সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আল ওয়ালা ওয়াল বারা

কোন মন্তব্য নেই:

আল ওয়ালা ওয়াল বারা
.
.
.
.
‘ওয়ালা’র উৎস হচ্ছে ভালবাসা এবং
‘বারা’র উৎস ঘৃণা; অন্তর এবং কাজ এই দুটি
দ্বারাই এটি বাস্তবে পরিণত হয়। ‘ওয়ালা’
অন্তরঙ্গতায়, উদ্বিগ্নতায় এবং সাহায্যের
দিকে উৎসাহিত করে। ‘বারা’ বাধা,
প্রতিবন্ধকতা, শত্রুতা এবং অস্বীকারকে
ইন্ধন যোগায়। ‘ওয়ালা’ এবং ‘বারা’ দুটোই
ঈমানের ঘোষণার সাথে জড়িত এবং এর
আবশ্যকীয় মূল সূত্রগুলোকে প্রতিষ্ঠিত
করে।
.
আল ওয়ালা (ভালবাসা, সাহায্য করা,
রক্ষা করা, অনুসরণ করা ইত্যাদি) এর প্রকৃত
অর্থ হচ্ছে কথা, কাজ ও ঈমানের মধ্যে
সামজ্ঞস্য থাকা যা আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট
করে এবং ঐ সমস্ত মানুষদের সাথে একমত
হওয়া যাদেরকে আল্লাহ্ ভালবাসে, এই
সময়ে যেখানে সত্যকে উপস্থাপন করা
হচ্ছে মিথ্যা হিসেবে, ন্যায়পরায়ণতা
মনে করা হচ্ছে অবাধ্যতা এবং একজনের
ভূমি ও মর্যাদা রক্ষা করাকে বলা হচ্ছে
জঙ্গীবাদ, স্বাভাবিকভাবেই সেখানে
ঈমানের মূল স্তম্ভ ও ইসলামের প্রকৃত
অবস্থা সম্পর্কে অনেক দ্বিধাগ্রস্ততায়
অবতারণা হয়। যাদের অন্তরে গোমরাহী
রয়েছে, তারা নিজেদের সুবিধানুযায়ী
ইসলামের অনেক মূল বিষয়ের অপব্যাখ্যা
করেছে কারণ ঐগুলো তাদের কামনা-
বাসনা ও উদ্দেশ্যের বিপরীত। এমনকি
আক্বীদার মূল বিষয়গুলোও তাদের ষড়যন্ত্র
থেকে রক্ষা পায় নি। ‘আল ওয়ালা ওয়াল
বারা’ এমন একটি বিশ্বাস যা মুসলমানদের
সকল কাজ ও কথাকে পরিচালিত করে
এবং এটার অনুশীলন ও বাস্তবায়নের উপর
মু’মিনদের মর্যাদার স্তরের তারতম্য ঘটে।
এটা উপদেশ মূলক যে, এই বিশ্বাস
মুসলিমদের মনমানসিকতার ক্ষেত্রে
দ্ব্যর্থহীন হবে যা তার সমস্ত কার্যে
সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে।
‘‘মু’মিনরা যেন মু’মিনদের ব্যতীত
কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে
কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহ্র
কোন সম্পর্ক থাকবে না; তবে ব্যতিক্রম,
যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে
আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর।
আর আল্লাহ্ তাঁর নিজের সম্বন্ধে
তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং
আল্লাহ্র দিকেই প্রত্যাবর্তন।
বলঃ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা যদি
তোমরা গোপন অথবা ব্যক্ত কর আল্লাহ্ তা
অবগত আছেন এবং আসমান ও যমীনে যা
কিছু আছে তাও অবগত আছেন। আল্লাহ্
সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’’ (সূরা আলি
‘ইমরান ৩ঃ ২৮-২৯)
.
শানে নূযূলঃ
.
