বুধবার, ১ জুন, ২০১৬

মানত কি?

কোন মন্তব্য নেই:

★ মানত সম্পর্কে আমরা কি জানি?★
=================================
লেখাটি যদিও একটু বড়। তবুও সকল মুসলিম ভাই ও বোনদের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ করছি। বেশী বেশী কপি, পেস্ট, শেয়ার করুন।
=================================
★মানত কি? : মানত বা মান্নত আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। যেমন আমরা কখনো কখনো বলি, যদি আমি পরীক্ষায় পাশ করি তাহলে মাদরাসায় একটি ছাগল
দান করব। এটি একটি মানত। অতএব, কোনো বিষয় অর্জিত হওয়ার শর্তে কোনো কিছু করার ওয়াদাকে সাধারণত: আমরা মানত বলে থাকি।
কেউ বলে মানত, আবার কেউ বলে মান্নত। তবে এটি শর্তযুক্ত মানত। আবার শর্তহীন মানতও আছে।
যেমন,আনন্দের খবর শুনে কেউ বলল, আমি এটা লাভ করেছি? তাই আমি মসজিদে একটি ফ্যান দান করব। এটাও মানত। তবে শর্তহীন।
.
→মানত কাকে বলে? : আমরা বাংলাতে বলি মানত ।
আরবিতে বলা হয় ﻧﺬﺭ (নযর) বহুবচনে নুযুর। মানত বা নযরের আভিধানিক অর্থ হল, নিজের দায়িত্বে নেয়া। যা নিজের দায়িত্ব নয় তা অপরিহার্য করে নেয়া।
.
→শরয়ি পরিভাষায় মানত বলা হয় : নিজের উপর এমন কিছু ওয়াজিব (আবশ্যিক) করে নেয়া যা আসলে ওয়াজিব ছিল না। সেটা শর্তযুক্তও হতে পারে আবার
শর্ত মুক্তও হতে পারে।
.
→★ মানতের হুকুম: মানত করার বিধান কি? ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত না মুস্তাহাব?
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
আসলে মানত করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং মনে করি মানত করা খুব সওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সওয়াবের কাজ নয়। বরং মাকরূহ। অধিকাংশ ইমাম ও ফেকাহবিদের অভিমত এটাই। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি কেউ মানত করে ফেলে তাহলে তাকে তা পালন করতেই হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী ও নিয়ম-নীতি আছে। খানিক পর আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
.
→★ মানত করা নিষেধ ★←
*******************************************রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন।
→ হাদীসে এসেছে :
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺧَﺬَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻳَﻨْﻬَﺎﻧَﺎ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ " ﺇِﻧَّﻪُ
ﻻَ ﻳَﺮُﺩُّ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺨْﺮَﺝُ ﺑِﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺤِﻴﺢِ "
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়।
(সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫)।
.
→হাদীসে আরো এসেছে :
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ "
ﺍﻟﻨَّﺬْﺭُ ﻻَ ﻳُﻘَﺪِّﻡُ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻻَ ﻳُﺆَﺧِّﺮُﻩُ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺨْﺮَﺝُ ﺑِﻪِ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞِ " .
ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে আগেও করে না, পিছেও করে না। বরং এর দ্বারা কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে বের করা হয়।
(সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৬, সহিহ সুনান নাসায়ি)
.
→হাদীসে আরো এসেছে :
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻧَّﻪُ ﻧَﻬَﻰ
ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭِ ﻭَﻗَﺎﻝَ " ﺇِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺨْﺮَﺝُ ﺑِﻪِ
ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞِ
ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না।
এটা শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে মাল খসায়। (সহিহ
মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৭, আহমাদ)
.
→হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﻻَ ﺗَﻨْﺬُﺭُﻭﺍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭَ ﻻَ ﻳُﻐْﻨِﻲ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﻘَﺪَﺭِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺨْﺮَﺝُ ﺑِﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞِ " .
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা মানত করবে না। কেননা মানত তাকদীরের কোনো কিছু-কে ফেরাতে পারে না। এটা শুধু কৃপণ থেকে সম্পদ খসায়। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৯, সহিহ সুনান তিরমিজি, সহিহ সুনান নাসায়ি)
.
→হাদীসে আরো এসেছে :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭَ ﻻَ ﻳُﻘَﺮِّﺏُ ﻣِﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺁﺩَﻡَ ﺷَﻴْﺌًﺎ
ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻗَﺪَّﺭَﻩُ ﻟَﻪُ ﻭَﻟَﻜِﻦِ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭُ ﻳُﻮَﺍﻓِﻖُ ﺍﻟْﻘَﺪَﺭَ ﻓَﻴُﺨْﺮَﺝُ
ﺑِﺬَﻟِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞِ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦِ ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞُ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺃَﻥْ ﻳُﺨْﺮِﺝَ " .
