সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আকীদা তাহাবী

কোন মন্তব্য নেই:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
.
.
প্রখ্যাত হাদীছ বিশারদ, ফকীহ,
আল্লামা আবু জাফর ওয়াররাক আত-
তাহাবী রহ. মিসরে অবস্থান কালে
বলেছিলেন:ফুকাহায়ে মিল্লাত ইমাম আবূ
হানীফা আন-নুমান বিন সাবেত আল কুফী,
ইমাম আবু ইউসুফ ইয়াকুব বিন ইবরাহীম আল
আনসারী এবং ইমাম আবু আব্দুল্লাহ বিন
আল হাসান আশ শায়বানী রাহিমাহুমুল্লাহদের অনুসৃত নীতি অনুসারে এটা হল সাহাবা ও পরবর্তী জামা’আত সলফে সলেহীনদের ‘আক্বীদাহ। এবং
তারা ধর্মের নীতিসমূহের প্রতি যে
‘আক্বীদাহ পোষণ করতেন এবং সে সব
নীতি অনুসারে তারা আল্লাহ রাব্বুল
‘আলামীনের মনোনীত ধর্ম ইসলাম অনুসরণ
করতেন তার বিবরণ।
.
.
মহান আল্লাহর তাওফীক কামনা করে তাঁর
একত্ববাদ সম্পর্কে আমি বলছি :
.
১। নিশ্চয়ই আল্লাহ এক, যাঁর কোন শরীক
(অংশীদার) নেই।
.
২। তাঁর মত কিছুই নেই। (কেউ তাঁর সমতুল্য
নয়)।
.
৩। কিছুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে না
.
৪। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।
.
৫। তিনি অনাদি, যার কোন আদি নেই।
তিনি অনন্ত, যার কোন অন্ত নেই।
.
৬। তাঁর ক্ষয় নেই, ধ্বংস নেই।
.
৭। তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত কোন কিছুই সংঘটিত
হয় না।
.
৮। কল্পনা তাঁর ধারে কাছে পৌঁছে না
এবং ইন্দ্রিয় জ্ঞান তাঁকে উপলব্ধি করতে
পারে না।
.
৯। সৃষ্ট বস্তু তাঁর সদৃশ্য হতে পারে না।
.
১০। তিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই এবং
তিনি চির জাগ্রত, যাঁর নিদ্রার দরকার
নেই।
.
১১। তিনি এমন সৃষ্টিকর্তা যার সৃষ্টিতে
কোন সাহায্যের মুখাপেক্ষী হন না এবং
তিনি অক্লান্ত রিযক দাতা।
.
১২। তিনি নির্ভয়ে প্রাণ সংহারকারী
এবং নির্বিবাদে পুনরুত্থানকারী।
.
১৩। সৃষ্টির বহু পূর্বেই তিনি তাঁর অনাদি
গুণাবলীসহ বিদ্যমান ছিলেন, আর সৃষ্টির
কারণে তাঁর নতুন কোন গুণের সংযোজন
ঘটেনি এবং তিনি তাঁর গুণাবলীসহ যেমন
অনাদি ছিলেন, তেমনি তিনি স্বীয়
গুণাবলীসহ অনন্ত থাকবেন।
.
১৪। সৃষ্টির কারণে তাঁর গুণবাচক নাম
“খালেক” (সৃষ্টিকর্তা) হয়নি। অথবা বিশ্ব
জাহান সৃষ্টির কারণে তাঁর গুণবাচক নাম
“বারী” (উদ্ভাবক) হয়নি।
.
১৫। প্রতিপাল্যের অবিদ্যমানতায়ও তিনি
ছিলেন ‘রব’ বা প্রতিপালক, আর মাখলুক
সৃষ্টির পূর্বেও তিনি ছিলেন ‘খালেক’ বা
সৃষ্টিকর্তা।
.
১৬। মৃতকে জীবন দান করার ফলে তাঁকে
‘জীবনদানকারী’ বলা হয়ে থাকে।
পক্ষান্তরে কোন বস্তুকে জীবন দান করার
পূর্বেও তিনি এই নামের (জীবন
দানকারী) অধিকারী ছিলেন।
অনুরূপভাবে তিনি সৃজন ছাড়াই সৃষ্টি
কর্তার নামের অধিকারী ছিলেন।
.
১৭। এটা এই জন্য যে, তিনি সর্ব বিষয়ে
সর্বশক্তিমান এবং প্রতিটি সৃষ্টিই তাঁর
অনুগ্রহ ভিখারী; সব কিছুই তাঁর জন্য সহজ
তিনি কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নন। “তাঁর
মত কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা,
সর্বদ্রষ্টা।”
.
১৮। তিনি স্বীয় বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে
সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন।
.
১৯। এবং তাদের (সৃষ্ট বস্তুর) জন্য সব
কিছুরই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
.
২০। এবং তাদের জন্য মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট
করেছেন।
.
২১। সৃষ্ট জীবের সৃষ্টির পূর্বে কোন কিছুই
তাঁর অজ্ঞাত ছিল না। জীব জগতের
সৃষ্টির পূর্বেই তাদের সৃষ্টির
পরবর্তীকালের কার্যকলাপ সম্পর্কে
তিনি সম্যক অবহিত ছিলেন।
.
২২। এবং তিনি তাদের স্বীয় আনুগত্যের
আদেশ দিয়েছেন এবং তাঁর অবাধ্যচরণ
হতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
.