আয়াতটি মু’মিনদের একটি দল সম্মন্ধে
নাযিল হয়েছে যাদের ইহুদী বন্ধু ছিল। এই
সমস্ত মু’মিনরা ঐ ইহুদীগুলোকে সমর্থন,
সাহায্য সহযোগীতা করত। কিছু সাহাবী
ঐ সমস্ত মু’মিনদের বললঃ ‘‘এই সমস্ত
ইহুদীদের থেকে দূরে থাক এবং তাদের
সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাক, কারণ
তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন
থেকে বিচ্যুত করতে পারে এবং
তোমাদের ঈমান আনার পরে
তোমাদেরকে গোমরাহীর দিকে
পরিচালিত করতে পারে। যাই হোক
মু’মিনদের এই দলটি উপদেশ অগ্রাহ্য করল
এবং তাদের ইহুদী বন্ধুদের সাথে অনুগত
ছিল; এবং তখন আল্লাহ্ তা‘আলা নাযিল
করলেনঃ ‘‘মু’মিনরা যেন কাফেরদের বন্ধু
হিসাবে গ্রহণ না করে’’। আল-কুরতুবী তাঁর
তাফসীরে বর্ণনা করেনঃ ইবনে আববাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, উপরোক্ত আয়াতটি
বদরী আনসার সাহাবী উবাদা বিন আস
সামিত এর ব্যাপারে নাযিল হয়েছে যার
সাথে ইহুদীদের যোগ সাজশ ছিল।
খন্দকের যুদ্ধের দিনে উবাদা মুহাম্মাদ
(সাঃ) কে বললঃ ‘‘হে আল্লাহ্র রাসূল
(সাঃ), আমার সাথে পাঁচশত ইহুদীদের
বন্ধুত্ব রয়েছে, আমার মনে হয় তারা
আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্যের
জন্য এগিয়ে আসবে।’’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র
করে আল্লাহ্ তা’আলা উপরোক্ত আয়াত
নাযিল করেন।
.
আয়াতটির সাধারণ অর্থঃ
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর মু’মিন
বান্দাদেরকে কাফেরদের সাথে সমস্ত
রকমের সাহায্য সহযোগীতা প্রদর্শন নিষধ
করেছেন। এটা তাদের সাথে স্পষ্ট
ভালবাসা ও করুনার সম্পর্ককে অথবা
আত্মীয়তার পরিচিতির কারণে তাদের
সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগীতার সম্পর্ককে
মজবুত বা শক্তিশালী করে। মু’মিনরা
আল্লাহ্র শত্রুদের বন্ধু হতে পারে না এবং
আল্লাহ্র ভালবাসা ও তার শত্রুদের
ভালবাসাকে একত্রিত করা একজন
মানুষের পক্ষে অসম্ভব কারণ এটা হচ্ছে
বিপরীত দুই বস্তু অথবা ব্যাপারের সমন্বয়
সাধন; সেজন্য যে আল্লাহ্কে ভালবাসে,
সে অবশ্যই তাঁর (আল্লাহ্) শত্রুদের ঘৃণা
করবে।
.
কাফেরদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, সাহায্য
করা এবং মু’মিনদের ত্যাগ করা
মুসলিমদের জন্য হারাম। ঈমান ও কুফরের
যে কোন ব্যাপারে কোন সাহায্য
সহযোগীতা অথবা সম্বন্ধ নাই। পূর্ববর্তী
আয়াত আমাদের কাফেরদের সাথে
পৃষ্টপোষকতার ব্যাপারে সতর্ক করেছে
এবং এরূপ কাজের পরিণতি সম্পর্কে
অবহিত করেছে, শুধুমাত্র বিশেষ
প্রয়োজনের নিমিত্তে যখন কেউ তার
অন্তরের অবস্থা গোপন করে প্রকাশ্যে
অভিনয় করতে বাধ্য হয় অবিশ্বাসীদের
থেকে জীবনের ক্ষতি বা আঘাত থেকে
নিজেকে রক্ষা করতে। এই অবস্থাকে
‘তাক্বীয়া’ বলা হয় যা শুধুমাত্র এই
অবস্থায় সম্মতিপ্রাপ্ত।
এই আয়াতের শেষে যারা আল্লাহ্কে
অমান্য করে এবং কাফেরদের সাহায্য-
সহযোগীতা করে তাদের ব্যাপারে কঠোর
শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে। এই ভয়
প্রদর্শন এরূপ পাপের ভয়াবহতার নির্দেশ
করে।
.
শরীয়তের পরিভাষায় ‘আল ওয়ালা
ওয়াল বারা’র সংজ্ঞাঃ
.
.
‘আল ওয়ালা’ (ভালবাসা, সমর্থন করা,
সাহায্য করা, অনুসরণ) এর শরয়ী অর্থ হচ্ছে
যে শুধু আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করতে ভালবেসে
কথা, কাজ ও বিশ্বাসে সম্পূর্ণ একমত হয়।
‘আল বারা’ (ঘৃণা করা, ত্যাগ করা, দূরে
থাকা ইত্যাদি) হচ্ছে ‘আল-ওয়ালা’র
সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ঐ সমস্ত সব কিছুর
সাথে বিরোধিতা করা, ভিন্নমত পোষণ
করা যা আল্লাহ্ ঘৃণা করেন এবং
দোষারোপ করেন, যেহেতু, ‘আল ওয়ালা
ওয়াল বারা’র বিশ্বাসের ক্ষেত্রে চারটি
বিষয় জড়িত, যথাঃ কথা, কাজ, বিশ্বাস
এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বগণ। কিছু জিনিস
যা আল্লাহ্কে (সুবঃ) সন্তুষ্ট করে সেগুলো
হচ্ছে- আল্লাহ্র স্মরণ (যিকির), আল্লাহ্র
রাস্তায় জিহাদ করা, আল্লাহ্র
একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং মু’মিনদের
ভালবাসা। গীবত, যিনা, শির্ক এবং কুফর
হচ্ছে এমন কতগুলো জিনিষ যা আল্লাহ্
(সুবঃ) ঘৃণা করেন এবং এগুলো মু’মিনদেরও
অবশ্যই ঘৃণা করতে হবে।
.
