শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আল্লাহ্র মনোনীত জীবন ব্যবস্থায় সুদ (part1+2)

কোন মন্তব্য নেই:

আল্লাহ্র মনোনীত জীবন ব্যবস্থায় সুদ (part1+2)
.
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
.
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা – এই
বিষয়টা প্রতিটি মুসলিমই কম বেশি
উল্লেখ করে থাকেন, বলে থাকেন, লিখে
থাকেন। কিন্তু বুঝে থাকেন কজন, সে
বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করার সুযোগ
রয়ে যায়। কারণ জীবন ব্যবস্থা বা লাইফ
সিস্টেমের কিছু সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
রয়েছে, যা ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা বলে
দাবি করার সাথে সাথে অনুধাবন ও
অনুসরণ করা জরুরী। অল্প ভাষায় বিস্তর
বলা সম্ভব না হলেও যা উল্লেখ করা
সম্ভব, তা হল যে কোন জীবন ব্যবস্থাই
একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত
জীবনে কিছু কোড বা নিয়ম কানুন সেট
করে দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত
জীবন যাপনের নিয়ম, পারিবারিক জীবন,
রাষ্ট্রীয় জীবন, সামাজিক জীবন,
অর্থনৈতিক জীবন ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে
কিছু গৃহীত নিয়ম বা এক্সেপ্টেড নর্মস
সেই জীবন ব্যবস্থায় ডিফল্ট হিসেবে
থেকে থাকে। তাই ইসলামকে আমরা যখন
জীবন ব্যবস্থা রূপে ঘোষণা করছি, তখন
আমাদের বুঝে থাকা জরুরী, যে এইসব
উপরোল্লিখিত বিষয়ে ইসলামের কোন
নিয়ম, পরামর্শ কিংবা গাইডলাইন আছে
কিনা।
এক্ষেত্রে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’লা
কুরআনে উল্লেখ করেছেন,
“নিশ্চই আল্লাহ্র নিকট (গ্রহণযোগ্য/
অনুমোদিত) জীবন ব্যবস্থা হল
ইসলাম” [সূরাহ আলি ইমরান: আয়াত ১৯]
.
অর্থাৎ, বিচিত্র ধারার অসংখ্য জীবন
ব্যবস্থাসমূহের মাঝে, আল্লাহ্ তা’লা
কেবল মাত্র একটি জীবন ব্যবস্থাকেই
রিকগনাইজ করেন। অন্যভাবে বলতে
গেলে, আল্লাহ্র কাছে দাম রাখে,
গ্রহণযোগ্যতা রাখে শুধুমাত্র একটি জীবন
পন্থা। আর তা হল ইসলাম।
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন,
“যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য জীবন
ব্যবস্থা খোঁজ করবে, কোনদিনই তা গ্রহণ
করা হবে না এবং আখিরাতে সে
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত” [সূরাহ আলি
ইমরান: আয়াত ৮৫]
.
অর্থাৎ ইসলাম ছাড়া আর কোন জীবন
ব্যবস্থা মেনে চলা ব্যক্তির আখিরাতে
ক্ষতি ব্যতীত কিছু পাওনা নেই। তার সেই
জীবন ব্যবস্থা আল্লাহ্ কখনই, কোন
অবস্থাতেই গ্রহণ করবেন না।
যারা ইসলামকে সত্যিকার অর্থেই
গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন, তারা জানেন,
ইসলাম মানব জীবনের কোন একটি স্তর,
পর্যায় কিংবা ক্ষেত্র বাকি রাখে নি,
যেখানে আল্লাহ্ প্রদত্ত কোন গাইড লাইন
প্রদান করা হয় নি। কিভাবে নখ কাটতে
হয় থেকে শুরু করে কিভাবে শ’খানেক
রাজ্যকে একজন শাসকের অধীনে নিয়ে
এসে সমস্ত পৃথিবী শাসন করতে হয় পর্যন্ত
সমস্ত বিষয়ে ইসলাম দেখিয়েছে পথ।
জ্বেলেছে আলোকবর্তিকা।
.
