সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আল্লাহর রাসুল (সা:) নিয়ে কটুক্তিকারীর ব্যাপারে শরীয়ত কি বলে জেনে নিন

কোন মন্তব্য নেই:

আমি অভিশপ্ত শয়তানের
কুমন্ত্রণা থেকে মহান আল্লাহর
নিকট আশ্রয় চাই। পরম করুণাময়
এবং অসীম দয়াময় মহান আল্লাহর
নামে শুরু করছি।
.
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের
এর জন্য সকল প্রশংসা। দরুদ ও
সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর
রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়ালাসাল্লাম, তাঁর
সাহাবাগণের প্রতি এবং
কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর
অনুসারী সকল মু’মিন ভাই ও
বোনদের প্রতি।
.
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আস সালামু আলাইকুম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আমরা আল্লাহ তা’ইয়ালার নিকট
প্রার্থনা করছি, তিনি যেন
উপকারী ইলমকে আমাদের সকলের
জন্য সহজবোধ্য, আমলযোগ্য করে
দেন এবং এর থেকে আমাদের
সবাইকে উপকৃত হওয়ার তৌফিক
দান করেন।
.
কুরআন নাযিলের ব্যাপারে
কাফিরদের উক্তি তুলে ধরে
মহামহিমান্বিত আল্লাহ
তা’ইয়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﻮْﻟَﺎ ﻧُﺰِّﻝَ ﻫَـٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻋَﻠَﻰٰ ﺭَﺟُﻞٍ ﻣِّﻦَ
ﺍﻟْﻘَﺮْﻳَﺘَﻴْﻦِ ﻋَﻈِﻴﻢٍ
অর্থঃ “তারা বলতো যে, এই
কোর’আন কেন দু’টো জনপদের
কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির উপর
নাযিল হলো না?”
(সূরাঃ যুখরুফ, আয়াতঃ ৩১)
এটি কুরআনের একটু আয়াত
যেখানে কাফিররা মক্কা ও
তায়েফের কথা উল্লেখ করে এই
প্রসঙ্গ তুলেছে। কুফফাররা
নবুওয়তের জন্য দু’জনকে মনোনীত
করেছিল। আর এ কারণেই তাদের
মধ্যে কিছু লোক মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কে নবী হিসেবে মানতে
অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কিন্তু
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
অর্থঃ “আল্লাহ্ তা’য়ালা ভালো
করেই জানেন তাঁর রিসালাত
তিনি কোথায় রাখবেন।“ (সূরাঃ
আন’আম, আয়াতঃ ১২৪)
ﺍﻟﻠَّـﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺣَﻴْﺚُ ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﺭِﺳَﺎﻟَﺘَﻪُ
অর্থঃ “আল্লাহ্ তা’য়ালা ভালো
করেই জানেন তাঁর রিসালাত
তিনি কোথায় রাখবেন।“ (সূরাঃ
আন’আম, আয়াতঃ ১২৪)
.
যাই হোক, কুফফাররা যাদেরকে
মনোনীত করেছিল, তাদেরই
একজন হচ্ছে উরওয়া বিন মাসুদ
আস সাকাফী, যে তায়েফের
অধিবাসী ছিল। অনেক দিন পর
মক্কাবাসীরা উরওয়া বিন মাসুদ
আস সাকাফীকে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর কাছে একটি শান্তি
আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে
পাঠিয়েছিল, একটি সাময়িক
চুক্তি, যার নাম ছিলো
হুদায়বিয়ার সন্ধি। যদিও সে কোন
ঐক্যমত্যে আসতে সক্ষম হয়নি।
পরবর্তীতে একই দায়িত্ব নিয়ে
আসে সুহাইল বিন আমর এবং তার
সাথে একটি ঐক্যমত্য হয়। কিন্তু
উরওয়া বিন মাসুদ যখন আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে হুদায়বিয়া (মক্কার
দক্ষিণে এক দিনের রাস্তার
দূরত্ব) –তে দেখলে, সে যেন এক
নতুন জগতে প্রবেশ করল।
উরওয়া বিন মাসুদ আস সাকাফী
আল্লাহর রাসূল এর সাথে
সাক্ষাত করতে এসে এমন কিছু
দেখলেন যা তাকে অভিভূত করে
ফেলল। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওযু
করতেন, তখন তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
থেকে ঝরে পড়া পানি সঞ্চয়
করতে এবং তা দ্বারা হাত ও
মুখমন্ডল ধৌত করার মাধ্যমে রহমত
পাওয়ার আশায় সাহাবাগণ ছুটে
যেতেন। একটি চুল পড়লেও তারা
তা লুফে নিতেন। তিনি কোন
আদেশ করলে তা পালন করার জন্য
সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতায়
অবতীর্ণ হতেন।
উরওয়া বিন মাসুদ আস সাকাফী
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে
কথা বলছিলেন সেখানে ছিলেন
আপাদমস্তক বর্ম দ্বারা আবৃত
একজন, যার শুধুমাত্র চোখ দু’টো
দেখা যাচ্ছিল। কথার মাঝখানে
যখনই উরওয়া বিন মাসুদ আস
সাকাফী রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর দাঁড়ি ধরতে উদ্যত হত
তখনই রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বর্ম
পরিহিত লোকটি তলোয়ারের
শেষাংশ দিয়ে খোঁচা দিয়ে
বলতো, “সরিয়ে ফেলো এই হাত
যদি একে হারাতে না চাও।“
এ অবস্থা দেখে উরওয়া বিন মাসুদ
আস সাকাফী বলল, আমার মনে হয়
এই লোকটি তোমাদের মাঝে
সবচেয়ে গর্হিত ও অভদ্র, কে সে?
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলিহি ওয়া সাল্লাম হাসলেন
এবং বললেন, “এ তোমার
ভ্রাতুস্পুত্র মুগিরাহ ইবনে
শো’বা।“
এই ছিলো উরওয়া বিন মাসুদ আস
সাকাফীর ভ্রাতুস্পুত্র! কিন্তু
যেহেতু তিনি একজন মুসলিম, তাই
তিনি আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর নিরাপত্তায় এত
নিবেদিত এবং সচেতন ছিলেন যে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাঁড়ির
দিকে নিজের আপন চাচার
বাড়িয়ে দেয়া হাতকেও গুটিয়ে
নিতে বাধ্য করেছিলেন। এতে
উরওয়া মারাত্মক একটি ধাক্কা
খেলেন।
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আপনারা আমাকে হয়তো বার বার
এই কথা বলতে শুনবেন যে, যখনই
আমরা এই ঘটনাগুলোর আলোচনা
করি তখনই আমরা যেনো
নিজেদেরকে সেই সমাজের
দিকে নিয়ে চলি, নিজেকে
তাঁদের অবস্থানে রেখে চেষ্টা
করুন সেভাবে চিন্তা করতে,
যেভাবে তাঁরা করতেন এবং
তাঁদের চারপাশের
পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতকে
বুঝার চেষ্ট করুন!
এটি ছিলো একটি উপজাতীয়
সমাজ ববস্থা এবং পারিবারিক
বন্ধনই ছিলো এতে সবকিছু। উরওয়া
বিন মাসুদ সাকাফী স্পষ্টতই
বিস্মিত অবস্থায় ছিলেন যে
ইসলাম কিভাবে তার নিজের
ভ্রাতুস্পুত্রকে পরিবর্তিত
করেছে! সে তার সাথে কি রকম
আচরণ করেছে!!
.
উরওয়া বিন মাসুদ আস সাকাফী
কুরাইশদের নিকট ফিরে গিয়ে
বললেন, ওহে কুরাইশ বংশের
লোকেরা! আমি পৃথিবীর বহু
রাজাদের দেশ সফর করেছি,
আমি সিজার, কিসরা, পারস্যের
সম্রাট এমনকি নাজ্জাশির
দরবারও প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু
আমি কোন রাজার অনুচর,
অনুসারীদের মধ্যে এরকম আনুগত্য
আর বাধ্যতা দেখিনি যেমন
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর ক্ষেত্রে তাঁর
সাহাবাদের দেখেছি। যখনই
তিনি কোন কথা বলতেন, তাঁরা
নীরব থাকতো যেন কোন পাখি
বসে আছে তাদের সবার মাথার
উপর, যখনই তিনি ওযু করতেন তারা
দ্রুত ছুটে যেতো সেই পানির বিন্দু
গুলো সঞ্চয় করতে, যখনই তাঁর চুল
পড়তো তাঁরা ছুটে গিয়ে তাও
লুফে নিতো।
.
ওহে কুরাইশ!
মুহাম্মাদ তোমাদের একটি
প্রস্তাব দিয়েছে তা গ্রহণ করো,
কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর
অনুসারীরা কখনও তাঁকে সমর্পণ
করবে না, ছেড়ে যাবে না। [সহীহ
বুখারী, ৩য়-খন্ড, ভলিয়ম-৫০,
হাদীস নং-৮৯১]
কাফিররা যখনই মুসলিমদের
সান্নিধ্যে যেত তখনি তারা
মুসলিমদের ব্যাপারে এই একই
অভিজ্ঞতা লাভ করতো যে,
মুসলিমরা কখনই তাঁর সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তাঁরা
কখনও তাঁকে ত্যাগ করবে না!
প্রয়োজনে তাঁরা লড়াই করবে,
এমনকি তাঁদের শেষ ব্যক্তিটি
জীবিত থাকা পর্যন্ত, তাঁদের
কারো একজনের শিরায় রক্ত
প্রবাহ বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত
তাঁরা তাঁদের প্রিয় নবীর
নিরাপত্তার জন্য লড়াই করে
যাবে।
.
কিন্তু সময় এখন ভিন্ন! প্রিয় ভাই
ও বোনেরা, এটি ছিল আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর সময় উরওয়া বিন
মাসুদ আস সাকাফীর সাক্ষ্য।
কয়েকদিন আগে একজন মার্কিন
সৈন্য আল্লাহর কিতাবকে
টয়লেটের টিস্যূ পেপার হিসেবে
ব্যবহার করেছে! এটি কোথা ঘটে?
এটি ঘটে মুসলিম বিশ্বের
কেন্দ্রবিন্দু একটি মুসলিম দেশে!
এরপর কি হল? মুসলিম বিশ্বের
প্রতিক্রিয়া ছিলো নীরব!
এর আগে যখন ড্যানিশ ব্যঙ্গচিত্র
নিয়ে বিতর্ক উঠল, মুসলিম
বিশ্বের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠলো।
কিন্তু যখন সুইডিশ ব্যঙ্গচিত্রের
ঘটনা ঘটল, যেটি আরও খারাপ
ছিল অথচ তখন প্রতিক্রিয়া ছিল
খুব কম। আর এখন আমরা দেখছি
প্রতিক্রিয়া আর কম।
সুতরাং প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমাদের শত্রুরা খুবই চতুরাতার
মাধ্যমে আমাদেরকে অনুভূতিহীন
করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। যখন
এটি প্রথমবার ঘটে, সবাই এটি
নিয়ে চিন্তা করেছিল এবং
নিন্দা জানাচ্ছিল কিন্তু তারপর
আস্তে আস্তে আমরা এর সাথে
অভ্যস্ত হয়ে গেলাম!
এরপর এখন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল! যা
অশালীনতা চুড়ান্ত! কিন্তু
প্রতিক্রিয়া কতোই না সামান্য!
তাই ভাই ও বোনেরা, আসুন পেছন
ফিরে দেখি, তখন পরিস্থিতি কি
রকম ছিলো! কারণ সেটিই
আমাদের নৈতিকতাকে
উজ্জীবিত করবে এবং এভাবেই
আমাদের সাহাবাদের (আল্লাহ্
সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদের
উপর সন্তুষ্ট হোন) অনুসরণ করতে
হবে।
.
কা’ব বিন আশরাফ হত্যার ঘটনাঃ
কা’ব বিন আশরাফ ছিলো একজন
ইহুদী নেতা এবং খুবই প্রভাব
সৃষ্টিকারী জ্বালাময়ী কবি। যখন
বদরে মুসলমানদের বিজয়ের
সংবাদ মদীনায় পৌছালো, তখন
কা’ব বিন আশরাফ সেই সংবাদ
শুনে বলল, “যদি এই সংবাদ সত্যি
হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্য
মাটির নিচে থাকাই তাঁর উপরে
থাকার চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ মৃত্যুই
আমাদের জন্য শ্রেয়। কুরাইশদের
পরাজয়ের পর আর বেঁচে থেকে
কি লাভ!”
.
সে মুশরিকদের মৃত্যুতে শোক
প্রকাশ করে কবিতা রচনা এবং
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে
কুৎসা রটানো শুরু করলো। এরপর সে
মক্কায় তার কবিতা ছড়িয়ে
দিলো। কুরাইশদের প্রতি
সহমর্মিতা পোষণ করে যুদ্ধে
তাদের ক্ষয়ক্ষতিতে দুঃখ প্রকাশ
করলো। শুধু এ পর্যন্তই নয়, এ
থেকেও আরো বেড়ে গিয়ে সে
এবার করে তা কবিতার মাধ্যমে
মুসলিম নারীদেরকেও কটাক্ষ
করা শুরু করলো। তাই আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন,
অর্থঃ “কে এমন আছে? যে কা’ব
ইবনে আশরাফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
গ্রহণ করবে! কেননা সে আল্লাহ্
এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিচ্ছে।“
রাসূলের এই আহবান শুনে
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাযিঃ
যিনি আউস গোত্রের একজন
বিশিষ্ট আনসার সাহাবী ছিলেন
তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং
বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল!
আদেশ করুন আমি আছি। আপনি
কি এটা চাচ্ছেন যে আমি তাকে
হত্যা করি?”
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
হ্যাঁ।“
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ
থেকে নির্দেশনা পেয়ে এবার
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাযিঃ
এবার অঙ্গীকার করলেন।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে কথা দিলেন যে
তিনি নিজে কা’ব ইবনে
আশরাফকে হত্যা করবেন।
বাসায় গিয়ে বিষয়টি নিয়ে
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাযিঃ
চিন্তা করতে লাগলেন।
ব্যাপারটা তাঁর কাছে যেন কঠিন
মনে হলো। কারণ কা’ব ইবনে
আশরাফ তার সমর্থক দিয়ে
পরিবেষ্টিত একটি দূর্গ থাকতেন
যা ছিলো ইহুদী বসতির মধ্যে।
তাই দুর্ভেদ্য দূর্গের ভেতর গিয়ে
তাকে হত্যা করাটা ছিলো
অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ।
তিনি ভাবতে লাগলেন কিন্তু
কোন কুলকিনারা খুঁজে
পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি তাঁর
নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিল।
জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য
সামান্য কিছু আহার্যের বাইরে
তিনি পানাহার করতে
পারছিলেন না। এভাবে প্রায়
তিনদিন কেটে গেলো।
এই খবর আল্লাহর রাসূলের নিকট
পৌঁছলে তিনি তাঁকে ডেকে
পাঠালেন এবং বললেন, “তোমার
কি হয়েছে হে মুহাম্মাদ ইবনে,
মাসলামাহ? এটা কি সত্য যে তুমি
পানাহার করা বন্ধ করে
দিয়েছো?”
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ
রাযিঃ বললেন “জি হ্যাঁ।“
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে
জিজ্ঞেসে করলেন, “কেন?”
