বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মৃতদের জন্য জীবিতদের করণীয়

কোন মন্তব্য নেই:

মৃতদের জন্য জীবিতদের করণীয় !!
.
কোন মুসলিম মৃত্যু বরণ করলে তার জন্য যেসকল কাজ করণীয় সেগুলো হল নিম্নরূপ।
.
যথা:১) মৃত্যুর সংবাদ শুনে ইন্না লিল্লাহি ওয়া
ইন্না ইলাইহি রাজিঊনপাঠ করা এবং
ধৈর্য ধারণ করা।
.
২)মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া, কাফন,
জানাযা এবং দাফন সম্পন্ন করা।
.
৩) মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা।
.
৪) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান-সদকা করা।
.
৫) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ বা উমরা আদায় করা।
.
৬)মানতের রোযা বাকি থাকা অবস্থায়
কোন ব্যক্তি মারাগেলে তার পক্ষ থেকে
তা পালন করা। আর রামাযানেররোযা
বাকি থাকলে প্রত্যেক রোযার বিনিময়েএকজন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করা।
.
৭) সে যদি ঋণ রেখে মারা যায়
অথবা কোন সম্পত্তি ওয়াকফ বা ওসীয়ত
করে যায় তবে তা প্রাপকেরকাছে
বুঝিয়ে দেয়া
.
৮) তার পরিত্যক্ত সম্পদ শরীয়ত সম্মত
পদ্ধতিতে উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টন
করা।
.
৯) মহিলার জন্য নিকটাত্মীয় বা
স্বামীর মৃত্যুতে শোক পালন করা।
—————————————————–
নিম্নে উক্ত কাজগুলি সম্পর্কে দলীল-প্রমাণ
সহসংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা পেশ করা হল:
.
১)মৃত্যুর সংবাদ শুনে ইন্না লিল্লাহি ওয়া
ইন্না ইলাইহি রাজিঊন পাঠ করা এবং
ধৈর্য ধারণ করা:মৃত্যু সংবাদ শুনে ‘ইন্না
লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’
পাঠকরা, ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর
তকদীরের উপরসন্তুষ্ট থাকা আবশ্যক।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন: ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺇِﺫَﺍ
ﺃَﺻَﺎﺑَﺘْﻬُﻢ ﻣُّﺼِﻴﺒَﺔٌ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺇِﻧَّﺎ ﻟِﻠَّـﻪِ ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺭَﺍﺟِﻌُﻮﻥَ –
ﺃُﻭﻟَـٰﺌِﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺻَﻠَﻮَﺍﺕٌ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻬِﻢْ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔٌ ۖ ﻭَﺃُﻭﻟَـٰﺌِﻚَ
ﻫُﻢُﺍﻟْﻤُﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ “যখন তারা বিপদে পতিত হয়,
তখন বলে, “ইন্না লিল্লাহিওয়া ইন্না
ইলাইহি রাজিউন”(নিশ্চয় আমরা সবাই
আল্লাহর জন্যএবং আমরা সবাই তাঁরই
সান্নিধ্যে ফিরে যাবো) তারা সেসমস্ত
লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত
অনুগ্রহও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই
হেদায়েতপ্রাপ্ত।” (সূরা বাকারা:156 ও১৫৭)
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন:« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﺗُﺼِﻴﺒُﻪُ
ﻣُﺼِﻴﺒَﺔٌ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣَﺎ ﺃَﻣَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻧَّﺎ ﻟِﻠَّﻪِﻭَﺇِﻧَّﺎ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺭَﺍﺟِﻌُﻮﻥَ
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃْﺟُﺮْﻧِﻰ ﻓِﻰ ﻣُﺼِﻴﺒَﺘِﻰ ﻭَﺃَﺧْﻠِﻒْ ﻟِﻰﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ . ﺇِﻻَّ
ﺃَﺧْﻠَﻒَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ »“কোন মুসলমানের
বিপদ হলে সে যদি বলে:“ইন্না লিল্লাহি
ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
আল্লাহুম্মাজুরনী ফী মুসীবাতী
ওয়াখলিফ লী খাইরানমিনহা” (আমরা
আল্লাহরই। আবার তাঁর কাছেই ফিরে
যাব।হে আল্লাহ, আমার বিপদে তুমি
আমাকে বিনিময় দাও।এই বিপদের
বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম প্রতিদানদাও)
তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার বিনিময়ে
তাকে আরওউত্তম প্রতিদান দিবেন।”(সহীহ মুসলিম: অনুচ্ছেদ:বিপদে কী পাঠ করবে?)
.
