শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬

হুদাইবিয়ার সন্ধি দিয়ে কি কুফরী গণতন্ত্রে অনুপ্রবেশের দলীল খুঁজা যায়??

কোন মন্তব্য নেই:

##হুদাইবিয়ার সন্ধি দিয়ে কি কুফরী গণতন্ত্রে অনুপ্রবেশের দলীল খুঁজা যায়??
.
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে বর্তমানে সাময়িকভাবে জায়েয প্রমাণ করার জন্যে আমাদের গণতন্ত্রী ভাইয়েরা যেসব যুক্তি দিয়ে থাকেন তার মাঝে অন্যতম হল-
.
A) হুদাইবিয়ার সন্ধির ঘটনা
.
B) মাক্কী যুগে আল্লাহর রাসূল (সঃ) কাবাঘরে মূর্তি থাকা সত্ত্বেও কাবাঘর তওয়াফ করেছেন
.
.
সত্যি বলতে, কোন আলেম কখনও এ ধরণের যুক্তি দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই।  আর তাই আমরা এ জাতীয় যুক্তির কোন Refutation লেখার দরকার আছে বলেও মনে করি নি।
.
কিন্তু ফেসবুক-ব্লগে এ জাতীয় কিছু যুক্তির ছড়াছড়ি থাকায় আমরা কিছু লিখতে বাধ্য হচ্ছি।
.
.
A) হুদাইবিয়ার সন্ধি নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজটঃ
.
১.
প্রথম কথা হচ্ছে, হুদাইবিয়ার সন্ধিটি ছিল একটা  দ্বিপাক্ষিক চুক্তি।  অন্যদিকে বর্তমান সংসদীয় গণতন্ত্র হল একটি  স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা  যাতে আগ্রহী কোন গ্রুপকে অনুপ্রবেশ করতে হয়। দুই বা ততোধিক পক্ষ ছাড়া কোন চুক্তি সম্পাদিত হয় না। আর উভয়পক্ষের পারস্পরিক কম্প্রোমাইজ ছাড়া কোন চুক্তিও কার্যকর হয় না। অন্যদিকে বর্তমান সংসদীয় গণতন্ত্রে আগ্রহী গ্রুপকে কিছু শিরকী মূলনীতিকে স্বীকৃতি দিয়ে তাতে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু সংসদ আগ্রহী গ্রুপকে আনার জন্য কোন ধরণের ছাড় দিবে না। কোন একটি ইসলামী দলের সংসদে আসা কিংবা না আসার উপর সংসদীয় গণতন্ত্র Dependent নয়। কোন বিশেষ ইসলামী দল প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বেও এটা ছিল, এবং ঐ বিশেষ দলটি যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তবুও সংসদীয় গণতন্ত্র বহাল তবিয়তেই থাকবে। কিন্তু চুক্তির বিষয়টি এমন নয়। চুক্তিবদ্ধ দলগুলোর একটি যদি বেঁকে বসে তাহলে পুরা চুক্তিটিই ভেস্তে যাবে। কাজেই বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থাকে সন্ধি/চুক্তির সাথে তুলনা করাই হচ্ছে একটি বড় ধরণের গলদ।
.
২.
হুদাইবিয়ার সন্ধির প্রেক্ষাপট যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে আমরা দেখি, ৬ষ্ঠ হিজরীতে রাসূল (সঃ) কাবাঘর তওয়াফ করার জন্যে সাহাবাদেরকে নিয়ে মক্কার দিকে যাত্রা করলেন। তাদের সাথে তখন মুসাফিরের ব্যবহৃত কোষবদ্ধ তলোয়ার ছাড়া অতিরিক্ত কিছুই ছিল না কারন তাঁরা কোন যুদ্ধের নিয়্যাতে বের হন নি। কিন্তু কুরাইশরা তাদেরকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিতে চাইলো না। তখন রাসূল (সঃ) উসমান (রাঃ) কে দূত হিসেবে মক্কায় প্রেরণ করেন যাতে তিনি তাঁদের আগমনের উদ্দেশ্য কুরাইশদের কাছে খোলামেলাভাবে ব্যক্ত করতে পারেন। কিন্তু পরবর্তীতে যখন উসমান (রাঃ) এর শাহাদাতের গুজব ছড়িয়ে পড়লো, তখন রাসূল (সঃ) বললেন, “কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ না করে আমরা এই জায়গা থেকে যাবো না”।
সাহাবায়ে কেরাম একে একে আল্লাহর রাসূলের (সঃ) কাছে যুদ্ধের বাইয়াত করলেন। এ ঘটনা শুনে কুরাইশরা নিজেরাই ভয় পেয়ে রাসূল (সঃ) এর কাছে সন্ধির প্রস্তাব করলো। এই হল হুদাইবিয়ার সন্ধির ইতিহাস যার সাথে আজকের বাস্তবতার কোন মিল নেই।
.