তিনি বললেন, “আমি আপনার
কাছে একটি অঙ্গীকার করেছি
আর সেই অঙ্গীকার পূরণ করা
নিয়েই আমি চিন্তিত।“
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে
বললেন,
অর্থঃ “তোমার কাজ তো কেবল
চেষ্টা করা। বাকিটা সম্পন্ন
করার দায়িত্ব মহান আল্লাহর
উপর ছেড়ে দাও।“
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!আসুন
আমরা এ বিষয়টি নিয়ে একটু
ভাবি। আমরা একটি মুহূর্তের জন্য
থামি এবং হৃদয়ের দৃষ্টি দিয়ে
বিষয়টি অনুধাবনের চেষ্টা করি
যে এই সাহাবী রাযিঃ কি অধিক
পরিমাণ আনুগত্য ও উদ্দীপনার
মধ্যে ছিলেন। তিনি পরিস্থিতি
নিয়ে এত বেশূ চিন্তিত ছিলেন
যে, তিনি নাওয়া-খাওয়া বন্ধ
করে দিয়েছিলেন। তিনি
স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে
পারছিলেন না। কারন এটি ছিল
তাঁর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি
বিষয়।
তিনি অঙ্গীকার করেছেন এবং
তারপর তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে
পড়লেন যে তিনি কি সেই
অঙ্গীকার পালন করতে পারবেন
কিনা।
যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে
সাহস দিলেন, আশ্বস্ত করে
বললেন, “তুমি তোমার চেষ্টা কর,
আর বাকীটা আল্লাহর উপর ছেড়ে
দাও,” তখনই তিনি আশ্বস্ত হলেন
এবং পুনরায় স্বাভাবিক জীবন
যাপন করতে শুরু করলেন।
আজকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
অবমাননার বিষয়টি নিয়ে আপনি
কতটুকু চিন্তিত? আমরা কতটুকু
উদ্বিগ্ন আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর সম্মানের ব্যাপারে,
ইসলামের মর্যাদা এবং
সর্বশক্তিমান আল্লাহর কিতাবের
বিষয়ে?
আমরা বিষয়গুলোকে কতটা গুরুত্ব
সহকারে নেই?
.
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাযিঃ
একাধারে তিন দিন তিন রাত
পর্যন্ত তাঁর প্রতিশ্রুতির
ব্যাপারে চিন্তা করছিলেন। আজ
আমরা মুসলিমদের মাঝে পুনরায়
এই সাহাবীর মনোভাবেরই
পুনিরাবৃত্তি চাই।
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাযিঃ
তাঁর দায়িত্ব পালনের জন্য একটি
পরিকল্পনা করলেন। এজন্য
রাসূলের কাছে একটি বিষয়ে
অনুমতি চাইলেন। প্রিয়নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর কাছে এসে তিনি
বললেন,
“হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে
তাহলে আপনার বিরুদ্ধে কথা
বলার অনুমতি দিতে
হবে।“ [পরিকল্পনার বিষয় হলো
যে, আমাকে আপনার ব্যাপারে
নেতিবাচক কথা বলতে হবে]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “এ ব্যাপারে
তোমাকে অনুমতি দেয়া হলো।“
এবার মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ
রাযিঃ আনসারদের মধ্যকার
আওস গোত্র থেকে অল্প
কয়েকজনকে নিয়ে ছোট একটি
জামাত গঠন করলেন। যাদের মধ্যে
একজন ছিলেন আবু নায়লা। কথিত
আছে যে আবু নায়লা ছিলেন কা’ব
বিন আশরাফের সৎভাই। তাঁরা
কা’ব ইবনে আশরাফের জন্য একট
ফাঁদ পাতলেন।
মুহাম্মাদ বিন মাসলামা রাযিঃ
তাঁর ক্ষুদ্র দলটি নিয়ে কা’ব ইবনে
আশরাফের সাথে সাক্ষাত করতে
গেলেন। কা’ব এর সাথে দেখা
হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী
আল্লাহর রাসূলের দিকে ইঙ্গিত
করে তিনি কা’বকে বললেন, “এই
লোকটি আমাদের জন্য আল্লাহর
পক্ষ হতে একটি পরীক্ষা ও একটি
সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে
একটি দুর্যোগ এবং তাঁর জন্যই
পুরো আরব আমাদের শত্রু হয়ে
গেছে এবং আমাদের সাথে লড়াই
করছে।“
কা’ব বললো, “আমি তো এটি
জানতাম। তাই তো তোমাদের
আগেই বলেছি এবং সামনে
তোমরা আরও বিপদে পড়বে,
খারাপ সময় দেখবে।“
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ
বললেন, “আমরা অপেক্ষা করতে
চাই এবং দেখতে চাই এর শেষ
কিভাবে হয়।“
তিনি এখন কা’বের সাথে একটি
ভাব তৈরী করার চেষ্টা করতে
লাগলেন। তিনি বললেন, “হ্যাঁ,
কা’ব, লোকটার জন্য আমাদের
অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি
ঘটেছে, আর্থিকভাবে একটু
সমস্যায় পরে গেছি। তোমার কাছ
থেকে আমরা কিছু অর্থ ধার নিতে
চাই, যার বিনিময়ে প্রয়োজনে
তোমার নিকট কিছু জামানাতও
রাখতে রাজি আছি।“
কা’ব বলল, “ঠিক আছে, তাহলে
তোমাদের সন্তানদের রেখে
যাও।“
তাঁরা বললো, “তোমার কাছে
আমাদের সন্তানদের রেখে গেলে
তাদের বাকী জীবন এই খোঁটা
শুনতে হবে যে, সামান্য ঋণের
জন্য তাদের পিতা তাদেরকে
বন্ধক রেখেছিল। এটি তাদের
সারা জীবনের জন্য একটি
লজ্জাকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।“
কা’ব বললো, “তাহলে তোমাদের
স্ত্রীদের রেখে যাও।“
তাঁরা বললো, “তোমার মতো
সুদর্শন পুরুষের নিকট আমরা
কিভাবে আমাদের স্ত্রীদের
রেখে যাবো? তার চেয়ে বরং
আমরা আমাদের অস্ত্রগুলো
তোমার নিকট বন্ধক রেখে যেতে
পারি।“
সে বললো, “ঠিক আছে, এটি হতে
পারে।“
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ কা’বের
জন্য এভাবে ফাঁদ পাতলেন। যাতে
তার কাছে পরের বার অস্ত্র
আনতে গেলে সে সন্দেহ না করে।
তিনি পরবর্তী সাক্ষাতের জন্য
রাতের একটি মুহূর্তকে নির্ধারণ
করলেন এবং নির্ধারিত সেই
সময়ে, গভীর রাতের উপযুক্ত এবং
সঠিক সময়ে তার কাছে ফিরে
এলেন। ঘরের বাইরে থেকে এবার
তিনি কা’বকে ডাক দিলেন।
কা’বের স্ত্রী সেই শাওয়াজ শুনে
বলল, “আমি এই ডাকের মধ্যে
রক্তের গন্ধ পাচ্ছি।“
কা’ব বলল, চিন্তা করো না, “এটি
হচ্ছে আমার বন্ধু মাসলামাহ এবং
আমার ভাই আবু নায়লা।“
এতে বুঝা যায় যে, তাদের মাঝে
জাহেলিয়াতের সময় থেকেই
সুসম্পর্ক ছিলো, বন্ধুত্ব ছিলো।
অতঃপর সে নিচে গেলো
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ
রাযিঃ ও তাঁর সাথীদের সাথে
দেখা করতে। ইতোমধ্যে তাঁরা
একটি সংকেত ঠিক করে
নিয়েছিল। মুহাম্মাদ ইবনে
মাসলামাহ তাঁদের বললেন, “আমি
কৌশলে ওর মাথা ধরবো। যখন
তোমরা আমাকে ওর মাথা ধরতে
দেখবে, তখনই তালোয়ার দিয়ে
তাকে শেষ করে দেবে।“ এটাই
ছিল তাদের সংকেত।
কা’ব আসতেই তারা তাকে
বললেন, “আজকের রাতটি শি’ব
আল আযুজ গিয়ে গল্প করে
কাটিয়ে দিলে কেমন হয়?”
সে বলল, “বেশ।“
এভাবে তারা তাকে তার দূর্গ
থেকে বের করে শি’ব আল আযুজ
নামক স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম
হলো।
সেখানে পৌঁছানোর পর মুহাম্মাদ
ইবনে মাসলামাহ কা’বকে বললেন,
“বাহ! তোমার থেকে তো অনেক
সুন্দর ঘ্রান আসছেন! আমি কি এর
ঘ্রান নিতে পারি?” ওটা বলে
তিনি কা’বের চুলের দিকে
ইঙ্গিত করলেন। চুলে তেলজাতীয়
কোন সুগন্ধী লাগানো ছিল।“
মুহাম্মাদ ইবনে মাওলামাহ তার
হাত দিয়ে কা’বের মাথাটাকে
টেনে নিলেন এবং শুকে দেখলেন।
তিনি বললেন, “এটা তো দারুণ।
(এটি ছিল দেখার জন্য একটি
পরীক্ষা।)”
তিনি বললেন, “তুমি কি
আরেকবার আমাকে এর ঘ্রান
নিতে দেবে?
সে বলল, “হ্যাঁ, নাও।“
এবার তিনি তার মাথার চুল
গুলোকে ভালোভাবে ধরলেন এবং
তালোয়ার দিয়ে তাকে আঘাত
করতে থাকলেন। সাথে আসা
আওসের সাহাবীরাও এগিয়ে
এলেন। কিন্তু সেগুলো তাকে
মারার জন্য যথেষ্ট ছিলো না
এবং সে সাহায্যের জন্য চিৎকার
করে উঠল। তাৎক্ষণিকভাবে
সবগুলো দূর্গতে আলো জ্বলে ওঠল।
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ
বললেন, “আমার মনে পড়ল যে
আমার কাছে একটি ছুরি আছে।
তাই আমি সেটা বের করে তা
দিয়ে তার তলপেটে আঘাত
করলাম। একেবারে নিম্নাংশের
হাড় পর্যন্ত সেটি গেঁথে দিলাম
এবং কাজ শেষ করে দ্রুত সে
স্থান ত্যাগ করলাম।“[সহীহ
বুখারী, ৫: ৩৬৯]
.
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ এবং
আওসের লোকেরা এভাবেই সেই
পাপাচারীর শয়তানকে দেখে
নিয়েছিল, যে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়া
সাল্লামকে তিরষ্কার করত।
ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. তাঁর “আশ
শা-রি মিন মাসলূল আলা
সাতিমির রাসূল” বা “রাসূলকে
অভিশাপকারীর উপর উদ্যত
তালোয়ার” নামক কিতাবে এই
ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। এই
উল্লেখ করার পর তিনি কিছু
বিষয় উল্লেখ করেন যা আমরা
আলোচনা করব।
প্রথমেই তিনি সীরাতের একজন
বিজ্ঞ শায়খ আল ওয়াকিদী রহ.
এর বর্ণনা আনেন। আল ওয়াকিদী
এই ঘটনার পরিণতি সম্পর্কে
বলেন,
“এটি একটি খুবই শক্তিশালী এবং
বিশেষ অভিযান ছিল এবং এর
ফলাফলও ছিল ব্যাপক। এর ফলে
মদীনার চারপাশের ইহুদী গোষ্ঠী
এবং কাফির সম্প্রদায়ের মধ্যে
ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল।“
ওয়াকিদী রহঃ বলেন, “সকালে
ইহুদীরা মুশরিকদের সাথে নিয়ে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর কাছে এসে বলল,
আমাদের মধ্যে শীর্ষ সম্মান ও
মর্যাদার অধিকারী এবং
নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তিকে গত
রাতে হত্যা করা হয়েছে।“
তারা বলল, “কুতিলা গিলাহ” এবং
গিলাহ মানে হচ্ছে গুপ্তহত্যা। এই
শব্দটির সাথে নেতিবাচক অর্থ
জড়িত কারণ এর মানে হচ্ছে এই
ব্যক্তি খুন হয়েছে এবং তা হয়েছে
আকস্মিকভাবে। সে এই ব্যাপারে
জানত না। এটি দ্বিপাক্ষিক ছিল
না, একে অপরের বিরুদ্ধে ছিল
না, তাকে গোপনে তার আবগতির
বাইরে হত্যা করা হয়েছে।
তারা বলল, “তাকে কোন অপবাদ
ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে।“ কেন
তাকে হত্যা করা হল, এটাই ছিল
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর কাছে প্রশ্ন।
কারণ আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এবং ইহুদিদের মধ্যে
একটি চুক্তি ছিল। সীরাতে এটি
ভালোভাবেই উল্লেখ আছে যে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম যখন মদীনায় আসলেন
তখন তাঁর সাথে সকল ইহুদীদের
একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত
হয়েছিলো। এখন কা’ব ইবনে
আশরাফকে হত্যা করা হয়েছে,
কেন? এটা কেন হল?
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি
বললেন?
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
অর্থঃ “সে যদি সেই ব্যক্তিদের
মতো শান্ত হয়ে যেত, যারা তার
মতামত অনুসরণ করে অথবা একই মত
পোষণ করে, তাহলে তাকে হত্যা
হত না। কিন্তু সে আমাদের ক্ষতি
করেছে, তার কবিতা দিয়ে
আমাদের মানহানি করেছে। আর
তোমাদের মধ্যে যে এই কাজটি
করবে আমরা তালোয়ার দিয়ে এর
বোঝাপড়া করবো।[আস সারিমিল
মাসলূল আলা শাতিমির রাসুল
সাঃ]
.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন
যে “কা’ব ইবনে আশরাফের মতো
আরো অনেকেই আছে যারা
অন্তরে এই বিশ্বাস ধারণ করে
কিন্তু তাদেরকে সেজন্য হত্যা
করা হয়নি।“ তার অবিশ্বাসের
জন্য তাকে হত্যা করা হয়নি, এই
জন্য হত্যা করা হয়নি যে সে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে ঘৃনা করত, এই জন্যও
না যে সে মুসলিমদের ঘৃনা করত।
না! এরকম অনেকেই আছে, যাদের
অন্তরে এই ব্যাধি আছে কিন্তু
আমরা তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছি।
সেও যদি শান্ত হয়ে যেন অন্যদের
মত, যারা শান্ত হয়ে গিয়েছিল
আমরা তাকে হত্যা করতাম না।
কিন্তু সে আমাদের বিরুদ্ধে কথা
বলেছে এবং তার কবিতা দ্বারা
আমার মানহানি করেছে।
এরপর তিনি ইহুদীদের কাছে
বিষয়টি পরিষ্কার করে দিলেন।
তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে
কোন ইহুদী বা মুশরিক যদি কথার
মাধ্যমে, কবিতা বা মিডিয়ার
মাধ্যমে আমার মানহানি করার
চেষ্টা করো, তাহলে আমরা
তাকে এভাবেই দেখে নেবো।
তোমাদের আর আমাদের মধ্যে
তালোয়ার ব্যতীত আর কিছুই
করারা থাকবে না! সেখানে
কোন সংলাপ হবে না, কোন ক্ষমা
করা হবে না, কোন সহমর্মিতা
থাকবে না, মীমাংসার কোন
উদ্যোগ নেয়া হবে না। আমাদের
আর তোমাদের মধ্যে তখন থাকবে
শুধু তলোয়ার। এরপর তিনি
তাদেরকে ডেকে একটি দলিল
স্বাক্ষর করতে বললেন যেখানে
তারা সবাই সম্মতি জানাল যে
তার তাঁর বিরুদ্ধে আর কোন কথা
বলবে না।
.
ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, এই
ঘটনাটি এ বিষয়ে একটি
শক্তিশালী প্রমাণ যে, আল্লাহ
এবং তাঁর রাসূলকে
অবমাননাকারীদের হত্যা করার
ব্যাপারে মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ ও
উৎসাহিত করা হবে। এমনকি যদি
তারা মুসলিমদের সাথে চুক্তি
হয়ে থাকে তবুও। এটা এতই কঠিন
একটি বিষয় যে, মুসলিমদের সাথে
যৌথ অঙ্গীকার ভুক্ত কোনো
অমুসলিম এটি করলেও তার
বিরুদ্ধে একই কঠোর সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়ন করা হবে।
ইবনে তাইমিয়্যাহ তাঁর কিতাবে
এই হুকুমের বিরুদ্ধে উন্মোচিত
কিছু যুক্তি ও সংশয়ের অপনোদন
করেছেন। সেগুলোর জবাব
দিয়েছেন। তিনি সেই যুক্তিগুলো
খন্ডন করতে এই ঘটনাকে প্রমাণ
হিসেবে পেশ করেছে।
কিছু লোক হাদীসের অর্থকে
বিকৃত করতে চেয়েছে এবং
বলেছে যে, কা’বকে হত্যা করা
হয়েছে কারণ সে কাফিরদেরকে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার
জন্য উৎসাহিত করছিল।
ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন , না!
তাকে হত্যা করা হয়েছে তার
কবিতার জন্য, যেটা তার মক্কায়
যাওয়ার পূর্বে ছিল। তাই তার
মক্কায় যাওয়া এবং মুসলিমদের
বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে উৎসাহিত
করার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই,
স্পষ্টরূপে এই সিদ্ধান্তটি তার
কবিতার জন্যই দেয়া হয়েছিল।
তারপর তিনি বলেন, কা’ব ইবনে
আশরাফ যা করেছিল তার
সবকিছুই ছিল আকর্ষণীয় কথার
দ্বারা ইসলামের ক্ষতিসাধন।
হত্যাকৃত কাফিরদের প্রতি তার
শোক প্রকাশ এবং তাদের যুদ্ধ
করতে উৎসাহিত করা, তার
অভিশাপ, অপবাদ, ইসলামকে
প্রকাশ্যে কটাক্ষ করা, ছোট করে
দেখা এবং কাফিরদের ধর্মকে
অগ্রাধিকার দেয়া- এসব কিছুওই
ছিল তার মুখ থেকে বের হওয়া
কাব্যিক ছন্দের কারসাজি।
সে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারিরীক
যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিলো না। জড়িত
ছিল মুখ নিসৃত সাহিত্য আর
সাংস্কৃতিক যুদ্ধে। তার আক্রমণ
ছিলো আকর্ষণীয় শব্দাবলীল
মাধ্যমে। সে মাধুর্যপূর্ণ
বাক্যবিন্যাসের দ্বারা রচিত
কাব্য দিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের
ক্ষতি করছিলো।
আর এটিই হচ্ছে একটি হুজ্জাহ-
এটি একটি প্রমাণ তাদের
বিরুদ্ধেও যারা এই প্রিয়নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এবং ইসলামের
অবমাননা করবে। এটি পরিষ্কার,
যে ব্যক্তি কবিতা ও অপবাদ
দিয়ে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের
ক্ষতি করবে তার রক্ত
কোনভাবেই সুরক্ষিত থাকবে না।
-এই ছিলো কা’ব ইবনে আল
আশরাফের ঘটনা।
.
আবু রাফে’-এর হত্যার ঘটনাঃ
কা’ব বিন আশরাফকে শায়েস্তা
করা ছিলো একটি ঐতিহাসিক
কাজ যা আওস গোত্রের
সাহাবায়ে কিরাম আঞ্জাম
দিয়েছিলেন। মদীনার
আনসারদের মধ্যে আরেকটি
গোত্র ছিলো খাজরাজ। নেক ও
সৎ আমলের ক্ষেত্রে আওস এবং
খাজরাজ গোত্রের সাহাব্যে
কিরামগণ পরস্পর একে অপরের
সাথে সব সময়ই পাল্লা দিতেন।
কা’ব ইবনে মালিকের পুত্র বলেন,
আওস এবং খাজরাজ দু’টো গোত্রই
ঘোড়া দৌঁড়ের মত আল্লাহর
রাসূলের সামনে প্রতিযোগিতা
করত। যখনই তাঁদের কোন একজন
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুশী
করার মত কোন একটা কাজ
করতেন, অপরজন তাঁর চাইতেও
ভালো কিছু করতে চাইত। কোন
উপাধির উপর তাঁদের
প্রতিযোগিতা ছিল না, ছিল না
কোন সম্পত্তির উপর।
কে ভালো বাড়ি পাবে তার উপর?
না।
কে সুন্দরী স্ত্রী পাবে তার উপর?
না।
কার কাছে অধিক পরিমাণ ভালো
বাহন আছে তার উপরও নয়!
বরং তাদের প্রতিযোগিতা ছিল
কিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে খুশী করা যায়।
আওস গোত্রে লোকেয়ার যখন
কা’ব ইবনে আশরাফের মতো
নিকৃষ্ট ইয়াহুদী হত্যা করতে সক্ষম
হলেন তখন খাজরাজ গোত্রের
সাহাবীরা এর চাইতেও উত্তম
কিছু করার জন্য একটি সভা
করলেন। তাঁরা বলতে লাগলেন যে,
আওস আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর এক শত্রু হত্যা করতে
সফল হয়েছে। আমাদেরও একই
কাজ করতে হবে। কা’ব ইবনে
আশরাফের পর কে আছে সবচেয়ে
খারাপ?
তাঁরা অনেক ভেব চিনতে
দেখলেন কা’ব ইবনে আশরাফের
মতই আরেকটি নিকৃষ্ট শয়তান
আছে। আর সে হচ্ছে আবু রা’ফে।
তাঁরা তাঁদের পরিকল্পনার কথা
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
সামনে উপস্থাপন করলেন এবং
জানালেন যে, আবু রাফে’র সাথে
তাঁরা কা’ব ইবনে আশরাফের
অনুরূপ আচরণ করতে চান। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাঁদের পরিকল্পনায়
সম্মতি জানালেন এবং তাঁদের
সামনে অগ্রসর হতে বললেন। এখন
তাঁরা আবু রাফে’কে ধ্বংস করার
পরিকল্পনা করতে লাগলেন।
আমি সংক্ষেপে ঘটনাটি বলছি;
বিস্তারিত জানতে চাইলে
পরবর্তীতে সীরাতের বইতে
আপনারা খুঁজে দেখতে পারেন।
এই ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ
এখানে প্রাসঙ্গিক নয়; আমরা যে
বিষয়ে কথা বলছি তার জন্য শুধু
একে প্রমাণ স্বরূপ উল্লেখ করতে
চাই।
.
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে
আতিক রাযিঃ ইহুদী সর্দার আবূ
রাফে’কে হত্যার উদ্দেশ্যে তার
অবস্থানকারী দূর্গে প্রবেশের
চেষ্টা করতে লাগলেন। অবশেষে
একটি কৌশল অবলম্বন করে তিনি
তাদের দূর্গের মধ্যে প্রবেশ করতে
সক্ষম হলেন।
অতঃপর আবূ রাফের শয্যাঘরে
পৌছে গেলেন। কারণ তিনি
চাবিগুলো হাতে পেয়ে
গিয়েছিলেন। সেটি ছিলো গভীর
রাত। পুরোপুরি অন্ধকার থাকার
কারণে তিনি আবু রাফে’কে
দেখতে পাচ্ছিলেন না। ভাবতে
লাগলেন এখন তিনি কি করবেন?
অবশেষে তিনি একটি বুদ্ধি বের
করতে সক্ষম হলেন। তিনি “আবু
রাফে!” বলে আবু রাফে’কে ডাক
দিলেন।
এটি আসলেই একটি বিস্ময়কর
কাজ ছিলো। পুরোপুরি
অন্ধকারের মধ্যে কারো
শয্যাঘরের মধ্যে প্রবেশ করে
তাকে আক্রমণ করার পূর্বে, তাকে
ডাকা অনেক সাহসের দাবি
রাখে।
তিনি সরাসরি প্রবেশ করে
ডাকলেন, আবু রাফে তুমি
কোথায়? আবু রাফে আওয়াজ করে
জবাব দিলো। আব্দুল্লাহ বিন
আতিক রাযিঃ বলেন, আমি
শব্দের উৎসের দিকে আঘাত
করতে থাকলাম। আমি তাকে
আঘাত করলাম কিন্তু হত্যা করতে
পারলাম না এবং সে সাহায্যের
জন্য চিৎকার করে উঠল।
মাশাআল্লাহ! আব্দুল্লাহ বিন
আতিক উপস্থিত বুদ্ধিতে খুব চতুর
ছিলেন। তিনি সাথে সাথে পিছু
হটে আবার ফিরে আসলেন এবং
সাহায্যকারী সেজে আওয়াজ
পরিবর্তন করে এসে বললেন, “আবু
রা’ফে! তোমার কি হয়েছে?” আবু
রা’ফে বললো, “তোমার মায়ের
উপর অভিশাপ, এখানে কেউ আছে
যে আমাকে হত্যা করার চেষ্ট
করছে”!
তিনি বললেন, আমি এবার আরো
তীক্ষ্মভাবে আওয়াজের উৎসের
দিকে আঘাত করলাম কিন্তু
এবারও তাকে হত্যা করতে
পারলাম না। সে আবার সাহয্যের
জন্য চিৎকার করলো!
তিনি আরেকবার পিছু হঠলেন
এবং ফিরে এলেন গলা পরিবর্তন
করে, এবার আবু রা’ফে আগে
থেকে উপুড় হয়ে শোয়া ছিলো
কারণ তাকে আগে দুইবার আঘাত
করা হয়েছিলো। তাই আব্দুল্লাহ
বিন আতিক বলেন, “আমি আমার
তলোয়ারটি তার পেটের মধ্যে
গেঁথে দিলাম এবং ততক্ষণ
ঠেলতে লাগলাম যতক্ষণ না হাড়
ভাঙ্গার শব্দ পেলাম। হাড়
ভাঙ্গার শব্দের মানে হচ্ছে তার
মেরুদন্ড ভেঙ্গে আলাদা হয়ে
গেছে এবং এতেই সে মৃত্যু মুখে
পতিত হল।
এরপর আব্দুল্লাহ বিন আতিক
রাযিঃ একটি সিঁড়ি অথবা মই
বেয়ে নিচে নেমে এলেন। তিনি
বলেন, উত্তেজনার বশে আমি
ভাবলাম যে আমি সিঁড়ি পার হয়ে
এসেছি কিন্তু একটি ধাপ বাকী
ছিলো। তাই দ্রুত করতে গিয়ে
আমি পড়ে গেলাম। সিঁড়ি থেকে
পড়ে যাবার কারণে আমার পা
মচকে গেলো। অনেক কষ্টে আমি
আমার সাথীদের কাছে ফিরে
এলাম। তাদের বললাম যে আমি
তাকে হত্যা করেছি। কিন্তু আমি
নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম। তাই
আমি এখানে অপেক্ষা করবো।
তোমারা গিয়ে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে সুসংবাদ পৌছে দাও।
আমি এখানে থাকবো আর ঘোষণা
শুনার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা
করবো!
.
দেখুন তাঁরা কি নিখূঁতভাবে
কাজটি করতে চাচ্ছিলেন! তিনি
নিজের পা ভেঙ্গেছিলেন এবং
লোকটির মেরুদন্ড ভেঙ্গেছিলেন
এরপরেও তিনি বসে অপেক্ষা
করতে চান এবং নিশ্চিতত হতে
চান যে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে!
এত ব্যাথা নিয়েও তিনি
অপেক্ষা করতে লাগলেন!
ফজরের সময় খবর প্রকাশ হলো যে
হিজাজের ব্যবসায়ী আবু রা’ফে
খুন হয়েছে!
.
লক্ষ্য করুন এরপর আব্দুল্লাহ বিন
আতিক রাযিঃ কি বললেন।
আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাযঃ কি
এটা বলেন নি যে, “আমরা এই
ধরনের নৃশংস কাজে ঘৃণা প্রকাশ
করছি। লোকটির ক্ষতি করা উচিত
হয়নি এবং এটি অনৈসলামিক
কাজ। এবং আমরা…
না, তিনি এ ধরনের কিছুই
বলেননি?
তাহলে আব্দুল্লাহ বিন আতিক
রাযিঃ কি বললেন??!!
আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাযিঃ
বললেন, “যখন আমি আবু রাফে’র
খুন হওয়ার সংবাদ শুনলাম, আমি
শপথ করে বলছি এর এর চেয়ে
সুমিষ্ট কথা আমি আমার জীবনে
আর কখনো শুনিনি।“ –এটাই
ছিলো আব্দুল্লাহ বিন আতিকের
কথা।
তাঁরা এভাবেই আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে ভালোবাসতেন।
তারপর তিনি মদীনায় দিলে ছুটে
গেলেন এবং আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাঁকে দেখে বললেন,
“সাফল্যে উদ্ভাসিত হোক
তোমার জীবন!”
প্রতি উত্তরে তিনি প্রিয়নবী
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে সম্বোধন করে বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাফল্যে
উদ্ভাসিত হোক আপনার জীবনও!
[সহীহ বুখারী, ৫ম-খন্ড, পৃষ্ঠা-৩৭১,
হাদিস নং- ৩০২২, ৩০২৩,
৪০৩৮-৪০৪০; ইসলামী
ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত ছাপায়
হাদিস নং- ২৮১০ এবং আধুনিক
প্রকাশনির ছাপায় হাদিস
নং-২৮০০]
.
এভাবেই তাঁরা সন্তুষ্ট
হয়েছিলেন। রাসুল (সাঃ)ও তাঁর
সাহাবাদের এমন নিবেদিতপ্রান
আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
.
আব্দুল্লাহ ইবনে খাতাল প্রমুখের
হত্যার কাহিনিঃ
এটি হল সেই ঘটনা, যা মক্কা
বিজয়ের পর সংঘটিত হয়েছিল।
মক্কা বিজয়ের পর প্রিয় নবী
সাঃ ইবনে খাতাল ও তার দুই
নর্তকী দাসীকে প্রকাশ্যে হত্যা
করার ঘোষণা দিয়েছিলেন,
এমনকি যদি তারা কা’বার
গিলাফ ধরে ঝুলে থাকে, তাহলেও
তাদেরকে হত্যার নির্দেশ দেন।
অথচ আল্লাহর রসূল সাঃ
মহিমান্বিত বাইতুল্লাহ অবস্থিত
পবিত্র শহরকে
রক্তপাতহীনভাবেই জয় করতে
চেয়েছিলেন। তিনি চাইতেন এটি
হোক শান্তিপূর্ণ বিজয়। তিনি
কোন রক্তপাত চাননি। আর তিনি
এতে প্রবেশ করেন নম্রতার সাথে,
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার
কাছে সিজদাবনত হয়ে,
কৃতজ্ঞতার সাথে। সেখানে কোন
প্যারেড ছিলো না, ছিলো না
কোন গান, কোন রক্তপাত কিংবা
হত্যা – সেখানে ছিলো শান্তি !