.
.
‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’য় বিশ্বাসের মর্যাদাঃ
.
.
.
ইসলামী আক্বীদায় ‘আল-ওয়ালা ওয়াল
বারা’য় বিশ্বাস একটি উচ্চ মর্যাদা দখল
করে আছে। এটি নিম্নলিখিত কারণ গুলো
হতে বুঝা যেতে পারে• একটি অংশ
যেমনঃ ‘‘কোন ইলাহ নেই’’ যা হলো
‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই’’-এর অংশ।
যাতে বুঝায়ঃ আল্লাহ ছাড়া যে সবকিছুর
ইবাদত করা হয় সে সব হতে মুক্ত এবং
নিরাপদ থাকা। সর্ব শক্তিমান আল্লাহ
(সুবঃ) বলেনঃ ‘‘আমি প্রত্যেক উম্মতের
মধ্যে কোন না কোন রাসূল পাঠিয়েছি, এই
নির্দেশ প্রচারের জন্য যে, তোমরা কেবল
মাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত
থেকে দূরে থাক…।’’ (সূরা নাহ্ল ১৬ঃ ৩৬)
.
• ‘আল-ওয়ালা ওয়াল বারা’ অন্যতম প্রধান
আক্বীদা যা হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে দৃঢ়তম
বন্ধন। আল-বাররা বিন আজিব (রাঃ) হতে
বর্ণিত যে, নবী (সাঃ) বলেনঃ ‘আল্লাহ্র
জন্য ভালবাসা এবং আল্লাহ্র জন্য ঘৃণা
করা হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে দৃঢ়
বন্ধন।’ ]আহমাদ]
.
• এটা হচ্ছে এমন একটা ভিত্তি যেটার
দ্বারা অন্তর ঈমানের সৌন্দর্য্য এবং পরম
আশ্বস্ততা অনুভব করে। নবী (সাঃ)
বলেনঃ ‘‘যারই নিম্ন লিখিত তিনটি
বৈশিষ্ঠ্য থাকবে সে ঈমানের মাধূর্য লাভ
করবেঃ (১) তার কাছে আল্লাহ্ ও তাঁর
রাসূল অন্য যেকোন কিছুর তুলনায় অধিক
প্রিয় হবে। (২) যে একজনকে ভালবাসে
এবং তাকে ভালবাসে শুধুমাত্র আল্লাহ্র
জন্য। (৩) এবং সে কুফরীতে ফেরত
যাওয়াকে এমনভাবে ঘৃণা করে যেমন সে
আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ঘৃণা
করে।’’ [সহীহ্ বুখারী, মুসলিম]
.
• এটা হচ্ছে বুনিয়াদ যেটার উপর মুসলিম
সম্প্রদায়ের সমস্ত সম্বন্ধ এবং আদান-
প্রদান নির্ভর করে, যেমন মুহাম্মাদ (সাঃ)
বলেনঃ ‘‘তোমাদের ঈমান নাই যতক্ষণ সে
নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা তার ভাই
(মুসলিম) এর জন্য পছন্দ করে।’’ [বুখারী]
এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বলেনঃ
‘‘মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই ছাড়া আর কিছু
নয়; সুতরাং তোমরা ভ্রাতৃগণের মধ্যে
শান্তি স্থাপন কর আর আল্লাহ্কে ভয় কর
যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।’’ (সূরা
হুজুরাত ৪৯ঃ ১০)
.
• তাদের জন্য অনেক বড় ও অফুরন্ত পুরস্কার
রয়েছে যাদের বৈশিষ্ট হচ্ছে, তারা যখন
কাউকে ভালবাসে শুধু আল্লাহ্র জন্যই
ভালবাসে। নবী (সাঃ) স্পষ্টভাবে
বলেছেনঃ ‘‘যারা আমাকে ভালবাসে
তারা কিয়ামতের দিন একটি নূরের
মিম্বরের উপর দাড়াবে।’’ তিনি (সাঃ)
আরও বলেনঃ ‘‘সাত প্রকারের লোক
যাদেরকে আল্লাহ্ তাঁর ছায়ার নিচে
আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত
কোন ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে
একজন হচ্ছে, যারা আল্লাহ্র জন্য একে
অন্যকে ভালবাসত, তারা আল্লাহ্র জন্য
মিলিত হত এবং আল্লাহ্র জন্য বিচ্ছিন্ন
হত।’’
.