.
.
এরপর আমরা দেখবো ইসলামিক পারস্পেক্টিভে সন্ধিকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে-
.
*হানাফী মাযহাবের ফিকহের কিতাব ‘আল বাদায়েউস সানাআ’তে বলা হয়েছে-
.
“সাময়িকভাবে যুদ্ধবিরতিকে সন্ধি বলে”।
.
.
*শাফেয়ী মাযহাবের ফিকহের কিতাব ‘মুগনী ওয়াল মুহতাজ’ এ বলা হয়েছে-
.
“বিদ্রোহী কাফেরদের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে লড়াই পরিত্যাগ করাকে সন্ধি বলে। চাই  তা কোন কিছুর বিনিময়ে হোক অথবা বিনিময় ছাড়া হোক”।
.
.
*হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব ‘আল মুগনী’তে বলা হয়েছে-
.
“বিদ্রোহীদের সাথে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যুদ্ধ বর্জনের ব্যপারে চুক্তি করাকে সন্ধি বলে”।
.
.
*মালেকী মাযহাবের ফিকহের কিতাব ‘শারহুল কাবির’ এ বলা হয়েছে-
.
“সন্ধি বলা হয় ধর্মদ্রোহীর সাথে এই মর্মে চুক্তি করা যে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইসলামী আইন তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না”। (অর্থাৎ তাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হবে না)
.
.
প্রিয় পাঠক, আফসোসের সাথে লক্ষ্য করুন, ইসলামী শরীয়তের সন্ধির ধারণাকে আজ কোন পর্যায়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে??
.
৩.
তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, হুদাইবিয়ার সন্ধিতে কি কুফর-শির্ক এরকম কোন ইস্যুতে কম্প্রোমাইজ করা হয়েছিল??
.
সন্ধির সময় চুক্তিসম্পাদনকারীর নাম হিসেবে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু কুফফাররা এতে বেঁকে বসে। তারা বলে, “যদি আমরা আপনাকে রাসূলুল্লাহ বলে মানতামই তাহলে তো এসবের কোনই দরকারই ছিল না”। তখন নাবী (সঃ) বললেন, “তোমরা স্বীকার না করলেও আমি আল্লাহর রাসূল”। এরপর তিনি আলী (রাঃ) কে বললেন, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ লিখো এবং ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি মুছে দাও। আলী (রাঃ) ইতস্তত করতে লাগলেন। ফলে রাসূল (সঃ) নিজের হাতে শব্দটি মুছে দিলেন।
.
এই ঘটনা থেকে অনেকে আদর্শের ক্ষেত্রে আপোষ প্রমাণের চেষ্টা করেন। (নাউজুবিল্লাহ)
.
প্রথমে বুঝা দরকার যে সন্ধিতে যদি ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি থাকতো তাহলে সর্বোচ্চ এতটুকু বলা যেত যে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে তাদের উপর চাপিয়ে দিতে পেরেছি। কেননা মুহাম্মাদ (সঃ) কে মক্কার কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ বলে বিশ্বাস করতো না। (এবং আমরা এটাই চাই কারন ইসলাম হচ্ছে সত্য দ্বীন।) তবে এটা করতে না পারার অর্থ এই নয় যে আমরা তাদের বিশ্বাস/আদর্শকে সাময়িক স্বীকৃতি দিয়েছি।
.
