শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আন্তর্জাতিক জিহাদ এবং এর বিভিন্ন সংশয় নিরসন:

কোন মন্তব্য নেই:

আন্তর্জাতিক জিহাদ এবং এর বিভিন্ন সংশয়
নিরসন:
.
আস্-সাহাব মিডিয়া- এর পরিবেশনায়
উস্তাদ আহমেদ ফারুক (আল্লাহ্ তাঁকে
হিফাজত করুন)(তানজীম আল-কায়দা পাকিস্তানে দাওয়াহ্ বিভাগের প্রধান) -এর সাথে
সাক্ষাৎকার।
.
.
আস্-সাহাবঃ বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম।আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু ‘আলা রসূলুল্লাহি
ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া
আসহাবিহি আজমা‘য়িন।
আজ আমরা উস্তাদ আহমেদ
ফারুকের সাথে সাক্ষাৎকারের
জন্য তাঁর নিকটে উপস্থিত হয়েছি,
ওস্তাদ আহমেদ ফারুক হচ্ছেন
পাকিস্তানের তানজীম আল-
কায়দার দাওয়াহ্ বিভাগের
প্রধান আর আজ প্রথমবারের মত
তানজীম আল-কায়দার কোন
নেতার সাথে উর্দূ ভাষায় আস
সাহাবের পক্ষ থেকে
সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে। আজ এই
সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ
উপস্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে
আমরা সারা বিশ্বজুড়ে জিহাদ
এবং এর ফারযিয়াতের বিষয়ে
বিভিন্ন সংশয় নিয়ে আলোচনা
করবো ইন্শাল্লাহ। সবার আগে
আমরা উস্তাদ আহমেদ ফারুকের
কাছ থেকে তানজীম আল-
কায়দার পরিচিত জানতে
চাইবো।
.
.
উস্তাদ আহমেদ ফারুকঃ
আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়াস-সালাতু
ওয়াস-সালামু ‘আলা রসূলুল্লাহি
ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া
আসহাবিহি আজমা‘য়িন।
অতঃপর বিষয় হচ্ছে … তানজীম
কায়দাতুল জিহাদ যা সারা
বিশ্বে আল-কায়দা নামে
পরিচিত। এটি পুরো দুনিয়া থেকে
ফিতনাকে নির্মূল করা,
আল্লাহর কালেমাকে সবার
উপরে তুলে ধরা এবং খিলাফত
‘আলা মিনহাজুন নবুয়াতকে
ফিরিয়ে আনার জন্য জিহাদের
একটি তানজীম যার আমীর হচ্ছেন
শাইখ ওসামা বিন লাদেন
[আল্লাহ্ তাঁকে সকল খারাপ কিছু
থেকে হিফাজত করুন, জিহাদের
এই পথের উপর দৃঢ় থাকার তৌফিক
দান করুন এবং তাঁর সিদ্ধান্তের
উপর তিনি বরকত দান করুন]। মূলতঃ
এর পরিচিতি এতটুকুই তবে আল-
কায়দার পরিচয় দেয়ার আরেকটি
ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি হল, এখন এটি
কেবল একটি তানজীমের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ নেই, যেখানে কিছু
অনুসারী ও সমর্থক থাকে, বরং
এটি এখন একটি মানহাজের নাম।
যেখানেই কুফ্ফারদের বিরুদ্ধে
মোকাবিলা, প্রতিরোধ ও
জিহাদের কথা শোনা যায়,
যেখানেই তাওয়াগীতদের
চোখের উপরে চোখ রেখে
তাদেরকে উত্তেজিত করার কথা
শোনা যায় এবং যেখানেই এই
উম্মতের মুক্তি ও এর পক্ষে
ক্বিতালের কথা শোনা যায়,
সেখানে একই সাথে আল-কায়দার
নাম চলে আসে।
.
তাই জিহাদ এবং আল-কায়দা এই
দু’টি শব্দ এখন একে অপরের সাথে
সম্পৃক্ত। আর এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে
আলোচনা করলে এটি এখন আর
গতানুগতিক কোন তানজীমের
মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং উম্মতের
পক্ষ থেকে যে কেউই শরয়ী
মানহাজ অনুযায়ী ক্বিতাল করবে,
সে দুনিয়ার যেখানেই অবস্থান
করুক অথবা যে নামেই কাজ করুক
না কেন, তাঁরা আমাদের থেকে
এবং আমরা তাঁদের থেকে এবং এ
বিষয়ে শেষ কথা হল যখন আমরা
তানজীম নিয়ে আলোচনা করছি,
এটি তো এই যুগের নাজেলাতুন
মিনান নাওয়াজেল, কারণ
বর্তমানের মুসলমানদের উপর এমন
শাসকেরা এসে চেপেছে যারা
নিজেরা তো জিহাদের দায়িত্ব
পালন করছেই না, উল্টো তারাই
জিহাদের পথে প্রথম বাধা হয়ে
দাঁড়িয়েছে আছে। তা না হলে
এটি শুধু কোন তানজীমের একক
কোন ফারযিয়াত নয়,বরং এই
ফারযিয়াত হচ্ছে পুরো খিলাফতের বা মুসলিম শাসকের উপর। এই বিশৃংখলাপূর্ণ পরিস্থিতিতে শুধু এই ফরযকে আদায় করার উদ্দেশ্যেই আমরা
তানজীম আকারে একত্রিতভাবে
কাজ করে যাচ্ছি, অন্যথায় আমরা
নিজেদেরকে এই উম্মতেরই একটি
অংশ মনে করি আর কোন
ব্যাপারেই নিজেদেরকে আলাদা
মনে করি না। ঠিক যেভাবে
আল্লাহ্ আমাদের পরিচয়
দিয়েছেন,
ﻭَﺟَﺎﻫِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣَﻖَّ ﺟِﻬَﺎﺩِﻩِ ۚ ﻫُﻮَ
ﺍﺟْﺘَﺒَﺎﻛُﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣِﻦْ
ﺣَﺮَﺝٍ ۚ ﻣِّﻠَّﺔَ ﺃَﺑِﻴﻜُﻢْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ۚ ﻫُﻮَ ﺳَﻤَّﺎﻛُﻢُ
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻭَﻓِﻲ ﻫَٰﺬَﺍ ﻟِﻴَﻜُﻮﻥَ
ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَ
ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ۚ ﻓَﺄَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺁﺗُﻮﺍ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ
ﻭَﺍﻋْﺘَﺼِﻤُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻫُﻮَ ﻣَﻮْﻟَﺎﻛُﻢْ ۖ ﻓَﻨِﻌْﻢَ ﺍﻟْﻤَﻮْﻟَﻰٰ
ﻭَﻧِﻌْﻢَ ﺍﻟﻨَّﺼِﻴﺮُ ‏[ ٢٢ : ٧٨ ]
তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম
স্বীকার কর যেভাবে শ্রম
স্বীকার করা উচিত। তিনি
তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন
এবং ধর্মের ব্যাপারে
তোমাদের উপর কোন
সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা
তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের
ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই
তোমাদের নাম মুসলমান
রেখেছেন পূর্বেও এবং এই
কোরআনেও, যাতে রসূল
তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা
এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও
মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং
তোমরা নামায কায়েম কর,
যাকাত দাও এবং আল্লাহকে
শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই
তোমাদের মালিক। অতএব তিনি
কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম
সাহায্যকারী।
(হজ্জঃ ৭৮)
.