২৩। সবকিছু তাঁর ইচ্ছা ও পরিকল্পনার
মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। এবং
একমাত্র তাঁরই ইচ্ছা কার্যকর হয়, এবং
(আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া) বান্দার কোন
ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয় না। অতএব তিনি
বান্দাদের জন্য যা চান তাই হয়, আর যা
চান না তা হয় না।
.
২৪। আল্লাহপাক যাকে ইচ্ছা হিদায়েত,
আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। এটা
তাঁর অনুগ্রহ, পক্ষান্তরে যে পথভ্রষ্ট হতে
চায়, তাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, যাকে
ইচ্ছা তিনি তাকে অপমানিত ও বিপদগ্রস্ত
করেন। এটা তাঁর ন্যায় বিচার।
.
২৫। সব কিছু পরিবর্তিত হয়ে থাকে তাঁর
ইচ্ছায় ও তাঁর অনুগ্রহে এবং সুবিচারের
মাধ্যমে।
.
২৬। তিনি কারও প্রতিদ্বন্দ্বী এবং
সমকক্ষ হওয়ার উর্ধ্বে।
.
২৭। তাঁর মীমাংসার কোন পরিবর্তন নেই।
কেউই তাঁর নির্দেশ বাতিল করার নেই
এবং তাঁর নির্দেশকে পরাভূত করারও কেউ
নেই।
.
২৮। উপরে উল্লিখিত সব কিছুর প্রতিই
আমরা ঈমান এনেছি এবং দৃঢ় বিশ্বাস
স্থাপন করছি যে, এর প্রতিটি বিষয়
আল্লাহর তরফ হতে সমাগত।
.
২৯। নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নির্বাচিত
বান্দা, মনোনীত নবী এবং প্রিয় রাসূল।
.
৩০। তিনি নবীগণের সর্বশেষ,
মুত্তাক্বীনদের ইমাম, রাসূলগণের নেতা
এবং বিশ্বের মহান প্রতিপালকের হাবীব
(বন্ধু)।
.
৩১। তাঁর পরবর্তী যুগে নবুওয়াতের যে সব
দাবী উত্থাপিত হয়েছে, তার সবগুলিই
ভ্রান্ত ও প্রবৃত্তি পরায়ণতার শিকার।
.
৩২। তিনি সত্য, হিদায়েত এবং নূর
সহকারে সকল জিন ও সমস্ত মাখলুকের
প্রতি প্রেরিত।
.
৩৩। নিশ্চয়ই কুরআন আল্লাহর কালাম, ইহা
আল্লাহর নিকট হতে উৎসারিত হয়েছে,
তবে সাধারণ কথা বার্তার পদ্ধতিতে নয়।
এই কালামকে তিনি তাঁর রাসূলের
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি
অহী হিসাবে নাযিল করেছেন এবং
বিশ্বাসীগণ তাঁকে এ ব্যাপারে সত্য বলে
মেনে নিয়েছেন। এবং তারা দৃঢ় বিশ্বাস
করেছেন যে, উহা সত্যিই আল্লাহর
কালাম। উহা মাখলুকের কালামের ন্যায়
সৃষ্ট বস্তু নয়। অতএব, যে ব্যক্তি একথা
শুনেও তাকে মানুষের কালাম বলে ধারণা
করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ
বারী তাআলা তার নিন্দাবাদ করেছেন,
তিরস্কার করেছেন এবং তাকে
জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
যেমন তিনি বলেছেনঃ “শীঘ্রই তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।” (সূরা
মুদদাচ্ছির, ৭৪- ২৬আয়াত) আল্লাহ তাআলা
জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেছেন ঐ
ব্যক্তির জন্য যে বলবেঃ “এটাতো
মানুষের কথা বৈ আর কিছুই নয়”। (সূরা
মাদ্দাচ্ছির ৭৪ -২৫ আয়াত) অতএব, আমরা
অবহিত হলাম এবং বিশ্বাস স্থাপন করলাম
যে, ইহা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তারই কালাম
এবং সৃষ্ট জীবের কালামের সাথে এর
কোন তুলনা হয় না।
.
৩৪। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানবীয়
কোন গুণ আরোপ করে, সে কাফের। অতএব,
(ক) যে ব্যক্তি এতে অন্তঃদৃষ্টি প্রদান
করবে সে হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হবে। ফলে
(আল্লাহ সম্পর্কে) কাফেরদের মত
নিরর্থক কথা বলা হতে বিরত থাকবে এবং
(খ) সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে যে,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর গুণাবলীতে
মানুষের মত নন।
.
৩৫। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত
জান্নাতীদের জন্য সত্য। তার পদ্ধতি
আমাদের অজানা। এ ব্যাপারে কুরআন
ঘোষণা করেছেঃ “সেদিন কতকগুলো
মুখমন্ডল উজ্জল হবে, তারা তাদের
প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে
থাকবে।” (সুরা কিয়ামা: ৭৫- ২২ আয়াত) ।
এর ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহই ভাল
জানেন এবং এ সম্পর্কে যা কিছু সহীহ
হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত
হয়েছে তা অবিকৃত অবস্থায় গৃহীত হবে।
অতএব, এতে আমরা আমাদের বিবেক বুদ্ধি
অনুসারে কোন প্রকার অসঙ্গত তাৎপর্যের
অনুপ্রবেশ ঘটাব না, অথবা স্বীয় প্রবৃত্তির
প্ররোচনায় কোন সংশয় সৃষ্টিকারীর
সংশয়কে প্রশয় দেব না। কারণ, ধর্মীয়
ব্যাপারে একমাত্র সেই ব্যক্তিই পদস্খলন
হতে নিরাপদ থাকতে পারে যে আল্লাহ
এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সম্পর্কে (ভুল ধারণাকারীর
বিভ্রান্তি হতে) নিরাপদ থাকে এবং যে
ব্যক্তি সংশয়যুক্ত ব্যাপার সমূহকে
সর্বজ্ঞানের অধিকারী আল্লাহর উপর
ছেড়ে দেয়।
.