তাই বলা বাহুল্য, ইসলামের একটি
অর্থনৈতিক দর্শনও রয়েছে। রয়েছে
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। ইসলামের বিভিন্ন
শাখা প্রশাখার মধ্যে অন্যতম বিশদ,
বিস্তর ও সুবিশাল শাখা হল ইসলামি
অর্থনীতি। একজন মুসলিম হিসেবে,
আমাদের অতি অবশ্যই ইসলামের
অর্থনৈতিক মৌলিক তত্ত্ব, বাস্তবিক
প্রয়োগ, সমাধান ও নির্ধারিত নিয়ম কানুন
সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং অন্যান্য
প্রচলিত অর্থনৈতিক পদ্ধতির সাথে
ইসলামি অর্থনীতির পার্থক্য সম্পর্কে
অবহিত হওয়া ও হারাম হালাল সম্পর্কে
সজাগ থাকা জরুরী। আমরা যেমন মুসলিম হিসেবে খৃষ্টানদের রীতিতে আল্লাহ্র ইবাদত
করতে পারি না কিংবা বৌদ্ধদের
রীতিতে বিয়ে করতে পারি না, ঠিক
সেভাবেই আমরা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন
নিয়মে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সমাধা
করতে পারি না, যদি তা ইসলামের সাথে
মৌলিক ভাবে সাংঘর্ষিক হয়ে থাকে।
ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার
গোড়াপত্তন হয় কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা। এই
কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা অনুসারে
ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। সেই
রাসূল [ ﷺ] এর রাষ্ট্র থেকে
শুরু করে খিলাফত রাষ্ট্র পর্যন্ত অর্থনীতি
পরিচালিত হয় ইসলামি অর্থনীতির
মাধ্যমে। খিলাফতের পতনের পর থেকে
অবধারিত ভাবে ইসলামের অর্থনৈতিক
ব্যবস্থার প্রজ্বলিত আলোও স্তিমিত হয়ে
আসে। ফলে দীর্ঘ শত বছর ধরে মুসলিম
ভূমিগুলোতে অর্থ ব্যবস্থা দখল করে
নিয়েছে প্রথমত সমাজতান্ত্রিক ও
পরবর্তীতে পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থা।
উভয়ের মৌলিক ধারনাই ইসলামের ঘোর
বিরোধী। কিন্তু এই সুদীর্ঘ সময়ে মুসলিম
জাতি এইসব মানবসৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রথা ও
ব্যবস্থায় নিমজ্জিত হওয়ার দরুন ইসলামের
মৌলিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে
বেখবর হয়ে পড়েছে। ফলে ইসলামি
অর্থনীতির প্রসঙ্গ তাদের কাছে নতুন
কোন ফিলোসফি রূপে ধরা দেয়, অথচ এটা
সেই ব্যবস্থা যা শত শত বছর ধরে
কার্যকররূপে প্রচলিত ছিল এবং বর্তমান
ক্যাপিটালিস্টিক ইন্টারেস্ট বেইসড
সমাজের মত এর মেরুদন্ড কখনই ভেঙ্গে
পড়ে নি।
.
অর্থনীতির মৌলিক উদ্দেশ্যের ব্যাপারে
প্রখ্যাত মার্কিন অর্থনীতিবিদ Richard
Theodore Ely বলেন,
“Economics is a science, but something
more than a science, a science that though
with the infinite variety of human life, calling
not only for systematic, ordered thinking ,
but human sympathy, imagination, and in an
unusual degree for the saving grace of
commonsense.”
অর্থাৎ, অর্থনীতি কেবল একটি বিজ্ঞানই
নয়, এটি কেবলমান্ত সুসংবদ্ধ, সুশৃঙ্খলিত
চিন্তার আবেদনই জানায় না, মানুষের
প্রতি সহানুভূতির উদ্রেক করতে ও বাস্তব
জ্ঞান অসাধারণ পরিমান সম্প্রসারণ
করতেও তা সচেষ্ট।
.
