মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সুরা ফাতিহা, আমাদেরকে যা শেখানো হয় নি

কোন মন্তব্য নেই:

সুরা ফাতিহা, আমাদেরকে যা শেখানো হয় নি
.
.
আমাদের নবী মুহম্মদ ﷺ
যখন ১৪০০ বছর আগে অমুসলিম
আরবদেরকে কু’রআন তিলাওয়াত করে
শোনাতেন, তখন তা শুনে আরবদের দুই
ধরনের প্রতিক্রিয়া হতোঃ
.
কি অসাধারণ কথা! এভাবে তো আমরা
কখনও আরবি ব্যবহার করার কথা ভেবে
দেখিনি! এত অসাধারণ বাক্য গঠন, শব্দ
নির্বাচন তো আমাদের সবচেয়ে বিখ্যাত
কবি সাহিত্যিকরাও করতে পারে না! এমন
কঠিন বাণী, এমন হৃদয় স্পর্শী করে
কেউতো কোনো দিন বলতে পারেনি! এই
জিনিস তো মানুষের পক্ষে তৈরি করা
সম্ভব নয়! এটা নিশ্চয়ই আল্লাহর ﷻ
বাণী! আমি সাক্ষি দিচ্ছি – লা ইলাহা ইল্লালাহ…
অথবা,
সর্বনাশ, এটা নিশ্চয়ই যাদু! এই জিনিস
মানুষের পক্ষে বানানো সম্ভব না। এটা
তো মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি কোনো দৈব
বাণী। কিন্তু এই জিনিস আমি মেনে
নিলে তো আমি আর মদ খেতে পারবো না,
জুয়া খেলতে পারবো না, আমার
দাসগুলোর সাথে যা খুশি তাই করতে
পারবো না। এরকম করলে তো আমার
পরিবার এবং গোত্রের লোকরা আমাকে
বের করে দিবে। আমার মান–সন্মান,
সম্পত্তি সব পানিতে চলে যাবে। এই
জিনিস যেভাবেই হোক আটকাতে হবে।
দাঁড়াও, আজকেই আমি আমার দলবল নিয়ে
এই লোকটাকে…
কু’রআন তিলায়াত শোনার পর হয় মানুষ
এর সত্যতা উপলব্ধি করে সত্য ধর্ম
খুঁজে পাবার উপলব্ধি থেকে সাথে
সাথে মুসলমান হয়ে যেত, অথবা তারা
এর সত্যতা উপলব্ধি করে বুঝতো যে,
তাদের জীবন পুরাপুরি পালটিয়ে
ফেলতে হবে এবং সেটা তারা
কোনোভাবেই করবে না, সুতরাং
যেভাবেই হোক কু’রআনের প্রচারকে
বন্ধ করতে হবে। কু’রআনের বাংলা বা
ইংরেজি অনুবাদ পড়ে কখনও আপনার
এরকম কোনো প্রতিক্রিয়া হয়েছে?
কু’রআনের বাণীর যে অলৌকিকতা,
ভাষাগত মাধুর্য রয়েছে – তা সুরা
ফাতিহা দিয়ে শুরু করি। ফাতিহার
প্রতিটি আয়াত এবং শব্দের যে কত
ব্যাপক অর্থ রয়েছে, আল্লাহর
ﷻ প্রতিটি শব্দ নির্বাচন যে কত
সুক্ষ, আয়াতগুলো যে কত সুন্দর ভাবে
ভারসাম্য রক্ষা করে তৈরি করা – তা
তুলে ধরার চেষ্টা করবো। এগুলো
জানার পড়ে আপনি যখন নামাযে সুরা
ফাতিহা পরবেন, তখন সেই পড়া এবং
এখন যেভাবে পড়েন সেটার মধ্যে
আকাশ পাতাল পার্থক্য হবে – ইনশাআ আল্লাহ।
[সুরা ফাতিহার আয়াতের বাংলা অনুবাদ
মুহসিন খানের অনুবাদ থেকে নেওয়া]
.
.
সুরা ফাতিহা
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
বিসমিল্লাহির রাহমা-নির রাহি-ম –
শুরু করছি আল্লাহর
ﷻ নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি দয়ালু
যদিও আয়াতটির প্রচলিত অনুবাদে
বলা হয় “শুরু করছি আল্লাহ্র নামে…”,
কিন্তু বিসমিল্লাহতে কোনো “শুরু
করছি” নেই। এর অনুবাদ হবে শুধুই
“আল্লাহ্র নামে।” এখানে আল্লাহ
ﷻ আমাদেরকে ‘শুরু করছি’ না
বলে বিসমিল্লাহ এর প্রয়োগকে আরও
ব্যাপক করে দিয়েছেন। আমরা
‘আল্লাহ্র নামে’ শুধুই শুরু করি না, বরং
পুরো কাজটা করি আল্লাহর ﷻ
নামে এবং শেষ করি আল্লাহ্র
ﷻ নামে। আপনি বিসমিল্লাহ
বলে খাওয়া শুরু করলেন, কিন্তু যদি
খাবারটা কেনা হয়ে থাকে হারাম
রোজকার থেকে, তখন সেটা আল্লাহ
ﷻ নামে খাওয়া হল না। আপনি
বিসমিল্লাহ বলে একটা ফাইল নিলেন
সই করার জন্য এবং সই করে অন্যদিকে
তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন ঘুষ
নেবার জন্য, তাহলে সেটা আর
আল্লাহ্র নামে সই করা হল না।
একইভাবে আপনি বিসমিল্লাহ বলে
পরীক্ষা দিতে বসলেন, তারপর একটু
পরেই পাশের জনেরটা দেখে নকল
করা শুরু করলেন, আপনার বিসমিল্লাহ
তখন বাতিল হয়ে গেল। আল্লাহ্ যেটুকু
বরকত দিতেন আপনার কাজে, সেটা
চলে গেল।
.
যেহেতু বিসমিল্লাহ অর্থ শুধুই শুরু করা
নয়, তাই আমরা শুধু কোনো কিছু শুরু
করার জন্যই বিসমিল্লাহ বলব না,
আরও অনেক উদ্দেশেই বিসমিল্লাহ
বলা যাবে। এছাড়াও আরবি ‘বি’ এর
অনেকগুলো অর্থ হয়, যেমন ‘সাথে’,
‘দিয়ে’, ‘জন্য’, ‘উদ্দেশে’, ‘সাহায্যে’
ইত্যাদি। বাংলা বা ইংরেজিতে এমন
একটি শব্দ নেই যা একসাথে এতগুলো
অর্থ বহন করে। সুরা ফাতিহার প্রথম
আয়াতের প্রথম শব্দের প্রথম অংশটিই
আমাদেরকে দেখিয়ে দেয় যে,
কু’রআনের অনুবাদ করলে মুল আরবির
ভাবের কতখানি ভাব হারিয়ে যায়।
আমরা যদি বিসমিল্লাহকে অনুবাদ
করতে যাই ‘বি’ এর অর্থগুলোকে
একসাথে করে, তাহলে শুধুই
বিসমিল্লাহের অর্থ দাঁড়াবেঃ
আল্লাহ্র নামের উদ্দেশে, আল্লাহ্র
নামের জন্য, আল্লাহ্র নামের সাথে,
আল্লাহ্র নামের সাহায্যে, …
বিসমিল্লাহ বলার সময় অবস্থা
অনুসারে এই অর্থগুলোর একটি বা
একাধিক নিজেকে মনে করিয়ে
দিবেন।
.
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সুরা ফাতিহার এই
প্রথম আয়াতে ‘আল্লাহ্র নামে’ কি?
আল্লাহ ﷻ কিন্তু এই আয়াতে
বলেননি যে, ‘আল্লাহ্র নামে
তিলাওয়াত শুরু করছি’ বা ‘আল্লাহ্র
নামে এই কু’রআন’ বা ‘আল্লাহ্র নামে
তোমরা কু’রআন পড়।’ তিনি ‘কি করছি’
তা না বলে বিসমিল্লাহ-এর
প্রয়োগকে অবাধ করে দিয়েছেন। এর
মানে দাঁড়ায় – যে কোনো হালাল
কিছুতেই “বিসমিল্লাহির রাহমা-নির
রাহি-ম” ব্যবহার করা যাবে।
বিসমিল্লাহ কোনো নতুন কিছু নয়। নুহ
ﷺ কে আল্লাহ ﷻ
তার জাহাজে উঠার সময় বলেছিলেন,
ﺍﺭْﻛَﺒُﻮﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ “আরোহণ কর
আল্লাহ্র নামে…”(১১:৪১) সুলায়মান
ﷺ যখন রানী শিবাকে
বাণী পাঠিয়েছিলেন, তখন তা শুরু
হয়েছিল “বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম” দিয়ে (২৭:৩০) এই দুটি আয়াত
থেকে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে
শেখাচ্ছেন – আমরা যখন কোনো
যাত্রা শুরু করবো, বা কোনো দলিল
বা চিঠি লিখব, তখন আমরা যেন
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
বলে শুরু করি।
.
এর পরে আসে আররাহমা-ন এবং
আররাহি-ম। এই শব্দ দুটির অর্থ অদ্ভুত
সুন্দর, যা আমি আপনাদেরকে তৃতীয়
আয়াত ব্যাখ্যা করার সময় বলবো। এখন
শুধুই বলি আররাহমা-ন অর্থ ‘পরম দয়ালু’
এবং আররাহি-ম অর্থ ‘নিরন্তর দয়ালু।’
.