যাও তোমরা সবাই মুক্ত। কিন্তু
একটি কালো তালিকা ছিলো।
এটি ছিলো সেই সকল নরপশুদের
নামের তালিকা যাদের হত্যা
করা আবশ্যক ছিল। এদেরকে
কোনক্রমেই ক্ষমা করা হয়নি।
এদের কাউকে কাবার গিলাফ
ধরে ঝুলন্ত অবস্থায় গেলে
সেখানেই তাদেরকে হত্যার
নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
দুনিয়ার সবচাইতে পবিত্র স্থান
হচ্ছে মক্কা এবং মক্কার মধ্যে
সবচেয়ে পবিত্র ছিলো আল-
হারাম। আর কেউ যদি কাবার
গিলাফ ধরে ঝুলে থাকতো তাহলে
তাকে ছেড়ে দেয়া হতো। এটি
ছিলো জাহেলিয়াতের সময়
থেকেই মুশরিকীনদের আইন।
কিন্তু আল্লাহর রসূল সাঃ বলেন
কিছু লোকদের ব্যাপারে বললেন,
“তাদেরকে হত্যা করো, যদিও
তারা কাবার গিলাফ ধরে ঝুলেও
থাকে তবুও।” [ইবনে ইসহাক,
আব্দুল্লাহ বিন আবু বুকাইর বিন
হাজম থেকে বর্ণিত]
এরা কারা ছিলো?
.
এই তালিকার মধ্যে কিছু নাম
ছিল যার মধ্যে ছিল আব্দুল্লাহ
ইবনে খাতাল নামে এক লোক
এবং তার দুই ক্রীতদাসী এবং আবু
লাহাবের ক্রীতদাসী সারা।
এদের অপরাধ কি ছিল?
আব্দুল্লাহ ইবনে খাতাল এবং তার
দুই মেয়ে ক্রীতদাসী আল্লাহর
রসূলের বিরুদ্ধে গান গাইতো।
তারা আল্লাহর রসূলের বিরুদ্ধে
গান গেয়ে মক্কায় কনসার্ট
করতো। আবু লাহাবের স্বত্বাধীন
একটি মেয়ে ক্রীতদাসীর সাথে
এই দুটো মেয়েও তালিকায়
অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
প্রথমে আব্দুল্লাহ ইবনে
খাতালের কথাই বলা যাক।
সে প্রকৃতই কাবার গিলাফ ধরে
ঝুলে ছিলো। একজন সাহাবা তার
দিকে ছুটে গিয়ে তাকে হত্যা
করেন!
.
আসুন মেয়ে ক্রীতদাসীগুলোর
কৌতুহল উদ্দীপক ঘটনাটা আমরা
পর্যালোচনা করি।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
প্রথমত , আপানারা জানেন যে,
ইসলামে সাধারণভাবে নারীদের
হত্যা করা অনুমতি নেই! আল্লাহর
রসূল সাঃ নারীদের
হত্যা করতে নিষেধ করেছেন অথচ
এদেরকে, বিশেষভাবে এই
তালিকায় থাকা নারীদেরকে
হত্যার কথা বলা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, আমরা জানি যে,
নারীরা যদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধে যোগদান করে, তাহলে
তাদেরকে হত্যা করা যায়। কিন্তু
এই নারীরা তো যুদ্ধ করছিলো না
এবং কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহণও
করেনি। বরঞ্চ, তারা পুরোপুরি
আত্মসমর্পন করার মতো
পরিস্থিতির মধ্যে ছিলো!
তৃতীয়ত, আল্লাহর রসূল সাঃ
তাদেরকে আলাদা করে মক্কার
সবাইকে শান্তি এবং নিরাপত্তা
দিয়েছিলেন! এবং এর সাথে এও
যোগ করুন যে, এরা স্বাধীন নারী
ছিলো না বরং ছিলো ক্রীতদাস।
আর ইসলামে শাস্তির বিধানের
ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতার
একটি প্রভাব আছে। যেহেতু,
ক্রীতদাসদের কোন ব্যক্তি
স্বাধীনতা নেই, সেহেতু তাদের
শাস্তি ও কম হয়। এই নারীদের
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর বিরুদ্ধের
গান গাওয়া বা না গাওয়ার
স্বাধীনতা ছিলো না। কিন্তু আবু
লাহাব এবং আব্দুল্লাহ বিন
খাতাল, তাদের মনিব, তাদের এই
কাজটি করতে আদেশ দিয়েছে,
কিন্তু তারপরও তাদের আলাদা
করা হয়েছে এবং হত্যা করতে
বলা হয়েছে।
.
ইবনে তাইমিয়্যাহ এই বিষয়ে
বলেন, এটি পরিস্কার এবং মজবুত
প্রমাণ যে, সবচেয়ে বড়ো অপরাধ
হচ্ছে, আল্লাহর রসূলকে কটাক্ষ
করা। কারণ, উপরোক্ত এই
বিষয়গুলো অর্থাৎ মক্কার সকল
লোকদের নিরাপত্তা দেয়া, এটি
সত্য যে, তাদের নারী হওয়া,
প্রকৃতভাবেই তাদের কোন যুদ্ধ না
করা এবং তাদের ক্রীতদাসী
হয়ার পরও তাদের আলাদা করা
হয়েছিলো সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য!
এটিই প্রমাণ করে যে, প্রিয়নবী
সাঃ এর অবমাননা একটি বিরাট
অপরাধ!
এদের পরে কালো তালিকায়
ছিলো আরেকটি লোক। যার নাম
ছিলো আল হুয়াইরিদ বিন লুকাইদ।
সেও তার সাহিত্য ও ভাষার
মাধ্যমে নিজ মুখ দিয়ে আল্লাহর
রসূল সাঃ কে আঘাত করতো। সে
তার বাসায় লুকিয়ে ছিলো। আলী
ইবনে আবী তালিব তার বাসায়
এসে তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস
করলেন। তাঁকে জানানো হল যে,
সে সেখানে নেই এবং মক্কার
বাহিরে বাদীআয় চলে গেছে।
একথা শুনে আলি রাঃ সেখান
থেকে চলে যাওয়ার ভান করলেন।
আলী রাঃ বাসার পিছনে গিয়ে
লুকিয়ে রইলেন।
এরপর হুওয়ারিদকে তারা
জানালো যে, আলী ইবনে আবী
তালিব তাকে খুঁজতে এসেছিলো।
যখন হুওয়ারিদ আরেক জায়গায়
পালাতে যাচ্ছিলো, আলী
রাদিআল্লাহু তখন সামনে এসে
তাকে হত্যা করে ফেললেন।
[ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা নং- ৮১৯]
.
আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে কাব
ইবনে জুহাইর। সে ছিলো একজন
কবি। তার ভাইও ছিলো কবি এবং
তার বাবা জুহাইর বিন আবী
সালমা ছিলো শ্রেষ্ঠ কবিদের
একজন। আরবরা শ্রেষ্ঠ
কবিতাগুলোকে কাবায় ঝুলানোর
মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন করতো।
এটি ছিলো এই কাজের
সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। জুহাইর
বিন আবী সালমা ছিলেন এমন
একজন যার কবিতা কাবায়
ঝুলানো ছিলো। তার পুত্র কাব
এবং বুজায়ের দুজনেই ছিলো
কবি। কিন্তু বুজায়ের ছিলো
মুসলিম আর কাব ছিলো অমুসলিম
কা’ব রাসূল সাঃ এর বিরুদ্ধে সে
কবিতা রচনা করতো। তাই যখন
মুসলিমরা মক্কায় প্রবেশ করলো,
বুজায়ের তার ভাইকে একটি চিঠি
লিখে জানালো যে, আল্লাহর
রসূল সা” মক্কায় সেই সব
লোকদের হত্যা করছেন যারা তার
বিরুদ্ধে কবিতা রচনা করতো।
কাব সেসময় মক্কায় ছিলো না
কিন্তু তার ভাই আগে থেকেই
সাবধান করে দিয়ে তাকে একটি
চিঠি পাঠিয়ে দিলো। যে
আল্লাহর রসূল সাঃ সেই সব
লোকদের হত্যা করছেন যারা তার
বিরুদ্ধে কথা বলেছিলো।
এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইবনে
জাবারিয়া এবং মুগীরাহ ইবনে
আবী ওয়াহাব এর মতো
লোকদেরকেও হত্যা করার
নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। এদের
যারা বাকী ছিলো তারা দৌড়ে
পালানোরা চেষ্টা করেছে।
কারণ রসূলুল্লাহ আদেশ করেছেন
এমন সবাইকে হত্যা করতে যারা
তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে!
আল্লাহর রাসূল সাঃ ছিলেন
ক্ষমাশীল এবং তিনি তাঁর
শত্রুদের ক্ষমা করতেন। কিন্তু এই
বিশেষ অপরাধের জন্য নয়। -
এক্ষেত্রে ক্ষমা না করা এই
অপরাধের ভয়াবহতার প্রমাণ বহন
করে।
.
উকবা ইবনে আবী মুয়িদ এবং নাদার
ইবনে আবী হারিছের হত্যার ঘটনাঃ
এরপর আমাদের আছে উকবা ইবনে
আবী মুয়িদ এবং নাদার ইবনে
আবী হারিছের ঘটনা।
বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের
কাফিরদের মধ্যে সত্তর জন
যুদ্ধবন্দী ছিলো। আল্লাহর রাসূল
সাঃ তাদেরকে উপস্থিত করতে
বললেন যাতে তিনি একে একে
প্রত্যেককে দেখতে পারেন।
আল্লাহর রাসূল সাঃ নাদার ইবনে
হারিছের দিকে তাকিয়েছিলেন।
নাদার ইবনে আবী হারিছের
আল্লাহর রসূলের চোখের দিকে
তাকিয়ে কিছু দেখতে পেলো। সে
তার পাশের লোকটিকে বললো,
“শোন, আমাকে হত্যা করা হবে।
আমি আল্লাহর রসূলের চোখে
আমার মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি!”
লোকটি তাকে বললো, “না, তুমি
বাড়িয়ে বলছো। তুমি খুব বেশী ভয়
পাচ্ছো। তুমি আতঙ্কগ্রস্ত !”
সে বললো,“না। আমি বলছি
তোমাকে। আমি আল্লাহর রসূলের
চোখে মৃত্যু দেখেছি।”
এরপর নাদের ইবনে হারিছ তার
আত্মীয় মুসাব ইবনে উমায়েরকে
ডেকে বললো, “আল্লাহর রসূল
সাঃ এর কাছে যাও এবং বলো
তিনি যেন আমার সাথে অন্য
সময়ের মতো আচরণ করেন, আমার
লোকদের মতো আমার সাথে
আচরণ করেন। তিনি যদি
তাদেরকে হত্যা করেন, তাহলে
যেনো আামাকেও হত্যা করেন,
তিনি যদি তাদের ক্ষমা করেন
তাহলে আমাকেও যেন ক্ষমা
করেন!”
.
মুসাব ইবনে উমায়ের তাকে
বললেন, “তুমি সেই যে আল্লাহর
রসূলের বিরুদ্ধে কথা বলেছো
এবং আল্লাহর কিতাবের বিরুদ্ধে
কথা বলেছো।”
নাদের বিন হারিছ ছিল সেই
ব্যক্তি যে আল্লাহর রসূলের সাথে
প্রতিযোগিতা করার জন্য তার
পাশে হালাকা করতো। সে
পারস্যে গিয়েছিলো অলিক
কল্প-কাহিনী শিখে আসতে।
ফিরে এসে কাফিরদের বলতো
যে, মুহাম্মাদ সাঃ তোমাদের যে
কাহিনী বলছে, তার চেয়ে ভালো
কাহিনী আছে আমার কাছে।
আসো, এবার আমার কাছ থেকে
শোনো।
সে তাকে বললো, “মুসাব অনুগ্রহ
করে আল্লাহর রসূল সাঃ এর সাথে
কথা বলো।”
তিনি বললেন, “তুমি কি সেই না
যে আল্লাহর রসূলের সঙ্গীদের
নির্যাতন করতে!”
আল্লাহর রসূল সাঃ নাদের বিন
হারিছকে ধরে আনতে বললেন
এবং আলী রাদিআল্লাহু আনহুকে
বললেন তাকে হত্যা করতে। তাকে
আলাদা করে রাখা হয়েছিলো!
সে সময় তারা মদীনায় ফিরে
যাচ্ছিলেন। যখন তারা একটি
বিশেষ এলাকায় পৌছলেন, তখন
তিনি নাদের ইবন হারিছকে হত্যা
করলেন।
আর কিছুদূর যাওয়ার পরেই আদেশ
করলেন, যে উকবা ইবন আবী
মুয়িদকে হত্যা করা হোক।
উকবা বললো, অভিশাপ আমার
উপর! আমাকে কেন হত্যা করার
জন্য আলাদা করা হচ্ছে! আমার
সাথে সব লোকেরাই তোমার শত্রু।
সবাই তোমার সাথে যুদ্ধ করেছে,
সবাই তোমার সাথে লড়াই
করেছে, সবাই আমার গোত্র
কুরাইশ থেকে, আমাকে কেন
আলাদা করে দেখছো?
আল্লাহর রাসূল সাঃ বললেন,
অর্থঃ “এর কারণ হচ্ছে আল্লাহ ও
তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে তোমার
বিদ্বেষ!”
সে বললো, “হে মুহাম্মাদ! আমার
সাথে আমার লোকদের মত আচরণ
করো। তাদেরকে যদি হত্যা করো
তবে আমাকেও হত্যা করো।
তাদেরকে মুক্তি দিলে আমাকেও
মুক্তি দাও। তাদের থেকে যদি
মুক্তিপণ নাও তাহলে আমার
থেকেও যা চাও নাও!”
আর তারপর সে বললো, “হে
মুহাম্মাদ, আমার সন্তানদের কে
দেখবে?”
আল্লাহর রাসূল সাঃ বললেন,
“জাহান্নামের আগুন! হে আসিব,
একে নিয়ে যাও এবং এর
গর্দানটা উড়িয়ে দাও।”
এরপর আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন,
অর্থঃ “কত খারাপ লোক তুমি!
আমি তোমার মতো কোন লোককে
চিনি না যে আল্লাহ, তাঁর
কিতাব, তাঁর রসূলের উপর
অবিশ্বাস করেছে! তুমি আল্লাহর
নবীর অবমাননা করেছো, তাই
আমি আল্লাহর প্রশংসা করি
যিনি তোমাকে হত্যা করেছেন
এবং তোমাকে মরতে দেখে
আমার চোখে তৃপ্তি দান
করেছেন!”[নাদের বিন হারিছ ও
উকবা বিন আবু মুয়িদ এর ঘটনা দুটি
আস সারিমিল মাসলুল আলা
শাতিমির রাসুল’ গ্রন্থে বর্ণিত
আছে।]
.
এটি খুবই পরিস্কার যে, আল্লাহর
রাসূল সাঃ এই লোকগুলোর সাথে
ভিন্ন আচরণ করেছিলেন!