• এটা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধন বা
সম্পর্ক যা মানুষের মধ্যে পরস্পর বন্ধন
তৈরী করে। আল্লাহ্ তা’আলা এটাকে সব
ধরনের বন্ধনের উপর প্রাধান্য দিয়ে
দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেনঃ ‘‘বল,
তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ্, তাঁর রাসূল
এবং আল্লাহ্র পথে জিহাদ করা অপেক্ষা
অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা,
তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী,
তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের
অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য
যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং
তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস,
তবে অপেক্ষা কর আল্লাহ্র বিধান আসা
পর্যন্ত। আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে
সৎপথ প্রদর্শন করেন না।’’ (সূরা তওবা ৯ঃ
২৪)
.
• এই ‘আল-ওয়ালা ওয়াল বারা’ আক্বীদা
হচ্ছে আল্লাহ্র ‘ওয়ালাহ (আত্মরক্ষা,
ক্ষমতা, কতৃত্ব, রাজত্ব) পাবার একটি
মাধ্যম। ইবনে জারীর ইবনে আববাস (রাঃ)
হতে বর্ণনা করেছেনঃ ‘‘যে আল্লাহ্র জন্য
ভালবাসে এবং আল্লাহ্র জন্য ঘৃণা করে
যে আল্লাহ্র জন্য ‘মুয়ালাত’(সাহায্য করা,
সমর্থন করা) করে এবং আল্লাহ্র জন্য
শত্রুতা পোষণ করে, সে আল্লাহ্র
‘ওয়ালায়াহ’ অর্জন করবে।’’
.
• আল ওয়ালা ওয়াল বা’রার সম্পর্ক
কেয়ামতের দিনেও থাকবে যা আল্লাহ
সর্বজ্ঞাতা আমাদের পূর্বেই
জানিয়েছেনঃ ‘‘যারা অনুসৃত হয়েছে-
তারা যখন অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান
করবে তখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে
এবং তাদের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হয়ে
যাবে।’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ১৬৬)
.
• যে আল্লাহ্ ও তাঁর দ্বীন ছাড়া অন্য
কিছুকে ভালবাসে এবং তাকে (আল্লাহ্),
তার দ্বীনকে অথবা তার অনুসারীদের
ঘৃণা করে, সে নিশ্চিত কাফের। আল্লাহ্
তা’আলা বলেনঃ ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা
ইহুদী ও খৃষ্টাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে
না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু।
তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে
গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে
সৎপথে পরিচালিত করেন না।’’ (সূরা
মা‘য়িদা ৫ঃ ৫১)
.
• ‘আল-ওয়ালা ওয়াল বারা’ হচ্ছে ঈমানের
অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর পূর্ণতার জন্য
এটি প্রয়োজনীয়। একটি হাদীসে
রয়েছেঃ ‘‘যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য
ভালবাসে, আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য ঘৃণা
করে আল্লাহ্র জন্য দান করে এবং
আল্লাহ্র জন্য (দান করা হতে) বিরত
থাকে, ঐ ব্যক্তি তার ঈমানকে পরিপূর্ণ
করেছে।’’ [আহমাদ ও তিরমিযী, হাসান
হাদীস]
.
.
(২)(ইহুদীবাদীদের সাথে শান্তি প্রয়াস)
আমেরিকান সম্রাজ্যবাদ এবং উপসাগরীয়
ক্রুসেডে (ধর্মযুদ্ধ), নিষ্ঠাবান আলেমরা
নির্যাতিত এবং তাদেরকে বন্ধী অবস্থায়
আটকে রাখা, এগুলো হচ্ছে বর্তমান কিছু
আল্লাহ্র শরীয়াহর ভয়াবহ অবমাননা,
যারা আমাদের কর্তৃত্বে নিয়োজিত তারা
‘আল-ওয়ালা ওয়াল বারা’ অনুশীলন করছে!!!
এটা আশা করা যায় যখন ‘নিফাক’ তার
কন্ঠ উঁচু করেছে এবং সাধারণ মুসলিম
জনগণের মগজ ধোলাইয়ের জন্য তারা কিছু
কুরআনের অনুশাসনকে বিকৃত করেছে।
পুনরায় ইসলামের বিজয়ের জন্য উম্মাহকে
অবশ্যই পবিত্র আল কুরআনুল কারীমকে
এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যেভাবে
আমাদের পূর্ববর্তী সালেহগণ করেছেনঃ
পরিষ্কারভাবে সততার সাথে এবং
নবুয়তের ধারায়, শুধুমাত্র আল্লাহ্কে
ছাড়া কাউকে ভয় না করে।
.