৩৬। আত্ম-সমর্পণ ও বশ্যতা স্বীকার ছাড়া
কারও পা ইসলামের উপর দৃঢ় থাকতে পাবে
না। আর যে ব্যক্তি এমন বিষয়ের জ্ঞান
অর্জনের পিছনে লেগে থাকবে যা তার
জ্ঞানের নাগালের বাইরে এবং যার
বিবেক আত্মা- সমর্পণে সন্তুষ্ট হবে না
সে নির্ভেজাল তাওহীদ, নির্দোষ
মারেফাত ও বিশুদ্ধ ঈমান হতে বঞ্চিত
থাকবে। অতএব, সে কুফরী ও ঈমান সত্য ও
মিথ্যা, স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতি
অনিশ্চয়তার বেড়াজালে ঘুরপাক খেতে
থাকবে। সে না সত্যবাদী মু’মিন হবে, আর
না অস্বীকারকারীরা মিথ্যাবাদী হবে।
.
৩৭। যে ব্যক্তি জান্নাতীদের আল্লাহর
সাক্ষাত সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে,
স্বীয় জ্ঞান অনুসারে সেই সাক্ষাতের
ভুল ব্যাখ্যা দিবে, সে পূর্ণ ঈমানদার হতে
পারবে না। কারণ, আল্লাহর সাথে
সাক্ষাতের প্রকৃত তাৎপর্য্য হচ্ছে- সে
সম্পর্কে কোনরূপ ব্যাখ্যা দেয়ার
অপচেষ্টা না করা এবং উহাকে অবিকৃত
ভাবে গ্রহণ করা। এটাই হচ্ছে মুসলিমদের
অনুসৃত নীতি। যে ব্যক্তি নফী অস্বীকৃতি
এবং তাশবীহ (সাদৃশ্য) হতে আত্মরক্ষা
করবে না তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে
এবং সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা
ঘোষণায় ব্যর্থ হবে। কারণ, আমাদের মহান
প্রতিপালক একক ও নজীরবিহীন হওয়ার
গুণে ¸গুন্বানিত মাখলুকের মধ্যে কেউ তাঁর
গুণে ভূষিত নয়।
.
৩৮। আল্লাহপাক সীমা পরিধি থেকে
মুক্ত। তিনি অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও সাজ-সরঞ্জাম
থেকে মুখাপেক্ষীহীন। অন্যান্য সৃষ্ট বস্তুর
ন্যায় ষষ্ঠ দিক তাঁকে বেষ্টন করে রাখতে
পারে না।
.
৩৯। মি’রাজ সত্য, মুহাম্মদকে নৈশকালে
ভ্রমণ করান হয়েছিল, তাঁকে জাগ্রত
অবস্থায় সশরীরে উর্ধ্ব আকাশে উত্থিত
করা হয়েছিল। সেখান থেকে আল্লাহর
ইচ্ছা অনুসারে আরো উর্ধ্বে নেয়া
হয়েছিল। সেখানে আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছা
অনুসারে তাকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন
এবং তাঁকে যা প্রত্যাদেশ করার ছিল তা
করেছেন। তার অন্তর যা দেখেছিল তা
মিথ্যা নয়। আল্লাহপাক তাঁর নবীর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
প্রতি রহমত বর্ষন করুন।
.
৪০। হাউয-এ কাওসার দ্বারা আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
সম্মানিত করেছেন এবং যা তাঁর উম্মতের
পিপাসা নিবারণার্থে তাঁকে দান
করেছেন। এ বিষয়টি সত্য।
.
৪১। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর শাফাআত, যা তিনি উম্মতের
জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন তা সত্য ।
.
৪২। “মীসাক” (অঙ্গীকার), যা আল্লাহ
তাআলা আদম এবং তাঁর সন্তানদের কাছ
থেকে গ্রহণ করেছেন তা সত্য।
.
৪৩। অনাদিকাল হতে আল্লাহপাক
সার্বিকভাবে জানেন যে, কত লোক
জান্নাতে যাবে আর কত লোক
জাহান্নামে যাবে। এতে ব্যতিক্রম হবে
না। এদের সংখ্যা কমও হবে না, বেশীও
হবে না।
.
৪৪। অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষের
কৃতকর্ম সম্পর্কে পূর্ব হতেই অবহিত এবং
যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে,
সে কাজ তার জন্য সহজ সাধ্য। শেষ কর্ম
দ্বারা মানুষের কৃতকার্যতা বিবেচিত হবে
এবং ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর
ফায়সালায় ভাগ্যবান বলে সাব্যস্ত
হয়েছে। আর হতভাগ্য সেই ব্যক্তি যে
আল্লাহর ফায়সালায় হতভাগ্য বলে
নির্ধারিত হয়েছে।
.