উম্মু ওয়ালাদ নামক এক দাসীর
হত্যার ঘটনাঃ
আরেকটি ঘটনা হচ্ছে, একজন অন্ধ
সাহাবীর অধীনে একজন দাসী
ছিল, দাসীটি ছিলো তাঁর উম্মু
ওয়ালাদ। ‘উম্মু ওয়ালাদ’ বলা হয়
এমন নারীকে যে মনীবের বাচ্চা
জন্ম দেয়। এধরনের দাসীকে উম্মু
ওয়ালাদ বা সন্তানের মাতা বলা
হত এবং তার ক্ষেত্রে বিশেষ
বিধি প্রযোজ্য হয়। এই ব্যক্তির
উম্মু ওয়ালাদ থেকে দুজন সন্তান
হয়েছিল। কিন্তু এই মহিলা
আল্লাহর রাসূল সাঃ কে
অভিশাপ দিত এবং তাকে তিনি
তা না করার জন্য সাবধান করার
পরেও সে বিরত হতো না!
এক রাতে সে আল্লাহর রাসূল
সাঃ কে অভিশাপ দিয়েই
যাচ্ছিলো। তখন তিনি একটি ছুরি
নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলেন
এবং ভিতরে চাপ দিতে থাকলেন
যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়!
সকালে আল্লাহর রসূলের নিকট
খবর পৌঁছল। আল্লাহর রাসূল সাঃ
লোকজনকে একত্র করে বললেন,
আমি আল্লাহর নামে তোমাদের
আদেশ করছি যে কাজটি করেছো
উঠে দাড়াও। অন্ধ ব্যক্তিটি উঠে
দাড়ালেন এবং হেঁটে রাসূল সাঃ
এর সামনে এসে বসে পড়ে বললেন,
“হে আল্লাহর রসূল! আমিই সেই
ব্যক্তি যে কাজটি করেছে। সে
আপনাকে অভিশাপ দিতো এবং
তাকে বিরত থাকার কথা
বলার পরও সে বিরত হতো না! তার
হতে আমার মুক্তার মতো সন্তান
আছে এবং সে আমার প্রতি খুব
সদয় ছিলো। কিন্তু গত রাতে সে
আপনাকে অভিশাপ দিতে
লাগলো। তাই আমি একটি ছুরি
নিয়ে তাকে আঘাত করলাম এবং
তাকে মেরে ফেললাম!”
রাসূল সাঃ বললেন,
“জেনে রেখো যে তার রক্তের
কোন মূল্য নেই।” অর্থাৎ, তার জন্য
কোন ক্ষতিপূরণ নেই এবং যে
তাকে হত্যা করেছে তারও কোন
শাস্তি নেই!
.
আমি চাই আপনারা এই ব্যাক্তির
কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। তার
হতে ঐ সাহাবীর সন্তান ছিলো
এবং তিনি তাদেরকে মুক্তা
হিসেবে তুলনা করেছিলেন এবং
তিনি বলেন, সে আমার সাথে খুব
সদয় ছিলো। তিনি হচ্ছেন একজন
অন্ধ ব্যক্তি যার এরকম সদয়
নারীর প্রয়োজন ছিলো যে তার
সাথে প্রীতিকর ছিলো! কিন্তু
যেহেতু আল্লাহর রাসূল সাঃ কে
আমাদের নিজেদের চাইতেও
বেশী ভালোবাসতে হবে এবং
নিজেদের পরিবারের চেয়েও
আমাদের আল্লাহর রসূলকে বেশী
ভালবাসতে হবে। আমাদের উচিত
তাকে পৃথিবীর যে কোন কিছুর
চেয়ে বেশী ভালোবাসা। তাই
তাঁর জন্য যা করা উচিত ছিল,
তিনি তাই করেছিলেন!
যখন আল্লাহর রাসূল সাঃ এর
অবমাননার কোন বিষয় আসবে,
তখন মুসলিমদের রূপ এমনই হওয়া
উচিত। উক্ত ঘটনার পর আল্লাহর
রাসূল সাঃ তার অনুমোদন দিয়ে
বলেন, “জেনে রেখো, তার
রক্তের কোন মূল্য নেই।”[ইমাম
শাবি রহঃ আলি রাঃ এর সূত্রে
এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। আবু
দাউদ রাঃ ও অন্যান্য সংকলকগণ
এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে
তাইমিয়্যাহ রহঃ বলেন এ
হাদিসটি উত্তম, কারণ ইমাম
শাবি রহঃ আলি রাঃ কে
দেখেছেন এবং তাঁর থেকে নিজে
তা বর্ণনা করেছেন।]
আসমা বিনতে মারওয়ান নামক এক
মহিলাকে হত্যার ঘটনাঃ
এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটে যখন
এক ব্যক্তি তার গোত্রের এক
মহিলাকে হত্যা করে। আল্লাহর
রাসূল সাঃ কি বলেন এই
ব্যাপারে? তিনি কি তাকে
শাস্তির আদেশ দেন?
তিনি বলেন,
অর্থঃ “দুটো ছাগলও এই নিয়ে
ঝগড়া করবে না।”
আল-ওয়াকিদী বর্ণিত একটি
ঘটনা নিয়ে আমরা আলচনা করতে
পারি। এই মহিলার নাম ছিলো
আসমা বিনতে মারওয়ান। সে
আনসারদের মধ্যে একজন ভালো
কবি ছিলো। কিন্তু সে আল্লাহর
রসূলের বিরুদ্ধে কথা বলতো এবং
ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলতো আর
লোকদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি
করার চেষ্টা করতো। সে বলতো,
“এই লোক আমাদের মধ্য থেকে নয়,
এই লোক তো আমাদের গোত্রের
নয়। তাহলে কেন আমরা তাকে
আতিথ্য দিচ্ছি এবং নিজেদের
উপর এই সকল বিপদ ডেকে আনছি,
আমরা কেন তাকে আমাদের
মাঝে থেকে নিরাপত্তা দিচ্ছি!
তাকে বের করে দাও!”
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর হিজরত
করে মদিনায় আসার কারণে
আনসারদের অনেক কষ্ট ও
ত্যাগের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো।
অর্থনৈতিকভাবে তাঁরা
ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাদের মধ্যে
অনেকে মারা যান, তাদের
শহরকে আক্রমন করা হয়। কিন্তু
তারা এই সব সর্বশক্তিমান
আল্লাহর জন্য করছিলেন। আর
এজন্যই তাদের বলা হয় আনসার-
যারা আল্লাহর রাসূল সাঃ কে
সহযোগিতা করেছিলেন, বিজয়
এনে দিয়েছিলেন।
তাঁর পরিবার থেকে উমায়ের বিন
আলী নামক এক অন্ধ ব্যক্তি
বলেন, “আল্লাহর নামে আমি শপথ
করছি, যে আল্লাহর রাসূল সাঃ
যদি মদীনায় ফিরে আসেন আমি
আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যা
করবো!”
রাসূল সাঃ সে সময় বদরে ছিলেন।
যখন আল্লাহর রাসূল সাঃ ফিরে
আসলেন, উমায়ের বিন আলী
মধ্যরাতে সরাসরি আসমা বিনতে
মারওয়ানের কক্ষে প্রবেশ
করলেন।
তাকে ঘিরে ছিলো তার
সন্তানেরা এবং একজন তার
বুকের দুধ পান করছিলো। তিনি
হাতিয়ে দেখলেন যে সে এই
বাচ্চাটিকে ধরে রেখেছে। তাই
তিনি হাত দিয়ে বাচ্চাটিকে
সরিয়ে তার পাশে রাখলেন এবং
তার তালোয়ারটি আসমার বুকে
বিদ্ধ করে দিলেন।
এরপর তিনি ফযরের সালাত
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর সাথে
আদায় করলেন। যখন আল্লাহর রসূল
সাঃ সালাত শেষ করলেন, তিনি
উমায়েরের দিকে তাকিয়ে
বললেন, “তুমি কি মারওয়ানের
মেয়েকে হত্যা করেছো?”
তিনি বললেন, জি, আমি আমার
বাবাকেও আপনার জন্য উৎসর্গ
করে দেবো।
উমায়ের চিন্তিত ছিলেন যে
তিনি ভুল কিছু করেছেন এবং তাঁর
উচিত ছিলো আল্লাহর রাসূল সাঃ
এর অনুমতি নেয়া। কারণ রাসুল
সাঃ ছিলেন ওয়ালি আল-আমর।
তাই তিনি রাসূল সাঃ কে
জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর
রাসূল সাঃ! আমি কি কোন ভুল
করেছি?
আল্লাহর রসূল সাঃ কি বললেন?
তিনি কি বললেন, “যে আমার
অনুমতি নেয়া তোমার উচিত
ছিলো?”
তিনি বললেন, “দুটো ছাগলও
তাকে নিয়ে ঝগড়া করবে না।”
অর্থাৎ, এই বিষয়টি এত পরিস্কার
যে, দুটো ছাগলেরও এই বিষয়েও
ভিন্ন মত থাকতে পারে না।
এমনকি, পশুদেরও এই বিষয়ে
দ্বিমত থাকতে পারে না। সকল
প্রশংসা আল্লাহর। অথচ এখন
আমরা এই বিষয়ে ভিন্নমত দেখতে
পাই!
আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, যে
প্রাণীদেরও এই বিষয়ে বুঝা
উচিত। এটি এত সহজ যে, দুটো
ছাগলও এই বিষয়ে ঝগড়া করবে
না। তাহলে কিভাবে করে
বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিরা এই
ব্যাপারে বিরোধ করে?
এরকম স্পষ্ট একটি বিষয় কিভাবে
দ্বিমত থাকতে পারে? এটি এত
সহজবোধ্য যে, আলিমগণের মধ্যে
এই বিষয়ে ঐকমত্য আছে।
(ইনশাআল্লাহ যা সামনে
আলোচনা করা হবে।)
আল্লাহর রাসূল সাঃ তার
চারপাশের সবার দিকে তাকিয়ে
বললেন,
অর্থঃ “তোমরা যদি এমন
ব্যক্তিকে দেখতে চাও যে,
আল্লাহ ও তার রাসুলকে সাহায্য
করেছে এবং বিজয় এনে দিয়েছে,
তাহলে উমায়ের ইবন আলীকে
দেখ।”
উমর বিন খাত্তাব রাদিআল্লাহু
আনহু বললেন,
“দেখো এই অন্ধ ব্যক্তিকে যে
রাতের বেলায় বেরিয়ে ছিলো
সর্বশক্তিমান আল্লাহর আনুগত্য
পালনার্থে।”
আল্লাহর রাসূল সাঃ বললেন,
অর্থঃ “তাকে অন্ধ ডেকো না।
কারণ সে একজন স্পষ্ট
অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী।” [কিতাব
আত তাবাকাত আল কাবির। মইনুল
হক অনূদিত ২ খন্ড, ২৪ পৃষ্ঠা]
উমায়ের ফিরে গিয়ে পেলেন যে
মহিলার গোত্রের কিছু লোক এবং
সন্তানরা তাকে কবর দিচ্ছে।
তারা তার কাছে এসে হুমকি
দিয়ে বললো, “ও উমায়ের! তুমিই
সেই যে তাকে হত্যা করেছো”!
আমরা আওস এবং খাজরাজের
লোকদের কথা বলছি যারা জন্ম
নিয়েছে যুদ্ধে, এরা ছিলো
যোদ্ধা!
তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমি
তোমাদের সবাইকে আহবান করছি
একত্রিত হয়ে আসো। যদি
তোমাদের মধ্যে একজনও তার
মতো আচরণ করো, আমি
তোমাদের সবাইর বিরুদ্ধে লড়বো
যতক্ষণ না তোমাদের সবাইকে
হত্যা করছি অথবা নিজে মারা
যাচ্ছি।”
এই চ্যালেঞ্জের ফল কি ছিলো,
এটা কি তাদেরকে ইসলাম থেকে
দূরে সরিয়ে নিলো? কারণ, এটি
ছিলো ঠিক আল্লাহর রসূলের
হিজরতের কিছু দিনের মধ্যে বদর
যুদ্ধের ঠিক পরপর সংঘটিত ঘটনা।
সকল আনসাররা তখনো মুসলিম
হননি। এরকম কিছু হয়তো মানুষকে
ইসলামকে দূরে সরিয়ে নিয়ে
যেতে পারতো। এই লোকটি
তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছিলো
যে, তোমাদের মধ্যে কেউ আমার
বিরোধীতা করলে তোমাদের
সবাইকে হত্যা করবো!
কিন্তু আল-ওয়াকিদীর মতে,
আসলে যা ঘটল সেটি হচ্ছে এই
সময়টিতেই ইসলামের বিস্তার
ঘটল। কারণ, যে সকল মুসলিম
লোকদের ভয়ে পরিচয় লুকিয়ে
রেখেছিলো, ইসলামের শক্তি
দেখে তারা বেরিয়ে আসতে শুরু
করল।
তাহলে আমরা এই ঘটনা এবং
পূর্ববর্তী ঘটনা থেকে কি
শিখলাম?
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকে
অনেক কথা শোনা যাচ্ছে যে,
শাসকের অনুমতি নিতে হবে।
আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন
রাখছি, কেউ আপনার বাসা
আক্রমণ করল এবং আপনাকে হত্যা
করতে চাইল, রাসূল সাঃ এই
বিষয়ে কি বলেন?
“যে নিজের সম্পদ রক্ষার্থে
জীবন দেয় সে শহীদ, যে
আত্মরক্ষা করতে মারা যায় সে
শহীদ, এবং যে ঈমান রক্ষার্থে
মারা যায় সে শহীদ, যে তার
পরিবার রক্ষা করতে মারা যায়
সে শহীদ।”[সা’দ ইবনে জুবায়ের
রাঃ থেকে আবু দাউদ ও
তিরমিজি কিতাবে বর্ণিত।]
.
আমি নিশ্চিত আপনারা সবাই এই
হাদীসটি জানেন! এখন কেউ
আপনার ঘরে এসে আপনাকে
আক্রমণ করলো আর আপনার
মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে আপনাকে
হত্যা করার চেষ্টা করছে এবং
আপনি প্রতিহত করতে চান,
আপনার কি শাসকের অনুমতি
নিতে হবে? এই বিষয়ে ইসলামিক
বিধান খুব স্পষ্ট!
লোকটি আপনার মাথায় বন্দুক
ঠেকিয়ে আছে আর আপনি ফোন
উঠিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল
প্যালেস কিংবা রাজার কাছে
ফোন করছেন এবং অনেকগুলো
সেক্রেটারী আর অনেক লাল
ফিতা পার হয়ে যখন আপনি তার
কাছে পৌঁছলেন, আপনি তাকে
জিজ্ঞেস করছেন, আমাকে কেউ
হত্যা করার চেষ্টা করছে। অনুগ্রহ
করে একটু জানাবেন, আমি কি
নিজেকে হিফাজত করতে পারি?
এর কি অর্থ হয়? তাই আপনার যদি
ইমামের অনুমতি না লাগে নিজের
আত্মরক্ষার জন্য, তাহলে
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর সম্মান
রক্ষার্থে আপনার ইমামের
অনুমতি নেয়া লাগবে কেন?
