শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬

মুসলমানদের ঐক্য আজ বড়ই প্রয়োজন -মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমিন

কোন মন্তব্য নেই:

মুসলমানদের ঐক্য আজ বড়ই প্রয়োজন
-মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমিন
.
যাবতীয় প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তা’য়ালার যিনি মানবজাতির কল্যাণময় পথের দিশা দিয়েছেন। সঠিক সংবিধান হিসেবে কোরআনুল কারীম নাযিল করেছেন।
.
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,“ তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না”। মহান রবের এ বাণী থেকে সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ঐক্যের মধ্যে রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহ যা বলেন তা বান্দার কল্যাণের জন্য বলেন। অতএব কল্যাণ পেতে হলে কোরআনে যা বলা হয়েছে, তা জীবনে বাস্তবে প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
.
মুসলিম জাতির জন্য সফলতার ও উন্নতির একমাত্র অবলম্বন ও সিঁড়ি হলো কোরআনুল কারীম। একেই জীবন চলার গাইডবুক বানাতে হবে। এর কাছ থেকেই সকল সমস্যার সমাধান গ্রহণ করতে হবে। এর সাথেই হৃদয়ের ঘনিষ্ঠ যোগসুত্র স্থাপন করতে হবে। মোদ্দা কথা কোরআনের সাথেই পথ চলতে হবে। এছাড়া মুসলিম জাতির ক্রমশ হতাশা ও লাঞ্চনার অতল গহবরে তলিয়ে যেতে হবে এতে কোন প্রকার সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। এ কথার বাস্তব প্রমান হলো, কোরআন অনুসরণকারী সে যুগের মুসলিম জাতির পৃথিবীতে নেতৃত্বের আসনে সম্মানজনক অবস্থান ছিল।
.
আর বর্তমান যুগের মুসলিম জাতি অবহেলা ও লাঞ্চনামুলক দাসত্বের স্তরে অবস্থান করছে। মুসলমান আজ ইসলাম বিরোধী শক্তির রোষানলে নিপতিত। বাতিল শক্তিগুলো ইসলাম কে তাদের বিরোধী শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে মুসলমানদের কে টার্গেটে পরিণত করেছে। ইসলাম বিরোধী অপশক্তির এই চ্যালেঞ্জ কে সক্ষমভাবে মোকাবেলা করার জন্য মুসলমানদের ঐক্য আজ বড়ই প্রয়োজন। আর ওদের শক্তির বিরুদ্ধে মুসলমানদের গড়ে তুলতে হবে দৃঢ় ইস্পাত কঠিন ঐক্য। এতে আল্লাহ তা’য়ালাও ভালবাসবেন।
.
সুরা ছফের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে ভাল বাসেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সিসা গলিয়ে ঢালাই করা একমজবুত দেয়াল”। এ জন্য সকল মুসলমানদের প্রধান দায়িত্ব ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা।
.
কিন্তু অনেক মুসলমান দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের চেয়ে দ্বীনের খেদমতকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যে কারণে অনেক ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকে। এজন্য আমরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি আন্তরিক মহব্বত ও দরদ অনুভব করি না।
.
সাহাবায়ে কেরাম রেদওয়ানুল্লাহি তা’য়ালা আলাইহিম আজমাঈন দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে গেছেন তাই তাদের মধ্যে ছিলো পরস্পর সহানুভুতিশীলতা।
কিন্তু আমরা বর্তমান সময়ের মুসলমান তথা নবীর উম্মতগণ কিরুপ ভ্রান্তিতে পতিত তার খেয়ালও করছি না। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দুরের কথা ফতোয়াবাজিতে ব্যস্ত। যেখানে উচিত ছিলো এক মুসলমান অন্য মুসলমানের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ, সেখানে আজ একে অন্যকে ভ্রান্ত, ফাসেক ও কাফের ফতোয়া দিয়ে অমুসলিমদের বাহবা কুড়াচ্ছি।
.