রাজনৈতিক অর্থনীতির জনক নামে খ্যাত
স্কটিশ অর্থনীতিবিদ Adam Smith
বলেছিলেন
“Economics is the science of wealth.”
অর্থাৎ অর্থনীতি হল সম্পদের (বন্টন)
বিজ্ঞান।
অর্থনীতি বিজ্ঞানে প্রথম নোবেল
মেমোরিয়াল পুরস্কার প্রাপ্ত মার্কিন
অর্থনীতিবিদ Paul A. Samuelson এর মতে,
“Economics is the study of how men and
society choose, with or without the use of
money, to employ scarce productive
resources which could have alternative uses,
to produce various commodities over time
and distribute them for consumption now
and in the future amongst various people
and groups of society.”
অর্থাৎ স্বল্প সম্পদ কি করে অর্থ ব্যবহার
করে কিংবা না করে সমাজের বিভিন্ন
শ্রেণীর মানুষের মাঝে বন্টন করা যায়,
সে সংক্রান্ত বিদ্যাই হল অর্থনীতি।
অর্থনীতির ব্যপারে যে মৌলিক বিষয়টা
বোঝা জরুরী, তা হল সম্পদের সুষম বন্টন
নিশ্চিত করণ, যাতে আপাত অল্প ও
সীমাবদ্ধ সম্পদ দ্বারা জনগণের চাহিদা
পূরণ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, সম্পদের সুষম
বন্টন নিশ্চিতকরণের অর্থ এই, যে তা যেন
সমাজের বিশেষ কোন অংশের হাতের
মুঠোয় পুঞ্জিভূত না হয়ে পড়ে।
যদিও অর্থনীতির সংজ্ঞা বা তত্ত্বসমূহ
শুনতে অনেক সহজ আর বাস্তবিক মনে হয়,
পুঁজিবাদ ভিত্তিক ভোগবাদী সামাজিক
ব্যবস্থায় তা কোন ভূমিকা রাখতে পারে
না। বর্তমান সুদ ভিত্তিক অর্থনৈতিক
ব্যবস্থা কোন অবস্থাতেই সম্পদের সুষম
বন্টন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় নি, হওয়ার
সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
.
অথচ ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শন সম্পদের
সুষম বন্টনকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত।
ইসলামি অর্থনীতির প্রাথমিক লক্ষ্য
সমাজের দুটি প্রান্তকে একীভূত করা।
একের সম্পদে অন্যের যে অধিকার, তা
নিশ্চিত করা। আল্লাহ্ তা’লা বলেন,
আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর
রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর,
রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের,
ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং
মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য
কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই
পুঞ্জীভূত না হয়। করবে। [সূরাহ হাশর:
আয়াত ৭]
.
ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ
অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র
তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে
ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। [সূরাহ নিসা:
আয়াত ২৯]
.
তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ
ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের
কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায়
আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের
হাতেও তুলে দিও না। [সূরাহ বাক্কারা:
আয়াত ১৮৮]
.
অর্থাৎ, ধনসম্পদ যেন শুধুমাত্র
বিত্তশালীদের মাঝেই ঘুরপাক না খায়,
সেই লক্ষ্যেই অর্থনীতির কার্যকর ভূমিকা
রাখা জরুরী। তা কেবল যাতে তত্ত্বের
কিতাবেই আটকে না থাকে, সেই নির্দেশ
দিয়েছেন আল্লাহ্।
এছাড়া আল্লাহ পার্থিব সম্পদকেও তাঁর
রহমত হিসেবে উল্লেখ করে তা বন্টনের
সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ্ বলেন, তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বন্টন করে? আমি তাদের মধ্যে তাদের
জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে
এবং একের মর্যাদাকে অপরের উপর
উন্নীত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক
রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে,
আপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা
উত্তম। [সূরাহ আয যুখরুফ: আয়াত ৩২]
.