আর কোন ব্যক্তি যদি
বিপদে ধৈর্য ধারণ করে এবংআল্লাহর
ফয়সালার উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে
তবেআল্লাহ তায়ালা তার জন্য বিরাট
পূরস্কারের ব্যবস্থাকরেছেন। যেমন
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳَﺮْﺿَﻰ ﻟِﻌَﺒْﺪِﻩِ
ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺇِﺫَﺍ ﺫَﻫَﺐَ ﺑِﺼَﻔِﻴِّﻪِ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓَﺼَﺒَﺮَ
ﻭَﺍﺣْﺘَﺴَﺐَ ﺑِﺜَﻮَﺍﺏٍ ﺩُﻭﻥَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ “আল্লাহ তায়ালা
যখন কোন মুমিন ব্যক্তির
অন্তরঙ্গব্যক্তিকে দুনিয়া থেকে নিয়ে
যান তখন সে যদিসবর করে এবং আল্লাহর
নিকট প্রতিদান আশা করেতবে তিনি তার
জন্য জান্নাতের আদেশ ছাড়া অন্যকিছুতে সন্তুষ্ট হন না। (নাসাঈ ও দারেমী। আল্লামাআলবানী (রাহ:) উক্ত হাদীসটিকে সহীহ লিগাইরিহী বলেছেন।দেখুন: আহকামুল জানাইয)
————————————–
২) মৃত ব্যক্তিকেগোসল দেয়া, কাফন, জানাযাএবং দাফন সম্পন্ন করা:
কোন মুসলমান মৃত্যু বরণ করলে
জীবিতমানুষদের উপর আবশ্যক হল, তার
গোসল, কাফন,জানাযা এবং দাফন কার্য
সম্পন্ন করা। এটি ফরযে কেফায়া। কিছু
সংখ্যক মুসলমান এটি সম্পন্ন করলে সকলের
পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। এ বিষয়টি মুসলমানদের পারস্পারিক অধিকারের মধ্যে একটি এবং তা অনেক সাওয়াবের কাজও বটে। যেমন আবুহুরায়রা (রা:) বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:« ﻣَﻦْ ﺷَﻬِﺪَ ﺍﻟْﺠَﻨَﺎﺯَﺓَ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳُﺼَﻠِّﻰَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻓَﻠَﻪُ ﻗِﻴﺮَﺍﻁٌ ، ﻭَﻣَﻦْﺷَﻬِﺪَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﺪْﻓَﻦَ ﻛَﺎﻥَ
ﻟَﻪُ ﻗِﻴﺮَﺍﻃَﺎﻥِ ‏» . ﻗِﻴﻞَ ﻭَﻣَﺎﺍﻟْﻘِﻴﺮَﺍﻃَﺎﻥِ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻣِﺜْﻞُ
ﺍﻟْﺠَﺒَﻠَﻴْﻦِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻤَﻴْﻦِ »“যে ব্যক্তি জানাযার
নামাযে উপস্থিত হবে তার জন্যএক
কিরাত সমপরিমান সোওয়াব আর যে
দাফনেওউপস্থিত হল তার জন্য দু কিরাত
সমপরিমান সোওয়াব রয়েছে। জিজ্ঞাসা
করা হল, কিরাত কী? তিনিবললেন: দুটি বড়
বড় পাহাড় সমপরিমান।” (বুখারী ওমুসলিম)
———–
২) মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ
করা:জীবিত ব্যক্তিগণ মৃত ব্যক্তির জন্য
বেশি বেশিদুআ করবে। কারণ, মানুষ মারা
যাওয়ার পর তার জন্য সবচেয়ে বেশি
প্রয়োজন দুআ। তাই তার জন্য আমাদেরকে
দুআ করতে হবে আল্লাহ তায়ালা
যেনতাকে ক্ষমা করে দেন তার গুনাহ-
খাতা মোচনকরে দেন। যেমন আল্লাহ
বলেন: ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺟَﺎﺀُﻭﺍ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻫِﻢْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻏْﻔِﺮْ
ﻟَﻨَﺎﻭَﻟِﺈِﺧْﻮَﺍﻧِﻨَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺳَﺒَﻘُﻮﻧَﺎ ﺑِﺎﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻌَﻞْ ﻓِﻲ
ﻗُﻠُﻮﺑِﻨَﺎﻏِﻠًّﺎ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺭَﺀُﻭﻑٌ ﺭَﺣِﻴﻢٌ ”
যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে,
হেআমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে
এবং আমাদেরপূর্বে যারা ঈমানের সাথে
(দুনিয়া থেকে) চলেগেছে তাদেরকে
ক্ষমা করুন এবং মুমিনদের ব্যাপারে
আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ রাখিও
না।হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো
অতিমেহেরবান এবং দয়ালু।” (সূরা হাশর:১০)
.
আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেনঃ ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﺍﻟْﺈِﻧْﺴَﺎﻥُ ﺍﻧْﻘَﻄَﻊَ
ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﻤَﻠُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣِﻦْ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻣِﻦْﺻَﺪَﻗَﺔٍ ﺟَﺎﺭِﻳَﺔٍ ﺃَﻭْ ﻋِﻠْﻢٍ
ﻳُﻨْﺘَﻔَﻊُ ﺑِﻪِ ﺃَﻭْ ﻭَﻟَﺪٍ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻟَﻪُ “মানুষ মৃত্যু বরণ
করলে তার আমলের সমস্ত পথবন্ধ হয়ে যায়
তিনটি ব্যতীত: যদি সে সাদকায়ে জারিয়া রেখে যায়, এমন শিক্ষার ব্যবস্থা করে যায় যারদ্বারা
মানুষ উপকৃত হবে এবং এমন নেককার
সন্তানরেখে যায় যে তার জন্য দুআ করবে।
(বুখারী,অধ্যায়: মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ
এবং মানত পালনকরা এবং পুরুষ মহিলার
পক্ষ থেকে হজ্জ করতেপারে)।
.
তবে এ দুআ করতে হবে একাকী, নীরবে-নিভৃতে। উচ্চ আওয়াজে বা সম্মিলিতভাবে
অথবা হাফেজ-কারী সাহেবদেরকে ডেকে
দুআকরিয়ে নেয়া এবং তাদেরকে পয়সা
দেয়াভিত্তিহীন এবং বিদআত যা অবশ্যই
পরিত্যাজ্য।
—————-
৩) মৃত ব্যক্তি পক্ষ থেকে দান-সদকা করা:মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান-সদকা করা হলে কবরে তার সওয়াব পৌঁছে। চাই মৃতের সন্তান, পিতা-
মাতা অথবা অন্য কোন মুসলাম দান করুক
না কেন। যদিওকতিপয় আলেমের মত হল,
দান-সাদাকা শুধু সন্তানেরপক্ষ থেকে
হলে পিতা-মাতা কবরে সাওয়াবের অধিকারী হন।এ ব্যাপারে
হাদীস হল:)) ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ – ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ – . ﺃَﻥَّ
ﺭَﺟُﻼً ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻰِّ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻰ
ﺍﻓْﺘُﻠِﺘَﺖْ ﻧَﻔْﺴُﻬَﺎ ،ﻭَﺃَﻇُﻨُّﻬَﺎ ﻟَﻮْ ﺗَﻜَﻠَّﻤَﺖْ ﺗَﺼَﺪَّﻗَﺖْ ، ﻓَﻬَﻞْ ﻟَﻬَﺎ
ﺃَﺟْﺮٌ ﺇِﻥْ ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻌَﻢْ ((আয়েশা (রা:)
হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবীসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে
জিজ্ঞাসা করল যে, আমার মা হঠাৎ মৃত্যু
বরণ করেছে। আমারধারণা মৃত্যুর আগে
কথা বলতে পারলে তিনি দানকরতেন। এখন
আমি যদি তার পক্ষ থেকে দান-সাদাকাহ
করি তবে তিনি কি সোওয়াব পাবেন?
তিনিবলেন: হ্যাঁ। (সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ:
হঠাৎ মৃত্যু।হাদীস নং ১৩৮৮, মাকতাবা
শামেলা)
.
এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস হল:
আবু হুরায়রা (রা:)হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লামকে
বললেন: ﺃِﻥَّ ﺃَﺑِﻰ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﺗَﺮَﻙَ ﻣَﺎﻻً ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻮﺹِ ﻓَﻬَﻞْ
ﻳُﻜَﻔِّﺮُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻥْﺃَﺗَﺼَﺪَّﻕَ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻧَﻌَﻢْ »“আমার
আব্বা মৃত্যু বরণ করেছেন। কিন্তু
কোন ওসীয়ত করে যান নি। আমি তার পক্ষ
থেকে দান করলে তার কি গুনাহ মোচন
হবে? তিনি বললেন:হ্যাঁ।” (সহীহ মুসলিম,
অনুচ্ছেদ: দানের সোওয়াবমৃত ব্যক্তির
নিকট পৌঁছা প্রসঙ্গে)এমন জিনিস দান
করা উত্তম যা দীর্ঘ দিন এবং স্থায়ীভাবে মানুষের উপকারে আসে। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:)) ﻋَﻦِ
ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼً ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ
ﺃُﻣِّﻰﺗُﻮُﻓِّﻴَﺖْ ﺃَﻓَﻴَﻨْﻔَﻌُﻬَﺎ ﺇِﻥْ ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ ‏«
ﻧَﻌَﻢْ ‏» . ﻗَﺎﻝَﻓَﺈِﻥَّ ﻟِﻰ ﻣَﺨْﺮَﻓًﺎ ﻭَﺇِﻧِّﻰ ﺃُﺷْﻬِﺪُﻙَ ﺃَﻧِّﻰ ﻗَﺪْ
ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُ ﺑِﻪِ ﻋَﻨْﻬَﺎ .((ইবনে আব্বাস (রা:)
বর্ণিত। তিনি বলেন: এক ব্যক্তিনবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
বলল: হেআল্লাহর রাসূল, আমার মা মারা
গেছেন। আমি যদি তারপক্ষ থেকে দান
করি তবে কি তাঁর উপকারে আসবে? তিনি
বললেন: হ্যাঁ। তখন লোকটি বলল:আমার
একটি ফলের বাগান আছে (খেজুর,
আঙ্গুরইত্যাদি)। আমি আপনাকে স্বাক্ষী
রেখে বলছি, ঐবাগানটি আমি আমার
মায়ের পক্ষ থেকে দান করেদিলাম।
(সুনান আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ: কোন ব্যক্তি
যদি ওসীয়ত ছাড়াই মৃত্যু বরণ করে।
তিরমিযী, মুসনাদ আহমাদ। আল্লামা
আলবানী (রহ:) হাদীসটি সহীহবলেছেন।
দেখুন: সহীহ ও যঈফ আবু দাউদ,হাদীস নং
২৮৮২, মাকতাবা শামেলা।)
.