৪৫। “তাকদীর” সম্পর্কে আসল কথা এই যে,
এটা বান্দা সম্পর্কে আল্লাহর একটি
রহস্য। এ রহস্য তাঁর নিকটবর্তী কোন
ফেরেশ্তাও জানেন না অথবা তাঁর কোন
প্রেরিত নবীও অবহিত নন। এ সম্পর্কে তথ্য
আবিস্কার করতে যাওয়া অথবা অনুরূপ
আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া ধৃষ্টতার কারণ,
বঞ্চনার সিঁড়ি এবং সীমা লংঘনের ধাপ।
অতএব সাবধান! এ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা
এবং কুমন্ত্রণা হতে সতর্ক থাকুন। কারণ,
আল্লাহ তাআলা ‘তাকদীর’ সম্পর্কিত
জ্ঞান সৃষ্ট বস্তু হতে গোপন রেখেছেন
এবং এর উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করতে নিষেধ
করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা’আলা
বলেনঃ“তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাঁকে
প্রশ্ন করা হবে না, বরং তারা (তাদের
কৃতকর্ম সম্পর্কে) জিজ্ঞাসিত হবে”।
(সুরা আম্বীয়া ২১- ২৩ আয়াত) অতএব, যে
ব্যক্তি একথা জিজ্ঞেস করবে “তিনি
কেন এ কাজ করলেন?” সে আল্লাহর
কিতাবের হুকুম অমান্য করল। আর যে
ব্যক্তি কিতাবের হুকুম অমান্য করল, সে
কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হল।
.
৪৬। আল্লাহর নূরে জ্যোতিদীপ্ত অলী
আওলিয়াগনও উক্ত বিষয় (অর্থাৎ
তক্বদীরকে অনুরূপভাবে মেনে নেয়ায়)
থেকে মুক্ত নন। এতদ্বারা জ্ঞানে সুগভীর
প্রজ্ঞা বিভূষিত ব্যক্তিদের মর্যাদাই
প্রতিষ্ঠিত হয়। (এ প্রসঙ্গে) উল্লেখ্য যে,
জ্ঞান দু’প্রকার। (১) যে জ্ঞান সৃষ্ট
জীবের নিকট বিদ্যমান। (২) যে জ্ঞান
সৃষ্ট জীবের নিকট অবিদ্যমান।
বিদ্যমানকে অস্বীকারকরাও যেমন কুফরী,
অবিদ্যমান জ্ঞানের দাবী করাও তেমনি
কুফরী। বিদ্যমান জ্ঞানের সাধনা করা,
আর অবিদ্যমান জ্ঞানের আন্বেষান করা
হতে বিরত থাকাই সুদৃঢ় ঈমানের পরিচয়।
.
৪৭। লাওহে মাহফুয এবং তাতে যা কিছু
লিখিত হয়েছে তা আমরা বিশ্বাস করি।
আমরা আরও বিশ্বাস করি কলমের প্রতি।
যা হবে বলে আল্লাহ লওহে মাহফুযে
লিখে রেখেছেন তা হবেই। সমস্ত সৃষ্ট
জীব একত্রিত হয়েও তার কিছু রোধ করতে
পারবে না। পক্ষান্তরে, তাতে যে বিষয়
তিনি লিখেননি, সমস্ত সৃষ্ট জীব একত্রিত
হয়েও তা ঘটাতে পারবে না। যা প্রলয়
দিবস পর্যন্ত ঘটবে তা লিপিবদ্ধ হয়ে
গেছে এবং কলমের কালি শুকিয়ে গেছে।
যা বান্দার ভাগ্যে লিখা হয়নি, তা সে
কখনই পাবে না এবং যা বান্দার নসীবে
লেখা আছে, তা হবেই হবে।
.
৪৮। বান্দার একথা জেনে রাখা উচিত যে,
তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত যাবতীয় ঘটনাবলি
সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ব হতে অবহিত
রয়েছেন। অতএব, তিনি তাকে তাদের জন্য
অকাট্য ও অবিচল ভাগ্য হিসাবে
নির্ধারিত করেছেন। এটাকে কেউ
বানচাল করতে পারবে না, অথবা এর
বিরোধিতাও করতে পারবে না, একে কেউ
অপসারিত অথবা পরিবর্তিতও করতে
পারবে না। আসমান ও যমীনের কোন
মাখলুক একে সংকুচিত কিংবা বর্ধিত
করতে পারবে না। আর এটাই হচ্ছে
ঈমানের দৃঢ়তা, মারেফাতের মূলবস্তু এবং
আল্লাহ তাআলার ওয়াহদানিয়াত ও
রবুবিয়ত সম্পর্কে স্বিকৃতী দান। যেমন
আল্লাহ বারী তাআলা তাঁর গ্রন্থে
ঘোষণা করেছেনঃ “তিনি সকল বস্তু সৃষ্টি
করেছেন এবং তাকে যথাযথ অনুপাত
অনুসারে পরিমিতি প্রদান
করেছেন।” (সূরা আল-ফুরকান ২৫- ৩
আয়াত)।
.
৪৯। আরশ এবং কুরসী সত্য।
.
৫০। আল্লাহ তাআলা আরশ ও অন্যান্য বস্তু
হতে অমুখাপেক্ষী।
.
৫১। তিনি সমস্ত বস্তুকে পরিবেষ্টন করে
রেখেছেন এবং তিনি সব কিছুরই উর্ধ্বে।
সৃষ্টিজগত তাঁকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে
অক্ষম।
.
৫২। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইবরাহীম
আলাইহিস সালামকে খলীল বা বন্ধু
হিসাবে গ্রহণ করেছেন এবং মূসা
আলাইহিস সালাম এর সঙ্গে কথোপকথন
করেছেন। এর পতি আমরা বিশ্বাস রাখি,
উহার সত্যতা স্বীকার করি এবং তার উপর
একান্ত আনুগত্য প্রকাশ করে থাকি।
.