আর ঠিক একইভাবে আমাদের
পরিচয় হচ্ছে আমরা মুসলিম ও
মুসলিম জাতির একটি অংশ এবং
এর মুক্তির জন্যই আমরা জিহাদ
করে যাচ্ছি।
.
.
আস-সাহাবঃ আল-কায়দার
ব্যাপারে সাধারণদের মধ্যে
বলতে শোনা যায় যে, এটি শুধু
আরব ভিক্তিক একটি তানজীম।
তাহলে পাকিস্তানের মানুষ
এখানে কিভাবে অন্তর্ভূক্ত হল?
.
.
উস্তাদ আহমেদ ফারুকঃ এ
ব্যাপারে এতটুকু বলা যেতে পারে
যে, যাঁরা এর প্রতিষ্ঠা লগ্নে
ছিলেন তাঁদের অধিকাংশই এখন
শহীদ হয়েছেন এবং তাঁদের
অধিকাংশই আরবদের মধ্য থেকে
ছিলেন আর এখনও আল-কায়দার বড়
একটি অংশ আরব মুজাহিদীনদের
মধ্য থেকে আছেন। কিন্তু এটি না
এর পরিচিতির কোন অংশ আর না
কোন শর্ত এর সাথে শরীক হওয়ার
জন্য, এ বিষয়ে আমি প্রথমেই
বলেছিলাম যে, এটি হচ্ছে
ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে
ক্বিতালরত একটি মাজমু’আর নাম।
তাই যে কেউই আহলে সুন্নাহ
ওয়াল জামাতের আক্বীদার উপর
কায়েম আছেন, শরয়ী হুকুম
মোতাবেক জিহাদের ফারযিয়াত
আদায় করে যাচ্ছেন তিনি এর
মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন।
তিনি যে কোন গোত্রের, বংশের
অথবা এলাকারই হোন না কেন,
ইসলামে তো আমাদেরকে এ
ধরনের পার্থক্য শেখানো হয়নি।
তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি আল-
জাজায়ের (আলজিরিয়া) মধ্যেও
আল-কায়দা কাজ চালিয়ে
যাচ্ছে, ঠিক একইভাবে ইরাক,
আফগানিস্তান এবং
পাকিস্তানের মধ্যেও আল-
কায়দা কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়াও যদি আমরা দেখি যারা
আমেরিকায় আছেন অথবা
ইউরোপে বা অস্ট্রেলিয়ায়
কিংবা ফিলিপাইন ও
ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে অথবা
বিশ্বের অন্য কোনখানের
মুসলিমরা এর সাথে সামিল
রয়েছেন। এখানে সব জায়গা
থেকেই মানুষ শরীক হচ্ছে আর
ঠিক একইভাবে পাকিস্তানের
মানুষও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত
আছেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার মত
কোন কিছুই নেই।
.
.
আস-সাহাবঃ এইমাত্র আপনি
যাদের বিষয়ে উল্লেখ করলেন,
তাদের ব্যাপারে জিহাদের
পথকেই কেন আপনারা বেছে
নিয়েছেন?
.
.
উস্তাদ আহমেদ ফারুকঃ দেখুন! এটি
তো আমাদের নিজস্ব মনগড়া
কোন সিদ্ধান্ত নয়, আল্লাহর
গোলাম ও বান্দা হিসেবে আমরা
এই দুনিয়াতে জীবন-যাপন করছি,
এটি এমন এক ফরয ইবাদত যার জন্য
আমরা দুনিয়াতে এসেছি, যে
ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেছেন,
ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺖُ ﺍﻟْﺠِﻦَّ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧﺲَ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭﻥِ
আমার এবাদত করার জন্যই আমি
মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি
করেছি। (জারিয়াতঃ ৫৬)
.