সুতরাং এই প্রথম আয়াতটির শুদ্ধত্বর
অনুবাদ হবেঃ
পরম দয়ালু, নিরন্তর দয়ালু আল্লাহ্র নামে
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল
আ’লামি-ন
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ
ﷻ তা’আলার যিনি সকল
সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা
প্রথমত, অনুবাদ পড়ে মনে হয় যেন
আমরা আল্লাহর ﷻ প্রশংসা
করছি। যেমন আপনি কাউকে বলেন –
“আপনি অনেক ভালো”, সেরকম
আমরাও আল্লাহকে ﷻ বলছি যে
সমস্ত প্রশংসা তাঁর। কিন্তু ব্যপারটা
তা নয়। “আলহামদু লিল্লাহ” কোনো
ক্রিয়া বাচক বাক্য নয়, এটি একটি
বিশেষ্যবাচক বাক্য। সহজ বাংলায়
বললে, এখানে কোনো কিছু করা
হচ্ছে না বরং কোনো সত্যের
পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। যেমন আমরা
যখন বলি, “আকাশ নীল” − তখন আমরা
কোনো একটি সত্যের পুনরাবৃত্তি
করছি। আমরা কিন্তু প্রশংসা করে
বলছি না − “আহা! আকাশ, তুমি কত
নীল।” আকাশ সবসময়ই নীল, সেটা
আমরা বলি, আর না বলি। আমরা সবাই
যদি “আকাশ নীল” বলা বন্ধ করেও
দেই, আকাশ নীলই থাকবে। ঠিক একই
ভাবে আলহামদু লিল্লাহ অর্থ
“আল্লাহর ﷻ সমস্ত প্রশংসা”,
সেটা আমরা বলি আর না বলি, সমস্ত
প্রশংসা ইতিমধ্যেই আল্লাহর। যদি
কেউ আল্লাহর ﷻ প্রশংসা নাও
করে, তারপরেও তিনি স্ব-প্রশংসিত।
পৃথিবীতে কোনো মানুষ বা জ্বিন না
থাকলেও এবং তারা কেউ আল্লাহর
ﷻ প্রশংসা না করলেও, সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর ﷻ ছিল,
আছে এবং থাকবে। বরং এটা
আমাদের জন্যই একটা বিরাট সন্মান
যে আমরা আল্লাহর ﷻ প্রশংসা
করার সুযোগ পাচ্ছি।
সুরা ফাতিহার এই আয়াতটির বাক্য
গঠন দিয়েই আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে তাঁর অবস্থান কত উপরে
এবং আমাদের অবস্থান কত নিচে −
তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি
আমাদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে,
তিনি ইতিমধ্যেই প্রশংসিত, আমাদের
ধন্যবাদ এবং প্রশংসা তাঁর দরকার
নেই। তাহলে কেন আমাদের আল্লাহ্র
ﷻ প্রশংসা করা দরকার?
আল্লাহ্র ﷻ প্রশংসা করলে
আমাদের কি লাভ হয়?
গত বছর টাইম ম্যাগাজিনের নভেম্বর
সংখ্যায় একটি আর্টিকেল বের
হয়েছে কৃতজ্ঞতার উপকারিতার
উপরে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০০৩
সালে ২৬১৬ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের
উপরে গবেষণা করে দেখা গেছে,
যারা অপেক্ষাকৃত বেশি কৃতজ্ঞ,
তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ,
দুশ্চিন্তা, অমূলক ভয়-ভীতি,
অতিরিক্ত খাবার অভ্যাস এবং মদ,
সিগারেট ও ড্রাগের প্রতি আসক্তির
ঝুঁকি অনেক কম। আরেকটি গবেষণায়
দেখা গেছে মানুষকে নিয়মিত আরও
বেশি কৃতজ্ঞ হতে অনুপ্রাণিত করলে,
মানুষের নিজের সম্পর্কে যে
হীনমন্যতা আছে, নিজেকে ঘৃণা করা,
নিজেকে সবসময় অসুন্দর, দুর্বল,
উপেক্ষিত মনে করা ইত্যাদি নানা
ধরণের সমস্যা ৭৬% পর্যন্ত দূর করা
যায়।
.
২০০৯ সালে ৪০১ জন মানুষের উপর
গবেষণা করা হয় যাদের মধ্যে ৪০% এর
ক্লিনিকাল স্লিপ ডিসঅর্ডার অর্থাৎ
জটিল ঘুমের সমস্যা আছে। তাদের
মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ,
তারা বেশি ঘুমাতে পারেন, তাদের
ঘুম নিয়মিত হয়, রাতে তাড়াতাড়ি
ঘুমিয়ে পড়েন এবং দিনের বেলা
ক্লান্ত-অবসাদ কম থাকেন।
নিউইয়র্কের Hofstra University
সাইকোলজির অ্যাসিস্ট্যান্ট
প্রফেসর ডঃ জেফ্রি ফ্রহ ১০৩৫ জন
১৪-১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর উপর
গবেষণা করে দেখেছেন যে, যারা
বেশি কৃতজ্ঞতা দেখায়, তাদের
পরীক্ষায় ফলাফল অপেক্ষাকৃত বেশি
ভালো, সামাজিক ভাবে বেশি
মেলামেশা করে এবং হিংসা ও
মানসিক অবসাদে কম ভোগে।
Wall Street Journal একটি
আর্টিকেলে বলা হয়েছেঃ
Adults who frequently feel grateful have
more energy, more optimism, more social
connections and more happiness than
those who do not, according to studies
conducted over the past decade. They’re
also less likely to be depressed, envious,
greedy or alcoholics. They earn more
money, sleep more soundly, exercise more
regularly and have greater resistance to
viral infections.
.
এবার বুঝতে পারছেন কেন আল্লাহ্
ﷻ আমাদেরকে প্রতিদিন ৫
ওয়াক্তে কমপক্ষে ১৭ বার বলতে
বলেছেনঃ
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন –
সমস্ত প্রশংসা এবং ধন্যবাদ আল্লাহ্র
যিনি সৃষ্টি জগতের প্রভু। [ফাতিহা ১:২]
.
এখন, আরবিতে প্রশংসার জন্য অনেক
শব্দ আছে, যেমন মাদহ্, ছানাআ, শুকর।
কিন্তু আল্লাহ ﷻ সেগুলো
থাকতে কেন হামদ শব্দটি বেছে
নিলেন?
হামদ শব্দটি একটি বিশেষ ধরণের
প্রশংসা। আরবিতে সাধারন
প্রশংসাকে মাদহ ﻣﺪﺡ বলা হয়।
এছাড়াও সানাআ ﺛﻨﺎﺀ অর্থ গুণগান।
শুকর ﺷﻜﺮ অর্থ ধন্যবাদ দেওয়া। কিন্তু
হামদ অর্থ একই সাথে ধন্যবাদ দিয়ে
প্রশংসা করা, যখন আপনি কারো গুণে
মুগ্ধ। আপনি কারো কোনো বিশেষ
গুণকে স্বীকার করে তার মুল্যায়ন
করার জন্য হামদ করেন। হামদ করা হয়
ভালবাসা থেকে, শ্রদ্ধা থেকে,
নম্রতা থেকে। এছাড়াও হামদ করা হয়
যখন কারো কোনো গুণ বা কাজের
দ্বারা আপনি উপকৃত হয়েছেন।
আল্লাহর ﷻ অসংখ্য গুণের জন্য
এবং তিনি আমাদেরকে যে এত অসীম
নিয়ামত দিয়েছেন, যা আমরা
প্রতিনিয়ত ভোগ করি, তার জন্য
তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁর প্রশংসা
করার জন্য হামদ সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দ।
যদি আয়াতটি হতো আল-মাদহু
লিল্লাহ – “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর”
– তাহলে কি ক্ষতি হতো? মাদহ অর্থ
যদিও প্রশংসা, কিন্তু মাদহ একই
সাথে বস্তু এবং ব্যক্তির জন্য করা
যায়। যেমন আপনি বলতে পারেন,
“গোলাপ ফুল খুব সুন্দর।” কিন্তু হামদ
শুধুমাত্র বুদ্ধিমান, ব্যক্তিত্ববান
সত্ত্বার জন্য প্রযোজ্য।
যদি আয়াতটি হতো আছ-ছানাউ
লিল্লাহ – “সমস্ত গুণগান/মহিমা
আল্লাহর” – তাহলে কি ক্ষতি হতো?