যে লোকটি বনী খাতমার
নারীকে হত্যা করেছিলেন,
আল্লাহর রাসূল সাঃ জীবিত
থাকা অবস্থায় তিনি কি তার
অনুমতি নিয়েছিলেন? না, তিনি
নেননি এবং যে অন্ধ ব্যক্তি তার
সন্তানের মাকে হত্যা করে,
তিনি কি পূর্বে আল্লাহর রসূলের
অনুমতি নিয়ে রেখেছিলেন? না,
তিনি নেননি।
তাঁরা করেছিলেন এবং রাসূল
সাঃ তাঁদের কর্মের অনুমোদন
দিয়েছিলেন এই বলে যে,
“দুটো ছাগলও এই বিষয়ে ঝগড়া
করবে না।”
আমাদের জেনে রাখতে হবে যে,
আল্লাহর রসূলের সম্মান ইমামের
অনুমতি নেয়ার বিষয়ের উর্দ্ধে!
কে সে ইমাম যে আপনাকে
আল্লাহর রসূল এর সম্মান রক্ষার
অনুমতি দেবে? এটি যে কোন
শাসকের মর্যাদার চেয়েও অনেক
উঁচুতে!
.
ভাই ও বোনেরা! খেয়াল রাখুন
আমরা কার বিষয়ে কথা বলছি!
আমরা কথা বলছি আল্লাহর রাসূল
সাঃ কে নিয়ে। আল্লাহর রাসূল
সাঃ এর সম্মান রক্ষার্থে
আপনার কারও অনুমতির প্রয়োজন
নেই! তিনি এই সবের অনেক
উর্দ্ধে।
আল্লাহর রাসূল সাঃ হচ্ছেন তিনি
যার উপর আল্লাহ এবং তার
ফিরিশতাগণ এবং ঈমানদারগণ
দু’আ পড়েন!
প্রিয়নবী সাঃ হচ্ছেন একমাত্র
সেই একক ব্যক্তি যার জন্য
বিশেষ কিছু আহকাম আছে। তার
ব্যাপারে আচরণ হবে ভিন্ন এটাই
স্বাভাবিক! অন্যদের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য আইনের অনেক কিছুই
রাসূল সাঃ উপর প্রযোজ্য নয়। এটি
এমন একটি বিষয় যা সুস্পষ্টভাবে
অনুধাবন করা দরকার।
.
বানু বকর গোত্রের এক কবির হত্যার
ঘটনাঃ
এবার আসা যাক বনু বকর গোত্রের
এক কবির ঘটনায়। বনু বকর ছিলো
কুরাইশের মিত্র। অপরদিকে,
খুজায়া নামে মুশরিকদের এক
গোত্র যারা রাসূল সাঃ এর সাথে
মৈত্রি চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল।
হুদায়বিয়ার সন্ধিতে খুজায়া
গোত্র আল্লাহর রসূল এর সাথে
জোটবদ্ধ হল আর বানু বকর
কুরাইশদের সাথে গেল। বানু বাকর
গোত্রের মধ্যে এক কবি ছিলো
যে আল্লাহর রাসূল সাঃ এর
বিরুদ্ধে কথা বলতো। খুজায়া
গোত্রের এক যুবক একদা সেই বানু
বকর গোত্রের সেই কবিকে আঘাত
করলো। যার ফলে সে ব্যাথা
পেলো কিন্তু মারা গেলো না।
বানু বকরের একটি প্রতিনিধি দল
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর কাছে
গিয়ে এই ঘটনা তাকে অবহিত
করলো। তিনি বললেন, তার রক্ত
প্রবাহিত হয়েছে, তাকে হত্যা
করো।
পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের সময়ে
বনু বকর ইসলাম গ্রহণ করে এবং
তাদের মধ্য থেকে নাওফেল বিন
মুওয়াবিয়া রসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট
সেই কবির ব্যাপারে সুপারিশ
করতে আসে।
কে ছিল এই নাওফেল বিন
মুওয়াবিয়া?
নাওফেল বিন মুওয়াবিয়া হচ্ছে
সেই ব্যক্তি যে রসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং
মুসলিমদের বিরুদ্ধে
বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সেই
হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে মসজিদ আল-
হারাম এর মধ্যে খুজায়াহ
গোত্রের লোকদেরকে হত্যা করে,
অথচ তাকে তার কাফির সাথী ও
সহচর অনুচারীরাও এ ব্যাপারে
নিষেধ করেছিলো, বলেছিল, “এই
পবিত্র জায়গার মধ্যে হত্যাযজ্ঞ
চালানোর ব্যাপারে আল্লাহকে
ভয় করো।”
তখন সে বলেছিল, “আজ কোন প্রভূ
নেই, আজ শুধু প্রতিশোধের দিন,
আজ আল্লাহকে ভুলে যাও, আজ
শুধু প্রতিশোধ নাও।”
এই নাওফেল বিন মুওয়াবিয়া যে
রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লামের সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এবং
তাঁর মিত্র খুজায়াহ গোত্রের
লোকদেরকে হত্যা করে করেছিল,
অথচ সে এসেছে রসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে
সেই কবির ব্যাপারে সুপারিশ
করতে।
কার অপরাধটি বেশি বড় ছিল
নাওফেল বিন মুওয়াবিয়া নাকি
সেই কবির অপরাধ? নাওফেল বিন
মুওয়াবিয়া কি বিপর্যয় সৃষ্টি
করেনি?
তারপরেও তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে
ক্ষমা করেছিলেন।
সে এসে সেই কবির বিষয়ে
সুপারিশ করে বলেছিল, “হে রসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাহ খুজায়াহ গোত্রের
লোকেরা বিষয়টিকে
অতিরঞ্জিত করেছে, সে এখন
মুসলিম হতে চায় এবং তওবা করতে
চায়। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার
তওবা কবুল করলেন।
এতক্ষণ আমি আপনাদের সামনে
ইসলামের প্রথম যুগের ঘটনাগুলো
উল্লেখ করলাম। এখন চলুন আমরা
দেখি আলিমগণ এ সংক্রান্ত
বিষয়াবলীর ব্যাপারে কি
বলেছেন এবং তাদের অভিমত
কি?
আলিমগণের
মতামত প্রিয়
ভাই ও বোনেরা, আমি আপনাদের
সামনে খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে
আলিমদের মতামত তুলে ধরছি।
কিন্তু দুটো কিতাব আছে
যেখানে এই সংক্রান্ত বিষয়ে
বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে।
যদি কেউ আরো বিশেষ কিছু
জানতে চান, তাহলে আমি
আপনাদের সেই কিতাব দুটো
পড়ার অনুরোধ করবো।
প্রথম কিতাবটি হচ্ছে রাসূল সাঃ
এর বিরুদ্ধে নিন্দা সংক্রান্ত
বিষয় নিয়ে এবং কিতাবটি হলো
শাইখুল হাদীস ইমাম ইবন
তাইমিয়্যার লেখা “আস সারিম
আল মাসলূল আলা শাতিম আর
রসূল” “রাসূল সাঃ এর বিরুদ্ধে
অপবাদকারীর উপর তালোয়ার।”
আরেকটি কিতাব হল “আশ শিফা’
ফি আহওয়াল আল মুস্তাফা” যার
রচয়িতা কাদী ই‘য়াদ – একজন
মালিকি শাইখ। কিতাবটিতে
সাধারণভাবে রাসূল সাঃ এর কথা
বলা হয়েছে কিন্তু শেষ পর্বে
এসে বিশেষভাবে তাঁর বিরুদ্ধে
অপবাদকারীর কথা বলা হয়েছে।
আমরা ইবনে তাইমিয়্যার কথা
দিয়েই শুরু করছিঃ
ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেনঃ “যে কেউ
আল্লাহর রাসূল সাঃ-কে গালি
দিবে- সে মুসলিম হোক বা
অমুসলিম হোক, তাকে হত্যা করতে
হবে।”
তিনি আরো বলেনঃ “এই রায়ের
বিষয়ে সকল আলিমগণের মধ্যে
ইজমা (ঐক্যমত) রয়েছে।”
ইবনে মুনজির বলেন, “এই ব্যাপারে
আমাদের আলিমগণ ঐকমত যে, যে
ব্যক্তি রাসূল সাঃ-কে অভিশাপ
দিবে, তাকে মৃত্যু দন্ডাদেশে
দেয়া হবে।”
এবং এটা মালিক, আল লাইথ,
আহমাদ, ইসহাক, শা’ফি এবং নুমান
ইবনে হানিফা রহঃ এরও মতামত।
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মতামত
হচ্ছে , “যে মুসলিম রাসূল সাঃ এর
বিরুদ্ধে কথা বলবে তাকে
মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে এবং সে
অমুসলিম যার সাথে কোন চুক্তি
নেই, তাকেও একই ভাবে
দন্ডাদেশ দেয়া হবে।”
তিনি শুধুমাত্র জিম্মিদের এই
তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন –
অমুসলিম কিন্তু জিম্মি – যে
জিযিয়া কর দেয়। এদের
ব্যাপারে আবু হানিফার মতামত
হচ্ছে যে, তারা কাফির, তাদের
শুরুটাই হচ্ছে কুফরী দিয়ে, সুতরাং
এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে
পারে?
সুতরাং মুসলিম এবং মুহারিবের
পরিস্থিতিতে সবধরনের আলিমগণ
একমত, শুধুমাত্র একটি ভিন্নমত
আছে এবং তাও জিম্মিদের
ক্ষেত্রে একটি ছোট মতামত।
এরপর ইবনে তাইমিয়্যাহ
জিম্মিদের বিষয়ে আরো
বিস্তারিত বলেছেন যে, “একজন
জিম্মি – যে জিযিয়া দিয়ে
থাকে – যখন সে রাসূল সাঃ এর
বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে, তার
অঙ্গীকারণামা বাতিল হয়ে যায়,
এবং তাকেও মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া
উচিত।”
.
কাজী ই‘য়াজ রহঃ আশ শিফা’
নামক কিতাবে বলেন, “যে কেউ
এমন কোন কথা বলল যা রাসূল
সাঃ এর নিন্দা করে বলা হয়,
কোন ধরনের সতর্ক তামূলক
ব্যবস্থা ছাড়াই তার
মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হবে।”
ইবন আতাব রহঃ বলেন, “কোরআন
এবং সুন্নাহ এই ব্যাপারে ইঙ্গিত
দেয় যে, যে কেউ রাসূল সাঃ
ক্ষতি করার চেষ্টা করে অথবা
তাঁর নিন্দা করে, তাকে হত্যা
করা উচিত এমনকি যদিও এটা
একটা ক্ষুদ্র বিষয়ও হয়ে থাকে।”
ইমাম মালিক রহঃ বলেন, “যদি
কেউ বলে থাকে যে, রাসূল সাঃ
এর জামার বোতামটাও ময়লা,
তাহলে তাকেও মৃত্যুদন্ডাদেশ
দেয়া উচিত।”
এমনকি যদি এটা কোন
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোন কথা বলার
মত হয়, তারপরও তাকে দন্ডাদেশ
দেয়া উচিত।
এরপর কাজী ই‘য়াজ বলেন, “আমরা
এছাড়া আর কোন ভিন্ন মতামত
জানি না, এই ব্যাপারে সবাই
একমত এবং আর কোন ভিন্ন
মতামত আমাদের জানা নেই।”
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরা !
আপনাদের মধ্যে যারা ‘উসুল আল
ফিকহ’ কিতাবটি পড়েছেন, তারা
বুঝতে পারছেন যে, ইজমা হচ্ছে
হুজ্জাহ – যখন আলিমগণ কোন
একটা ব্যাপারে -একমত পোষন
করেন তখন সেটির আবশ্যকীয়তা-
ঠিক কোরআন ও সুন্নাহ এর মতো,
কারণ রাসূল সাঃ বলেনঃ
“আমার উম্মাহ কোন একটি ভুল
বিষয়ের উপর একমত হতে পারে
না।” [ মুসনাদে আহমাদ হাদিস
নং-২৫৯৬৬]
.
ইমাম মালিক রহঃ বলেন, “মুসলিম
হোক আর কাফির হোক, কোন
তফাত নেই (যে আল্লাহর
রাসুলকে গালি দিবে অথবা
নিন্দা করবে) তাকে কোন
সতর্কতা ছাড়াই হত্যা করতে
হবে।”
.
আল ওয়াকিদী একটি ঘটনার কথা
উল্লেখ করেনঃ খলিফা হারুন আর
রাশিদ ইমাম মালিককে একটি
লোকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস
করেছিলেন যে নাকি রাসূল সাঃ
এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। আর
রাশিদ ইমাম মালিককে বলেন
যে, “ইরাকের ফুকাহারা এর
ব্যাপারে একটা ফাতোয়া
দিয়েছেন যে, একে চাবুক দিয়ে
প্রহার করতে হবে।”
ইমাম মালিক রাগান্বিত হলেন
এবং বললেন, “হে আমিরুল
মু’মিনীন! কিভাবে উম্মাহ টিকে
থাকতে পারে যখন তার নবীকে
অভিশাপ দেয়া হয়। যে নবীকে
অভিশাপ দেয়, তাকে
মৃত্যুদন্ডাদেশ দিতে হবে, এবং যে
রসূল সাঃ এর সাহাবাদের
অভিশাপ দিবে, তাকে চাবুক
দিয়ে প্রহার করতে হবে।”
এই ধরনের পরিস্থিতিতে এটাই
ছিল ইমাম মালিকের
প্রতিক্রিয়া!
যখন তিনি এটা শুনলেন যারা এই
ধরনের ভুল ও মিথ্যে ফাতাওয়া
দিয়েছিল এমন তথাকথিত
ফুকাহাদের উপর খুবই রাগান্বিত
হলেন। তিনি বলেন যে, “রাসূল
সাঃ এর বিরুদ্ধে এবং
সাহাবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার
মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
যদি তুমি আল্লাহর রাসূল সাঃ এর
বিরুদ্ধে কথা বলো তাহলে
তোমার মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত
প্রাণদন্ডাদেশ দেয়া হবে। আর
যদি তুমি সাহাবাদের বিরুদ্ধে
কথা বলো তাহলে তোমাকে
চাবুক দিয়ে প্রহার করা হবে।”
এখন আমরা আল কাজী ই‘য়াজ
রহঃ এর মতামতগুলো শুনবোঃ
কাজী ই‘য়াজ বলেনঃ “এই
ঘটনাটি ইমাম মালিকের
একজনের ঘনিষ্ঠ সাথী আমাদের
নিকট বলেছিল এবং যিনি
কিতাবটি তার সম্পর্কে
লিখেছিলেন।”
এরপর তিনি বলেন, “ইরাকের এই
সব আলিমরা কারা এবং কারা এই
সব ফাতাওয়া দিয়েছিল এই
সম্পর্কে আমার নিকট কোন তথ্য
প্রমাণ নেই এবং আমরা ইতিমধ্যে
ইরাকের আলিমদের মতামত
উল্লেখ করেছি যে – তাকে
প্রাণদন্ডাদেশ দিতে হবে।”
এরপর তিনি বক্তব্যের সত্যতা
প্রতিপাদন করেনঃ “সম্ভবত তারা
ছিলেন এমন সব আলিম যারা
তখনোও আলিম হিসেবে
পরিচিতি লাভ করেননি, অথবা
তারা ছিলেন এমন যাদের
ফাতাওয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা
ছিলো না, অথবা তারা ছিলো
এমন যারা তাদের প্রবৃত্তির
অনুসরণ করতো। অথবা সম্ভবত যে
লোকটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে সে
হয়তো অভিশাপ দেয়নি [এই
ব্যাপারে একটা ভিন্ন মত আছে
যে, এটা কি অভিশাপ ছিলো
কিনা – কিছু বিষয় ছিলো অস্পষ্ট
কারণ খলিফা ইমামের নিকট তা
খোলাখুলি ব্যক্ত করেননি] অথবা
এমন হতে পারে যে লোকটি
আল্লাহর রাসূল সাঃ কে
অভিশাপ দিয়েছিলো এবং পরে
তাওবা করেছে। কারণ এই
ব্যাপারে সব আলিমদের মধ্যে
ইজমা রয়েছে যে, যদি কেউ
আল্লাহর রাসূলকে সাঃ অভিশাপ
দেয়, তাহলে তাকে হত্যা করতে
হবে।”
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরা !
এই ঘটনাটি বিশ্লেষণ করতে
গিয়ে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং
অদ্ভুত কিছু ফাতওয়ার সম্মুখীন
হয়েছি। এটা সত্যিই মজার
ব্যাপার যে, কিভাবে কতিপয়
লোক আল্লাহর শত্রুদের খুশি
করার নিমিত্তে নিজেরাই
নিজেদের উপর লুটিয়ে পড়ে।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘য়ালা বলেনঃ
অর্থঃ “অতঃপর যাদের অন্তরে
মুনাফিকির ব্যাধি রয়েছে
তাদের তুমি দেখবে যে, তারা
বিশেষ তৎপরতার সাথে এই বলে
তাদের সাথে মিলিত হচ্ছে যে,
আমাদের আশংকা হচ্ছে যে,
কোন বিপর্যয় এসে আমাদের উপর
আপতিত হবে। ” [সূরা আল
মায়িদা-৫২]
তারা মুনাফিক, এবং তাদের
অন্তরে রোগ রয়েছে, এবং তারা
এই ভয়ে আছে যে, যদি তারা কথা
বলে তাহলে তাদের উপর একটি
বিপর্যয় আপতিত হবে, কারণ তারা
আল্লাহকে ভয় করার চেয়েও
আল্লাহর শত্রুদের বেশী ভয় করে।
প্রিয়নবী সাঃ এর অবমাননার
ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের মুসলিমরা
স্বতস্ফুর্তভাবে প্রতিক্রিয়া
দেখাল। কারণ তারা যা শুনেছে
তাতে তারা যথেষ্টই ক্ষুদ্ধ ছিল!
এই সরলমনা মুসলিমদের অন্তরে
রাসূল সাঃ এর প্রতি ভালোবাসা
বিদ্যমান আছে – এটাই তাদের
ফিতরাহ।
রাসুলের অবমাননার প্রতিবাদে
নেমে আসা উত্তাল জনতা আর
তরুণ যুবকরা সকলে আলেম ছিলেন
না, সকলে অতো জ্ঞানী পণ্ডিতও
ছিলেন না, কিন্তু তদপুরি তাঁরা
যেহেতু মুসলিম ছিলেন, এমন
মুসলিম যারা আল্লাহর রাসুল
সাঃ কে ভালোবাসে। এজন্য
স্বাভাবিকভাবেই তারা
বিদ্রোহী হয়ে রাস্তায় নেমে
এসেছিলেন। এখন আমরা এই
বিদ্রোহের সাথে একাত্মতা
ঘোষণা করতেও পারতাম অথবা
নাও করতে পারতাম, অথবা আমরা
এর সুফল এবং এর পরিণতি কোথায়
যাবে অথবা আদৌ এটা আমাদের
জন্য উপকারী কিনা তা নিয়ে
বিতর্ক ও করতে পারতাম। কিন্তু
যে বিষয়টির প্রতি আমাদের
খেয়াল রাখা দরকার তা হলো
মুসলিমদের মধ্যে সেই আবেগ আর
উদ্দীপনা যা তাদেরকে রাস্তায়
বেরিয়ে আসতে তাড়িত করেছিল,
এটা তাদের ফিতরাহ, আল্লাহর
রাসূল সাঃ এর প্রতি তাদের
ভালোবাসা। তারা পতাকা
পুড়িয়েছিল এবং স্বল্প পরিসরে
হলেও অনেক কিছুই করেছিল।
বরতমান বিশ্ব পরিস্থিতির এই
সন্ধিক্ষণে ঐসকল আলিমগণ,
এক্ষেত্রে জনগণের দায়িত্ব এবং
ইসলামী শরিয়াহর হুকুম [আইন]
তাদের নিকট সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা
করেন নি। মহান আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তা‘য়ালা বলেনঃ
অর্থঃ “তোমরা একে মানুষের
নিকট প্রকাশ করবে এবং তোমরা
একে গোপন করবে না।” [সূরা আল
ইমরান – ১৮৭]
অর্থাৎ, আলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে
মানুষদের নিকট সুস্পষ্টরূপে
প্রকাশ করা এবং গোপন না করা।
প্রকৃত অর্থে, তারা মানুষদের
আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে না বলে
বরং তাদের দ্বিধায় ফেলে
দিচ্ছে, তারা তাদেরকে
বিদ্রোহের জন্য নিন্দা করেছে,
তারা তাদেরকে পতাকা
পোড়ানোর জন্য নিন্দা করছে,
তারা তাদেরকে রাস্তায় বের
হয়ে পড়ার জন্য নিন্দা করছে,
এবং তাদের কেউ কেউ এই সব
বিদ্রোহীদের ড্যানিশ পন্য
বর্জনের জন্যও নিন্দা করছে।
কারণ তাদের অভিমত হচ্ছে যে,
“এটা তাদের [কাফিরদের]এবং
আমাদের [মুসলিমদের] মাঝে
সম্পর্কন্নোয়নের জন্য সহায়ক নয়
এবং আমাদের তাদের সাথে
সর্ম্পকের এবং শূন্যতা পূরণের
সেতুবন্ধন তৈরি করা উচিত” এবং
আরো কিছু প্রলাপ বাক্যের
মাধ্যমে উম্মাহকে বিভ্রান্ত
করছে!
.
কোথায় সর্ব শক্তিমান মহান
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার
হুকুম? এটা কি মানুষের নিকট
স্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়নি?
যদি আপনি সত্যকে বলতে না
পারেন তাহলে আপনি নিশ্চুপ
থাকেন!
     এজন্যই রাসুল সাঃ বলেছেন,
অর্থঃ “যে আল্লাহ এবং শেষ
বিচারের দিনে বিশ্বাস করে
তার উচিত সে হয়তো ভাল কথা
বলবে অথবা চুপ থাকবে!” [আবু
হুরাইরা থেকে বর্ণিত, বুখারী
এবং মুসলিমে উদ্ধৃত]
আপনি দেখবেন এমন সব লোক
যারা আলিমের ছদ্মবেশ ধারণ
করে জনগনকে প্রতারিত করছে
আর বলছে তোমাদের এটা করা
উচিত না, ওটা করা উচিত না এবং
মানুষ যা করছে তারা তার নিন্দা
করছে!
.
তারা এমন কিই বা করেছিল?
জনগণ কেবলমাত্র বিদ্রোহে
ফেটে পড়েছিল এবং তারা
ড্যানিশ পন্য বয়কট করতে
চেয়েছিল! আমার দৃষ্টিতে এগুলো
তো খুবই সাধারণ প্রতিক্রিয়া
মাত্র। এগুলো সেই সব জিনিস যা
মুহাম্মাদ সাঃ এর অনুসারীদের
চেয়ে গান্ধীর অনুসারীরাই
অনেক বেশী করে থাকে। তাদের
জন্য এটা বেশী মানানসইও বটে।
অথচ আমরা তো সেই নবীর উম্মত।
যিনি বলেছেনঃ
অর্থঃ “আমি হচ্ছি দয়ার নবী
এবং আমি হচ্ছি যুদ্ধের
নবী!” [বুখারীর ইমাম অধ্যায় -২,
পৃষ্ঠা ৩২২, তিরমিযী -৩, পৃষ্ঠা ১৫২
নাওয়াদির আল উসুল ফি আহাদীর
রসূল]
.
এছাড়াও রাসূল সাঃ আরো
বলেছেনঃ
অর্থঃ “আমি বিচার দিবসের
পূর্বে তালোয়ার সহ প্রেরিত
হয়েছি শুধুমাত্র এই কারণে যতক্ষণ
না মানুষ এক আল্লাহর আনুগত্য
মেনে না নিবে।” [ইবনে ওমার
হতে বর্ণিত, মুসনাদে আহমাদ
হাম্বাল ( ৯২/২) এবং সহীহ আল-
জামি(২৮৩১)]
অর্থঃ “আমাকে লোকদের সাথে
যুদ্ধ করার জন্য আদেশ করা
হয়েছে।” [ইবনে ওমার হতে বর্ণিত,
বুখারী (ফাতহুল বারী, কিতাব
আল ঈমান]
তিনি কুরাইশের লোকদের
বললেনঃ
“আমি তোমাদের জবাই করার
জন্য এসেছি।” [আব্দুল্লাহ বিন
আমর কর্তৃক বর্ণিত, মুসনাদে
আহমাদ এর ২১৮/২(৭০৩৬)]
.
আমরা রাসূল সাঃ এর অনুসারী!
আমরা গান্ধীর অনুসারী নই!
আমাদের জানা উচিত যে আমরা
কারা এবং আমাদের ব্যাপারে
তাদেরও জানা উচিত যাদের
সাথে আমাদের উঠা-বসা; আমরা
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর সাথে
সম্পর্ক বজায় রাখছি!
এটা আল্লাহর রাসূল সাঃ এর
অবমাননা!
.
এর পরের বিষয়গুলো আরও খারাপ,
‘লারস উইলশ’ নামে একটি সুইডিশ
লোক আল্লাহর রাসূল সাঃ এর
ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করেছিল –
আমরা আল্লাহর নিকট থেকে
পানাহ চাই- এই ধরনের কথাগুলো
বলাও তো যে কারো জন্য খুবই
কঠিন! সে আল্লাহর রাসূল সাঃ
এর চিত্র একটি কুকুরের ছবির
আদলে অঙ্কন করেছে।
এরপর ঐসব দূর্বৃত্ত লোকেরা
তাদের বিরুদ্ধে নিন্দা করে
ফাতাওয়া দেয় যারা সেই
কার্টুনিষ্টকে হুমকি দিয়েছিল।
কুফরটির ব্যাপারে কথা না বলে
এবং এব্যাপারে মুসলিম করণীয়
সম্পর্কে শারীআহ’র হুকুম কি তা
প্রচার না করে, তারা কেবলমাত্র
মুসলিমদের নিন্দা করতে এসেছে!
এ পরিস্থিতিতে আলিমদের যে
ভূমিকা পালন করার কথা তার
বাস্তবায়ন কোথায়?
এ পরিস্থিতিতে অন্ততঃ একজন
হলেও তাদের কারো এগিয়ে
আসা উচিত এবং হক্ব ও সত্য কথা
সঠিকভাবে তুলে ধরে তাদের
দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করা
উচিত। তা না হলে স্কলার বা
আলিমের বেশ ছেড়ে দিয়ে
তাদের ঘরের কোণে অবস্থান
করা উচিত। আমাদের স্মরণ
রাখতে হবে যা, আমরা রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের ব্যাপার নিয়ে কথা
বলছি!
.
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ তার
সাথীদের বলেছিলেন যে, যখন
তোমরা দেখবে যে আমি তার
মাথা ধরেছি, তখন তোমরা
তোমাদের তালোয়ার দিয়ে তার
মস্তক দেহ থেকে আলাদা করে
দেবে, এটাই ছিল সঠিক ও উপযুক্ত
কাজ যা মুহাম্মাদ বিন
মাসলামাহ করেছিলেন, কিন্তু
বর্তমানে আমাদের মধ্যে কোন
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ নেই!
আমাদের জীবন, আমাদের সম্পদ
এবং আমাদের সকল কিছু দিয়ে
আল্লাহর রাসূল সাঃ-কে
নিরাপত্তা বিধান করা
আামাদের উপর অর্পিত এক্তি
আবশ্যিক দায়িত্ব। এটা আমাদের
নিশ্চিত করতে হবে। এটাই
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর প্রতি
আমাদের বর্তমান দায়িত্ব ও
কর্তব্য।
.
ঠিক কাজী ইয়াজের মতই আমরা
বলতে চাইঃ “এই সব আলিম কারা
সে সম্পর্কে আমাদের জানা
নেই”
এবং কাজী ইয়াজ যে কথাগুলো
বলেছিলেন আমরাও তাই
পুনরাবৃত্তি করতে চাইঃ “সম্ভবত
ইলমের ক্ষেত্রে তারা অতটা
অভিজ্ঞ নন অথবা তারা এমন
ধরনের লোক যারা নিজেদের
প্রবৃত্তির অনুসরন করে! আমরা
তাদের ফাতাওয়াতে বিশ্বাস
করি না”
.
ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেনঃ “যে কেউ
আল্লাহর রাসূল সাঃ কে
অভিশাপ দেয়, তাহলে তাকে
হত্যা করে ফেলা ওয়াজিব, এটা
আবশ্যক। যদি সীরাতে এর কোন
ব্যতিক্রম থেকে থাকে, তার
কারণ হলো তারা রাসূল সাঃ
কাছে এসে তাদের তাওবার
ঘোষণা দিয়েছে এবং তারা
মুসলিম হয়েছে। কিন্তু যদি তারা
তা না করে তাহলে তাদের উপর
শারীআতের হুকুম অব্যাহত
থাকবে।”
.
তিনি আরো বলেনঃ “আল্লাহর
রাসূল সাঃ কে অভিশাপ দেয়া
অন্য আর যে কোন পাপের চেয়েও
বড় পাপ। আর এ কারণে এর
শাস্তিটাও অন্য আর যে কোন
পাপের শাস্তির চেয়ে বড় ও
ভয়াবহ। যদি এই ধরনের কোন
ব্যক্তি কাফির হয় যে মুসলিমদের
সাথে যুদ্ধ করছে তাহলে এটা
অবধারিতভাবেই বিজয় আল্লাহর
রাসূল সাঃ এর দিকেই ধাবিত
হবে, এবং তার নিশ্চিহ্ন করার
চেষ্টায় থাকা একটি বড় ধরনের
কাজ এবং একটি উচু মাত্রার
আবশ্যকীয় কাজ। এটি এমন একটা
কাজ যা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে
মুসলিমদের যে কারো সম্পাদন
করা উচিত। আর এটা জিহাদ ফি
সাবিলিল্লাহর বড় কাজগুলোর
একটি গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায়।”
.