সুতরাং আল্লাহ্ আমাদেরকে
একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্যই
সৃষ্টি করেছেন। তাই আমাদের
জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে
যেমনি ভাবে আমরা একমাত্র
আল্লাহর শারিয়াহ্ অনুযায়ী আমল
করার চেষ্টা করে থাকি, ঠিক
একই ভাবে আল্লাহর কালেমাকে
কিভাবে সবার উপরে তুলে ধরা
যায় এবং নবুয়তী পন্থায় কিভাবে
আবার খিলাফত ব্যবস্থাকে
ফিরিয়ে আনা যায়- এ সকল
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আমরা
শারিয়াহ্ অনুযায়ী আমল করার
চেষ্টা করে থাকি।
শারিয়াহ্ থেকেই আমরা জানতে
পারি ও দিক-নিদের্শনা পাই যে,
জিহাদের মাধ্যমেই এর
বাস্তবায়ন করা সম্ভব। জিহাদের
আহ্কামের বিষয়ে শারিয়াহর বহু
জায়গায় বিস্তারিতভাবে
আলোচনা করা হয়েছে এবং
আমাদের পূর্ববর্তী সালাফ ও
খালাফদের আলেমগণের মধ্যে এ
বিষয়ে ঐক্যমত রয়েছে যে, কিছু
পরিস্থিতিতে জিহাদ হচ্ছে
ফারদুল কিফায়া আর কিছু
পরিস্থিতে তা ফারদুল আইন- যার
অর্থ হচ্ছে উম্মতের সকল
মুসলিমের উপর তা ফরয। কেবল
তারা ব্যতীত যাদের উপরে শরয়ী
ওজর রয়েছে। যে পরিস্থিতে আজ
আমরা জীবিত আছি এবং যার
মধ্যে দিয়ে আমরা চোখ খুলেছি,
বিশেষ করে বিগত কয়েক শতক
ধরে যখন কুফ্ফাররা ইউরোপের
এলাকাগুলোকে আমাদের কাছ
থেকে জবর দখল করে নেয়া শুরু
করল, তখন থেকেই ফুকাহাগণ এর
ফারযিয়াতের বিষয়ে আলোচনা
করে আসছেন এবং যে সকল
পরিস্থিতির কথা উল্লেখ
করেছেন তার আলোকে জিহাদ
এখন ফারদুল ‘আইন।
.
ফুকাহাগণ যে সকল পরিস্থিতে জিহাদ ফারদুল
‘আইন বলেছেন তা হলঃ
১) মুসলিমদের ভূমির এক বিঘত
জায়গাও যদি কুফ্ফাররা দখল
করে নেয়।
২) মুসলিমদের থেকে কোন পুরুষ
অথবা কোন মহিলাকে যদি
কুফ্ফাররা বন্দী করে ফেলে।
৩) অথবা মুসলিমদের শাসক যদি
মুরতাদ (দ্বীন ত্যাগী) হয়ে যায়,
তাহলে তাকে সরানোর জন্য
জিহাদ ফারদুল আইন হয়ে যায়।
.
আজ আমরা যদি পরিস্থিতি নিয়ে
আলোচনা করতে যাই ,তাহলে এক
দিক থেকে নয় বরং সব দিক
থেকেই পূর্বের চেয়ে আরো
জোড়ালোভাবে জিহাদ ফারদুল
‘আইন হয়ে গিয়েছে। আমরা
জিহাদের রাস্তাকে কেন বেছে
নিয়েছি? এ কারণই বেছে
নিয়েছি যে, জিহাদকে আমরা
আমাদের উপর ফারদুল ‘আইন মনে
করি, শুধু আমাদের উপরেই নয়, বরং
পুরো উম্মতের উপরেই জিহাদ এখন
ফারদুল ‘আইন। তাই আমরা
আমাদের ফারযিয়াত আদায় এবং
আল্লাহর আদেশ পালন করার
উদ্দেশ্যেই জিহাদ করার জন্য ঘর
থেকে বের হয়েছি।
.
আর এটিও আমি বলব, যে
পরিস্থিতি বর্তমানে এই উম্মতের
উপর দিয়ে যাচ্ছে সম্ভবতঃ
ইসলামের ইতিহাসে এ ধরনের
অবমাননাকর পরিস্থিতির উপর
দিয়ে এর পূর্বে মুসলিমরা কখনো
অতিক্রম করেনি, যখন আমাদের
ভূমিগুলোকেও আমাদের থেকে
জোড় করে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে,
অথচ এমন একটি সময় ছিল যখন
আমরা সারা দুনিয়ার দুই-
তৃতীয়াংশ শাসন করেছি আর এখন
এমন একটি সময়ের মধ্য দিয়ে
যাচ্ছি যখন সারা দুনিয়ায় এক
টুকরো ভূমিও খুঁজে পাওয়া যায় না
যেখানে আল্লাহর শারিয়াহ্
অনুযায়ী শাসন করা হচ্ছে ;
আমাদের এক দু’জন ভাই নয় বরং
হাজার হাজার মুজাহিদীন,
দা’য়ী, আলেমগণ এমনকি আফিয়া
সিদ্দীকির মত বোনরা (আল্লাহ
উনাদেরকে মুক্তি দিন) পর্যন্ত
কুফ্ফারদের কারাগারের মধ্যে
বন্দী রয়েছে, যাদেরকে মুক্ত
করা আমাদের উপর ফরয। তাই এই
দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি আমরা
দেখি তাহলে আজ এই উম্মত এমন
এমন পরিস্থিতির উপর দিয়ে
যাচ্ছে যা পূর্বে না এই উম্মত
দেখেছিল আর না নীরবতার সাথে
তা সহ্য করেছিল। উদাহরণত,
আল্লাহর কিতাবের সাথে একবার
নয় বার বার অবমাননা করা হচ্ছে,
আল্লাহর রাসূল ﷺ -
যাকে আমরা আল্লাহর পরে না
অন্য কাউকে বেশি ভালোবাসি
অথবা সম্মান করি- তাঁকে অনবরত
অবমাননা করা হচ্ছে। আর এতগুলো
বিষয়একত্রিত হওয়ার পরও যদি
আমরা জিহাদের জন্য না
দাঁড়াতাম, তাহলে আল্লাহর
আযাব আসার আশংকা ছিল।
সুতরাং, এটিই হচ্ছে মৌলিক
কারণ যেজন্য আমরা জিহাদের
পথকে বেছে নিয়েছি।
.
.
আস-সাহাবঃ কিছু মানুষ যারা
দাওয়াতে দ্বীনের কাজে
নিয়োজিত রয়েছেন তারা বলে
থাকেন যে, মুজাহিদীনরা
আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াহ ও
তাবলীগের কাজকে গুরুত্বপূর্ণ
মনে করে না?
.
.