ছানাআ হচ্ছে শুধুই কারো কোনো
গুণের প্রশংসা করা, যা খুবই
সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে কোনো কৃতজ্ঞতা
নেই। আমরা শুধুই আল্লাহর ﷻ
গুণের প্রশংসা করি না। আমরা আরও
বেশি কিছু করি, যেটা হচ্ছে হামদ।
তাহলে আয়াতটি আশ-শুকরু লিল্লাহ –
“সমস্ত ধন্যবাদ আল্লাহর” – হল না
কেন? আমরা কাউকে ধন্যবাদ দেই শুধুই
যখন কেউ আমাদের কোনো উপকার
করে। আল্লাহর ﷻ বেলায় সেটা
প্রযোজ্য নয়। আমরা আল্লাহর
ﷻ হামদ সবসময় করি। হঠাৎ করে
কোটিপতি হয়ে গেলেও করি, আবার
ক্যানসার ধরা পরলেও করি। এছাড়াও
শুকর করা হয় যখন আপনি কারো কাছ
থেকে সরাসরি উপকার পান। কিন্তু
হামদ করা হয় যখন উপকারটি শুধু
আপানাকে না বরং আরও অনেককে
প্রভাবিত করে। যেমন কেউ আপনাকে
এক গ্লাস পানি এনে দিলো, আপনি
থাকে ‘শুকরান’ বলে ধন্যবাদ দিলেন।
কিন্তু আল্লাহ্ শুধু আপনাকে একগ্লাস
পানিই দেননি, বিশাল সমুদ্র
দিয়েছেন পানি ধারণ করার জন্য, সূর্য
দিয়েছেন যাতে সূর্যের তাপে সেই
পানি বাস্প হয়ে বিশুদ্ধ রূপে মেঘে
জমা হয়, তারপর শীতল বায়ু দিয়েছেন
যাতে সেই মেঘ ঘন হয়ে একসময় বৃষ্টি
হয়, তারপর মাটির ভেতরে পানি
জমার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যাতে
সেই পানি বিশুদ্ধ অবস্থাতেই শত বছর
জমা থাকে এবং সেই বিশুদ্ধ পানি
বের হয়ে আসার জন্য ঝর্ণা, নদী, পুকুর
দিয়েছেন, যাতে আপনি সহজেই সেই
বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেন।
এসবের জন্য আল্লাহকে ﷻ শুধু
‘ধন্যবাদ আল্লাহ্’ বললে সেটা
আল্লাহ্র অবদানকে অনেক ছোট করে
দেখা হবে। সুতরাং শুকর বা ধন্যবাদ
ছোট একটা ব্যপার, এটা আল্লাহর
ﷻ জন্য উপযুক্ত নয়।
ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦ
রাব্বিল আ’-লামি-ন
রব শব্দটির যথার্থ অনুবাদ করার মত
বাংলা বা ইংরেজি শব্দ নেই কারন
রব অর্থ একই সাথে মালিক, সার্বভৌম
ক্ষমতার অধিকারি, সযত্নে পালনকর্তা,
অনুগ্রহ দাতা, রক্ষক । অনেকে এটার
অর্থ শুধুই পালনকর্তা করেন, অনেকে
সৃষ্টিকর্তা করেন, আবার অনেকে
প্রভু করেন। সম্ভবত প্রভু বেশি উপযুক্ত
কারন আমরা যে একজন প্রভুর দাস, তা
একটু পড়েই আসবে।
.
রবের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল রব
আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেন, যেটা
মালিক (রাজা), খালিক (সৃষ্টিকর্তা)
করে না। একজন মালিক তার দাসকে
বলবে, “আমার খাজনা কই?” সেই
খাজনা দাস কিভাবে যোগার করবে
সেটা নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই।
আর একজন খালিক দাসকে সৃষ্টি
করেই খালাস। দাসের বেঁচে থাকার
জন্য যা দরকার, তার পরিপূর্ণ বেড়ে
ওঠার জন্য যে পথনির্দেশ দরকার, তা
দিতে খালিক বাধ্য নয়। একারণে
আল্লাহ ﷻ যখন তাঁকে প্রভু
হিসেবে ঘোষণা করছেন, তখন তিনি
‘রব’ শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন। এই
সুরার একটু পরেই আমরা আমাদের
রবের কাছে পথনির্দেশ চাবো। একজন
দাসের তার প্রভুর কাছ থেকে প্রথম
যেই জিনিসটা চাওয়ার আছে তা হল
তাকে কি করতে হবে। প্রভু যদি
দাসকে না বলে কি করতে হবে,
তাহলে দাস কিভাবে বুঝবে তাকে
কি করতে হবে এবং কি করা যাবে
না?
.
এখন প্রভু-দাস এই শব্দগুলো সম্পর্কে
আমাদের মনে ভালো ধারণা নেই।
প্রভু শব্দটা শুনলেই আমাদের মনের
কোনোায় এক খান্দানি মোচ ওলা
অত্যাচারী জমিদারের ছবি ভেসে
উঠে। আর দাস বলতে আমরা সাধারনত
দুর্বল, না খাওয়া, অভাবী,
অত্যাচারিত মানুষের কথা ভাবি।
আমাদের মনে যেন এধরনের কোনো
ধারণা না আসে, তার জন্য পরের
আয়াতটি আমাদেরকে পরিস্কার করে
দিচ্ছে আল্লাহ ﷻ কি ধরনের
দয়ালু প্রভু।
.
আল-আ’লামি-ন শব্দটির দু’ধরনের অর্থ
হয় – সকল সৃষ্টি জগত এবং সকল জাতি।
আল-আ’লামি-ন শব্দটি আলআ’-লাম
ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ এর বহুবচন, যার অর্থ জগত। এখন
আলআ’-লাম ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ এর দুটি বহুবচন আছে
– আলআ’লামি-ন ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ যার অর্থ সকল
চেতন/বুদ্ধিমান জাতি (মানুষ,
ফেরেশতা, জ্বিন, এলিয়েন, …), আর
আলআ’ওয়া-লিম ﺍﻟﻌﻮﺍﻟﻢ যা আল্লাহ
ﷻ ছাড়া সকল সৃষ্টি জগত, চেতন
বা অচেতন (জড়), দুটোই নির্দেশ করে।
এখন প্রশ্ন আসে, কেন আল্লাহ
ﷻ আলআ’ওয়া-লিম ব্যবহার না
করে, আল-আ’-লামি-ন ব্যবহার
করলেন? তিনি কি সকল চেতন এবং
অচেতন সবকিছুর সৃষ্টি কর্তা নন? সুরা
ফাতিহা হচ্ছে চেতন সৃষ্টির জন্য
একটি পথ নির্দেশ। এই সূরার মাধ্যমে
বুদ্ধিমান সৃষ্টিরা আল্লাহর ﷻ
কাছে পথ নির্দেশ চায় এবং আল্লাহ্র
কাছে নিজেদেরকে সমর্পণ করে।
আপনার গাড়িটির সুরা ফাতিহার
কোনো দরকার নেই কারণ তার
আল্লাহ্র কাছ থেকে পথনির্দেশ
পাবার দরকার নেই। বরং আপনার এবং
আপনার ড্রাইভারের আল্লাহ্র কাছ
থেকে পথনির্দেশ পাওয়াটা বড়ই
দরকার, যাতে করে আপনারা বুঝে
শুনে রাস্তায় একজন বিবেকবান
মানুষের মত গাড়ি চালান।
.
এছাড়াও আভিধানিকভাবে আ’লামি-
ন শব্দটি এসেছে ﻉ ﻝ ﻡ মুল থেকে যার
অর্থ ‘জ্ঞান’, যা দ্বারা কোনো কিছু
জানা যায় অর্থাৎ সৃষ্টি জগত। কারণ
আমরা সবকিছু জানতে পারি সৃষ্টি
জগত থেকে। আমাদের সকল জ্ঞানের
মাধ্যম হচ্ছে সৃষ্টি জগত, যার মাধ্যমে
আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে জ্ঞান
দেন। আর এই সৃষ্টি জগতই আমাদেরকে
সৃষ্টি কর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে
নিশ্চিত করে। একটা মোবাইল ফোন
দেখলে আপনি যেমন নিশ্চিতভাবে
বুঝতে পারেন এটা প্রযুক্তিতে অগ্রসর
কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী বানিয়েছে,
তেমনি আকাশের সূর্য, রাতের
আকাশে লক্ষ কোটি তারা, বিশাল
সমুদ্র, কোটি কোটি প্রজাতির
কীটপতঙ্গ, কোটি কোটি প্রজাতির
গাছ, লক্ষ প্রজাতির মাছ, লক্ষ
প্রজাতির পাখি দেখলে আপনি
বুঝতে পারেন এক অকল্পনীয় জ্ঞানী,
প্রচন্ত ক্ষমতাবান এবং অত্যন্ত
সৃজনশীল একজন সত্ত্বা রয়েছেন,
যিনি এতো কিছু বানাতে পারেন
এবং এতো বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে
পারেন।
.
সুতরাং “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল
আ’লামি-ন” এর বাংলা অনুবাদ হওয়া
উচিতঃ
সকল প্রশংসা, মহিমা এবং ধন্যবাদ
আল্লাহর; তিনি সকল চেতন অস্তিত্বের
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারি, যত্নশীল
প্রভু।
এর পরের অসাধারণ আয়াতটি
আমাদেরকে শেখাবে আল্লাহ
ﷻ কেমন প্রভু।
ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
আররাহমা-নির রাহি-ম
যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও
দয়ালু এই আয়াতে আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে তিনি কেমন প্রভু, তার
এক বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
মাত্র দুটি শব্দের মধ্যে কি ব্যাপক
পরিমাণের তথ্য আছে দেখুন।
.
প্রথমত রাহমা-ন এবং রাহি-ম এই দুটো
শব্দই এসেছে রাহমা থেকে, যার অর্থ
দয়া। আরবিতে রাহমা শব্দটির
আরেকটি অর্থ ‘মায়ের গর্ভ।’ মায়ের
গর্ভে শিশু নিরাপদে, নিশ্চিতে
থাকে। মায়ের গর্ভ শিশুর জীবনের সব
মৌলিক চাহিদার ব্যবস্থা করে দেয়,
শিশুকে আঘাত থেকে রক্ষা করে,
শিশুর বেড়ে উঠার জন্য সব ব্যবস্থা
করে দেয়। শিশুর জন্য সকল দয়ার উৎস
হচ্ছে তার মায়ের গর্ভ।
.