৫৩। আল্লাহর ফেরেশ্তাগন এবং নবীগণের
প্রতি ঈমান রাখি এবং রাসূলগণের প্রতি
প্রেরিত কিতাব সমূহের উপর বিশ্বাস
স্থাপন করি এবং সাক্ষ্য প্রদান করি যে,
তারা প্রকাশ্য সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত
ছিলেন।
.
৫৪। আমাদের ক্বিবলাকে (বায়তুল্লাহ)
যারা ক্বিবলা বলে স্বীকার করে আমরা
তাদেরকে মুসলিম ও মু’মিন বলে আখ্যায়িত
করি যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নবী কর্তৃক
প্রবর্তিত শরীয়তকে স্বীকার করে এবং
তিনি যা কিছু বলেছেন তাকে সত্য বলে
গ্রহণ করে।
.
৫৫। আমরা আল্লাহর সত্ত্বা (জাত)
সম্পর্কে অন্যায় গবেষণায় প্রবৃত্ত হই না
এবং তাঁর দ্বীন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত
হই না।
.
৫৬। কুরআন সম্পর্কে আমরা কোন তর্কে
লিপ্ত হই না এবং সাক্ষ্য প্রদান করি যে,
কুরআন বিশ্ব চরাচরের প্রতিপালক
পরওয়ারদিগারের কালাম। এটা জিবরীল
আমীনের মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছে।
অতঃপর উহা নবীকূল শিরোমণি মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
শিক্ষা দেয়া হয়। ইহা আল্লাহ তাআলার
কালাম, কোন সৃষ্টির কালাম এর সমতুল্য
নয়। আর আমরা একে মাখলুক বলি না এবং
আমরা মুসলিম মিল্লাতের বিরুদ্ধাচরণ
করি না।
.
৫৭। কোন গুনাহর কারণে কোন আহলে
ক্বিবলাকে (মুসলিমকে) কাফির বলে
অভিহিত করি না যতক্ষণ না সে উক্ত
গুনাহকে হালাল (জায়েয) মনে করে।
.
৫৮। আমরা আশা করি যে, সৎকর্মশীল
মু’মিনগণকে আল্লাহপাক ক্ষমা করবেন
এবং স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে জান্নাতে
প্রবেশ করাবেন। আমরা তাদের সর্ম্পকে
নিশ্চিত নই, আর তাদের জান্নাতে
প্রবেশেরও ঘোষণা দান করি না এবং
তাদের গুনাহসমূহের জন্য আল্লাহর নিকট
আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং আমরা
তাদের জন্য আশংকা বোধ করব, কিন্তু
নিরাশ হব না।
.
৬০। নিশ্চিন্ততা ও নৈরাশ্যবোধ একজন
মুসলিমকে মিল্লাতে ইসলামিয়া থেকে
বের করে দেয়। অথচ আহলে ক্বিবলার জন্য
সত্য পথ এতদুভয়ের মধ্যে নিহিত।
.
৬১। আল্লাহ রাব্বুল ইয্যত যে সব বস্তুকে
ঈমানের অংগ করেছেন সে সব বস্তুকে
অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোন বান্দাই
ঈমানের বৃত্ত হতে বের হয় না।
.
৬২। শরীআত এবং উহার ব্যাখ্যা- যা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম হতে সঠিকভাবে প্রাপ্ত, তার
সবগুলো সত্য।
.
৬৪। ঈমান এক। ঈমানদার ব্যক্তিরা প্রকৃত
প্রস্তাবে সবাই সমান, তবে তাদের মধ্যে
মর্যাদার পার্থক্য হয়ে থাকে আল্লাহর
ভয়, তাক্বওয়া, কৃ-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণ
এবং উত্তম বস্তুকে আকড়ে ধরার মাধ্যমে।
.
৬৫। সব মু’মিন দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের অলী এবং তাদের মধ্যে
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশী সম্মানিত
সেই ব্যক্তি যে তাঁর অধিক অনুগত এবং
কুরআনের বেশী অনুসারী।
.
৬৬। ঈমান হচ্ছেঃ আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্তা,
তাঁর গ্রন্থ (আল-কুরআন), তাঁর রাসূল,
ক্বেয়ামাহ দিবস, তাক্বদীরের ভাল মন্দ,
মিষ্টি ও তিক্ত, সবই আল্লাহর তরফ
থেকে- এই সবের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন
করা।
.
৬৭। আমরা উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলোর
প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করি, আমরা
রাসূলদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না।
তাঁরা যে সকল বিধি-বিধান নিয়ে
এসেছিলেন তা সবই সত্য বলে স্বীকার
করি।
.