*** ‘অন্যদের আদর্শকে স্বীকৃতি দেওয়া বা মেনে নেওয়া’ এবং ‘নিজেদের আদর্শকে অন্যদের উপর আরোপ করতে ব্যর্থ হওয়া’- এ দুয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান’। ***
.
আরো একটু সহজে আমরা বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি-
.
ক) ঐ চুক্তিতে যদি কুফফারদের কাউকে রাসূলুল্লাহ বলে উল্লেখ কর হত (যেমন আলাহর রাসূল আবু সুফিয়ান কিংবা আল্লাহর রাসূল সুহাইল ইবনে আমর) তাহলে কি মুহাম্মদ (সঃ) তাতে সাক্ষর করতেন???
.
খ) উক্ত চুক্তিতে যদি আল্লাহকে বাদ দিয়ে বা আল্লাহর পাশাপাশি অন্য দেবদেবীর কর্তৃত্ব বা সার্বভৌমত্বের উল্লেখ থাকতো কিংবা কোন দেবদেবীর নামের কসম খাওয়া হত তাহলে কি মুহাম্মাদ (সঃ) ঐ চুক্তিতে সাক্ষর করতেন??
.
৪.
হুদাইবিয়ার সন্ধি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ছিল যেটাকে পরবর্তীতে উপমা হিসেবে পেশ করা যায় না। কেননা এই সন্ধিতে এমন কিছু বিষয় ছিল যা ইসলামের সামগ্রিক শিক্ষার সাথে মিলে না। যারা ফিক্বহের ‘আম’, ‘খাস’, ‘নাসেখ’, ‘মানসূখ’ পরিভাষাগুলো বুঝেন তারা বিষয়টা আরো সহজে বুঝতে পারবেন। হুদাইবিয়ার সন্ধি যে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা তা বুঝা যায় আল্লাহর রাসূলের উটনীর বসে যাওয়া থেকে। নবী (সঃ) বলেন, “এই উটনীর তো এভাবে বসে পড়ার অভ্যাস নেই। তিনিই একে থামিয়ে দিয়েছেন যিনি আবরাহার হাতি বাহিনীকে থামিয়ে দিয়েছিলেন”।  এরপর তিনি বললেন,  “সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ যদি ওরা এমন কোন কিছু দাবী না করে যাতে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি শ্রদ্ধার প্রমাণ থাকে তাহলে আমি অবশ্যই তা মেনে নিবো”।  এরপর আল্লাহর রাসূল (সঃ) উটনীকে উঠার তাকিদ দিতেই উটনী উঠে দাড়ালো।
.
হুদাইবিয়ার সন্ধিতে কোন হারাম শর্ত থাকার প্রশ্নই আসে না। কেননা সন্ধিটি আল্লাহ সুবহানাহু তা’লা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর ইচ্ছায় সম্পাদিত হয়েছিল।
এই চুক্তির ব্যপারে রাসূল (সাঃ) উমর (রাঃ) কে বলেছিলেন, “আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি তাঁর নির্দেশ কখনও লঙ্ঘন করবো না আর তিনিও আমাকে কখনও বিপথগামী করবেন না”।
[সীরাতে ইবনে হিশাম]
.
হুদাইবিয়ার সন্ধির ফলে রাসূল (সঃ) আবূ জান্দালের মত অসহায় মুসলিমদের কুরাইশদের আছে রেখে যেতে বাধ্য হন। তিনি এ মর্মেও চুক্তি করেন যে কোন অসহায় মসলিম পালিয়ে মদিনায় চলে গেলে তিনি তাদেরকে পুনরায় কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠাবেন। কিন্তু অধিকাংশ আলেমদের মত হচ্ছে বর্তমানে এ ধরণের চুক্তি করা জায়েয নয়। তাদের মত হচ্ছে হুদাইবিয়ার সন্ধির ঐ অংশটা শুধু রাসূল (সঃ) এর জন্যে খাস ছিল, কারন তিনি জানতেন যে আল্লাহ তাদের জন্যে একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।  [ বিস্তারিতঃ  ড. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম (রহঃ) এর ‘মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা’ বইয়ের ‘কাফিরদের সাথে শান্তি চুক্তি করার শর্তসমূহ’ অধ্যায়টি দেখতে পারেন। ডাউনলোড লিংক– http://www.pdf-archive.com/2013/03/25/defence-of-muslim-land/ ]
.
