য করার বিষয়। অতএব প্রত্যেক ব্যক্তির সর্তক হওয়া উচিত এবং সে যা বলছে ও করছে তা জেনে নেওয়া কর্তব্য। এবং কিয়ামতের দিন সকল রহস্য প্রকাশ করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top