উস্তাদ আহমেদ ফারুকঃ অবশ্যই না,
এটি কিভাব সম্ভব? আমি এর
পূর্বেও বলেছি যে, আমরা তো
আল্লাহর হুকুমের গোলাম। আর
যিনি আমাদের উপর জিহাদকে
ফরয করেছেন তিনি আমাদেরকে
আদেশ করেছেন,
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺩْﺧُﻠُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴِّﻠْﻢِ
ﻛَﺎﻓَّﺔً ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻌُﻮﺍ ﺧُﻄُﻮَﺍﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ۚ ﺇِﻧَّﻪُ
ﻟَﻜُﻢْ ﻋَﺪُﻭٌّ ﻣُّﺒِﻴﻦٌ
হে ঈমানদার গন! তোমরা
পরিপূর্ণভাবে ইসলামের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং
শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না।
নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু। (বাকারাঃ ২০৮)
.
তাই ইসলামের মধ্যে যতগুলো
আহ্কামাত রয়েছে,তা জিহাদই
হোক অথবা
নামাজ,রোজা,হজ্জ,যাকাত,
দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্,সৎকাজের
আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ
ইত্যাদি সবগুলোকেই আমরা
আমাদের উপর ফরয মনে করে
থাকি। মুজাহিদীনদের তো
মুসলিমদের থেকে ভিন্ন অন্য
কোন আক্বীদা নেই। তবে
প্রত্যেকটি হুকুম শারিয়াহ্
যেভাবে বর্ণনা করেছে এবং
ফুকাহাগণ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন,
তাকে ঠিক ঐ অবস্থানেই রাখা
উচিত। তাই দাওয়াহ-কে আমরা
আমাদের দায়িত্ব মনে করে
থাকি এতে কোন সন্দেহ
নেই,কিন্তু এ বিষয়টিও জানা
থাকা উচিত যে,কিছু কিছু
পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যখন
জিহাদ ফারদুল ‘আইন হয়ে যায় আর
দাওয়াহ্ হয়ে যায় তখন ফারদুল
কিফায়া।
.
আর যখন জিহাদ ফারদুল ‘আইন হয়ে
যায়,তখন এমনই একটি বিশৃংখাপূর্ণ
পরিস্থিতিতে উপনীত হয় যে,সকল
ফুকাহাগণ লিখেছেন তখন
সন্তানকে তার পিতার কাছ
থেকে, দেনাদারকে
পাওনাদারের কাছ থেকে,
দাসকে তার মনিবের কাছ থেকে,
এমনকি স্ত্রীকে তার স্বামীর
কাছ থেকেও অনুমতি নেয়ার
প্রয়োজন হয় না। প্রত্যেককেই
তার দায়িত্ব পালনে এগিয়ে
আসতে হয়। এই বিশেষ
পরিস্থিতিতে জিহাদ যখন
ফারদুল ‘আইন হয়ে যায়, যখন এর
সাথে অন্য কোন কাজ
সাংঘর্ষিক হয় তখন জিহাদকেই
প্রাধান্য দিতে হবে। আর আমরাও
এই একই আক্বীদা পোষণ করি যে,
দাওয়াহর কাজও করবো;
যেমনিভাবে আপনার সাথে
আলোচনার মাধ্যমে হচ্ছে এবং
আপনিও যেই কাজের মধ্যে
নিয়োজিত রয়েছেন। আমরা
মুজাহিদ হওয়া সত্ত্বেও মানুষের
কাছে দাওয়াহ্ পৌঁছিয়ে
যাচ্ছি। এই দুয়ের মধ্যে কোন
বৈপরীত্য নেই,তবে যখন কোন
প্রকারের বৈপরীত্য আসে অথবা
সাংঘর্ষিক হয়,তখন জিহাদকেই
প্রাধান্য দিতে হবে। কিন্তু যে
বিষয়টিকে আমরা ঠিক মনে করি
না,তা হল দাওয়াহ-এর কাজকে
এমনভাবে উপস্থাপন করা যাতে
আজ জিহাদ যে ফারদুল ‘আইন তা
রহিত হয়ে যায়।
.
দাওয়াহ্ তো আমরা দিয়ে থাকি,
প্রত্যেক মুজাহিদ যে যেখানেই
আছেন সেখান থেকেই জিহাদের
পাশাপাশি দাওয়াহ্ দেয়ারও
চেষ্টা করেন। এটি তো এই
আলোচনার একটি দিক গেল আর
এই আলোচনার আরো একটি দিক
হল যা ইমাম শারাখতী (রহঃ)
বলেছেন, “ক্বিতাল এই জন্য ফরয
হয়নি যে শুধুমাত্র যুদ্ধ করা
হবে,বরং এটি ফরয হয়েছে যাতে
এর মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াহ্
পৌঁছানো হয়।” তাই ক্বিতাল
স্বয়ংদাওয়াহ্-এর একটি মাধ্যম।
তিনি এর পরে বলেন,“দাওয়াহ্-এর
দুটি ধরণ রয়েছে,এক ধরণের হচ্ছে
তরোবারীর মাধ্যমে দাওয়াহ
অর্থাৎ ক্বিতাল আর দ্বিতীয়
প্রকারের দাওয়াহ্ হচ্ছে মুখের
মাধ্যমে দাওয়াহ্ অর্থাৎ যাকে
আমরা তাবলীগ বলে থাকি।”
তিনি এর সাথে আরো উল্লেখ
করেন যে,“মুখের মাধ্যমে দাওয়াহ্
অর্থাৎ তাবলীগ হচ্ছে ক্বিতালের চেয়ে সহজতর একটি কাজ। কেননা, ক্বিতাল হচ্ছে
এমন একটি আমল যার দ্বারা
নিজের জান ও মালকে ঝুঁকির
মধ্যে ফেলা হয়। কিন্তু তাবলীগের মধ্যে এমন কোন কাজ করতে হয় না। তাই আমরা এখন
দাওয়াহর মধ্যে প্রথম ধরণটি করে
যাচ্ছি যা বেশি কষ্টকর ও
বিপদজনক কাজ এবং যার মধ্যে
বেশি কুরবানী চাওয়া হয়।
আর এ বিষয়টি শুধু তাঁর বর্ণনার
মধ্যেই সীমাবন্ধ নয় বরং আমরা
আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা
থেকে দেখেছি যে, ক্বিতাল ও
তরোবারীর মধ্যে আল্লাহ্
দাওয়াহ্-এর এক আশ্চর্যজনক
প্রতিক্রিয়া রেখেছেন। ১১ই
সেপ্টেম্বরের বরকতময় হামলার
কথা স্মরণ করে দেখুন, এর পরে
ইউরোপ এবং আমেরিকায় যে
বিপুল পরিমাণে মানুষ ইসলাম
গ্রহণ করেছে, তা ইতি পূর্বে বহু
বছর ধরে তাবলীগের কাজের
মাধ্যমেও সম্ভব হয়ে উঠেনি। কিছু
সংখ্যক ভাইয়ের জীবনের
কুরবারীর ফলে কুফ্ফারদের
ভূমিতেই বিপুল সংখ্যক মানু ষ
ইসলামের ছায়া তলে আসার জন্য
এক দাওয়াহর মাধ্যম তৈরি
হয়েছিল।
.