.
.
B) আল্লাহর রাসূল (সঃ) কাবাঘরে মূর্তি থাকা সত্ত্বেও কাবাঘর তওয়াফ করেছেন, কাবা চত্বরে সালাত আদায় করেছেন।
.
এটাকেও অনেকে কুফরকে সাময়িক স্বীকৃতিরূপে দেখতে চান। (নাউজুবিল্লাহ)
.
প্রথমতঃ  মনে রাখতে হবে যে মুশরিকরা কাবাঘর তৈরি করে নি, আর তাই কাবাঘর তাদের হতেও পারে না। ইসলামের নবী ইবরাহিম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে কাবাঘর তৈরি করেন। এ কাবাঘর তাই ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু পরবর্তীতে লোকেরা নবী রাসূলদের দেখানো পথ ভুলে তাওহীদের এ কেন্দ্রেই স্থাপন করেছিল ৩৬০ টি মূর্তি। আর এ পরিস্থিতিতেই মানবতাকে পথ দেখানোর জন্যে প্রেরিত হন সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সঃ)।
.
মক্কা বিজয়ের পূর্বে আল্লাহর রাসূল (সঃ) কাবাঘরে মূর্তি থাকা সত্ত্বেও কাবাঘর তওয়াফ করেছেন, কখনও কখনও কাবাঘর সংলগ্ন লাগোয়া জমিতে নামায আদায় করেছেন। আর এটাকেই কেউ কেউ কুফরী গনতন্ত্রে অনুপ্রবেশের দলীল হিসেবে পেশ করছেন। (নাউজুবিল্লাহ)
.
এ ব্যপারে আমরা বলি-
মূলগতভাবে কাবা শরীফ তওয়াফ করার মাঝে তো শির্কের কিছুই নেই, আপোষেরও কিছুই নেই। কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর বান্দা আল্লাহর ঘর তওয়াফ করছেন। অনুরূপভাবে কাবাঘর সংলগ্ন লাগোয়া জমিতে নামায আদায়ের সাথে শির্কের কি সম্পর্ক??  বিষয়টা তো এমন নয় যে তিনি (সঃ) সেই সময়ে মূর্তিকেই সিজদা করেছেন কিংবা দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা করেছেন কিংবা তিনি মুশরিকদের শির্কী কর্মকান্ডে শামিল হয়েছেন!!
.
বিভ্রান্তকারীরা সর্বোচ্চ প্রশ্ন করতে পারে তখন নবী (সঃ) কেন কাবাঘর থেকে মূর্তি ভেঙে ফেলেন নি বা অপসারণ করেন নি??
.
এর উত্তরে আমরা বলি-
.
শক্তি-সামর্থ্য না থাকায় আল্লাহর রাসূল (সঃ) এ টি করতে পারেন নি। কিংবা এ কাজকে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেসময়ই  তাঁর জন্যে আবশ্যিক করে দেন নি।  কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি সেগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছেন বা মেনে নিয়েছেন। এছাড়া মুসনাদে আহমাদে আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত একটি হাদীসে দেখা যায় রাসূল (সঃ) মক্কী যুগেই গোপনে কাবাঘরের মূর্তি ভেঙেছেন। আর অনেক মুহাদ্দিছ এর বর্নাসূত্রকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন।
.