৬৮। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর উম্মাতের মধ্যে যারা
কবীরাহ গুনাহ করবে তারা জাহান্নামে
যাবে বটে, কিন্তু চিরস্থায়ী হবে না- যদি
তারা একত্ববাদী হযে মৃত্যু বরণ করে, আর
তাওবা নাও করে, কিন্তু ঈমানদার হয়ে
আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করে এবং তারা
আল্লাহর ইচ্ছা ও বিচারের উপর
নির্ভরশীল হয়। তবে যদি তিনি চান
তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং নিজ গুণে
তাদের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করবেন। যেমন,
আল্লাহ বারী তা’আলা তাঁর পবিত্র
কুরআনে বলেনঃ“শিরক ব্যতীত অন্যান্য সব
অপরাধ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা
করেন।” (সূরা নিসা ৪- ৪৮ আয়াত)
আর যদি তিনি চান, তাদেরকে
জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করাবেন এবং
তা হবে তার ন্যায় বিচার। অতঃপর
আল্লাহপাক তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে
এবং তাঁর অনুমতিপ্রাপ্ত
সুপারিশকারীদের সুপারিশের ফলে
তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে
নিবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
এর কারণ হল এই যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর
নেককার বান্দাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ
করেছেন। তাদেরকে ইহকাল ও পরকালের
অস্বীকারকারীদের ন্যায় করেননি, যারা
তাঁর হিদায়েতের পথ হতে বিভ্রান্ত
হয়েছে। তারা তো তাঁর বন্ধুত্ব লাভে
বঞ্চিত হয়েছে। হে ইসলাম ও মুসলিমদের
অভিভাবক মহান আল্লাহ! তুমি
আমাদেরকে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত
রেখ যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তোমার
সাথে মিলিত হই।
.
৬৯। প্রত্যেক সৎ ও পাপী মুসলিমের
পিছনে নামাজ আদায় করা এবং প্রত্যেক
মৃত মুসলিমের জন্য জানাযার নামাজ
আদায় করা জায়েয বলে আমরা মনে করি।
.
৭০। আমরা কাউকে জান্নাতী ও
জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করব না এবং
কারও বিরুদ্ধে আমরা কুফরী ও শিরকের
অথবা নিফাকের সাক্ষ্য প্রদান করব না,
যতক্ষণ না এগুলির কোন একটি তাদের
মধ্যে প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর হয়। তাদের
আভ্যন্তরীণ ব্যাপার আমরা আল্লাহর উপর
ছেড়ে দেই।
.
৭১। আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করাকে আমরা জায়েয মনে করি না,
যদিও তারা অত্যাচার করে। আমরা
তাদের অভিশাপ দিব না এবং আনুগত্য
হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য
আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয,
যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের
আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও
কল্যাণের জন্য দু’আ করব।
.
৭৩। আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাআতের অনুসরণ করব। আমরা
জামাআত হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং
জামাআতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হতে
বিরত থাকব।
.
৭৪। আমরা ন্যায় পরায়ন ও আমানতদার
ব্যক্তিদেরকে ভালবাসব এবং
অন্যায়কারী ও আমানতের
খেয়ানতকারীদের সাথে শত্রুতা পোষণ
করব।
.
৭৫। যে সব বিষয়ে আমাদের জ্ঞান অস্পষ্ট
সে সব বিষয়ে আমরা বলবঃ “আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন অধিক জানেন। ”
.
৭৬। সফরে ও গৃহে হাদীছের নিয়মানুসারে
আমরা মোজার উপরে মাসেহ করা জায়েয
মনে করি।
.
৭৭। মুসলিম শাসক ভাল হউক কিংবা মন্দ
হউক- তার অনুগামী হয়ে জিহাদ করা এবং
হজ করা কেয়ামাত পর্যন্ত অব্যাহত
থাকবে। এ দু’টি জিনিসকে কেউ বাতিল
বা ব্যাহত করতে পারবে না।
.
৭৮। আমরা কিরামান-কাতিবীন
ফেরেশ্তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
করি। কারণ, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে
আমাদের পর্যবেক্ষক নির্বাচিত
করেছেন।
.
৭৯। আমরা মালাকুল মাউতের (মৃত্যুর
ফেরেশ্তার) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি।
তাকে বিশ্বের রূহসমূহ কবয্ করার দায়িত্ব
অর্পণ রা হয়েছে।
.
৮০। আমরা শাস্তিযোগ্য ব্যক্তিদের জন্য
কবরের আযাবের প্রতি বিশ্বাস রাখি
এবং এও বিশ্বাস করি যে, কবরের মুনকার
ও নাকীর (দুই ফেরেশ্তা) মৃত ব্যক্তির রব,
দ্বীন, ও নবী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন।
এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবায়ে
কেরামদের নিকট হতে বহু হাদীছ ও উক্তি
বর্ণিত হয়েছে।
.
৮১। কবর জান্নাতের বাগিচা সমূহের
অন্যতম অথবা ইহা জাহান্নামের গহ্বর
সমূহের অন্যতম।
.
৮২। আমরা পুনরুত্থান, কেয়ামাত দিবস
আমলের প্রতিফল, হিসাব নিকাশ
আমলনামা পাঠ, সওয়াব (প্রতিদান)
শাস্তি, পুলসিরাত এবং মীযান এসবই সত্য
বলে বিশ্বাস করি।
.
৮৩। জান্নাত ও জাহান্নাম পূর্ব হতে সৃষ্ট
হয়ে আছে। এ দু’টি কোন দিন লয় প্রাপ্ত
হবে না এবং ক্ষয় প্রাপ্তও হবে না।
আল্লাহ তাআলা জান্নাত ও
জাহান্নামকে অন্যান সৃষ্টির পূর্বে সৃষ্টি
করেছেন এবং উভয়ের জন্য বাসিন্দা
সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদের মধ্যে যাকে
ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ
করাবেন এবং যাকে ইচ্ছা জাহান্নামে
প্রবেশ করাবেন। তা হবে তার ন্যায়
বিচার। আর প্রত্যেকেই সেই কাজ করবে
যা তার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং
যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে
সেখানেই সে যাবে।
.