শাইখ ওসামা বিন লাদেন
(আল্লাহ্ তাঁকে হিফাজত করুন)
এক আলোচনার মধ্যে একটি খুবই
উত্তম কথা বলেছিলেন যে,
“মাক্কী সময়ের মধ্যে এমন কিছু
উত্তম দায়ী দাওয়াহ্ দিচ্ছিলেন
যাদের মত এই আসমান ও যমীন
পূর্বে না কখনো দেখেছিল আর
না পরবর্তীতে কখনো দেখবে
অর্থাৎ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্
ﷺ এবং তাঁর
সাহাবীগণ হযরত আবু বকর
(রা) ,হযরত উমর(রা) , হযরত উসমান
(রা) ,হযরত আলী (রা) প্রমূখ
সাহাবীগণ তখন দাওয়াহ্
দিচ্ছিলেন। সেখানে তের বছর
যাবৎ দাওয়াহ র কাজ চালিয়ে
যাওয়ার পর এক শত-এর কিছু বেশি
মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
ততক্ষণ পর্যন্ত শুধু মৌখিক
দাওয়াহর কাজ করা হচ্ছিল, আর
ঠিক এর কিছুদিন পর অর্থাৎ
মাদানী সময়ে যখন জিহাদকে
ফরয করা হল এবং মক্কা বিজয়
করা হচ্ছিল তখন যারা ইসলামের
ঘোরতর শত্রু ছিল তাদেরকেও যখন
রাসূল ﷺ-এর সামনে
আনা হল এবং তাদেরকে প্রিয়
নবীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা
হল যে তিনি কেমন ব্যক্তি, তখন
তারা উত্তরে বলতে লাগলো,‘আপনি একজন সম্ভ্রান্ত পিতার সম্ভ্রান্ত সন্তান।
এ জন্যই শাইখ উসামা (আল্লাহ্
তাঁকে হিফাজত করুন) বলেন,এ
রকম কেন হল- যেই ইসলাম তাদের
তের বছরের মৌখিক দাওয়াহর
মাধ্যমে বুঝে আসে নি এখন তা
অতি অল্প সময়ে কিভাবে বুঝে
এসে গেল? তা এ কারণে হয়েছে
যে, তরোবারী হক্ব কথাকে বুঝতে
সহায়তা করে। কেননা মানুষের
নফ্স সকল ক্ষেত্রেই এমন নয় যে শুধু
প্রমাণ দেখেই দাওয়াহ্-কে কবুল
করতে শুরু করে দেয়। যাদের নফ্স
প্রশান্ত তারা এভাবে কবুল করে
নেয়,তবে অনেক মানুষের
ক্ষেত্রেই তার নফসের কামনা-
বাসনা, অহংকার এবং
স্বেচ্ছাচারিতা তার উপরে
বিজয়ী হয়, যার সামনে হক্বের
পক্ষ থেকে প্রমাণ পেশ করার
পরও বিভিন্ন ধরনের অজুহাত
তৈরি করার চেষ্টা করে। তাই এ
ধরনের মানুষের জন্যই যখন
তরোবারী এসে পরে এবং শক্তির
শুধু প্রদর্শনী করা হয়, এখানে
গর্দনের আঘাত করার কথা বলা
হচ্ছে না শুধু প্রদর্শনী করা হয়,
তখন সে সহজভাবে দাওয়াহ্ কবুল
করে নেয়।
.
আর আমরা এই দৃষ্টি ভঙ্গিতে
দাওয়াহ্ থেকে আলাদা কোন
কাজ করছি না, বরং দাওয়াহর
রাস্তায় যে বাধা ও
প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাই দূর
করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং
‘দাওয়াহ্ বিল বানান’অর্থাৎ
তরোবারীর মাধ্যমে যে দাওয়াহ্
দেয়া হয় তা চালিয়ে যাচ্ছি।
আস-সাহাবঃ আমাদেরকে আপনি
কি অনুগ্রহ করে বলবেন যে,
আপনাদের শত্রু কারা অর্থাৎ
কাদের বিরুদ্ধে আপনারা এই
জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছেন?
.
.