আমরা একজন নাস্তিক বা ইসলামের কট্টর দুশমনকে ততটা দুশমন মনে করিনা, যতটা করছি অন্য মুসলিম ভাইকে, যিনি ঠিক আমার মতো শরীয়তের কিছু নিয়ম কানুন হুবহু অনুসরণ করছে না। এই যে বিভেদ, শত্রুতা ও ফতোয়াবাজি, যার মুল কারণই হলো দ্বীনের সহিহ বুঝ না থাকা। আর থাকলেও তা বাস্তবে সঠিক প্রয়োগ না করা। এই জঘন্য ব্যাধি হতে মুক্তির জন্য আমাদের পুর্ববর্তী দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন কারী সুন্নতের অনুসারীদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার। একটু খোলা মন নিয়ে সমস্যা উত্তরণের মানসিকতায় ইতিহাস ঘেঁটে শিক্ষা গ্রহণ করলে সুন্নতের অনুসারী, দ্বীনপ্রতিষ্ঠার দাবীদাররা অবশ্য এক দিলের হতে পারি।
.
অবশ্য শক্তি সমর্থ অর্জনের সাপোর্ট হিসেবে মুসলমানদের কিছু পজেটিভ পরিস্থিতি সম্পর্কে একটু ওয়াকিফহাল হতে হবে।
.
বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় অর্ধশত মুসলমান অধ্যুসিত দেশের অস্তিত্ব বিদ্যমান।
.
বিশ্বের সমস্ত সম্পদের ৫১% ভাগ মুসলমানদের করায়ত্তে।
.
দুনিয়ার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ মুসলমান, অর্থ্যাৎ বিশ্বে সুসলমানদের সংখ্যা ১৫০ কোটির বেশি।
.
এই দেড়শতাধিক কোটি মুসলমানদের ঘরে ঘরে রয়েছে সফলতা, উন্নতি ও নিঃশঙ্ক জীবন-যাপনের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং নিশ্চিত উপকরণ মহাগ্রন্থ আল কোরআন।
.
এমন সমাধানগ্রন্থ আল কোরআন থাকার পরও বর্তমান সময়ের লাঞ্চিত,অবহেলিত,অপ মানিত ও অত্যাচারিত জাতির নাম মুসলমান।
এর একটিই নিশ্চিত কারণ, সেটি হলো সে যুগে কোরানের সাথে মুসলিম জাতির যে সম্পর্ক ছিলো বর্তমান মুসলমানদের সাথে কোরআনের সে সম্পর্ক আর নেই।
.
সে জাতি কোরআন ধরেছে তাই নেতৃত্বের সম্মানে আসীন হয়েছেন, শান্তির সমাজ পেয়েছেন। আর বর্তমান মুসলমান কোরআন ছেড়েছে তাই অপদস্ত হচ্ছে কদমে কদমে। আর অশান্তির সমাজে কোন রকম একটু স্থান পেয়েছে।
.
ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থের ব্যাপারে অমুসলিম নেতৃবৃন্দের কথা ও কাজের সাথে, বর্তমান অধিকাংশ মুসলিম নেতৃত্বের কথা ও কাজের কোন ব্যাবধান নেই।
.
কোরআনের সাথে মুসলমানদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকার কারণে, মুসলিম ভ্রাত্বিতের প্রাচীর গড়ার কারণে মুসলমানদের নাম শুনলে বণের হিংস্র প্রাণীরাও সম্মান প্রদর্শন করতো। আর বর্তমান সেই মুসলমানদের মাথায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাত-দিন নেংটি ইঁদুরেরা নর্তন-কুর্দন করছে।
.