৮৪। ভাল ও মন্দ উভয়ই বান্দার জন্য
নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
.
৮৫। “সামর্থ”- যে কোন কর্মের জন্য
অপরিহার্য। উহা দু’ধরণের- (১) তাওফীক,
(যা আল্লাহ পাকের অন্যতম গুণ)। এর
দ্বারা মাখলুককে ভুষিত করা যায় না। এ
ধরণের সামর্থ বান্দার কর্মের সাথে
সংশ্লিষ্ট (কর্ম বাস্তবায়িত করার জন্য
অপরিহার্য)। (২) যে “সামর্থ” কর্মের
পূর্বেই প্রয়োজন যেমন সুস্থতা, সচ্ছলতা,
ক্ষমতা, অঙ্গ প্রতঙ্গের নিরাপত্তা, আর
এরই সাথে আল্লাহ তা’আলা
বলেনঃ“তিনি কাউকে তার ক্ষমতার
উর্ধ্বে দায়িত্ব দেন না। (সূরা বাকারা
২-২৮৬ আয়াত)।
.
৮৬। বান্দাদের যাবতীয় কর্ম আল্লাহর
সৃষ্টি এবং উহা বান্দাদের উপার্জন।
.
৮৭। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের উপর
তাদের সামর্থের অধিক দায়িত্বভার
ন্যস্ত করেন না। বরং তারা যতটুকু দায়িত্ব
পালনের যোগ্যতা রাখে ততটুকু বোঝাই
তিনি চাপিয়ে থাকেন। এটাই হলঃ
“আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন সৎ কর্ম
হতে বিরত থাকার ক্ষমতা কারও নেই।” এর
ব্যাখ্যা হলো- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের
সাহায্য ছাড়া কারো কোন প্রকার নড়া-
চড়া এবং আল্লাহর অবাধ্যচরণ হতে বিরত
থাকার ক্ষমতা নেই। অনুরূপভাবে, আল্লাহ
তাআলার তাওফীক ছাড়া আল্লাহর
আনুগত্য বরণ করার এবং তার উপরে দৃঢ়
থাকার সাধ্য কারও নেই।
.
৮৮। পৃথিবীতে যা কিছু সংঘটিত হয়, তা
আল্লাহর ইচ্ছা, তাঁর জ্ঞান, তাঁর
ফায়সালা এবং তাঁর বিধান অনুসারেই
হয়ে থাকে। তাঁর ইচ্ছা সমস্ত ইচ্ছার উপরে।
তাঁর ফায়সালা সমস্ত কৌশলের ঊর্ধ্বে।
যা ইচ্ছা তিনি তাই করেন। তিনি কখনও
অত্যাচার করেন না। তিনি সর্ব প্রকার
কলুষ ও কালিমা হতে পবিত্র এবং সব
রকমের দোষ ত্রুটি হতে বিমুক্ত। তিনি যা
করেন সে সম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত
হবেন না। পক্ষান্তরে, অন্য সবই নিজের
কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা
আম্বীয়া ২১ : ২৩ আয়াত)
.
৮৯। জীবিত ব্যক্তিদের দুআ এবং দান
খয়রাত দ্বারা মৃত বক্তিরা উপকৃত হয়ে
থাকে।
.
৯০। আল্লাহ বারী তাআলা দুআ কবুল করেন
এবং বান্দাদের প্রয়োজন মিটিয়ে
থাকেন।
.
৯১। আল্লাহ তাআলা সব কিছুরই মালিক
এবং তাঁর মালিক কেউ নয়। মুহুর্তের জন্যও
কারো পক্ষে আল্লাহর অমুখাপেক্ষী
হওয়া সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি মুহুর্তের জন্য
আল্লাহর অমুখাপেক্ষী হতে চাবে, সে
কাফির হয়ে যাবে এবং লাঞ্ছিত হবে।
.
৯২। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ক্রুদ্ধ
এবং রুষ্ট হন, তবে তা মাখলুকের ন্যায় নয়।
.
৯৩। আমরা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে
ভালবাসি, তবে তাদের ভালবাসার
ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করি না এবং
তাদের কাউকেও তিরস্কার করি না।
তাদের সাথে যারা বিদ্বেষ পোষণ করে
অথবা যারা তাদেরকে অসম্মানজনক
ভাবে স্মরণ করে আমরা তাদের প্রতি
বিদ্বেষ পোষণ করি। আমরা তাদেরকে শুধু
কল্যাণের সাথেই স্মরণ করি। তাদের
সঙ্গে মহব্বত রাখা দ্বীন ও ঈমান এবং
এহসানের অংশ। আর তাদের প্রতি
বিদ্বেষ পোষণ করা, কুফরী, মুনাফিকী
এবং সীমা লংঘন করার পর্যায়ভূক্ত।
.
৯৪। আমরা রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম পর সর্বপ্রথম আবু বকর
রাদিআল্লাহু আনহুর খেলাফতবে স্বীকৃতি
দেই। অতঃপর পর্যায়ে ক্রমে উমর বিন
খাত্তাব (রাঃ) উসমান (রাঃ) ও আলীকে
(রাঃ) খলীফা বলে স্বীকার করি। তাঁরাই
ছিলেন সুপথগামী খলীফা ও হিদায়েত-
প্রাপ্ত নেতা।
.