সাহবি আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যেই বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায়নি।
(সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩১)
.
** উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম,
→® এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। অতএব মানত করা ঠিক নয়। আমরা অনেকে বিপদ-আপদে পতিত হলে মানত করে থাকি। আর মনে করি এটা সওয়াবের কাজ। আল্লাহ খুশী হবেন। কিন্তু আসলে তা সওয়াবের কাজ নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে আল্লাহ খুশী হবেন না। এবং এতে কোনো সওয়াবও হয় না। তাই আমাদের উচিত হবে কোনো অবস্থায় মানত না করা। অবশ্য মানত করে ফেললে তা পালন করতেই হবে কারণ মানত
করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
.
→® দুই. মানত করার মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন, মানত করা একটি অনর্থক কাজ। সাধারণত কৃপণ স্বভাবের লোকেরা মানত করে থাকে। তারা সুস্থ ও নিরাপদ থাকা কালে দান-সদকা করে না। কিন্তু বিপদে পড়লে আল্লাহর পথে খরচ বা দান সদকা করার বড় বড় মানত করে।
.
→® তিন. তাকদীরে যা লেখা আছে তা হবেই। মানত করার মাধ্যমে তাকদীরের লেখা পরিবর্তন করা যায় না।
তাকদীরের প্রতি যাদের যথাযথ ঈমান নেই সাধারণত তারাই মানত করে থাকে।
.
→® চার. মানত করা হোক বা না হোক। ফলাফল একই হবে। তাকদীরে যা লেখা আছে সেটাই আসবে অবধারিতভাবে।
.
→® পাঁচ. আলোচিত সবগুলো হাদীসই মানত না করার জন্য মুসলিমদের-কে নিরোৎসাহিত ও নিষেধ করেছে।বলেছে, এটি কোনো ফল বয়ে আনে না বরং শুধু কৃপণের সম্পদ খরচ করায়।
.
→→→এ সকল বিষয় জানার পর কোনো মুসলিমের পক্ষে কোনো প্রকার মানত করা উচিত নয় । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, যে কাজটি করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, আমরা সেটাকে সুন্নাত মনে করি।
.
#বহু আলেম-ওলামাকে বলতে শুনা যায়: আপনি ওখানে মানত করেন, তাহলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে, বিপদ দূর হয়ে যাবে। অনেক খানকাহ ও দরবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের দরবারে বা খানকায় মানত করার জন্য মুসলিম জনগণকে উৎসাহিত করে থাকে।
দরাজ গলায় বলে, আমাদের এই মাদরাসায় বা এই খানকায় মানত করে কেহ বিফল হয়নি। এমনটি যারা করেন তারা নিজেরাও এ বিষয়ে বিভ্রান্ত। সাথে সাথে অন্যদেরও বিভ্রান্ত করে থাকেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিফাজত করুন! দীনে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন!
.
→® ছয়. হাদীসগুলো পাঠ করে কেউ বলতে পারেন, এ সকল হাদীসে আর্থিক বিষয়াদি তথা ব্যয় ও দান- সদকা করার মানত করা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অতএব কেউ যদি নামাজ, রোজা, হজ, উমরা কিংবা কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত বিষয়ক মানত করে তবে দোষের কিছু হবে না।
.
*আমরা বলব, কথাটি ঠিক নয়। কেননা হাদীসের অর্থ ব্যাপক। তখনকার মানুষ সাধারণত খরচ বা দান-সদকা করার মানত করত। তাই এটাকে সামনে আনা হয়েছে।
তাছাড়া আর্থিক মানতের মাঝে বহুবিদ উপকার নিহিত রয়েছে। মানতকারী ছাড়াও অন্য লোকেরা দান-সদাকা গ্রহণ করে উপকৃত হয়। তা সত্ত্বেও এটা যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে যে মানতে এমন বহুমাত্রিক উপকার নেই, তা অনুমোদিত হবার প্রশ্নই আসে না। তাই নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদতের মানত করাও ঠিক নয়।
.
★ মানত করলে তা আদায় করতে হবে ★
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
মানত করা জায়েয নয়। কিন্তু কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। যাকে আমরা বলি মানত পুরা করা। মানত পুরা করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে। মানত পুরা করা একটি ইবাদত। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
ﻭَﻟْﻴُﻮﻓُﻮﺍ ﻧُﺬُﻭﺭَﻫُﻢْ
‌ তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে। (সূরা আল হজ, আয়াত ২৯) আল্লাহ আরো বলেন:
ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻧْﻔَﻘْﺘُﻢْ ﻣِﻦْ ﻧَﻔَﻘَﺔٍ ﺃَﻭْ ﻧَﺬَﺭْﺗُﻢْ ﻣِﻦْ ﻧَﺬْﺭٍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻪُ
তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন।
(সূরা বাকারা, আয়াত ২৭০)
.
আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন : ﻳُﻮﻓُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻨَّﺬْﺭِ
তারা মানত পূরণ করে।
(সূরা আল-ইনসান, আয়াত ৭)
.
#এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত হয়,
→® এক. মানত করলে তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মানত পূরণ করতে হুকুম করেছেন।
.
→® দুই. এ সকল আয়াতের কোথাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানত করতে আদেশ করেননি বা উৎসাহ দেননি। অন্য কোনো আয়াতেও দিয়েছেন এমনটি
পাওয়া যায় না।
.
→® তিন. মানত পূরণ করা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের একটি গুণ হিসাবে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন।
তাই মানত পূরণ করলে সওয়াব অর্জিত হবে, প্রতিদান পাওয়া যাবে।
.
→® চার. মানুষ মানত করলে, কিংবা কোনো খরচ করলে আল্লাহ তা ভালভাবেই জানেন। তাই মানত পূরণ
না করে কোনো উপায় নেই।
.
→® পাঁচ. মানত পূরণ করা যখন একটি ইবাদত, তখন তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে করতে হবে। মানত পূরণ করা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻄﻴﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻴﻄﻌﻪ ، ﻭﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻌﺼﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻼ ﻳﻌﺼﻪ
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার মানত করে সে যেন (তা পূরণ করে) তাঁর আনুগত্য করে । আর যে অবাধ্যতার কোনো বিষয়ে মানত করে সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে। (সহিহ বুখারি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, নাসায়ি)
.
আমরা এই হাদীস থেকে জানতে পারলাম, ভাল কাজের মানত করলে শর্ত পূরণ হলে সেই মানত পূরণ করতে হয়। তাছাড়া এতে আমরা মানতের প্রকার সম্পর্কেও ইঙ্গিত পেলাম। যা নিম্নে আলোচিত হল।
.
★ যে মানত আদায় করা যাবে না ★
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
উপরোক্ত হাদীস থেকে আমরা যেসব বিষয় জানতে পারলাম, →
® এক. মানত দুই প্রকার।
.
(ক) মানতের বিষয় হবে শরিয়ত অনুমোদিত ভাল কাজ। যেমন কেউ বলল, যদি আমি সুস্থ হই তাহলে তিনটি রোজা রাখব। এখানে মানতের বিষয়টি শরিয়ত অনুমোদিত একটি ইবাদত ও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের বিষয়। শর্ত পূরণ হলে এ মানত আদায় করতে হবে।
.
(খ) শরিয়ত নিষিদ্ধ-মন্দ ও আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ করার মানত। যেমন কেউ বলল, আজ যদি অমুক দল খেলায় জিতে যায় তাহলে আমি তোমাদেরকে মদ পান করাব। এ মানত পূরণ করা মোটেই জায়েয নয়। মানতের
শর্ত পূরণ হোক বা না হোক। কারণ এতে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা বিদ্যমান। এ ছাড়াও আরেক প্রকার মানত আছে যা অনর্থক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়।সেটাও পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন কেউ বলল, আমি যদি রোগমুক্ত হই। তাহলে ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেটে টঙ্গীর ইজতেমায় যোগ দেব। এ মানত একটি অনর্থক। ময়মনসিং থেকে টঙ্গী পর্যন্ত হেটে যাওয়ার মধ্যে নিজেকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। কাজেই এ ধরনের মানত পূরণ করা হবে অর্থহীন কাজ তাই তা পূরণ করা হবে না। যেমন হাদীসে এসেছে :
ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺭَﺃَﻯَ ﺷَﻴْﺨًﺎ ﻳُﻬَﺎﺩَﻯ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﺑْﻨَﻴْﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ " ﻣَﺎ ﺑَﺎﻝُ
ﻫَﺬَﺍ " . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻧَﺬَﺭَ ﺃَﻥْ ﻳَﻤْﺸِﻲَ . ﻗَﺎﻝَ " ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻦْ ﺗَﻌْﺬِﻳﺐِ
ﻫَﺬَﺍ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻟَﻐَﻨِﻲٌّ " . ﻭَﺃَﻣَﺮَﻩُ ﺃَﻥْ ﻳَﺮْﻛَﺐَ .
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এর কি হয়েছে? তারা উত্তরে বলল, তিনি পায়ে হেঁটে চলার মানত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ ব্যক্তি নিজেকে কষ্ট দেয়ায় আল্লাহর কোনো লাভ নেই। এবং তাকে বাহনে চড়ার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম হাদীস নং ৪৩৩৬)
.
#হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, লোকটি এমন একটি কাজের মানত করেছিল, যা আদায়ে তার কোনো লাভ নেই। কিংবা অন্য কারোও কোনো উপকার নেই। এটি একটি অনর্থক কাজ। যা করে নিজেকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তাকে এ মানত পালন থেকে নিষেধ করেছেন। অতএব এ ধরনের মানত কেউ করলে তা পূরণ করা যাবে না।
.
আরেকটি হাদীস দেখুন :
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﺑﻴْﻨﻤﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ ﻳَﺨْﻄُﺐُ ﺇِﺫَﺍ ﻫُﻮَ ﺑِﺮﺟُﻞٍ ﻗَﺎﺋِﻢٍ ، ﻓﺴﺄَﻝَ ﻋَﻨْﻪُ
ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ : ﺃَﺑُﻮ ﺇِﺳْﺮﺍﺋﻴﻞَ ﻧَﺬَﺭ ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮﻡَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲ ﻭَﻻ ﻳﻘْﻌُﺪَ
، ﻭﻻ ﻳﺴﺘَﻈِﻞَّ ﻭﻻ ﻳﺘَﻜَﻠَّﻢَ ، ﻭﻳﺼﻮﻡَ ، ﻓَﻘﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ : « ﻣُﺮُﻭﻩُ ﻓَﻠْﻴَﺘَﻜَﻠَّﻢْ ﻭﻟْﻴَﺴﺘَﻈِﻞَّ ﻭﻟْﻴُﺘِﻢَّ
ﺻﻮْﻣَﻪُ » ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ .
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খোতবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিগণ বললেন, আবু ইসরাইল। মানত করেছে যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না। ছায়ায় (বিশ্রামে) যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোজা রাখবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন: তোমরা তাকে আদেশ দাও যেন কথা বলে, ছায়াতে যা এবং রোজা পূর্ণ করে। (বুখারি)
.
#এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
→® এক. নিজ সত্তা বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর এমন মানত করলে তা আদায় করা যাবে না। যেমন আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। পাশাপাশি রোজা রাখারও মানত করেছিল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুধু রোজা রাখতে বললেন আর অন্যগুলো পালন করতে নিষেধ করলেন। এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে কোনো বৈধ বিষয়কে নিজের জন্য অবৈধ করা যায় না। তদ্রুপ অবৈধ কোনো কিছুকে বৈধ করা যায় না। যেমন কেউ মানত করল আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি
গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয়।
.
→® দুই. কৃত মানত যদি সওয়াবের বিষয় হয় তবে তা আদায় করতে হবে। আর যদি অনর্থক কোনো বিষয় হয় তবে আদায় করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻄﻴﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻴﻄﻌﻪ ، ﻭﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻌﺼﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻼ ﻳﻌﺼﻪ
যে আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানি করার মানত করেছে সে যেন তাঁর নাফরমানি না করে।
.
→® তিন. কোনো বিষয়েই মানত করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে। কারণ এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন।
.
→® চার. ইবাদত-বন্দেগি ও মানতের নামে নিজের উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করা উচিত নয়। এটি একটি চরমপন্থা। ইসলামের মধ্যপন্থার পরিপন্থী। আবু ইসরাইল ছায়ায় না বসা, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ও কথা না বলার যে
মানত করেছিল সেটা ছিল মধ্যপন্থার বিপরীত । তাই তা পরিত্যাগের নির্দেশ দেয়া হল।
.
→® পাঁচ. খোতবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। তাইতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
.
→® ছয়. খুতবার সময় খতীব প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন। কাউকে কোনো কিছুর আদেশ বা নিষেধ করতে পারেন।
.
★ মাজারে মানত করা শিরক ★
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করার পূর্বে একটি ঘটনা না বলে পারছি না। লোকটি ধর্মপরায়ণ। নিয়মিত নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন। হজ করেছেন। আবার একটি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী। রিকসায় আমারা এক সাথে
যাচ্ছিলাম। পথে একটি মাজার পড়ল। তিনি রিকসা চালককে রিকসা থামাতে বললেন। রিকসা থেকে নেমে তিনি মাজারের কাছে গেলেন। পকেট থেকে চারটি মুরগীর ডিম বের করে মাজারে রেখে চলে আসলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার! আপনার মত মানুষ মাজারে ডিম দেয়? তিনি বললেন, আরে আমার স্ত্রী মানত করেছিল মাজারে এক হালি ডিম দেবে। আমি জানি এটা ঠিক নয়। তবুও স্ত্রী বলেছে তাই দিলাম।
আমি তাকে বললাম, কাজটি কত মারাত্মক আপনি তা জানেন? এটা তো শিরক। আপনার স্ত্রী কেন, আপনার মা বললেও তো আপনি তা করতে পারেন না। তিনি বললেন, আমার নিয়ত ঠিক ছিল। আমি জানি মাজারে শায়িত ওলী আমার কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে
পারবে না। শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশায়ই ডিম দান করেছি। আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। মানলাম আপনার কথা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে কাজটা করেছেন। তো মাজারে দান কেন? আল্লাহ কি বলেছেন, মাজারে দিলে আমি সন্তুষ্ট হই?