উপকারী এবং স্থায়ী কয়েক প্রকার দান:
১) পানির ব্যবস্থা করা
২) এতিমের প্রতিপালনেরদায়িত্ব গ্রহণ করা
৩)অসহায় মানুষের বাসস্থান তৈরি করা
৪)গরীব দ্বীনী ইলম শিক্ষার্থীদেকে সাহায্য-সহযোগিতা করা
৫) দাতব্য চিকিৎসালয় বা হাসপাতালনির্মান
৬) মসজিদ নির্মান ইত্যাদি।
———–
৪) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদন করা:
কোন ব্যক্তি যদি এমন অবস্থায় মারা যায় যার উপর ফরজ হজ্জ বাকি আছে তাহলে তার পরিত্যাক্তসম্পত্তি থেকে তার পক্ষ
থেকে হজ্জ সম্পাদনকরা আবশ্যক। তবে যে
ব্যক্তি এই বদলী হজ্জসম্পাদন করবে তার
জন্য আগে নিজের হজ্জসম্পাদন করা
অপরিহার্য। চাই সে মৃত্যুর আগে তারপক্ষ
থেকে হজ্জ করার জন্য অসীয়ত করুকঅথবা
না করুক। এর মাধ্যমে সে ব্যক্তি তার
ফরজহজ্জ থেকে অব্যহতি লাভ করবে।
.
ক).মৃতের পক্ষ থেকে ফরজ হজ্জ আদায়
করা:মানুষ যদি মারা যায় তবে তার পক্ষ
থেকে যেকোন মুসলমান নফল হজ্জ ও ওমরা
সম্পাদন করতেপারে। অর্থাৎ কেউ তার
পক্ষ থেকে হজ্জ বাওমরা করলে
ইনশাআল্লাহ সে কবরে শায়িত
অবস্থায়তার সোওয়াব লাভ করবে।
.
খ)মৃতের পক্ষ থেকে মানতের হজ্জ
আদায়করা:অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি যদি
হজ্জের মান্নতকরে কিন্তু হজ্জ সম্পাদনের
আগেই মারা যায় তবেতার পরিত্যাক্ত
সম্পত্তি থেকেও বদলী হজ্জসম্পাদন করা
আবশ্যক।যেমন: সহীহ বুখারীতে প্রখ্যাত
সাহাবীআব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা:) হতে
বর্ণিত, বনীজুহাইনা সম্প্রদায়ের এক
মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন: আমারমা
হজ্জের মানত করেছিলেন, কিন্তু হজ্জ
করারআগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি
কি তার পক্ষথেকে হজ্জ পালন করব?
তিনি বললেন, “বলতো,তোমার মায়ের উপর
যদি ঋণ থাকত তবে কি তুমি তাআদায়
করতে না? আল্লাহর পাওনা আদায় কর।
কারণ,আল্লাহ তো তাঁর পাওনা পাওয়ার
বেশী হকদার।(বুখারী, অধ্যায়: মৃতের পক্ষ
থেকে হজ্জ এবংমানত পালন করা এবং
পুরুষ মহিলার পক্ষ থেকে হজ্জকরতে
পারে।)
.
উক্ত হাদীসে এ কথা স্পষ্ট যে, কোন ব্যক্তিযদি হজ্জ করার মানত করে কিন্তু হজ্জ করার আগেইমারা যায় তবে তার পক্ষ থেকে তার আত্মীয়গণবদলী হজ্জ সম্পাদন করলে সে ব্যক্তির জন্যযথেষ্ট হবে।তবে এখান থেকে বুঝা যায় যে,মানতের হজ্জযেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে
ফরজ ছিল না বরং সেনিজের জন্য ফরজ
করে নিয়েছে সেটা যখনপালন করা
আবশ্যক তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে যেহজ্জ
ফরজ ছিল তা আরও সঙ্গতভাবে তা পালন
করাআবশ্যক হবে।আর মানতকে ঋণের
সাথে তুলনা করা হয়েছে।সুতরাং ফরজ
হজ্জ তো আরও বড় ঋণ যা পালন নাকরে
মারা গেলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া
যাবে নাযতক্ষণ না তা আদায় করা হয়।যে
ব্যক্তি বদলী হজ্জ করবে তার জন্যআগে
নিজের হজ্জ সম্পাদন করা আবশ্যক:যে
ব্যক্তি বদলী হজ্জ করবে তার জন্য
শর্তহচ্ছে সে আগে নিজের হজ্জ করবে।
সে যদিআগে নিজের হজ্জ সম্পাদন করে
থাকে তবেপরবর্তীতে সে অন্যের পক্ষ
থেকে হজ্জকরতে পারবে। কারণ এ
ব্যাপারে হাদীসে বণির্তহয়েছে: ﻋﻦ ﺍﺑْﻦِ
ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺳَﻤِﻊَﺭَﺟُﻼً
ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻟَﺒَّﻴْﻚَ ﻋَﻦْ ﺷُﺒْﺮُﻣَﺔَ . ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻣَﻦْ ﺷُﺒْﺮُﻣَﺔَ ‏» .