এখন রাহমান এবং রাহিম দুটো শব্দই
এসেছে রাহমাহ থেকে, কিন্তু যেহেতু
শব্দ দুটোর গঠন দুই ধরনের, তাই তাদের
অর্থ দুই ধরণের দয়ার –আররাহমা-ন রাহমা-ন এর শেষে যে একটা টান
আছে – ‘আন’, তা প্রচণ্ডতা নির্দেশ
করে। রাহমান হচ্ছে পরম দয়ালু,
অকল্পনীয় দয়ালু। আল্লাহ ﷻ
তার একটি গুণ ‘আর-রাহমা-ন’ দিয়ে
আমাদেরকে বলেছেন যে, তিনি পরম
দয়ালু, তাঁর দয়ার কথা আমরা কখনও
কল্পনা করতে পারবো না। একজন মা
যেমন তার শিশুর জন্য সবরকম মৌলিক
চাহিদা পূরণ করে, সবরকম বিপদ আপদ
থেকে রক্ষা করে, আল্লাহ ﷻ
তার থেকেও বেশি দয়ার সাথে তাঁর
সকল সৃষ্টিকে পালন করেন, রক্ষা
করেন, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ
করেন। আল্লাহ ﷻ তাঁর অসীম
দয়া দিয়ে প্রকৃতিতে হাজারো
ব্যবস্থা করে রেখেছেন পৃথিবীর
সবধরনের প্রাণীর মৌলিক চাহিদা
পূরণের জন্য। মানুষ হাজার বছর ধরে
নানা ভাবে প্রকৃতির এই ব্যবস্থাগুলো
ধ্বংস করেছে, চরম দূষণ করেছে,
অবাধে গাছ, পশুপাখি নিধন করেছে।
কিন্তু তারপরেও কোটি কোটি প্রাণী
প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে বের হয়
এবং ঠিকই খাবার খেয়ে ঘরে ফিরে।
শুধু ইউরোপেই প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন
গবাদি পশু এবং ৮ বিলিয়ন মুরগি মারা
হয়। তারপরেও আমাদের গবাদি পশু,
হাস-মুরগির কোনো অভাব হয় না।
কারণ আল্লাহ ﷻ পরম দয়ালু।
দ্বিতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন
যে, এটি কোনো কিছু এই মুহূর্তে
হচ্ছে–তা নির্দেশ করে। যেমন আপনি
যদি বলেন – “মুহম্মদ একজন উদার
মানুষ”, তার মানে এই না যে মুহম্মদ এই
মুহূর্তে কোনো উদার কাজ করছে,
কাউকে কিছু দান করছে। কিন্তু
রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, তা
নির্দেশ করে এই মুহূর্তে আল্লাহ
ﷻ অকল্পনীয় দয়ালু। তিনি
আপনাকে, আমাকে, আমাদের
পরিবারকে, সমাজকে, আমাদের
দেশকে, আমাদের ছোট গ্রহটাকে,
আমাদের ছায়াপথের ১০০ কোটি
তারা এবং কোটি কোটি গ্রহকে,
পুরো মহাবিশ্বের ১০০ কোটি
ছায়াপথকে এবং তাদের প্রত্যেকটির
ভিতরে কোটি কোটি তারা এবং
গ্রহকে এবং তাদের মধ্যে থাকা
অসংখ্য প্রাণী জগতকে এই মুহূর্তে,
একই সময়ে, একই সাথে দয়া করছেন।
তৃতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে,
এটি একটি অস্থায়ী ব্যাপার নির্দেশ
করে। একই ধরণের কিছু শব্দ হল
জাওআ’-ন ( ﺟﻮﻋﺎﻥ) যার অর্থ প্রচণ্ড
খুধায় কাতর, আতশা-ন ( ﻋﻄﺸﺎﻥ ) প্রচণ্ড
পিপাসার্ত। এই ধরণের শব্দগুলোর
প্রতিটি একটি অস্থায়ী ধারণা
নির্দেশ করে, যা পরিবর্তন হতে
পারে। যেমন, খাবার খুধাকে দূর করে
দেয়, পানি পিপাসাকে দূর করে দেয়।
ঠিক একই ভাবে আমরা যদি আল্লাহ্র
ﷻ কথা না শুনি, তাহলে আল্লাহ
ﷻ তাঁর রহমতকে আমাদের উপর
থেকে তুলে নিতে পারেন। আল্লাহ্র
ﷻ রহমত যে অস্থায়ী, তা
রাহমা-ন শব্দটির গঠন নির্দেশ করে।
আররাহি-ম রাহি-ম এর শেষে যে একটা টান আছে− ‘ইম’ − সেটা সবসময় হচ্ছে এমন কিছু
নির্দেশ করে। আল্লাহ ﷻ যে
সবসময় দয়ালু, তাঁর দয়া যে কখনও শেষ
হবে না, তা রাহি-ম এর শেষে ‘ইম’ টান
দিয়ে নির্দেশ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, রাহি-ম এর অর্থ এই নয় যে,
তিনি সবার প্রতি সবসময় দয়ালু। এমন
হতে পারে তিনি এই মুহূর্তে কাউকে
তাঁর দয়া দেবার প্রয়োজন মনে
করছেন না, কারন সে আল্লাহ্র
ﷻ দেওয়া সীমা লঙ্ঘন করেছে।
এছাড়াও আল্লাহ ﷻ যদি সবসময়
সবার প্রতি অসীম দয়ালু থাকতেন,
তাহলে আর জাহান্নাম থাকত না বা
কেউ জাহান্নামী হতো না। সুতরাং
আল্লাহ ﷻ রাহি-ম শুধু তাদেরই
প্রতি, যারা তাঁর কথা শোনে।
এই দুটি শব্দ আররাহমা-ন এবং
আররাহি-ম দিয়ে আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে তাঁর দয়ার সম্পর্কে
একটি সম্পূর্ণ ধারণা দিয়েছেন।
.
সুতরাং এই আয়াতের একটি উপযুক্ত
অনুবাদ হবেঃ
তিনি এই মুহূর্তে অকল্পনীয় দয়ালু এবং
তিনি নিরন্তর দয়ালু।
এখন আল্লাহ ﷻ যদি অকল্পনীয়
এবং নিরন্তর দয়ালু হন, তাহলে কি
আমরা যা খুশি তাই করে পার পেয়ে
যাব, কারন তাঁর দয়ার তো কোনো
শেষ নেই? উত্তর হচ্ছেঃ
ﻣَﺎﻟِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ
মা-লিকি ইয়াওমি দ্দি-ন
যিনি বিচার দিনের মালিক
আল্লাহ ﷻ এখানে খুব অল্প কিছু
শব্দ ব্যবহার করে আমাদেরকে বলে
দিয়েছেন যে, যদিও তাঁর করুণা অসীম
কিন্তু তারপরেও আমাদেরকে
আমাদের কাজের বিচার দিতে হবে
এবং বিচারক হবেন স্বয়ং আল্লাহ
ﷻ এবং কেউ আমাদেরকে
সেদিন তাঁর বিচার থেকে রক্ষা
করতে পারবে না এবং কেউ কোনো
কাজে আসবে না। কারন আল্লাহ
ﷻ বিচার দিনের মালিক।
আরবি মালিক শব্দটির দুটো উচ্চারন
রয়েছে, মালিক এবং মা-লিক।
মালিক অর্থ রাজা। মা-লিক অর্থ
অধিপতি। এখানে আল্লাহ ﷻ
লম্বা মা-লিক ব্যবহার করেছেন যার
অর্থ আল্লাহ ﷻ বিচার দিনের
একমাত্র অধিপতি। এই দিন তিনি
ছাড়া আর কারও কোনো ক্ষমতা
থাকবে না। তিনি হবেন সার্বভৌম
ক্ষমতার অধিকারী। যেমন একজন
রাজার হয়তো অনেক বড় রাজত্ব আছে
এবং প্রতিটি প্রজা তার হুকুম শুনে।
কিন্তু একজন প্রজা তার বাড়ির
ভিতরে তার আসবাব পত্রের সাথে কি
করবে, সেটা পুরোপুরি তার ব্যাপার।
এখানে রাজার কিছুই বলার নেই।
প্রজা হচ্ছে তার আসবাবপত্রের মা-
লিক, সে যা খুশি তাই করতে পারে
তার আসবাবপত্র নিয়ে। একই ভাবে
আল্লাহ হচ্ছেন বিচার দিনের মা-
লিক, সেদিন সব ক্ষমতা থাকবে তাঁর।
কেউ তাঁর ক্ষমতার সাথে ভাগ বসাতে
পারবে না।
.
এখন কেন বিচার ‘দিনের’ অধিপতি?