এগুলো হচ্ছে ইবনে তাইমিয়্যার
কথা, এগুলো হচ্ছে আমাদের
আলিমদের কথা। এখন নিম্নে
বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কিছু
যুক্তি ও তার বাস্তবতা নিয়ে
আলোকপাত করতে চাচ্ছি। আর
তা হলো এই যে, যখন ইহুদীরা
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর কাছে
আসল তখন তারা “আসসালামু
আলাইকুম” এর পরিবর্তে “আসসামু
আলাইকুম” বলতো। যার অর্থ হচ্ছে
“আপনার মৃত্যু হোক।”
আয়িশা (রাঃ) তাদেরকে
অভিশাপ দিলেন এবং আল্লাহর
রাসূল সাঃ তাঁকে বললেনঃ
অর্থঃ “আল্লাহ সর্ব শক্তিমান,
এবং তিনি সকল ক্ষেত্রে
কোমলতাকে পছন্দ করেন।” [২৮-
বুখারীঃ কিতাব ৮ (আল আদাব)ঃ
খন্ড ৭৩ঃহাদীস ৫৭]
সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় যে, এই
ধরনের লোকদের সাথে আমাদের
কিভাবে সম্পর্ক বজায় রাখা
উচিত। ইবনে তাইমিয়্যাহ এবং
কাজী ইয়াজ কোন ধরনের
প্রতিক্রিয়া এবং যুক্তিখন্ডন না
করেই এটাকে ছেড়ে দেননি।
কাজী ইয়াজ বলেনঃ “এই হাদীস
এবং এর সাথে সামঞ্জস্যশীল
অন্য হাদীসগুলো ছিল ইসলামের
শুরুর দিককার, কিন্তু এর পর
শারীআহর ভিন্ন হুকুম এসেছে।
অতএব তাদের ক্ষমা করা উচিত
হবে না।” সুতরাং তিনি বলেন যে
এই হুকুমটি মানসুখ হয়ে গেছে –
রহিত হয়ে গেছে।
ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেনঃ “প্রথম
বিষয় হলো যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে
বুঝা যায় যে এটা সরাসরি
আল্লাহর রসূল সাঃ এর প্রতি
অভিশাপ ছিলো না, কারণ এটা
ছিলো এমন কিছু যা সকলের প্রতি
আপাতদৃষ্টিতে দৃশ্যমান ছিলো
না।”
.
এরপর তিনি আরো বলেন যে,
“আল্লাহর রাসূল সাঃ ক্ষমা
করতে পারেন কিন্তু আমরা পারি
না! এটা আল্লাহর রসূল সাঃ এর
হক্ব (অধিকার), এটা এমন কিছু যা
তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে –
ক্ষমা করা আর না করা – কারণ
তাঁর প্রতি এই ক্ষতিটা করা
হয়েছে, সুতরাং ক্ষমা করার
অধিকারও তাঁর আছে!”
কিন্তু আমাদের সেই অধিকার
নেই, এটা আল্লাহর রাসূল সাঃ এর
একটা অধিকার, সেই কারণে
তিনি এমন একজন যিনি ক্ষমা
করতে পারেন! সুতরাং ক্ষমা
করবেন কি করবেন না এটা
আল্লাহর রসূরাসূল সাঃ এর
দায়িত্ব।
.
ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেনঃ
“আল্লাহর রাসূল সাঃ এর
ওফাতের পর, আমরা কাউকে
ক্ষমা করতে পারি না। আমরা
মানুষকে ক্ষমা করতে পারি যখন
তারা আমাদের ক্ষতি বা
অবমাননা করে, কিন্তু যখন
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর ক্ষতি বা
অবমাননা করে তখন না!”
.
আরেকটি ঠুনকো যুক্তি হলো,
কাফিররা সর্ব শক্তিমান
আল্লাহকে অভিশাপ দিলো এবং
বললো যে আল্লাহর একটি পুত্র
সন্তান আছে – যখন তারা ঈসা
সম্পর্কে কথা বলছিল, তাই এটাও
বড় ধরনের একটি পাপকাজ।
ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেনঃ “যখন
তারা আল্লাহ সম্পর্কে এই ধরনের
কথা বলে, তারা সত্যিকার অর্থে
আল্লাহকে অভিশাপ দেয়ার জন্য
বলেনি, এটা তাদের বিশ্বাস এবং
দৃঢ়ভাবেই তা বিশ্বাস করে। যখন
তারা তা বলে, অভিশাপ দেয়ার
প্রতি তাদের ইচ্ছে ছিল না!
কিন্তু যখন তারা আল্লাহর রাসূল
সাঃ সম্পর্কে কথা বলে, তাদের
ইচ্ছে থাকে মুসলিমদের ক্ষতি
করা, ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা
এবং সেই কারণে এই দুটো
পুরোপুরিই আলাদা!”
.
পরিশেষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
.
প্রথমতঃ আল্লাহর রাসূল সাঃ এর
প্রতি নিন্দা বা অবমাননা তাঁর
কোন ক্ষতি করেনা! কোন ক্ষতি
করতে পারে না! আল্লাহর রাসূল
সাঃ হচ্ছেন একজন বিশেষ
সম্মানিত, তাঁর নাম মুহাম্মাদ-
যিনি অনেক বেশী প্রশংসিত!
বিশ্বব্যাপী প্রতিটি একক মুহুর্তে
এবং প্রতিটি ভিন্ন সময়ে
মসজিদের মিনার থেকে ভেসে
আসে আযানের ধ্বনি
“আশহাদুআন্না মুহাম্মাদুর
রসূলুল্লাহ” এবং অনেক ফিরিশতা
রয়েছেন যারা বলছেন
“সাল্লাল্লাহু আলা সাইয়্যেদিনা
মুহাম্মাদ” এবং সর্বশক্তিমান
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা
রাসূল সাঃ প্রতি সালাহ পেশ
করছেন। ইরশাদ হয়েছে,
অর্থঃ “নিঃসন্দেহে আল্লাহ
তা‘য়ালা (ঊর্ধ্ব জগতে
ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর
প্রশংসা করেন এবং তাঁর
ফিরিশতাগণ নবীর জন্য দোয়া
করেন । হে ইমানদারগণ, তোমরাও
নবীর উপর দুরূদ পাঠ করো এবং
তাঁকে যথাযথভাবে সালাম
জানাও।”[সূরা আহযাব-৫৬]
.
বিশ্বব্যাপী প্রচুর ঈমানদার
রয়েছেন যারা প্রতিনিয়ত
আল্লাহর রাসূল সাঃ উপর দরূদ
পেশ করে থাকেন। সুতরাং সেই
পাপিষ্ঠরা আল্লাহর রাসূল সাঃ
এর বিরুদ্ধে যা কিছুই বলবে তা
তাঁর ক্ষতি করবে না!
কিন্তু এটা আমাদের জন্য ক্ষতি;
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর প্রতি এই
নিন্দা আমাদের পক্ষ থেকে
উপেক্ষা করা একটি পাপ!
সুতরাং আমরাই তারা যাদের
ক্ষতি হয়েছে, আমাদের এ
ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।
.
দ্বিতীয়তঃ যদি এ বিষয়টি
আমাদের রাগান্বিত করে,
তাহলে বুঝতে হবে যে কুফফারদের
পরাজয় যে একেবারেই সন্নিকটে
– এটা তার লক্ষণ।
কারণ ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেনঃ
“অনেক নির্ভরযোগ্য মুসলিমগন
(যারা অভিজ্ঞ এবং ফকীহ) যখন
তারা শামের শহর, দূর্গ এবং
খ্রিষ্টানদের আবদ্ধ করে
রেখেছিলেন তাদের সেই সময়ের
অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তারা
বলেছেন যে আমরা শহর অথবা
দূর্গকে মাসাধিককাল ধরে আবদ্ধ
করে রেখেছিলাম, আমাদের
অবরোধে তাদের কিছুই করার
ছিল না এবং আমরা অনেক সময়ই
এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি
যে তাদেরকে ছেরে দিবো। ত্যাগ
করে চলে যাওয়ার অবস্থায় চলে
এসেছি! এরপর যখনি তারা
আল্লাহর রাসূল সাঃ কে
অভিশাপ দিতে লাগল, হঠাৎ করে
তাদের দুর্গের পতন হয়ে আমাদের
হাতে আসতে লাগল, কখনও কখনও
একদিন বা দুইদিনেই তাদের পতন
হয়ে গেলো।
.
সুতরাং কাফিরদের প্রতি
আমাদের অন্তর ঘৃণায় পরিপূর্ণ
থাকা অবস্থায় যখন আমরা এটি
শুনলাম, তখন আমরা এটাকে একটা
শুভ সংবাদ হিসেবে গ্রহণ করলাম,
যখন আমরা শুনলাম যে আল্লাহর
রাসূল সাঃ এর প্রতি অভিশাপ
দেয়া হয়েছে বা অবমাননা করা
হয়েছে -কারণ এটা ছিল আমাদের
আসন্ন বিজয়ের একটি লক্ষণ।”
এবং এটা ছিল সূরা আল কাওছার
এর একটি আয়াতের অর্থঃ
অর্থঃ “নিঃসন্দেহে তোমার
শত্রুরাই হচ্ছে শেকড়াকাটা
[অসহায়]।”
[সুরা কাউসার, আয়াত-৩]
সুতরাং সর্ব শক্তিমান আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা মুহাম্মাদ
সাঃ এর শত্রুদের শেকড় কেটে
দিলেন।
.
এখন যে ঘটনাটি ঘটছে, সবচেয়ে
বাজে ঘটনাগুলোর একটা,
মুহাম্মাদ সাঃ এর প্রতি নিন্দার
ঘটনা! বস্তুত, হতে পারতো এটা
আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে
বাজে ঘটনা, কারণ এর শুরুটা
হয়েছিল ডেনমার্কের একটি
পত্রিকার সংবাদ পরিবেশনের
মধ্য দিয়ে এবং এরপরই বিশ্ব
ব্যাপী অনেক সরকার এবং
সংবাদপত্রগুলো তাদের
“বাকস্বাধীনতা” দোহাই দিয়ে
এর প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ
করেছে এবং সেই সুবাদে
কার্টুনটি ছড়িয়ে পড়েছে
বিশ্বব্যাপী!
.
এরপরই আপনাদের সামনে এলো
সেই অপ্রত্যাশিত সুইডিশ কার্টুন
যা মুহাম্মাদ সাঃ এর ব্যাঙ্গচিত্র
প্রকাশ করেছিল, যা নাকি
আমাদের শোনা এখন পর্যন্ত
নিন্দার মধ্যে সবচেয়ে
বাজেগুলোর একটি! এরপর
আপনাদের সামনে এলো সেই
ঘটনাটি সর্বশক্তিমান আল্লাহর
কিতাবকে এমনভাবে অমর্যাদা
করা হয়েছিল যা আমরা এর আগে
কখনও শুনিনি – আল্লাহর
কিতাবকে টয়লেট পেপার
হিসেবে ব্যবহার করা এবং
স্যুটিংয়ে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে
ব্যবহার করা!
.
তাই প্রতিটি মুসলিমকেই
রাগান্বিতকারী যেই ঘটনাসমুহ
অধিকহারে এখন ঘটছে যদিও তা
আমাদেরকে ক্রোধান্বিত করছে,
কিন্তু এটিকে একটা লক্ষণ ধরে
নেওয়া উচিত যে, এই কুফফারদের
পরাজয় একেবারেই দ্বার
প্রান্তে।
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরাঃ
শেষ বিষয়, মুসলিম উম্মাহ
হিসেবে আমাদের ভুলে যাওয়া
উচিত হবে না! ৬১৫ সালে মিসরের
দিমইয়াত শহরে ক্রুসেডারদের
হামলা এবং দখল করার পর
মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ
ক্রুসেডের সময়, আইয়ুবী আমির
মোহাম্মদ কামিল মানসূরা হতে
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায়
ছিলেন। সেই সময়ের একটি ঘটনা,
ক্রুসেডারদের মধ্য থেকে একটা
লোক প্রতিদিন নিয়ম করে
বেরিয়ে আসত এবং রাসূল সাঃ-
কে খুব খারাপ ভাষায় অভিশাপ
দিতো। সে এই কাজটি দৈনন্দিন
কাজের ভিত্তিতেই করত!
মুসলিমদের আমীর মুহাম্মাদ
কামিল, ইচ্ছে করতেন যে যদি
তিনি সেই লোকটিকে হাতে
নাতে ধরতে পারতেন! তাই তিনি
সেই লোকটির চেহারা নিজ
স্মৃতিতে গভীরভাবে গেঁথে
নিলেন ।
.
দশ বছর পর ক্রুসেডাররা ব্যর্থ
হলো এবং তারা চলে গেলো,
কিন্তু এই বিশেষ লোকটি শামে
যুদ্ধ করা অব্যাহত রাখলো এবং-
সকল প্রশংসা আল্লাহর – সে
মুসলিমদের হাতে বন্দী হলো।
এরপর আমির মুহাম্মাদ কামিল
তাকে দেখে চিনতে পারলেন,
আমরা ৬১৫ সালের দশ বছর পরের
কথা বলছি! সুতরাং আমীর
মুহাম্মাদ কামিল সেই লোকটিকে
মদীনায় সেখানকার আমীরের
নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং এই
আদেশ দিলেন যেন তাকে জুমুআর
দিনে রাসূল সাঃ কবরের সামনে
হত্যা করা হয়! দশ বছর হয়ে গেলো,
কিন্তু তিনি তা ভুলেননি!
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
তাই আমরা মহান আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা এর নিকট
এই প্রার্থনা করি যেন তিনি
আমাদেরকে সেই সব পুরুষ ও
মহিলাদের মতো হওয়ার তাওফিক
দেন, যাদের সম্পর্কে তিনি
বলেছিলেনঃ
অর্থঃ “তারা আল্লাহর পথে
জিহাদ করবে, কোন নিন্দুকের
নিন্দার পরোয়া তারা করবে
না।” [সূরা মায়িদা-৫৪]
.
এটা হলে কুফফাররা বুঝবে যে,
আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল সাঃ
এর প্রতি তাদের নিন্দার মাধ্যমে
তারা মুলতঃ সরাসরি ভীমরুলের
চাকে খোঁচা দিয়েছে। ঘুমন্ত
সিংহের লেজ নাড়া দিয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ! বর্তমান
পরিস্থিতি ধীরে ধীরে
সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই এবং
অচিরেই সেই সময় আসছে, যখন
তারা তাদের অপকর্মের ফলাফল
হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতা উপলদ্ধি
করে সঠিকভাবে দ্বীনের জন্য
সক্রিয় হওয়ার তাওফিক দিন।
আমীন।
.
টীকা
১। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহঃ তার
‘আস সারিমিল মাসলুল আ’লা
শাতিমির রাসুল’ গ্রন্থে এবং ইমাম
মাকরিযী রহঃ ‘ইমতাউল ইসমা’ নামক
গ্রন্থে এ ঘটনাটি সংকলন করেছেন। এ
ঘটনাটি মোহাম্মাদ ইবনে সা’দ তার
তাবাকাতের মধ্যেও সংক্ষিপ্ত
আকারে বর্ণনা করেছেন।
.
২। ইমাম বুখারি আবুল ‘আলিয়া থেকে
বর্ণনা করেন, ‘রাসূল সাঃএর উপর
আল্লাহর সালাত’ বলতে বোঝানো
হয়েছে ফেরেশতাদের কাছে নবীর
প্রশংসা ফেরেশতাদের সালাত হল
দো’আ। আর ইমাম তিরমিজী সুফিয়ান
সাওরী থেকে বর্ণনা করেন যে,
আল্লাহর সালাত বলতে রহমত এবং
ফেরেশতাদের সালাত বলতে
ইস্তেগফার বোঝানো হয়েছে
(তাফসীর ইবনে কাসির)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top