ﻗَﺎﻝَﺃَﺥٌ ﻟِﻰ ﺃَﻭْ ﻗَﺮِﻳﺐٌ ﻟِﻰ . ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺣَﺠَﺠْﺖَ ﻋَﻦْ
ﻧَﻔْﺴِﻚَ ‏» . ﻗَﺎﻝَﻻَ . ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺣُﺞَّ ﻋَﻦْ ﻧَﻔْﺴِﻚَ ﺛُﻢَّ ﺣُﺞَّ ﻋَﻦْ
ﺷُﺒْﺮُﻣَﺔَ ».ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত:
নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম
(বিদায় হজ্জে যাওয়া প্রাক্কালেএহরাম
বাঁধার সময়) এক ব্যক্তিকে বলতে
শুনলেন,সে বলছে: ﻟَﺒَّﻴْﻚَ ﻋَﻦْ ﺷُﺒْﺮُﻣَﺔَ
লাব্বাইকা আন শুবরুমাঅথার্ৎ: “শুবরুমার
পক্ষ থেকে উপস্থিত।”নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেসকরলেন:
শুবরুমা কে? উত্তরে লোকটি বলল:সে
আমার ভাই অথবা বলল: আমার
নিকটাত্মীয়। তিনিজিজ্ঞেস করলেন:
তুমি কি নিজের হজ্জ সম্পাদনকরেছ?
লোকটি বলল: না। তিনি বললেন:
নিজেরহজ্জ আগে সম্পাদন কর পরে
শুবরুমার পক্ষথেকে করিও। (সুনান আবু
দাউদ: অনুচ্ছেদ: বদলীহজ্জ সম্পাদন করা।
হাদীসটি সহীহ)
মৃত্যু ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদনেরক্ষেত্রে সম্পাদন কারী যদি মৃতের নিকটাত্মীয়হয় তবে তা উত্তম।তবে নিকটাত্মীয় হওয়াআবশ্যক নয়।
—————————————————
৫) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোযা রাখা:
মানতের রোযা:
এ ব্যাপারে প্রায় সকল আলেমএকমত যে,
মৃত ব্যক্তির উপর যদি মানতের
রোযাথাকে তবে তার ওয়ারিসগণ তা
পালন করতে পারবে।কারণ এ ব্যাপারে
হাদীসগুলো স্পষ্ট। যেমন: ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ‏( ﺃﻥ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﺭﻛﺒﺖ ﺍﻟﺒﺤﺮﻓﻨﺬﺭﺕ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ
ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﺃﻧﺠﺎﻫﺎ ﺃﻥ ﺗﺼﻮﻡ ﺷﻬﺮﺍ،ﻓﺄﻧﺠﺎﻫﺎ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﺰ ﻭﺟﻞ، ﻓﻠﻢ ﺗﺼﻢ ﺣﺘﻰ ﻣﺎﺗﺖ، ﻓﺠﺎﺀﺕﻗﺮﺍﺑﺔ ﻟﻬﺎ ‏)
ﺇﻣﺎ ﺃﺧﺘﻬﺎ ﺃﻭ ﺍﺑﻨﺘﻬﺎ ‏( ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ‏( ﺹ ‏) ، ﻓﺬﻛﺮﺕﺫﻟﻚ
ﻟﻪ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﺭﺃﻳﺘﻚ ﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺩﻳﻦ ﻛﻨﺖ ﺗﻘﻀﻴﻨﻪ؟
ﻗﺎﻟﺖ : ﻧﻌﻢ ﻗﺎﻝ : ﻓﺪﻳﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﻖ ﺃﻥ
ﻳﻘﻀﻰ আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা:) হতে
বর্ণিত, এক মহিলসাগরে সফর কালে
বিপদে ঘনঘটা দেখে মানতকরল যে
আল্লাহ যদি তাকে এই বিপদ থেকে
বাঁচানতবে একমাস রোযা রাখবে। আল্লাহ
তায়ালা তাকেসেই বিপদ থেকে রক্ষা
করলে সে উক্ত রোযারাখে নি। এবস্থায়
মৃত্যু বরণ করে। তখন তার একনিকটাত্মীয়
(তার বোন অথবা মেয়ে) নবীসাল্লাল্লাহু
আলাইি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে
ঘটনাবর্ণনা করল। তখন তিনি তাকে
বললেন: তার উপরকোন ঋণ থাকলে তুমি
কি তা পরিশোধ করতে? তিনিবললেন:
হ্যাঁ। তিনি বললেন: আল্লাহর ঋণ
তোপরিশোধ করা তো আরও বেশি হকদার।
অন্য বর্ণনায় আছে: তিনি তাকে আরও
বললেন: “তুমি তারপক্ষ থেকে রোযা পালন
কর।” (মুসনাদ আহমাদ-{মুসনাদ আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাসের অন্তর্ভূক্ত}আল্লামা
আলবানী বলেন: বুখারী ও
মুসলিমেরশর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ,
.