বিখ্যাত উর্দু কবির ভাষায় -
“শের কি সারপে বিল্লি খেল রাহি
ক্যায়সা হ্যায় মুসলমাঁ কা বদনসীব,
শাহাদাত কি তামান্না ভুল গ্যায়ি
তাসবীহ্ কি দানুঁমে জান্নাত ঢুঁ রাহি”।

নবী করীম সঃ বলেছেন,“ এমন এক সময় আসবে যখন তোমাদের ওপর অন্ধকার রাতের মতে বিপদ ধেয়ে আসবে।” সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, “ হে আল্লাহর রাসুল সাঃ! সে বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?” নবী করীম সাঃ জবাবে বললেন,“আল্লাহর কিতাব, এতে রয়েছে তোমাদের পুর্বপুরুষদের কৃতকর্মের ইতিহাস, তোমাদের পরবর্তীদের সংবাদ এবং তোমাদের জন্য পালনীয় বিধান, এটি চুড়ান্ত যা আদৌ উপক্ষো করার মতো নয়।”

অতীতে অনেক জাতি আল্লাহর বিধানের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করার কারণে কিভাবে ধংস হয়েছে, পৃথিবীতে কিভাবে তারা নির্যাতিত হয়ে দাসসুলভ জীবন-যাপন করেছে, কোথাও সমূলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, এসব ইতিহাস উপস্থিত ও অনাগত মানব মন্ডলীর জন্য পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, যেনো তারা এসব থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আবারো সৌভাগ্যের আসনে আসীন হতে পারে। সুতরাং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে একে অপরের ভুল অন্বেষণ না করে বিরোধীতা না করে পরস্পর ভাল কাজের প্রতি উৎসাহিত করা এবং মন্দ কাজের দিকে এগিয়ে না দেয়া। আল্লাহ তা’য়ালা সুরা মায়েদার ২নং আয়াতে বলেছেন, “তোমরা পরস্পর নেক ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পর সহযোগিতা করো এবং গুনাহ ও সীমালংঘনের কাজে কাউকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করো”। আল্লাহ তা’য়ালা সুরা মুজাদালার ৯ নং আয়াতে বলেন, “ হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন পরস্পর গোপন আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হও তখন পাপ,জুলুম ও রাসুলে অবাধ্যতার কথা বলাবলি করো না,বরং সততা ও আল্লাহভীতির কথাবার্তা বল”। আল্লাহ তা’য়ালা এর পরবর্তী ১০ নং আয়াতে বলেন,“ কানাঘুষা একটা শয়তানী কাজ এবং ঈমানদার লোকদের মনে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যেই তা করা হয়”। নবীজি বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর একে অপরের দোষ অন্বেষণ করো না’।
.
মুসলিম মিল্লাতের এই চরম সঙ্কটময় মুহুর্তে প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।
কিন্তু তা পয়দা না হবার পিছনে যে দু’টি জিনিস কাজ করছে সে বিষয়ে আমাদের সাবধান হওয়া সময়ের দাবী।
.
এর মধ্যে একটি হলো- ইসলাম বিরোধী চক্রান্ত। তারা চায় মুসলমান সব সময় আত্মবিরোধে লিপ্ত থাকুক। আর এভাবে মুসলমানরা কুফরের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাক।
সুরা বাকারার ১০৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন,“ আহলে কিতাবদের মধ্যে এমন বহু লোক আছে, যারা চায় যে, ঈমান আনার পর আবার তোমাদেরকে কাফের বানিয়ে দেবে।”
.
দ্বিতীয়টি হলো- প্রত্যেক মুসলমান,আলেম কিংবা ইসলামী দলই নিজের কাজ কে উত্তম ও যথেষ্ট মনে করে। এর ফলে মনে সৃষ্টি হতে থাকে জেদ যার ফলে অন্য মুসলমান,আলেম অথবা ইসলামী দলের যোগ্যতা,ইলম,তাকওয়া কে খাটো করে দেখা ও দেখাবার প্রবণতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। মুশরিকরা স্বভাব ধর্ম ও তাদের মতের সত্য ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করে পৃথক হয়ে গেছে বিভিন্ন দল ও মত সৃষ্টি করে নিয়েছে। ফলে জনগণের মধ্যেও সহজেই বিভেদ সৃষ্টি হয়ে গেছে।
.
ইসলাম পন্থীদের মাঝেও আজ সুন্নাতের অনুসরনের নামে বিভিন্ন পথ-পন্থা তৈরী হয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তির মাঝে ফেলেছে। প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে হর্ষোৎফুল্ল। সুরা রূমের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন,“ যারা তাদের দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লাসিত।”
এ সব বিভক্তির ফলে মুসলিম সমাজে ছড়াচ্ছে অশান্তি,অনৈক্য। সাধারণ মানুষ ও আধুনিক যুবসমাজ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইসলাম থেকে। আর মজা লুটছে ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো। ইসলাম বিরোধী শক্তিরা ঐক্যবদ্ধ হযে এ সুযোগের সদ্ব্যাবহার করছে।
.