কেন বিচারের অধিপতি নয়? আমরা
যখন বলি – ওই বাড়িটা আমার, তার
মানে সাধারণত দাঁড়ায় ওই বাড়ির
ভেতরে যা কিছু আছে তার সবই
আমার। এমনটা নয় যে বাড়িটা আমার,
কিন্তু বাড়ির ভেতরে সব আসবাবপত্র
অন্য কারো। একইভাবে আল্লাহ
ﷻ যখন বলেন তিনি বিচার
দিনের মালিক, তার অর্থ বিচার
দিনে যা কিছু হবে, তার সব কিছুর
একমাত্র অধিপতি তিনি। বিচার দিন
একটা লম্বা সময় এবং সে দিনে
অনেকগুলো ঘটনা ঘটবে, যার সবকিছুরই
একমাত্র অধিপতি তিনি। তিনি হবেন
একমাত্র জজ। তিনি নিজে
প্রত্যেকের বিচার করবেন, কোনো
উকিল ধরার সুযোগ থাকবে না।
আরবিতে ইয়াওম ﻳَﻮْﻡ এর বেশ কিছু
অর্থ হয় – দিন, যুগ, পর্যায়, লম্বা সময়।
যদিও সাধারণত ‘ইয়াওমি দ্দিন’
সবসময় ‘বিচার দিন’ অনুবাদ করা হয়,
কিন্তু আমরা যদি ইয়াওমের অন্য
অর্থগুলো দেখি তাহলে এটা ‘বিচার
পর্যায়’ অনুবাদ করা যেতে পারে।
বিচার দিন যে আমাদের একটি
দিনের সমান নয় বরং একটা লম্বা
পর্যায়, তা ইয়াওমের বাকি অর্থগুলো
ইঙ্গিত করে।
.
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যপার হল,
কেন আল্লাহ ﷻ এর আগের
আয়াতে তাঁর দয়ার কথা বলার পর এই
আয়াতে শাস্তির কথা না বলে
বিচারের কথা বললেন। এর কারন
হচ্ছে, কিয়ামতের দিন দুই ধরণের
মানুষ থাকবে – যারা আল্লাহ্র
ﷻ রহমত পেয়ে জান্নাতে
যাবে, আর যারা ন্যায় বিচার পেয়ে
জাহান্নামে যাবে। জাহান্নাম
কোনো শাস্তি নয়, সেটি ন্যায়
বিচার। আল্লাহ ﷻ কাউকে
শাস্তি দেন না, তিনি ন্যায় বিচার
করেন। যারা জান্নাত পায়, তারা
আল্লাহ্র অসীম অনুগ্রহের জন্য
জান্নাত পায়, ন্যায় বিচারের জন্য
নয়। সত্যিই যদি আল্লাহ ﷻ
আমাদের ভালো কাজগুলোর ন্যায়
বিচার করতেন, তাহলে আমাদের
সর্বনাশ হয়ে যেত। তখন আপনার আমার
একটা নামাযও সঠিক নামায হতো না,
কারন আমরা নামাযে দাঁড়িয়ে এমন
কিছু নাই যা ভাবি না। আমাদের
একটা রোজাও রোজা হতো না, কারন
আমরা রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলি,
হিন্দি সিরিয়াল দেখি, সুদ খাই,
উল্টো পাল্টা জিনিসের দিকে
তাকাই, আজে বাজে কথা শুনি
ইত্যাদি। আমাদের যাকাত কোনো
যাকাত হতো না, কারন আমাদের
অনেকের যাকাত হচ্ছে লোক
দেখানো একটা ব্যপার, যেখানে
আমরা আমাদের মোট সম্পত্তির
হিসাব যত কম করে করা যায় তা করে,
তার ২.৫% যাদেরকে দিলে লোকমুখে
অনেক নাম হবে, তাদেরকেই বেশি
করে দেই। আমাদের বিরাট সৌভাগ্য
যে আল্লাহ ﷻ আমাদের কিছু
ভালো কাজকে ১০ গুণ, কিছু ভালো
কাজকে ১০০ গুণ, ১০০০ গুণ করে হিসাব
করবেন। তা না হলে কেউ কোনোদিন
জান্নাত পেত না।
.
এখন এই আয়াতটির শব্দগুলোর অর্থকে
যদি ঠিকভাবে তুলে ধরি, তাহলে এর
অর্থ দাঁড়ায়-
বিচার দিনের/পর্যায়ের একমাত্র
অধিপতি।
আমরা এই তিনটি আয়াতে আল্লাহ্র
সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ ধারণা পেলাম।
এখন আমরা জানি আমাদের প্রভু কে।
সুতরাং আমাদের এখন বলা উচিৎ –
ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ
ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা
নাসতা’ই-ন আমরা একমাত্র তোমারই
ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র
তোমারই সাহায্য প্রার্থনা
করি এই আয়াত থেকে শুরু হল আমাদের
চাওয়া। এতক্ষন পর্যন্ত আমরা
আমাদের প্রভুর পরিচয় পেয়েছি। এখন
দাস হিসেবে আমাদের প্রভুর কাছ
থেকে কিছু চাওয়ার পালা। এই
আয়াতেটির অর্থের গভিরতা এবং
বাক্য গঠন অসাধারণ। প্রথমে বাক্য
গঠন দিয়ে শুরু করি।
.
আরবিতে যদি আমরা বলতে চাই,
আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি,
তাহলে তা হবে “না’বুদু ইয়্যা-কা।”
কিন্তু আল্লাহ ﷻ এখানে শব্দ
দুটো উলটিয়ে দিয়েছেন। আরবিতে
এটা করা হয় যখন কোনো কিছুকে
বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়। যেমন
আমরা যদি বলি, “প্রশংসা আপনার”,
তাহলে তার আরবি হবে “হামদুন
লাকা।” কিন্তু আমরা যদি বিশেষ
ভাবে বলতে চাই, “প্রশংসা শুধুমাত্র
আপনারই” তাহলে আমরা উলটিয়ে
বলব, “লাকাল হামদ।” ঠিক একইভাবে
“ইয়্যা-কা না’বুদু” অর্থ “আমরা
একমাত্র আপনার, শুধুই আপনার ইবাদত
করি” এবং “ইয়্যা-কা নাসতা’ই-ন”
অর্থ “আমরা একমাত্র আপনার কাছে,
শুধুই আপনার কাছে সাহায্য চাই।”
এবার আসি শব্দগুলোর অর্থের
গভিরতায়। বেশিরভাগ অনুবাদে
না’বুদুকে ﻧﻌﺒﺪ ইবাদত বা উপাসনা
অনুবাদ করা হয়। সেটি মোটেও না’বুদুর
প্রকৃত অর্থকে প্রকাশ করে না। না’বুদু
এসেছে আ’বদ ﻋﺒﺪ থেকে যার অর্থ
দাস। আমরা শুধুই আল্লাহ্র ﷻ
উপাসনা করি না, আমরা আল্লাহ্র
ﷻ দাসত্ব করি। এমনটি নয় যে
আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়লাম,
রোযা রাখলাম, যাকাত দিলাম –
ব্যাস, আল্লাহ্র ﷻ সাথে
আমাদের সম্পর্ক শেষ। এরপর আমি যা
খুশি তাই করতে পারি। বরং আমরা
সবসময় আল্লাহ্র দাস। ঘুমের থেকে
উঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত
প্রতিটা কাজে, প্রতিটা কথায়
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে – আমরা
আল্লাহ্র ﷻ দাস এবং আমরা যে
কাজটা করছি, যে কথাগুলো বলছি,
তাতে আমাদের প্রভু সম্মতি দিবেন
কিনা এবং প্রভুর কাছে আমি জবাব
দিতে পারবো কি না। এরকম মানুষ
দেখেছেন যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায
মসজিদে গিয়ে পড়ে, কিন্তু
ব্যাংকের একাউন্ট থেকে সুদ খায়,
সুদের লোণ নিয়ে বাড়ি কিনে,
কাউকে ভিক্ষা দেবার সময় বা
মসজিদে দান করার সময় মানিব্যাগে
সবচেয়ে ছোট যে নোটটা আছে সেটা
খোঁজে? বা এরকম মানুষ দেখেছেন
হজ্জ করেছে, বিরাট দাড়ি রেখেছে
কিন্তু বাসায় তার স্ত্রী, সন্তানদের
সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে? এরা
আল্লাহ ﷻ আবদ্ নয় এবং এরা
আল্লাহ্র ﷻ ইবাদত করছে না।
এরা শুধুই উপাসনা করছে। উপাসনার
বাইরে আল্লাহ্র ﷻ প্রতি
নিজেকে সমর্পণ করে দিয়ে আল্লাহ্র
আবদ্ হতে এখনও বাকি আছে।
আরেক ধরণের মানুষ যারা এখনও
আল্লাহ্র ﷻ ইবাদত করা শুরু
করতে পারেনি তারা হল সেই সব মানুষ
যারা ঠিকই নামায পড়ে, রোযা
রাখে, যাকাত দেয়, কিন্তু ছেলে
মেয়ের বিয়ে দেয় হিন্দুদের বিয়ের
রীতি অনুসরন করে গায়ে-হলুদ, বউ-ভাত
করে। আরেক ধরণের মানুষ হল যারা
মসজিদে বা ইসলামিক অনুষ্ঠানে যায়
একদম মুসলিম পোশাক পড়ে, হিজাব
করে, কিন্তু বন্ধু বান্ধব, পাড়া-
প্রতিবেশীর বাসায় বা বিয়ের
অনুষ্ঠানে যায় একেবারে সার্কাসের
মেয়েদের মতো রঙ-বেরঙের
সাজসজ্জা করে। আরেক ধরণের আজব
বান্দা দেখেছি যারা হজ্জ করতে
যায় হিজাব পড়ে, কিন্তু প্লেন সউদি
আরবের সীমানা থেকে বের হয়ে অন্য
এয়ারপোর্টে নামার সাথে সাথে
বাথরুমে গিয়ে হিজাব খুলে ফেলে
আপত্তিকর পশ্চিমা কাপড় পড়ে নেয়।
এদের সবার সমস্যা একটি, এরা এখনও
আল্লাহকে ﷻ প্রভু হিসেবে
মেনে নিতে পারেনি। এদের কাছে
“লোকে কি বলবে” বেশি গুরুত্বপূর্ণ,
কিন্তু “আমার প্রভু কি বলবে” তা
বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আমরা যখন নিজেদেরকে আল্লাহ্র
ﷻ দাস হিসেবে ঘোষণা দিব,
তখনই আমরা আমাদেরকে সত্যিকার
অর্থে স্বাধীন করতে পারবো। যতদিন
সেটা করতে না পারছি, ততদিন আমরা
“লোকে কি বলবে” এর দাস হয়ে
থাকব। ফ্যাশনের দাস হয়ে থাকব।
বিনোদন, সংস্কৃতি, সামাজিকতার
দাস হয়ে থাকব। একমাত্র আল্লাহ্র
প্রতি একান্তভাবে দাসত্ব করতে
পারলেই আমরা এই সব মিথ্যা
“প্রভু”দের দাসত্ব থেকে
নিজেদেরকে বের করে আনতে
পারবো। যারা সেটা করতে
পেরেছেন, তারা জানেন এই
পৃথিবীতে সত্যিকার স্বাধীনতার
স্বাদ কত মধুর!