উস্তাদ আহমেদ ফারুকঃ বন্ধু এবং
শত্রুর পরিচয় একজন মানুষের
জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে। যে এর মধ্যে ধোঁকা খায়
সে সারা জীবনই হোঁচট খেয়ে
ফিরতে থাকে। আর এটি আল্লাহ্র
রহমত যে তিনি আমাদেরকে এ
ধরনের হোঁচট খাওয়া থেকে
বাঁচিয়ে দিয়েছেন এবং তিনি
স্বয়ং আমাদের শত্রুদেরকে
আমাদের কাছে চিনিয়ে
দিয়েছেন। তাঁর শত্রু চিনিয়ে
দেয়ার এই ধরণ থেকেই আমরা
বুঝতে পারি যে, একজন মানুষের
জীবনে তার বন্ধু এবং শত্রুকে
চেনা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ একটি
বিষয়। আল্লাহ্ শত্রুকে চেনানোর
বিষয়টি তখন করেছিলেন, যখন
আদম (আঃ) যমীনের মধ্যে
নামেনও নি। আর তখনই তিনি
তাঁকে সাবধান করে বলে
দিয়েছিলেন যে, শয়তান তোমার
শত্রু, সে তোমাকে বিভ্রান্ত
করার চেষ্টা করবে, তাই তার
কাছ থেকে সতর্ক থেকো। পরে
যখন তিনি প্রতারিত হলেন
তারপরেও আল্লাহ্ তাঁকে
শিখিয়ে দিয়েছিলেন যে,
মু’মিনের বন্ধু ও সাহায্যকারী
হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্ । তাই
আল্লাহ্ কুরআনের এক জায়গায়
বলেন যে,
ﺇِﻥَّ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺈِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻟَﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﻩُ
ﻭَﻫَٰﺬَﺍ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟِﻲُّ
ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ
মানুষদের মধ্যে যারা ইব্রাহীমের
অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই
নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি
ঈমান এনেছে তারা ইব্রাহীমের
ঘনিষ্ঠতম-আর আল্লাহ হচ্ছেন
মুমিনদের বন্ধু। [আলে ইমরানঃ ৬৮]
.
এবং তিনি অন্য আরেক জায়গার
মধ্যে বলেন যে,
ﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻟَﻦ ﻳُﻐْﻨُﻮﺍ ﻋَﻨﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ۚ ﻭَﺇِﻥَّ
ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀُ ﺑَﻌْﺾٍ ۖ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟِﻲُّ
ﺍﻟْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ
আল্লাহর সামনে তারা আপনার
কোন উপকারে আসবে না।
যালেমরা একে অপরের বন্ধু। আর
আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু।
[জাসিয়াঃ ১৯]
.
তাই সর্বপ্রথম আমাদের বন্ধু হচ্ছে
ঐ সত্ত্বা যাঁর উপর আমরা ভরসা
করে থাকি, আর আমাদের শত্রু
হচ্ছে সে যাকে শয়তান বলা হয়।
এরপর আল্লাহ্ আমাদেরকে
শয়তানের চেলা-চামুন্ডা আছে
তাদেরকেও চিনিয়ে দিয়েছেন।
এবং এরপর আল্লাহ্ আরো
বলেছেন,
ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﺄَﻋْﺪَﺍﺋِﻜُﻢْ ۚ ﻭَﻛَﻔَﻰٰ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟِﻴًّﺎ
ﻭَﻛَﻔَﻰٰ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻧَﺼِﻴﺮًﺍ
অথচ আল্লাহ তোমাদের
শত্রুদেরকে যথার্থই জানেন। আর
অভিভাবক হিসাবে আল্লাহই
যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী
হিসাবেও আল্লাহই যথেষ্ট।
[নিসাঃ৪৫]
.
তাই শত্রু কে আমি তা নিজে
নির্ধারণ করতে পারবো না অথবা
আমার নাফ্স কিংবা অন্য কেউই
তা নির্ধারণ করতে পারবে না।
এজন্য প্রত্যেক মুমিন যে আল্লাহর
প্রতি ঈমান রাখে তাকে আল্লাহ,
তাঁর কিতাব এবং রাসূলের
ﷺ দিকেই
প্রত্যাবর্তন করা উচিত। আমরা
যদি তাঁর দিকে ফিরে যাই, তা
হলে দেখতে পাবো যে তিনি
আমাদের শত্রুদের ব্যাপারে
এতোই গুরুত্ব দিয়েছেন
যে,শত্রুদের মধ্য থেকে স্তর করেও
আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন,
ﻟَﺘَﺠِﺪَﻥَّ ﺃَﺷَﺪَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻋَﺪَﺍﻭَﺓً ﻟِّﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ
ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩَ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺷْﺮَﻛُﻮﺍ ۖ ﻭَﻟَﺘَﺠِﺪَﻥَّ ﺃَﻗْﺮَﺑَﻬُﻢ
ﻣَّﻮَﺩَّﺓً ﻟِّﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺼَﺎﺭَﻯٰ ۚ
ﺫَٰﻟِﻚَ ﺑِﺄَﻥَّ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻗِﺴِّﻴﺴِﻴﻦَ ﻭَﺭُﻫْﺒَﺎﻧًﺎ ﻭَﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻟَﺎ
ﻳَﺴْﺘَﻜْﺒِﺮُﻭﻥَ
আপনি সব মানুষের চাইতে
মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও
মুশরেকদেরকে পাবেন এবং
আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের
সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী
তাদেরকে পাবেন,যারা
নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে। এর
কারণ এই যে, খ্রীষ্টানদের মধ্যে
আলেম রয়েছে,দরবেশ রয়েছে
এবং তারা অহঙ্কার করে না।
[মায়েদাঃ ৮২]
.
আল্লাহ এখানে নাসারাদের
তুলনায় ইহুদী ও মুশরিকদের
শত্রুতাকে বেশি প্রাধান্য
দিয়েছেন। এরাই হচ্ছে আমাদের
সেই শত্রু অর্থাৎ ইহুদী,মুশরিক
এবং অনেক ক্ষেত্রে
নাসারা,যাদের বিরুদ্ধে আজ
আমরা আমাদের ক্বিতাল
চালিয়ে যাচ্ছি। এরা তো হচ্ছে
বাহিরের শত্রু যাদের বিরুদ্ধে
আল্লাহর অনুগ্রহে,রহমতে এবং
নিয়ামতে বেশ কয়েক বছর যাবৎ
দুনিয়ার বিভিন্ন ভূমিতে
ক্বিতাল পরিচালিত হয়ে আসছে।
যা পুরো দমে শুরু হয়েছিল ১৯৯৬
সালে ঘোষণার মাধ্যমে এবং
এরপর থেকে এই ক্বিতাল এখন
পর্যন্ত চালু আছে।
যেমনঃ আমেরিকার সামুদ্রিক যুদ্ধ
জাহাজকে লক্ষ্য করে হামলা,
কেনিয়া ও তানজেনিয়ায়
আমেরিকার এ্যাম্বাসিকে লক্ষ্য
করে হামলা, আর ঠিক একই ভাবে
১১ই সেপ্টেম্বরে আমেরিকান
ভূমিকে লক্ষ্য করে হামলা
চালানো এবং পরবর্তীতে ৭ই
জুলাই লন্ডনে পরিচালিত হামলা
অর্থাৎ এগুলো ছিলো তাদের
বিরুদ্ধে ক্বিতালের একটি
ধারাবাহিকতা যা দুনিয়ার
বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে
পরিচালিত হয়েছিল।
.
