সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কষ্টিপাথর দিলাম ,পরখ করে দেখো, তুমি সত্যবাদী কিনা !

কোন মন্তব্য নেই:

কষ্টিপাথর দিলাম ,পরখ করে দেখো, তুমি সত্যবাদী কিনা !
.
.
.
.
সোনার ব্যাবসায়িরা যেমন
বিক্রেতাদের কথার বা আশ্বাসের উপর
নির্ভর না করে খাঁটি সোনা পরখ করতে
কষ্টিপাথর ব্যাবহার করে থাকে, তেমনি
বিভিন্নরকম ইসলামী আন্দোলনের
দাবীদারদের হকপন্থি হবার দাবীর উপর
নির্ভর না করে সঠিক পন্থিদের চিনে
নিতে আল্লাহ্ তাআলাও অতি দয়া করে
আমাদের সামনে কিছু কষ্টিপাথর দিয়ে
দিয়েছেন যাতে আমরা বিভ্রান্ত না হই।
আজ সারা বিশ্বের যেদিকেই তাকাই,
শিয়া বা কাদিয়ানীর মত বাতিল
সম্প্রদায়গুলোকে বাদ দিলেও খোদ
মুসলমানদের মধ্য থেকেই বিভিন্ন জামাত
বা দল বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে বিভিন্ন
দাবী করে বলছে “আমরাই হক, আমাদের
পন্থাই হক পন্থা”, কেউ বলছে “আমাদের
আন্দোলনই ঈমানি আন্দোলন” আবার কেউ
বলছে “আমাদের সলিউশানই হচ্ছে
সলিউশান ফর দা হিউমেনিটি”, এতসব
দাবীদারদের মধ্য থেকে আমরা চলুন
দেখে নেই আমাদের কষ্টিপাথর কি বলে।
ইমানদারদের হিফাজত করার উদ্দেশ্যে
আল্লাহ্ তাআলা কুরআনের কিছু আয়াতকে
এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের কিছু হাদিসকে
কষ্টিপাথরের মত উপস্থাপন করেছেন। এই
সব কষ্টিপাথর দিয়ে আমরা সহজেই জেনে
নিতে পারি ব্যাক্তিগতভাবে কে সঠিক
অথবা সামষ্টিক ভাবে কাদের দাবী
ঠিক। আজকে আমরা ইস্তিমাইভাবে
অর্থাৎ সামষ্টিক ভাবে কারা হকের উপর
আছে এবং কি তাদের বৈশিষ্ট তা
চিহ্নিত করার জন্য কুরআন-হাদিসে যেসব
কষ্টিপাথর উল্ল্যেখ করা হয়েছে তা
থেকে কিছু উপস্থাপন করবো।
যারা হকের উপর আছেন কুরআনে তাদের
নিদর্শনঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻣَﻦ ﻳَﺮْﺗَﺪَّ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻋَﻦ ﺩِﻳﻨِﻪِ ﻓَﺴَﻮْﻑَ
ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﺤِﺒُّﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺤِﺒُّﻮﻧَﻪُ ﺃَﺫِﻟَّﺔٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ
ﺃَﻋِﺰَّﺓٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻳُﺠَﺎﻫِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ
ﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﻟَﻮْﻣَﺔَ ﻟَﺎﺋِﻢٍ ۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻓَﻀْﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳُﺆْﺗِﻴﻪِ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀُ ۚ
ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﺳِﻊٌ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ‏[ ٥: ٥٤ ]
হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয়
দীন থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ
এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে
তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে
ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি
বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি
কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ
করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর
তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর
অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন।
আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।
(সুরা মাইদাঃ ৫৪)
.
এখানে আল্লাহ তাআলা হক জামাতের
যে সিফাতগুলো বর্ণনা করেছেন তা হচ্ছে
১ আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসবেন
২ তারা আল্লাহকে ভালবাসবেন
৩ তারা মুমিনদের প্রতি বিনম্র হবে
৪ তারা কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে
৫ তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত থাকবে এবং
৬ তারা নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না
.
.