দেখুন আহকামুলজানাইয)মৃতের পক্ষ থেকে
মানতের রোযা পালন করারআরেকটি
হাদীস: ﺃَﻥَّ ﺳَﻌْﺪَ ﺑْﻦَ ﻋُﺒَﺎﺩَﺓَ – ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ –
ﺍﺳْﺘَﻔْﺘَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝَﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻰ ﻣَﺎﺗَﺖْﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻧَﺬْﺭٌ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ‏« ﺍﻗْﻀِﻪِ ﻋَﻨْﻬَﺎ
»সাদ ইবনে উবাদা (রা:) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
জিজ্ঞেস করলেন: আমার মা মৃত্যু
বরণকরেছেন কিন্তু তার উপর মানত ছিল।
তিনি তাকেবললেনে: তুমি তার পক্ষ
থেকে তা পূর্ণ কর।(সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ:
কোন ব্যক্তি হঠাৎ মৃত্যু বরণ করলে তার পক্ষ
থেকে দান-সদকা করাএবং মানত পুরা
করা মুস্তাহাব।)
.
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে মৃতের পক্ষথেকে মানতের রোযা রাখা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।মৃতের পক্ষ থেকে রামাযানের ফরয
রোযারাখা:মৃতের পক্ষ থেকে ফরয রোযা
পালন করা যাবেকি না সে ব্যাপারে
যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।ইমাম শাফঈ, ইবন
হাযম সহ একদল মনিষী বলেন:মৃতের পক্ষ
থেকে মানতের এবং রামাযানের
ফরযরোযা উভয়টি পালন করা যাবে।
কারণ, এক হাদীসেনবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:« ﻣَﻦْ ﻣَﺎﺕَ
ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻِﻴَﺎﻡٌ ﺻَﺎﻡَ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻟِﻴُّﻪُ »“যে ব্যক্তি এমন
মৃত্যু বরণ করল এমন অবস্থায় যারউপর রোযা
বাকি আছে তার ওলী তথানিকটাত্মীয়গণ
তার পক্ষ থেকে রোযারাখবে।” (সহীহ
বুখারী ও মুসলিম)
.
যেহেতু এ হাদীসে সাধারণভাবে রোযা রাখার কথা বলা হয়েছে তাই মৃতের বাকি থাকা রোযা
চাই মানতের হোক বা রামাযানের কাযা
হোক তার নিকটাত্মীয়গণ আদায় করতে
পারে ।ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ একদল
আলেম বলেন:মৃতের পক্ষ থেকে মানতের
রোযা ছাড়া আরকোন রোযা রাখা যাবে
না। এ পক্ষের আলেমগণউপরোক্ত
হাদীসের ব্যাপারে বলেন:
এটাকেমানতের রোযা হিসেবে ধরতে
হবে। কারণ,অন্যান্য হাদীসগুলোর মাধ্যমে
এটাই বুঝা যায় এবংতারা তাদের মতের
সমর্থনে আর আয়েশা এবংইবনে আব্বাস
(রা) এর সিদ্ধান্ত এবং মতমতকেওপ্রমাণ
হিসেবে তুলে ধরেন।যেমন:
১) আয়েশা রা.এর সিদ্ধান্ত: উমর (রা:) বর্ণনাকরেন, তার মা মারা যান এবং তার উপর রামাযানের রোযা বাকি ছিল। আয়েশা রা. কে
জিজ্ঞেস করলেন: আমি কি আমার মায়ের
পক্ষ থেকে উক্ত রোযাগুলোপূরা করব?
তিনি বললেন: না। বরং প্রতিটি
রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে অর্ধ
সা (প্রায় সোয়াকেজি চাল, গম ইত্যাদি)
খাদ্য দ্রব্য প্রদান কর।(তাহাবী এবং ইবন
হাযাম, ইবনুত তুরকুমানী বলেন: এসনদটি
সহীহ)
.
২) ইবনে আব্বাস রা. এর সিদ্ধান্ত:
কোন যদি ব্যক্তি রামাযানে অসুস্থ হওয়ার
কারণে রোযারাখতে না পারে এবং এ
অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেতবে তার পক্ষ
থেকে খাবার দিতে হবে এবং তাআর
কাযা করার প্রয়োজন নাই। কিন্তু যদি
মৃতেরউপর মানতের রোযা বাকি থাকে
তবে তারনিকটাত্মীয়গণ তার পক্ষ থেকে
তা কাযা করবে।(এটি বর্ণনা করেন
আবুদাউদ। এর সনদ বুখারী ওমুসলিমের
শর্তানুযায়ী সহীহ)
.