সম্পদের সুষম বন্টনে প্রয়োজন সুষম ব্যয়।
অতিরিক্ত ব্যয় করা যেমন রাষ্ট্রের
অর্থনীতির জন্য হুমকি, তেমনি
প্রয়োজনের কম ব্যয় করাও অর্থনীতির
চাকার গতি রোধ করে দেয়।
আল্লাহ্ বলেন,তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে
তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।
[সূরাহ আল ইসরা: আয়াত ২৯]
.
ইসলামি অর্থনীতি ব্যবস্থা একটি
কার্যকর ও বাস্তবমুখী ব্যবস্থা হিসেবে
খিলাফত রাষ্ট্রে প্রচলিত ছিল যুগের পর
যুগ। রাসূল [ ﷺ] মদীনায়
একাধিক শাখা বিশিষ্ট রাজস্ব ব্যবস্থা
চালু করেন। পরবর্তীতে খুলাফা
রাশেদীনের সময় তা অটুট রাখা হয়। প্রায়
৬টি বিভাগ নিয়ে রাজস্ব বিভাগ চালু
করা হয়। সে অনুসারে উমাইয়্যা খিলাফতে
এর কাঠামো বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৯ টি
শাখায় পরিণত হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির
চূড়ান্ত রূপ দেখে আব্বাসীয় খিলাফত।
.
সে সময়কার মজবুত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
সম্পর্কে ইতিহাসবিদ পি কে হিট্টি
বলেন,
“হারুন অর রশিদের খিলাফতে বাগদাদের
গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল
করবার জন্যে ইতিহাস ও রূপকথার সমন্বয়
ঘটে।”
ঠিক রূপকথাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল
ইসলামি শাসন ব্যবস্থায়, যেখানে
অর্থনীতিকে সত্যিকার অর্থেই সম্পদের
সুষম বন্টনের পন্থা হিসেবে দেখা
হয়েছিল। যেখানে বর্তমান অর্থনৈতিক
ব্যবস্থা সমাজের প্রতিটি পরতে পরতে
শোষন ব্যতীত কিছু দিতে সক্ষম হয় নি।
সত্যিকার অর্থেই যারা অর্থনৈতিক
মুক্তির তালাশ করেন, তাদের কাছে
ইসলামি অর্থনীতি একটি অমূল্য সম্ভাবনা
হিসেবে ধরা দিচ্ছে ধীরে ধীরে।
.
বেশ কিছুদিন আগে ইসলামি অর্থনীতির
বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ মারবার্গ এর
প্রফেসর Dr. Volker Nienhaus তাঁর
“Fundamentals of an Islamic economic
system compared to the social market
economy” শীর্ষক আর্টিকেলে উল্লেখ
করেন,
“Islamic economic systems are indeed
compatible with the concept of the social
market economy, and Islamic economics can
act as an advocate of such a concept
transfer.”
.
দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার ফাইনান্স হাব
সেকশানে বিগত ২০১৩ সনের অক্টোবারে
প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে লেখা হয়,
“Sharia law, which derives from the Qur’an
and the religious teaching of Islam, can also
be applied to the finance sector. Importantly,
Islamic finance can be seen as part of a
wider movement towards the promotion of
sustainability as a key element of economic
life.
Islamic finance is a legitimate expression of
an economic philosophy of the use of
money. This shouldn’t be stigmatized or
criminalized – especially in light of the
excesses and abuses that preceded the
recent global financial crisis.”
ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে
ইকোনমিস্ট ও ফাইন্যান্স এনালিস্টদের
মন্তব্য সংগ্রহ করে লেখা বাড়ানোর
উদ্দেশ্য নেই। তবে উপরের দুটি মন্তব্য
যোগ করার কারণ হল, ইসলামি অর্থনীতি
কোন ধর্মীয় আবেগের বিষয় নয়, বরং এটা
শারি’আর দাবি এবং একটি দেশের
অর্থনীতিকে সচল রাখার একটি কার্যকরী
উপায় যার সাক্ষ্য খোদ বর্তমান সময়ের
বিশেষজ্ঞরাও দিচ্ছেন এবং রিসেশান
বা অর্থনৈতিক মন্দাক্রান্ত এই বৈশ্বিক
অর্থনীতির একটি সমাধান হিসেবেই
ইসলামি অর্থনীতিকে দেখা হচ্ছে। তাই
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ইসলাম
যথেষ্ট মজবুত খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে একটি
জীবন ব্যবস্থা রূপে পৃথিবীর বুকে
আত্মপ্রকাশ করেছে। একটি জীবন
ব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি – অর্থনৈতিক
দর্শন, যা ইসলাম অত্যন্ত কার্যকর উপায়ে
দাঁড় করিয়েছে।
.