এখানে উপরোক্ত ছয়টি গুণকে আল্লাহ
তাআলা দীন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
যখনই কেউ দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে
আল্লাহ খুব দ্রুতই অন্য কোন কওমের
মাধ্যমে তাদেরকে বদল করে দিবেন
যাদের মধ্যে এই গুণগুলো থাকবে। অর্থাৎ
এই গুণ বিশিষ্ট দলটিকে আল্লাহ তাআলা
সবসময় বলবত রাখবেন।
বুদ্ধিমান এবং ঈমানওয়ালার জন্য এই
একটি আয়াতই যথেষ্ট হবার কথা।
সত্যবাদীরা ভেবে দেখুন এই আয়াত
অনুসারে আমাদের সময়ের হকপন্থিদের
খুঁজে বের করা কি খুব কঠিন? এই একটি
আয়াত নিয়েই যদি সত্য অনুসন্ধানীরা
কিছু পড়াশুনা করেন তাহলে অবশ্যই
সবধরনের ইসলামী আন্দলনের নামে ভ্রান্ত
দলগুলোর ধোঁকা থেকে বেঁচে থেকে
সঠিক দলকে খুঁজে নিতে কোন প্রকার
সংশয়ের সম্মুখীন হতে হবে না। আল্লাহ্
যদি এই অধমকে তাওফিক দান করেন তবে
খুব শীঘ্রই এই আয়াতে বর্নিত প্রত্যেকটি
সিফাত নিয়ে ওলামায়ে কেরামের
বিস্তারিত মতামত আপনাদের সামনে
উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ্।
.
যারা হকের উপর আছেন হাদিসে
তাদের বর্ননাঃ
.
.
এবার দেখি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন।
আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখার সার্থে আমি
শুধু সাহিহ বুখারী এবং সাহিহ মুসলিম
থেকে দুএকটি হাদিস উল্ল্যেখ করছি।
আশাকরি রোগাগ্রস্থরা ছাড়া সবাই
উপকৃত হবো ইনশা আল্লাহ্।
.
১ নং হাদিসঃ সালামাহ বিন নুফাইল
(রাঃ) বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাছে বসা ছিলাম এমন সময় একজন লোক
এসে তাকে (সাঃ) বললেনঃ ইয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম, ঘোড়াগুলোকে (জিহাদের
জন্য ব্যাবহার না করে বরং আস্তাবলে
রেখে দেয়ার মাধ্যমে) অপদস্থ করা হচ্ছে
এবং অস্ত্রগুলোকে নামিয়া রাখা হয়েছে
আর কিছু লোক বলাবলি করছে এখন থেকে
আর জিহাদ করতে হবে না এবং জিহাদ
শেষ হয়ে গিয়েছে! রাসুলুল্লাহ
সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ “তারা মিথ্যা বলছে! জিহাদতো
কেবল শুরু হয়েছে, আমার উম্মাতের একটি
দল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে
থাকবে এবং যারা তাদের বিরোধিতা
করতে চাইবে তারা তাদের কোন ক্ষতিই
করতে পারবে না বরং আল্লাহ মানুষের
মাধ্য হতে কারো কারো হৃদয় কে বক্র করে
দিবেন যাতে সেই দল তাদের বিরদ্ধে
লড়াই করতে পারে। এবং তারা লড়াই
করতে থাকবে যতক্ষণ না কিয়ামাত
অবতীর্ণ হয়। ঘোড়ার কপালে কিয়ামাত
পর্যন্ত রহমত এবং কিতাল ততক্ষণ পর্যন্ত
বন্ধ হবে না হতক্ষন না ইয়াজুজ মাজুজ বের
হয়ে আসে” (সাহিহ বুখারি)
.
সুবহান আল্লাহ্, দেখুন এখানে সেই
জিহাদের কথা বলা হয়েছে যেখানে
ঘোড়া এবং অস্ত্র ব্যাবহার করা হয়।
তাহলে বলুন কারা সেই দল?
.
২ নং হাদিসঃ জাবির ইবনে সামুরা
(রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “এই দীন
সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানের একটি
দল এই দীনের সংরক্ষণের জন্য কিয়ামাত
পর্যন্ত কিতাল (যুদ্ধ) করতে
থাকবে।“ (সাহিহ মুসলিম)
.
দেখুন যারা বলে দিন মিটে গেছে আর
আমাদেরকে আবার নতুন করে শুরু করতে
হবে তাদের দাবী কতটা ভ্রান্ত। আসলে
দীন কায়েমই আছে, আমদেরকে শুধু দীনের
সঠিক হুকুমের উপড়ে উঠে আসতে হবে।
আসুন পরবর্তী হাদিসগুলো দেখি।
.
৩ নং হাদিসঃ জাবির ইবন আব্দুল্লাহ
(রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ
“আমার উম্মাতের একটি তাইফা
(অল্পসংখ্যক লোক বিশিষ্ট দল) কিয়ামাত
কায়েম হওয়া পর্যন্ত হক প্রতিষ্ঠার জন্য
কিতাল (যুদ্ধ) করতে থাকবে। এবং তারা
বিজয়ী থাকবে।” (সাহিহ মুসলিম)
এই দলটি যদি কিয়ামাত পর্যন্ত চলমান
থাকে এবং তারা যদি লড়াইরত থাকে
তাহলে আমাদের জামানায় তারা কারা?