.
নাস্তা’ই-ন ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ অর্থ যদিও করা হয়
“সাহায্য” কিন্তু নাস্তা’ই-ন এর প্রকৃত
অর্থ হচ্ছে – আপনি অনেক চেষ্টা
করেছেন, আর আপনার পক্ষে সম্ভব
হচ্ছে না, এখন আপনি সাহায্য চান।
যেমনঃ রাস্তায় আপনার গাড়ি নষ্ট
হয়ে গেছে। আপনি একা ঠেলে
পারছেন না। তখন আপনি রাস্তায়
কাউকে অনুরোধ করলেন আপনার
সাথে ধাক্কা দেবার জন্য। এটা হচ্ছে
নাস্তা’ইন। কিন্তু আপনি যদি আরামে
গাড়িতে এসি ছেড়ে বসে থেকে
রাস্তায় কাউকে বলতেন ধাক্কা
দিতে, তাহলে সেটা নাস্তাই’ন হতো
না।
.
আমরা আল্লাহ্র ﷻ কাছে তখনি
সাহায্য চাওয়ার মত মুখ করতে
পারবো, যখন আমরা নিজেরা যথেষ্ট
চেষ্টা করেছি। জীবনে একবার
কু’রআন পুরোটা পড়ে দেখেনি, অথচ
আমরা নামাযে আল্লাহর ﷻ
কাছে চাচ্ছি, “ও আল্লাহ, আমাকে
বেহেশত দেন” – এরকম হাস্যকর কাজ
নাস্তাই’ন নয়। আমরা নিজেরা অনেক
ইসলামের আর্টিকেল পড়ি, বই পড়ি,
লেকচার শুনি, অথচ আত্মীয়স্বজন,
প্রতিবেশীদেরকে ইসলামের কথা
বলতে লজ্জা পাই, কিন্তু আল্লাহ্র
কাছে ঠিকই চাই -“ও আল্লাহ,
আমাকে একজন আদর্শ মুসলমান
বানিয়ে দিন” – এটা নাস্তাই’ন নয়।
এই আয়াতটিতে আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে শুধু তাঁর কাছে সাহায্য
চেতেই বলেন নি, বরং নাস্তা’ইন
শব্দটা ব্যবহার করে আমাদেরকে বলে
দিয়েছেন যে, আমাদেরকে যথাসাধ্য
চেষ্টা করে তারপরে তাঁর কাছে
সাহায্য চেতে হবে।
.
এই আয়াতে একটি লক্ষ করার মত
ব্যপার হল, আল্লাহ ﷻ কিন্তু
বলেন নি, কিসের জন্য সাহায্য চেতে
হবে। তিনি শুধুই বলেছেন সাহায্য
চেতে। ধরুন আপনি সিঁড়ি থেকে
নামতে গিয়ে তিন তলা থেকে
গড়িয়ে, নিচ তলায় এসে মাটিতে মুখ
থুবড়ে পড়ে আছেন এবং আপনার হাত-
পা ভেঙ্গে গেছে। এই অবস্থায় আপনি
কি বলবেন – “ভাই সব, আমি সিঁড়ি
হইতে পড়িয়া গিয়া আমার হাত-পা
ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছি। আপনারা
অনুগ্রহ করিয়া আমাকে সাবধানে
তুলিয়া একটি স্ট্রেচারে করিয়া
নিকটবর্তী পঙ্গু হাসপাতালে লইয়া
যাইবেন এবং একজন ডাক্তারকে
ঘটনা বৃত্তান্ত বলিবেন।” আপনি সেটা
করবেন না, বরং আপনি এক কথায়
বলবেন – “বাচাও!” এক কথাই যথেষ্ট।
ঠিক একইভাবে আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে বলেছেন, আমাদের
অবস্থা বড়ই খারাপ, এখন আমরা একটা
কাজই করতে পারি তা হল বলা,
“আমাদেরকে সাহায্য করুন! আমরা
আর পারছিনা!”
.
সুতরাং এই আয়াতটির শুদ্ধত্বর অনুবাদ
হবেঃ
আমরা একমাত্র আপনার, শুধুই আপনার
দাসত্ব করি, এবং একমাত্র আপনার কাছে,
শুধুই আপনার কাছে অনেক চেষ্টার পরে
সাহায্য চাই।
ﺍﻫْﺪِﻧَﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻘِﻴﻢَ
ইহদিনা-স সিরা-তা’ল
মুসতাকি’-ম আমাদেরকে সরল পথ দেখাও
আমরা আল্লাহ্র কাছে অনেক কিছুই
চেতে পারতাম। যেমন আল্লাহ
ﷻ আমাদেরকে জীবনে সফল
করে দিন, খাঁটি মুসলমান বানিয়ে
দিন, আমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে
দিন ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে শেখাচ্ছেন যে,
আমাদের যা দরকার তা হচ্ছে
পথনির্দেশ। এই পৃথিবীটা আমাদের
জন্য একটি পরীক্ষা এবং এই
পরীক্ষায় সফল ভাবে পাস করার জন্য
আমাদের দরকার পথনির্দেশ। আমরা
স্কুলে শিক্ষকের কাছে যেমন
সাজেশন চেতাম – কোন
চ্যাপটারগুলো পড়তে হবে, কোনগুলো
না পড়লেও হবে, কোন প্রশ্নগুলোর
উত্তর শিখলেই পরীক্ষায় কমন আসবে
– সেরকম আমাদের জীবনের
পরীক্ষায় আমাদের আল্লাহ্র
পথনির্দেশ দরকার।
.
ইহদিনা এসেছে হুদা ﻫﺪﻯ থেকে যার
অর্থ পথনির্দেশ। হুদা অর্থ সম্পূর্ণ,
বিস্তারিত পথনির্দেশ। এটি শুধুই
পথের ইঙ্গিত নয়। যেমন আপনি
কাউকে জিজ্ঞেস করলেন, “ভাই
মতিঝিল কোন দিকে?” সে বলল, “ওই
পূর্ব দিকে।” এই ধরণের পথনির্দেশ
দিয়ে আপনার কোনো লাভ নেই।
কিন্তু সে যদি বলত, “এই রাস্তা ধরে
সোজা গিয়ে প্রথম বায়ে যাবেন,
তারপর তিনটা সিগনাল পার হয়ে
ডানে গেলে যে শাপলা চত্বর দেখতে
পারবেন, সেখান থেকে মতিঝিল শুরু।
চলেন আপনাকে আমি কাকরাইল
পর্যন্ত আগিয়ে দেই।” এটা হল হুদা –
পথনির্দেশ। আমরা আল্লাহ্র কাছ
থেকে পথের ইঙ্গিত চাচ্ছিনা,
বিস্তারিত পথ নির্দেশ চাচ্ছি, সেই
পথে চলার জন্য সাহায্য চাচ্ছি।
আল্লাহ ﷻ আমাদের চাওয়ার এই
উত্তরে ৬২৩৬ টা পথনির্দেশ সহ এক
সম্পূর্ণ কু’রআন দিয়েছেন।
আরেকটি ব্যপার লক্ষ করুন, এই
আয়াতটি এবং আগেরটিতে
“আমাদেরকে”, “আমরা” ব্যবহার করা
হয়েছে। কেন “আমি” ব্যবহার করা
হলনা?
.