.
আমরা গত পর্বে জেনেছি ইসলামি
অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল সম্পদের সুষম
বন্টন। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার
অর্থনীতির তত্ত্ব যদিও সেই কথাই বলে,
তবে বাস্তবতায় দেখা যায়, সম্পদ কেবল
বিত্তশালীদের হাতেই ঘুরপাক খায়। অথচ
সম্পদ যাতে শুধুমাত্র বিত্তশালীদের
হাতে পুঞ্জিভূত না হয়, সেটার দিকেই মূল
লক্ষ্য রাখে ইসলামি অর্থনীতি। আল্লাহ্
তা’লা বলেন,
“আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর
রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর,
রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের,
ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং
মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য
কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই
পুঞ্জীভূত না হয়।” [সূরাহ হাশর: আয়াত ৭]
.
আর এই সম্পদের সুষম বন্টনের ক্ষেত্রে
প্রধান যে বাধার মুখোমুখি হতে হয়, তা হল
সুদ। সুদ এমনই একটি মারাত্মক জুলম, যা
বিত্তশালীদের পকেট ভারী করে সাধারণ
জনতাকে পথে বসিয়ে দেয়।
.
সুদের বাস্তবিক অপকারিতা নিয়ে
ইনশাআল্লাহ্ বিস্তারিত আসবে পরবর্তী
পর্বগুলোতে।
.
ইসলামি অর্থনীতির একটি মৌলিক
বৈশিষ্ট্য হল, এটি সুদ অস্বীকার করে।
সুদের অস্তিত্ব বিলীন করতে চায় এবং
সুদকে হারাম ঘোষণা করে। অথচ আমাদের
প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে
সুদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই ইসলামে
সুদের ব্যপারে কী বলা হয়েছে, কীভাবে
সুদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, কোন
পর্যায়ে একে হারাম করা হয়েছে,
আমাদের বর্তমান সুদী ব্যবস্থা এর সাথে
কতটা যুক্ত, সে সংক্রান্ত জ্ঞান আহরণ
করা প্রত্যকে ঈমানদার মুসলিমের উপর
অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। সুদের ব্যাপারে
ইসলামের হুকুম যদি দেখা হয়, তাহলে
কুরআন ও সুন্নাহ থেকে স্পষ্ট আদেশ
লক্ষ্যণীয়।
.
কুরআন মাজিদ ও সুদ
সুদের ব্যপারে আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া
তা’লা কুরআনে একাধিক আয়াত নাযিল
করেছেন। এইসব আয়াতে দেখার বিষয় হল,
আল্লাহ্ আযাযা ওয়া জাল সুদকে
বিন্দুমাত্র ছাড় দেন নি এবং কঠোর
ভাষায় হারাম ঘোষনা করে দিয়েছেন।
কোন অবস্থাতেই আমরা সুদকে হালাল
করার সুযোগ পাচ্ছি না।
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ
বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় তোমরা সুদে যা
কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায়
না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের
আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে,
অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।“ [সূরাহ
আর রূম: আয়াত ৩৯]
.
“বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে
দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের
জন্য হালাল ছিল-তাদের পাপের কারণে
এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে
বাধা দানের দরুন। আর এ কারণে যে,
তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং
এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ
করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুত; আমি
কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি
বেদনাদায়ক আযাব।” [সূরাহ আন নিসা:
আয়াত ১৬০ -১৬১]
.