আর  রাসূল (সঃ) তাঁর দাওয়াত শুরুই করেছিলেন ঐ সমস্ত বাতিল উপাস্যদের তাকযিব (মিথ্যা সাব্যস্ত) করার মাধ্যমে যেটা আমরা সীরাত থেকে স্পষ্ট দেখতে পাই। মুশরিকদের শির্কের বিরোধিতার ক্ষেত্রেও তিনি সকল প্রতিকূল অবস্থায় আপোষহীন ছিলেন। আবূ তালিবের মৃত্যুর পূর্বে কুরাইশদের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁর সাথে বৈঠক করতে আসে, উদ্দেশ্য রাসূল (সঃ) এর সাথে একটি চুক্তি সম্পাদন করা।  তারা আবূ তালিবকে বলল, “আমরা তাকে তার দ্বীনের উপর ছেরে দিবো, তিনিও যেন আমাদেরকে আমাদের দ্বীনের উপর ছেড়ে দেন”। (অর্থাৎ আমরা তোমার ধর্ম নিয়ে নাক গলাবো না, আর তুমিও আমাদের ধর্ম নিয়ে নাক গলাবে না)  কিন্তু রাসূল (সঃ) তাদের এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
[দেখুনঃ আর রাহীকুল মাখতুম]
.
সূরা কাফিরুনের মত দ্ব্যর্থহীন সূরাও অবতীর্ণ হয় মক্কী যুগে, মুসলিমদের দুর্বল অবস্থায়, এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রাপ্তির পূর্বেই।
.
আর এসব ঘটনার বিপরীতে যদি আমরা বর্তমান পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রকে অবলোকন করি তাহলে আমরা দেখতে পাই-
.
সংসদীয় প্রক্রিয়া শুরুই হয় কুফরকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে বা কুফরী মূলনীতিসমূহের কাছে নতি স্বীকারের মাধ্যমে। আর যে ব্যক্তি পার্লামেন্টের মেম্বারশীপ গ্রহণ করে সে তো আইন প্রণয়নেও অংশগ্রহন করে। আর গাইরুল্লাহকে হক্কে তাশরীহ (আইন প্রণয়নের অধিকার) প্রদান তো সুস্পষ্ট শির্ক।
.
দ্বিতীয়তঃ  ঐ সময় দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ছিল না, কেননা তখন একটু একটু করে অহী নাযিল হচ্ছিল। কিন্তু এখন দ্বীনি বিধান পরিপূর্ণ। কাজেই বর্তমান সময়ের জন্যে আর এই লজিক খাটে না।
.
আপনার বুঝার জন্যে আমি বিষয়টা আরো একটু সহজ করে দিচ্ছি-
.
ধরুন, এখন মুশরিকরা আবার কাবা শরীফ দখল করলো। এরপর কাবাঘরে ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপন করলো। সেক্ষেত্রে আপনার করনীয় কি হবে?
আপনি কি এই অবস্থায় মুশরিকদের সাথে একটা চুক্তি করে কাবাঘর তাওয়াফ করবেন নাকি এই অবস্থায় জিহাদ করা সমগ্র মুসলিমদের উপর ফরযে আইন হয়ে যাবে??
.
দ্বীন পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর আপনাকে কুরআন-সুন্নাহর সামগ্রিক পর্যালোচনা দিয়েই দ্বীনকে বুঝতে হবে, সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। সীরাত থেকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে নয়।
.
কেউ কেউ আবার তৎকালীন আরবের কিছু রীতিনীতির উল্লেখ করেন যেগুলো ঐ সময়ে রাসূল (সঃ) অনুসরণ করতেন। এসবের উল্লেখ করে তারা ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চান যে বর্তমানেও গণতন্ত্রের অনুসরণ করা তেমন দোষের কিছু নয়।
.
এভাবে তারা নিজেরাও বিভ্রান্ত হন আর অন্যদেরকেও বিভ্রান্ত করেন। অথচ ঐ রীতিনীতিগুলো এমন নয় যে তা কাউকে  ‘আরবাবাম মিন দুনিল্লাহ‘  অর্থাৎ ‘আল্লাহর পরিবর্তে রব’ বানিয়ে দেয়।
.
কিন্তু পার্লামেন্টের মেম্বারদের আইন প্রণয়নের অধিকার প্রদান সুস্পষ্টভাবেই মানুষকে আল্লাহর পরিবর্তে রব বানিয়ে দেয়।
.