মাজার ব্যতীত কোনো দরিদ্র- অভাবী মানুষকে দান করলে আমি কম সন্তুষ্ট হই?
তা ছাড়া মানতকারী আপনার স্ত্রীর নিয়্তটা কি ছিল তা কি জিজ্ঞেস করেছেন?
তিনি উত্তর দিলেন, মাজারে দান বা মানত করার মাধ্যমে মাজারে শায়িত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এতে আল্লাহ খুশী হন। আল্লাহর ওলীকে সম্মানও করা হল, আবার দানও করা হল। এক কাজে দুই সওয়াব। আমি বললাম, এই তো আসল কথায় এসেছেন। এ ধারণাটাই তো শিরক। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করার সাথে সাথে ওলীকে সম্মানের নিয়ত করে তাকে ইবাদতে অংশীদার করা হল।
.
• যারা মাজারে দান, সদকা, মানত ইত্যাদি করে থাকে তারা তিনটি নিয়তের বাহিরে চতুর্থ কোনো নিয়ত করে না।
★প্রথম প্রকার নিয়ত : তারা মনে করে মাজারে মানত বা দান করলে মাজারে শায়িত ওলী খুশী হন। তিনি খুশী হলে আমার মনের আশা পূরণ হবে। বিপদ দূর হবে। মানত কারীর ধারণায় মাজারে মানত করলে মাজারের ওলীর দোয়ায় বা তাঁর নেক নজরে আমার বিপদ কেটে যাবে বা উদ্দেশ্য অর্জন হবে।
.
★দ্বিতীয় প্রকার নিয়ত : মাজারে মানত বা দান করছি আল্লাহর জন্যই। তবে মাজারে শায়িত ওলীর সুপারিশে আমার মনের আশা পূরণ হবে। ওলীর অসীলায় বা শাফাআতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
আমি মাজারে মানত বা দান করলাম।
.
★তৃতীয় প্রকার নিয়ত: আমি জানি যে ওলী ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন না। তাঁর দোয়া বা নেক নজর পাওয়ার নিয়তও আমি করি না। তাঁর শাফাআত বা অসীলাও আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে তিনি আল্লাহর ওলী, তাকে সম্মান করা সওয়াবের কাজ এ জন্য আমি মাজারে মানত করি। দান-সদকা পাঠাই।
.
.
সম্মানিত পাঠক! উপরের তিনটির যে কোনো একটি নিয়তে আপনি মাজারে মানত বা দান করবেন তো, তা শিরক হবে। আপনি যখন জীবিত মানুষ বাদ দিয়ে মৃত মানুষের কবর-মাজারে দান করেন, তখন অবশ্যই একটি নিয়ত পোষণ করেন, যদিও তা প্রকাশ করেন না। বা অন্যের কাছ থেকে লুকাতে চান । কিন্তু আল্লাহ তাআলা অন্তর্যামী। তাঁর কাছ থেকে লুকানো কি সম্ভব?
.
মানত আদায় করা একটি ইবাদত। এটি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক। তেমনি এটা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তের সাথে সাথে অন্যের সুপারিশ, শাফায়াত, অসীলা বা তার মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখানোও শিরক। এটাই তো ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার করা। এমন করলে ইবাদতটি শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয় না। আর যে ইবাদত শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত নয় তা শিরক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মনে রাখতে হবে, যে সকল কথা ও কাজ ইবাদত বলে গণ্য তা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক। এমনিভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদন করার সাথে সাথে অন্য কোনো সত্তার সন্তুষ্টি, সম্মান, দৃষ্টি আকর্ষণের নিয়ত করাও শিরক। শিরক মানে তো অংশ দেয়া। এ ধরনের কথা ও কাজে আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যকে অংশীদার করা হয়।
হাদীসে এসেছে :
ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻨﺤﺮ ﺇﺑﻼ ﺑﺒﻮﺍﻧﺔ ، ﻓﺄﺗﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﺇﻧﻲ ﻧﺬﺭﺕ ﺃﻥ
ﺃﻧﺤﺮ ﺇﺑﻼ ﺑﺒﻮﺍﻧﺔ ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ : ﻫﻞ ﻛﺎﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺛﻦ ﻣﻦ ﺃﻭﺛﺎﻥ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻳﻌﺒﺪ ؟ ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻻ ، ﻗﺎﻝ : ﻓﻬﻞ ﻛﺎﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻋﻴﺪ ﻣﻦ ﺃﻋﻴﺎﺩﻫﻢ ؟
ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻻ ، ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
ﺃﻭﻑ ﺑﻨﺬﺭﻙ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻭﻓﺎﺀ ﻟﻨﺬﺭ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ
ﻓﻴﻤﺎ ﻻ ﻳﻤﻠﻚ ﺍﺑﻦ ﺁﺩﻡ ﺍﻟﺮﺍﻭﻱ : ﺛﺎﺑﺖ ﺑﻦ ﺍﻟﻀﺤﺎﻙ ﺍﻟﻤﺤﺪﺙ : ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ – ﺍﻟﻤﺼﺪﺭ : ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ – ﺍﻟﺼﻔﺤﺔ ﺃﻭ ﺍﻟﺮﻗﻢ : 3313
ﺧﻼﺻﺔ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻤﺤﺪﺙ : ﺳﻜﺖ ﻋﻨﻪ [ﻭﻗﺪ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ
ﺭﺳﺎﻟﺘﻪ ﻷﻫﻞ ﻣﻜﺔ ﻛﻞ ﻣﺎ ﺳﻜﺖ ﻋﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺻﺎﻟﺢ ]
এক ব্যক্তি বাওয়ানা (য়ালামলাম পাহাড়ের পাদ দেশে অবস্থিত) নামক স্থানে একটি উট জবেহ করার মানত করেছিল। সে তার মানত আদায় করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে স্থানের উদ্দেশ্যে মানত করেছ সেখানে কি জাহেলী যুগে কোনো প্রতিমা ছিল? লোকেরা বলল, না,ছিল না। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, সেখানে কি মুশরিকদের কোনো উৎসব বা মেলা হয়? লোকেরা উত্তর দিল, না, তা হয় না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে তোমার মানত পূর্ণ করতে পার। আর আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতায় কোনো মানত পূর্ণ করা হবে না। আর যে মানত পূরণ করতে মানুষ সমর্থ নয় তাও পূরণ করা হবে না। (আবু দাউদ : কিতাব আল আইমান ওয়ান-নুযূর)
.
#হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
.
→® এক. নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবেহ করার মানত পূর্ণ করা জায়েয। এমনিভাবে নির্দিষ্ট স্থান বা সময়ের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করাও জায়েয। তবে তা যেন কোনো উৎসব এর স্থান, পূজার বেদী, কবর-মাজার, দরবার না হয়। কেননা মাজার ও পীরদের দরবার উৎসব পালনের একটি স্থান। আর এ হাদীসে অনৈসলামিক উৎসব পালনের স্থান বা সময়ে মানত পূর্ণ করার অনুমতি দেয়নি। মনে রাখতে হবে, কবর কেন্দ্রিক সকল উৎসব-অনুষ্ঠান জাহেলি যুগের মেলার মত। এগুলো মুশরিকদের উৎসব।
.
→® দুই. মানতের মধ্যে যদি আল্লাহ তাআলার নির্দেশের বিপরীত কিছু থাকে তাহলে সে মানত পূর্ণ করা যাবে না।
.
→® তিন. মানত যদি এমন হয় যা পূর্ণ করা মানতকারীর পক্ষে অসম্ভব, তাহলে সে মানত পূর্ণ করার দরকার নেই।
.
→® চার. আমাদের দেশে মাজার, দরগা, পীরদের দরবারে যে উরস, ঈসালে সওয়াব মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো মুশরিকদের উৎসব। তাই এ সকল
স্থানের জন্য গরু, ছাগল ইত্যাদি জাতীয় কোনো কিছু মানত করা যাবে না। কেননা বর্ণিত হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চেয়েছেন, সেখানে মুশরিকদের কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান হয় কি-না। যদি হত তাহলে তিনি সেখানে মানত
পূর্ণ করতে অনুমতি দিতেন না। মাজার, কবর, দরগা, পূজার বেদীতে আল্লাহ তাআলার নামে মানত করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনিভাবে ঐ সকল স্থানে পশু জবেহ করলে তা আল্লাহ নামে জবেহ বলে গণ্য হবে না।
যদিও জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয়। আমরা দেখলাম বর্ণিত হাদীসে লোকটি কিন্তু আল্লাহর নামেই জবেহ করত, কেননা তিনি ছিলেন সাহাবি। তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থানটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বুঝা গেল আল্লাহর নামে মানত ও জবেহ যদি আপত্তিকর স্থানে অনুষ্ঠিত হয়
তবুও তা শিরক।
.