একা ইসলামের পথে থাকা খুবই কঠিন।
আপনারা যারা ইসলাম মেনে চলার
যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন, কিন্তু
আপনার পরিবারের বাকি সবাই
ইসলামের ধারে কাছেও নেই,
আপনারা জানেন আপনাদের পক্ষে
ইসলাম মেনে চলাটা কত কঠিন।
প্রতিদিন আপনাকে আপনার
পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে
আপত্তিকর কথা, কাজ, অনুষ্ঠান সহ্য
করতে হচ্ছে, যা আপনাকে প্রতিনিয়ত
কষ্ট দেয়, আপনার মন ভেঙ্গে দেয়।
আর আপনারা যারা অমুসলিম দেশে
আছেন, তারা জানেন এক হালাল
খাবার খুঁজে পাবার জন্য
আপনাদেরকে কত মাইলের পর মাইল
খুঁজে বেড়াতে হয়, জুম্মার নামায
পড়ার জন্য কত সংগ্রাম করতে হয়।
একারনেই আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে সম্মিলিত ভাবে তাঁর
ইবাদত করতে বলেছেন, তাঁর সাহায্য
চেতে বলেছেন এবং তাঁর কাছে
পথনির্দেশ চেতে বলেছেন। যখন
একটি পরিবারের সবাই, সমাজের
সবাই ইসলাম মেনে চলা শুরু করে, তখন
সেই পরিবারের বা সমাজের
প্রত্যেকজন সদস্যর জন্য ইসলাম মেনে
চলাটা অনেক সহজ এবং আনন্দের হয়ে
যায়।
.
সিরা-ত ﺻﺮﺍﻁ শব্দটির অর্থ একমাত্র
সোজা পথ। আরবিতে পথের জন্য আরও
শব্দ আছে যেমন তারিক ﻃﺮﻳﻖ , শারি’
ﺷﺎﺭﻉ , সাবিল ﺳﺒﻴﻞ ইত্যাদি। কিন্তু এই
সব শব্দের বহুবচন হয়, অর্থাৎ একাধিক
পথ হয়। কিন্তু সিরা-ত একটি একবচন
শব্দ এবং এর বহুবচন নেই। যার মানে
দাঁড়ায় – সত্যের পথ একটাই। জীবনের
পরীক্ষায় সফল হবার অনেকগুলো পথ
নেই, একটাই পথ।
ভাষাগত ভাবে সিরা-ত অর্থ সোজা,
চওড়া এবং বিপদজনক পথ। এই
রাস্তাটি এতই সরল এবং সোজা যে,
যারা এই পথে যাচ্ছে, তাদেরকে
সহজেই যে কেউ আক্রমন করতে পারে।
একারনেই আল্লাহ ﷻ যখন
শয়তানকে বলেছিলেন আদমকে
সিজদা করতে এবং সে অবাধ্যতা
করেছিল, তখন তাকে বের করে দেবার
সময় সে বলেছিলঃ
ইবলিস বলেছিল, “যেহেতু আপনি আমাকে
বিপথগামী করলেন, আমি এদের (মানুষ)
সবার জন্য সিরা-তাল মুস্তাকি’মে
ওৎপেতে থাকব”। [৭:১৬]
.
আমরা যারা সিরা-তুল মুস্তাকি’মে
চলার চেষ্টা করবো, আমাদেরকে
শয়তান প্রতি নিয়ত আক্রমণ করবে সেই
পথ থেকে বের করে আনার জন্য।
শয়তান তার বাহিনী নিয়ে সিরা-তুল
মুস্তাকি’মের দুই পাশে ঘাপটি মেরে
আছে এমবুশ করার জন্য। আমরা একটু
অসাবধানী হলেই তারা আমাদের উপর
ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিনিয়ত
আমাদেরকে জীবনের শত প্রলোভন,
কামনা, বাসনা, রাগ, ঘৃণা, অহংকার
থেকে নিজেদেরকে সংযত রেখে খুব
সাবধানে এই পথটি পার করতে
পারলেই আমরা আমাদের গন্তব্য
জান্নাতে পোঁছে যাবো।
.
এখন সিরা-ত যদি সোজা পথ হয়
তাহলে মুস্তাকি’ম অর্থ সরল/সোজা
কেন? এখানে বাড়তি মুস্তাকি’মের
কি দরকার? মুস্তাকি’ম এসেছে ﻗﻮﻡ
থেকে যার অর্থ দৃঢ় ভাবে দাঁড়ানো,
প্রতিস্থিত, সুবিন্যস্ত। মুস্তাকি’ম শুধুই
সরল পথ নির্দেশ করেনা, বরং এটি
এমন একটি পথ যা সুপ্রতিষ্ঠিত এবং
ঊর্ধ্বগামী। আমরা এই পথে যত
আগাবো, আমরা তত উপরে উঠবো, তত
আল্লাহ্র কাছাকাছি হব, তত
সন্মানিত হব, কিন্তু একই সাথে সেটা
আমাদের জন্য তত কঠিন হতে থাকবে।
সিরা-তাল মুস্তাকি’-ম আমাদেরকে
উপরের দিকে আল্লাহ্র কাছে নিয়ে
যায়, কিন্তু শয়তান এবং এই দুনিয়ার
কামনা, বাসনা, প্রলোভন
আমাদেরকে নিচের থেকে ক্রমাগত
টেনে ধরে রাখে। আমরা যত সিরা-তুল
মুস্তাকি’মে এগিয়ে যাবো, আমাদের
জন্য আরও সামনে এগিয়ে যাওয়াটা
তত কঠিন হতে থাকবে। আল্লাহ
ﷻ এখানে মুস্তাকি-ম ব্যবহার
করে আমাদেরকে আগে থেকেই
জানিয়ে দিচ্ছেন যে, সফলতার পথ
সহজ নয় এবং এই পথে যত এগিয়ে
যাবো, সেই পথে অবিচল থাকাটা
আমাদের জন্য তত কঠিন হবে। তাই
আমরা যেন যথাযথ মানসিক প্রস্তুতি
নেই।
.
সুতরাং এই আয়াতটির শুদ্ধত্বর অনুবাদ
হবেঃ
আমাদেরকে একমাত্র সঠিক, প্রতিষ্ঠিত,
ঊর্ধ্বগামী, ক্রমাগত কঠিনতর পথের জন্য
বিস্তারিত পথনির্দেশ দিন।
ﺻِﺮَﺍﻁَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻧْﻌَﻤْﺖَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻏَﻴْﺮِ
ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ
সিরা-তা ল্লাযি-না
আনআ’মতা আ’লাইহিম
গা’ইরিল মাগ’দু-বি আ’লাইহিম
ওয়া লা দ্দা—ল্লি-ন
সে সমস্ত লোকের পথ,
যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান
করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের
প্রতি তোমার গজব নাযিল
হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট
হয়েছে এই আয়াতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য
ব্যপার রয়েছে। প্রথমত আল্লাহ
ﷻ বলছেন, তাদের পথ যাদেরকে
তিনি নিয়ামত দিয়েছেন। তিনি
কিন্তু বলেন নি, তাদের পথ যাদেরকে
তিনি নিয়ামত দেন বা দিবেন বা
দিচ্ছেন। এখানে অতীত কাল ব্যবহার
করা হয়েছে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে,
যারা আল্লাহ্র নিয়ামত পেয়েছেন,
তারা অতীত হয়ে গেছেন। কু’রআনের
আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে বহু
ব্যক্তির এবং জাতির উদাহরণ
দিয়েছেন যারা আল্লাহ্র নিয়ামত
পেয়ে সফল হয়েছে। যেমন তিনি
আমাদেরকে ইব্রাহিম ﷺ
এর উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি
আমাদেরকে মুসা ﷺ এর
উদাহরণ দিয়েছেন। আমাদেরকে
মুহাম্মাদ ﷺ এর উদাহরণ
দিয়েছেন। আমাদেরকে তাদের পথ
অনুসরণ করতে হবে। সফল হবার পথের
নিদর্শন আমাদেরকে আগেই দেখিয়ে
দেওয়া হয়েছে। সফল হবার জন্য
কোনো নতুন পথ আর আসবে না। কেউ
যদি আপনাকে কোনো নতুন পথের
সন্ধান দিয়ে বলে এটা হচ্ছে সফল
হবার পথ, তাহলে আপনি তার থেকে
দূরে থাকবেন।
.
এছাড়াও আরেকটি মনে রাখার
ব্যপার হল, আমাদের জন্য যারা
আদর্শ, তারা কেউ এযুগের কোনো
মানুষ নন। আমাদের আদর্শ মানুষরা
অনেক আগেই পৃথিবী থেকে চলে
গেছেন। তাই আমরা যেন এযুগের
কোনো মানুষকে আদর্শ হিসেবে ধরে
তাদের অন্ধ অনুকরণ করা শুরু না করি।
আরেকটি ব্যপার হল, সুরা ফাতিহা
কিন্তু শুধু আমাদেরকেই দেওয়া হয়নি,
বরং সাহাবিদেরকেও দেওয়া
হয়েছিল। সাহাবিদের বেলায় তাহলে
“আনা’মতা আ’লাইহিম” কারা
ছিলেন? নবী মুহম্মদ ﷺ
কে যখন আল্লাহ ﷻ সুরা
ফাতিহা শিখিয়েছিলেন, তখন তার
কাছে অনুসরণ করার মত আদর্শ কারা
ছিলেন? কু’রআনে বহু জায়গায় আল্লাহ
ﷻ নবীকে ﷺ এবং
তার অনুসারিদেরকে (যার মধ্যে
সাহাবারাও পড়েন), আগের নবীদের
ﷺ এবং কিছু সফল জাতির
উদাহরণ দিয়েছেন, যাদেরকে আল্লাহ
ﷻ অনুসরণ করার মত আদর্শ বলে
বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন।
আমরা কু’রআন পড়লেই অনুসরণ করার
মত এমন অনেক আদর্শ খুঁজে পাবো।
কু’রআনে শত শত ঘটনা, কথোপকথন এর
মধ্য দিয়ে আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে সেই আদর্শগুলো
শিখিয়েছেন।
.