.
৪ নং হাদিসঃ ইয়াজিদ ইবনে আসেম
(রাঃ) বলেন, আমি মুয়াবিয়া ইবনে আবু
সুফিয়ানকে মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে
নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস বর্ণনা
করতে শুনেছি। এটা ছাড়া আর কোন
হাদিস আমি তাকে বর্ণনা করতে শুনিনি।
মুয়াবিয়া (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ “আল্লাহ যার কল্যাণ চান
তাকে দীনের বুঝ দান করেন। মুসলমানের
একটি দল সর্বদা হক প্রতিষ্ঠার জন্য
কিতাল (যুদ্ধ) করতে থাকবে এবং তাদের
বিরোধীদের উপর কিয়ামাত পর্যন্ত
বিজয়ী থাকবে।” (সহিহ মুসলিম)
.
৫ নং হাদিসঃ আব্দুর রাহমান ইবনে
শুমাসাহ আল মাহরি বলেন, আমি
মাসলামা ইবনে মাখলাদের নিকট
উপস্থিত ছিলাম, এ সময় আব্দুল্লাহ ইবনে
আমার ইবনুল আসও (রাঃ) তার কাছে
উপস্থিত ছিলেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্টতম
লোকগুলো যখন পৃথিবীর বুকে অবশিষ্ট
থাকবে তখনই কিয়ামাত হবে। তারা
জাহিলি যুগের লোকদের চেয়েও নিকৃষ্ট
হবে। তারা আল্লাহর কাছে যা-ই চাইবে
তাই তাদের দেয়া হবে। আব্দুর রাহমান
ইবনে শুমাসাহ বলেন, তারা এই আলোচনায়
রত ছিলেন এমন সময় উকবা ইবনে আমের
(রাঃ) সেখানে উপস্থিত হলেন। মাসলামা
তাকে বললেন, হে উকবা! আব্দুল্লাহ কি
বলছে তা শুনুন। জবাবে উকবা (রাঃ)
বলেনঃ তিনি আনেক অভিজ্ঞ। তবে আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “আমার
উম্মতের একদল লোক সর্বদা আল্লাহর
হুকুমের উপর অবিচল থাকার জন্য শত্রুর
বিরুদ্ধে কিতাল (লড়াই) করতে থাকবে।
যারা তাদের বিরোধিতা করবে তারা
তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। এই
অবস্থায় তাদের কাছে কিয়ামাতের মুহূর্ত
এসে যাবে এবং তারা হক প্রতিষ্ঠায়
শত্রুর মুকাবিলা করতে থাকবে।”
আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হাঁ, আপনি ঠিকই
বলেছেন। অতঃপর আল্লাহ এমন এক বায়ু
প্রবাহিত করবেন যা কস্তূরীর ন্যায়
সুগন্ধযুক্ত এবং রেশমের ন্যায় মোলায়েম
হবে। অতঃপর তা এমন কোন ব্যাক্তিকে
অবশিষ্ট রাখবে না যার অন্তরে সামান্য
পরিমাণও ঈমান থাকবে। তা তাদের
সবাইকে মৃত্যুর কোলে ঢলিয়ে দিবে।
অতঃপর পৃথিবীতে কেবল নিকৃষ্টতম
লোকগুলোই অবশিষ্ট থাকবে। আর তাদের
উপর কিয়ামাত কায়েম হবে।(সহিহ মুসলিম)
.
এবার বিবেকবানদের বলছি, সত্য জানার
এবং বুঝার জন্য সাত আসমানের উপর
থেকে নাযিলকৃত ওহীর ইলমের উপর অর্থাৎ
কুরআন এবং সাহিহ হাদিসের উপর নির্ভর
করুন। তাহলে অবশ্যই নিরাপদ থাকবেন।
নিজের অথবা অন্য কারো কল্পনা প্রসূত
চিন্তার উপর নির্ভর করে কোন মন্তব্য
অথবা সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে নিজেকে
বাঁচিয়ে রাখুন। হয় সত্য বলুন না হয় চুপ
থাকুন, নফস অথবা বাতিলের প্রভাবে
প্রভাবিত হয়ে ভ্রান্তি ছড়াবেন না।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সঠিক পথ
দেখাক এবং সঠিক পথে অবিচল থাকার
তাউফিক দান করুক (আমিন)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top