উক্ত মত বিরোধের সমাধানে আল্লামানাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. এর মত:আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহ:) তার‘আহকামুল জানাইয’ বা জানাযার বিধি-বিধান কিতাবে
উভয়পক্ষের মতামত ও প্রমাণাদী
আলোচনা করার পরবলেন:উম্মুল মুমিনীন
আয়েশা রা. এবং উম্মতের শ্রেষ্ঠআলেম
ইবনে আব্বাস (রা.) যে সমাধান
দিয়েছেনএবং ইমামুস সুন্নাহ ইমাম আহমদ
বিন হাম্বল যে মতগ্রহণ করেছেন সেটার
প্রতি মনের পরিতৃপ্তিআসে এবং অন্তর
ধাবিত হয়। আর এ মাসআলায় এটাইসবচেয়ে
ইনসাফপূর্ণ এবং মধ্যপন্থী মত। এরমাধ্যমে
কোন হাদীসকেই বাদ দেয়া হয় না
বরংসবগুলোর হাদীসের সঠিক অর্থ বুঝতে
পারারসাথে সাথে সবগুলোর প্রতি আমল
হয়। (দেখুন:আহকামুল জানায়েয)।
.
মোটকথা:
১) মৃত ব্যক্তির উপর যদি মানতের
রোযা বাকি থাকেতবে তার ওলীগণ তা
পুরণ করবে।
২) মৃত ব্যক্তির উপর যদি
রামাযানের রোযা বাকি থাকেতবে সব
চেয়ে মধ্যম পন্থী কথা হল: তারওলীগণ তার
পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে
প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন
মিসকিনকে আধা সা বা প্রায়সোয়া এক
কেজি খাদ্য দ্রব্য প্রদান করবে।
————————————————
৬) মৃত্যু ব্যক্তির রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধ এবং ওসীয়ত পালন করা:
কোন ব্যক্তি যদি ঋণ রেখে মারা যায় অথবা কোনওসীয়ত করে যায় তবে তার উত্তরাধীকারীদেরজন্য আবশ্যক
হল, তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকেসবার
আগে ঋণ পরিশোধ করা। কারণ, এটা
মৃতেরসম্পত্তিতে ঋণ দাতার হক। যতক্ষণ
তা আদায় করা নাহবে মৃত ব্যক্তি তা হতে
মুক্তি পাবে না। ঋণ পরিশোধের পর
অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকেওসীয়ত পালন
করতে হবে।তাই তো আল্লাহ তায়ালা
কুরআনুল কারীমে বিধান দিয়েছেন যতক্ষণ
না ওসীয়ত বাস্তবায়ন করা হয়অথবা ঋণ
পরিশোধ করা হয় ততক্ষণ
পরিত্যাক্তসম্পত্তি উত্তরাধীকারীদের
মাঝে বন্টন করাহবে না। আল্লাহ বলেন: ﻣِﻦ
ﺑَﻌْﺪِ ﻭَﺻِﻴَّﺔٍ ﻳُﻮﺻِﻲ ﺑِﻬَﺎ ﺃَﻭْ ﺩَﻳْﻦٍ “(মৃতের
পরিত্যাক্ত সম্পত্তি বন্টন করা
হবে)ওসিয়তের পর, যা করে মরেছে
কিংবা ঋণপরিশোধের পর।” (সূরা নিসা:১১)
.
অনুরূপভাবে সহীহ বুখারীতে সালামা
বিন আকওয়া(রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এক ব্যক্তির জানাযা পড়তে রাজি হন
নিযতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা
হয়েছে।ওসীয়ত (বা সম্পত্তি উইল) কমরার
বিধান : মানুষ তারসম্পত্তি থেকে
সর্বোচ্চ তিন ভাগের এক ভাগ ওসীয়ত তথা
আল্লাহর পথে বা জন কল্যাণকরকাজে
ব্যায় করার আদেশ করতে পারে। এরচেয়ে
বেশি জয়েয নাই। বরং এর চেয়ে কম করাই
উত্তম। কারণ,সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস
রা. হতে বর্ণিত, তিনিবলেন: আমি বিদায়
হজ্জের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি
ওয়া সল্লামের সাথে ছিলাম। পথিমধ্যে
আমিপ্রচণ্ড রোগে আক্রান্ত হলাম। নবী
সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমার সেবা-শুষ্রষা করতে এলেআমি
তাঁকে বললাম: হে আল্লাহর রাসূল,
আমারঅনেক সম্পত্তি। কিন্তু আমার
ওয়ারিস হওয়ার মতকেউ নাই একজন মাত্র
মেয়ে ছাড়া। আমি আমারসম্পত্তির তিন
ভাগের একভাগ ওসীয়ত করব? তিনিবললেন:
না। আমি বললাম: অর্ধেক সম্পত্তি?