ইসলাম বিরোধীদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে ঐক্যবদ্ধ থাকাই দ্বীনের প্রতিষ্ঠা, দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তির মুল চাবিকাঠি। এই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ তা’য়ালা।
মুসলমানদের আজ বিপর্যের মুল কারণ আল্লাহ তা’য়ালার এ নির্দেশের অবমাননা। আর ঐক্যের এ ভিত্তি রচনা করতে হলে প্রত্যেক মুসলমান তথা দ্বীনের সব খাদেম কে দুটি নীতি অনুসরণ করতে হবে।
.
এক---যিনি যতটুকুন পারেন বা বুঝেন দ্বীনের খেদমত করে যাবেন। কিন্ত কোন দ্বীনি জামায়াত বা দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বা গোপনে প্রচার চালাবেন না। যদি কখনো কোন জাময়াত বা খেদমত সম্পর্কে আলোচনা একান্ত প্রয়োজন হয় তা হলেও শ্রোতার মনে বিরুপ ধারণা সৃষ্টি চেষ্টা না করে দরদী মন নিয়ে কথা বলবেন।
কারো কোন ত্রুটি বা ‘কমতি’ আছে মনে হলে সংশোধনের উদ্দেশ্যে পরামশ দিবেন।
.
দুই---দ্বীনের যত প্রকার খেদমত হচ্ছে তাকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে একে অপরের সহায়ক ও পরিপুরক যে কথা বুঝাবার চেষ্টা করা উচিত। অপরের সম্পর্কে ন জেনেই বিরোধী কোন কথা শুনে বিরুপ ধারনা করা ঠিক হবে না। যারা দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত তাদের খেদমতটা বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ মনে করাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যান্য খেদমত কে তুচ্ছ জ্ঞান করা অন্যায়। কার খেদমত কত বড় তা একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালা বিবেচনা করবেন। তবে একটি কথা সকলে মেনে নিলে তাদের মাঝে অনৈক্য দুর হয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠিত হবে পরস্পর পরস্পরে বন্ধুত্ব আর ঐক্যের দৃঢ় প্রাচীর।
তা হলো- ‘ইকামাতে দ্বীন’ এ কাজটি যদি সকল মুসলমানের একমাত্র কাজ হিসেবে বেছে নিয়ে আল্লাহর জমিনে ছড়িয়ে পড়ে তবে খেদমতে দ্বীনের নামে যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে তা অচিরেই দুর হয়ে যাবে।
.
এমন ঐক্য যদি এখনি না গড়ে তোলা যায় তাহলে একদিন মুসলমানের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এক এক করে মিথ্যা ফুল ঝুড়ি দিয়ে ইসলামী নেতৃবৃন্দ তথা আলেম সমাজ, অরাছাতুল আম্বিয়াদের নিশানা মুছে ফেলতে মিল্লাতে কুফরের চেষ্টা সফল হয়ে যাবে। এবং মুসলিম জাতির পরিণতি হবে চরম ভয়ঙ্কর।
.
ইতিমধ্যে পুর্বেকার ইতিহাসের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস রচিত হতে শুরু হয়ে গেছে।
.
গভর্নর হাজ্জাজ ইবনে ইউছুফ একটি ব্যাপারে ইব্রাহিম নখয়ীর উপর ক্ষেপে গিয়ে তাকে বন্দী করার নির্দেশ প্রদান করেন। খলিফার লোকেরা হযরত ইব্রাহিম তায়িমীকে ইবরাহিম নখয়ী মনে করে বন্ধী করে জেলখানায় আবদ্ধ করে এবং এ বন্ধী অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। গবর্নর ও বুঝতে পারে নি যে তিনি ভুল করে ইবরাহিম নখয়ীর পরিবর্তে ইব্রাহিম তায়িমীকে জেলখানায় আবদ্ধ করেছেন। কারণ বিদ্বেষ মানুষের আসল নকল পার্থক্য করার জ্ঞান বিবেক লোপ করে দেয়।
.