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা ঈমানদার ব্যতীত
অন্য কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ
করো না। তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে
ত্রুটি করবে না; যা তোমাদেরকে বিপন্ন
করে তাই তারা কামনা করে। তাদের মুখে
বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা
গোপন রাখে তা আরও গুরুতর। তোমাদের
জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বিবৃত
করা হলো, যদি তোমরা অনুধাবন কর। দেখ,
তোমরাই তাদেরকে ভালবাস কিন্তু তারা
তোমাদেরকে ভালবাসে না অথচ তোমরা
সমস্ত কিতাবে ঈমান রাখ আর তারা যখন
তোমাদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে,
আমরা বিশ্বাস করি; কিন্তু তারা যখন
একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি
আক্রোশে তারা নিজেদের আঙ্গুলের
অগ্রভাগ দাঁতে কাটতে থাকে। বল,
‘তোমাদের আক্রোশেই তোমরা মর’।
অন্তরে যা রয়েছে সে সম্বদ্ধে আল্লাহ্
সবিশেষ অবহিত। তোমাদের মঙ্গল হলে
তারা তাদেরকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের
অমঙ্গল হলে তারা এতে আনন্দিত হয়।
তোমরা যদি ধৈর্যশীল হও এবং মুত্তাকী
হও তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুই
ক্ষতি করতে পারবে না। তারা যা করে
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা পরিবেষ্টন করে
রয়েছেন।’’ (সূরা আলি ‘ইমরান ৩ঃ ১১৮-১২০)
.
এই প্রবন্ধের প্রথম অধ্যায়-এ আমরা
ইসলামী শরীয়ায় ‘আল ওয়ালা ওয়াল
বারা’ এই পদটির ব্যাখ্যা প্রদান করেছি
এবং সূরা আলে ইমরানের ২৯ ও ৩০ নং
আয়াতের প্রেক্ষিতে এর মহান মর্যাদা
তুলে ধরেছি। এখানে আমরা ‘আল ওয়ালা
ওয়াল বারা’ এই মৌলিক বিষয়টির
সংশ্লিষ্টতা, এর সঠিকতা নিরুপন এবং এর
বিস্তার নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখব।
.
শানে নূযূলঃ
আল্লাহ্ মদিনার উপকন্ঠে বসবাসকারী
ইহুদীদের কপটতাপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে
আত্মরক্ষা করার জন্য সতর্ক করেছেন।
আওস ও খাজরায এই দু’টি গোত্র তাদের
(ইহুদী) সাথে অনেক আগে থেকেই বন্ধসুলভ
ছিল এবং ইসলাম গ্রহণের পরও তাদের
সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রাখছিল, এর
বিপরীতে ইহুদীরা যারা আল্লাহ্র নবী
(সাঃ) এবং তিনি যে উদ্দেশ্যে প্রেরিত
হয়েছেন তার শত্রুতে পরিণত হয়েছে, নতুন
ধর্ম গ্রহণকারী (মুসলিম) কারো সাথে
বন্ধুসুলভ ছিল না। অতএব, বাহির দিকে
তারা আনসারদের সাথে বন্ধুসুলভ ছিল,
অন্তরে তারা তাদের (মুসলিম) ঘোর
শত্রুতে পরিণত হয়েছে। তারপরও তারা এই
বাহ্যিক বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়েছিল
এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অনৈক্যের
বীজবপন করেছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের
মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তারা
গোপনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সৈন্য
সজ্জিত করার চেষ্টাও করেছিল এবং
তাদেরকে (মুসলিম) শত্রু হিসাবে
বিবেচনা করত, এজন্য আল্লাহ্ মুসলিমদের
সতর্ক করেছেন যাতে তারা এরূপ
লোকদের তাদের (মুসলিম) গোপন কথা না
বলে।
.