৯৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম যে দশজন সাহাবার নাম
উল্লেখ করে তাদের সম্পর্কে জান্নাতের
সুসংবাদ দান করেছেন, আমরা তাদের
জান্নাতে প্রবেশের স্বাক্ষ্য প্রদান
করি। কারণ, এ সম্পর্কে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সুসংবাদ দান করেছেন এবং তাঁর উক্তি
সত্য।তাঁরা হলেনঃ
(১) আবু বকর (রাঃ)
(২) উমর (রাঃ)
(৩) উসমান (রাঃ)
(৪) আলী (রাঃ)
(৫) তালহা (রাঃ)
(৬) যুবাইর (রাঃ)
(৭) সা’দ (রাঃ)
(৮) সা’ঈদ (রাঃ)
(৯) আউফ (রাঃ) এবং
(১০) আমীনুল উম্মাহ (জাতির
বিশ্বাসভাজন) আবু ওবায়দা ইবনুল
জাররাহ (রাঃ)
.
৯৬। যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছাহাবা ও
তাঁর পুতঃপবিত্র সহধর্মিনী ও বংশধরগণ
সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করে সে মুনাফিকী
হতে নিস্কৃতি পায়।
.
৯৭। সালাফে ছালেহীন (পূর্ববর্তী
নেককার বান্দাগণ) ও তাঁদের পদাংক
অনুসারী সৎ কর্মশীল ব্যক্তিগণ এবং
ফক্বীহ ও চিন্তাবিদগণকে আমরা যথাযথ
সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করি, আর যারা
এদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে তারা
সঠিক পথের পথিক নয়।
.
৯৮। আমরা কোন অলীকে কোন নবীর উপরে
প্রাধান্য দেই না বরং আমরা বলি, যে
কোন একজন রাসূল সমস্ত আওলীয়াকুল হতে
শ্রেষ্ঠ।
.
৯৯। আওলীয়াদের কারামত সম্পর্কে যে
খবরাখবর আমাদের নিকট পৌঁছেছে এবং
যা বিশ্বস্ত বর্ণনার মাধ্যমে পরিবেশিত
হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি।
.
১০০। আমরা কেয়ামাতের নিম্নলিখিত
নিদর্শনাবলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
করিঃ দাজ্জালের আবির্ভাব, আসমান
হতে ঈসা আ. এর অবতরণ, পশ্চিম গগনে
সূর্যোদয় এবং দাব্বাতুল আরয নামক
প্রাণীর নিজ স্থান হতে আবির্ভাব।
.
১০১। আমরা কোন ভবিষ্যৎ বক্তা অথবা
কোন জ্যোতিষীকে সত্য বলে মনে করি
না এবং ঐ বক্তিকেও সত্য বলে মনে করি
না, যে আল্লাহর কিতাব, নবীর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সুন্নাহ ও উম্মতের এজমার বিরুদ্ধে বক্তব্য
রাখে।
.
১০২। আমরা (মুসলিম জাতির) ঐক্যকে সত্য
ও সঠিক বলে মনে করি এবং তা হতে
বিচ্ছিন্নতাকে বক্রতা ও শাস্তিযোগ্য
অপরাধ বলে মনে করি।
.
১০৩। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে আল্লাহর দ্বীন
এক এবং অভিন্ন। তা হচ্ছে ইসলাম।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “নিশ্চয়ই
আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হচ্ছে
ইসলাম।” (সুরা ইমরান, ৩ – ১৯ আয়াত)।
অন্যত্র তিনি আরও বলেন-
“এবং আমি ইসলামকে তোমাদের দ্বীন
হিসাবে মনোনীত করলাম।” (সূরা
মায়েদা,আয়াত : ৩ )
.
১০৪। ইসলাম একটি মধ্যপন্থী ধর্ম। এতে
বাড়াবাড়ি ও সংকীর্ণতা, তাশবীহ ও
তা’তীল জবর ও ক্বদরের স্থান নেই। ইহা
নিশ্চিন্ততা ও নৈরাশ্যের মধ্যবর্তী একটি
পথ।
.
১০৫। এগুলিই হচ্ছে আমাদের দ্বীন এবং
আমাদের আক্বীদাহ বা মৌলিক ধর্ম
বিশ্বাস। যা প্রকাশ্যে এবং অন্তরে উহা
ধারণ করি। যারা উল্লিখিত বিষয় বস্তুর
বিরোধিতা করে, তাদের সঙ্গে আমাদের
কোনই সম্পর্ক নেই।
.
সর্বশেষ বারগাহে এলাহীতে আমাদের
আরযঃ তিনি যেন আমাদেরকে ঈমানের
উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক প্রদান
করেন এবং আমাদের জীবনাবসান
ঈমানের সাথে করেন এবং আমাদেরকে
রক্ষা করেন বিভিন্ন প্রবৃত্তি পরায়ণতা ও
মতামতসমূহ হতে এবং মুশাববিহা,
মু’তাযিলা, জাহমিয়া, জাবরিয়া,
ক্বাদরিয়া প্রভৃতি বাতিল মাযহাবসমূহের
মধ্যে যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামা’আতের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং যারা
ভ্রষ্টতার উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য
শপথ গ্রহণ করে, আমরা তাদের থেকে
আমাদের সম্পর্কহীনতার কথা ঘোষণা
করছি। তারা আমাদের মতে পথভ্রষ্ট ও
বিভ্রান্ত। পরিশেষে আল্লাহর নিকটেই
যাবতীয় ভ্রান্তি হতে নিরাপত্তা এবং
সৎপথে চলার তাওফীক কামনা করছি।
.
সংকলক : ইমাম আবু জাফর তাহাবী রহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top