আজ যেভাবে বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর নির্যাতন চলছে তাতে অপর মুসলমান আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। একদিন মিল্লাতে কুফরের এমন থাবা ঘুরে আসতে মোটেই কাঁপবে না। ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও আলিম সমাজকে কলঙ্কিত করতে একের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে যদি পার পেয়ে যেতে পারে তাহলে এমন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। কোরআনের সুরে সুরে মানুষকে ঈমানের পথে ডাকতো যারা সে সকল আল কোরআনের পাখি আজ নব্যজাহিলিয়াতের খাচায় বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। মিথ্যা আর অপবাদের জাল বিছিয়ে যে ভাবে গায়ের জোরে টানছে তাতে আরো বড় ধরনের হৃদয় ভাঙ্গা ক্ষতি হতে পারে। কারণ মুসলমানদের ভাগ্যাকাশে ঘনকালো মেঘজমা হয়েছে। সক্ষম ভাবে মোকাবেলা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
.
আমরা দেখেছি আলিয়া,কওমী,জামায়াত বা হেফাজত নয় সকল পর্যায়ের ইসলাম দরদী মানুষগুলোর উপর বর্তমান সময়ের জাহিলিয়াতের লোমহর্ষক চিত্র।
মুষ্টিমেয় কতেক ইসলামের খাদেমদের কে গায়ে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে যাতে করে পক্ষবলম্বনের সুযোগ পেতে পারে।
সিদ্ধি হাসিল হয়ে গেলে হয়তো একদিন এদেরকেও ছাড় দেয়া হবেনা।
.
গ্রামের প্রবাদ বাক্যে বলে ‘নাচো গোছো কর বউমা হাতের ওজন আছে’।
.
শীতের আবহাওয়ায় গাছের পাতা ঝরে পড়ে দেখতে এমনটি ভাবা ঠিক নয় যে, গাছটি ন্যাড়া হয়ে কি বিভৎস দেখা যাচ্ছে।
গাছের জীবন একেবারে শেষ, আর মাথা তুলতে পারবে না। অথচ কিছুদিন পরেইতো বসন্ত সেদিন চেহারা এত সুন্দর করে ফিরে পাবে যা সকলকেই মুগ্ধ করবে।
গাছের নিচে পড়ে থাকা ঝরা পাতা ?
সে তো ভয় পাচ্ছেনা, কেননা কালবৈশাখীর যে ঝড় তুফান আসছে তা তাকে শেষ করতে নয় বরং নিচের থেকে তুলে উপরে নিয়ে যেতে।
.
অতএব দ্বীন দরদী সকল মুসলমানকে একথা মনে রাখতে হবে যে, আগামীকাল পুর্বদিগন্তে সুর্য্য উদিত হওয়া যেমন সত্য কথা, এ দেশে ইসলামের বিজয় তেমন সত্য কথা ইনশাআল্লাহ।
.
তাই মানবাধিকার লংঘন ও নৈতিক মুল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের এই কঠিন দুর্দিনে সকল মুসলমানকে ঐক্যর পাহাড় গড়ে তুলে, সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ও অনাগত প্রজন্ম রক্ষার উদ্দেশ্যে খালিদ সাইফুল্লাহ,শাহ জালাল,শাহ মাখদুম,শহীদ তীতুমীরের ন্যায় হুঙ্কার তুলতে হবে।
.
আল কুরআন কে বুকে নিয়ে,
মুখে কালিমার আওয়াজ তুলে বাতিলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার যোগ্যতা তৈরী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যেক মুসলিমের ঘরকে কোরআন ও দ্বীন অনুশীলনের দুর্গে পরিণত করতে হবে।
.
আমরা যদি সঠিক মুসলমান হই এবং তাকওয়ার গুনে গুনান্নিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ মর্দে মুজহিদ জাহিলিয়াতের দুর্গে আঘাত হানতে পারি তাহলে জাহিলিয়াতের সকল তাগুতী শক্তির মৃত্যু ঘন্টা বেজে উঠবে ইনশাল্লাহ। ইসলামের বিজয় হবে।
শান্তির পতাকা মুসলমানদের ভাগ্যাকাশে পত পত করে উড়বে।
আল্লাহ আমাদের কবুল করুন আমীন।
.
লেখকঃচেয়ারম্যান ইসলামিক দাওয়াহ ফাউন্ডেশন,
খতিব উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ,
সাংবাদিক, গবেষক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top