আয়াত সমূহের সাধারণ অর্থঃ
এই আয়াতসমূহের ব্যাপারে আলোচনার
পূর্বে আল্লাহ্ সুবহানাহুতা‘আলা
পরিষ্কারভাবে কিতাবধারীদের (ইহুদী ও
খৃষ্টান) দুর্বৃত্তপূর্ণ আচরণ এবং মিথ্যা
যুক্তিকে বর্ণনা করেছেন এবং কিভাবে
তারা মুসলমানদের সাথে তাদের ঘৃণা
গোপন করত এবং তাদের (মুসলিম) সাথে
যুদ্ধ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করত। এরপর
চিরন্তন ও ঐশ্বরিক সতর্কবাণী আসে;
আমরা যেন যারা আমাদের দ্বীনের
অন্তর্ভূক্ত নয় তাদের কাছে আমাদের
গোপনীয়তা প্রকাশ না করি এবং
তাদেরকে ‘বিতানাহ’ (উপদেশদাতা,
পরামর্শদাতা, রক্ষাকারী, সাহায্যকারী,
বন্ধু) হিসাবে গ্রহণ না করি, যেহেতু তারা
আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের
শোষন করার এবং ক্ষতি করার কোন
সুযোগই হাতছাড়া করবে না। আমরা বহুবার
তাদের কথা থেকে এই বিদ্বেষ দেখেছি
এবং দেখছি, কিন্তু তারা যা অন্তরে
গোপন করে তা আরও নিকৃষ্ট।
আমাদের শত্রুদের অন্ধকার অন্তর ও
তাদের গোপন অনুভূতির প্রকৃতি সম্পর্কে
কুরআনের অন্তর্দৃষ্টি, প্রত্যেক সময়ে এবং
স্থানে আমাদের সচেতনতার জন্য আলো
নিক্ষেপ করেছে, যাতে আমরা এই
বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি এবং
তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কের
ব্যাপারে জ্ঞানী ও সাবধান হই। তথাপি,
এই জীবন্ত কুরআনের অনুসারীরা তাদের
অমনোযোগীতা ও অবহেলার মধ্যে লিপ্ত
রয়েছে এবং রাত-দিন তাদের বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্র করছে। এটা অদ্ভুদ ও নির্মম যে,
আমরা তাদের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন
করি, যারা আমাদের কিতাবকে (কুরআন)
অস্বীকার করে এবং আমাদের বিরুদ্ধে
তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে।
.
.
‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’র দাবী সমূহঃ
কোন মুসলিম যে ঈমানের দাবী করে
তাকে এই আখ্যার (আল ওয়ালা) উপযুক্ত
হওয়ার জন্য অবশ্যই এর শর্ত ও দাবীসমূহ
পূরণ করতে হবে, নিঃসন্দেহে ‘আল
ওয়ালা’ (ইসলাম ও মুসলিমকে ভালবাসা,
সমর্থন করা, সাহায্য করা, অনুসরণ করা,
রক্ষা করা ইত্যাদি) এবং ‘আল
বারা’ (কুফর এবং কাফেরদের অবজ্ঞা
করা, পরিত্যাগ করা, প্রকাশ্য বর্জন,
দোষারোপ করা, তাদের থেকে নিরুৎসাহী
ও নিরাপদ থাকা ইত্যাদি) দাবীসমূহ পূরণ
একজন মুসলিমের দ্বীনের সাথে লেগে
থাকার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।
.
.
ইসলাম ও মুসলিমের প্রতি ‘আল ওয়ালা’ এর
দাবীসমূহকে নিম্নলিখিতভাবে
সংক্ষেপে উপস্থাপন করা যেতে পারেঃ
.
.
• দ্বীন রক্ষার্থে অমুসলিম ভূমি থেকে
মুসলিম ভূমিতে হিজরত করা, শুধুমাত্র
যারা দুর্বল ও অত্যাচারিত এবং যারা
ভৌগলিক ও সমসাময়িক রাজনৈতিক
প্রেক্ষাপটের কারণে হিজরত করতে
পারে না তারা ছাড়া।
.
• দ্বীন এবং দুনিয়ার যে কোন বিষয়ে, যে
কোন মুসলিম সম্প্রদায়কে সমর্থন ও
সাহায্য করা, যা কিনা আমাদের কথার
মাধ্যমে হোক, অন্তর দিয়ে হোক বা
সম্পদের মাধ্যমে হোক। আল্লাহ্ বলেনঃ
‘‘যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে,
জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহ্র পথে
জিহাদ করেছে, আর যারা আশ্রয় দান
করেছে ও সাহায্য করেছে তারা পরষ্পর
পরষ্পরের বন্ধু—–।’’ (সূরা আনফাল ৮ঃ ৭২)
.
• অন্যান্য মুসলিম ভাইদের আনন্দে এবং
দুর্দশার সময়ের সাথী হওয়া। নবী (সাঃ)
বলেনঃ ‘‘পারষ্পরিক ভালবাসার দিক
দিয়ে মু’মিনদের দৃষ্টান্ত একটি মানব
দেহের মত, যদি তার চক্ষু পীড়িত হয় তখন
মাথা অসুস্থ হয় তাহলে সমগ্র শরীরই অসুস্থ
হয়ে পড়ে।’’ (সহীহ্ মুসলিম)
.
মুসলিমদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থাকা
এবং তাদের খবরা-খবর মিডিয়ায় ছড়িয়ে
দেয়া এই শ্রেণীর অন্তর্গত।
.
• একজন মুসলিম তার ভাইয়ের ভাল কিছু
অর্জন করা এবং খারাপ কিছু থেকে বিরত
হওয়া অবশ্যই পছন্দ করবে, যেভাবে সে
এগুলো নিজের জন্য পছন্দ করে। নবী
(সাঃ) বলেনঃ ‘‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত
ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত
সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে,
যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’ (সহীহ্
মুসলিম)
.
• অন্যান্য মুসলিমদের গালি দেওয়া,
ঠাট্টা করা এবং গীবত করা থেকে বিরত
থাকা, আল্লাহ্ তা‘আলা এটাকে
মুসলিমদের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা
করেছেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহ্
বলেনঃ ‘‘হে মু’মিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর
কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা
যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী
অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন
নারী অপর কোন নারীকেও উপহাস না
করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে
উপহাসকারিনী অপেক্ষা উত্তম হতে
পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি
দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে
অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর
মন্দ নাম অতি খারাপ। যারা তওবা না
করে তারাই যালিম। হে মু’মিনগণ! তোমরা
অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ
অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ এবং
তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয়
সন্ধান করো না এবং একে অপরের
পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের
মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভায়ের গোশত
খেতে চাইবে। বস্তুত তোমরা তো তা ঘৃণা
কর। তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর; আল্লাহ্
তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’’ (সূরা
হুজুরাত ৪৯ঃ ১১-১২)
.
• মুসলিম জামা’আ-র সাথে একতায় থাকা
এবং দলাদলি, ভাগাভাগি, মতদ্বৈততা
পরিহার করা যেমন আল্লাহ্ হুকুম
করেছেনঃ ‘‘তোমরা সকলে আল্লাহ্র রজ্জু
দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ও না।
তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ
করঃ তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং
তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার
করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর
ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো অগ্নিকুন্ডের
প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ্ তা হতে
তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এরূপে
আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ
স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা সৎ
পথ পেতে পার।’’ (সূরা আলি ‘ইমরান ৩ঃ
১০৩)
.
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ ‘‘যে মুসলিম জামা’আ
থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যাওয়া
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে
জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করবে।’’ (সহীহ্
মুসলিম)
.
.
‘আল বারা’-এর দাবীসমূহঃ
মু’মিন হওয়ার জন্য একজন মুসলিমের ইসলাম
ও মুসলিমের প্রতি শুধুমাত্র আল ওয়ালা’র
দাবীসমূহ সঠিকভাবে পূরণ করা যথেষ্ট নয়,
তাকে কুফর ও কাফেরদের প্রতি ‘আল
বারা’র দাবীসমূহও আন্তরিকতার সাথে
পূরণ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ দাবীসমূহের
মধ্যে রয়েছেঃ
.
• কুফর, শির্ক এবং তৎসংলগ্ন লোকদের
ঘৃণা করা; তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষন
করা যেমন আল্লাহ্র কালামে বর্নিত
হয়েছেঃ ‘‘তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তার
অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।
যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল,
তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহ্র
পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে
আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা
তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও
আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও
বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যদি না তোমরা
এক আল্লাহ্তে ঈমান আন—-।’’ (সূরা
মুমতাহিনা ৬০ঃ ৪)
.
• কাফেরদেরকে আউলিয়া (মদদদানকারী,
সাহায্যকারী ইত্যাদি) হিসাবে গ্রহণ না
করা এবং তাদের সাথে স্নেহ, ভালবাসার
সম্পর্ক গড়ে না তোলা কারণ আল্লাহ্
সুবহানাহু তা’আলা হুকুম করেনঃ ‘‘হে
মু’মিনগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের
শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তোমরা
কি তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা প্রেরণ
করছ, অথচ তারা, তোমাদের নিকট যে সত্য
এসেছে, রাসূলকে এবং তোমাদেরকে
বহিষ্কার করেছে এই কারণে যে, তোমরা
তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্তে
বিশ্বাস কর——।’’ (সূরা মুমতাহিনা ৬০ঃ ১)
.
• তাদের (কাফের) ভূমি থেকে হিজরত
করা এবং বিশেষ কারণ ছাড়া তাদের
ভুমিতে ভ্রমন করা। সামুরাহ বিন জুনদুব
(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল্লাহ (সাঃ)
বলেনঃ ‘‘যে কেউ মুসলিমদের মধ্যে থেকে
মুশরিকদের সাথে সাক্ষাত করে, তাদের
মাঝে বাস করে থাকে এবং তাদের
জীবনযাত্রাকে সমর্থর্ন করে সেও
(মুসলিম) তাদের মধ্যে একজন (অর্থাৎ
মুশরিক)।’’ (আবু দাউদ)
.
• কাফেরদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং
জীবন ব্যবস্থাকে অনুসরণ না করা। যেমনঃ
নবী (সাঃ) হতে বর্ণিত আছেঃ ‘‘যে কেউ
অন্য কোন (জাতীর) লোকের অনুসরণ করে,
সে তাদের মধ্যে একজন।’’ নবী (সাঃ)
আরও বলেনঃ ‘‘আমাদের শিক্ষা দেয়া
হয়েছে যে, ইহুদী এবং খৃষ্টানরা তাদের
চুলে খিজাব লাগায় না, অতএব তারা যা
করে তোমরা তার বিপরীত কর।’’ (সহীহ্ বুখারী)
.
• তাদের সঙ্গ এবং বন্ধুত্ব ত্যাগ করা
যেমন আল্লাহ্ বলেনঃ ‘‘যারা সীমালংঘন
করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়
না, তাহলে অগ্নি তোমদিগকে স্পর্শ
করবে। এই অবস্থায় আল্লাহ্ ব্যতীত
তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না
এবং তোমাদের সাহায্য করা হবে
না।’’ (সূরা হূদ ১১ঃ ১১৩)
.
বিশেষ করে তাদের সাথে যারা
ইসলামকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে।
• কাফেরদের সাথে আদান-প্রদানের
ক্ষেত্রে শিষ্টাচার এবং সম্মানের
খাতিরে দ্বীনের মধ্যে কোন আপোষ-
মিমাংসা করা হবে না। আল্লাহ্ তা’আলা
বলেনঃ ‘‘তারা (কাফির) চায় যে, তুমি
নমনীয় হও, তা হলে তারাও নমনীয়
হবে।’’ (সূরা কালাম ৬৮ঃ ৯)।
.
অধিকন্তু,একত্ববাদীরা কাফেরদের জন্য আল্লাহ্র
কাছে ক্ষমা ও রহমতের দোয়া করবে না,
যেমন আল্লাহ্ হুকুম করেছেনঃ ‘‘আত্মীয়-
স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করা নবী এবং মু’মিনদের জন্য
সংগত নয় যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছেযে, নিশ্চিতই তারা জাহান্নামী।’’ (সূরা তওবা ৯ঃ১১৩)
.
এটা স্মরণ রাখতে হবে যে, কাফেরদের
সাথে আমাদের ‘আল বারা’ দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত যে শত্রুতা রয়েছে, তার অর্থ
এই নয় যে, মুসলিমরা তাদের প্রতি
ন্যায়বান হবে না এবং ঐ সমস্ত
কাফেরদের আক্রমন করবে যারা
সীমালংঘনকারী নয়। আল্লাহ্ তা’আলা
ন্যায় এবং বদান্যতার হুকুম করেনঃ
‘‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নাই এবং তোমাদেরকে
স্বদেশ হতে বহিষ্কার করে নাই তাদের
প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার
করতে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নিষেধ করেন
না। আল্লাহ্ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে
ভালবাসেন।’’ (সূরা মুমতাহিনা ৬০ঃ ৮)
.
স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ্ মু’মিনদের
জানিয়ে দিয়েছেন, কাফেরর সাথে দয়া
দেখাতে ও ন্যায় আচরণ করতে কিন্তু
তাদের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন করতে
অথবা তাদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ
করার জন্য বলেন নি।
অবশেষে, আমাদেরকে তাদের মধ্যে
থেকে হতে হবে যাদের আল্লাহ্ প্রশংসা
করেছেনঃ
‘‘তুমি পাবে না আল্লাহ্ ও আখিরাতে
বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায়, যারা
ভালবাসে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের
বিরুদ্ধাচারিদেরকে- হউক না এই
বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই
অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজন। তাদের
অন্তরে আল্লাহ্ সুদৃঢ় করেছেন ঈমান এবং
তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ
হতে রূহ দ্বারা। তিনি তাদেরকে দাখিল
করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী
প্রবাহিত; সেথায় তারা স্থায়ী হবে,
আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারাও তাঁর
প্রতি সস্তুষ্ট, তারা আল্লাহ্র দল। জেনে
রেখ, আল্লাহ্র দলই সফলকাম হবে।’’ (সূরা
মুজাদালা ৫৮ঃ ২২)
.
সূত্র সমূহঃ
1) তাহফীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আলা
মওদুদী।
2) ফী যিলালিল কুরআন, সাইয়েদ কুতুব।
3) ইসলামে ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা,
মুহাম্মাদ আল ক্বাহতানী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top