এরপর চতুর্থ শত্রু হচ্ছে যার কথা
কুরআনেও বহু জায়গায় এসেছে আর
হাদিসেও বহু জায়গায় এসেছে
এবং পূর্ববর্তী সালাফগণও
তাদের লিখনীতে তাদের কথা
উল্লেখ করেছেন, তারা হল
মুরতাদ্দ্বীন (দ্বীন ত্যাগী)। এদের
ব্যাপারেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন
কারণ পূর্ববর্তী অনেক উলামাগণই
তাদের বিষয় এতোটাই গুরুত্ব
দিয়েছেন যে,তাদের শত্রুতাকে
ইহুদী ও মুশরিকীনদের শত্রুতা
থেকেও বিপদজনক বলে উল্লেখ
করেছেন। যেমন সাহেবে মাজমু’আ
আল-আনওয়ারে মুরতাদ্দ্বীনদের
বিষয়ে লিখেছেন, তরোবারী
যাদের বিরুদ্ধে চালানো হবে
তাদের মধ্যে মুরতাদ্দ্বীনের কথা
উল্লেখ করে বলেন,মুরতাদ্দ্বীন হল
কুফ্ফারদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট
কাফের, কারণ তারা ঈমান আনার
পরে দ্বীনকে পরিত্যাগ করেছে।
সুতরাং, বাহিরের এই তিন শত্রু
আর ভিতরের এক শত্রু,যাদের
বিরুদ্ধে আজ আমরা আমাদের
ক্বিতালকে চালিয়ে যাচ্ছি।
তাই যখন যে পরিস্থিতে যে
শত্রুকে প্রাধান্য দিয়ে ক্বিতাল
করতে হয় আমরা তাদের বিরুদ্ধে
কার্যক্রম পরিচালিত করে থাকি।
.
.
আস-সাহাবঃ যখন
আফগানিস্তানে মুসলমানরা
রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল,তখন
আমেরিকা ও মুসলিম জাহানের
এক বিশাল অংশ
মুজাহিদীনদেরকে সাহায্য-
সহযোগিতা এবং অস্ত্র-সস্ত্র ও
বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র
দিয়ে সহায়তা করছিল,কিন্তু আজ
যখন আমেরিকার সাথে
মুজাহিদীনরা যুদ্ধ করে যাচ্ছে
তখন তারা কোথা থেকে এ ধরনের
সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে এবং
কি ধরনের অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে
তাদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করা
হচ্ছে?
.
.
উস্তাদ আহমেদ ফারুকঃ সত্যিকার
অর্থে,এটি হচ্ছে অনেক গুলো
মিথ্যা প্রপাগান্ডাগুলোর মধ্যে
একটি খুব বড় ধরনের প্রপাগান্ডা
যা সারা দুনিয়াতে বিভিন্ন
মিডিয়ার মাধ্যমে বিশেষ করে
আমেরিকার মিডিয়াগুলো
নিজেরাই গুরুত্বের সাথে
ছড়িয়েছে। বলা হয়ে থাকে
যে,‘রুশের পতন আমেরিকার
সাহায্য ও সহযোগিতার দ্বারাই
হয়েছে’-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল
একটাই,তা শুধু এখানেই করা হয়নি
বরং মুজাহিদীনরা যতগুলো বড় বড়
কাজ করেছে তার প্রত্যেকটিতে
এ ধরনের কথা বলা হয়েছে। হোক
১১ই সেপ্টেম্বরের হামলায় অথবা
অন্য কোন সময়ের কথা- তারা এই
উম্মাতকে বোঝানোর চেষ্টা
করেছে যে মুজাহিদীনদের
দ্বারা এ ধরনের কাজ করা অসম্ভব
অর্থাৎ মুজাহিদীনদের এত বড়
কাজ করার সামর্থ্য নেই। যাতে
করে এই উম্মাতের মধ্যে এর
দ্বারা উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরী
হতে না পারে এবং গোলামীর এই
জিঞ্জিরকে ভাঙ্গার জন্য যে
সাহসের প্রয়োজন তা তৈরী হতে
না পারে। এটিই হচ্ছে ঐ উদ্দেশ্য
যার জন্য তারা বছরের পর বছর
প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছে,
কিন্তু বাস্তবতা এমনটি নয়।
বাস্তবতা হচ্ছে, আফগানিস্তানে
১৯৭০ সালের শেষের দিক থেকে
রুশদের বিরুদ্ধে মুজাহিদীনদের
জিহাদ শুরু হয়,তখন থেকে শুরু করে
১৯৮৫-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত
আমেরিকার মত কোন বহিঃশক্তি
এর মধ্যে না কোন প্রকারের
সাহায্য সহযোগিতার জন্য
এগিয়ে এসেছিল আর না এ
ব্যাপারে কোন প্রকার আগ্রহ
তারা দেখিয়েছিল। সবাই ঐ
সময়ে দূরে বসে বসে তামাসা
দেখছিল, আর তারা মনে করছিল
এটি একেবারে অসম্ভব ব্যাপার
যে,এই সামান্য অস্ত্র দিয়ে এবং
এত অল্প সংখ্যক মুজাহিদীনদের
দ্বারা রুশের মত এত শক্তিশালী
বাহিনীর (যাকে দেখে তখন
ইউরোপ পর্যন্ত কেঁ পে উঠত) পতন
ঘটানো হবে। এই দীর্ঘ জিহাদের
যে সময় অতিক্রম হয়েছে তা খুবই
কঠিন একটি পরিস্থিতির উপর
দিয়ে গিয়েছে, আমেরিকা বা
অন্য কোন তাগুতের পক্ষ থেকে
কোন প্রকারের সাহায্য-
সহযোগিতা তখন আসে নি। ঐ
সময়ের বয়োজ্যেষ্ঠ মুজাহিদীনরা
আজও পর্যন্ত এর সাক্ষ্য বহন করে
আছেন। কেবল মুজাহিদীনদের
কুরবানী,শহীদের রক্তের বিনিময়
এবং আল্লাহর নুসরাতের দ্বারাই
ঐ জিহাদ এগিয়ে চলছিল।
১৯৮৫-৮৬ সালের পর জিহাদ একটি
অবস্থানে পৌঁছালো এবং
আমেরিকার এর মধ্যে দাখিল
হওয়া অথবা না হওয়া উভয়
অবস্থাতেই আল্লাহর নুসরাত
সেখানে জারি থাকারই কথা
ছিল। এই অবস্থাতে আমেরিকা
সেখানে আসলো,আমেরিকা
এসেছিল তার নিজের স্বার্থ
হাসিলের উদ্দেশ্যে।
.