ভাষা তাত্ত্বিক দিক থেকে
আনআ’মা এসেছে নুউ’-মা ﻧﻌﻮﻣﺔ থেকে,
যার অর্থ নম্র, শান্ত, শিথিল ইত্যাদি।
যেমন গরু, ভেড়াকে আনআ’ম বলা হয়
কারণ তারা সবসময়ই শান্ত, ধিরস্থির
থাকে। অন্যদিকে বিড়ালকে দেখবেন
সবসময় সতর্ক থাকতে। আল্লাহ
ﷻ এখানে আনআ’মা শব্দটি
ব্যবহার করে আমাদেরকে শেখাচ্ছেন
যে, যারা সিরা-তাল মুস্তাকি’মে
চলে গন্তব্যে পৌঁছে গেছে, তাদের
উপরে আল্লাহ ﷻ শান্তি বর্ষণ
করেছেন। তারা এখন শান্ত, শিথিল।
আয়াতের দ্বিতীয় অংশটি “তাদের পথ
নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল
হয়েছে। ” প্রচলিত এই অনুবাদে একটি
বড় ভুল রয়েছে, যা সাম্প্রতিক
অনুবাদগুলোতে ঠিক করা হয়েছে।
“তোমার গজব” একটি ভুল অনুবাদ কারণ
আরবিতে কোনো “তোমার” নেই, যা
আল্লাহকে ﷻ নির্দেশ করে।
“মাগ’দুবি আ’লাইহিম” আরবিতে
ব্যবহার করা হয় এমন কাউকে নির্দেশ
করতে যার উপর সবাই রেগে আছে।
“মাগ’দুবি” শব্দটির অর্থ “ক্রোধের
শিকার।” যখন এরকম কোনো শব্দ
ব্যবহার করা হয়, যেখানে কে কাজটা
করছে তা বলা থাকেনা, তার মানে
হচ্ছে কাজটা করছে একাধিক জন,
একজন নয়। সুতরাং “তোমার গজব” ভুল
অনুবাদ। বরং শুদ্ধ অনুবাদ হচ্ছে, “যারা
ক্রোধের শিকার হয় না।” আল্লাহ
ﷻ এখানে তাঁর কথা উল্লেখ না
করে এই আয়াতটির অর্থকে অনেক
ব্যপক করে দিয়েছেন। এখানে
আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে সতর্ক
করে দিচ্ছেন যে আমরা যেন নিজের,
পরিবারের, আত্মীয়স্বজনের,
প্রতিবেশীর – সকল মানুষের এবং
অন্যান্য সব সৃষ্টির এবং সর্বোপরি
আল্লাহ্র ক্রোধের শিকার না হই।
আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে সব
ধরণের, সবার ক্রোধের শিকার হতে
মানা করেছেন। মানুষের,
ফেরেশতাদের এবং আল্লাহ্র
ক্রোধের শিকার কারা হয়, তা
কু’রআনের বেশ কিছু আয়াতে
পরিস্কারভাবে বলা আছে এবং সেসব
জায়গায় আল্লাহ ﷻ পরিস্কার
ভাবে তাঁকে উল্লেখ করেছেন। সুরা
ফাতিহাতে তিনি বিশেষভাবে
তাঁকে উল্লেখ করেননি কারণ তাঁর
আমাদের প্রতি নির্দেশ হচ্ছেঃ
আমরা যেন ক্রোধের শিকার না হই,
সেটা নিজের ক্রোধ এবং অন্যর
ক্রোধ, দুটোই।
.
আদ্দ—ল্লি-ন এর অর্থ করা হয় “যারা
পথভ্রষ্ট হয়েছে”, কিন্তু এর অনুবাদ
হওয়া উচিৎ “যারা পথ হারিয়ে
ফেলেছে।” এরা সাধারণত এমন লোক
নয় যারা ইচ্ছা করে পথ হারায়, কারণ
যারা আল্লাহ্র বাণী জেনে শুনে
অস্বীকার করে ভুল পথে চলে, তারা
কাফির, তারা দল্লিন নয়। দল্লিন
তারাই, যারা না বুঝে ভুল পথে আছে।
যেমন ধরুন আপনার দুটো বাচ্চা আছে।
আপনি বড়টাকে বললেন যে, “ফ্রিজে
অনেক চকলেট আছে, কিন্তু আমি না
ফেরা পর্যন্ত তোমরা কেউ ফ্রিজ
খুলবে না।” আপনি ফিরে এসে দেখেন
দুই জনেই মহানন্দে চকলেট খাচ্ছে।
এখন তাদের প্রতি আপনার
প্রতিক্রিয়া কি হবে? বড়টা নিশ্চিত
ভাবে আপনার আদেশ অমান্য করেছে,
এবং ছোটটা না বুঝে ভুল করেছে।
বড়টা হবে আপনার ক্রোধের শিকার,
কিন্তু ছোটটা সেরকম বকা খাবে না।
সুতরাং বড়টা হচ্ছে মাগ’দুবি-র
উদাহরণ এবং ছোটটা হচ্ছে দল্লা-র
উদাহরণ।
.
.
সুরা ফাতিহার কিছু ভাষা তাত্ত্বিক মাধুর্য:
.
১) সুরা ফাতিহার প্রতিটি আয়াত
কবিতার ছন্দের মত শেষ হয় ‘ইম’ বা
‘ইন’ দিয়ে। যেমন প্রথম আয়াত শেষ হয়
রাহি-ম দিয়ে, দ্বিতীয় আয়াত শেষ হয়
আ’লামি-ন দিয়ে, তৃতীয় আয়াত রাহি-
ম, চতুর্থ আয়াত দি-ন।
.
২) সুরাটির মাঝামাঝি যেই আয়াতটি
“ইয়্যা-কা না’বুদু…” এর আগের
আয়াতগুলো হচ্ছে বিশেষ্য বাচক
বাক্য এবং তার পরের আয়াতগুলো
হচ্ছে ক্রিয়া বাচক বাক্য।
.
৩) “ইয়্যা-কা না’বুদু…” এর আগের
আয়াতগুলো হচ্ছে আল্লাহ্র সম্পর্কে
ধারণা। এর পরের আয়াতগুলো হচ্ছে
আল্লাহ্র কাছে আমাদের চাওয়া।
.
৪) সুরা ফাতিহার আয়াতগুলোর
উচ্চারন ক্রমাগত ভারি এবং কঠিন
হতে থাকে। যেমন প্রথম চারটি
আয়াতে দেখবেন সেরকম ভারি শব্দ
নেই। কিন্ত “ইয়্যাকা না’বুদু…” থেকে
ক্রমাগত ভারি শব্দ শুরু হতে থাকে
এবং ক্রমাগত ভারি শব্দ বাড়তে
থাকে। যেমনঃ
ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা
নাসতাই’ন − দুটা ভারি শব্দ।
ইহদিনাস সিরা-তা’ল মুসতাকি’ম −
দুটা ভারি শব্দ।
সিরা-তা’ল্লাযিনা আনআ’মতা
আ’লাইহিম − তিনটা ভারি শব্দ।
গা’ইরিল মাগ’ধুবি আ’লাইহিম ওয়া লা
দ্দ−ল্লি-ন – চারটা ভারি শব্দ।
সুরা ফাতিহার গভীরতর
অর্থানুবাদ
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
বিসমিল্লাহির রাহমা-নির
রাহি-ম অকল্পনীয় দয়ালু, সবসময় দয়ালু
আল্লাহ্র নামে।
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ
আলহামদু লিল্লাহি
রাব্বিল   আ’-লামি-ন
সকল প্রশংসা, মহিমা এবং ধন্যবাদ
আল্লাহর; তিনি সকল চেতন
অস্তিত্বের সার্বভৌম ক্ষমতার
অধিকারি, যত্নশীল প্রভু।
ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ আররাহমা-
নির রাহি-ম অকল্পনীয় দয়ালু, সবসময় দয়ালু।
ﻣَﺎﻟِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ মা-লিকি
ইয়াওমিদ্দি-ন বিচার দিনের/পর্যায়ের একমাত্র
অধিপতি।
ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ ইয়্যা-
কা না’বুদু ওয়া   ইয়্যা-কা
নাসতাই’-ন আমরা একমাত্র আপনার, শুধুই আপনার দাসত্ব করি, এবং একমাত্র আপনার
কাছে, শুধুই আপনার কাছে অনেক
চেষ্টার পরে সাহায্য   চাই।
ﺍﻫْﺪِﻧَﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻘِﻴﻢَ
ইহদিনাস সিরাতা’ল
মুসতাকি’-ম আমাদেরকে একমাত্র সঠিক,
প্রতিষ্ঠিত, ঊর্ধ্বগামী, ক্রমাগত
কঠিনতর পথের জন্য বিস্তারিত
পথনির্দেশ দিন।
ﺻِﺮَﺍﻁَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻧْﻌَﻤْﺖَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻏَﻴْﺮِ
ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ
সিরাতা’ল্লা যি-না
আনআ’মতা   আ’লাইহিম
গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ—
ল্লি-ন তাদের পথ যাদেরকে আপনি
স্বাচ্ছন্দ্য, অনুগ্রহ, কল্যাণ দিয়েছেন,
যারা নিজের এবং অন্যের ক্রোধের
শিকার হয় না এবং ভুল পথে যায় না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top