তিনিবললেন: না। আমি বললাম: তবে তিন
ভাগের একভাগ।তিনি বললেন: “তিন
ভাগের একভাগ। তিন ভাগেরএকভাগই তো
বেশি। সাদ,তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে দরিদ্র
অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের
কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে বেড়াবে
এর চেয়ে তাদেরকে সম্পদশালী করে
রেখে যাওয়াই উত্তম।” (বুখারীও
মুসলিম)তবে এক তৃতীয়াংশের চেয়ে কম
করা উত্তম।কেননা, ইবনে আব্বাস (রা:)
বলেন: ﻟَﻮْ ﻏَﺾَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺮُّﺑْﻊِ ، ﻷَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ –
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺍﻟﺜُّﻠُﺚُ ، ﻭَﺍﻟﺜُّﻠُﺚُ ﻛَﺜِﻴﺮٌ
ﺃَﻭْ ﻛَﺒِﻴﺮٌ »“মানুষ যদি তার (সম্পত্তি ওসীয়ত
করার ক্ষেত্রে)এক তৃতীয়াংশ থেকে এক
চর্তুথাংশে নেমেআসত তবে তাই উত্তম
হত। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তিন ভাগের
একভাগ।তিন ভাগের একভাগই তো বেশি।
(বুখারী ও মুসলিম)কোন ব্যক্তি যদি এক
তৃতীয়াংশের বেশি ওসীয়ত করে মৃত্যু বরণ
করে তবে তার ওয়ারিসগণের জন্যএক
তৃতীয়াংশের বেশি ওসীয়ত পালন করা
আবশ্যক নয়।
——————————————————————
৭)নিকটাত্মীয় বা স্বামীর মৃত্যুতে
মহিলাদেরশোক পালন করা:যদি পিতা,
মাতা, ভাই, বোন, সন্তান, স্বামী বা
অন্যকোন নিকটাত্মীয় মারা যায় তবে
মহিলার জন্যশোক পালন করা বৈধ।
স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন
আবশ্যক। আর অন্যদের ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ
তিন দিন বৈধ; আবশ্যক নয়। তবে
স্ত্রীস্বামীকে খুশি রাখতে যদি অন্য
কোন মানুষের মৃত্যুতে স্ত্রী শোক পালন না
করে তবে সেটাই উত্তম। কারণ, স্বামীর সুখ
কামনাতেইনারীর জন্য অজস্র কল্যণ
নিহিত রয়েছে।শোক পালনের
দলীল:স্বামীর মৃত্যুতে শোক পালনের
ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন: ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ
ﻳُﺘَﻮَﻓَّﻮْﻥَ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻭَﻳَﺬَﺭُﻭﻥَ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟًﺎ ﻳَﺘَﺮَﺑَّﺼْﻦَ
ﺑِﺄَﻧﻔُﺴِﻬِﻦَّﺃَﺭْﺑَﻌَﺔَ ﺃَﺷْﻬُﺮٍ ﻭَﻋَﺸْﺮً “আর তোমাদের
মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবংনিজেদের
স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখনসে
স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার
মাসদশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে
রাখা।” (সূরা বাকারা:১৩৪)
.
আবু সালামার মেয়ে যয়নব বলেন: শাম থেকে
আবুসুফিয়ান রা. এর মৃত্যু সংবাদ আসার পর
তৃতীয় দিন (তাঁরমেয়ে উম্মুল মুমিনীন)
উম্মে হাবীবা (রা.) কিছুহলুদ বা যাফরান
(অন্য বর্ণনায় সুগন্ধি) আনতেবললেন।
অত:পর তা আনা হলে তিনি তা তার
চেহারারদুপাশে ও দুগালে এবং দুবাহুতে
মাখলেন। অত:পরবলেন: এটা করার আমার
কোন দরকার ছিল না। কিন্তুআমি এজন্যই
এমনটি করলাম যে, রাসূল
সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন:« ﻻَ ﻳَﺤِﻞُّ ﻻِﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺗُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻵﺧِﺮِ
ﺃَﻥْ ﺗُﺤِﺪَّ ﻋَﻠَﻰﻣَﻴِّﺖٍ ﻓَﻮْﻕَ ﺛَﻼَﺙٍ ، ﺇِﻻَّ ﻋَﻠَﻰ ﺯَﻭْﺝٍ ، ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ
ﺗُﺤِﺪُّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﺭْﺑَﻌَﺔَﺃَﺷْﻬُﺮٍ ﻭَﻋَﺸْﺮًﺍ »“যে মহিলা
আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস
রাখেতার জন্য স্বামী ছাড়া কারও
মৃত্যুতে তিন দিনেরবেশি শোক পালন করা
বৈধ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ
দিন শোক পালন করবে।” (সহীহ বুখারী,অনুচ্ছেদ: স্বামী ছাড়া অন্যের মৃত্যুতে মহিলার শোক পালন করা)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top