→® পাঁচ. এ হাদীসে দেখা যায় মানত পূর্ণ করার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল, কেউ যদি এ রকম স্থান তথা মাজার, দরগা, দরবারের জন্য মানত করে থাকে তাহলেও তা সে স্থানে পূর্ণ করা হবে না। যখন মানত পূর্ণ করার ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা আছে তখন মানত করা তো আরো বড় অন্যায়। তাই এ সকল স্থানে মানত করা যেমন যাবে না। তেমনি মানত করে থাকলে তা পূর্ণও করা যাবে না। তবে অন্য স্থানে মানত পূর্ণ করতে হবে। যেমন কেউ মানত করল, আমার ছেলে পরীক্ষায় পাশ করলে আমি খানজাহান আলীর মাজারে একটি ছাগল দান করব। ছেলে পরীক্ষায় পাশ করল।
কিন্তু সে জানতে পারল, মাজারে মানত করা শিরক। এখন কি করবে? এখন সে অন্য স্থানে, অথবা নিজের এলাকায় গরীবদের মধ্যে একটি ছাগল সদকা করে দেবে।
.
★ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর উদ্দেশ্যে মানত করা শিরক★
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
মানত পূরণ করা একটি ইবাদত। তাই মানত করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে। মানত পূরণ করতে হবে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে। সুতরাং কোনো ওলীআল্লাহ, পীর-বুযুর্গ, নবী- রাসূলদের নামে মানত করা যাবে না। মানত করলে তা শিরক হবে। অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় হল, এখন মুসলমানেরা শুধু মৃত ওলী-আউলিয়া, পীর-দরবেশের নামে মানত করে তৃপ্ত নয়, বরং তাদের মাজারের কচ্ছপ, কুমির, মাছের নামেও মানত করে থাকে। কতবড় নিকৃষ্ট শিরকের দিকে আমাদের জাতি ধাবিত হচ্ছে। শিরক থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম জাতিকে রক্ষা করুন।
.
★মানত করে যদি তা পূর্ণ করতে না পারে :
কোনো ব্যক্তি বড় একটি মানত করল। যেমন বলল, এ কাজটি অর্জিত হলো আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেব। কাজটি অর্জিত হল, কিন্তু দেখা গেল, এত টাকা দিয়ে তার মসজিদ নির্মাণের সামর্থ্য নেই। হয়ত মানত করার সময়ও সামর্থ্য ছিল না। তখন সে কি করবে?
তখন সে ব্যক্তি কসম ভাঙ্গার কাফফারার হিসাবে মানতের কাফফারা আদায় করবে।
ﺣﺪﻳﺚ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ "ﻛﻔﺎﺭﺓ ﺍﻟﻨﺬﺭ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ."ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ -ﺍﻟﺼﻔﺤﺔ ﺃﻭ ﺍﻟﺮﻗﻢ : 1645
সহিহ মুসলিমে উকবা ইবনে আমের রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে,মানতের কাফফরা হল কসম ভঙ্গের কাফফারার মত।
.
★কিন্তু যে কোনো মানত পূর্ণ না করলে কি কাফফারা দিতে হয়?
ﻓﻘﺪ ﺟﺎﺀ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ - ﻗﺎﻝ : " ﻣﻦ
ﻧﺬﺭ ﻧﺬﺭﺍً ﻻ ﻳﻄﻴﻘﻪ ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻪ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ " ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ
ﺩﺍﻭﺩ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻓﻲ ﺑﻠﻮﻍ ﺍﻟﻤﺮﺍﻡ : " ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ
ﺻﺤﻴﺢ، ﻭﺍﻟﺤﻔّﺎﻅ ﺭﺟﺤﻮﺍ ﻭﻗﻔﻪ " ، ﻭﻗﺎﻝ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳﻼﻡ
ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ( 33/49 ) : "ﻓﺈﺫﺍ ﻗﺼﺪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ
ﺃﻥ ﻳﻨﺬﺭ ﻟﻠﻪ ﻃﺎﻋﺔ، ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺍﻟﻮﻓﺎﺀ ﺑﻪ، ﻟﻜﻦ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﻮﻑ
ﺑﺎﻟﻨﺬﺭ ﻟﻠﻪ، ﻓﻌﻠﻴﻪ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻳﻤﻴﻦ ﻋﻨﺪ ﺃﻛﺜﺮ ﺍﻟﺴﻠﻒ ".
অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি এমন মানত করল যা পূর্ণ করার সামর্থ্য তার নেই, সে কসমের কাফফারা আদায় করবে। হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেজ ইবনে হাজার রহ.
বুলুগুল মারাম কিতাবে এর সূত্রকে বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. তার ৩৩/৪৯ নং ফতোয়ায় বলেছেন: যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে থেকে মানত করে তখন তা পূর্ণ করতেই হয়। কিন্তু যদি পূর্ণ করতে অক্ষম হয়ে যায় তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করবে। পূর্ববর্তী অধিকাংশ আলেম-উলামার অভিমত এটাই।
.