প্রথমতঃ বিষয় ছিল আমেরিকা
চাচ্ছিল না যে মুজাহিদীনদের
এই বিজয় যাতে এমন কোন
পরিস্থিতির দিকে যায় যা স্বয়ং
আমেরিকার জন্য বিপদের কারণ
হয়ে যায়।
.
আর দ্বিতীয়তঃ তখন রাশিয়া
ছিল আমেরিকার সবচেয়ে বড় শত্রু
যার পতন সে চাচ্ছিল। তারপরও ঐ
পরিস্থিতিতেও এ কথা বলা ঠিক
হবে না যে আমেরিকা
মুজাহিদীনদেরকে সাহায্য-
সহযোগিতা করেছিল। শাইখ
আব্দুল্লাহ্ আজ্জাম (রহঃ) যিনি
আরব মুজাহিদীন শাইখদের মধ্যে
থেকে একজন খুবই উঁচুমানের শাইখ
ছিলেন,তিনি ১৯৮৭-৮৮ সালের এক
খুতবায় বলেন,“কোথায় সেই
আমেরিকার সাহায্য যা
লোকেরা বলে থাকে যে,
আমেরিকা আমাদেরকে
ষ্টেনগ্যান দিয়েছে,আমরা তো
ষ্টেনগ্যান বাজার থেকে ক্রয়
করি আর একটি ষ্টেনগ্যানের দাম
হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা।” ঐ যুগে
৭০ হাজার টাকা কোন সাধারণ
কোন বিষয় ছিল না, শাইখ
আজ্জাম (রহঃ) বলেন, “৭০ হাজার
টাকা দিয়ে ক্রয় করা ষ্টেনগ্যান,
তারা তো আর আমাদেরকে
উপহার দিচ্ছে না। এটি তো একটি
ব্যবসা যা যে কারোর সাথেই
করা যেতে পারে। তাহলে এর
মধ্যে তাদের সাহায্য-
সহযোগিতার বিষয়টি কোথায়
রইল?” এছাড়াও যদি আরব
মুজাহিদীনের কথা বলা হয়
যাদের তখন একটি বড় ধরনের
অবদান ছিল,তাহলে তাঁরা
আমেরিকার কাছ থেকে কোন
প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতা
গ্রহণ করে নি, তাদের এই কথার
মধ্যে বিন্দু মাত্র সত্যের ছোঁয়া
নেই,বরং পুরোটাই মিথ্যা ও
বানোয়াট একটি বিষয়।
তার পরেও যদি আমরা ধরে নেই
যে, গুটি কয়েক ছোট মাজমুয়া
তাদের কাছ থেকে সাহায্য-
সহযোগিতা নিয়েছিল,তাহলে
তারা যদি শারিয়াতে কুফ্ফারদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার শর্তগুলোকে পূরণ করা
ছাড়াই নিয়ে থাকে,তবে অবশ্যই
তারা ভুল কাজ করেছিল। এ
কারণে যে খারাপ ফলাফল
হয়েছে অর্থাৎ জিহাদের ভূমি
থেকে বরকত উঠে যাওয়া,এ
বিষয়টিও সবাই লক্ষ্য করেছিল।
যেমনটি শাইখ আব্দুল্লাহ্
আজ্জাম(রহঃ) নিজেই এ বিষয়ে
আলোচনা করতে গিয়ে বলেন যে,
“১৯৮৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ
যতদিন আমেরিকা এই ভূমিতে
প্রবেশ করেনি ততদিন পর্যন্ত
এখানকার মুজাহিদীনরা অগণিত
আল্লাহর সাহায্য এবং কেরামত
দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু ৮৬’সালের পরে যখন
মুজাহিদীনদের থেকে কিছু লোক
আমেরিকার দিকে ফিরতে শুরু
করল আর তাও সরাসরি ছিল না
পাকিস্তান অথবা সৌদি আরবের
শাসকদের মাধ্যমে করা হচ্ছিল,
তখন থেকেই জিহাদের ভূমি
থেকে ধীরে ধীরে বরকত কমে
যাওয়া শুরু করেছিল”। কিন্তু এর
অর্থ এ নয় যে সব মুজাহিদীনরাই
এর মধ্যে অর্ন্তভূক্ত হয়েছিল বরং
গুটি কয়েক মাজমুয়া এ কাজ
করেছিল। কারণ তখনও এমন অনেক
আলেম-উলামা এবং মুজাহিদীন
ছিলেন যারা তাদের হাতকে ঐ
সকল লোকদের সামনে বিছিয়ে
দেন নি। এর প্রমাণ হচ্ছে তাদেরই
বংশধর থেকে আজ তাদের
সন্তানেরা আমেরিকার বিরুদ্ধে
জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি এ
বিষয়ে পুরো একটি কিতাব
লিখেছিলেন “আফগান জিহাদের
আর- রহমানের সাহায্য”, যেখানে
তিনি বর্ণনা করেছেন এ রকম বহু
কেরামতের ঘটনা যা তখন
সংঘটিত হয়েছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top