“ঈমানদারগণ! তোমরা সুদের উপর সুদ
খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে
থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে
পারো।” [সূরাহ আলি ইমরাআন: আয়াত
১৩০]
.
“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে
দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ
ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে
মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার
কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয়
ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ
তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং
সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে
তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ
এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা
হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার
আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা
পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে।
তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান
করবে।” [সূরাহ আল বাক্কারা: আয়াত ২৭৫]
.
“আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন
এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন।
আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী
পাপীকে।” [সূরাহ আল বাক্কারা: আয়াত
২৭৬]
.
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয়
কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা
পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে
থাক।” [সূরাহ আল বাক্কারা: আয়াত ২৭৮]
.
“অতঃপর যদি তোমরা (সুদ) পরিত্যাগ না
কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ
করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি
তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের
মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি
অত্যাচার করো না এবং কেউ
তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে
না।” [সূরাহ আল বাক্কারা: আয়াত ২৭৯]
.
সুদের সাথে এইভাবেই সরাসরি
সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন আল্লাহ্। বর্তমান
সুদভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থায় ঋণ গ্রহীতার
ওপর যদি ঋণ পরিশোধ কোন কারণে
কষ্টকর হয়ে যায়, তাহলে ফাইনান্স
হাউসগুলো তাকে ছাড় দেয় না। মর্টগেজ
বা বন্ধক বিক্রি করে তারা সুদ ও আসল
তুলে নিয়ে আসে। অথচ আল্লাহ্ বলছেন,
“যদি কেউ যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে
সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত।
আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই
উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি কর।” [সূরাহ
আল বাক্কারা: আয়াত ২৮০]
.
লক্ষ্য করুন, ঋণ পরিশোধের সময়
অতিবাহিত হয়ে গেলে ঋণ দাতার অবশ্যই
দাবি থাকে সেই ঋণের ওপর এবং বর্তমান
ব্যবস্থায় ঋণ গ্রহীতার লেপ কম্বল বিক্রি
করে হলেও সুদ আদায় করা হয়। কিন্তু
আল্লাহ্ বলছেন তাকে সময় দিতে! কোন
অবস্থাতেই যাতে তাকে অতিরিক্ত উসুল
বা সুদের খপ্পরে পড়তে না হয়। যদিও
ইসলামি ঋণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সুদমুক্ত।
তাই কুরআন মাজিদের আলোকে স্পষ্ট
দেখা যাচ্ছে সুদের ব্যপারে এক বিন্দু
ছাড় দেয়া সম্ভব নয়।
.
হাদীস ও সুদ
কুরআন এর আয়াতের আলোকে রাসূলুল্লাহ
[ ﷺ] একাধিকবার সুদের
ব্যাপারে এই উম্মাহকে হুঁশিয়ার করে
দিয়েছেন। দিয়েছেন অভিশাপ ও ভয়ঙ্কর
শাস্তির খবর।
রাসূল সেই নারীকে অভিশাপ দিয়েছেন
যে ট্যাটু আঁকা চর্চা করে এবং সেই নারী
যে ট্যাটু আঁকায়, এবং সেই ব্যক্তি যে সুদ
ভক্ষণ করে এবং যে সুদ দেয়। [সহীহ আল
বুখারী : ৫৩৪৭]
.
আল্লাহ্র রাসূল অভিশাপ দিয়েছেন সুদ
গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদের হিসাবরক্ষের
এবং এ ব্যাপারে সাক্ষ্যদানকারীর ওপর
আর বলেছেন “ওরা সকলেই সমান” [সহীহ
মুসলিম ১৫৯৭]
.
সুদের ৭৩ টি অপকারিত রয়েছে। তন্মধ্যে
সর্বনিম্ন হল আপন মায়ের সাথে জিনা/
ব্যভিচার করা। [সুনান ইবন মাজাহ : ২২৭৪
{হাসান হাদীস (দারুস সালাম)। সোর্স:
Sunnah.com}]
.