★কসম ভঙ্গের কাফফরা : দশজন অভাবী মানুষকে খাদ্য বা পোশাক দান করা কিংবা একটি দাস মুক্ত করে দেয়া।নিজেদের নিয়মিত খাবারের মধ্যম ধরনের খাবার দশ জনের প্রত্যেককে দিতে হবে। প্রতি জনের খাদ্যের পরিমাণ হবে কমপক্ষে অর্ধ সা অর্থাৎ কাছাকাছি দেড় কেজি। যদি সে এ তিন পদ্ধতির কোনো একটি দিয়ে কাফফারা আদায় করতে না পারে তাহলে তিন দিন রোজা পালন করবে।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻟَﺎ ﻳُﺆَﺍﺧِﺬُﻛُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻓِﻲ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧِﻜُﻢْ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻳُﺆَﺍﺧِﺬُﻛُﻢْ ﺑِﻤَﺎ
ﻋَﻘَّﺪْﺗُﻢُ ﺍﻟْﺄَﻳْﻤَﺎﻥَ ﻓَﻜَﻔَّﺎﺭَﺗُﻪُ ﺇِﻃْﻌَﺎﻡُ ﻋَﺸَﺮَﺓِ ﻣَﺴَﺎﻛِﻴﻦَ ﻣِﻦْ
ﺃَﻭْﺳَﻂِ ﻣَﺎ ﺗُﻄْﻌِﻤُﻮﻥَ ﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢْ ﺃَﻭْ ﻛِﺴْﻮَﺗُﻬُﻢْ ﺃَﻭْ ﺗَﺤْﺮِﻳﺮُ ﺭَﻗَﺒَﺔٍ
ﻓَﻤَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺠِﺪْ ﻓَﺼِﻴَﺎﻡُ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﺫَﻟِﻚَ ﻛَﻔَّﺎﺭَﺓُ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧِﻜُﻢْ ﺇِﺫَﺍ
ﺣَﻠَﻔْﺘُﻢْ ﻭَﺍﺣْﻔَﻈُﻮﺍ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧَﻜُﻢْ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﺁَﻳَﺎﺗِﻪِ
ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺸْﻜُﺮُﻭﻥَ
আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয়
পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফ্ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা
তোমাদের কসম হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।
(সূরা মায়েদা, আয়াত ৮৯)
.
তবে মনে রাখতে হবে, যে মানত পূরণ জায়েয নয় তা পালন না করার কারণে কাফফারা দিতে হয় না। কোনো কোনো ইমাম বলেছেন যে মানত নির্দিষ্ট করা হয়নি তারও কাফফারা দিতে হবে। যেমন কেউ বলল, আমি মানত করলাম বা আমার উপরে মানত আছে। কিন্তু কি মানত করল বা তার দায়িত্বে কি মানত আছে তা নির্দিষ্ট করল না। তাহলে তাকে মানত পূর্ণ না করে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। তাদের দলীল হল :
ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﺣﺪﻳﺚ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻠﻔﻆ " ﻛﻔﺎﺭﺓ
ﺍﻟﻨﺬﺭ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺴﻢ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻳﻤﻴﻦ " ﻭﻟﻔﻆ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ " ﻣﻦ
ﻧﺬﺭ ﻧﺬﺭﺍ ﻟﻢ ﻳﺴﻤﻪ " , ﻭﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻳﺮﻓﻌﻪ "
ﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﻧﺬﺭﺍ ﻟﻢ ﻳﺴﻤﻪ ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻪ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻳﻤﻴﻦ " ﺃﺧﺮﺟﻪ
ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ
অর্থাৎ, তিরমিজি ও ইবনে মাজা উদ্ধৃত, সাহাবি উকবা ইবনে আমের রা. -এর হাদীসে এসেছে, যখন মানত নির্ধারণ করা হয় না তখন তার কাফফারা হল, কসম ভঙ্গের কাফফারা। আবু দাউদ এ রকম একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন ইবনে আব্বাস রা. থেকে।
তবে এ মাসআলাটিতে ফিকাহবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। অধিকাংশ ফিকাহবিদের মত হল, যদি কেউ মানত করল কিন্তু নির্ধারণ করল না, তাহলে তার সামনে দু’টো অবকাশ থাকে। সে ইচ্ছা করলে মানত পূর্ণ করতে পারে আবার কাফফারাও দিতে পারে। আর যদি -মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু সামর্থ্য নেই- এমনটি হয়,তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারার মত কাফফারা দেবে। এ মাসআলাটি সর্বসম্মত।
ফিকাহবিদদের একটি দল বলেছেন, যে কোনো মানত, গুনাহের কাজের হোক বা অসমর্থ কাজের হোক তা আদায় না করে কাফফারা দিতে হবে। তাদের মতে কোনো মানত বৃথা যাবে না। হয়ত পূর্ণ করতে হবে। পূর্ণ করতে না পারলে কাফফারা দিতে হবে।
.
আল্লাহ তাআলা ভাল জানেন।
.
সমাপ্ত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
back to top