একটা সহজ উদাহরণ দেওয়া যাক, একটা বাস কোম্পানী যদি নিয়ম করে যে তাদের বাসের এক তৃতীয়াংশ সিট মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। আর এই নিয়ম কেউ ফলো করলে ‘আরবাবাম মিন দুনিল্লাহ’ হবে না। কিন্তু কেউ যদি জনগণের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়, নিজেকে কুফরি সংবিধানের রক্ষক মনে করে গর্ববোধ করে, কুরান-সুন্নাহ বাদ দিয়ে মানুষের সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ণ করে দেন ইট ইজ সিউরলী আরবাবাম মিন দুনিল্লাহ।
[আরবাবাম মিন দুনিল্লাহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে এই লেখাটির শেষের দিকটা পড়ুন- http://wp.me/p57tC3-D ]
.
.
মাক্কী যুগ নাকি মাদানী যুগ??
.
#আমরা-যখন-আমাদের গণতন্ত্রপন্থী ভাইদের কাছে জিহাদ ফরয হওয়ার কন্ডিশনগুলো উল্লেখ করে বলি যে বর্তমানে আমাদের জন্যে জিহাদ ফরয হয়ে গেছে, তখন তারা অবলীলায় বলে দেন যে আমরা এখন মাক্কীযুগে আছি, আর আল্লাহর রাসূল (সঃ) তো মাক্কীযুগে তো কোন জিহাদ করেন নি। কাজেই এখন জিহাদ করা যাবে না।
কিন্তু  যখন গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদী ধর্ম-নিরপেক্ষ দলের সাথে জোট, কাফেরদের সাথে ক্ষমতার ভাগাভাগি ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় তখন তারা  তাদের পূর্বের লজিকের Ground চেঞ্জ করে এক লাফে তারা মাদানী যুগে চলে যান। এরপর আমাদের কাছে মদীনা সনদ কিংবা হুদাইবিয়ার সন্ধির কাহিনী শোনাতে থাকেন। (অথচ এসব চুক্তির প্রকৃত অবস্থা তো আপনারা একটু আগে দেখতেই পেলেন) আসলে ক্ষণে ক্ষণে লজিকের Ground চেঞ্জ করে ফেলা সত্য অনুধাবনের জন্যে এক বড় অন্তরায়।
.
নারী নেতৃত্ব, তাওহীদে হাকীমিয়্যাহ বিরোধী দলের অধীনস্ত হয়ে তাদের সাথে জোট ইত্যাদি ইস্যুতে আমরা আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর একটি হাদীস উল্লেখ করে আজকের আলোচনা শেষ করবো-
.
“মুসলিমদের মধ্যে চুক্তি বৈধ যদি চুক্তিতে এমন কোন শর্ত না থাকে, যা হালালকে হারাম করে বা হারামকে হালাল করে”। [তিরমিজী]
.
.
.
প্রেক্ষাপট বাংলাদেশঃ
.
বাংলাদেশ সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
.
“জনগণের অভিপ্রায়ে পরম অভিব্যক্তিকরূপে  এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহা হইলে ঐ আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল বলে গণ্য হবে”।
.
আবার বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম ভাগের শিরোনাম হলো ‘আইন সভা’। সংবিধানের ৬৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
.
“জাতীয় সংসদ’ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকিবে এবং সংবিধানের বিধানবালীর-সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত হইবে”।
.
.
এবার দেখুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও অন্যান্যদের শপথঃ
.
সংবিধানের ৩য় তফসিল, শপথ ও ঘোষণা অনুচ্ছেদের ২(ক) এ বলা হয়েছে-
.
“আমি …. সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি আইন অনুযায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী (বা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী) পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সাথে পালন করিব-
.
– আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;
.
–আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব  (নাউজুবিল্লাহ)
.
– এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি যথাবিহিত আচরণ করিব”।
.
সংবিধানের ৩য় তফসিল, শপথ ও ঘোষণা অনুচ্ছেদের ৫ এ বলা হয়েছে-
.
“আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইয়া সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন অনুযায়ী  বিশ্বস্ততার সাথে পালন করিব-
.
– আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;
.
–আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব  (নাউজুবিল্লাহ)
.
– এবং সংসদ সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দিবো না”।
.
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে রক্ষা করুন এবং হাক্ককে হাক্করূপে ও বাতিলকে বাতিলরুপে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top