রাসূল বলেন, “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক
বস্তু থেকে বেচে থাকো।” সাহাবীগণ
বললেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল! সেগুলো
কী?” তিনি উত্তরে বললেন, “আল্লাহ্র
সাথে শিরক করা,জাদু করা,অন্যায়ভাবে
কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ্ হারাম
করেছেন, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ গ্রাস
করা, যুদ্ধের সময় পলায়ন করা, সতী-সাধ্বী
নিরীহ ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ
আরোপ করা।” [সহীহ আল বুখারী : ৬৮৫৭]
.
আল্লাহ্র রাসূল যে ব্যক্তি সুদ নেয় ও যে
ব্যক্তি সুদ দেয়, তাদের অভিশাপ
দিয়েছেন [সহীহ মুসলিম : ১৮:১০৫]
.
আল্লাহ্র রাসূল বলেন, এমন একটি সময়
আসবে, যখন সুদ খাবেনা এমন কেউ
থাকবেনা, আর কেউ যদি সুদ নাও খায়, তবু
এর ধূলোবালি থেকে রক্ষা পাবে না।
[ইবন মাজাহ, আবু দাউদ, আল জামি’আল
আসগার {সুয়ুতী, পৃষ্ঠা ৭৫৩১ : সহীহ (সোর্স:
hdith.com)}]
.
রাসূল [ ﷺ] এর হাদীস
থেকেও দেখা যাচ্ছে সুদের হারাম হবার
কথা। উল্লিখিত সহীহ হাদীসগুলো ছাড়াও
আরো অসংখ্য হাসান পর্যায়ের ও কিছু
দুর্বল বর্ণনার হাদীসও রয়েছে, যাতে
বর্ণিত হয়েছে সুদের ভয়ানক পরিণতির
কথা। কোনটায় আল্লাহ্র রাসূল
[ ﷺ] বলেছেন তিনি
মিরাজের সময় সুদখোরদের পেটে সাপ
কিলবিল করতে দেখেছেন, কোনটায়
তিনি বলেছেন একজন মুসলিমের এক
দিরহাম সুদ গ্রহণ করা ৩৩ বা ৩৬ বার
ব্যভিচার/জিনা করার চাইতেও জঘন্য।
.
ইসলাম ও সুদ
কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনার
মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, কোন
মুসলিমের পক্ষে সুদকে হালাল ভাবার
কোন সম্ভাবনা ও সুযোগ নেই। ইসলামে
অত্যন্ত জঘন্য একটি স্থান দখল করে আছে
সুদ। ভেবে দেখুন, কেউ তার জন্মদাত্রী
মায়ের সাথে ব্যভিচার করতে পারে কি?
সম্ভব? অথচ সুদ খাওয়ার ৭৩ টি গুনাহ এর
সর্বনিম্ন গুনাহ হল সেই ব্যক্তির গুনাহ এর
সমান, যে তাঁর জন্মদাত্রী মায়ের সাথে
জিনা করে।
.
ভেবে দেখুন তো, কেউ একই দিনে ৩৬ বার
জিনা করে ফেলেছে! কতটা ভয়ংকর হতে
পারে তার গুনাহ? তার শাস্তি? অথচ এক
দিরহাম সুদ গ্রহণকে ৩৬ বার জিনা করার
চাইতেও জঘন্যতর আখ্যা দেয়া হয়েছে।
তাহলে আমাদের কি এতটুকু সতর্ক হবার
প্রয়োজন নেই? আমাদের কি এতটুকু ভীত
হবার দরকার নেই? আমাদের এতটুকু চিন্তা
করার অবকাশ নেই যে আমরা সুদকে
কীভাবে নিচ্ছি?
.
আসুন আমরা নিজেদের চারটি প্রশ্ন করি।
– আমরা কি সুদ নিচ্ছি?
– আমরা কি সুদ দিচ্ছি?
– আমরা কি সুদী কারবার লিখে রাখছি?
– আমরা কি সুদী কারবারে সাক্ষী
থাকছি/ভূমিকা রাখছি?
এই চার শ্রেণীর মানুষকেই আল্লাহ্র রাসূল
[ ﷺ] অভিশাপ দিয়ে বলেছেন
এরা সবাই একই গুনাহগার!
.
আমরা অনেকেই হয়তো নামায পড়ি,
রোজা রাখি, কুরআন পাঠ করি, চেষ্টা
করি হারাম কিছু না করতে, অথচ ঠিকই
এমন ভাবে সুদী কারবারে জড়িয়ে পড়ছি,
যেন এটা কোন বিষয়ই নয়! অথচ যে ব্যক্তি
হারাম উপার্জন করে তা দিয়ে উদরপূর্তি
করে, তার দু’আ কিংবা ইবাদাত কবুলই হয়
না! রাসূলাল্লাহ [ ﷺ] বলেন,
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি
শুধু পবিত্র বস্ত্তই গ্রহণ করেন। তিনি
মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে
আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের।’’
আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘‘হে ইমানদারগণ!
তোমরা পবিত্র বস্ত্ত-সামগ্রী আহার কর,
যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে
দান করেছি।’’ অতঃপর রাসূল সা. এমন এক
ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ
সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও
ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে
আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত
তুলে প্রার্থনা করে ডাকছেঃ হে আমার
প্রভূ! হে আমার প্রভূ! সে যা খায় তা
হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা
পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের
দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার
প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে?’’
[সহীহ মুসলিম : ১০১৫]
.
আর যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে উঠে
তার জন্য দোযখের আগুনই উত্তম। [জামি’
আত তিরমিদি : ৬১৪ {হাসান হাদীস: দারুস
সালাম (সোর্স: Sunnah.com)} ]
.
স্কলারদের মতে যে শরীর হারাম
উপার্জনে পুষ্টি লাভ করে, সে শরীর
আল্লাহ্র নিকট অপবিত্র। ফলে তাঁর ইবাদত
কী উপায়ে কবুল করে পারে? স্পষ্টতই
সুদের ব্যাপারে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল
[ ﷺ] অত্যন্ত কঠোর নীতি
অবলম্বন করেছেন। যে ব্যক্তি সুদের সাথে
সম্পর্ক রাখে, আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন সে
ব্যক্তি আল্লাহ্ ও রাসূলুল্লাহর
[ ﷺ] সাথে সরাসরি যুদ্ধ
ঘোষণা করে। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের
মুসলিম কখনই আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের
[ ﷺ] সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করার
কথা সুদূর কল্পনাতেও আনবেন না। কিন্তু
সুদী কারবারে লিপ্ত হয়ে অনেকেই
প্রতিনিয়ত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের
[ ﷺ] বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
করছেন। একজন মুসলিমের কাছে আল্লাহ্র
আদেশ ও নিষেধের বাইরে কোন কিছুই
বলার থাকে না, কোন কিছুই করার থাকে
না। একজন মুসলিম সেটাই মেনে নেবে যা
আল্লাহ্ আদেশ করেছেন। আর সেখান
থেকেই দূরে থাকবে যা আল্লাহ্ নিষেধ
করেছেন। আল্লাহ্ বলেন,
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের
আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও
ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা
নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ
অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায়
পতিত হয়।” [সূরাহ আল আহযাব : আয়াত ৩৬]
.
অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল
[ ﷺ] যখন কোন বিষয়ে স্পষ্ট
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন, তখন মু’মিন
পুরুষ ও নারী কারোরই কোন এখতিয়ার নেই
সেখানে দ্বিমত পোষণ করার।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’লা সুদকে
হারাম করেছেন তো আমরাও মেনে নেব।
কোন প্রশ্ন ছাড়া। কোন তর্ক ছাড়া।
আল্লাহ্ মুসলিমদের পরিচয় কুরআনে
এভাবেই দিয়েছেন,
তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম।
[সূরাহ নূর : আয়াত ৫১]
.
আল্লাহ সর্বজ্ঞানী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top